#প্রিয়তমা ❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-২২
*
*
এক দৌড় দিয়েই জুমুদের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বুকের উপরে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।মনে হচ্ছে পুরো দমটাই বের হয়ে যাবে।
মিনিট দুই পরেই দেখলাম জুমু মোবাইল হাতে নিয়ে হাসিমুখে ব্যালকনি থেকে রুমে আসছে।আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জুমু এক দৌড়ে আমার কাছে চলে এলো। চিন্তামাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো..
“এই ভাই!এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেনো”?
আমি বুকে হাত রাখা অবস্থায় বলে উঠলাম…
“দো..দোস্ত!আমি বেঁচে ফিরে এসেছি বাঘের খাঁচা থেকে”।
“মানে”?(জুমু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো)
“তোর ভাইয়ার রুমে গিয়েছিলাম।আর বাকিটা ইতিহাস”।(জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম)
আমার কথা শুনে জুমু হাসতে লাগলো।
“এই হাসার কি হলো”??(আমি)
জুমু পেট ধরে হাসতে হাসতে বললো…
“বোন তুই এতো কিউট কেনো??আমার ভাইকে এত্ত ভয় কেনো পাস তুই”!
“আজিব ভয় পেলে হাসতে হবে”?
আমি জুমুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দরজা থেকে সরে বেডে বসে পড়লাম।আর জুমুকে বললাম…
“একশো বার ভয় পাবো তোর ভাইকে।কিভাবে চোখ রাঙায় আমাকে।মনে হয় আমি তার কোন জনমের শত্রু।কিছুই বলা যায় না,অমনিই চেঁচিয়ে উঠে”।
জুমু এসেই আমাকে গলা জড়িয়ে ধরলো..
“ওরে পুতুল রে! ফুলবানু এতো রাগ করেনা।ভাইয়ার চোখ রাঙানোর মাঝে লুকিয়ে আছে তোর জন্যে এক সাগর ভালোবাসা”।
“হ্যাঁ,এইগুলো ভালোবাসা না ভয়বাসা আল্লাহ্ জানে।যখন তখন শুধু চেপে ধরবে শক্ত করে”।
একমনে জুমুকে বলে ফেললাম।
“হুয়াট??কি বললি?ভাইয়া তোকে”..
জুমুর কথার মাঝে দরজায় নক পড়লো।জুমু আমার পাশ থেকে উঠে দরজা খুলতে গেলো।আর আমি নিজের মাথার চুল টানতে লাগলাম। ছি ছি! কি বলে ফেললাম।
ভাগ্যিস দরজায় নক করেছে কেউ।নাহলে আজকে তো সাদিফ ভাইয়ার রূপ তার বোনের কাছে ধরা পড়ে যেতো।
“এই ফুলবাবু..!!কি খবর”?
ইতি আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
আমিও আপুকে জড়িয়ে ধরলাম।
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ্। আমার শেষ আপুর কি খবর”?
“অনেক ভালো ফুল। খেয়েছিস কিছু”?
“হ্যাঁ খেয়েছি।আচ্ছা আপু, আমি এখন আসি কেমন।দেরি করলে মা বকবে”।
“একটা মাইর দিবো ধরে।এখন রাতের দশটা বাজে।ডিনার করে যাবি।নাহলে আজকে থেকে যা”।
“না না থাকবো না আপু।বাসায় যেতে হবে।শরীরটা ভালো লাগছে না”।
“আচ্ছা ঠিকাছে।একটু অপেক্ষা কর।আমি ফ্রেশ হয়ে ডিনার এরেঞ্জ করছি”।
আমি আপুকে মাথা নাড়িয়ে “ওকে” বললাম।
”
ডিনার করার আগে খালামনির সাথে দেখা করতে গেলাম।দরজা নক করে ঢুকতেই দেখলাম..খালামণি শুয়ে আছে।আর সাদিফ ভাইয়া খালামনির হাত ধরে বসে কথা বলছেন খালামনির সাথে।
দরজায় আওয়াজ হতেই সাদিফ ভাইয়া আর খালামণি দরজার দিকে তাকালো।
কি ভেবে আমি হঠাৎ বলে উঠলাম..
“আমি পরে আসবো”।
কারণ আমি মা আর ছেলের সুখের মোমেন্টে হাড্ডি হতে চায় না।
আমি পিছে ফিরে চলে যেতে নিলেই খালামনির আওয়াজে থেমে গেলাম।
“ফুল! আয় মা আমার কাছে”।
খালামনির কথায় আমি আবার সামনে ফিরলাম। আস্তে আস্তে হেঁটে খালামনির কাছে গেলাম।আমি যেতেই সাদিফ ভাইয়া হালকা করে আমাকে জায়গা করে দিলেন।আমি সাদিফ ভাইয়ার সামনে বসে পড়লাম।
“খালামনি…কেমন লাগছে এখন তোমার”?
