প্রিয়তমা❤️ #সিজন_২ #writer- সালসাবিল সারা পর্ব-৩৮ *

0
1059

#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-৩৮
*
*
এই পর্যন্ত ছয়বার কল দিলাম সাদিফকে।কিন্তু না,উনার কোনো খবর নেই।কিছুক্ষণ আগে ফোন এলো মায়ের প্রচন্ড জ্বর।ভাবী ফোন করে ঐবাসায় যেতে বললো।
এমন কথা শুনে আমার পুরো দুনিয়া ঘুরে গেলো।হঠাৎ মায়ের কি হলো কিছুই বুঝলাম না।
সাতপাঁচ না ভেবে,আমি কথাটা শোনা মাত্রই আম্মুকে জানালাম ব্যাপারটা,মায়ের জ্বর শোনা মাত্র আম্মু আমাকে রুমে পাঠিয়ে দিলো রেডি হতে।

রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি অনেক্ষণ হলো। সাদিফকে কল দিয়ে চলেছি কিন্তু না,বান্দা ফোন ধরে না। নিশ্চয় মিটিং নিয়ে ব্যস্ত।
এসব কথা ভাবার মাঝেই আম্মু এলো রুমে।

“ফুল,চল।”(আম্মু)

“আম্মু,আপনার ছেলে কল রিসিভ করেনি।উনাকে না জানিয়ে গেলে যদি বকা দেয়?”(আমি)

“আরে বাদ দে। পরে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হবে।”(আম্মু)

আমি আর আম্মু তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে।যাওয়ার সময় আম্মু আশা খালাকে বলে গেলো আমরা ঐবাসায় যাচ্ছি।

ইতি আপু আর জুমু শপিংয়ে গিয়েছে।ওদের কল দিয়েছিলাম কিন্তু ওরাও কল রিসিভ করেনি।কি হলো সবার আজ, আল্লাহ্ জানেন।

বাসায় পৌঁছে মায়ের সাথে দেখা করে রুমে গিয়ে আবায়া হিজাব খুলে আবারো নিচে নেমে এলাম।ডক্টর এসেছিলো আমি আসার একটু আগেই।সিরিয়াস কিছুই না,এইটা মূলত ভাইরাস জ্বর।খালামণি,আমি,ভাবী একসাথেই রুমে বসে আছি মায়ের পাশে।আর আমার কোলে আফ্রা বাবু।বাচ্চাটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে।এখন দেখলে হাত নাড়িয়ে খেলে বাবুটা।কোলে নিলে মাড়ি দেখিয়ে হাসে।

মা এখন মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে আছে।খালামণি,ভাবী ডাইনিং এর দিকে গেলো।আর আমি বাবুকে নিয়ে মায়ের পাশে বসে আছি।একটু করে মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।

মিটিং শেষে মোবাইলে শেফার এতগুলো কল দেখে বেশ ভয় পেলো সাদিফ।দ্রুত সে কল ব্যাক করলে,ঐপাশ থেকে কেউ কল রিসিভ করেননি।চার পাঁচবার কল দেওয়ার পরেও যখন তার বউ কল ধরেনি,সাদিফ দ্রুত গাড়ি নিয়ে বের হলো অফিস থেকে।তার মায়ের নাম্বারও ট্রাই করলো,কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না।শেষ পর্যন্ত সাদিফ ইতিদের কল দিলো।অনেক্ষণ পর ইতি কল রিসিভ করলো।

“হ্যাঁ ভাই বলো।”(ইতি)

“মোবাইল কই রাখিস?কল দিয়েছি দেখিসনি?”(সাদিফ)

“ভাই,আমরা তো শপিংয়ে এসেছি।তাই কল দেখিনি।”(ইতি)

“শেফার সাথে কথা হয়েছে? ওর মোবাইলে কল দিয়েছি, কিন্তু রিসিভ করছে না কল।না মা রিসিভ করছে না শেফা রিসিভ করছে।কি হলো কিছুই তো বুঝলাম না।”(সাদিফ)

“আমাকেও কল দিয়েছিলো। ব্যাক করলাম কল কিন্তু কেউ ধরেনি।”(ইতি)

“ওকে,আমি দেখছি ব্যাপারটা।মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।”(সাদিফ রেগে বললো)

ইতি কিছু বলার আগেই সাদিফ কল কেটে দিলো।

তার বাবাকে ফোন করেছিলো সে,কিন্তু তার বাবা বাহিরে ঘরে নেই।

সাদিফের মেজাজ সপ্তম আসমানে উঠে গিয়েছে।সে এখন শেফাকে হাতের কাছে পেলে কি করবে সে নিজেও জানে না।এক ঘণ্টার পথ সে চল্লিশ মিনিটে ড্রাইভ করে বাসায় চলে এলো।

দ্রুত বাসায় প্রবেশ করতেই সে আশার মুখোমুখি হলো।

“ফুল”বলে চিৎকার করে ডেকে উঠতেই আশা বললো..

