Ex গার্লফ্রেন্ড যখন বাড়িওয়ালী পর্ব ০১

0
1148

Ex গার্লফ্রেন্ড যখন বাড়িওয়ালী

পর্ব ০১

লেখক,,, junior

সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি,,,, আর ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো নিয়ে ভাবছি ।তখন একজন হঠাৎ বলে উঠল,,,,

মামা ভাড়া টা দেন,,, অচেনা মানুটি

তার কথায় আমার ঘোর কাটল,,,, মানুষটি হলো বাসের হেল্পার,,,, ভাড়া নিতে আসছে,,,, তার কথায় মানিব্যাগ টা বের করলাম,,,,,

মামা ভাড়া কত,,,আমি

180 টাকা মামা,,,, হেল্পার

তার কথা শুনে মানিব্যাগটা খুলে টাকা খুজতে লাগলাম,,,,, অনেক কষ্টে 122 টাকা বের করলাম,,,,, হেল্পার মামা এখনো আমার কাছে দাঁড়িয়ে আছে,,,, আমার ঘটনাগুলো দেখছে,,,, আমি কি বলব তাকে ভেবে পাচ্ছিলাম না,,,,, তখন হেল্পার মামা বলে উঠল,,,

মামা কোথায় যাবেন আপনি,,,, হেল্পার মামা

ঢাকায় যাব মামা,,,,, আমার কাছে ঢাকা যাওয়ার ভাড়া নাই,,,, সামনে নামায় দিয়েন,,,, আমি

আরে মামা নামবেন কেন,,,, টাকা নাই তো কি হয়েছে,,,, আমিতো আছি,,,, আপনার টাকা দেয়া লাগবেনা,,,,,, হেল্পার মামা

তার কথা শুনে কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা,,,, চোখে এমনি জল এসে গেছে,,,, এই সাধারন মামায় বুঝিয়ে দিল,,, মনুষ্যত্ব টাকা দিয়ে কেনা যায় না,,,,, কত ধনী মানুষ দেখলাম,,, অনেক টাকা থাকা সত্ত্বেও,,, গরীবদের ওপর জুলুম করে,,,,,, কিন্তু মামাটা সত্যি আলাদা,,,,

কি হলো মামা কথা বলছেন না কেন,,,,, হেল্পার

আমি তাকে কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলাম,,,

আপনি আমার অনেক উপকার করলেন মামা,,,, জীবনে অনেক মানুষকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছি,,,, কিন্তু আজ আমার কাছে টাকা নেই,,,, অনেকের কাছে চাইছিলাম ও,, কিন্তু সবাই শুধু অজুহাত দেয়,,,,,আমি

মানুষ এরকমই মামা,,,, সুসময়ে অনেক বন্ধু পাওয়া যায়,,, কিন্তু দুঃসময় একজনকে পাওয়া যায় না,,,, হেল্পার মামা

ঠিক বলছেন মামা,,,, আমি

আচ্ছা মামা আপনি বসে থাকেন,,,, আমার আবার অন্য ভাড়া তুলতে হবে,,,, আর শুনেন,, আজ ভাড়া নিলাম না বলে কিন্তু,,, পরে দেখা হলে অবশ্যই নিব,,,,, হেল্পার মামা একটা হাসি দিয়ে বলল

হুম মামা,,,, আমার জন্য দোয়া করেন,,আমি

অবশ্যই মামা,,,, জীবনের স্বপ্ন পূরণ কর মামা,,,, হেল্পার মামা

মামার কথাটা শুনে মনটা কেমন জানি করে উঠল,,,,, এর আগেও একবার ঢাকা গিয়েছিলাম,,, তখন আমার মনে অনেক স্বপ্ন ছিল,,, বড় হয়ে ডাক্তার হবো,,,, কিন্তু স্বপ্নটা প্রকৃতির লীলা খেলায় ভেঙ্গে গেছে,,,,

চার বছর পর আবার ঢাকায় যাচ্ছি,,, তবে আজ আমার মনে কোনো স্বপ্ন নেই,,, শুধু আছে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা,,,, হয়তো আর ঢাকা কখনো আসতাম না,,, কিন্তু পরিবারের বিষয়টার জন্য আবার আসতে হলো,,,, পরিবারের বড় ছেলের বোঝাটাই বেশি,,,, বাবার পরে তাকে আবার বাবা হতে হয়,,,, হোক সেটা ছোট,,, কিংবা,বড়,, দায়িত্ব তাকে নিতেই হবে,,, এটাই নিয়ম,,,,

