বিষ_করেছি_পান(৪১)

0
456

#বিষ_করেছি_পান(৪১)

(কপি করা নিষেধ)
রিতী ঘরে ঢুকতেই মুখটা আপনাআপনি হা হয়ে গেলো। পুরো রুমে বেলুনের ছড়াছড়ি। তাজা গোলাপের ডেকারেশন। ফ্লোরের মাঝবরাবর সেন্টার টেবিলে সুন্দর করে সাজানো গোছানো থ্রী লেয়ার কেক। তার পাশেই দাঁড়ানো শুভ্র পাঞ্জাবী গায়ে দাড়ানো সোহাগ। জীবনের এতো জটিলতার মাঝে রিতী এসব দেখে একটু যেনো ধাক্কাই খেলো। রিতীর পেছন দিয়ে বাড়ি শুদ্ধ লোক হর হর করে ভেতরে ঢুকে গেলো। সবাই এক সাথে বলে উঠলো,
— হ্যাপি বার্থডে সোহাগের পিরিতি!
শুনা মাত্রই সোহাগ হো হো করে হেসে ফেললো। বোনদের মাথায় চাটি দিলো। মাথা ঘসতে ঘসতে বোনরা রাগী লুক দিয়ে আবার রিতীর দিকে ফোকাস করলো। সোহাগ রিতীর দিকে এগিয়ে গেলো। দু হাত মুঠোয় নিয়ে মৃদু আওয়াজ করলো,
— হ্যাপি বার্থডে আমার বউ পিরিতি ♥️
রিতী মনে করার চেষ্টা করলো। আজ কত তারিখ। মনে পড়তেই লাফ দিয়ে উঠলো। সোহাগের মুঠো থেকে হাত টেনে নিলো।
— আমার নাম রিতী।
বলেই সবার দিকে দৌড় দিলো। রমিজউদ্দিন ছেলের বউকে সুন্দর একজোড়া ঝুমকা গিফট করলো। সোহাগী একজোড়া বালা পড়িয়ে দিলো। শ্বশুড়কে খুশি করার জন্য রিতী কানের দুল জোড়া খুলে রেখে শ্বশুড়ের দেওয়া ঝুমকা পড়ে দিলো। তাঁদের থেকে দোয়া নিয়ে ননদদের কাছে গেলো। তারাও রিতীকে ছোট ছোট গিফট বক্স দিলো। রিতী এসব এখন আনবক্স করলো না। পরে রয়ে সয়ে আনবক্সিং করবে ভেবে রেখে দিলো। সোহাগ এসে পাশে দাঁড়াতেই রিতী তার দিকে তাকালো। হাসি খুশি মুখটা যেনো আরো উজ্জল হয়ে গেলো।বাবা মা ছুটি তমালের কথা মনে পড়ে গেলো। জীবনে এই প্রথম জম্মদিন তাঁদের ছাড়া সেলিব্রেট হচ্ছে। ছুটির একটু খারাপ লাগলেও এতো খুশির মাঝে চাপা পড়ে গেলো। বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিতেই কয়েকটা মেসেজে চোখ আটকালো। বাবা মা ছুটি তমাল সবাই উইশ করেছে তাকে। রিতী ঠোঁট বাঁকা লো। একটু কল দিয়ে উইশ করলে কি এমন হতো?

রিতীকে টেনে টেবিলের সামনে নিয়ে আসা হলো।
— ফোনটা এবার রাখো। এমনিতেই দশমিনিট লেট করে ফেলেছি এবার কেকটা কাটো।
রিতী চমৎকার হাসলো। সবার দিকে তাকিয়ে বললো
— সবাইকে ধন্যবাদ। আমাকে এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত উপহার দেবার জন্য।
— লাভ ইউ ভাবী।
— লাভ ইউ টু..
সবাইকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। সোহাগী তাড়া দিলো। রিতী কেকের সামনে এসে দাড়াতেই মোমবাতি গুলো জ্বালানো হলো। মোম নিভিয়ে হাতে হাতে রেখে সবাই একসাথে কেক কাটলো। একজন আরেকজনকে খাইয়ে আর কেউ দাঁড়ালো না। রিতী সোহাগকে ছেড়ে সবাই ঘর খালি করে দিলো।

