বিষ_করেছি_পান(৪২)

0
438

#বিষ_করেছি_পান(৪২)

(কপি করা নিষেধ)
হসপিটালে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে রিতী। বাবার কেবিনে গিয়ে ‘ বাবা….’ বলে হাওমাও করে কেঁদে উঠে। ছানোয়ার পিঠের পেছনে বালিশ দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে। একপাশে বাহু বন্ধনে ছুটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বাবার বুকে। আরেকপাশের বুকটা খালি। রিতী পড়ে আছে ছানোয়ারের পায়ের কাছে। শক্ত হয়ে বসে আছে। রিতীকে অপলক চোখে চেয়ে দেখছে। আর একটু একটু করে বুকের ব্যথাটা বাড়ছে। রিতী আকাশী রংয়ের কাতান শাড়ি পড়ে আছে। গলায় সোনার ন্যাকলেস। পিঠে ছাড়া সিল্কি চুল। হালকা মেকাপ। গাঢ় লিপস্টিক। ঘরের বউ দেখাচ্ছে। মেয়েদের শাড়ীতে বউ বউ লাগে। ছানোয়ারের চোখ ভিজে উঠলো। একপাশের খালি বুকটা খা খা করে উঠলো। তবু মেয়েকে ডাকলো না। নিলোনা বুকে টেনে। গম্ভীর গলায় জানতে চাইলো,
— কোথায় ছিলে?
রিতী ঝটপট উত্তর কাটলো,
— ভার্সিটিতে।
— এভাবে?
রিতী নিজের দিকে তাকালো। ঢুক গিলে বললো,
— ফাংশন ছিলো বাবা। দু তিন থেকে সেটা নিয়েই বিজি ছিলাম তাই তোমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারিনি। আর তার মধ্যেই তুমি নিজের এই হাল করে ফেলেছো?
রিতী বোকা নয়। হসপিটালে ঢুকতেই হলের মেয়েটাকে দেখেই বুঝে ফেলেছে কাহিনী গভীরে চলে গেছে। নয়তো তার সুস্থ সবল বাবা এভাবে অসুস্থ হবে না। ভালোভাবেই ম্যানেজ করতে লেগে পড়েছে রিতী। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
— তুমি আসবে আমাকে জানালে না কেনো? কখন থেকে খাওনা? রোদে দাঁড়িয়ে ছিলে তাইনা? এরজন্য এমন হয়েছে! আজ ফাল্গুনেই চৈত্র মাসের রোদ উঠেছে।
রিতীকে দেখে বুঝার উপায় নেই সে এক বিন্দু মিথ্যে বলছে। ছানোয়ার জানে তার মেয়েটা মিথ্যা বলে না । রিতীর অস্থিরতা দেখে ছানোয়ার আর শক্ত থাকতে পারে না। হাত বাড়িয়ে মেয়েকে বুকে টেনে নেয়। এখন তার শান্তি লাগছে। তার বুক জুড়ে তার দুই কলিজা ভরে আছে।
— তোমাকে কে নিয়ে এসেছে এখানে বাবা?
— বাইরে আছে মেয়েটা। আগে তুমি যে রুমে ছিলে সে রুমেই ছিলো। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিও।
— ওহ। আচ্ছা দিবো। তোমাকে বলেছিলাম না বাবা ঝামেলা হয়েছিলো… এই সেই মেয়েটা।
— ওহ। তারজন্য কি আমাকে উল্টোপাল্টা কথা বললো?
— কি বললো?
— তুমি নাকি পালিয়ে বিয়ে করেছো? সংসার করছো?
— আমি তো তোমার সামনেই আছি বাবা।
— শাড়ি কোথায় পেলে?
— এক বড় আপুর।
— গহনা তো সোনার।
— এগুলো গোল্ড প্লেট বাবা। আসল নকল চেনা যায়না।
— হুম। আমি একটু ঘুমাবো। তোমরা কোথায় যেও না।
ছুটি রিতী উঠলোনা। সেভাবেই বাবার বুকে পড়ে রইলো।ছানোয়ার লম্বা শ্বাস টানলো। এতোক্ষনের এলোমেলো চিন্তার সাথে অশান্ত মনটাও এবার শান্ত হলো। কিন্তু ঘুমোতে পারলো না। ফের চোখ দুটো ভিজে উঠলো। দুই মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
— আমার বড্ড আদরের দুটো পুতুল। তোমরা দুজনেই বড় হচ্ছো। কতো যত্নে তোমাদের মানুষ করছি সেটা আমিই ভালো জানি। শরীরের রক্ত পানি করে হলেও তোমাদের ভালো রাখছি । সাধ্য মতো কখনোই কোন খামতি রাখছি না। বাবার কষ্ট তোমরা এখন বুঝবেনা। যখন নিজেরা সেই পজিশনে যাবে তখন বুঝতে পারবে। আমি কখনোই এমন কারো হাতে আমার যত্নে গড়া পুতুলদেরকে তুলে দিতে পারবোনা যারা আমার পুতুলদের আমার থেকে ভালো রাখার সামর্থ্য থাকবেনা। আমার মেয়েদের যোগ্য কারো হাতেই আমি তাদের তুলে দিবো। বাবা আছেন। বাবা সবটা দেখবেন। ভূল করেও কখনো অপাত্রে নিজেকে দান করতে যেও না। ভূল করেও এমন ভূল বাবা কখনোই ক্ষমা করবে না।
রিতী ছুটি দু বোন ই হালকা কেঁপে উঠে। বাবার কথার গভীরতা দু বোন ই উপলব্ধি করতে পেরেছে। ছুটি বুঝতে পেরেছে এখন থেকে তার ও আর ছাড় নেই। আপুর সাথে বাবা তাকে একচোখেই দেখা শুরু করেছে। ভূল করেও যদি ভূল না ক্ষমা করে তাহলে তাদের দু বোনের কেউ ই ক্ষমা পাবেনা। বাবার এ মতবাক্য শোনার আগেই যে যার ভূল করে ফেলেছে। ছুটি কি কখনো বাবার সামনে স্বীকার করতে পারবে এই ভূলের কথা? বলতে পারবে তার মন প্রাণ সব একজনকেই উজাড় করে ভালোবেসে আসছে? আর সেই ব্যক্তি একজন একত্রিশ বছরের যুবক সাথে বিবাহিত? বাবা কি কখনো করবে ক্ষমা? রিতী এখনো লুকিয়ে যাচ্ছে সবটা। এতটুকু শুনেই যে বাবা অসুস্থ হয়ে যায় সেই বাবা কি মেনে নিতে পারবে যখন শুনবে পুরোটা? দুই বোন দুইদিকে অস্থিরতায় হাঁসফাঁস করছে।আর দরজায় হাজারটা ভাবনা ভাবতে ভাবতেই মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে বাঁধন,সোহাগ আর হলের মেয়েটা। মেয়েটা অনুতপ্ত তার করা ব্যবহারে। এরকম কিছু কথা আছে একটা বাবা কখনোই মেনে নিতে পারেনা। আজ যদি রিতীর বাবার জায়গায় তার বাবাকে কেউ এমন ভাবে বলতো? কি হতো? সেও তো দুধে ধোওয়া তুলসী পাতা না। ছানোয়ার রিতীর কপালে চুমু দিয়ে বলে, — হ্যাপি বার্থডে আমার মা।

