বিষ_করেছি_পান(৪৪)

0
440

#বিষ_করেছি_পান(৪৪)

(কপি করা নিষেধ)
তখন রাত আটটা প্রায় । ত্রিশ -পয়ঁত্রিশে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে বাঁধন। ঘাড়ের উপর ছুটির গাঢ় নিঃশ্বাস এ বুঝতে অসুবিধা হয়না ঘুমিয়ে পড়েছে। বাইকে বসেও যে কেউ এভাবে ঘুমোতে পারে বাঁধনের জানা ছিলো না। পেটের উপর দুহাত চেপে জড়িয়ে ধরে পিঠের উপর লেপ্টে আছে। পড়ে যাবে ভেবে বাঁধন কিছুক্ষন পর পর পেটের উপর ছুটির হাতের বাঁধন শক্ত করে দেয়। বাড়ি পৌঁছে হলো আরেক সমস্যা। ছুটিকে যত ই ডাকা হচ্ছে ততই নড়েচড়ে পেছন থেকে আরো ভালো করে আঁকড়ে ধরছে বাঁধনকে। এতোক্ষণ রাইডের তালে থাকলেও এবার বড্ড উশখুশ লাগছে বাঁধনের । ছুটি এখন পূর্ণ কিশোরী। যৌবনে তার প্রথম পদার্পন। আগের মতো তাকে কোনভাবেই ট্রিট করা যায়না। বাঁধন এদিকে নামতেও পারছে না।ডানে বায়ে ঘুরে ছুটিকে ছাড়িয়ে নেমে গাড়ির চাবি পকেটে ঢুকিয়ে ছুটিকে পাঁজাকোলা করে নেয়। সাপোর্টের জন্য ঘুমের মধ্যেই ছুটি বাঁধনের গলা জড়িয়ে ধরে । ড্রয়িংরুমে পা দিতেই ঝিমা মৃদু আওয়াজে চিৎকার দেয়। সাথে সাথেই বাঁধনের থেকে খায় এক রাম ধমক।
— চুপ। চিৎকার করিস কেনো? দেখছিস না ঘুমিয়েছে? সর সামনে থেকে।
ঝিমা ছুটির দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায়। বেচারা ঘুমে নেতিয়ে আছে। ঝিমাকে ক্রস করে বাঁধন সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। ঝিমা অবাক চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বাঁধনের পিছু ছুটে। ছুটিকে শুইয়ে দিয়ে ঝিমাকে বলে,
— চাদরটা টেনে দে।
বাঁধন চলে যেতেই ছুটি কাত হয়ে চাদরের নিচে মুখ ডাকে। ঝিমা শঙ্কায় বলে,
— জেগে আছিস ছুটি?
ছুটি উত্তর দেয়না। নড়া চড়াও করেনা। চোখও খুলে না। যেনো চোখ খুললেই অনুভূতি গুলো নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে।
ঝিমা আবার ডাকে।
— ছুটি?
ছুটি এবারো সাড়া দেয়না। মিনিট খানেক পর ঝিমা অনুভব করে হাতে চামড়ায় মিটমিটি জ্বালা। ছুটি চিমটি কেটেছে। ঝিমা এবার জোরে ডাকে।
— ছুটির বাচ্চা..!!