খালামনির মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম।
“এইতো আছি ফুল। ডায়াবেটিজ হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিলো।এখন অনেকটাই ভালো আছি”।
“আচ্ছা আল্লাহ্ ভরসা।তুমি টেনশন করো না খালামণি।ভালো হয়ে যাবে তুমি একদম”।
একটু পরেই ইতি আপু খালামনির জন্যে ডিনার নিয়ে এলো।
“শেফা মাকে একটু উঠে বসতে সাহায্য কর”।
(ইতি আপু ট্রে রাখতে রাখতে বললো)
আমি খালামণিকে উঠে বসতে সাহায্য করতেই, সাদিফ ভাইয়াও আমার সাথে খালামনিকে উঠে বসার জন্যে ধরলেন।
আমি আর কিছু ভাবলাম না এই বিষয়ে।কিন্তু খালামণি আর ইতি আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওরা মিটমিট করে হাসছে।
হাসির কি হলো এখানে! আমার মাথায় কিছু ঢুকলো না। পরিস্থিতি বুঝে আমিও আর কিছু বললাম না।
খাবার খাওয়ার মাঝে খালামণি বলে উঠলো..
“আজ থেকে যা না মা”।
“না না,খালামণি।আমি অনেক আগেই চলে যেতাম।ইতি আপু ডিনার করার জন্যে রেখে দিয়েছে আমাকে।ডিনার করেই চলে যাবো”।
“এতো রাতে একা যাবি!আমার মাথা কি খারাপ ?তোকে আমি এই রাতে একা যেতে দিবো না”।(খালামণি)
“পাঁচ মিনিটের পথ।সমস্যা নেই।আমি যেতে পারবো।আর বেশি দরকার পড়লে রাফসান ভাইয়া এসে নিয়ে যাবে আমাকে”।
কেউ কিছু বলার আগে সাদিফ ভাইয়া রাগী মাখা কন্ঠে বলে উঠলো..
“এতো কারবারি হওয়ার কি দরকার?আমি দিয়ে আসবো তোকে।রাফসান এখন এই রাতে তোকে নিতে আসবে কেনো?আমি দিয়ে আসবো”।
“হ্যাঁ।ভালো বলেছিস সাদি।আমিও তোকে ঠিক এই কথায় বলতাম”।(খালামণি)
“হুম।মা মেডিসিন নিয়ে নিও তুমি”।
বলেই সাদিফ ভাইয়া চলে গেলেন।
ডিনার করতে আমি, সাদিফ ভাইয়া,খালু, আপু আর জুমু বসলাম।অল্প খাবার নিয়েই চুপচাপ খেতে লাগলাম।কেনো যেনো একদম খেতে মন চাচ্ছে না।আর একটু আনকম্ফোর্টেবল লাগছে।কারণ শাড়ি পড়ে আছি সেই কখন থেকে, জুমুর জন্যে শাড়ি চেঞ্জ করতে পারিনি।খালু আর সাদিফ ভাইয়ার সামনে এভাবে শাড়ি পড়ে থাকতে একটু বেশ অস্বস্তি লাগছে।
কোনমতে চুপচাপ একটু খেয়ে উঠে পড়লাম। জুমুর খাওয়া শেষ হতেই ওর সাথে উপরে চলে গেলাম। পার্স আর মোবাইল নিয়ে খালামণি থেকে বিদায় নিয়ে নিচে চলে এলাম।ইতি আপু আর জুমুর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম।তখনই সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন সাদিফ ভাইয়া।
এতক্ষণের পড়নে হাফ প্যান্ট পাল্টে ট্রাউজার পড়ে নিয়েছেন।আর মোবাইলে কার সাথে যেনো কথা বলছেন।
আমাদের কাছে এসে হাত ইশারা করে “চলতে” বললেন।
আমি আপুদের থেকে বিদায় নিয়ে উনার পিছু পিছু হাঁটতে লাগলাম।
গেটের কাছে যেতেই দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে পড়লেন।আমি উনার কাছে যেতেই আবারো হাঁটতে লাগলেন।
খুব আস্তে আস্তে হাঁটছেন উনি।আর আমিও উনার সাথে তাল মিলিয়ে আস্তে আস্তে পা ফেলছি। শাড়ির আঁচলটা মাথার উপর দিয়েই বের হয়েছিলাম।সেই আঁচল ধরেই হাঁটছি আমি।
মোবাইলে কথা বলা শেষ করে উনি মোবাইল পকেটে রেখে দিলেন।সামনে কুকুরের দল দেখে আমার পা থেমে গেলো অটোমেটিকলি।
আর এইদিকে সাদিফ তার পাশে শেফাকে না দেখে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো…তার ফুল এক হাতে শাড়ির আঁচল খামচে ধরে আছে,আর অন্যহাতের পার্স, বুকের সাথে আটকিয়ে রেখেছে।
একনজর শেফার দিকে তাকিয়ে সামনে ফিরে কুকুরের দলকে দেখতে পেলো সাদিফ।এখন বুঝেছে সে কেনো শেফা থেমে গেলো। তার কারণ একটাই,শেফা কুকুরকে যমের মতো ভয় পায়।
কিছু একটা ভেবে সাদিফ বাঁকা হাসলো।
শেফার কাছে গিয়ে বললো…
“দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো?বাসায় যাবি না”?
