#বিষ_করেছি_পান(৪৩)
(কপি করা নিষেধ)
ছুটির পরিক্ষা শুরু। মাঝখানে একদিন কি দুই দিন গেপ। বাঁধন প্রতিরাত করে ঝিমা আর ছুটিকে পড়াচ্ছে। কোথায় কোন সমস্যা? ইমপর্টেন্ট কোয়াশ্চন গুলো কতটুকু ক্লিয়ার হলো সবটাই দেখছে। ঝিমা খুব ভালোভাবেই পড়া দিতে পারছে। ঝামেলা হচ্ছে ছুটিকে নিয়ে। এই বান্দি যে দাদু বাড়িতে যাবার পর পড়েইনি সেটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। বাঁধনের দশটা প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্নের উত্তর টেনে টুনে কোনরকম দিতে পারে। একে পড়াতে গিয়ে বাঁধনের মাথা ব্যথা হচ্ছে প্রতি রাতে। তবুও বাঁধন ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়। জিদ করে বসেছে। যেভাবেই হোক এই আলু খাওয়া ছাত্রীকে মেয়োনিজের মুখ দেখিয়েই ছাড়বে। ছুটিও পড়েছে মহা ফ্যাসাদে। ঝিমা ঝিমার মতে মতে পড়ে চলে যায় ঘুমোতে। ছুটি যেতে পারেনা। গভীর রাত অব্দি বাঁধন বসিয়ে বসিয়ে পড়ায়। চা গরমের ইলেকট্রিকেল জগটা এখন ঘরেই আনা হয়েছে। ঘুম নেই বাঁধনের ঘুম নেই ছুটির। ঢুকে ঢুকে চা গেলা ই তাঁদের কাজ। ছুটি বিরক্ত হয়ে যায়। বাঁধনের বিছানায় রাগ করে টান টান হয়ৈ শুয়ে পড়ে। ঝনঝনিয়ে বলে,
— মাস্টার আমাকে দশ মিনিট পর ডেকে দিবেন। আমি ঘুমাবো।
ছুটি দশমিনিটের কথা বলে ঘন্টা ঘুমোবে সেটা বাঁধন ভালোভাবেই জানে। খ্যাক খ্যাক করে উঠে।
— মাস্টার তোর বাপ। ছানোয়ার মাস্টার। আমি তর যম। উঠ। উঠ বলছি।
ছুটি ত্যাড়ামি করে শুয়ে থাকে।পিঠে দু চার ঘা স্কেলের বাড়ি পরলে আবার উঠে বসে। ঠোঁট উল্টে আবার পড়তে থাকে।মুখ গুঁজে ঢুকে পড়ে বইয়ের মধ্যে। বাঁধন পলকহীন ভাবে ছুটির মতি গতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে খেয়াল করে।
পরিক্ষা গুলো হচ্ছে মোটামুটি। ছুটিতো তাই বলে। কিন্তু বাঁধনের মনে খচ খচ করে। কমন পড়া প্রশ্ন গুলো আদৌ ভালোভাবে লিখেছে তো? নাকি দুই চার লাইন লিখেই খাতা জমা দিয়ে দিয়েছে? বাঁধন এখন আফসোস করে। কেনো একে আগে থেকেই পড়ালো না? বাড়ির সাথে বাড়ি। পড়ানোতে কোন অসুবিধা ই ছিলো না।ছুটি যে ত্যাগদার ত্যাগদা ! একে এতো দিন না পড়িয়ে অন্যায় হয়েছে বাঁধনের। বাইরে হাজারটা টিচার রাখুক। যেই ছুটি সেই থাকবে। একে পাস করাতে পারবেনা। নিজের বাবাই ম্যাথ পড়িয়ে পাশ করাতে পারলো না! আর তো বাইরের শিক্ষক। বাঁধন আলতো হেসে জিজ্ঞেস করে,
— ছুটি! আমি যে তোকে এতো কষ্ট করে পড়াচ্ছি। আমাকে কি তোর বাবা স্যালারি দিবে না? ঠকাস না বুঝছিস? খুব খাটুনি যাচ্ছে আমার।
ছুটি হা করে বাঁধনের দিকে তাকিয়ে থাকে। যেই না পড়াচ্ছে তাতেই টাকা চেয়ে বসেছে। এতো ভালো কথা নয়। ছুটি পড়বেই না আর। এক টাকাও দেবে না। বই খাতা নিয়ে সুরসুর করে বেরিয়ে যাচ্ছে। বাঁধন ডেকে উঠে,
— এই! কোথায় যাচ্ছিস? পড়বিনা
— এই ছুটি কখনো টাকা দিয়ে পড়ে না। কি আমার সাবজেক্ট ছিলো! সব তো বাবাই পড়াতো। আমি এক টাকাও দিতাম না। আজ বাবা নেই বলে তুমি পড়াচ্ছো। টাকাও চেয়ে বসেছো। সুযোগে স্বদ্যবহার!
