#অন্যরকম_ভালোবাসা
পার্ট-৮
ফাবিহা নওশীন
তিয়াশা ছাদের দোলনায় বসে পা দোলাচ্ছে আর একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।বেলা পরে গেছে কিছুক্ষণ পর সুর্যাস্ত যাবে।রাবেয়া(কাজের মেয়ে)ফুলের টপে পানি দিচ্ছে আর আড়চোখে তিয়াশার দিকে ক্ষনে ক্ষনে তাকাচ্ছে।
ব্যাপারটা তিয়াশার চোখে পরলো,,
-এই রাবেয়া তোর ব্যাপারটা কি? বারবার এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
-না আসলে আপু মনে হচ্ছে আপনার মন খারাপ। তাই জিজ্ঞেস করতে চাইছিলাম কি হইছে আপনার?
-হ্যা,আমার মন খারাপ। প্রচন্ড মন খারাপ। ফেসবুক বলছে আমার ক্লাসের অধিকাংশ মানুষ ভেকেশনে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে গেছে।কত মজা করছে,,ফেসবুকে পিক দিচ্ছে আর আমি বাসায় বেকার বসে আছি আর ফেসবুকে এদের মজা করতে দেখে জ্বলছি।
তিয়াশা প্রতিদিন কয়েকবার আরাফের আইডিতে ঘুরে আসে।আর ওর ফেসবুক আইডি বলছে ও এখন রাঙ্গামাটি আছে।২ ঘন্টা আগে কয়েকটা পিক আপলোড দিয়েছে ১০-১২ জনের গ্রুপ ফটো।সেখানে ৩জন মেয়েও আছে।
তিয়াশার বাবা তিয়াশার দাদার একমাত্র ছেলে হওয়ায় তিয়াশার কোনো চাচা,ফুপু নেই।মামনিরা ২বোন ২ভাই।ওর মামনিই ছোট। বড় মামার ২ছেলে পাশের মহল্লায় তাদের বাসা।বড় খালামনির বাসা কুমিল্লায়।খালাতো বোনের বিয়ে হয়েছে ৩বছর।ছুটিতে সব সময় খালামনির বাসায় যেতো।ওর কুমিল্লায় খুব ভালো লাগতো। খোলামেলা বিশাল বড় বাড়ি।বাধানো বিশাল বড় এক পুকুর আছে।তাতে বড় করে সিড়ি দেওয়া। সিড়িতে বসে পানিতে পা ভিজিয়ে বসে থাকতো।আপু এদিক সেদিক ঘুরাতে নিয়ে যেত।খালাতো বোনের বিয়ের পর আর যাওয়া হয়নি।পরশু খালামনির ছেলের বিয়ে।মামনি বার বার করে বলছে যা ঘুরে আয়।কিন্তু ওর একদম যেতে ইচ্ছে করছেনা।ছোট মামার এক ছেলে সে অস্টেলিয়ায় স্বপরিবারে থাকেন।
আবার ফেসবুকে গেলো। প্রথমেই আরাফের আইডিতে চেকিং দিলো নতুন কোনো পোস্ট দিয়েছে কিনা দেখার জন্য।নতুন পিক দিয়েছে একটা মেয়ের সাথে কয়েকটি আর ক্যাপশনে লিখেছে সামওয়ান স্পেশাল।নিজের ৩২দাত বের করে হাসি দিয়ে তোলা পিকে ক্যাপশন দিয়েছে “বিষন্নতা এখন আর আমায় ছুতে পারেনা।”
তিয়াশা রাগে গজগজ করছে।তোকে বিষন্নতা ছুবে কেন তুই তো ফুর্তিতে আছিস।ফেসবুক থেকে বের হয়ে ডাটা অফ করে বসে আছে।আর তখনই ফোন বেজে উঠলো। সাফিন(বড় মামার বড় ছেলে) ভাই ফোন করেছে।ফোন রিসিভ করতেই
-কিরে তিশু প্যাকিং কমপ্লিট?
-কিসের প্যাকিং?
