#প্রিয়তমা❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-৩৯
*
*
সাদিফের হাত ধরে আমি এক প্রকার জোর করেই উনাকে হলের ভেতর নিয়ে গিয়েছি। উনি এক মানুষ, যখন তখন মারপিট করতে বসে থাকেন। কিন্তু একটা কথা ভাবছি,ইজহার অমানুষের হাতে কি হলো? আল্লাহ্ই জানেন ।
আমি হলে গিয়ে সবার সাথে আলাপ করা শুরু করলাম।তাসফিয়া এসেছিলো অনুষ্ঠানে।কিন্তু সে অল্প সময় থেকে চলে গেলো।তাসফিয়া থেকে আজকে জানতে পারলাম, তাসিফ ইতালি চলে গিয়েছে।সে ঐখানেই লেখা পড়া শেষ করবে। সবচেয়ে অবাক করার কথা হলো.. তাসফিয়া আমাকে “সরি” বলেছে তাসিফের পক্ষ থেকে। ইতালি যাওয়ার আগে তাসিফ তার সব কর্মকাণ্ড তাসফিয়াকে বলেছিলো। তাসিফ খুবই অনুতপ্ত ছিলো তার ব্যবহারের কারণে। যাওয়ার আগে সে তাসফিয়া কে বলেছিলো… “তাসিফ আর কখনোই শেফা আর সাদিফের মাঝখানে আসবে না।”
এসব কথা শুনে মনটা অনেকটাই হালকা লাগলো আমার। দেরি করে হলেও তাসিফ নামের মানুষটিকে আল্লাহ্ বুদ্ধি দিয়েছেন এটাই অনেক।
সাদিফ অন্যান্য মেহমানদের দেখছেন।আর আমি সব কাজিন,ভাবী,আন্টি এদের সাথে আলাপ করছি।
জুমু,ভাবী, মামী সবাই প্রচন্ড ব্যস্ত।
নানা মেহমানদের সাথে আলাপের মাঝে ইজহারের মায়ের মুখোমুখি হলাম। ঐ ঘটনার পর উনাকে কি বলবো সেটাই ভেবে পাচ্ছি না আমি।তাও সৌজন্যতা বজায় রেখে আমি আন্টিকে বললাম…
“আসসালামুআলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?”
“তোমার জামাই ভালো থাকতে দিলো কই?”
কথাটি বলে উনি হন হন করে চলে গেলেন।আর আমি অবাক চোখে দেখে আছি। সাদিফ তো এমনি মারেনি উনার ছেলেকে।উনার ছেলে কি পরিমান জঘন্য সেটা কি উনার অজানা!এসব মহিলা নিজের খারাপ ছেলেরই কদর করবে,ছেলের দোষ ঢাকতে অভিজ্ঞ এরা।
এসব কথা মনে মনে ভেবে আমি বাকি কাজ করছিলাম মানে মেহমানদারী করছিলাম,অমনিই জুমু এসে আমার সামনে হাজির হলো।
“এই ভাবী, ইজহারের মা কি বলছিলো?”(জুমু)
“কিছু না। উনার সাথে দেখা হলো তাই সৌজন্যতার খাতিরে সালাম দিলাম। কিন্তু মহিলার তেজ দেখে কে!উনি বললেন,আমার জামাই নাকি উনাদের ভালো থাকতে দিচ্ছেন না।এটা কোনো কথা হলো?”(আমি)
“আরে ভাবী,তুই তো জানিস না ভোটের দিন কি হলো?”