তাই আমার বেলায়ও বিপরীত কিছু হয়নি,,,, যখন আমার মনে অনেক স্বপ্ন,,, উড়ে বেড়াচ্ছিল,,, তখন হঠাৎ এক অজানা ঝড়ে,,,, স্বপ্নগুলো সব ভেঙ্গে গেল,,,,,

অনেক কথা বললাম,,, এখন যেতে যেতে আমার পরিচয়টা দিয়ে দেই,,,

আমি রাশেদ,,, মা-বাবার বড় সন্তান,,, আর একটা ছোট ভাই আছে,,, বাবা চার বছর হল মারা গেছে রোড এক্সিডেন্টে,,,, এখন বাড়িতে মা আর ছোট ভাই থাকে,,,, তাদের জন্যই‌ আবার ঢাকা যেতে হচ্ছে,,,,

প্রায় দুই ঘণ্টা পর বিকালের দিকে ঢাকায় পৌঁছে গেলাম,,,,, সবাই নেমে যাচ্ছিল,,,, কারণ তাদের একটা গন্তব্য স্থল আছে,,,, কিন্তু আমার নামতে ইচ্ছে করছিলো না,,, মনে হচ্ছিল এখানেই থেকে যাই,,, কারন আমার থাকার মত কোন গন্তব্য স্থল নেই,,,, কোথায় থাকব কি খাব এখনো সে ভাবে ভেবে ওঠেনি,,,,,

একটু পর হেলপার মামা আবার আসলো,,,,,

কি হলো মামা নামবেন না,,, বাস তো ঢাকায় চলে এসেছে,,,, হেল্পার মামা

হুম মামা,,, নামবো,,,,আমি
তারপর বাস থেকে নেমে এলাম,,,, আসলে মামাটা অনেক উপকার করছে,,, তাই আর কিছু বললাম না,,,,

নামার পর হাটতে লাগলাম,,,, যে হাটার কোন গন্তব্য স্থল নেই,,, সব রাস্তায় আমার চেনা,,,, তাই তেমন কোন বেগ পেতে হলো না,,,, প্রথমে সেই বন্ধুদের কাছে গেলাম যারা আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারত না,,,,

সেখানে গিয়ে দেখলাম,,,, সবাই যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত,,,, আমাকে তো প্রথমে চিনতেই পারছিলো না,,,, তারপর আমি পরিচয় দেয়াতে চিনলো,,,,,

এদের আচরণ দেখে আমার বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছিল,,, হায়রে মানুষ,,,,, আগে আমাকে না দেখে থাকতে পারত না,,,, আসলে ভুল ছিল,,, তখন আমার কাছে অনেক টাকা ছিল,,, কিন্তু আজ টাকা নাই,,, তাই হয়তো চিনতে সমস্যা হচ্ছে,,,,

ওদের সাথে আর বেশি কথা বললাম না,,,,, ওদের কথাগুলো শুনতে খুব খারাপ লাগছিল,,,, তাই সোজা বেরিয়ে এলাম ওখান থেকে,,,,

তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম,,,, আর কোনো বন্ধু বান্ধবের কাছে যাব না,,,,, কাজ খোজা শুরু করে দেব,,,,, কিন্তু এখন তো প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে,,,, তাই রাস্তার ধারে গেলাম,,,, দেখলাম অনেক মানুষ শুয়ে আছে,,, হয়তো তারাও আমার মত নিরুপায়,,,, সত্যি বাস্তবতা অনেক কঠিন,,,, এখানে আবেগের কোন স্থান নেই,,,

আমিও তাদের সাথে শুয়ে পড়লাম,,,, খুব ক্ষুধা লেগে ছিল,,, কিন্তু খেলাম না,, কারণ হাতে যে টাকা ছিল,,, তা দিয়ে কাল চলতে হবে,,,, না জানি সামনে আরো কতদিন এভাবে থাকতে হবে,,,