— কিপ্টা কথাকার!
— কিপ্টা বলবেনা। আমার দয়ার শরীর।
— তাহলে কে কিপ্টা? তোর বাবা?
— কখনোই না। আমার বাবা আমার থেকে দয়ালু। চাওয়ার মতো চাইলে কবেই আমাকে দিয়ে দিতো!
— তোকে নিয়ে আমি কি করবো?
— কাজ করাতে। এই তোমার সকল ধরনের কাজ। ঘর সামলানো, কাপড় কাঁচা, আইরণ করা, খাবার দাবার এগিয়ে দেওয়া, মাঝে মাঝে অফিসের প্রোজেক্টে হেল্প করা… সবই ।
— তোকে এসব কেনো করতে হবে?
— কাউকে না কাউকে তো করতেই হবে। আমি ছাড়া কে এতো বড় মনের হবে?
— এগুলো আমার বউয়ের কাজ। তোর না।
মুখটা থমথমে হয়ে যায় ছুটির। বউ ? সুমি?সে কি আর এসব কাজ করতে পারবে? আহারে! বেচারী, কতশত আনন্দ উল্লাসের মাঝ দিয়ে সংসারে পা রাখতে চেয়েছিলো,শেষমেষ তীরে এসে তরী ঢুবলো। সুমির জন্য মন খারাপ করলো ছুটির। বাঁধনের কাছে আবদার করে বসলো।
— শুক্রবারে নিয়ে যাবে আমাকে সুমি আপুর কাছে?
বাঁধন খোশ মেজাজেই ছিলো। সুমির কথা বলতেই তার হাসিতে যেনো তার টেনে গেলো। কিছু বললো না।নিশ্চুপ রইলো। ছুটি নিস্পলক তাকিয়ে রইলো। শুকনো মুখটার কারণ খুঁজতে লাগলো।
— সুমি আপুর অবস্থা কি আরো খারাপ?
— নাহ। বেটার। ঠিক হয়ে উঠবে আস্তে আস্তে।
— পুরোটাই?
বাঁধন শুকনো হাসলো। ছুটিকে চলে যেতে বললো। বারান্দায় গিয়ে বসে উদাস হয়ে তাকিয়ে রইলো।
শুক্রবারে ছুটি বাঁধন কে অনেক রিকোয়েস্ট করলো। বাঁধন কানে তুললো না। ছুটিকে সুন্দর করে এড়িয়ে গেলো। ছুটি গেলো ঝিমার কাছে। ঝিমাকে জিজ্ঞেস করলে ঝিমা কোনো উত্তর দিতে পারলো না। পরিক্ষার জন্য সে সংসারের কোন কথাই কানে তুলে না। উল্টো ধমকে বসলো ছুটিকে।
— ভাইয়ার ব্যাপারে নাক গলানো বাদ দিয়ে একটু লেখা পড়া নিয়ে ভাব। ভালো একটা কলেজে উঠলে দেখবি ভাইয়ার মতো কতোজন তোর পিছু পিছু ঘুরছে! চুজ করতে না পারলে আমাকে বলিস। ট্রাস্ট করতে না পারলে দুলাভাই তো আছেই।ছেলেরা আবার ছেলেদের চেনে বেশী।
ঝিমার ধমক খেয়ে ছুটি গাল ফুলালো। পরমূহুর্তেই মনে পড়লো সুমির অবস্থা বেটার। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে কিসের আশায় বাঁধনের পেছনে পড়ে থাকবে? নিজের ভাবনায় নিজেই একটু অবাক হলো। সেকি আশায় ছিলো? কী ছেলেমানুষী! বাঁধনের জীবনে যদি দ্বিতীয় কোন নারী পদার্পন করে তাহলে তিনি লেখা পড়া শেষ অথবা কোন চাকুরীজিবী। নিশ্চয় তার বয়স হবে আটাশ কি উনত্রিশ। ছুটির মতো ষোড়শী নয়। ছুটি বাস্তবতা বোঝে। লাফ দিয়ে কখনো গাছে উঠা যায়না যদিনা গাছ নিজেই নুয়ে পড়ে। সুমি কতটুকু সুস্থ হয়েছে? কথা বলতে পারে? দেখলে চিনবে ছুটিকে?