“বড় ভাইজান,ভাবী আর খালা ভাবীর বাসায় গেছে।”

সাদিফ এই কথা শুনে আরো রেগে গেলো।

“কখন গিয়েছে?”(সাদিফ)

“সেই সন্ধ্যাবেলা।কিল্লাই গেছে কিছুই কই যায় নো।শুধু কইছে ঐ বাসায় যাইতাছে।”(আশা)

সাদিফ কিছু না বলে বেরিয়ে পড়লো শেফার বাসার উদ্দেশ্যে।রাগে তার শরীর টগবগ করছে।তার রাগ, শেফার কল রিসিভ না করা।শেফা এত দায়িত্ব জ্ঞানহীন.. এটা ভাবতেই সাদিফের কপালের রগ ফুলে উঠলো।

শেফার বাসায় গিয়ে সে ড্রইং রুমে তার মা আর ভাবীকে দেখতে পেলো।

“আরে সাদি, তুই বাসায় যাসনি?শেফা তোকে কতো ফোন করেছে কিন্তু তুই রিসিভ করিসনি কেনো?”(সাদিফের মা)

“আমি মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তোমাকে আর তোমার বোনের মেয়েকে আমি এতো কল দিয়েছি,কিন্তু কেউই একটা ফোন রিসিভ করোনি তোমরা।(সাদিফ রাগী ভাবে বললো)

সাদিফের মা তার পার্স খুলে মোবাইল চেক করতে লাগলো।

“আরে বাবা!আমি তো মোবাইলই ফেলে এসেছি রুমে। অনেক তাড়াহুড়ো করে এসেছি,তাই মোবাইলের কথা আর খেয়াল ছিলো না।”

“ওহহ গ্রেট! বেশ ভালো করেছো। তো তোমার আদরের বোনের মেয়ে কোথায়?”

“আছে তোর খালামনির রুমে।তোর খালামনির…”

সাদিফ তার মায়ের সম্পূর্ণ কথা না শুনে হনহন করে রুমের দিকে পা বাড়ালো।

রুমে গিয়েই সাদিফ তার বউকে দেখতে পেলো। শেফা তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আর শেফার কোলে ছোট্ট আফ্রা।

“মোবাইল কই রাখিস?হাজারবার কল দিয়েও পাওয়া যায় না কেনো??”(রাগী কণ্ঠে সাদিফ বলে উঠলো)

হঠাৎ এমন রাগী কণ্ঠ শুনে শেফার মন কেঁপে উঠলো।মাথা উঁচু করতেই সে সাদিফকে দেখতে পেলো।
সাদিফের চোখজোড়া প্রচন্ড লাল দেখাচ্ছে।কিন্তু সাদিফের হঠাৎ এতো রেগে থাকার কারণ কী, তা শেফার অজানা।

উনার হঠাৎ এমন অজানা রাগ দেখে আমি বলে উঠলাম..
“আমার রেগে থাকার কথা।আপনি কেনো রাগ দেখাচ্ছেন?আর আস্তে কথা বলুন।মা অসুস্থ।”

সাদিফ আমার কোল থেকে বাবুকে নিয়ে নিলো।এরপর আমার হাত চেপে ধরে আমার রুমে নিয়ে গেলেন।
উনি আমার গাল গাল চেপে ধরে বলে উঠলেন….