থেমে যায় পর মুহুর্তেই। ছুটি চাদরের নিচে ঝিমাকে টেনে নিয়েছে। শক্ত করে জড়িয়ে গা এলিয়ে পড়ে আছে। ঝিমা অনুভব করে ছুটির হার্ট ক্রমাগত লাফাচ্ছে।এতো এতোটা সময় বাঁধনের এতোটা কাছে , ঠিক এতোটাই কাছে, একদম মিশে জড়িয়ে ছিলো। বাঁধনের কোলে নিজেকে আবিষ্কার করা। স্পর্শ গুলো নিরবে গায়ে মাখা! তার পরেও কিভাবে নিজেকে ঘুমন্ত রাখবে ছুটি? কিভাবে সামলে রাখবে মনটাকে? ছুটির শিহরণে ঝিমা নিজেও শিহরিত হয়ে উঠে। ছুটির অবস্থা মোটেই ঝিমার কাছে ভালো ঠেকছে না। ঝিমা ভাবে ছুটির নিশ্চয় শরীর খারাপ লাগছে। নয়তো হটাৎ করে অবেলায় ঘুম তার উপর এতো অস্থিরতা! ঝিমা কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। ছুটিকে আরো চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে
— ছুটি তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? তুই এরকম করছিস কেনো? ছুটি?
সাড়া না পেয়ে আরো অস্থির হয়ে বলে,
— ছুটি ছাড়। আমার ভয় লাগছে। পাশের রুমে ভাইয়া আছে। তোর কি হয়েছে? আমি ভাইয়াকে ডেকে আনছি।
ছুটি চট করে চোখ খুলে। হাত ও আগলা করে দেয়। মুখে যন্ত্রনার ছাপ ফুটে উঠে। আধো কান্না সুরে আবদার করে বসে।
— রেখে আয়না তোর ভাইয়ার কাছে।আমাকে রেখে আয়। আমার সব অস্থিরতার স্বস্তি তোর ভাই ! ডাকনা বোন, নিয়ে যেতে বল তার কাছে।
ঝিমা বিছানা ছেড়ে উঠে যায়। বারান্দায় গিয়ে বসে। ভাইয়ের বারান্দায় তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে বসে। ছুটি ঘুমানোর পর বিছানায় আসে। ছুটির মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কি করবে সে? কিই বা তার করার আছে?

দেখতে দেখতে কেটে যায় আরো চারটা দিন। ছুটি হয়না ঝিমার প্রশ্নের মুখোমুখি। ঝিমা ঐ সূত্র তুলতেই ছুটি এটা ওটা বলে এডিয়ে যায়। থিওরি এক্সাম তাই আর বাঁধনের কাছে পড়তে হয়না। বাঁধন নিজেই ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কতটুকু পড়েছে? কোন সমস্যা আছে নাকি? ছুটিও খোশ মেজাজে উত্তর দেয়। পরবর্তী পরিক্ষা ভালোই দেয়। জেগে থাকলে পড়া আর বাঁধনের পাশে ঘোর ঘোর করা। আর সারারাত তার সপ্নে ঢুবে থাকা। কি করবে ছুটি? এই মানুষটার আশেপাশে থাকলেই যে আকাশে ডানা মেলে উড়ার সুখ ভর পায়। বাঁধন যখন ডাকে যেভাবেই থাক দৌড়ে চলে যায় ছুটি। বাঁধনের হুকুম গুলো ঝিমা ত্যাড়ামি করলেই ছুটি সব করে দেয়। ঝিমা বোন ঝিমাতো ত্যাড়ামি করবেই। তাই বলে ছুটিও কি করবে? এটা নিয়ে চোখ রাঙায় ঝিমা। ছুটি মুচকি মুচকি হাসে। কি সুখ! ইসস ! ঝিমা যদি বুঝতো! বাঁধনের একদিনের ছুটি। ঝিমা ছুটির পরিক্ষাও তিনদিন পর। ঝিমার মনে হলো একটু মাথাটা ফ্রেস করার দরকার। ভাইয়ের কাছে তাই আবদার রাখলো বিকালে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। বোর হয়ে গেছে। একটু ঘুরে এলে পড়ায় আবার মনযোগ রাখতে পারবে। বাঁধন ও সায় দেয়। ছুটি শুনেই মিটিমিটি হাসছে। বাঁধনের সাথে ঘুরতে যাওয়া মানে যা ইচ্ছা তাই খাওয়া। কার্পন্য নেই কিছুতে। দুপুর হতেই রেড়ি হয়ে বাইকে ছুটে হাতিরঝিলের দিকে। শহরের ইট পাথরের উঁচু দালানের উপর দালান দেখে অভ্যস্ত লোকজনের কাছে হাতিঝিল নিশ্চিত একটি অমাইক জায়গা। পাশ ঘিরে নদী জল দেখতে দেখতেই হাঁটতে থাকে তিনজনে। নির্মল বাতাস ছুঁয়ে দেয় সারা শরীর। ছুটির বেশ ভালোই লাগছে। ঝিমা নিজের মতো হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনেই ছুটি। ঝিমার পিছু না নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। রেলিং ছুতে চেয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস টানে। পেছনেই ছিলো বাঁধন। ছুটির দাড়ানো দেখে সেও দাঁড়িয়ে পড়ে। ছুটির উদাসীনতা অনুভব করে চুপ থাকে। ঝিমার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— দাঁড়িয়ে পড়লি যে?