রিতী সোহাগ একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে কি মনে করে যেনো দুজনেই হেসে দিলো। সোহাগ দরজা বন্ধ করে রিতীর দিকে এগিয়ে আসলো। বাহু টেনে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো। রিতী সোহাগের কলার টেনে ধরে মুখোমুখি হলো। নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে দিলো।
— আমার গিফট কোথায় মি.?
— তোমার কাছেই আছে।
— কোথায়?
— খেয়াল করে দেখো, তোমার গিফটাও তোমার কাছে আবার আমার গিফট টাও তোমার কাছে।
— কিভাবে?
— সর্বাঙ্গে জড়িয়ে আছি যে।
রিতী চট করে সোহাগের গলা জড়িয়ে ধরলো।
— এগুলো তুমি অর্ডার করেছিলে?
— তবে কি তোমার কিপ্টুস ননদরা অর্ডার করবে?
— ওরা কিপ্টুস না। দেখো কতগুলো গিফট বক্স ওখানে।
— সব গুলোর বিল আমার ক্রেডিট কার্ড থেকেই গেছে ওকে?
সোহাগের চুপসানো মুখ দেখে রিতী খিলখিল করে হেসে উঠে।
— ও তার মানে ওরা সেদিন ই মেহেদী সহ এই গিফট গুলো নিয়ে এসছে? আগে থেকেই প্ল্যান তাইনা? বাট কিভাবে জানলে?
— কাবিননামা দেখে। বসোতো এখানে।
— কোলে রাখতে বুঝি কষ্ট হচ্ছে?
— আরে না। কাজ আছে।
— কি কাজ?
— মেহেদী দেখবো। দু হাত ভরে মেহেদী পড়েছো আমার এখনো দেখাই হয়নি।
রিতী গলা ছেড়ে দু হাত সামনে এনে তুলে ধরে। এপাশ ওপাশ নাড়িয়ে নাড়িয়ে দেখায়। এবার সোজা করে ধরে রাখে। দুই হাতের তালুতেই সোহাগের নামটা শো করছে। সহজেই চোখে পড়বে। এবং নজর ও কেড়ে নিবে। সোহাগ বাঁকা হাসে। রিতীর কপালে চুমু দিয়ে বলে,
— পাজি মেয়ে! তবুও কোল থেকে নামবে না তাইনা?
— নামিয়ে দাও।
বিছানার এক কোনে বসিয়ে দেয় রিতীকে। রিতী মুখে মুখে হাত চেপে অবাক হবার ভান করে,
— আআ! নামিয়েই দিলে।
সোহাগ অপলক তাকিয়ে থাকে। রিতী কি আজ একটু বেশি হাসছে না? কি অমাইক সেই হাসি! এতো দিন রিতীর কান্নামুখ দেখে তৃষ্ণা মিটিয়েছে আজ রিতীর হাসি মুখ দেখে তৃষ্ণা মেটানোর পালা। একটু ভালোবাসলেই বুঝি এতোটা ফ্রি ভাবে দুজন পাশাপাশি থাকা যায়?
সোহাগ ঝুকে রিতীর কপালে ফের ঠোঁট চেপে ধরে। রিতী আবেশে চোখ বন্ধ করে সোহাগের গলা জড়িয়ে ধরে। সোহাগ ঠোঁট সরিয়ে মুখোমুখি হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
— আজ হঠাৎ বেশী বেশী গলা জড়িয়ে ধরা হচ্ছে না? হাসির দৌলতে ঠোঁট জোড়া তো এক হবার নাম ই নিচ্ছে না। আমি তো জল্লাদিনীকে ভীষণ মিস করছি। কতক্ষন এতো হাসিখুশি থাকবেন মেডাম?
— যতক্ষন আপনি এরকম সুন্দর ভাবে পারফরম্যান্স চালিয়ে যাবেন।
সোহাগ মুচকি হাসে। রিতীও হাসছে। সোহাগ সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রিতীর কোমড় জড়িয়ে ধরে। রিতী হাসি থামিয়ে বলে,
— আমি কি সত্যিই বেশী হাসছি?
সোহাগ উত্তর দেয়না। মেহেদী পড়া হাত দুটোয় গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে। দুটো হাত চুমু একে বুকে চেপে ধরে। রিতীর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে,
— আমায় ছেড়ে যাবে নাতো বউ ?
— সেচ্ছায় তো আসিনি।
— জোর করে রেখে দিবো।
— তাতেই কি আমি থাকবো?
— থাকবে। বাইরের দুনিয়া থেকে লুফে নেবো তোমাকে। আবরণ হয়ে জড়িয়ে নেবো তোমায় আষ্টেপৃষ্ঠে। গেঁথে যাবো তোমার মাঝে। তুমি চাইলেও আর আলাদা হতে পারবেনা। নতুন করে শুরু হবে তোমার হাত ধরে পথযাত্রা। প্রয়োজন হলে দূরে চলে যাবো তোমায় নিয়ে। যেখানে পুরো রাজ্য জুড়ে আমার আয়ত্ত্বে থাকবে। আর সেই রাজ্যে হবে তোমার বিচরণ। পুরোনো সব ভূলে যেতে চাই পিরিতি। কলুষিত অতীতকে ছেড়ে আমার এই পবিত্র বর্তমানে ঢুব দিতে চাই। যেখানে থাকবেনা কোনো পাপালেশ থাকবেনা কোন আপত্তি। থাকবে রিতী নামক একরাশ মুগ্ধতা। আমি আর তোমাকে হারাতে চাইনা বউ। প্লিজ আমার বুকে থেকে যাও। নিজের সবটা দিয়ে তোমাকে আগলে রাখবো। তোমার খুশিতেই আমি হাসবো। প্রমিজ! আই প্রমিজ ইউ।
বলতে বলতেই রিতীর মুখখানা আঁজলা ভরে মূহুর্তে ই ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয় সোহাগ। শুষে নিতে থাকে সবটুকু মিষ্টতা। আপনা আপনিই রিতীর হাত উপরে উঠে আসে। পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে সোহাগের গলা। গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো বিছানায় মিশে একাকার হয়ে যায় দুটো তৃষ্ণার্ত প্রাণ ।রিতীকে নিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখের রাজ্যে পাড়ি জমায় সোহাগ। রিতী আঁকড়ে ধরে সোহাগকে।‌‌ অভিভূত হয়।অবুঝের মতো প্রশ্ন করে নিজেকে।
— স্বামী সুখ বুঝি একেই বলে?

