প্রিয়তমা♥️ #writer- সালসাবিল সারা #সিজন_১ পর্ব-৪

0
921

#প্রিয়তমা♥️
#writer- সালসাবিল সারা
#সিজন_১
পর্ব-৪
*
*
তিনদিন ধরে কলেজ যাচ্ছিনা!!..সামনে মিডটার্ম এক্সামও স্টার্ট হবে..কিন্তু অসুস্থ্যতার কারণে যেতে পারি নাই….!!কখন থেকে যে বাহিরের হওয়া খাবো!!!
ভাল্লাগেনা আর এই বন্ধি লাইফ…!!উফফ!!!
আজকে তিনদিন যাবত ঘরে বন্ধি আর হাতে স্যালাইন পুশ করা!!…ঐদিনের ঘটনার পর থেকে শরীরটা একদম নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে!…সেদিন গাড়ি থেকে নামার সময় আমার সম্পূর্ণ দুনিয়া অন্ধকার লাগছিলো..মনে হচ্ছিলো এখনি ধুম করে পড়ে যাবো.!!.হঠাৎ করে কি হলো জানিনা ব্যালেন্স হারাচ্ছিলাম শরীরের আর নিচে পড়ে যাচ্ছি কিন্তু কেউ এসে আমাকে ধরে ফেলে..!!! ব্যস,এতটুকুই…আর কিছুই মনে নেই আমাকে কে ধরলো না কি হলো.!!.. চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করলাম…উফফ!!সে কি যন্ত্রণা মাথায়!!..আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম এক হাত মা ধরে আছেন আরেক হাত বড় খালা…আর কেবিনের দরজায় দাঁড়িয়ে খালু ডক্টরের সাথে কথা বলছেন…!!আমাকে চোখ খুলতে দেখে মা বলতে লাগলেন…”শেফা ফুল কেমন লাগছে এখন তোর!!মাথায় কি এখনো যন্ত্রণা করছে”!!..
শুধু মাথা নাড়িয়ে না বললাম…মায়ের কথা শুনেই ডক্টর আর খালু এগিয়ে এলেন আমার দিকে..আর ডক্টর চেকাপ করে বললেন…”আরো চারদিন স্যালাইন দিতে হবে…শরীর বেশি দুর্বল আপনার মেয়ের..আর প্রেসার ও লো..!কি ছোট পাখি এখন থেকে ভালো করেই খাবার খাবে আর নিজের যত্ন নিবে”…ডক্টরের কথায় মুচকি হাসলাম…কিন্তু মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে!!.. সাদিফ ভাইয়া কোথায়!??উনি তো আমার সাথেই ছিলেন…!

🌸

শেফালী শুধু তার সাথে ঘটে যাওয়া জিনিস গুলাই নিজের মনে এঁকে নিলো..তার অগোচরে যে ঘটনা গুলো ঘটলো তা সে জানেই না…!!!
গাড়ি থেকে নামার আগ থেকেই সাদিফ খেয়াল করলো শেফা ভালো নেই…কিন্তু কিছু বলার আগেই তারা শেফার বাসার সামনে চলে আসে.!!.. সাদিফ গাড়ি থেকে নেমে শেফার সাইডে যাওয়ার আগেই দেখলো শেফা হেলেদুলে নামতে লাগলো..গাড়ির দরজা খুলে দাড়াতেই শেফা পড়েযাচ্ছিলো তবে তার আগেই সাদিফ এসে শেফার কোমর জড়িয়ে ধরে ফেলে আর শেফা সাদিফের বুকেই সেন্সলেস হয়ে যায়…!!

“শেফা ফুল এই ফুল ফুল!!..কি হয়েছে তোর..চোখ খুলো না প্লিজ…আর বকা দিবো না তো ফুল তোমাকে!!..সরি প্লিজ!!…ফুল চোখ খুল না”…এসব বলে বলে শেফালীকে গালে হাত দিয়ে ডাকছিলো সাদিফ!!…শেফালী কে কোলে তুলে নিয়ে গাড়ির পিছের সিটে শুইয়ে দিলো আর কল করে ছোট খালা কে আসতে বললো…!!শেফালীর মা তো ওর এই অবস্থা দেখেই কান্না করতে লাগলো…!!ফুল স্পিডে ড্রাইভ করে দশ মিনিটেই হাসপাতালে পৌঁছে গেলো.. এরপর সাদিফই শেফাকে কোলে করে ভিতরে নিয়ে গেলো এমনকি সব ফর্মালিটিস ও সে পূরণ করলো..!!শেফার জ্ঞান আসার দুই ঘণ্টা আগেই সাদিফ অফিস গেলো কিছু জরুরী কাজে..!!!
কিন্তু…!!