— বাঁধন ভাই কখনো এভাবে দাঁড়িয়ে শ্বাস টেনে নিয়েছো?
— আগে নিতাম। এখন নেইনা। মাঝে মাঝে গন্ধ নাকে লাগে।
— একটু নাও আমার সাথে।
বাঁধন ছুটির পাশাপাশি দাঁড়ায়। সেও শ্বাস টেনে নিয়ে ছাড়ে দুবার। ছুটি টানে না। বাঁধনের শ্বাস নেওয়া দেখে। এইযে নাকটা উঁচু হয়ে ফুলে উঠে আবার চুপসে যায়। কি সুন্দর! গ্যাস বেলুনের মতো লাগছে।
— তুমি এখন কলেজে পড়লে ভালো হতো।
হটাৎ ছুটির এমন কথায় মাথা ঘুরায় বাঁধন। জিজ্ঞেস করে কেনো? ছুটি মুচকি হাসি দেয়। কিছু বলেনা। বাঁধন হাসিটা পর্যবেক্ষন করে।ছুটির মুচকি হাসি সুন্দর। হো হো করা হাসির চেয়েও সুন্দর।
— তোর বয়স অনেক আগেই পেরিয়ে গেছি। এখন আর সেসবে মুড নেই।
— আমি কিন্তু একবারো বলিনি আমার বয়সে ফিরতে।
— না ফিরেইতো তোর এই ছেলেমানুষী তে সায় দিলাম। আর কি চাস?
— অনেক কিছু চাই বাঁধন ভাই। তোমার দেবার সামর্থ্য থাকলেও সাহস নাই।
বলতে বলতেই ঝিমার দিকে ছুটে ছুটি। বাঁধন হালকা গলা ঝাড়া দেয়। পরমুহূর্তেই দুবার কেশে উঠে। সামান্য কথাতেই ইফেক্ট পড়ে গেছে । বাঁধন গা ঝাড়া দিয়ে ঠিক হয়ে হাঁটা দেয়। ঝিমা ছুটিকে আইসক্রিম খাইয়ে বাসায় নিয়ে আসে । দরজাতে ঢুকার সময় ঝিমাকে ডেকে পকেট থেকে এক মুঠো সেন্টার ফ্রেস বের করে হাতে দেয়। ঝিমার হাতের পাশে আরেকটা হাত আবিষ্কার করে। ছুটিও পেছন থেকে হাত পেতেছে। বাঁধন আবার পকেটে হাত গলায়। চারটি মাত্র সেন্টার ফ্রেশ পেয়ে ছুটির হাতে দেয়। ইশারায় বোঝাতে দেড়ি আর নেই ছুটির ঝিমা হাতে খাবলা বসাতে দেড়ি নেই। মুঠো পুড়ে ছুটে রুমের দিকে। ঝিমা ছুটির বাচ্চা বলে চিৎকার করে ছুটে পিছে পিছে। দুজনে খুনসুটিতে রুমে ঢুকতেই থেকে যায়। বিছানায় রিতী বসে আছে। ছুটি আপু বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। রিতী জিজ্ঞেস করে,
— কোথায় গিয়েছিলি তোরা? এতো দেড়ি হলো যে?