“খালামণি অসুস্থ সেটা কি আমাকে একটা মেসেজ দিয়ে বলা যেতো না? ফোন রিসিভ করছিলে না তার উপর তোমার এতগুলো কল দেখে আমার মনে হয়েছিল খুব খারাপ কিছু হয়েছে।যার কারণে তুমি কল রিসিভ করছিলে না।”

“মায়ের এমন অসুস্থতার কথা শুনে আমার খুব নার্ভাস লাগছিলো। আপনি কল রিসিভ করেননি। তাই বাসায় আসার টাইমে মোবাইল পার্স এর মধ্যেই রেখেছিলাম।।আমি তো পার্স আমার রুমে রেখেই মায়ের কাছে গিয়েছি। যার কারনে রিংটোন শুনিনি।তাই…সরি।”
(আমি মাথা নিচু করে বললাম)

“তুই জানিস আমি কতো টেন্সড ছিলাম? তোর কি উচিত হয়নি মোবাইলটা তোর পাশে রাখা! এমন কাজ যেনো দ্বিতীয়বার আর কখনো না হয়। আমি খুব টেনশনে ছিলাম জান।”
কথাগুলো বলেই সাদিফ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে
আমার কপালে চুমু দিলেন।

আমি কিছু না বলেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি উনার বুকের মাঝে।

“এই!”(সাদিফ ভাইয়া)

“হুম”

“রাগ করেছো?আচ্ছা আই অ্যাম সরি।উম্মাহ জান।”
(সাদিফ ভাইয়া আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললেন)

“আমি কিছুদিন বাসায় থাকবো।প্লিজ না করবেন না!!”
(আমি)

“নো। নট পসিবল।ডিনার করে চলে যেতে হবে।”(সাদিফ ভাইয়া)

“প্লিজ!মা অসুস্থ। আমার মাকে ফেলে ঐবাসায় যেতে একটুও ইচ্ছা করছে না।প্লিজ সাদি।দুইদিন থাকবো,জাস্ট দুইদিন।”(আমি)

আমার কথায় উনি আমার শাড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে পেটে জোরে খামচি দিলেন।
“ওকে ফাইন।দুইদিন থাক।কিন্তু আমাদের বাসায় যখন যাবি তখন দুইদিন দিনরাত রুমে আটকে থাকবি।দিনরাত রোমান্স চলবে। রুম থেকে বের‌ই হতে দিবো না।নাও চয়েস ইজ ইয়োর্স।চাইলেও পারবি না রুম থেকে বের হতে।”

খামচির ব্যাথায় আর উনার কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এলো।

“আপনি এমন পাথর কেনো?জাস্ট দুইদিন থাকলে কি এমন হবে??”
আমার কান্না মাখা কণ্ঠ শুনে উনি আমার গাল ধরে আবারো বললেন…

“সাদনান সাদিফ এক কথার মানুষ।সে একটা কথা বারবার রিপিট করে না।”

আমি কিছু বলতে গেলে,উনি আমার ঠোঁটে আলতো করে কামড় দিয়ে বাবুকে কোলে নিয়ে চলে গেলেন রুম থেকে।
একদম মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।অসহ্যকর লোক একটা।একদিন বউ ছাড়া থাকা যাবে না!ঢং দেখে বাঁচিনা। ফালতু লোক কোথাকার।মুখে হালকা পানি ছিটিয়ে দিয়ে আমি মায়ের কাছে চলে গেলাম।
ঐ রুমে গিয়ে দেখি, সাদিফ মায়ের সাথে বসে কথা বলছে।সাথে আছেন আম্মু,ভাবী। আফ্রা এখন ভাবীর কোলে।
কী শান্তভাবে আস্তে করে কথা বলছেন সাদিফ মায়ের সাথে!আর আমাকে কামড় খামচি দেয়া ছাড়া কথায় বলেন না।

“মা আমি আজ তোমার সাথে থাকবো।উনাকে বলো আমাকে যেনো আজ এইখানে থাকার পারমিশন দেন।”
(আমি)

মা ধীর গলায় বললো…

“ছেলেটার এখন কাজ কর্ম বেশি।তুই এইখানে থাকলে ওর সমস্যা হতে পারে।তাই, আর কিছুদিন পরে এইখানে এসে থেকে যাস।ইলকেশনটা শেষ হলেই এক মাসের জন্যে এনে রাখবো তোকে।”

“বাহ্ বাহ্!তোমাকেও পড়িয়ে দিয়েছেন উনি।ওকে ফাইন,থাকবো না এই বাসায়। ঐ বাসায়ও থাকবো না।”
কথাগুলো বলেই গাল ফুলিয়ে চলে গেলাম ড্রইংরুমে।

ডিনার করে সাদিফ আর খালামনির সাথে চলে এলাম বাসায়।উনার আগেই ধপ ধপ করে রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলাম।উদ্দেশ্য আজকে উনাকে রুমে ঢুকতে দিবো না।

শাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। পালাজো আর টিশার্ট পড়ে নিলাম। সাদিফ এনে দিয়েছে এগুলো।কারণ পিরিয়ড চলাকালে শাড়ি বা থ্রি পিস পড়ে আমি ঘুমাতে কমফোর্ট ফিল করি না।

ফ্রেশ হয়ে তাওয়াল দিয়ে মুখ মোছা অবস্থায় রুমে আসতেই, কেউ একজন আমাকে জোর করেই কোলে তুলে নিলো।
আর আমি “আল্লাহ্ রে”বলে চিৎকার দিলাম।
কারণ,আমি তো রুম লক করে দিয়েছি।এইখানে ভূত ছাড়া আর কে আসবে!আমি এখনো তাওয়াল মুখে চেপে ধরে আছি।ভুত দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আমার।
কোলে থাকা অবস্থায় আমি ছটফট করতে লাগলাম।

“উফরে!চিল্লিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিলো।”

সাদিফের কথা শুনে আমি দ্রুত মুখ থেকে তাওয়াল সরিয়ে নিলাম। সাদিফ আমাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।আর আমার দিকে দুষ্টু নজরে তাকিয়ে রইলেন।

“এই আপনি এইখানে কেমনে এসেছেন?আর আপনার সাহস কতো আমাকে কোলে নেন?এই নামিয়ে দিন আমাকে।খারাপ লোক।আমাকে আমার বাবার বাসায় থাকতে দেয়নি।”(আমি)

সাদিফ আমার গালে উনার নাক ঘষে বললেন…

“ঐবাসায় থাকলে আমি আমার বউকে আদর কেমন করে করবো বল তো?আমার বউকে ছাড়া আমি কেমন করে থাকি? ওর গায়ের সাথে না লেগে ঘুমালে আমার ঘুম আসে না।”

“ওহহ আচ্ছা তাই?আপনি ঐ বাসায় থাকলে কি পাপ হতো?অন্তত একদিন হলেও থাকতেন!”

“নো, সাদনান সাদিফ শ্বশুর বাড়িতে থাকে না।”

“হ্যাঁ, সাদনান সাদিফ নায়ক তো তাই।ফালতু একদম আপনি।নামিয়ে দিন আমাকে।”(আমি)

সাদিফ আমাকে নামিয়ে না দিয়ে উল্টো আমার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে নিলেন।আমি আবেশে উনার পাঞ্জাবি খামচে ধরলাম।বেশ কিছুক্ষণ পর আমাকে বেডে শুইয়ে দিলেন উনি।

“ফ্রেশ হয়ে আসি।”
বলে উনি পাঞ্জাবি খুলে ক্লথ হ্যাঙ্গারে রেখে দিলেন।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে মুখ পর্যন্ত কম্বল দিয়ে ঢেকে দিলাম।

সাদিফ তার প্রিয়তমার এমন কান্ড দেখে হেসে উঠলো।

ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো…শেফা পুরো পাতলা কম্বলটি নিজেই নিয়ে নিলো। সাদিফের জন্যে রাখেনি কম্বল।
সাদিফও কম কিসে!সে একটানে একপাশ থেকে কম্বল ছুটিয়ে নিলো।
আমি এতো চেষ্টা করেও পারলাম না উনার সাথে।এক পাশে ফিরে শুতেই,আমার পেটে উনার হাতের স্পর্শ পেলাম। আমার টিশার্ট নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই উনি আরো শক্ত করে আমার পেট চেপে ধরলেন।
আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলেন।আর আমি এক অস্বস্থিতে পড়লাম।উনার হাত ছাড়ানোর চেষ্টাতে বিফল হয়ে আমিও উনার হাতের উপর হাত রেখে ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।

বিশাল এক ভোটের মাধ্যমে,ইলেকশনের কাজ শেষ হলো।এই কয়দিন সাদিফ সেই সকালে যেতো,আর আসতো রাত এগারোটার পরে।
আজ সন্ধ্যাবেলায় ইলেকশনের রেজাল্ট দিবে। সাদিফ এখনো অফিসে।আল্লাহ্ই জানে কি হয়!

