প্রিয়তমা ❤️ #সিজন_২ #writer- সালসাবিল সারা পর্ব-২১

0
1036

#প্রিয়তমা ❤️
#সিজন_২
#writer- সালসাবিল সারা
পর্ব-২১
এটা তোমাদের জন্যে একটা ছোট্ট গিফট❤️
*
*
সাদিফ ভাইয়ার “হোয়াট” নামক চিল্লানো শুনে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।দুই হাতে কান চেপে ধরে আমি খাটের উপরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লাম।

“কি আজব এভাবে গন্ডারের মতো চিল্লাচ্ছেন কেনো”?

আমার কথায় উনি ধীরে ধীরে আমার দিকে আগাতে লাগলেন আর আমি কান থেকে হাত সরিয়ে এক লাফেই খাটের অপর পাশে নেমে গেলাম।
আমার কান্ড দেখে সাদিফ ভাইয়া বলে উঠলো…

“আমি নাহয় গন্ডার,তাই এমন করে চিল্লায়।কিন্তু তুই কি ব্যাঙ?এভাবে কেউ লাফ দেয়? দুইদিন আগে না পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিস হাঁটুতে!!এত্ত লাফালাফির কি বুঝি না আমি”।

“আপনাকে এত বুঝতে হবে না।গিয়ে নিজের কাজ করেন।সব সময় আমার ক্লাস নিতে চলে আসেন কেনো.. বুঝি না আমি”।

“বুঝতে হবে না।এইদিকে আয়”।
খাটের অপর পাশ থেকে দাঁড়িয়ে থেকে বললেন উনি।

“এহহ!!পাগল নাকি আমি?শাড়ি পড়ার অপরাধে আপনি আমাকে কি করবেন আল্লাহ্ জানে।আমি নিজেকে বলিদান করতে চাইনা।সো,আপনি আপনার রুমে যান”।

আমার কথায় উনি হালকা হাসলেন।
আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই, উনি হা হা করে হাসতে লাগলেন।হাসতে হাসতে একেবারে বেডে বসে পড়লেন।

আমি মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলাম …উনার কি মাথার স্ক্রু গেলো নাকি!এভাবে হাসার মানে কি?

“এই ভাইয়া?আর ইউ ওকে?ভূতে ধরেছে নাকি আপনাকে”?
নাহ আমার কথায়ও উনি থামছেন না।আমি সাদিফ ভাইয়ার অট্টহাসি দেখছি।কি অমায়িক সেই হাসি।

হঠাৎ করেই বেডের উপর এক লাফ দিয়েই সাদিফ ভাইয়া আমার কাছে চলে এলো।এভাবে উনি পল্টি মারবেন আমি তা কখনোই ভাবিনি।

আমি সাদিফ ভাইয়ার সামনে থেকে যেতে নিলেই খপ করে উনি আমার হাত ধরে নিলেন।

“এই এই ছাড়েন আমাকে।আপনাকে জ্বীনে ধরেছে।আমি নিচে গিয়ে জুমুকে জানিয়ে আসি ব্যাপারটা”।

কিন্তু না আমার কথায় আমাকে ছাড়লেন না উনি।বরং আরো শক্ত করে হাত চেপে ধরলেন।

“আল্লাহ্ গো!! সাদিফ ভাইয়াকে জ্বীনে ধরেছে।উনার গায়ে এক অদৃশ্য শক্তি ভর করেছে রে”..
পুরো কথাটা শেষ করতে পারলাম না,এর আগেই সাদিফ ভাইয়া আমার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরলেন।

“আর ইউ ম্যাড ফুল?এভাবে চিল্লাচিল্লি করার মানে কি?
আর কিসব জ্বীন জ্বীন করছো”?

আমার মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে সাদিফ ভাইয়াকে বললাম..
“দেখেন দেখেন।আপনি আবার আমাকে তুমি করে বলছেন,আবার হা হা করে হাসছেন।আপনি তো এমনটা করেন না কখনো। আমি বুঝতে পারছিনা আসলে আপনার হয়েছে কি”!

আমার ঠোঁটে উনার আঙ্গুল ঠেকিয়ে বললেন..
“হুস!!বড্ড কথা বলছিস।আমার ইচ্ছা আমি তোকে কি বলে ডাকবো।তো বল শাড়ি পড়ে যাওয়ার মানে কি ভার্সিটিতে”?