(জুমু)
“কি হলো?কেউ কিছু বললেই তো জানবো!”(আমি রাগীভাবে বললাম)
জুমু আমার কাঁধে হাত রেখে বললো…
“ভোটের দিন সাদিফ ভাইয়ার অফিসে ওর অনেক সমর্থক গিয়েছিলো।ঐখানে ইজহার বানরটাও ছিলো।আমার ভাই ওকে দেখে প্রচুর রাগ করলেও মানবতার খাতিরে কিছুই বলেনি ইজহারকে।কিন্তু যাওয়ার বেলায় হ্যান্ডশেক করার সময় ইজহার ভাইয়াকে বললো সে নাকি একরাতের জন্যে হলেও তোকে ব্যাবহার করবে।কি পরিমান সাহস তুই ভেবে দেখ!এই কথা শোনার পর ভাই ওকে ছেড়ে দিবে ভেবেছিস?ভাই ওর হাতটা টেবিলে রেখে কাঁচের গ্লাস দিয়ে এমন জোরে মেরেছে.. গ্লাসের কাঁচ ভেঙে তার হাতে ঢুকে গেলো।এরপর আরো মারতে নিলে সবাই এসে ধরে ফেলে ভাইকে।”
আমার মুখ পুরো হা হয়ে আছে।এই লোক কিছুই বলেনি আমাকে।
“এই,তুই কেমন করে জানিস এইগুলো?তোর ভাই আমাকে কিছুই বলেনি।”
“এইসব কথা তোকে বলে কি হবে? আমাকে ইতি আপু বলেছে। আর ইতি আপু কথাগুলো শুনেছে রাফিদ ভাইয়া থেকে।সেদিন ভাই এমন ভাবে ডোজ দিলো ইজহারকে সে আর ভুলেও তোর দিকে হাত বাড়াবে না।”
(জুমু হেসে বললো)
আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই রাফসান ভাইয়া এসে হাজির। ভাইয়া এসেই আমাকে এক পাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
“ফুল!কি খবর তোর?”(রাফসান ভাইয়া)
“এহ? এমন ভাবে বলছো যেনো অনেক জনমের পর আমাকে দেখছো!”(আমি)
“তোর ভাই কি দুনিয়ায় থাকে?সে তো একটা এলিয়েন।না কোনো খবর নেয় না কোনো খবর দেয়।”(জুমু)
আমি হেসে বললাম…
“ওহহ,বুঝেছি।আপনারা ঝগড়া করতে এসেছেন এইখানে।ওকে ওকে।আমি কাবাবে হাড্ডি হবো না।বাই গাইজ।”
ওদের কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে আমি অন্যদিকে চলে গেলাম।
“এই তুমি আমার বোনের সামনে আমাকে এলিয়েন বলেছো কেনো?”(রাফসান)
“এলিয়েন কে এলিয়েন না বলে কি বলবো?তুমি আস্ত একটা অমানুষ।”(জুমু)
“চুপ একদম।বেশি কথা বললে কিন্তু মুখ এখানেই লক করে দিবো”(রাফসান দুষ্টু হেসে বললো)
“টাচ করবে তো মরবে।খবরদার আমার কাছে আসবে না।”(জুমু)
কিন্তু রাফসান জুমুর কথায় পাত্তা না দিয়ে। জুমুর একহাত জড়িয়ে ধরলো।আর শুরু করে দিলো তার প্রিয়তমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্যে নানা প্রচেষ্টা।
রাফিদ আজ অবাক নয়নে তার বউকে দেখছে। মেয়েটা এতো সুন্দর কেনো জানা নেই তার।ইতির চোখজোড়া রাফিদের খুব পছন্দের।এই চোখের মায়াতেই সে ডুবেছিল।ফটোগ্রাফার নানা ভঙ্গীতে তাদের ছবি তুলছেন।
রাফিদ দেরি না করেই তার ঠোঁট দিয়ে ইতির চোখজোড়া
ছুঁয়ে দিলো। ব্যস হঠাৎ এমন হওয়াতে,ইতি লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো।
–
এই পর্যন্ত কতবার চেয়েছি সাদিফের সাথে একা কথা বলবো কিন্তু না,একবারও বলতে পারিনি কথা।একবার স্টেজে উঠি,ছবি তুলি সবার সাথে কথা বলি,
মেহমানদারী করি,কিন্তু আমার জামাইয়ের সাথে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছিনা।
আমি আর জুরু দাঁড়িয়ে আছি।আমার কোলে আফ্রা।ভাবী উনার মা আর ভাবীর সাথে কথা বলছেন। আফ্রা কাঁদছিলো তাই ভাবীর কাছ থেকে আমি বাবুকে কোলে নিয়ে নিলাম।জুরাইন আমার সাথে নানা কথা বলছে।
হঠাৎ আমার কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে আমি ভয়ে পিছনে তাকালাম।পিছে তাকিয়ে দেখি, আমার গুণধর জামাই তার বত্রিশটা দাঁত দেখিয়ে হাসছে।
“এভাবে কেউ খোঁচা দেয়? আমি প্রচন্ড ভয় পেয়েছি।”(আমি)
উনি আমার কোল থেকে বাবুকে নিয়ে নিলেন।বাবুকে একেবারে বুকের সাথে মিশিয়ে আমাকে বললেন…
“আমি ছাড়া আমার বউকে স্পর্শ করার সাহস কার আছে? যে এমন দুঃসাহস করবে তাকে আমি মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।”(সাদিফ)
“হ্যাঁ। যেমনটা করেছেন ইজহারকে”।(আমি)
আমার কথা শুনে উনি ভ্রু কুঁচকে আমাকে বললেন…
“তুমি কিভাবে জানলে এই কথা??”
