অন্যরকম_ভালোবাসা পার্ট-৯ ফাবিহা নওশীন

0
387

#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-৯
ফাবিহা নওশীন

তিয়াশা কাছে গিয়ে দেখলো একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে পিছ ঘুরে।তিয়াশার কথা শুনে পিছু ঘুরতেই তিয়াশা দশ হাজার ভোল্টের শকড খেলো।আর অস্ফুটস্বরে বলল,আরাফ!!!
তিয়াশা আস্তে আস্তে বলছে,তিয়াশা তোর জন্য পাবনা ফরজ হয়ে গেছে।আজকাল তুই সব জায়গায় আরাফকে দেখছিস।
আরাফ তিয়াশার কন্ঠ শুনে অবাক হয়ে ফোনের লাইট অন করে তিয়াশার মুখে দিকে তাক করলো।
তিয়াশা ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো স্বপ্ন নয় এ বাস্তবতা।
-তুমি??তুমি সত্যি সত্যিই এখানে নাকি আমি,,,,
-আমি এতোটাও ভাগ্যবান নই যে তুমি আমায় স্বপ্ন দেখবে।
-তুমি এখানে কি করছো?
-বন্ধুর বোনের বিয়েতে এসেছিলাম।আর ওর সাথে ওর বোনের শ্বশুর বাড়ি এসে ফেসে গেছি।
-তার মানে আমি ও বাড়িতে তোমাকেই দেখেছি।এটা ভুল ছিলো না।
-বললাম ই তো আমি এতটাও ভাগ্যবান নই যে মিস তিয়াশা আমায় স্বপ্ন কিংবা কল্পনায় দেখবে।
আরাফ কাপা কাপা কন্ঠে কথাগুলো বলছে।ঠান্ডায় কাপছে।
-তুমি কাপছ কেন?
-অদ্ভুত।ঠান্ডায় কাপছি।মানুষ তো গরমে কাপে না।জ্যাকেট পরে আছো তো তাই অন্যের কষ্ট চোখে পরেনা।কিছু কিছু মানুষ এমনই হয়।অন্যের কষ্ট তাদের চোখে পরে না।
-বেশ হয়েছে বেশী পার্ট নিলে এমনই হয়।
-মানেহ??
-মানে বেশী পার্ট নিয়ে জ্যাকেট কিংবা সুয়েটার পড়ো নি।তার ফল,,
-শুনো আমি না জানতাম না যে এখানে এসে আমি ফেসে যাবো তাহলে জ্যাকেট নিয়ে আসতাম।তার চেয়ে বড় কথা জানলে আসতাম ই না।পরেছি পাগলের পাল্লায়।কথাটা বলেই আরাফ রেলিংয়ের দিকে ঝুকে দাড়ালো।
আরাফ তিয়াশার জন্যই এখানে এসেছে।কিন্তু থেকে যেতে হবে এটা জানতো না।কথা ছিলো ওর বন্ধু ওর বোনকে রেখে কিছুক্ষণ পর চলে যাবে।তাই এসেছিলো। কিন্তু এখন নাকি এখানে থাকতে হবে।
আরাফ পিছু তাকিয়ে দেখে তিয়াশা কোথাও নেই।
-অদ্ভুদ মেয়ে। কিছু না বলেই চলে গেলো। এমন স্বার্থপর মেয়েকে কোন কুক্ষণে ভালোবেসে ছিলাম আল্লাহই জানে।সেন্স অফ হিউমার বলতে কিচ্ছু নাই।
তারপর সিগারেট বের করে জ্বালালো।শরীরটা একটু হলেও গরম হবে।
তিয়াশা এক মগ কফি আর এক হাতে একটা চাদর নিয়ে ছাদে উঠে সিগারেটের জঘন্য গন্ধ পেলো।তাকিয়ে দেখলো আর কেউ নয় আরাফ সিগারেট খাচ্ছে।নাক ধরে আরাফের কাছে গিয়ে এক টানে সিগারেট নিয়ে ফেলে দিলো।
-কি হচ্ছে এসব? সিগারেট খাচ্ছ?এই জন্যই বুঝি ছাদে এসছো?
-সে কৈফিয়ত তোমাকে দিতে হবে?
-না,আমায় কেন দিবে?ইউর লাইফ ইউর চয়েস।
তিয়াশা কফির মগ আর চাদরটা এগিয়ে দিলো।আরাফ অনেকটা বাধ্য হয়ে চাদর নিয়ে গায়ে মুড়ি দিলো।কফিটা হাতে নিয়ে বলল।
-আমার জন্য হটাৎ এতো মায়া?
-(তোমার জন্য সব সময় মায়ার চেয়ে বেশি কিছু ফিল করি)মায়া নয় মানবতা।
-এত মানবতা আমার সহ্য হবে তো?
কফির মগ মুখের সামনে নিয়ে থেমে গেলো।
-কি ব্যাপার, ভাবছো কফিতে বিষ দিয়েছি।
এই বলে তিয়াশা কফির মগ নিয়ে এক চুমুক খেয়ে বললো,দেখো এখনো বেচে আছি।মরি নি।টলটলে চোখে ছাদ থেকে চলে গেলো।
আরাফ তিয়াশাকে বুঝতে পারেনা।মনে হচ্ছে এই সেই তিয়াশা যে কিনা আরাফের খুব কেয়ার করে আবার পরক্ষণেই সেই দিনের কথা মনে পড়ে যায়।