ছুটি ঝিমার রুমে নিজের বইপত্র রাখছে। এখানেই থাকবে প্রায় একমাস। পরিক্ষা শেষে আবার চলে যাবে। ছানোয়ার চলে গেছে বাসায়। ছুটি গোছানো শেষ করে একবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। নিজেদের বাড়িটা দেখে। বাড়ির নিচে সাইনবোর্ড লাগানো। সেখানে লেখা টু লেট। তার নিচে ছানোয়ারের নাম্বার দেওয়া। যাওয়ার আগে ছানোয়ার এই সাইনবোর্ড টি লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে। ছুটির একদম সেই মফস্বলের বাড়িটি ভালো লাগেনা। কিন্তু কোন এক জনাবের দ্বারা ছানোয়ার বুঝমান হয়েছে ছুটির ক্ষতি হবার সম্ভাবনা আছে। রিতীর মুখ থেকে শুনেছে সোহাগ নাকি রিতীকেও একথা বলেছে। কিন্তু ছুটি তো জানে… বিশ্বাস করে সোহাগ তার ছুটিরাণীর কোন ক্ষতি হতে দিবেনা। দুলাভাই হয় তার! ছোট বোনের মতো দেখে। ছুটি মনে প্রশ্ন যা শুনেছে তা কি ঠিক? রিতীর সাথেও কথা বলতে পারলো না। অবশ্য রিতী কাল আসবে বলেছে। রিতীর সাথে কথা বলে তারপর সোহাগের সাথে দেখা করবে। একমাত্র শালী হবার পরেও এমন ফিলিংস দিচ্ছে যেনো উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। ভাবনায় মত্ত ছুটির ধ্যান ভাঙ্গে সুমধুর কবিতার আবৃতিতে।
” আমি, জেনে শুনে বিষ করেছি পান।
প্রাণের আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ।
যতই দেখি তারে ততই দহি,
আপন মনোজ্বালা নীরবে সহি,
তবু পারি নে দূরে যেতে, মরিতে আসি। ”
— এই কবিতাটি ই না বলেছিলি যখন আমি হসপিটালে?
ধরতে পারিনি ঠিক।আবছা ছিলো। মেলাতে মেলাতে ক্লিয়ার হলাম।