এই ঘটনার কিছুই শেফালী জানে না!!…

আমার সেন্স আসার প্রায় একঘন্টা পরেই দেখলাম সাদিফ ভাইয়া আসছে..কেমন দেখাচ্ছে উনাকে!!মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত..!!! উনি আসার একটু পরেই আমাকে ডিসচার্জ করে দেয়া হলো…!!
আর বাসায়ই উনি সব ঠিক ঠাক করেছিলেন…!!

*
*
🌸
এই তিনদিন উনিই আমাকে স্যালাইন লাগিয়ে দিলেন..এই স্যালাইনের জ্বালায় হাতের উপরিভাগ টা ফুলে গেছে একদম..আর যতবারই সাদিফ ভাইয়া আমাকে স্যালাইন টা লাগিয়ে দেন ততবারই মুখটা এমন বেজার করে ফেলেন..যেন আমার চেয়ে উনি বেশি ব্যথা পাচ্ছেন..!!। হাহ…!কি অদ্ভুত!!!…
আমার জন্যে এত দরদ নাকি উনাকে না পারতে আমার সেবা করতে হচ্ছে তাই!!??। হুঁ !!আল্লাহ্ জানেন…!!

আজকে খালা আর খালু আসলেন আমাকে দেখতে..অনেক লেকচার দিলেন..ভালো করে খেতে হবে,ওষুধ খেতে হবে..!!.আর খালু ত মাশাল্লাহ!!! জ্ঞান দিতে এক্সপার্ট..!!!উনাদের কথা শুনে শুধু মাথা নাড়ালাম…আজকে আর সাদিফ ভাইয়ার দেখা মিললো না…খালু এখানে তাই হয়তো উনি একসাথে দুইটা অফিস সামলাচ্ছেন…!!!

*
*
হাই পাওয়ারের ওষুধগুলো খেলে আর মাথা ঠিক থাকে না ঘুম আসে বেশি…!!..মা আমাকে ভাত ওষুধ খাইয়ে চলে গেলেন কারণ খালু খালা আজ রাতে আমাদের বাসায়ই খাবেন…যাক এতকিছু না ভেবে চোখ অফ করে রাখলাম….!!মা দাদীকে আমার রুমে পাঠালেন..কারণ আমি তো ভীতুর ডিম..!!দাদী মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন…
“শেফা ফুল ঘুমিয়ে যা।।।”….

একটা আরামের ঘুম দিলাম…সকালে ঘুম ভাঙলো মায়ের কথা শুনে…এই সকাল বেলা মা কার সাথে কথা বলছে!!!..একটু ভালো করে কান পেতে শুনলাম.. সাদিফ ভাইয়া!!!?এই সকাল বেলা!!..আমি তো কলেজও যাবো না আজকে!!..যাক কিছু করার নেই আমার..কেন আসছেন এখন তা উনারা খালা আর বোনের ছেলে জানেন..আবার চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম…আবার চোখ লেগে এসেছিল..!! হঠাৎ চোখ খুলে দেখি সাদিফ ভাইয়া আমার রুমের সোফায় পা তুলে বসে মোবাইল টিপছেন..ঘুমের কারণে উনাকে ঝাপসা দেখছি..আসলেই কি উনি নাকি স্বপ্ন দেখছি??…উনার কথায় শুনে বুঝলাম না উনি সত্যিই বসে আছেন..!!

“কিরে শেফা রাতে কি তুই কোনো ফ্যাশন শো করতে যাস??!!এইভাবে হাতকাটা ড্রেস পরে ওরনা ছাড়া ঘুমাচ্ছিস..!!?আমার যে আর কতবার তোকে ওরনার জন্যে আরো কত কথা বলতে হবে আল্লাহ্ মালুম!!!তোর মত অসভ্য আমি আর দেখিনি..!!! বডি টা তো ভালো করে ঢেকে ঘুমাবি..কখন কার নজর কোথায় পরে কে জানে”..!! এসব বলেই সাদিফ ভাইয়া শব্দ করে হাসতে লাগলেন..!!