মেয়ের বাড়ি থেকে মাত্র ৫জন ছেলে এসেছে।তাদের থাকার জন্য এক রুম দেওয়া হয়েছে। তিয়াশা দেখতে এসেছে ওদের জন্য কেমন ব্যবস্থা করা হয়েছে।বেডে ৩জনের এবং নিচে বেডশিটে ২জনের থাকার ব্যবস্থা এবং ৩টি কম্বল রাখা আছে।তিয়াশা কিছুটা নিশ্চিত হলো।তারপর আসিফের এক কাজিনকে নিয়ে একজগ পানি এনে রেখে গেলো।পানি রেখে বের হতে যাবে তখনই ওরা সবাই রুমে ঢুকলো।তিয়াশা আরাফের দিকে একবার তাকিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল।তখনই তামিম নামের এক ছেলে বলে উঠলো,,
-আরে আপনি আমাদের বিয়াইন না?
-হ্যা,,মানে জ্বি।
-আরে আপনার মতো একজন বিয়াইন থাকতে আমরা এমন বোরিং সময় পাড় করছি।এসেছেন যখন বসুন না,গল্প করি।
-আমি যে কাজে এসেছিলাম সে কাজ আমার শেষ।এখন আমি যাই।শুভ রাত্রি।
-আরে বিয়াইনসাব ভয় পেলেন নাকি?
তিয়াশা ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,কেন আপনি কি তেলাপোকা?যদি তাই হোন তবে আমি ভিষণ ভয় পাচ্ছি।কারণ তেলাপোকা খুবই নোংরা আর জঘন্য প্রাণী।আমি খুব ভয় পাই।
আরাফ মুখ চেপে চেপে হাসছে।
পাশ থেকে আরিফ বলে উঠলো, আমার বন্ধু তেলাপোকা হবে কেন?সে তো তামিম ইকবাল।
-আচ্ছা,তাই বুঝি??আমার তামিমকে একদম পছন্দ না।তাই অটোগ্রাফ চাইবো এমনটা আশাও করবেনা।আর এখানে তো ক্রিকেট খেলা হচ্ছেনা।আর আমিও রাশেদ খান নই,যে বল করে আউট করে দিবো।তাই এখানে আমার কোনো কাজ নেই।শুভ রাত্রি।
তিয়াশা বের হয়ে গেলো।আরাফ এবার জোরে জোরে হাসছে।অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখেছে।
-তুই তিয়াশার সাথে ফ্ল্যাট করতে চাইছিলি?আর মেয়ে খুঁজে পেলি না?
-তুই চিনিস ওকে?
তুহিন বললো,আরাফ চিনবে না তো কে চিনবে ওকে?এ মেয়ে আরাফকে রিজেক্ট করেছে।তবে এ মেয়ে যে আমাদের ভবিষ্যৎ ভাবি হবে নিশ্চিত থাক।
আরাফ আর কিছু না বলে শুয়ে পরলো।
সকালে তিয়াশা ২জন মহিলাকে ওদের ঘরে নাস্তা দিতে বললো।তিয়াশা ওদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব নিয়েছে।তিয়াশা চা ঢেলে সবার হাতে দিচ্ছে।
আরাফ বলে উঠলো, হটাৎ এতো খাতিরযত্ন করছো,,ভাবছি এতো খাতিরযত্ন আমার সইবে তো?
-যেভাবে বলছো কোনোদিন খাতিরযত্ন করে নি..
-হ্যা অবশ্যই করেছো।শেষবার যে খাতিরযত্ন করেছো তা আজো ভুলতে পারি নি আর না কোনোদিন পারবো,,
তিয়াশা বুঝতে পারছে আরাফ কি বলতে চাইছে তারপর নিজেকে কিছুটা সামলে বললো, খাতিরযত্ন,, মানে ধাক্কা খেয়ে উঠে তো পরেছো। খুব স্টং ভাবে উঠেছো কিন্তু এতটাই স্টংভাবে উঠেছো যে, যে তোমাকে ধাক্কা মেরেছে তাকেই ভুলে গেছো।গুড।
এনিওয়েস আমরা বর পক্ষ।কনে পক্ষ থেকে মেহমান এসেছে তাদের আপ্যায়ন, দেখাশোনা করা আমাদের দায়িত্ব।
তিয়াশা কথাটা বলেই চলে গেলো।
আরাফ তিয়াশার কথার কিছুই বুঝতে পারলো না।তবে কিছু তো একটা আছেই,ওর কথার মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে।কিন্তু কি,,,আর সেটার উত্তর একমাত্র তিয়াশাই দিতে পারে,,