অপর পাশেই যে বাঁধনের বারান্দা ছুটি ভূলেই বসেছিলো। বাঁধনকে দেখে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিথ্যা হাসি দিলো। বাঁধনের জন্য সত্য হাসি আসেনা ছুটির। আসে শুধু তৃষ্ণার্ত বুকের দীর্ঘশ্বাস। মুখে আওড়ালো
— বাঁধন ভাই!
— রুমে আয়।
— হ্যা?
— আমার রুমে আয়। কথা আছে তোর সাথে।
— কি কথা?
বাঁধন ঘরে চলে যায়। ছুটিও বারান্দা ছাড়ে। বাঁধনের ঘরে যেতেই বাঁধন অমাইক হাসি দেয়। বাঁধন ইশারায় বসতে বলে। ছুটি বসতে বসতে বাঁধনের হাসি মাখা মুখটা দেখতে থাকে। বাঁধন ও সামনে এসে বসে।
— কেমন আছিস?
— ভালো।
— পরিক্ষার প্রস্তুতি কেমন? এবারো ফেল মারবি?
— সারা জীবন ই মারবো। আমার জম্ম ই ফেল খাওয়ার জন্য।
— আমি আছি না? অংকে তোর বাপে তোকে জাহাজ না বানাতে পারলেও আমি তোকে লঞ্চ বানাবো। চলবেনা?
— সাঁতার কাটবে।
— তুই যে চলে গেলি আমাকে তো জানিয়ে গেলি না। পেলে নেলে তোকে এতো বড় করলাম আর তুই ফুরুৎ করে হুটহাট উড়াল দিলি! এটা কি ঠিক করেছিস ছুটি?
— তুমিতো ধরে রাখলে না।
— বড় হয়ে গেছিস। তুমি ডাকছিস।
— ঝিমাও যা আমিও তো তা।
— হ্যা। এবার আর ছুটবিনা। তোদের বড় ভাই আছেনা? দুইটাকে ভালো ছেলে ধরে এনে একসাথে বিয়ে দেবো আমি। তারপর যত ইচ্ছে ছুটিস।
— কতদিন পাবে? একমাস? বেশী তো না।
বাঁধন উত্তর দিলো না। ছুটিকে বাজিয়ে দেখতে মন চায়। কিন্তু ছুটি ছুটির মতোই ত্যাড়া। কিন্তু চোখ যে অন্য কিছু বলে? বাঁধনের উপর থেকে চোখ তো সরেই না। তাই বাধ্য হয় বাঁধন ঐ চোখে চোখ রাখতে।
— সুমি আপু কেমন আছে?
— হু?
— সুমি আপু।
— বেটার।
— ওহ।
— দেখতে যাবি? তোকে নিয়ে যাবো একদিন।
ছুটি হাসে। এখনো যাওয়া বাদ দিলো না। বীনা কত কি করলো তাতেও কাজ হলো না। বিয়ে করা বউ যে.. তাকে সুস্থ করেই তুলে ঘরে তুলবে। বাঁধন ভাই কি এই প্রতিজ্ঞা করেছে? খুব জানতে ইচ্ছে হলো ছুটির। তবে ইচ্ছেটা দমালো। আজ উঠি পড়তে বসবো বলেই বাঁধনের ঘর ত্যাগ করলো। কিন্তু পড়তে বসলো না। মন কি শরীর কোনটাই শায় দিলোনা। তাই চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো।