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম,,,, উঠে অবাক হয়ে গেলাম,,, রাস্তায় রাতের মত আর কোন মানুষ শুয়ে নেই,,, সকাল খুব একটা বেশি হয়নি,,,,, হয়তো সবাই পেটের ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করছে,,,, ওদের কাহিনী দেখে সত্যি খুব ভালো লাগছিল,,,, ওদের মধ্যে হয়তো, বড়লোকদের মত এত টাকার নেশা নেই,,,শুধু দুবেলা খেতে পারলে মনে হয় খুশি ওরা,,,,

খুব ক্ষুধা লেগে ছিল তাই রাস্তার পাশে,,, পা রুটি আর কলা খেলাম,,,, তারপর চাকরির খোঁজে বের হলাম,,,,

সারাদিন অনেক খোঁজাখুঁজি করলাম,,,, কিন্তু সবারই এক কথা,,,, চাকরি নেই,,,, আর তাছাড়া গ্রাজুয়েট ও কমপ্লিট করিনি,,,,, যে কোন কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিব,,,,

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেল,,,, আজকে ও সেই রাস্তায় রাত কাটাতে হবে,,,,

শহরে এসে কাজের চাপে বাড়ির কথা ভুলে গিয়েছিলাম,,,, বাড়িতে যে আমার জন্য একজন অধীর অপেক্ষা করতেছে, সে কথা খেয়ালই ছিল না,,,,

একটু পর মাকে ফোন দিলাম,,,,

কিরে বাবা,,, সেই কালকে গেছিস,,,, এখন পর্যন্ত একবার ওতো ফোন দিস নাই,,,, কত টেনশনে ছিলাম জানিস,,,,মা

আসলে একটু কাজের চাপ ছিল মা,,, নতুন নতুন আসছি তো,,, তাই একটু,,, তোমরা কেমন আছো,,, আমি

হুম ভালো আছি,,, খাওয়া দাওয়া করছিস বাবা,,,মা

হুম মা এই মাত্রই করলাম,,, তোমরা খেয়েছো,,,, আমি

হুম আমরা খেয়েছি,,,, সাবধানে থাকিস বাবা,,,মা

তোমরা সাবধানে থেকো,,,, আর আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করো না,,, আমি এখানে ভালোই আছি,,,, আমি

মাকে কথাগুলো বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল,,, কিন্তু তবুও বললাম,,, না হলে অনেক চিন্তা করত,,,,,

এভাবে আরো চার দিন কেটে গেল,,, কিন্তু এখনো কোনো চাকরির ব্যবস্থা করতে পারিনি,,,,,

আজকে শরীরটা অনেক দুর্বল লাগছিল,,,, পাঁচ দিন হল,, ভালোভাবে পেটপুরে খেতে পারেনি,,, হাতে যে টাকা ছিল,,, সেটা অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে,,,,

রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম,,,, চোখটা কেমন বুঝে যাচ্ছিল,,,,,

তারপরে আর কোনো খেয়াল ছিল না,,,,, ঘুম থেকে উঠে নিজেকে হাসপাতাল আবিষ্কার করলাম,,,,,

আমি এখানে কিভাবে,,, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,,

আমার কথা শুনে একজন নার্স বলে উঠলো,,,,

আপনি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন,,, একজন স্যার আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে,,,, নার্স

কোন স্যার আমাকে নিয়ে এসেছে,,,, তিনি কি এখনও এখানে আছেন,,, আমি

হুম আছে,,,, আপনি থাকুন,, আমি ওনাকে ডেকে দিচ্ছি,,,,, নার্স

তারপর একজন ভদ্রলোক আমার দিকে আসলো,,,,

আসসালামু আলাইকুম,,, আমি

অলাইকুম আসসালাম,,,, কেমন আছো বাবা ,,, ভদ্রলোকটি

হুম ভালো আছি,,, আমি এখানে কেন,,, কিভাবে আসলাম,, আমি

তুমি রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছিলা,,, তখন আমি ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম,,,, তাই তোমাকে দেখি হাসপাতালে নিয়ে আসলাম,,,, ভদ্রলোকটি

ওহহহ,,, ধন্যবাদ আঙ্কেল,, অনেক উপকার করলেন,,, আমি

আরে ধন্যবাদ দেয়ার কি আছে,,,, এটা তো মানুষের দায়িত্ব,,,, মানুষ হয়ে যদি মানুষকে সাহায্য না করি,,,, তাহলে আর কিসের মানুষ,,,, ভদ্রলোক