— তুমি কখন আসছো? কাকিমনি তো বললোনা কিছু।
— সারপ্রাইজ। ঝিমা রিতীর নরমাল ড্রেস দেখে বলে,
— আপু তুমি আজ থাকবে?
রিতী হ্যা বলতেই দুজনে আনন্দে হৈ হৈ করে উঠে। রিতী তাড়া দেয় দুজনকে ফ্রেস হতে। ফ্রেস হয়ে পড়তে বসে। শরীর ভালো লাগছে না দুজনের ই। তাই ঘন্টা দুয়েক পড়েই খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে আসে। ঝিমা শুয়ে পড়ে। রিতী বারান্দায় দেখে ছুটি গিয়ে রিতীকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে। রিতী চেয়ে আছে তাদের বাসাটার দিকে। রিতীর পাশের রুমটাতে আলো জ্বলছে। ভাড়াটে থাকে। রিতীর দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে ছুটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
— আমাদের বাসায় যাস?
— না। কষ্ট লাগে।
— আমি আজ গিয়েছিলাম। একটা ছোট্ট বাচ্চা আছে। তমালের মতো। দরজা খুলে দিয়ে যখন দৌড় দিলো আমি যেনো তমালকেই দেখতে পেলাম। কত স্মৃতি যে জড়িয়ে আছে!
— ওসব কথা বাদ দাও আপু। মন খারাপ হয়ে যায়।
— এ বাড়িতে ভালো আছিস তুই?
— অনেক।
— বাঁধন ভাইয়ের থেকে একটু দূরে থাকিস। শুনছি বেচারার নাকি ডিভোর্স হয়ে যাবে। তারপর নতুন বউ আসবে।
— আসুক। তাই বলে দূ্রে থাকতে হবে?
— হ্যা হবে। কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি তুই আরো বেশি উইক হয়ে পড়েছিস।
— তো?
ছুটির এমন উত্তরে রিতী চোখ তুলে তাকায়। নিনির্মেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে চোখ দুটো জলে উঠে। হাত ধরে ছুটিকে সামনে এনে দাঁড় কড়ায়। বিনীত ভাবে বলে,
— গা ঝাড়া উত্তর দেস কেনো? আমি চাইনা আমার মতো তোর জীবনটা হোক। তুই কি আমাকে দেখতে পাচ্ছিস না? ভালোবাসা, সুখ হাতে থাকলেও আমি কোন কিছুই ছুতে পারছিনা। এদিকে তোর দুলাভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখিনা। লোকটা আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। কোন মুখে দাড়াবো আমি তার সামনে? আমাদের সম্পর্কটা অনেক দূর চলে গেছে ছুটি। আমি পারবোনা তার মুখের উপর তাকে রিজেক্ট করতে। আমার পক্ষে সম্ভব না। আর কত! বলতে পারিস?
— আমি তোমার মতো না আপু। সাময়িক সুখটাকে সাময়িক ভেবেই আঁকড়ে ধরি। পামানেন্টলি চেয়ে কষ্টকে আপন করিনা। আমি যতদিন আছি ততোদিন আমি যতটুকু সুখ পাওনার তার এক ইঞ্চি ও ছাড়বোনা।
— তারমানে তুই আমার কথা রাখবিনা?
— ভিলেন গিরি দেখাচ্ছো কেনো আপু?
— তোকে সাবধান করলাম বলে ভিলেন হয়ে গেলাম?