আম্মু শুধু একটি দোয়া করছেন উনার ছেলে যেনো জিতে যায়।আমি এসব ইলেকশন রাজনীতি কিছুই বুঝিনা।আর আমার কপালেই পড়লো একটা পলিটিশিয়ান।
আমি আল্লাহ্ এর কাছে শুধু এই দোয়া করি,উনার জন্যে যেটা ভালো হবে আল্লাহ্ সেটাই করুক।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফলাফল প্রকাশ হলো।বিপুল সংখ্যক ভোটে সাদিফ জিতে যায়। বাসায় সবার মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। সাদিফ এখন বেশ উঁচু পদ পেলো।

বাসায় আসতেই সাদিফ আম্মু আর খালুকে সালাম করলো।খালু তার ছেলেকে নিয়ে বড্ড গর্বিত।আম্মু উনাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে ছিলেন।

ইতি আপুর বিয়ের আর মাত্রই তিন দিন বাকি।আগামীকাল হলুদের অনুষ্ঠান হবে।তাই সবাই এখন প্রচুর ব্যস্ত।আপু তো পার্লারে যায় প্রায়ই।আমাকেও যেতে বলে,কিন্তু আমার এতো ফেসিয়াল ভালো লাগে না।তাই আমিও আর যায়নি।
সারাদিন নানা ব্যাস্ততার মাঝে এই দিনটিও কেটে গেলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম,চারপাশে পর্দা সরানো।তারমানে সাদিফ উঠে গিয়েছে। শোয়া উঠে বসতেই দেখলাম উনি আয়নার দিকে পিঠ দিয়ে আয়নাতে তাকিয়ে পিঠে কিছু লাগাচ্ছেন।

আমার পড়নে উনার টিশার্ট।আমি টিশার্ট ঠিক করে,চুলে হাত খোঁপা করে নিলাম।বেডে বসে উনাকে বললাম…

“কি হয়েছে পিঠে?”

আমার কথায় উনি হাতে অয়েন্টমেন্ট নিয়ে আমার কাছে এগিয়ে আসলেন।

“তোমার হাতের নখ কাটবে আজকে।পিঠে খামচিয়ে তো চামড়া তুলে নিয়েছো। কাল রাতে তোমাকে আদর করার ফলাফল এইগুলো। অন্যান্য দিনের চেয়ে কাল বেশি হিংস্র ছিলে তুমি।”

আমি উনার হাত থেকে অয়েন্টমেন্ট নিয়ে উনাকে বেডে বসার জন্যে ইশারা করলাম।উনার পিঠে অয়েন্টমেন্ট লাগানো অবস্থায় বলে উঠলাম…

“আপনি কম করেছেন নাকি?যেমন ফাইজলামি করবেন তেমন খামচিও গিফট পাবেন।আপনার এতো রোমান্স আসে কেমন করে?”

“কি করবো বল?তোকে দেখলে আমার কন্ট্রল হয়না।আর এখন তো আরো সুন্দর লাগছে তোকে।আমার ভালোবাসার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে তোর গলায় বুকে।আরেকবার শুরু করবো রোমান্স?”
(আমার দিকে ফিরে বললেন)

“নো।আমার এনার্জি নেই আর।অনেক কাজ করতে হবে। দয়া করে আমাকে আর এসবে জড়াবেন না।”

“ওকে।বাট শাওয়ার তো করতেই পারি একসাথে।”

“আপনি তো নিয়েছেন শাওয়ার। তাহলে আবার কি??”

কিন্তু আমার কথা কে শুনে? উনি উনার বক্তব্য দিয়ে আমাকে ধপ করে কোলে নিয়ে ওয়াশ্রুমের দিকে ছুটলেন।

চারদিকে অনেক মানুষের আনাগোনা।খুব সুন্দর করে সাজানো চারপাশে। মেয়েরা সবাই বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়েছে।আর ইতি আপু বাসন্তী রঙের ডিজাইনিং লেহেঙ্গা।সবাইকে অনেক সুন্দর লাগছে।
আমি বাসায়ই সেজেছি।কারণ,পার্লারে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার ছিলো না।কিন্তু আমি বেশ ভালো সাজতে পারি নিজে নিজেই।তাই আর কোনো সমস্যা হয়নি।
রেডি হয়ে নিচে নামলাম। সাদিফ এখনো ওয়াশ্রুমে। উনি যখন রুমে এসেছিলেন তখন আমি মেকাপ করে চুল বেঁধে নিয়েছিলাম।আর উনি ওয়াশরুমে যেতেই আমি দ্রুত শাড়ি পড়ে, অর্নামেন্টস লাগিয়ে নিলাম।