আরাফ বরপক্ষের রিসিপশনে বসে আছে কিন্তু কোথাও তিয়াশাকে দেখতে পাচ্ছে না।তাই আরাফ বাইরে গেলো। বাইরে গিয়ে দেখলো তিয়াশস গাড়ি থেকে বের হচ্ছে। হালকা গোলাপি ড্রেস সাথে হালকা জুয়েলারি, হালকা মেকাপ,খোলা চুল এটুকুই যথেষ্ট ছিল আরাফকে পাগল করার জন্য।আরাফের চোখ তিয়াশার মধ্যেই আটকে আছে।আরাফে সেই ছেলেটাকে গাড়ির দরজা খুলতে দেখলো।যার সাতগে তিয়াশা ফেসবুকে ক্লোজ হয়ে পিক তুলে আপলোড দিয়েছে।ওদের ঢং দেখে আরাফের পিত্তি জ্বলে গিয়েছিল।
তিয়াশা ওই ছেলেটার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে,বিভিন্ন ভংগিমা কতে সেল্ফি তুলছে।কথার ছলে একে অপরের গায়ে হাত দিচ্ছে।আবার এক সাথে খেতে বসেছে।দুনিয়া দারির আর খবর নেই তিয়াশার।আরাফ রাগ করে অন্যদিকে চলে গেলো। তিয়াশার খেতে বসে আরাফের কথা মনে পড়লো। খেয়েছে কিনা।।কিন্তু ও উঠতেও পারছেনা।কেননা টেবিলে বাবাও আছে।তিয়াশা এদিক সেদিক তাকিয়েও আরাফকে দেখতে পেলো না।তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করলো।উঠে যাবে তখনই মামনিও ওর সাথে উঠে গেলো। তারপর বললো,
-তিয়াশা,কিছুক্ষন পরে ব্যাগ গুছানো শুরু করো।আজকে সন্ধ্যায় আমরা ফিরবো।
-আজকেই যেতে হবে।
-হ্যা মা।তোর বাবার নাকি ভালো লাগে না।বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগে তোকে ছাড়া।অন্যসময় আবার আসিছ।লক্ষী মা আমার।
তিয়াশা মন খারাপ করে বললো,
-আচ্ছা।
তিয়াশা এদিকে সেদিকে আরাফকে অনেক খুজেছে।কনের বাড়ির লোক আসিফ ভাই আর ভাবিকে নিয়ে চলে গেছে।
তিয়াশা খামামনির বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে,প্যাকিং কমপ্লিট করে নিলো।সন্ধ্যায় স্বপরিবারে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।এই সময়ের মধ্যে আরাফকে অনেকবার খোজেছে।ও জানে বরপক্ষের বাড়িতে কনের বাড়ির মেহমানরা এতক্ষন থাকে না।তবুও ওর চোখ শুধুমাত্র আরাফকেই খুজেছে।

আরাফ কনে পক্ষের সঙ্গে চলে গেছে।আজকেই ঢাকায় ফিরে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here