— আমি পারবোনা। বাঁধন ভাইয়ের থেকে দূরে থাকতে পারবোনা।
— জেদ করেনা ছুটি।
— আমি জেদ করছিনা। আমি সুখে আছি। আর কিছু চাইনা। আমি এখানেই থাকবো। এখানেই ভর্তি হবো। বাঁধন ভাইয়ের থেকে কখনোই দূরে যাবোনা।
— ছুটি বোঝার চেষ্টা কর। ছুটি!
ছুটি কথা শোনে না। রিতীর মনে ভয় ঢুকে যায়। সকালে যাবার আগে ছানোয়ারকে বলে পরিক্ষা শেষ হতে হতেই যেনো ছুটিকে নিয়ে যায়। ছানোয়ার খুশ মেজাজে বলে,
— তা তো নিয়ে আসবোই। তুই এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো? তোর বীনা কাকি কিছু বলেছে? অন্য কোন সমস্যা?
— কিছুই বলেনি বাবা। অন্যের বাড়িতে এতো দিন ফেলে রাখা এটা মোটেই ঠিক হচ্ছে না। চক্ষু লজ্জাও তো আছে। মতি ভালো সম্পর্ক হোক। আপন তো না।
ছানোয়ার এবার ব্যাপারটা বুঝলেন। তাই করবেন বলে ফোন রাখলেন।

পরিক্ষা শেষে বাসায় ফিরছিলো ঝিমা আর ছুটি। চিরচেনা সেই মোড়ের মাথায় আসতেই দেখা হয় সোহাগের সাথে। তেজী পায়ে ছুটির দিকে ছুটে আসছে। ঝিমা দেখেও হাঁটতে লাগলে ছুটির পা চলে না। সোহাগ যে তাঁকে কিছু বলবে বেশ বুঝতে পেরেছে। সোহাগ ছুটির সামনে এলো। কিন্তু দাঁড়ালো না। ছুটিকে নিয়েই জায়গা ত্যাগ করলো। হাত ধরে টেনে নিয়ে কোথায় এলো ছুটি উদ্দিশ পেলো না। আশেপাশে তাকালো। বড় বড় দালান কোঠার মধ্যে ফাঁকা গলি। জায়গাটা পুরোপুরি অচেনা। এদিকে ছুটির পা ছিলে গেছে দুয়েক জায়গায়। ছুটি আহ করে শব্দ ও করেনা। বিস্ফোরিত চোখে শুধু সোহাগকে দেখে যায়। ঝিমার ডাকেও সাড়া দিতে পারেনি। মেয়েটা কত চিৎকার করে ডাকছিলো পেছন থেকে। এদিকে সোহাগ ছুটিকে ছেড়েই মাথায় হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো টেনে ধরে। বুকে থুতনি লাগিয়েই ধমকে উঠে,
— ঐ ছুটি ঐ তোর বোন কি ? তোর বোন আমার সাথে কেন এতোবড় খেলাটা খেললো। উত্তর দে।
ফের ছুটির মুখের সামনে মুখ এনে বলে,
— তুই সব জানস তাইনা? গত শুক্রবার তোর বোন হলে ছিলো না। কোথাও ছিলো না। কি চলতেছে আমারে বল। আমি কিন্তু এইবার আর মেনে নিমু না। তোর বোন কি গেছিলো বল। কেন আমারে এভোয়েড করে? কার কাছে গেছিলো বল। কথা কস না কে? কথা ক ছুটি! আমি কিন্তু সব ধ্বংস করে দিমু। কথা ক শালী।

ছুটি কি কথা বলবে? উদ্ভ্রান্ত সোহাগের চিৎকারে থরথর করে কাপতেছে। এতো সাহস থাকা সত্ত্বেও সব সাহস ফুরুৎ। লোকজন কি নেই এখানে? একটা মানুষ এতো জোরে চিল্লাচ্ছে কেউ তো বেরিয়ে আসে না। মরা পাড়া নাকি এটা? এদিকে পায়ের যন্ত্রনা। ধীরে ধীরে বসে পড়ে ছুটি। পায়ে হাত বুলিয়ে মিনমিনিয়ে বলে,
— ক্ষেপা ষাঁড় হয়ে গেছেন আপনি সোহাগ ভাই।
— ঐ ক্ষেপার দেখছিস কি। কোন পুলা কি থাকে কি করে গোষ্টীর ডিটেইল দিবি তুই নয়তো আমি তোরে কি করমু জানিনা।
— কি বলতেছেন এসব?
