সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড় #লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা #পার্টঃ২১

0
386

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ২১
,
,
,
,
আদ্রির ঘুম ভেংগে যায় মাঝ রাতের দিকে।প্রচন্ড খিদায় ঘুমটা ভেংগে যায়।উঠে বসতে গেলে পায়ের উপর ভারি কিছু অনুভব করে।আদ্রি নিচে তাকিয়ে দেখে নির আদ্রির কোমর জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুজে শুয়ে আছে।আদ্রির সময় জেনো সেখানেই থমকে যায়।নিশ্বাস আপন মনেই ভারি হতে শুরু করে।আপন মনেই হাত চলে যায় নির এর চুলের ভাজে।

নির একটু নড়ে চড়ে উঠে। আর এর কারনে নির এর নাকটাও আদ্রির পেটে আরও গভির ভায়ে ছুয়ে যায়।আদ্রি নির এর চুল খামচে চোখ বন্ধ করে নেয়।

চুলে টান পরায় নির এর ঘুম টাও ভেংগে যায়।আদ্রির বন্ধ চোখ জোড়ার দিকে তাকাতেই নির এর জেনো ঘোর লেগে যায়।

নির উঠে বসে আদ্রির মুখের সামনে পড়া চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দেয়।আদ্রি চোখ মেলে তাকাতেই নির এর নেশালো চোখে আটকে যায়।

নিরঃএটা কিন্তু ঠিক না আদরপাখি এই ভাবে আমাকে বেসামাল করে দিওনা। পরে কিন্তু সামলাতে পারবা না (দুষ্টু সুরে)

নির এর বলার ধরন দেখে লজ্জায় গাল দুইটা লজ্জায় লাল বর্ন ধারণ করলো।

আদ্রিঃযতসব ফালতু কথা এবার উঠুন আমার পা কি আপনার কাছে বিছানা মনে হয় নাকি।

নিরঃযদি চাই তো তোমার পা কেনো তোমার পুরো শরীরকে নিজের বিছানা বানাতেও আমার একটুও সময় লাগবেনা।

আদ্রিঃযতসব ফালতু(রাগী কন্ঠে)

আদ্রি সেখান থেকে চলে যেতেই নির হো হো করে হেসে উঠে।

নিরঃআদর পাখিরে ভেবেছিলাম তোকে শাস্তি দিবো বাট আমি আমার প্ল্যান চেঞ্জ করে নিয়েছি। তোলে শাস্তি দিলে তোর চোখ দিয়ে পানি বেরুবে যেটা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। এর চেয়ে ভালো তোর এই লজ্জায় রাঙানো মুখটা দেখবো।খুব শখ না নিজেকে খারাপ বলার অপবিত্র বলার।না খেয়ে থাকার চোখের পানি ফেলার সব কিছু শুদে আসলে তুলবো(ডেভিল স্মাইল দিয়ে)

আদ্রি কিচেনে এসে দেখে সেখানে রান্না করা কিছু নেই আর সেও তেমন একটা রান্না পারেনা তবুও ফ্রীজে থাকা আলু দেখে ভাবলো আলুর ভর্তার সাথে গরম ভাত খাবে। ব্যাস ডান। আদ্রি কোমরে ওর্না পেচে কাজে লেগে পড়লো।

নির কিচেনের দেওয়ালে হেলান দিয়ে আদ্রির কাজ করা দেখছে পাক্কা গৃহীনি লাগছে তাকে। অদ্ভুদ এক মায়া জেনো ঘিরে ধরেছে তাকে।অবাক নয়নে তাকায় আছে নির আদ্রির দিকে মোহনীয় এক ঘ্রানে পুরো কিচেন মৌ মৌ করছে।

আদ্রি ভাত নামাছিলো এমন সময় নির আদ্রির কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে যেয়ে স্লো ভয়েস এ বললো
ঃআমার বউ হবে আমার মনের পাখি আমার আদরপাখি

আদ্রির সারা শরীর বেয়ে আলাদা শিহরণ বয়ে গেলো কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়ে গেলো পার্টির রাতে নির এর বলা কথা গুলো।আদ্রি তাচ্ছিল্য হেসে ভাত নামিয়ে সব কিছু নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো।