-মার খাবি,,কিসের মানে কি কালকে আসিফ ভাইয়ের হলুদ।সকালে বের হতে হবে।এতদূরের রাস্তা।এখন তুই এটা বলিস না যে তুই যাবি না।
-আমি যাচ্ছি না ভাইয়া।
-যাচ্ছি না মানে,,
-আমি যাবো না।মামনি আর বাবা যাবে বিয়ের দিন।
-তুই যাবিনা তোর ঘাড় যাবে।বাসায় বসে কোন মহাকার্য করছো তুমি?দেখ আমি অফিস থেকে ৪দিনের ছুটি নিয়েছি।আর নাহিন বন্ধুদের সাথে কলেজ ট্রিপে গেছে।আমি একা একা কি করবো ওখানে। প্লিজ বোন না ভালো। আমার ময়না,টিয়া লক্ষী বোন।প্লিজ।।
-দেখো আমি শপিং করি নি কিচ্ছু।কিভাবে যাবো।আম্মুকেও বলে দিয়েছি যাবো না।
-তুই এখনই শপিংয়ে যা।আমি কিচ্ছু জানি না। সকাল ৯টার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবি।আমি গাড়ি নিয়ে আসবো।দেখ দুভাইবোন মিলে প্রচুর মজা করবো। বাই।।
তিয়াশাও ভাবলো ও যাবে।ওর ও ফেসবুকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু মিলে যাবে।ফোনে ডাটা অন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দিলো বসুন্ধরায় মামনির সাথে শপিংয়ে যাচ্ছে কাজিনের বিয়ে উপলক্ষে।
তারপর মামনিকে সব টা জানালো।দু’জন মিলে শপিং করতে গেলো।
তিয়াশা আয়নার সামনে দাড়িয়ে সদ্য কিনা নতুন বাসন্তী রংয়ের শাড়িটা একবার গায়ে দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে আরেক বার নীল-সোনালি রংয়ের লেহেঙ্গা দেখছে।তিয়াশার মা মেয়ের এই কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।তিনি মেয়ের লাগেজ গুচ্ছাছেন।
-হয়েছে হয়েছে।এইবার রাখ।এভাবে দেখে তো পুরনো করে ফেলবি।
-মামনি বলোনা কেমন লাগছে?
-আরে আমার পরীর মতো মেয়েটা কোনো কিছুতে খারাপ লাগতে পারে?একদম রাজকন্যার মতো লাগছে।
-লাভ ইউ মাম্মি।
তিয়াশা গোছানো শেষ করে সাফিনকে ফোন দিলো।
-ভাইয়া আমি যাবো তবে একটা শর্ত আছে।
-আবার কিসের শর্ত?তুই কোনো শর্ত ছাড়াই যাবি।
-না,আমার শর্ত পুরন করলেই যাব নয়তো নয়।
-আচ্ছা বল।
-আমাকে তুমি কালকে কাঠগোলাপ সংগ্রহ করে দিবে।
– কোত্থেকে?