______________________
দরজায় বার বার কে যেনো কলিং বেল টিপছে। রান্নাঘর থেকে বীনা ডাকছে,
— কতক্ষন থেকে বেল বাজছে! কেউ দরজাটা খুলে দিচ্ছো না কেনো? কেউ নেই ড্রয়িংরুমে? বাঁধন? ঝিমা? কোথায় সব? আটা মেখেছি আমি। এই হাতে দরজা খুলবো কিভাবে?
মায়ের ডাকে বাঁধন আসে দরজা খুলে দিতে। বীনা রান্নাঘরের দরজায় এসে সোহাগকে দেখে। দাঁত মুখ খিচে বলে,
— ছেলে মেয়েকে দিয়ে একটা কাজ ও যদি হয় আমার। কখন থেকে ডাকছি তোমায়?
— মা আমি তোমার ডাক শুনেই আসছি।
বাঁধনের আগে কোথা থেকে চিলের বেগে ঝিমা দৌড়ে আসে। বাঁধনকে পেছনে ফেলে দেয়।
— মা আমি দেখছি। ছুটি আর কাকা এসেছে।
বাঁধন ঝিমাকে দরজা খুলতে যেতে দেখে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যাচ্ছিলো। ঝিমার মুখে ছুটির কথা শুনে সেখানেই থেমে যায়। পেছন ফিরে তাকায়। ঝিমা দরজা খুলে দিতেই ছুটির হাসিমাখা মুখটা দেখা যায়। এতো দিন পর দুই বান্ধবী দুজনকে দেখে আর দূরে থাকতে পারে না। ঝাঁপিয়ে পড়ে একজন আরেকজনের বুকে। খুশিতে কান্না চলে আসছে। একজন আরেকজনের ঘাড়ে মাথা রেখে চুপ করে থাকে। বাঁধন সিঁড়ি থেকে নেমে আসতেই চোখে পড়ে ছুটির। ছুটির চোখ দুটো আরো খুলে যায়। নিবদ্ধ হয় চারচোখ একসাথে। কেউ উদ্বিগ্ন হয়না। চোখ বুজে না। চোখ ফেরায় না। শুধু তাকিয়ে থাকে পলকহীন চোখে।