সাদিফ ভাইয়ার কথা শুনে আমি বিড়বিড় করে বলতে লাগলাম..
“কু কুকুর… তাও চার পাঁচটা।আমার ভয় করে কুকুরকে”।
“আমি জানি।আমার উপরে ভরসা আছে তোর!চল,দেরি হচ্ছে”।
সাদিফ ভাইয়ার কথায় আস্তে আস্তে আগাতে লাগলাম।কিন্তু কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে আমি এক লাফে উনার গায়ের সাথে লেপ্টে গেলাম, সাথে উনার হাত খামচে ধরলাম।।
সাদিফের হাত যেনো জ্বলে উঠলো।কিন্তু সে একটু টু শব্দ করলো না।চুপচাপ সুযোগ বুঝে তার প্রিয়তমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। শেফাও ভয়ের কারণে সাদিফের গায়ে মুখ লুকিয়ে দিলো।
কুকুরের কাহিনী পার হতেই, সাদিফ শেফার কাঁধের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। কারণ সামনে কিছু ছেলে দেখা যাচ্ছে। এরা যে এলাকার ছেলে এটা সাদিফ অনেক ভালো করে জানে।
ছেলেগুলোর কাছাকাছি আসতেই, সাদিফ শেফাকে অপর পাশে নিয়ে নিলো। আর এক হাতে শেফার হাত ধরে রাখলো।বেচারা শেফা এখনো কুকুরের ভয়ে মজে রয়েছে।
“আসসালামালাইকুম সাদিফ ভাই। কেমন আছেন”?
একটি ছেলে বলে উঠলো।
“আছি আলহামদুলিল্লাহ।আচ্ছা এখন আমি আসি।আমি বিজি আছি এখন।যাওয়ার টাইমে কথা বলছি”।
“ওকে ভাই”।
শর্টকাটে কথা শেষ করে আবারো সাদিফ হাঁটতে লাগলো তার প্রিয়তমার হাত ধরে।ছেলেগুলো এলাকার,সবাইকে চিনে সে। আরো কথা বলতো তাদের সাথে,কিন্তু ছেলেগুলো একবার হলেও শেফার দিকে তাকাচ্ছিলো যা সাদিফের ভালো লাগছিলো না।
তাই অল্প কথা বলে কাহিনী শেষ করলো সাদিফ।
হঠাৎ হাতে কারো শক্ত স্পর্শে শেফা কেঁপে উঠলো।কারণ এতক্ষণ হাতে কারো ছোঁয়া সে অনুভব করতে পারলেও, এখন এর স্পর্শ টা কেমন যেন গভীর মনে হচ্ছে।
শেফার কাঁপাকাঁপি আরো বাড়তে লাগল তখনই, যখন সাদিফ হঠাৎ করেই তার হাতের তালুর মাঝে হাত ঢুকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরলো।
শত চেষ্টা করা সত্ত্বেও হাত ছুটাতে পারলাম না আমি।তাই আর চেষ্টা না করে উনার হাতের স্পর্শ অনুভব করছি।
রাতের হালকা ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে দুজনকেই।শেফা যদি মাথা উঁচু করে তাকাতো সাদিফের দিকে, তাহলে সে সাদিফের মুখের প্রশান্তির হাসিটা দেখতে পেতো। সাদিফ তার প্রিয়তমার সাথে এই মুহূর্তটা বেশ উপভোগ করছে।
দুজনের মনেই এখন একটা গান ভেসে চলেছে…
“এই পথ যদি না শেষ হয়.. তবে কেমন হতো তুমি বলোতো”!
চলবে…❤️
কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।শুধু এই পেজেই পড়তে পারবেন গল্প।কেউ দয়া করে কোনো পেজ বা কোনো গ্রুপে আমার গল্প পোষ্ট করবেন না।আর আমার নাম দিয়ে কেউ যদি পোস্ট করে আর তা আপনারা দেখেছেন তাহলে সাথে সাথেই আমাকে জানাবেন প্লাস আইডিতে রিপোর্ট দিয়ে পোস্টে কমেন্ট করে দিবেন।
ধন্যবাদ।