——-
হস্পিটালের করিডোরে বসে আছে মেহের। হাতে তার ম্যাডিকেল ফাইল। কিছু দিন ধরেই অসুস্থ লাগছিলো তাই এসেছিলো আর টেস্ট করাতেই তার সন্দেহ ঠিক হলো ১ মাসের প্রেগন্যান্ট সে।তার ভিতরে বেড়ে উঠছে রিয়াজ এর অংশ। মেহের হাসবে না কান্না করবে জানেনা সে। কয়দিন পরে তার ডিভোর্স এর হেয়ারিং আর এদিকে তাদের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আসতে চলেছে।

হ্যা রিয়াজ আর মেহের এর ডিভোর্স। রিয়াজ তার বাবা মাকে খুব ভালোবাসে। আর তার মা প্রতিবার সেটার ই সুযোগ নেয় এবার ও একই কাজ করেছে সে নিজেকে মেরে ফেলার হুকমি দিয়ে রিয়াজ এর থেকে ডিভোর্স এর পেপার এ সিগনেচার করায়ে নিয়েছে।মেহের জানতো এমন কিছু হবে।

মেহের পেটের উপর হাত দেয়
মেহেরঃএই শুনতে পাছিস।আমি তোর মা। খুব অভিমান হচ্ছে তোর তাই না যে কেমন মা আমি বাকি আম্মু রা তার বেবিদের আশার কথা শুনলে খুশিতে নেচে উঠে কিন্তু তোর মা চোখের পানি ফেলছে।আই এম সরি বাচ্চাটা। তোর মাম্মাম তোকে খুব ভালোবাসে সত্যি।আই লাভ ইউ।

মেহের এর চোখ দিয়ে পানি পরতে গেলেই মেহের চোখ বন্ধ করে ফেলে।

——-
আদ্রিয়ান নওমিকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে।
নওমি জেদ ধরায় দুইজনে কোলকাতার রাস্তা ঘুরতে বেরিয়েছে।

নওমি বিভিন্ন কথা বলছে আর আদ্রিয়ান ভালো শ্রোতার মতো সব শুনছে।
হঠাৎ করে সেখানে বিকট একটা শব্দ হলো। দুইটা গাড়ির সংগর্ষ লেগেছে। একটা গাড়ি থেকে লোক বের হয়ে এসে অপর গাড়ির লোকের কোলার চেপে ধরলো। মহূর্তে নওমির মস্তিষ্কের কিছু নিউরন সচল হতে শুরু করলো চোখের সামনে যেগুলো সৃতি স্পষ্ট ছিলোনা সেগুলো স্পষ্ট হয়ে চোখের সামনে ফুটে উঠলো।মাথায় সব চাপ নিতে না পেরে মাথা ধরে বসে পরলো নাক বেয়ে রক্ত বের হতে আরম্ভ করলো।একসময় অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় ঢলে পরলো। আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে নওমিকে কোলে তুলে নিয়ে সামনের হাস্পাতালে নিয়ে গেলো।

আদ্রিয়ান নিজেই নওমিকে চেক আপ করতে শুরু করলো।নওমির কিছু টেস্ট ও করালো আর সেটা দেখে আদ্রিয়ান খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলো।কারন সেদিনের জন্য নওমির মস্তিষ্কের নিউরন গুলো অচল হয়ে গেছিলো সেগুলো এখন সচল হয়ে গেছে পুনরায়।

ভোরের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেংগে গেলো নওমির।নিজেকে অচেনা জায়গায় দেখে চমকে গেলো।মাথায় অসম্ভব ব্যাথা করছে।টি টেবিল থেকে পানি নিতে গেলে জগটা পরে যায়।

কাচ ভাংগার আওয়াজে ঘুম ভেংগে যায় আদ্রিয়ান এর।নওমির জ্ঞান ফিরে এসেছে দেখে আদ্রিয়ান হতদম্ভ হয়ে ছুটে আসে। রুমের কাউচে শুয়ে ছিলো আদ্রিয়ান।

আদ্রিয়ানঃএই মেয়ে ঘুম ভেংগে গেছে তো আমাকে ডাকবে না যদি তোমার আঘাত লাগতো তখন দেখি আসতে আসতে উঠো।