রিতীর আশেপাশে ঘুর ঘুর করছে ছুটি। একবার এপাশে যাচ্ছে তো আরেকবার ওপাশে। মাঝে মাঝে আবার নাক লাগিয়ে শুকছে। কি শুকছে? ক্রমাগত চালিয়েই যাচ্ছে। বীনা আদর করে রিতীকে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে। এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে। রিতী উত্তর দিচ্ছে। মাঝে মাঝে ছুটিকে চোখ রাঙাচ্ছে। আবার বকাও দিচ্ছে,
— ছুটি শান্ত হয়ে বস। কি শুরু করেছিস?
ছুটি থামছে না। রিতী ঝিমাকে বলে,
— ধরতো একে। রুমে নিয়ে যা। আমি আসছি। ওর বেয়াড়া পনা বের করছি।
রিতী রুমে আসতেই ছুটি ঝিমা একসাথে রিতীর শরীর শুকতে থাকে। দুজনেই একসাথে নিশ্বাস টেনে বলে উঠে, — খুশবু…..উউউউ।
রিতী পারেনা দুইটার গালে সপাত সপাত থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে।
— এই সরতো তোরা। যতসব আজাইরা কাজকাম!
— হায় হায় আপু! সোহাগ ভাইকে পেয়ে আমাদের ভুলে গেলে!
— এবার কিন্তু বেশী বেশী হচ্ছে।
— আমাদের দাবী মানতে হবে। মানতে হবে।
— আমার কাছে কি? যা তোদের দুলাভাইয়ের কাছে যা।
ছুটি এসে রিতীর কোলে লাভ দিয়ে উঠে বসে।
— আপু! তুমি এতোদূর! বাবা যদি জানতো! সেখানেই অক্কা পেতো।
— ছিহ! ছুটি,এসব বলতে নেই।
— আপু তুমি কিভাবে এতো স্ট্রং থাকো সব সিচুয়েশনে?
ঝিমার করা প্রশ্নে রিতী শুকনো হাসে।
— তোরা যদি চুপ থাকিস আমি আরো স্ট্রং থাকতে পারি।
— আমি কিন্তু দুলাভাই কে ছাড়বোনা।
— ছাড়িস না।
— আপু তুমি কি আর তোমার সংসারে ফিরবে না?
— আপাতত না।
— কেনো? বাবাতো কিছু জানবেনা।
— সেখানে অনেক মায়া। অনেক সুখ! আমি যদি লোভী হয়ে পড়ি তাহলে আমার পরিবার জীবিত ভোগ করবে মৃত্যু যন্ত্রনা। তুইও বাচবিনা।

ছুটি এভাবে ভেবে দেখেনি ব্যাপারটা। তার বাবা তো সাফ সাফ জানিয়েই দিয়েছে তাদের দু বোনকে সবটা। তাহলে তার মতো তার বোন ও কি বয়ে যাবে এই না পাওয়ার কষ্ট টা? এটা ছুটি কিভাবে হতে দিতে পারে? চলুক এভাবে। পরিক্ষার কথা ভাবা যাক। পরে না হয় দেখে নিবে সুযোগ বুঝে ছুটি সবটা।