উনার কথা শুনে আমি চিৎপটাং!!ঘুমানোর সময় কেউ ওরনা দেই নাকি একেবারে কামিজ পড়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ঘুমায়!!??..কেন রে ভাই আপনি কি মেয়ে যে এত কিছুই জানেন!!!আর ঘুমানোর সময় ওরনা দেয়া কি ফরয!??আমি তো আর কোনো লোককে দেখতে যাচ্ছি না হাত কাটা ড্রেস টা!!।। মাথা মোটা লোক একটা….!! কিন্তু আফসোস আমি কথা গুলা মনে মনে বললাম..!! নাহয় কে জানে কখন আবার মেরে দেয়!!আর নাহয় একটা বাজে কথা বলে ফেলে!!?? চুপ করে গায়ের চাদরটা টেনে নিলাম..কই চাদর তো ঠিকই আছে…ইচ্ছা করেই উনি আমাকে অপমান করলেন..!!কি নির্লজ্জ!!!!
একটুও তাকায়নি আমি তার দিকে কেন তাকাবো!!!কত সুন্দর সুন্দর কথা বললেন উনি আমাকে সেই খুশিতে নাকি!!? হাহ আমার বয়েই গেছে!!..
বারান্দা থেকে মা বলে উঠলেন …”সাদিফ একটু অপেক্ষা কর বাবা…আমি এখনি তোকে নাস্তা দিচ্ছি আর বড় আপা কে বলিস আমি কালকে উনাকে দেখতে যাবো.. আচ্ছা নাহয় আমি ফোন করে কথা বলে নিবো”!!…
“সমস্যা নেই ছোট খালা তুমি কাজ শেষ করে নাও আর মা কে বলে দিবো আমি”!!..

মা বারান্দায়!!উনার কি আক্কেল নেই!!?এই লাগামহীন কথা মা শুনলে কি হতো!!??আর বড় খালারই বা কী হলো!!?
“মা বড় খালার কি হলো?”…
“কাল রাতে এইখান থেকে গিয়ে নাকি তোর খালার সুগার ফল হলো!!…তাইতো আজ ছেলেটা সকাল সকাল এখানে আসছে !!…আর সারাদিনই নাকি আজকে বাইরেই থাকবে..রাতে জানিয়ে ভালো করেছিলি রে সাদিফ!!..সব রান্না শেষ…তোকে প্যাক করে দিচ্ছি আমি .. টাইমলি খেয়ে নিবি.. এখন আয় নাস্তা করে নে..আর শেফা উঠ তো মা!!…মা চলে যাচ্ছে আর সাদিফ ভাইয়া উঠে আমার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো..!!

মার কথা শুনে উনার দিকে একটু তাকালাম…কিন্তু চোখ আটকে গেলো উনার গেট আপ এ…একদম সব ফিটফাট!!।। চুল দাড়ি একদম সেট করা… ওমা!! ছেলে তো দেখি নিউ কাট দিলো চুলের..!!বেশ মানিয়েছে.. ব্ল্যাক স্যুট এ বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে আর তার চোখগুলো!!… ওহ মাই আল্লাহ্।।!!! কয়জন মেয়ে আজ উনার প্রেমে পড়বে আল্লাহ্ ই জানেন..!!!

“এভাবে দেখিস না আমাকে নজর লাগবে..!আর শুন ভুলেও ওরনা ছাড়া বারান্দায় যাবি না.. ইনফ্যাক্ট ওরনা জড়ানো ছাড়া কোথাও যাবি না..!!ননসেন্স”…!!এসব বলে সাদিফ ভাই চলে গেলেন…

এব্বাব্বা… কত ঢং!!! পড়বো না আমি ওরনা হাহ..!!আসছে জ্ঞান দিতে…!!ওরনা ছাড়া আমি কোনোদিন ঘড় থেকেও বের হই নি..!! কাবিল!!মুখ ভেংচিয়ে বসে থাকলাম মা আসার অপেক্ষায়!!!!
*
*
🌸
নাস্তা করে মেডিসিন নিয়ে বসে আছি বিছানায়..দাদী আর মা আছে পাশে..মা বড় খালাকে কল দিয়ে বললেন কাল যাবেন…কিন্তু খালাই মানা করে দিলেন কারণ আমি অসুস্থ তাই..!!! বড় খালা আমাকে উনার জমজ মেয়ে ইতি আপু আর জুমান আপুর মতই ভালোবাসেন..!!আপুরা আজ আমাকে দেখতে আসবেন বলেছেন… দুনোজন অনেক ট্যালেন্টেড..!!ইনফ্যাক্ট ওরা তিন ভাইবোনই ট্যালেন্ট এ ভরপুর.!!..এক্সাম থাকায় এতদিন আসতে পারে নি আমাদের বাসায়.. নাহয় ওরা প্রায়ই আসে!!!