“আপনি কি ভেবেছেন আপনি আমাকে না বললে আমি কিছুই জানবো না! হাহা, আপনি চলেন পাতায় পাতায় আর আমি চলি ডালে ডালে।”(বেশ ভাব নিয়ে বললাম)
“হ্যাঁ গুড। একটু তো নিজের মনের মধ্যে সাহসিকতা
আনো।”(সাদিফ)
“আমি এমনিতেই অনেক সাহসী। মনে আছে আমি আর জুমু মিলে কি ধোলাই না দিয়েছিলাম ঐ একটা লোককে!”(আমি)
“হুঁ,বেশ মহা কারবারি তুমি।এসব দিন আর কখনোই আসবে না।কারণ এখন থেকে সাদিফ তোমার সাথে আঠার মতো চিপকে থাকবে।”(সাদিফ)
উনার কথায় আমি হেসে উঠলাম।এই লোকটা বড্ড পাগল।
সাদিফ জুরাইনকে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললেন…
“ব্রো তোর আপুর আর আমার কিছু ছবি তুলে দে প্লিজ।”
“এতো ফটোগ্রাফার থাকতে মোবাইলে কেনো ছবি তুলবেন?”(আমি)
“এইগুলো আমার ফোনে থাকবে ছবি।আর ফটোগ্রাফারের ছবিগুলো নিতে অনেক দেরী হবে। কিন্তু আমার এখন লাগবে আমার বউয়ের সাথে ছবি।”
(সাদিফ)
অনেকগুলো ছবি তুললাম আমরা একসাথে।জুরাইনও অনেক ছবি তুললো আমাদের সাথে।
অনেক নাচানাচি,অনেক এঞ্জয় করার মাধ্যমে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো।
প্রচণ্ড টায়ার্ড লাগছে।পা ফিল করতে পারছি না আমি।
এতো বড় হিল পড়ার ফলাফল এটা।
“কি হলো?টায়ার্ড লাগছে??”(সাদিফ)
“হ্যাঁ,টায়ার্ড লাগছে অনেক।পা অনুভব করতে পারছিনা।হিল পড়েছি তো তাই।”(আমি)
আমার কথা শোনা মাত্র সাদিফ আমাকে কোলে তুলে নিলো।আর আমি হা করে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।
যদিও এখন ফ্যামিলি মেম্বার ছাড়া কেউ নেই হলে,
তারপরও একটা লজ্জা কাজ করে।
“আরে নামিয়ে দিন প্লিজ!এইভাবে কেউ করে নাকি!আল্লাহ্!বাবা,খালু,রাফিদ ভাই,আমার ভাইয়ারা সবাই আছে।কি ভাববে বলুন তো।”
আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে উনি দ্রুত হেঁটে আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।যতক্ষণ উনার কোলে ছিলাম ততক্ষণ জুমু,রাফসান ভাইয়া আর রাফিদ ভাইয়া হাতে তালি দিয়ে সাদিফকে এপ্রেশিয়েট করেছিল। ছি ছি!কি পরিমান লজ্জা লেগেছে বলার বাহিরে।
“এই আপনি কি পাগল?এইভাবে কেউ কোলে নেয়?একদম অসভ্য আপনি।ভালোলাগেনা আপনার এইসব কান্ড।নির্লজ্জ টাইটেলটা খুব ভালো করেই যায় আপনার সাথে।”
সাদিফ আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে দিয়ে বললেন….