ছানোয়ারকে বীনা সোফায় বসতে বলে। বাড়ির হাল চাল রুম্পা তমালের কি খবর যাবতীয় সব জিজ্ঞেস করছে। এতো দিন পর দেখা হওয়ায় কথার তালে তালে সেও সোফায় বসে পড়ে। হাত ভর্তি যে তার মাখা ময়দা সেকথা বেমালুম ভুলে যায়। ঝিমা পরেছে ছুটিকে নিয়ে।
বাঁধন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছুটি-ঝিমা, বীনা-ছানোয়ারের কথা শুনছে। ঝিমা ছুটিতো প্রায় নাচছে। আজ যে রিতীর জম্মদিন! রিতীকে সারপ্রাইজ দিবে আজ। ছানোয়ার গিয়ে রিতীকে নিয়ে আসবে আর সন্ধ্যার পর রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবাই মিলে সেলিব্রেট করবে। ছানোয়ার বলে,
— পরিক্ষাটা আপনাদের কাছে রেখে দেওয়াতে খুব স্বস্তি পাচ্ছি ভাবী। আমরা তো রায়পুরেই চলে গেছি। সেখান থেকে এখানে পরিক্ষাটা দেওয়ানো অসম্ভব। আমি আর চাইছিনা এই বাড়িতে ফিরে আসতে। আমার ছোট মেয়েটার ও সমস্যা করতে পারে। বলে না জেদের ভাত কুত্তারে দিয়ে খাওয়ায়? আর ছুটিটাও বড় হয়ে গেছে। এই পরিক্ষাটা দিলে মেয়ে আমার কলেজে পড়বে। এখানে ঝিমার সাথে থাকবে সব সময় তাছাড়া আপনারা তো ঘরে বাইরে সব সময় আছেন ই। তাই স্বস্তি পাচ্ছি। মেয়েটাকে দেখে রাখবেন ভাবী।

বাঁধনের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে ব্যাকুব মনে হয়। এদের কথা ধরনেই বুঝে গেছে আগে থেকেই যে এদের যোগাযোগ ছিলো। বাঁধন কে কেউ কিচ্ছুটি বললো না? ঝিমাও না? শুধু শুধু বাঁধন কত না জায়গায় কত ভাবে হন্যে হয়ে ছুটিকে খুঁজে বেড়ালো।ঝিমা ছুটি একপ্রাণ! তারা আলাদা থাকতেই পারেনা। এটা বাঁধনের বোঝা উচিত ছিলো। এতোটা বোকা নিজেকে বাঁধন কখনোই বোধ করে নি।
বাঁধন আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করলো ছুটিকে সে খুঁজে বেড়িয়েছে। কেনো? চলে গেলো যেতো। ছুটি ঝিমার বেস্ট ফ্রেন্ড। বাঁধনের কি? না আছে কোন সম্পর্ক না আছে কোন বন্ধন! আর সেই চিঠি? চিঠিতে ছুটি বাঁধনের নামটা বার বার উল্লেখ করেছে। ঝিমাকে খেয়াল রাখতে বলেছে। চলে যাবার সময় অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রিয় মানুষ গুলোর দায়িত্ব নিতে বার বার দায়িত্ত্ববান কাউকে বলে যায়।ছুটিকে এমন কিছু ভাবা যায়না যে তার আবেগ, আচরণ, কথা তুচ্ছ বলে ফেলে রাখবে। ছুটি এখন পূর্ণ একজন কিশোরী হয়ে উঠেছে। ছয়মাস আগে যে ছুটিকে দেখেছে সেই ছুটি আর নেই। হাতে পায়ে শরীরে সংকুচিত কলি প্রায় ফুটন্ত গোলাপে পরিণত হয়ে গেছে। রুপ লাবণ্যতা বেড়েছে কয়েকগুণ। ছোট থেকেই যেমন দুষ্টুমিতে ভরপুর তেমনি ম্যাচুরিটিতে বয়সের তুলনায় সবার থেকেই এগিয়ে। তাহলে কি বাঁধন ছুটির প্রিয় মানুষ? কি হিসেবে প্রিয়? বন্ধু? ভাই? নাকি অন্য কিছু?