*
*
সারাদিন বসেছিলাম তাদের অপেক্ষায়…কালকে নাকি এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে তাই তারা সকালেই তা কমপ্লিট করে এরপর আসবে.!!অপেক্ষা করতে করতে ঘুমে কাত আমি.. !!!বিকালে গাড়ির হর্নের আওয়াজে ঘুম ভেংগে গেলো.. ..!!তিন চার মিনিট পরেই দেখলাম আপুরা হাসিমুখে রুমে আসলো আর আমাকে জড়িয়ে ধরে হালচাল জিজ্ঞেস করতে লাগলো…

“শেফা বেবি..কেমন আছিস এখন তুই!!?? ইস শুকিয়ে গিয়েছিস…!!সমস্যা নেই সাদিফ ভাইয়া কে বলবো তোকে বেশি বেশি খাওয়াতে”!!বলেই হাসতে লাগলো….
আমি বিনিময়ে একটু হাসলাম…ওদের সাথে বক বক করতেই লাগলাম..মা এসে খাবার এখানেই দিয়ে গেলেন…কথার মাঝে জুমান আপু বলে উঠলো..!!
আর কখনো ঐ রকম কারবারি কাজ করতে যাবি না..ইমরান ইজ সো ডেঞ্জারাস..!! সাদিফ ভাইয়া আমাদের সব বলেছে…এসব কাহিনী বলার সময়ও ও রাগে সোফাতেই লাথি মেরে দিলো..সেদিন নাকি তুই না ধরলে ও ইমরান কে মেরেই ফেলতো…!!

আমি এগুলা শুনে বরফের মত জমে গেলাম..আমার উপর রাগের জন্যে সোফাটা ব্যাথা পেলো..ইসস…!!!

*
*
অনেক আড্ডা দিলাম আমরা বোনরা মিলে.!!..একসাথেই খেলাম আমরা সবাই…সাড়ে দশটার দিকে ইতি আর জুমান আপু আমার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলেন একাই কারণ ওদের নাকি সকালে আর্লি ক্লাস আছে..!! এরপর মা এসে ওষুধ খাইয়ে দিলেন..!!মেডিসিনের ডোজে চোখ বুজে আসছে..!!কিন্তু তাও শুনলাম সাদিফ ভাইয়া আর মায়ের কথার আওয়াজ…

“খালামণি কাল থেকেই ওকে আবার পড়তে বসতে হবে..এতদিনে অনেক পিছিয়ে গিয়েছে”!!..আর আমি স্যালাইন খুলে দিচ্ছি..আজকেই তো শেষ ডোজ ছিল!!!..
“হ্যাঁ বাবা তা তো পিছিয়েছেই.!!. তুই যা ঠিক বুঝিস তাই কর..!!আর মেয়েগুলা তাড়াহুড়া করে চলে গেলো আমি একটু আপার জন্যে খাবার দিচ্ছি ঐগুলা নিয়ে যাস”…!!

“আচ্ছা”….!!!

ওদের কথাগুলো শুনতে পারছিলাম বাট চোখ খোলার শক্তি পাচ্ছি না… সাদিফ ভাইয়া আমার হাতের স্যালাইন খুলে দিচ্ছে তা বুঝতে পরলাম ঠিকই…..!!!

কিন্তু হঠাৎ হাতের উপরিভাগে নরম কিছুর স্পর্শ পেলাম তারপর কপালে!!!..কেন জানি আমার শরীরটা কেঁপে উঠলো.!!..এই স্পর্শটা এমন যেমনটা চুমু দিলে হয়….কিন্তু এই স্পর্শটা মায়ের নয়…মা চুমু দিলে আমার এভাবে শরীর কেঁপে উঠে না…!!

তাহলে কি সাদিফ ভাইয়া আমাকে চুমু দিলো!!!.. ওহ নো…!!এটাও কি কখনো সম্ভব!!!??…

চলবে…♥️

কেমন হয়েছে গল্প অবশ্যই আমাকে কমেন্টস করে জানাবেন..হ্যাপি রিডিং♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here