শুক্রবার আসতে না আসতেই ছুটি চেপে ধরলো বাঁধন কে। সুমিকে দেখতে যাবে। বাঁধন বললো,
পরিক্ষা শেষ হোক তারপর নিয়ে যাবো। ছুটি মানলো না। জেদ ধরলো। বাঁধন কে মানাতে না পেরে ছুটলো বীণার ঘরের দিকে। বাঁধন পিছু ডাকলো,
— কোথায় যাস?
— কাকীর ঘরে বিচার দিতে।
— এই না না..দারা ছুটি দারা। মাকে কিছু বলিস না।
ছুটি শুনলো না। বাঁধন ও ছুটলো ছুটির পিছু পিছু। আটকাতে হবে ছুটিকে। বীণার ঘরের সামনে যাবার আগেই পেছন থেকে চেপে ধরলো ছুটিকে। পেটের উপরে হাতের বাঁধন শক্ত করে তুলে ধরলো ফ্লোর থেকে। ছুটি হাত পা ছুড়লো।
— আআআ নামাও।নামাও না আমাকে।
— চল এখান থেকে।
— নামাও না আগে।
— হ্যা তোকে নামাই আর তুই আবার ছুটা দে।
ভেতর থেকে বীণার গলার আওয়াজ এলো।
— কি হয়েছে রে?
— কিছুনা মা। এমনি।
জবাব দিয়েই ছুটিকে সেভাবেই তুলে ফের নিয়ে আসে নিজের রুমে। ছেড়ে দিতেই ছুটি পেটে হাত বুলাতে থাকে। বাঁধন জিজ্ঞেস করে,
— লাগলো?
— এভাবে বুঝি কেউ ধরে?
— সরি রে। মাকে বলতে গিয়েছিলিস কেনো?
— না বললে কি নিয়ে যাবে?
— মাকে কিছু বলিস না। কাউকেই কিছু বলিস না।
— কেনো?
— সবাই জানে সুমির সাথে আমার কোন যোগাযোগ ই হচ্ছে না। ডিভোর্সের জন্য কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়ে গেছে। এখন যদি জানতে পারে আমি এখনো সুমির কাছে যাই তাহলে আবার অশান্তি শুরু হবে।
বাঁধনের কথা শুনে ছুটি অবাক হয়। এরা সত্যি সত্যি ডিভোর্স টা দিইয়ে ছাড়বে? একটা অসুস্থ মানুষ সে এসে তো ঘরে বসে খাচ্ছে না। কিসের এতো তাড়া এদের? বাঁধন ভাই কে কি আবার বিয়ে করাবে? সেজন্য ই এতো তাড়া? বুকটা ধক করে উঠে ছুটির। আবার! আবার! সেই পুরোনো ক্ষত নতুন হয়ে পীড়া দেবার যন্ত্রনা! বাঁধন ছুটির খোলা মুখটা দেখে এগিয়ে আসে। ছুটির পাশে বসে বলে,
— তোকে যে বললাম এটা আবার ঝিমার সাথে বলতে যাস না। সুমির এক্সিডেন্ট টা হবার পর থেকে কেউ চায়না আমি সুমির জন্য অপেক্ষা করি। সুমির বাবা মাও ও এখন চায়না আমি আর সুমির সাথে সম্পর্ক রাখি। সুমির নামটা এ বাড়িতে তুলাই যায়না। সবাই বিরোধীতা করে। সবার অলক্ষ্যে আমি বাধ্য হয়েই এখন সুমির সাথে যোগাযোগ রাখি। গোপনে তাকে দেখতে যাই। তার চিকিৎসার জন্য সমস্ত টাকা দিই। আমার যতটুকু দায়িত্ব আমি পালন করার চেষ্টা করি। সুমি এখনো আমার স্ত্রী। পরিবারের জন্য সমাজের জন্য আমি আমার দায়িত্ব থেকে তো আর পিছপা হতে পারিনা। এরজন্য তো একদিন না একদিন আমাকে হিসাব ঠিকই দিতে হবে। তখন কোন এক্সকিউজ সৃষ্টিকর্তা মেনে নিবে না। কারণ আমার কাছে বিকল্প হিসেবে সুযোগ ঠিকই আছে। সবাই যখন আমার বিপরীতে তখন তুই একমাত্র আমাকে সাপোর্ট করেছিস। তোর ছোট্ট মাথা কি ভেবে সাপোর্ট দিয়েছিলো আমি জানিনা। কিন্তু আমি চাইতাম এতো বড় একটা ট্রেস যাবার পর আবার যেনো সুমি ছাড়াছাড়ির কথা শুনে অসুস্থ না হয়ে পড়ে। মামলা দায়ের করার পরেও আমি সময় নিচ্ছিলাম সুমিকে জানানোর। কিন্তু তার আগেই সুমির পরিবার ই সুমিকে জানিয়ে দিয়েছে। সুমি এখন টুকটাক কথা বলতে পারে। প্রথমে ও চাইতো আমার সাথে কথা বলতে। কিন্তু যখন কথা বলতে পারলো তখন আমি হাজার চাইলেও আমার সাথে কথা বলেনা। আমি যতক্ষন ওর সামনে থাকি ততক্ষন চুপচাপ হয়ে থাকে। মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখে। চোখের জলে নাকের জলে একাকার করে দেয়। আমি বুঝতে পারি তার ভিতরে একটা চাপা অভিমান কাজ করে। কিন্তু আমিযে নিরুপায়! ডিভোর্স টা এবার হবেই।
— তুমি কি আবার বিয়ে করবে বাঁধন ভাই?