-আমি জানি না।যেভাবে পারো,কোন সোর্স লাগিয়ে আমার কাঠগোলাপ চাই।
– ওকে ওকে।
-লক্ষী ভাই।
পরের দিন দুপুর বেলায় তিয়াশা আর সাফিন কুমিল্লায় খালামনির বাসায় পৌছে গেলো।পুরো বাসা লাইট,ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে।খেয়েদেয়ে রেস্ট নিলো।তারপর সন্ধ্যা থেকে বাড়ির মেয়েরা সব সাজগোজ করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।তিয়াশা বাসন্তী রংয়ের শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে জুয়েলারি,দুহাত ভর্তি বাসন্তী রংয়ের চুরি,মোটা করে কাজল,মেকাপ,খোলা চুলে ভাইয়ার খুব কষ্ট করে ম্যানেজ করে আনা কাঠগোলাপ।এই সাজে অপরুপ লাগছে তিয়াশাকে।কিছু পিক তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দিলো।তারপর সাফিনের সাথে কিছু পিক তুললো বিশেষভাবে।এক এক করে সব আপলোড করলো।
আরাফ তিয়াশার প্রথম আপলোড করা পিকটা দেখছে।ও যেন চোখ ফিরাতেই পারছেনা।একদম আস্ত একটা পুতুল।তারপর হালকা করে ছবির উপর চুমু খেলো।তারপর অস্পষ্টভাবে বলছে,এই পুতুলটা শুধুই আমার।পরবর্তী পিকগুলো দেখে ওর রক্ত গরম হয়ে গেলো।একটা ছেলের সাথে ক্লোজ হয়ে বসে,দাড়িয়ে আছে।এই ছেলেটা তিয়াশার কে হতে পারে এই ভেবে অস্থির হয়ে পরছে।
আজ আসিফ ভাইয়ের বরযাত্রীতে তিয়াশা ও সাফিন ও যাচ্ছে।তিয়াশা নীল-গোল্ডেনের মিশ্রনে গর্জিয়াছ লেহেঙ্গা পরেছে।ভাড়ি গয়না, ভাড়ি মেকাপ করেছে।নিজেকে আজ ওর বউ বউ মনে হচ্ছে। নিজেকে নিজেই বার বার নজর দিচ্ছে।আয়নার কাছ থেকে সড়তেই ইচ্ছে করছে না।কয়েকটি ফটো ক্লিক করে ফেসবুকে আবারো আপলোড দিলো।সাফিন হুট করেই কোথাও উধাও হয়ে গেলো। তিয়াশা কনের বাড়ির কিছুই চিনে না। তাই একা একা বসে আছে।হটাৎ মনে হলো ও আরাফকে দেখলো।কিন্তু কোথাও খুজে পেলোনা।ও ভুল দেখেছে না সত্যি সত্যিই আরাফকে দেখেছে সেটা বুঝার জন্য উঠে এদিক সেদিক গিয়ে খুঁজে দেখলো কিন্তু কোথাও আরাফ নেই।তাই ভাবলো আরাফ আরাফ করে ও পাগল হয়ে যাচ্ছে তাই সব জায়গায় আরাফকে দেখছে। তাই চুপচাপ বসে রইলো। একটা ছেলে তিয়াশার দিকে কিভাবে যেন বারবার তাকাচ্ছিল।তিয়াশার খুব অস্বস্তি লাগছে তাই উঠে অন্য জায়গায় গিয়ে বসল।সেখানেও ছেলেটি চলে এসেছে। আর কি যেন আস্তে আস্তে বলছে আর হাসছে।তিয়াশার এবার আর সহ্য হলো না।উঠে গিয়ে বলল,কি সমস্যা ভাই?কোন দিন মেয়ে দেখেন নি?নাকি আমাকে খুব বেশিই পছন্দ হয়ে গেছে?আরেকবার যদি তাকান তাহলে ঘুষি মেরে চোখের ১২টা বাজাবো।তখন আর কিছু দেখার লায়েক ই থাকবেন না।আমাকে দেখে যতটা ভদ্র মনে হয় আমি ততটাও ভদ্র নই।
ছেলেটা কিছু না বলে উঠে চলে গেলো।দুর থেকে কেউ একজন তিয়াশার কান্ড দেখে হাসছে।আর ভাবছে মাইয়া কিছুটা গুন্ডি টাইপ।
বাসায় বউ আনা হয়েছে।হইচই পরে গেছে পুরো বাড়িতে। নতুন বউ এসেছে বলে কথা।হইচই তিয়াশার মুটেও ভালো লাগছেনা। তিয়াশা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে ছাদে গিয়ে দাড়ালো।ছাদ কিছুটা নীরব।তবে ঠান্ডা বাতাস বইছে।তিয়াশা ছাদে উঠে রেলিংয়ের পাশে গিয়ে ঘুরতেই ছাদের অপর পাশে একটা ছায়া দেখতে পেলো।তিয়াশা আঁতকে উঠল। কাপা কাপা গলায় বললো,, কে ওখানে?
চলবে,,