“কিস তো আর দিইনি সবার সামনে।কিস দিলে তোর লজ্জা পাওয়াটা জায়েজ ছিলো।আমার বউয়ের পায়ে ব্যথা করছে।আর আমি তাকে সেই পা দিয়ে হাঁটতে দিবো?জীবনেও না।আমার বাবুইকে এত কষ্ট দিতে আমি চাই না।”
উনার এমন কথা শুনে আমার মন একদম খারাপ হয়ে গেলো।আসলেই কি আমি এতো ভালোবাসার যোগ্য?
উনি আমাকে এতো ভালোবাসেন কেনো?
“আচ্ছা আমি কী এতো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?আপনি আমাকে কেনো এতো ভালোবাসেন?”(আমি)
উনি আমার গাল ধরে বললেন…
“ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না।আর যারা কারণ দিয়ে ভালোবাসে তারা ভালবাসেনা।অ্যান্ড তুই আরো বেশি ভালোবাসা ডিসার্ভ করিস।আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো তোকে ভালোবাসার চাদরে মুড়ে নিতে।আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা, সব বাঙালি ছেলেরাই তাদের বউকে বেশি বেশি ভালোবাসে।বুঝেছিস বাবুই?”
উনার কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বললাম।আর সাদিফ আলতো করে আমার ঠোঁটে উনার ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দিলেন।
বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। সাদিফ নিচে খালুর সাথে কথা বলছিলেন।আমার এতো খারাপ লাগছিলো,কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না।
–
খুবই জাকঁজমোক ভাবে ইতি আপুর বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো।ইতি আপু রাফিদ ভাইয়ার সাথে স্পেনেই সেটেল হবেন।রাফিদ ভাইয়া আগে থেকেই আপুর জন্যে ভিসা রেডি করে রেখেছিলেন।
যতটুকু জানি,আপুদের বিয়ের চার মাসের মাথায় আপুরা স্পেনে চলে যাবেন।
তাই,এখন থেকেই ইতি আপু এই বাসায় বেশি করে থেকে নিচ্ছেন।
ইতি আপুদের বিয়ের চার মাস যেতেই,আপুরা চলে গেলেন স্পেনে।আপু চলে যাওয়ার সময় প্রচুর মন খারাপ হয়েছিল আমার। হবে নাই বা কেন সেই ছোটকাল থেকে আমরা একসাথে ছিলাম। এখন যে গেলো ইতি আপু, নেক্সট কখন আসবেন এটা আল্লাহ্ই জানেন।
পড়ালেখা এখন অনেক ভালো করেই চলছে।সময় কিভাবে চোখের পলকে চলে যাচ্ছে সেটা বোঝা খুবই দায়।
আমি আর জুমু এখন অনার্স লাস্ট ইয়ারে পড়ি।আর তিন মাস বাদেই আমাদের ফাইনাল এক্সাম।এরপরই অনার্স কমপ্লিট হয়ে যাবে আমাদের।মনে হচ্ছে,এইতো সেদিন ভার্সিটি গেলাম ভর্তি হতে,আর এখন কিছুদিন বাদেই পড়ালেখা কমপ্লিট হয়ে যাবে।
খুব ভালোই দিনকাল যাচ্ছে।
কখন যে বিয়ের তিন বছর চলে গেলো বুঝতেই পারিনি।
সাদিফ তো সেই আগের মতই আছেন।কাজে ব্যস্ত হলেও উনার রোমান্সের কোনো ত্রুটি নেই।দিন দিন উনি যেনো আরো বেশি রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছেন।
কাল ছোট্ট আফ্রার বার্থডে।বাবুটা এখন কথা বলতে পারে।আমাকে দেখলেই সে দৌড়ে আমার কাছে চলে আসে।খুব ভালোবাসে আমাকে।তবে আমার চেয়েও বাচ্চাটা সাদিফকে বেশি ভালোবাসে।কেনোই বা বাসবে না! সাদিফ আফ্রাকে প্রচন্ড আদর করে।আমার থেকেও বেশি আদর করে।যখন দেখা হবে তাদের তখনই সাদিফ বাবুকে চকলেট দিবেন,চুমু দিবেন,কতো ঢং করেন।
যাক ভালোই লাগে তাদের এসব ভালোবাসা দেখে।
ডিনার সেরে টেবিল গুছিয়ে উপরে যাচ্ছিলাম।অমনিই আম্মুর ডাক শুনতে পেলাম..