আম্মু রেডি হয়ে নিচে নামলেন।আমি তখন বসেছিলাম লিভিংরুমে।নানু,মামী, জুরু সবাই দুইদিন আগে চলে এসেছিলো।

কিছুক্ষণ পরেই, সাদিফ আসলেন।উনাকে বেশ লাগছে দেখতে। উনার ফর্সা গায়ে মেরুন রঙের পাঞ্জাবি বেশ ফুটে উঠেছে।আমাকে দেখেই ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখালেন।আমি চোখ রাঙাতেই, হিহি করে হেসে উঠলেন উনি।

সবাইকে উনি মাইক্রোতে উঠিয়ে দিলেন। আমি আর সাদিফ উনার গাড়ি করেই যাবো।ড্রাইভিং সিটে উনি বসলেন আর তার পাশের সিটে আমি বসে পড়লাম।
গাড়ি স্টার্ট করে উনি আমার একহাত উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলেন।

উনি আমার ডান হাতের তালুতে চুমু দিয়ে বললেন…

“এখন যতই সুন্দর লাগুক তোকে,আমার কোনো টেনশন নেই।”

“কেনো?এখন কি আর ভালোলাগে না আমাকে?”

“বাচ্চা মেয়ে বলে কি! আমি বলছি তোর নাকে স্বর্ণের নোস্পিন,হাতের স্বর্ণের বালা বলে দেয়,তুই বিবাহিত।
সো,কোনো মহিলা বা অন্য ছেলে তোর দিকে তাকিয়ে নিজের জন্যে আফসোস করবে।কারণ তুই তো আমার বউ।কেউ ভুলেও তোর দিকে তাকাবেনা।সো,এইদিকে আমার অনেক টেনশন কমে গিয়েছে।”

“কিন্তু আপনার দিকে মেয়েরা তাকালে,তখন?আপনিও নোসপিন লাগিয়ে নিন।তাহলে আর মেয়েরা তাকাবেনা আপনার দিকে। হা হা হা।”

“মজা নিচ্ছিস?”

“নাহ তো।আমার কি এত বড় স্পর্ধা আছে?আমি আপনার সাথে মজা নিবো?”
বলেই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলাম।

“এভাবে হেসে পাগল করবি না এখন আমাকে। আমি গাড়িতে রোমান্স শুরু করে দিলে,তখন সেটা তোর ভালো লাগবে না।”

উনার এমন নরম কণ্ঠ শুনে আমার শরীর কেঁপে উঠলো।
কিছু না বলেই চুপ করে বসে রইলাম।আর উনি আমার হাত ধরে রেখে ড্রাইভ করছেন।

গাড়ি থেকে নামতেই, ইজহারের মুখোমুখি হলাম।তাকে দেখার সাথে, তার হাতের ব্যান্ডেজটাও চোখে পড়লো। সাদিফ এসে আমার হাত ধরতেই আমি সাদিফের দিকে তাকালাম। উনি রাগীভাবে ইজহারের দিকে তাকিয়ে আছেন।
আমি মনে মনে এই দোয়া করছি,আজকে যেনো আর কোনো গন্ডগোল না হয়।

চলবে…❤️

কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।

আমি জানি সবাই প্রিয়তমা গল্পটা বেশ লাইক করো।কিন্তু একটা গল্প বেশি পার্টে নিয়ে গেলে,গল্পটা তার সৃজনশীলতা হারায়।আর আমি বেশ চিন্তায় আছি।পরবর্তী গল্পে তোমাদের সাপোর্ট পাবো নাকি বুঝছিনা।তোমরা শুধু এই গল্পটাই চাও,কিন্তু আমাকে অন্য গল্প লিখার সুযোগটা দাও প্লিজ।সবার সাপোর্ট চাচ্ছি আমি😔।আর আমি থ্রিলার,রহস্যজনক এসব গল্প কখনো পড়িনি সাথে এমন কাহিনী রিলেটেড কোনো মুভি দেখিনি।কারণ আমি বরাবরই ভীতু মানুষ।তাই নেক্সট গল্পটাও রোমান্টিক ক্যাটাগরির হবে ইন শাহ্ আল্লাহ্।
তোমাদের সাপোর্ট না পেলে নিউ গল্প দিবো না।🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here