নওমি অবাক চোখে দেখছে। অচেনা একটা লোকের চোখের নিজের এতো চিন্তা তার মস্তিষ্কে আঘাত হানছে।

নওমিঃআমি কোথায় আ,আমার আব্বু আম্মু কোথায় আপনি কে ডাক্তার।(আশেপাশে তাকিয়ে)

আদ্রিয়ান দুই কদম পিছিয়ে যায়।তার আর বুঝতে বাকি নেয় নওমি ঠিক হয়ে গেছে সম্পূর্ণ রুপে।ভুলে গেছে সে তাকে।তার সৃতির পাতা থেকে মুছে গেছে আদ্রিয়ান নামক ব্যাক্তিটির পরিচয়।

আদ্রিয়ান কোন রকম নিজেকে শান্ত করে বাহিরে যেয়ে হস্পিটালের একটা ডাক্তার কে বলে চেক আপ করতে। ততক্ষনে নির আর আদ্রিও পৌঁছে গেছে সেখানে।আদ্রিয়ান কালকেই নিরকে ফোন করে জানিয়েছে।

আদ্রিয়ান ফাকা রাস্তায় হেটে যাচ্ছে।সে জানতো একদিন এমনটা হবে। সবকিছু ভুলে যাওয়ার চান্স ছিলো ৯৮%।২% সুস্থ হওয়ার চান্স যেনো আদ্রিয়ান এর কাছে ২০০% পার্সেন্ট ছিলো। কিন্তু আজকে নওমির চোখে নিজেকে অচেনা হিসেবে দেখে বুকের বা পাশটাই চিনিচিন ব্যাথা হছিলো।মনে হচ্ছিলো কেউ তার কলিজা ছিড়ে বের করে ফেলেছে কেউ।

আদ্রিয়ান ফাকা রাস্তাই বসে পরলো হাটু গেড়ে দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে চিৎকার করে উঠলো।পরিবেশ যেনো থমকে গেলো। আদ্রিয়ান এর চিৎকারে মেঘের মনটাও যেনো বিষিয়ে গেলো সেও আকাশের উপর অভিমান করে কান্না করে দিলো পুরো শহর আজকে মেঘের পানিতে ভিজবে।

আদ্রিয়ানঃকেন ভুলে গেলি তুই আমাকে।এটা তো কথা ছিলোনা।কথা ছিলোনা আমাকে ভুলার আজীবন তোর সাথে থাকার কথা ছিলো। কিন্তু তুই মাঝ পথেই ছেড়ে দিলি আমার হাত কেনো। আমি তোকে মাফ করবোনা কোনদিন ও না (চিৎকার করে)

—–
জানালা ধরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রি।নির তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পেরেও নড়লোনা সে

নিরঃমন খারাপ(পকেটে দুই হাত গুজে)
আদ্রিঃভাইয়ার জন্য খারাপ লাগছে। না জানি কতোটা কষ্ট পাচ্ছে।যার চোখে এতোদিন নিজের জন্য আলাদা এক অনূভুতি দেখেছে যাকে আপন হিসেবে চিনেছে আজকে তার চোখে সে অচেনা। এর চেয়ে বেশি কষ্ট আর কোন অনূভুতিতে নেয়। সেটা আমার থেকে ভালো আর কে বুঝবে।

আজকের পরিবেশ টা বড্ড ভারী আজকে কারো ঠোঁটের কোনে লেগে নেয় হাসি সবার চোখে আজ পানি কেউ প্রিয় মানুষ কে নিজ দোষে হারিয়ে। কেউ অজান্তে হারিয়ে।কেউ আবার পরিবারের জন্য।কেউ আবার ভালোবাসার মানুষটির চোখে পানি দেখে।

কোথায় এসে দাঁড়াবে এদের কাহিনী। কি হবে এদের জীবনে আদৌ কোনদিন এদের জীবন একে অন্যের সাথে জুরবে???

চলবে!!
সরি ফোর লেট। কালকে দিতে পারিনি জ্বরে চোখা জালায় বেহাল অবস্থা কিন্তু কালকে থেকে টাইমলি দিবো প্রমিজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here