“ফুল মা!”
“হ্যাঁ আম্মু, বলো?”
“কাল তো আফ্রা বুড়ির জন্মদিন। আর তোর মা বললো আমাকে একটু আগে।আমি বলি কি..সাদিকে বলবি কাল অফিস থেকে যেনো জলদি ফিরে আসে।আর আসার সময় যেনো বাবুটার জন্যে কিছু খেলনা আর ড্রেস নিয়ে আসে।তুই বলিস এখন,আর আমি কালকে সকালে আবার বলবো ওকে।”
“আচ্ছা আম্মু বলবো আমি।”
আম্মু আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো…
“খুব ভাগ্য করেই তোর মতো একটা ছেলের বউ পেলাম।অন্যদের থেকে যখন শুনি তাদের ছেলের বউ তাদের সাথে ঝগড়া করে,তখন আমার খুব গর্ব হয় তোর উপর।আমার ছেলের বৌটা কখনো আমার সাথে জোর গলায় কথা বলেনি।”
“হিহি…আমি অনেক লাকি আমি তোমার মতো শ্বাশুড়ি পেয়েছি।”কথাগুলো বলেই আমি আম্মুর কপালে একটা চুমু দিলাম।
রুমে গিয়ে দেখলাম লাইট বন্ধ।আমি তাই আর ভিতরে গেলাম না।দরজা থেকেই উনাকে ডেকে উঠলাম..
“সাদি, আপনি কি আছেন রুমে?”
কোনো শব্দ পেলাম না। জুমুকে ডেকে আনার জন্যে পিছনে ফিরতেই হঠাৎ করে আমার হাত ধরে টেনে রুমে ঢুকিয়ে নিলেন কেউ।
আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
সাদিফের হাসির শব্দে আমি চোখ খুললাম।এখনো রুম অন্ধকার।
“লাইট জ্বালিয়ে দিন।কিছুই দেখা যাচ্ছে না।”(আমি)
” তুই এতো ভীতুর ডিম কেনো ??”(সাদিফ)
“আজিব!এভাবে লাইট বন্ধ করে রাখলে যে কেউ ভয় পাবে।”(আমি)
উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়েই লাল রঙের ছোট ছোট লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিলেন।
আমাকে কোলে নেওয়া অবস্থায় সোফায় বসে, উনি আমার ঘাড়ে উনার নাক ঘষে দিলেন।আবেশে আমি আমার শাড়ি চেপে ধরলাম। ঘাড়ে উনার ঘন নিঃশ্বাস আর চুমু পড়তেই আমি উল্টো দিকে ঘুরে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম।
উনি আমাকে বেশ ভালো করেই জড়িয়ে ধরলেন।
“আম্মু বললো,কালকে অফিস থেকে আসার সময় বাবুর জন্যে বার্থডে গিফট নিয়ে আসতে।”
সাদিফ আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার উন্মুক্ত কোমরে স্লাইড করতে লাগলেন আর বললেন…
“কি আনতে হবে?”
“কিছু খেলনা,ড্রেস আর চকলেট আনলেই চলবে।”
“আচ্ছা।খুব আদর লাগে ওকে তাইনা!আমাকে দেখলেই সে দৌড় দিয়ে কোলে উঠে যায়।আর খুব সুন্দর করেই যখন সাদি আঙ্কেল ডাকে, তখন আমার ইচ্ছে করে ওকে বুকের ভেতর মিশিয়ে নিই।”
“হ্যাঁ, খুব দেখতে পারে বাবু আপনাকে।”
“উফফ আমাদের যে বাবু কখন হবে!ছোট ছোট হাত, পা হবে।অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট কথা, সে আমাকে বাবা বলে ডাকবে।ইসস,বউ!আমি জাস্ট ভাবতে পারছিনা।কখন তোমার পড়ালেখা শেষ হবে?”