আঙ্কেলের কথা শুনে মনটা খুব ভালো হয়ে গেল,,, তাকে দেখে মনে হচ্ছে,,, এখনো পৃথিবীতে ভালো মানুষ আছে,,,,,

সবাই কি তাই বোঝে আঙ্কেল,,,,, আমি

আচ্ছা বাদ দাও,,, তোমার বাসা কোথায়,,,, আঙ্কেল

আঙ্কলের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম,,, কি বলবো,,,, আমার কোন থাকার জায়গা নেই,,,, বলেই দেখি,,,, ওনাকে দেখে তো বড়লোক ই মনে হচ্ছে,,, যদি কোন উপকার করতে পারে,,,,, এসব ভাবতে ছিলাম,,, হঠাৎ আঙ্কেল আবার বলল,,

কি হল চুপ করে গেলে কেন,,,, আর কি ভাবছো এত,,, আঙ্কেল

আসলে আঙ্কেল,,, আমার থাকার কোন জায়গা নাই,,,আজ সাত দিন হলো ঢাকায় আসছি,,,, চাকরির খোঁজে,,, কিন্তু অনেক খুঁজেও কোন চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলাম না,,, আমি

আমার কথা শুনে আঙ্কেল কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন,,, তারপর বললেন

কতদূর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছ,,,, আঙ্কেল

অনার্স সেকেন্ড ইয়ার,,,, পারিবারিক সমস্যার কারণে গ্যাজুয়েট কমপ্লিট করতে পারিনি,,,, আমি

ওহহহ আচ্ছা,,,, আমি তোমার চাকরির ব্যবস্থা করে দিব,,,, তুমি আগে সুস্থ হয়ে নাও,,,, আঙ্কেল

আঙ্কেল এর কথা শুনে আমার বিশ্বাষই হচ্ছিল না,,,,
সত্যি বলছেন ,,,, 😱😱😱😱 আমি

হুম,,, আমার একটা নিজেরই কোম্পানি আছে,,, ওখানে তোমাকে জব দিব,,, আর তোমার থাকার ব্যবস্থা ও করব,,,, আঙ্কেল

আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না,,, আপনি সত্যি মহান,,,, আপনাদের মত মানুষ আছে বলে,, পৃথিবী এখনো টিকে আছে,,, আমি

আরে বাবা,,, এত বেশি বলো না,,, যতটা বলছো,,, ততটাও ভালো না আমি,,,, আঙ্কেল

আপনি সত্যি ভালো,,, কেউ ভালো না হলে,,, একজন অচেনা মানুষের জন্য এত কিছু করে না,,,, আমি

আচ্ছা বাদ দাও,,, তুমি কি প্রাইভেট পড়াতে পারো,,,, আঙ্কেল

পারি একটু একটু,,, কিন্তু কেন আঙ্কেল,,, আমি

নাহহ,,, আমার একটা ছোট মেয়ে আছে,,,, এবার নাইনে পড়ছে,,, ওকে তোমাকে পড়াতে হবে,,,, পারবে তো পড়াতে,,,, আঙ্কেল

কেন পারব না,,,, আপনি আমার জন্য এত কিছু করলেন,,, আর আমি আপনার এই সামান্য আবদার টুকু রাখতে পারব না,,,, আমি

তোমার কথা শুনে ভালো লাগলো,,, আচ্ছা চলো আমার বাড়িতে,,, আজ থেকে আমার বাড়িতেই থাকবে,,, আসলে বাবা আমার কোন ছেলে নেই,,, শুধু দুইটা মেয়ে আছে, ,,, বড় মেয়ে পড়াশোনার জন্য কানাডা থাকে,,, তার পড়া প্রায় শেষের দিকে,,,,

ওহহহ,,, ভালো,,,তো,,, আমি

তারপর আমি আর আংকেল তাদের বাড়িতে গেলাম,,,
বাড়িটা দেখে অবাক হয়ে গেলাম,,,,

এত বড় বাড়ি,,,মনে হচ্ছে রাজপ্রাসাদ,,,
আঙ্কেলের সাথে ভিতরে গেলাম,,,

কিছুক্ষণ পর,,, আঙ্কেল কাকে যেন ডাকতে লাগল,,,

চলবে,,,,

ভাল লাগলে অবশ্যই লাইক এবং কমেন্ট করবেন

ধন্যবাদ সবাইকে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here