ছানোয়ার রিতীর হলের সামনে দাঁড়িয়ে। বারবার মেয়েটাকে কল দিচ্ছে কিন্তু সুইচ স্টপ বলছে। অসময়ে ফোন কেনো বন্ধ থাকবে? তবে কি মেয়েটা ক্লাসে? ছানোয়ার অনেক ক্ষন অপেক্ষা করলো। এরিমধ্যে হলে একজন কে ঢুকতে দেখলো। মেয়েটাকে ছানোয়ার চিনে। রিতী আগে যে রুমে ছিলো সেই রুমে মেয়েটাও ছিলো। রুমমেট দের সাথে কি জানি সমস্যা হয়েছে রিতী বলেছিলো। তবে কার সাথে হয়েছে তা জানা নেই। ছানোয়ার প্রসস্ত হেসে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো। মেয়েটি ছানোয়ার কে দেখেই চিনে ফেললো। হাসি খুশি মুখে সালাম দিলো।
— আসসালামুয়ালাইকুম আঙ্কেল। কেমন আছেন? রিতীকে রেখে যেতে এসেছেন বুঝি?
— ওয়ালাইকুমুস সালাম মা। রেখে যেতে মানে? রিতী হলে নেই? ক্লাসে গিয়েছে বুঝি?
— কি বলেছেন আঙ্কেল? রিতীর না বিয়ে হলো? তিন দিন আগেই তো জানতে পারলাম। এসবের মানে কি? তার মানে আপনাকে না জানিয়েই রিতী বিয়ে করেছে? পালিয়ে গিয়েছে নাকি আঙ্কেল? ছি ছি?
— বিয়ে? মানে? আমার মেয়ের কোন বিয়ে টিয়ে হয়নি? কোথায় ও ডাকো ওকে।
— ফোন করুন না। তার মুখ থেকেই শুনুন।
— ফোন তো বন্ধ বলছে।
— বন্ধ তো বলবেই। মেয়ে আপনার ধোঁকা দিয়েছে। পালিয়ে কাকে না কাকে বিয়ে করেছে। এখন ফোন বন্ধ রেখেছে। সেবার না এসে কত গুন কির্তী করে গেলেন সুপারভাইজার এর সাথে? এখন দেখুন কেমন মেয়ে আপনার। ছি ছি। কি বলবো!
মেয়েটা ফোন বের করে এক নাম্বারে কল দেয়। হাসতে হাসতে বলে,
— এই কোথায় তোরা? নাম নাম নিচে নাম। দেখ রিতীর বাবা এসেছে। রিতী যে বিয়ে টিয়ে করে সংসার করছে তা ওর বাবা নিজেই জানে না। কিহ? হ্যা হ্যা। বলছিলাম না সুন্দর মেয়ে আবার সিঙ্গেল! এসব ফাপর বাজি ভাই আমি ভালোই ধরতে পারি। সাধু গিরী দেখাতে আসে। কোন নাগর জুটিয়ে এখন বিয়ে করেছে…

মেয়েটার কথা ছানোয়ার আর শুনতে পেলো না। বুকে চিন চিন করা ব্যথা অনুভব করলো। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। মেয়ের হাব ভাব তার এজন্য ভালো ঠেকছিলো না। বাপ সে সব বুঝে যায়। যে মেয়ের সাথে দিনে তিনবার নিয়ম করে কথা হতো গত তিনদিন থেকে সে মেয়ের সাথে একবার কথা হয়েছে। তাও অন্যরকম লাগছিলো মেয়েটাকে। পুতুলের মতো করে গড়া মেয়েকে ছেড়ে দিতে না দিতেই সর্বনাশ ঘটিয়ে ফেললো? এই শিক্ষা দিয়ে এতো দিন যাবৎ বড় করলো? ছানোয়ারের প্রচন্ড শরীর খারাপ লাগলো। গুটিসুটি হয়ে ধপ করে বসার জায়গায় গিয়ে বসে পড়লো। চোখে মুখে নিমেষেই আধার ঘনিয়ে এলো।

চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here