— তুই সব জানস। তুই জানস না এরকম কোন কথাই থাকতে পারেনা। তোর বোন আমার সাথে চিট করছে। আমার বউ হয়ে আমারে ইগনোর করে। এতো চোখে চোখে রাখি শালীরে তাউ রাত করে নিরুদ্দেশ হয়। কার কাছে যায় ঐ কুত্তার বাচ্চার বংশ নির্বংশ করে তারপর আমি ছাড়মু। বল কে ছেলেটা?
— হলেও আপনার পাহারা?
অসহায় মুখে মিনমিন করে বলে ছুটি। সোহাগ একটা পাগল করা হাসি টানে ঠোঁটের কোনে। একহাতে চুল গুলো ঠিক করে বলে,
— তোর বোন আমার সাথে মস্ত বড় একটা খেলা খেললো। আমাকে নিঃশেষ করে অন্য নাগরের দিকে মন দিলো।
ছুটির মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো। খ্যাক খ্যাক গলায় বললো,
— সন্দেহ করেন কেনো? হলেও আপনার নেটওয়ার্ক আপুর দম ফেলার জো আছে নাকি? আপু আমার কাছে ছিলো। আমাকে দেখতে আসছিলো।
— আমাকে বোকা পাস নাই। তোর বোনরে ফোন লাগা। যে পর্যন্ত তোর বোন এখানে না আসছে তোর কোথাও যাওয়া হচ্ছেনা। এরকম চামড়া অসংখ্য জায়গায় ছিলবে।
— সোহাগ ভাই! একদম গুন্ডামি করবানা ‌। এই তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা?
— তোর বোনরে ছাড়া তোরে ভালোবাসি কি কাজ আমার? আগে তোর বোন তারপর তুই আমার বোন। তোর বোন নাই তুইও নাই।
— আমি বাসায় যাবো।
সোহাগ ফোনটা ছুটির হাতে দেয়।
— ফোন দে তোর বোনরে।
— পারবোনা।
— আরেকবার বলবো ফোন দে।
— পারবোনা।
— তাহলে বাসার নাম ভুলে যা।

সন্ধ্যে হতে চললো ছুটি বাড়ি ফিরেনি। ঝিমা অনেক ক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বাসায় চলে আসছে। সোহাগের সাথে ছুটির বেশ সখ্যতা আছে। তাই ভেবেছে চলে আসবে। কিন্তু এখন চিন্তাগুলো সব দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে। বাসায় আজ মা বাবা নেই। নানু বাড়ি যেতে হয়েছে। চমচম মামীর বেবী সাওয়ারে।ঝিমার পরিক্ষা থাকায় যেতে পারেনি।উল্টো পাল্টা চিন্তা মাথায় বার বার ঘুরঘুর করছে। সোহাগ ভালো মানুষ নয়। সেটাই সব থেকে বড় চিন্তার। রিতীকে জানাবে নাকি ফোন করে সেটাও ভাবছে। এরি মধ্যে বাঁধন বাসায় ফিরে। ঝিমা দু দন্ড দেড়ি না করে বাঁধন কে জাপটে ধরে হর হর করে সব ঘটনা বলে কেঁদে ফেলে। সোহাগের নামটা মাথায় কেস করতেই বাঁধনের শরীরের লোম ফুলে উঠে। ঝিমাকে সরিয়ে দিয়ে যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই ছুটে যায় ছুটিকে খোঁজতে।

চলবে,
®লাবিবা তানহা এলিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here