“আমারও অনেক অনেক ইচ্ছে একটা বাবুর জন্যে। একটা বেবি আসলে অন্তত আপনার জ্বালা থেকে বাঁচা যাবে। আর মাত্র তিন মাস পরেই ফাইনাল এক্সাম শেষ এর মাধ্যমে অনার্স কমপ্লিট করা হয়ে যাবে আমার।”
সাদিফ আমার গলায় ঠোঁট চেপে বললেন…
“উহুম..তখন তো আমার বাচ্চা আর আমি মিলে তোকে আরো বেশি জ্বালাবো।আমার বাবু আমার মতই হবে।”
“হ্যাঁ কচু!….”
আর কিছু বলার আগেই উনি এক হাত আমার পেটে রেখে অন্য হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে,আমার ঠোঁটে উনার ঠোঁট জোড়া চেপে ধরলেন।
বেশ কিছুক্ষণ পরে উনি আমার ঠোঁট ছাড়তেই,আমার কেমন যেনো লেগে উঠলো।ভাত বেশি তো খেলাম না।কিন্তু তাও পেটের ভেতর সব গুলিয়ে আসলো। উনি আমার গলায় মুখ ডুবাতে নিলেই আমি উনাকে ধাক্কা দিলাম।আর মুখ চেপে ধরে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
আর হঠাৎ এমন হওয়াতে সাদিফ বেক্কলের মতো তাকিয়ে রইলো শেফার যাওয়ার দিকে।
ওয়াশ্রুম থেকে বমির শব্দ হতেই সাদিফ দ্রুত ওয়াশ্রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
“ফুল,কি হলো?বমি করছো কেনো?”
বলেই সে দরজা ঠেলে ওয়াশ্রুমে প্রবেশ করলো।সে দেখলো,শেফা বেসিনে দুই হাতে ভর দিয়ে বমি করছে।চুল খোলা থাকায়,চুলগুলো চারপাশে ছড়িয়ে আছে শেফার।
সাদিফ গিয়ে শেফার চুল গুলো মুঠ করে ধরে নিলো এক হাতে।আরেক হাতে শেফার পিঠ মালিশ করছে।
শেফা এখনো বমি করছে। সাদিফ ভাবছে,এই মেয়ে এতগুলো খানা খেলো না,যতগুলো বমি করছে।
বমি করা শেষে মুখে পানি দিলাম।কেনো যেনো প্রচন্ড উইক লাগছে।পিছে ফিরতেই সাদিফ আমাকে কোলে তুলে নিলেন। অামাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে উনি তাওয়াল এনে আমার মুখ মুছে দিলেন।
আমার এখনো প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। সাদিফ উনার টি শার্ট খুলে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়লেন।
উনি আমার পাশে শুতেই আমি উনার দিকে ফিরলাম।
সাদিফ আমার গা ঘেঁষে আমাকে উনার সাথে জড়িয়ে নিলেন।
“খারাপ লাগছে?কিছু খাবে?যতটুকু বমি করেছো,তার দশ পার্সেন্ট খাবার খাওনি তুমি।”(সাদিফ)
“জানিনা আমার কেমন যেনো অস্থির লাগছে।সরি,আমি আদ…”
“চুপ,সবার আগে তোমার হেল্থ।এরপর আসছে বাকি কিছু।রুমে চকলেট আছে।ঐখান থেকে দিবো একটু? খেয়ে ঘুমাও।”
“নাহ কিছু খাবো না।একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিন না।অনেক মাথা ব্যাথা করছে।”
সাদিফ তার প্রিয়তমার মাথায় চুমু দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া শুরু করলো।আর শেফা, সে তো তার জামাইয়ের উন্মুক্ত বুকে মুখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
এক অজানা অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে।খুব কষ্টেই,সে তার চোখ জোড়া বন্ধ করে,তার প্রিয়তমের উন্মুক্ত বুকে সুখের সন্ধান করছে।
চলবে….❤️
কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দয়া করে কেউ গল্প কপি করবেন না।আমার পেজ ছাড়া আমি আর কোথাও গল্প পোষ্ট করবো না।সো,কপি করা নিষেধ।