প্রশ্ন শুনা মাত্রই তাকায় বাঁধন।ছুটির উৎসুক চাহনী। ছলছল করছে চোখ দুটো। শক্ত মনের ছুটি সুমি বাঁধনের পরিস্থিতির কথা শুনে কাঁদতে পারে না। এ কান্না অন্য কোনো কারণ বহন করে। যা বাঁধনের আন্দাজে কিছুটা হলেও জানা। কিন্তু বাঁধন চায়না এই আন্দাজটুকু সঠিক হোক। তার জন্য ছুটির সাথে মিশতে হবে। সময় দিতে হবে। দূরে সরিয়ে রাখলে মনে যদি কিছু থেকে থাকে তা মনেই থাকবে প্রকাশ পাবেনা। প্রকাশ না পেলে বুঝানো যাবেনা। না বোঝাতে পারলে ভূল পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যাবেনা। হিতের বিপরীত ও হতে পারে।
ছুটিকে নিয়ে বিকালে বেরোলো বাঁধন। মাকে বললো রিতীর সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাচ্ছে। ঝিমা ছুটির সাথে যাবার আগ্ৰহ দেখালোনা। এ প্লাস কোনভাবেই মিস করা যাবেনা। ছুটিরা বেরোতেই টেবিলে বই নিয়ে বসে পড়লো। ঘড়িতে চারটা বিশ। বাইকে যেতে সময় লেগেছে মাত্র চৌত্রিশ মিনিট। সুমির কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাঁধন। ছুটিকে ইশারায় ভেতরে যেতে বললো।ছুটি বাঁধন কে ছাড়া যাচ্ছেনা দেখে বাঁধন বললো,
— যা।
— তুমি যাবেনা?
— যাচ্ছি।
ছুটি আগে ঢুকলো বাঁধন তার পিছু পিছু। সুমি শুয়ে আছে মরার মতো। চোখ দুটো বন্ধ। ছুটি গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। ফিসফিসিয়ে বললো,
— ঘুমিয়ে আছে মনে হয়।
তখনি সুমি চোখ মেললো। প্রথমেই দেখতে পেলো ছুটিকে। তার পাশেই বাঁধনকে। বাঁধনকে সুমি পুরোপুরি ইগনোর করলো। ছুটিকে দেখেই চিনতে পেরেছে। আলতো সুরে ডাকলো।
— ছুটি!
— হ্যা। সুমি আপু। ভালো আছো?
সুমি উত্তর দিলোনা। নড়েচড়ে উঠলো। ছুটি খেয়াল করলো সুমি অনেকটাই সেরে উঠেছে। নড়তে পারছে কথাও বলতে পারছে। চেহারাও অনেক টা সুস্থ লাগছে। মুখ বলেই উঠলো,
— সুমি আপু! তুমি তো প্রায় সুস্থ ই হয়ে গেছো। বাসায় যাচ্ছো না কেনো? এতো দিন থেকে এক হসপিটালে পড়ে আছো। তোমার কষ্ট হচ্ছে না? মন টিকে এখানে? ট্রিটমেন্ট তো বাড়িতে গিয়েও নেয়া যায়। আমার মনে হয় একা একা না থেকে পরিবারের সাথে থাকলেই তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে।
সুমি আগ্ৰহ দেখালোনা। ইশারা করলো।
— ছুটি বসো। কেমন আছো? আমাকে দেখতে ভালো লাগলো।
— আমি ভালো। তুমি তো ভালোই সুস্থ। বাড়ির লোক আসে দেখতে তোমায় নিয়মিত?