আমি ঠোঁট নাড়াতেই সাদিফ ভাইয়া উনার আঙ্গুল সরিয়ে নিলেন।আর আমি বলতে লাগলাম…

“ড্রেস কোড এমন ছিলো ভার্সিটির।আর আমি জানতাম আপনি জানতে পারলে আমাকে এমন টর্চার করবেন।আমি বুঝিনা বাপু, আমাতেই এত হিসাব খুঁজেন কেনো?
আর শাড়ি পড়লে কি সমস্যা??আমি হিজাব পড়েছি সাথে”।

“আমি জানি তুই হিজাব পড়েছিস।আমার কোনো সমস্যা নেই শাড়ি পড়াতে।সমস্যা হতো যদি তোর হিজাব না থাকতো।একটা একটা চুল টেনে মাথা থেকে তুলে ফেলতাম তোর যদি হিজাব না থাকতো”।

“কেনো কেনো? এতো অত্যাচার কেনো আমার উপরে? আর আপনি কেমনে জানলেন যে আমি হিজাব পড়েছি??
বাই দা ওয়ে, জুমু তো পড়েনি হিজাব ওকে তো আপনি এত ভাষন দিচ্ছেন না।আমাকেই কেনো”?

সাদিফ ভাইয়া উনার মোবাইল বের করে একটা ছবি দেখালেন আমার।
“জুমু আপলোড করেছে ছবি ফেসবুকে।ঐখান থেকেই পাওয়া তোমার ছবি”।
সাদিফ ভাইয়া আমার দুই গাল টেনে বললেন..
” আর আসছে জুমুর কথা..ও আমার বোন,ও কি ড্রেস পড়েছে না পড়েছে আমি ওর দিকে চোখ দিবো কেনো?ওর ড্রেস কোড দেখার জন্যে রাফসান আছে।আর আমার ছোট্ট ফুলের ড্রেস, চলাফেরা দেখার দায়িত্ব আমার। গট ইট”???

আমি আমার গাল থেকে উনার হাত ছাড়িয়ে বললাম..

“নাহ বাজি,এত হিসাব বুঝি না আমি।আপনি যান তো এই রুম থেকে।আমার বুক ধুকপুক করছে অনেক।আর এত কাছে এসে দাঁড়াবেন না। আপনি আমার এত কাছে আসলে অা”…

সাদিফ ভাইয়া আমার আরো কাছে এসে কপালে কপাল ঠেকিয়ে নরম গলায় বলে উঠলেন..

“হু বলো??তোমার কি”?

উনার এমন ভয়েজে আমার মন কেঁপে উঠলো।দুইহাতে উনার বুকে ধাক্কা দিতেই….. চট করে উনি আমার গালে একটা চুমু দিয়ে দিলেন।চুমু দিয়ে আর অপেক্ষা করেননি সাদিফ ভাইয়া।লম্বা লম্বা পা ফেলে রুম থেকে চলে গেলেন।আর পিছে ফিরে দেখেননি আমাকে উনি।

আমি গালে হাত দিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম তা আমি জানিনা। জুমুর ডাকে আমি বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসলাম।

“গালে হাত দিয়ে কি ভাবছিস?? আয় নিচে কিছু খাবি।আমি জাস্ট কফি করেছি আর বেকড পাস্তা করেছি।সাথে বিস্কুট আর পাউরুটি আছে।এগুলাই হয়ে যাবে তিনজনের”।(জুমু)

গাল থেকে হাত সরিয়ে আমি জুমুকে বললাম..

“তিনজন মানে? সাদিফ ভাইয়া এসেছে তুই জানিস”?

“হ্যাঁ জানি তো।ভাইয়া একটু আগে নিচে এসেছিলো পানি খেতে।তখনই ওকে দেখলাম”।(জুমু)

আমাকে চুমু দিয়ে নিজে পানি খেতে গিয়েছে।ইসস,শরীর এখনো কাঁপছে আমার।এভাবে কেউ করে নাকি!বেশরম লোক একটা।

“এই ভাই বিড়বিড় করা বন্ধ করেন। চলেন নিচে”।(জুমু)

জুমুর সাথে নিচে চলে গেলাম।টেবিলে বসতেই সাদিফ ভাইয়া আসলেন।গেঞ্জি আর শর্ট প্যান্ট পড়ে এসেছেন মহারাজা।একটু আগে তো দেখতে একদম বস বস লেগেছে আর এখন মনে হচ্ছে উনি একটা কুল গাই।
উনার চুমুর কথাটা মনে আসতেই গাল গরম হয়ে আসছে আমার।চুপচাপ মাথা নিচু করে খাবার গিলছি।মনে মনে একটা অজানা কথা ঘুরপাক করছে।আচ্ছা উনি আমাকে চুমু দেন হঠাৎ করেই।কিন্তু কেনো দেন?আর যে সে মানুষ এসে কি আমাকে চুমু দিতে পারবে??কখনোই না।আগেও অনেক দিয়েছেন এমন কিন্তু আর না।
উনিও বা এভাবে কাকে কাকে চুমু দিয়েছেন আল্লাহ্ জানে।
কথাটা মনে আসতেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।

আর সাদিফ দেখছে তার জান কে।হঠাৎই তার প্রিয়তমার গাল লাল হয়ে গেলো। কারণ টা যে লজ্জা, সেটা সাদিফের বুঝতে দেরী লাগলো না।
“ফুল নিশ্চিত এখন চুমুর কথা ভেবে লাল হয়ে গেলো। মেয়েটা সামান্য লজ্জা পেলেই একদম লাল টমেটো হয়ে যায়।বাবুইয়্যা আমার।এভাবে চুমু দেওয়া বেচারী হজম করতে পারছে না মেইবি।আসলে আমারই দোষ,ওকে এত কিউট লাগছিলো নিজেকে কন্ট্রল করতেই পারিনি”।
মনে মনে সাদিফ তার আর তার প্রিয়তমার কথা ভাবছে।

*

উফফ..মাথা থেকে যাচ্ছেই না কথাগুলো। সাদিফ ভাইয়া কি অন্য মেয়েকে চুমু দিয়েছেন কখনো??
এসব কথা ভাবতেই খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলাম।

“কি ব্যাপার?খাবার শেষ না করে উঠে গিয়েছিস কেনো”?
(সাদিফ ভাইয়া)

কিছু না বলে চলে যেতে নিলে..আবারো উনার শব্দ কানে এলো..

“আর এক পা আগাবি তো থাপ্পড় খাবি।নাস্তা ফিনিশ কর”।

কিন্তু কিছু না বলে,শাড়ি উচুঁ করে এক দৌড় দিলাম আমি।
একেবারে পৌঁছলাম জুমুর রুমে।
রুমে গিয়ে হাঁপাতে লাগলাম।আল্লাহ্!!সাহস দাও আমাকে। আমি যেনো সাদিফ ভাইয়াকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি। আমিন।

বেশ কিছুক্ষণ পরে জুমু এলো রুমে।

“কিরে??না খেয়ে এসে গেলি”??(জুমু)

“এমনিই ভালো লাগছিলো না।পেটে মোচড় দিয়েছিলো”।(আমি)

“ওহহ..এখন ঠিক আছিস”?(জুমু)

“ইয়াহ!!পারফেক্ট”(আমি)

রাফসান ভাইয়ার কল আসতেই জুমু কথা বলতে বলতে ব্যালকনিতে চলে গেলো।আমি এই সুযোগে সাদিফ ভাইয়ার রুমে গেলাম।

দুইবার নক করতেই …

“কাম ইন” শব্দ ভেসে এলো সাদিফ ভাইয়ার।

আমি দরজা ঠেলে রুমের ভিতরে গেলাম।
সাদিফ ভাইয়া সোফায় বসে কিছু করছেন ল্যাপটপে। আমি সামনে দাঁড়াতেই মাথা তুলে তাকালেন আমার দিকে।

উনি কিছু বলার আগে,আমিই উনাকে প্রশ্ন করে বসলাম..

“আমাকে চুমু দিলেন কেনো?এর আগেও আমাকে দিয়েছিলেন চুমু।আমাকে টাচ করার সাহস কেমনে হয় আপনার?আল্লাহ্ জানে আর কতজনকে এভাবে চুম্মা দিয়ে বেড়ান। ছি”!

আমার প্রশ্নে, সাদিফ ভাইয়া ঠাস করে ল্যাপটপটা ফেলে দিলেন।আর সেটা দেওয়ালের সাথে লেগে দুই টুকরা হয়ে
গেলো।
সাদিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো। হায় আল্লাহ্!এই কি করলাম। আমি তো এখন ঘুমন্ত সিংহকে জাগিয়ে দিলাম।
মনে মনে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছি। আল্লাহ্ মাইর যেনো না খেতে হয় প্লিজ।

আমি হালকা হাসার চেষ্টা করে…”ভাইয়া সরি।আমি আসছি এখন” বলে আগাতে গেলেই সাদিফ ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন।আমার তো অবস্থা শেষ এখন।কি করবেন উনি আমাকে আল্লাহ্ জানে।

হঠাৎ কোমরে উনার স্পর্শ পেলাম।শরীরটা কেমন করে উঠলো যেনো।উপরে তাকাতেই উনার রাগী মাখা লাল চোখ দেখতে পেলাম।

“আমাকে তোর ক্যারেক্টারলেস মনে হয়?কোনদিকে আমি চরিত্রহীন? সমান্য একটা চুমু দিয়েছি তাই বলে এমন ভাববি তুই?আর কি যেনো বলছিলি…ওহহ হ্যাঁ,আরো কতো মেয়েকে এমন চুমু দিয়েছি?
তার উত্তর হলো,একটা মেয়েকে। যার এখন আমার স্পর্শে,আমার রাগে ভয়ে সেন্সলেস হওয়ার উপক্রম হয়েছে।আমি এখনো ভার্জিন একটা ছেলে”।
দাঁতে দাঁত চেপে রাগী মাখা কন্ঠে বললেন সাদিফ ভাইয়া।

উনার এই উত্তর শুনে আমার মন পেখম মেলে নাচ দিচ্ছে।আহহা।এত সুন্দর,স্মার্ট,ভালো ছেলে শুধু আমার প্রতি এতটা ইন্টারেস্টেড!আহহা।মনটা একদম জুড়ে গেলো।

খুব সাহসে আবারও কিছু প্রশ্ন করলাম উনাকে…

“সব বুঝলাম।আপনি অনেক ভালো,ভার্জিন ছেলে।কিন্তু আমাকে কেনো চুমু দিলেন??তাও গালে?আমার কি লজ্জা শরম নেই?আর এসব করবেন না।যদি করেন,তাহলে খালামণি আর আপুকে বলে দিবো”।

” শুধু গালে কেনো,ঠিক সময় আসলে সবখানেই দিবো চুমু।আপুদের বললে বলিস।কারণ ওরা জানে তুই আম”..

“হুই?আমি কি আপনার”?

“সেটা সময় এলে জানতে পারবি,আর খুব আর্লি।যা অবস্থা দেখছি,বেশি লেট করলে তুই আমাকে আরো কি কি পদের উপাধি দিবি আল্লাহ্ জানে।এখন যদি আর প্রশ্ন করিস.. তোর ঠোঁট কামড়ে আমি ছিড়ে ফেলবো”।

উনার কথায় আমি দুই হাতে আমার ঠোঁট চেপে ধরে এক দৌড় দিলাম।

আর এদিকে শেফা যেতেই, সাদিফ অবাক হয়ে বলতে লাগলো..

“এই বাচ্চাটাকে আমার ভালোবাসতে হলো?কিসব প্রশ্ন করছিলো।কিন্তু যা হোক,এই মেয়েটাকে আমার লাগবে। এক বুক প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্যে এই মেয়েটাকে
আমার চাই”।

সাদিফ এক নজর ভাঙ্গা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে সেটাকে নিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে দিলো। কাবার্ড থেকে আরেকটা ল্যাপটপ বের করে সে আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।

চলবে..❤️

আসলে গল্প দেওয়ার কথায় ছিলো না।মন খারাপ ছিলো,তাই লিখে ফেললাম এই পার্ট।নেক্সট পার্ট কবে দিবো জানিনা। ফ্রী থাকলে লিখে ফেলবো গল্প।
হ্যাপী রিডিং ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here