বাড়ি থেকে বেরিয়েছে ছুটি ঝিমা। দুদিন পর পরিক্ষা। এবার পরিক্ষা হচ্ছে মার্চ মাসে। সরকারের নানান ঝামেলায় সময়টা মাস খানেক পিছিয়ে গেছে।বীনা দেখলে আর র মানবে না। লুকিয়ে চুরিয়ে বেরিয়েছে ছুটি ঝিমা। ছুটি হাতে ফোন পেয়েছে। ছানোয়ার যাবার সময় দিয়ে গেছে। ছুটি কল দেয় সোহাগকে। সোহাগ জানায় আশে পাশেই নাকি আছে। ছুটি সেখানে গিয়ে উপস্থিত। ছুটিকে দেখে প্রশস্ত হাসে সোহাগ। টানিয়ে টানিয়ে মজা করে,
— ও হে.. আমার ছুট্টিরাণী।
ছুটির ঝাঁঝালো উত্তর।
— আমি কিন্তু ভীষণ রাগ করেছি।
ছুটির অবস্থা ভালো না। যে কোন সময় মাটিতে শুয়ে পড়তে পারে। ঠোঁট উল্টে বসতে যাবে তখনি এই এই এই করে সোহাগ হাত টেনে ধরে। ঝিমাও এসে বগলের নিচে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে টেনে ধরেছে। এখন ছুটি ঝিমা আর সোহাগের মাঝে ঢুলছে। সোহাগের ঠোঁটে খই ফুটে,
— আপু আপু আপু…. আপুটা আমার এরকম করেনা। দেখো লোকে দেখে কি বলছে! এতো বড় মেয়ে এভাবে ঢোল খেলে! ঝিমা টেনে ধরো একে।
ছুটি ত্যাড়ামি শুরু করে। উঠবে না সে। ঠোঁট উল্টে কান্না শুরু করে..
— আমার ভালো ছুটি রাণী! কান্না অফ করো মা! চলো আমরা কোথাও বসি। কি চাই? কি চাই বলো?
— আমি বিয়ে খাবো….!
বলেই আরো কান্না জুড়ে দেয়। সোহাগ বুঝতে পারে একে থামাতে হবে। রাস্তায় লোকজন দেখছে। বার বার তাকাচ্ছে। যে কোন মুহুর্তে গোল চত্ত্বর সৃষ্টি হতে পারে। সোহাগ টেনে টুনে ছুটিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে। ওয়েটারকে ডেকে বলে,
— অর্ডার নাও। আমার ছুটি রাণী যা খেতে চাইবে তাই আনবে।
— আমি কিছু খাবোনা। বার বার আমাকে এভাবে হাত করা যাবেনা।
ছুটির চিৎকার এ সোহাগ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। হাত জোড় করে বলে,
— দুলাভাই সরি তো! কান্না অফ কর না….!
— তুমি কি ভেবেছো এসব ভূরি মোটা খাবার আমাকে খাইয়ে চুরি করে আমাদের ঘরের অমৃত খাবা! আমি সেটা মেনে নিবো?
— আমি কোথায় অমৃত খেলাম?
— একদম গলাবাজি করবেনা। আপুর গায়ে এখনো তোমার গন্ধ লেগে আছে। মিথ্যা কথায় চিড়ে ভিজবেনা।
ছুটির কথায় সোহাগের কাশি উঠে যায়। বিচ্চু টাযে বিচ্চু! তাই বলে এমন কথা বলবে সোহাগ ভাবতে পারেনি।তার সাথে জোড় হয় আরেকজন। স্বয়ং ঝিমা!
— আমি কিন্তু আংকেল কে বলে দেবো।
— তোরা দুজন মাফ কর মা। এমনেই বউ আমার পাচ দিন থেকে যোগাযোগ করেনা। তার উপর তোদের প্যারা।
— আমরা দুই মাত্র শালিকা। পর পর দুবার বিয়ে হলো তাও আমাদের ছাড়া। প্রথম বার ছেড়ে দিলাম। কিন্তু এবার? এবার কিছুতেই ছাড়ছিনা।
— কত চাই বল। দিয়ে দিচ্ছি।
— সামনে আমাদের পরিক্ষা।
— ভালোভাবে দিও।
— ডাবল দিয়ে দোয়া করে দাও দুলাভাই। মধু কিন্তু খেয়োছো। চুরির দায়ে এখনো কিন্তু লকাপে তুলছিনা।
অগত্যা সোহাগের মানিব্যাগের সব মানি হারালো। কতগুলো নোট ছিলো ছুটি ঝিমা সোহাগ কে গুনেও দিতে দিলো না। বিনিময়ে কথা দিলো,
— অমৃত চুরির ব্যাপারটা মালিকের কান অব্দি পৌঁছাবে না।

চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here