–হ্যা।আমি ভালোই আছি এখন।
— বাসায় থেকে ট্রিটমেন্ট করছোনা কেনো? মাইন্ড ডেবেলপ হবে তোমার বাসায় থাকলে। তোমাকে হসপিটালে দেখে সত্যিই ভালো লাগছেনা। বাঁধন ভাই ব্যবস্থা করে দিবে।
— উনাকে বলে দিবে আমার জন্য যেনো আর টাকা খরচ না করে। আমি ভালো হয়ে গেছি। এখন আর মাসে মাসে বিল পে করতে হবেনা।
কথাটা সুমি আড়চোখে বাঁধনের দিকে তাকায়েই বললো। বাঁধন উত্তর করলো না। ছুটি ব্যাপারটা বুঝলো। সেও সে সম্পর্কে কিছু বললোনা। ছুটিকে ভেতরে রেখেই বাঁধন বেরিয়ে এলো। ছুটি সুমির পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো,
— বাঁধন ভাইয়ের উপর অভিমান করেছো? অভিমান করোনা। রাগ ও করোনা। বাঁধন ভাই ভালোমানুষ। ভালো মানুষদের উপর মনক্ষুণ্ণ হতে নেই। উনি তোমার ভালো চান। তুমি তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
— আমি ঠিক হলেও যা। না হলেও তা। তোমার বাঁধন ভাইয়ের সাথে আমার কখনোই আর একসাথে থাকা হবেনা। আঠারো দিন পরে ডিভোর্সের কেসটা ডিশমিশ হবে কোর্টে। এবার হবেই হবে। তোমার বাঁধন ভাইকে বলে দিবে আমার উপর মানবতার দৃষ্টান্ত যেনো আর না স্থাপন করে। আমি এডাল্ট। নিজের টা নিজে ভালোই বুঝি। সামলানোর ক্ষমতা রাখি।
— কোই রাখো? ঝাঁঝ তো ঠিকই দেখাচ্ছো।
— না দেখতে চাইলে চলে যাও। এখানে থেকো না।
— সুমি আপু! এখনো ডিভোর্স হয়নি। তোমরা তো পছন্দ করে বিয়েটা করেছিলে। এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলে?
— তো কি করবো?জেগে জেগে সপ্ন দেখবো? এই পা ছাড়া হয়ে?
কাঁপা হাতে কোমড়ের উপর অব্দি দেওয়া কাথা সরিয়ে দেয় সুমি। ছুটির একবার চোখ পড়তেই সাথে সাথে সরিয়ে নেয়। দ্বিতীয় বার ভুল করেও তাকায় না। সুমির মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তির তির করে ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে উঠছে। কতটুকু কষ্ট করেই না কান্না লুকিয়ে রাখতে চাইছে। ছুটি মুখ ঘুরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
একটু আগে মাগরিবের আজান দিয়েছে। মুসুল্লিরা মসজিদে যাচ্ছে। বাঁধন ছুটিকে একটা চায়ের দোকানে এনে বসিয়ে দেয়। দোকানের ভেতরে গিয়ে মিনিটের মধ্যেই আবার ফিরে আসে। হাতে দুটো চিপস ধরিয়ে দিয়ে বলে,
— এখানে বস। কোথাও যাবিনা। আমি নামাজটা পড়ে আসছি।
বাঁধন চলে গেলে ছুটি আনমনে চিপস মুখে পুড়তে থাকে। এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে জনজীবন আয়ত্ত্ব করতে থাকে। মানুষ ছুটছে। এদিক থেকে ওদিকে। কেউ বসে নেই।
— মা! কয়ডা টাহা দেন।
সাইডে তাকাতেই দেখে একটা লোক হাত পেতে আছে ছুটির সামনে। লোকটার দুটো পা নেই। উরুর নিচে চাকা লাগানো হয়েছে। সেই চাকায় এদিক ওদিক ঘুরে ভিক্ষা বৃত্তি করে। সুমি আপুর ও পা নেই। তাকে যদি কখনো তার পরিবার বোঝা মনে করে ছেড়ে দেয় সেও কি এভাবেই জীবনধারণ করবে? ভাবতেই গা শিউরে উঠে ছুটির। এইযে হাতের লোমগুলো বড় বড় হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে।
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা