স্বর্নাভ_সুখানুভূতি ~ আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা পর্ব-২২

0
281

#স্বর্নাভ_সুখানুভূতি

~ আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

পর্ব-২২

প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে রুমে পা রাখতেই এক রূপসী এগিয়ে এসে হৃদয়গ্রাহী একটা সালাম দিয়ে অভিবাদন জানায়। আজ কেউ অভিবাদন জানাল না। জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকাল। ভেতরে চোখ বুলিয়ে দেখল, মুশরাফা খাটে বসা। দরজার আওয়াজ শুনে এদিকে একবার তাকিয়েছে, তড়িৎ চোখ ফিরিয়ে আবার। অনান্য দিন মুশরাফা সুমিষ্ট হেসে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয়। চঞ্চলতার মতো চাঞ্চল্য দিয়ে রুমটাকে মাতিয়ে রাখে। কত দুষ্টুমি, কত ফাজলামো করে জাওয়াদের রাগ বিনাস করে। আজ সেসব কিছুই হলো না। মুশরাফা পানি এগিয়ে দিল না। বরং ওকে দেখে পাশ কাটিয়ে বারান্দায় চলে গেল। জাওয়ার টাইয়ের নাট ঢিলে করতে করতে দেখল তা। হলো কী এই মেয়ের?

অতঃপর জাওয়াদ নিজেই বলল, ‘মুশরাফা, এক গ্লাস পানি দাও তো। ‘

মুশরাফা পানি নিয়ে এলো। তবে জাওয়াদের হাতে দিল না, সেন্টার টেবিলের উপর রাখল। রেখেই চলে গেল বারান্দায়। একবার তাকাল ও না জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদের মনে সন্দেহের দানা বিধল এবার। সন্দেহটা পাকাপোক্ত হলো ফ্রেশ হয়ে টাওয়াল মেলতে বারান্দায় যাওয়ার পর। মুশরাফা গ্রীল ঘেঁষে আকাশ পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে বিষন্নতার স্পষ্ট। জাওয়াদ টাওয়াল মেলে দিতে দিতে বলল,
‘ সকালে অফিসের জন্য আমাকে জাগাওনি কেন? তোমার জন্য কতগুলো কথা শুনতে হয়েছে আমার। ‘

আবার মনোক্ষুণ্ণ হলো মুশরাফার। লোকটার এখনো বোধদয় হয়নি যে, সে নামাজ ও মিস করেছে। এক ওয়াক্ত নামাজ মিস হলে মুশরাফার কষ্টে বুক ফেটে যায়, কান্না আসে। এমন ও হয়েছে, নামাজ পড়তে না পারায় কেঁদে ভাসিয়েছে। অথচ সে সহজে কাঁদেনা।
লোকটার কি একটু ও কষ্ট হচ্ছে না? এতদিন নামাজ পড়ে এ টুকু টান ও জন্মায়নি? হতাশা, বিষন্নতা এসে ভর করল মুশরাফার মাঝে। বিয়ের পর মামার বাড়ি যাওয়া হয়নি। মামা মামী প্রতিদিন ফোন করে জোর করছেন যেতে। শুধু এই লোকটাকে নামাজে অভ্যস্ত করানোর জন্য সে যাচ্ছে না। মামীকে বলেছে আর কিছুদিন পর যাবে। সবকি তবে বৃথা!
আকাশের দিকে তাকিয়ে মনের দুঃখ বলা সুন্নত। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুশরাফা আকাশ পানে চেয়ে নিজের অভিমান ঝাড়ছে। সে জাওয়াদের প্রশ্নের জবাব দিল না। জাওয়াদ ফিরতি বলল,

‘এই মেয়ে আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি! উত্তর দাও! আমাকে জাগাওনি কেন?’

মুশরাফা উত্তর দিল না। পাশ কাটিয়ে রুমে যেতে নিল। জাওয়াদ হাত ধরে কিছুটা রেগে বলল,
‘ সমস্যা কি তোমার? তুমি আমাকে ইগ্নোর করছো কেন? উত্তর দাও।’

মুশরাফা চোখে রাগ নিয়ে তাকাল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ অফিসে দেরি হলে বসের বকা খাওয়ার ভয় আছে, অথচ এক ওয়াক্ত নামাজ মিস করে আগুনে যে জ্বলতে হবে তার ভয় নেই। এত গুনাহের কাজ করেও বিন্দুমাত্র অনুতাপ নেই। আবার জিজ্ঞেস করছে ইগ্নোর করছি কেন! বদলোক। ‘

জাওয়াদ শুনল না সে কথা। তবে মুশরাফার দৃষ্টি ওকে বুঝিয়ে দিল, রাগটা কার উপর। মুশরাফা হাত ছাড়িয়ে চলে গেল। রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

মাঝরাতে আকস্মিক ঘুম ভেঙে গেল জাওয়াদের। কারণ পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে মুশরাফার কান্নার শব্দ আবিষ্কার করল। তাহাজ্জুদে সেজদায় লুটে স্বামীর হেদায়েত চেয়ে কাঁদছে মুশরাফা। জাওয়াদ সেসব টের পেল না, শুধু কান্নাটা শুনল। আবার ও রাগ হলো ওর। ভীষণ রাগ। মুশরাফাকে কটা কথা শুনানোর ইচ্ছাটা প্রবল হলো। কিন্তু ইচ্ছেটাকে সায় দিল না। রাগটা মুশরাফার সামনে প্রকাশ না করে, নিজ মনেই বিড়বিড় করল। রাতের ভারি ঘুমটা আবার এসে ঝেকে ধরল। ঘুমের কোলে তলিয়ে পড়ল।

মুশরাফা নামাজ পড়ে শেষ রাতের দিকে জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙল কারো ডাকে।
‘মুশরাফা? এই? উঠো?’

মুশরাফা ঘুমজড়ানো চোখ মেলল খানিক। আধোচোখে ধবধবে সাদা পাঞ্চাবি পরিধেয় জাওয়াদকে চোখে পড়ল। ওকে তাকাতে দেখে জাওয়াদ শান্ত স্বরে বলল,
‘আমি বাবার সাথে মসজিদে যাচ্ছি। দরজা লাগিয়ে দাও।’

মুশরাফা দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখল। ফজরের সময়। আজ লোকটাকে জাগানো লাগেনি? নিজে উঠে গেছে! আবার তাকেও জাগিয়ে দিয়েছে! অবিশ্বাস্য চোখে চাইল মুশরাফা। ওর মনে হলো, এটা স্বপ্ন। ঘুম ভাঙার সাথে সাথে ভেঙে যাবে। স্বপ্ন, বাস্তবতার বেড়াজালে পড়ে গেল ও। সত্য যাচাইয়ে নিজের হাতেই চিমটি কাটল। জাওয়াদের হাসি পেল তা দেখে। তবে হাসল না। ধীর স্বরে বলল,
‘ উঠো, দরজা দিয়ে এসে নামাজ পড়ে নাও। ‘

জাওয়াদ নিজ থেকেই নামাজে যাচ্ছে, আবার ওকে ও নামাজের জন্য জাগাচ্ছে! আদৌ সম্ভব! গত এক দিনে জমে থাকা অভিমান ঝরানোর জন্য আশ্চর্যজনক এই দৃশ্যটাই যথেষ্ট! মুশরাফার সিদ্ধান্তে পাটল ধরল। কথা না বলে পারল না। বিস্মিত স্বরে বলল,
‘আপনি সত্যিই নিজ থেকে নামাজের জন্য যাচ্ছেন? আর আমাকে ও নামাজের জন্য জাগাচ্ছেন? ‘

জাওয়াদ বিরক্ত হওয়ার ভান করল, ‘তুমি মেয়েটা একটু বেশি কথা বলো। উঠো, আমার নামাজের দেরি হচ্ছে। এমনিতেই তোমার জন্য কাল নামাজ মিস হয়েছে। আজ আবার মিস হতে যাচ্ছে। ‘

জাওয়াদের স্বরে অনুতাপের আভা খুঁজে পেল। সেই ছাপ, যা মুশরাফা গতকাল হন্ন হয়ে খুঁজেছে। নামাজের জন্য আগ্রহ, আন্তরিকতা ও খুঁজে পেল। কাঙ্খিত কিছু পেয়ে একরাশ খুশি হাতছানি দিল মুশরাফাকে। ঘুম জড়ানো মুখে হেসে ফেলল। চওড়া, সুখময় একটা হাসি। সেই হাসিটা সোনায় রাঙানো, সুখে রাঙানো। যেই হাসি থেকে চারদিকে স্বর্ণাভ সুখানুভূতি ছাড়াচ্ছে। প্রথমদিন বাসার সাথে নামাজ পড়তে যাবার পর বাবার চেহারায় ভাসা খুশিটা জাওয়াদ আজ আবার দেখল, মুশরাফার মুখে। দিগুন প্রজ্জ্বলিতভাবে। এ বাসায় আসার পর ওকে এত খুশি হতে দেখেনি। জাওয়াদ অন্তর্ভেদী চোখে পরখ করল হাসিটা, কত কী খুঁজে পেল।

মুশরাফা তড়িৎ উঠে দাঁড়াল। উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘ জাযাক-আল্লাহু খায়রান। (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।) চলুন।’

জাওয়াদ এবার সামনের দিকে পা বাড়াল। মুশরাফা পিছুপিছু গেল। জয়নাল আবেদীন বসার ঘরে অপেক্ষা করছেন। ছেলেকে দেখে বললেন,
”নামাজের জন্য বেরিয়ে, ‘আসি’ বলে কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলি! ”

ভুল সময়ে ভুল কথা বলায় জাওয়াদ বিরক্ত হলো বাবার উপর। এই সময় বাবা কথাটা না বললে কী হতো? সে চোরা চোখে মুশরাফার দিকে তাকাল। মুশরাফা ঠোঁট চেপে হাসছে। বেচারা ধরা পড়ে গেছে। জাওয়াদ প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললেন,
‘ নামাজের দেরি হচ্ছে। বাবা চলুন।’

জয়নাল আবেদীন আগে হাটা ধরলেন। মুশরাফা আর জাওয়াদ পিছনে যাচ্ছে। মুশরাফা ধীর স্বরে বলল,
‘ অযু করে বেরিয়ে আবার ফিরলেন কেন? চলে যেতেন। কিসের টানে ফিরে আমাকে জাগালেন?’

জাওয়াদ বিরক্তচোখে তাকাল। তারপর বলল,
‘টান ফান কিছু না। ঘরের দরজা বন্ধ করতে বলতে গিয়েছি।’

মুশরাফা চমৎকার একটা হাসি দিল। বলল,
‘ সত্যিই!’

জাওয়াদ কিছু বলল না। দরজা অবধি চলে এসেছে। জয়নাল সাহেব আগেই সিড়ি বেয়ে নেমেছেন। জাওয়াদ দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়াল। মুশরাফা দরজার এ পাশে দাঁড়ানো। জাওয়াদ সামনের দিয়ে পা বাড়িয়ে পিছনে তাকাল। বলল,
‘ তোমাকে না নিষেধ করেছি, আমার নামে কারো কাছে বিচার দিতে?’

মুশরাফা ভাবুক সুরে বলল,
‘আমি কারো কাছে বিচার দিই নি। ‘
‘আবার মিথ্যা বলো!’ রেগে গেল জাওয়াদ। মুশরাফা বলল,
‘ আমার কথা মিথ্যা হলে, আপনি সত্যটা বলুন! আমি কার কাছে বিচার দিয়েছি?’

‘ কিছু হলেই সেজদায় কেঁদেকেটে আল্লাহর কাছে বিচার দাও। আর কখনো আল্লাহর কাছে আমার বিচার দিবে না, পারলে দোয়া করবে। মনে থাকে যেন। ‘ কড়া স্বরে শাসিয়ে চলে গেল জাওয়াদ।
যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল,
‘শালা, ধার্মিক মানুষকে বিয়ে করার এই এক সাইড ইফেক্ট। আল্লাহর কাছে বিচার না দিয়ে দেয়, এই ভয়ে কিছু বলার আগে ও ভাবা লাগে। ‘

এই ক্ষণে এসে সেদিন বিচার না দেয়ার ব্যাপারটা বোধগম্য হলো মুশরাফার। লোকটা আল্লাহকে ভয় করতে শুরু করেছে, ভেবেই খুশি লাগল। যে আল্লাহকে ভয় করে সে খারাপ কিছু করতে পারবে না। জাওয়াদের আকস্মিক রেগে যাওয়ার কথা মনে পড়তেই ফিক করে হেসে ফেলল মুশরাফা।

বাবা ছেলে নামাজ পড়ে হাঁটাহাঁটি করে ফিরল। বসার ঘরে বসল বাবা ছেলে। মুশরাফা চা নিয়ে গেল। নিজের জন্য বরাদ্দ চায়ের কাপ হাতে রুমে ফিরতে গেলে জয়নাল আবেদীন বাধ সাধলেন। হেসে বললেন,
‘বসো, একসাথে চা খাই। ‘

মুশরাফা সিঙ্গেল সোফায় বিনয়ী ভাব ধরে বসল। তিনজনে চায়ে চুমুক দিল। জয়নাল আবেদীন চায়ের কাপ টেবিলে রেখে মুশরাফার উদ্দেশ্যে বললেন,
‘ বিয়ের প্রায় দিন পনেরো পেরিয়ে গেল। সেই যে বিয়ের দিন এলে তোমার আর বাবার বাড়ি যাওয়া হয়নি। ব্যাপারটা আমার মাথা থেকে সরে গিয়েছিল, বললে না কেন?’

মুশরাফা পাশের সোফায় বসা জাওয়াদের দিকে তাকাল এক পলক। সত্যটা বলতে গিয়ে আমতা-আমতা করতে লাগল। জয়নাল আবেদীন নিজেই বললেন,
‘ বাসায় ঝামেলার জন্যই বলতে সাহস করো নি, তাই না? আমাকে বলতে পারতে। যাক গে, তোমার মামা ফোন দিয়েছেন। মেয়ে নাইওর নিতে চেয়েছেন। সেই সাথে আমাদের ও দাওয়াত দিয়েছেন। ‘

জয়নাল আবেদীন থামলেন। মুশরাফা উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘আপনারা যাবেন?’

জয়নাল আবেদীন পরবর্তী কথা বলার আগে কিছুক্ষণ সময় নিলেন। তারপর বললেন,

‘তুমি এখন এই পরিবারের সদস্য। পরিবারের সদস্য হিসেবে তোমার যতটা সম্মান পাওয়া উচিত তুমি তা এক অংশ ও পাচ্ছো না। এর জন্য দায়ী আমার স্ত্রী। তুমি না বললেও আমি জানি আমাদের অনুপস্থিতিতে মায়মুনা তোমাকে কতভাবে অপদস্ত করেন। আমি ওকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, করছি। বুঝার চেষ্টা করছে না সে। এটা আমার ব্যর্থতা। মায়মুনা তোমার উপর ক্ষেপে আছেন, এমতাবস্থায় আমি ওকে তোমাদের বাসায় যেতে বলব না। গেলে আবার কী না কী করে তখন তোমার পরিবারের কাছে, তুমি আমি আমরা সবাই অপমানিত হবো। তারচেয়ে বরং সে না যাক। বাকি আমরা সবাই যাবে, তুমি কি কোন এক ভাবে তোমার শ্বাশুড়ির না যাওয়ার ব্যাপারটা ঢেকে দিতে পারবে? যাতে ব্যাপারটা খারাপভাবে উপস্থাপন না হয়। তুমি কি পারবে?’

লম্বা কথা বলে থামলেন জয়নাল আবেদীন। চায়ের কাপ তুলে চুমুক দিলেন, তারপর জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন পুত্রবধুর দিকে। মুশরাফা মনোযোগ দিয়ে শুনল শ্বশুরের কথা, তারপর বলল,
‘ আমার দুটো পরিবার। তারমধ্য এটা একটা। আমি আমার এক পরিবারের কাছে অন্য পরিবারের সম্মান নষ্ট করতে চাইনা। আপনি চিন্তা করবেন না বাবা, আমি সামলে নিব।’

মুশরাফার স্বর স্বাভাবিক। ওর কথাটা ভারি সুন্দর লাগল জয়নাল আবেদীনের। তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ যাক, নিশ্চিন্ত হলাম। নাজমুল ভাই আজ ডিনারের দাওয়াত দিয়েছেন। অফিস থেকে ফিরে রওনা হবো সবাই। আমরা ডিনার সেরেই ফিরব, তুমি কদিন বেড়িয়ে এসো। জাওয়াদ ওখান থেকেই অফিস করবে না হয়।’

মুশরাফা জাওয়াদের দিকে তাকাল। জাওয়াদ মনোযোগ দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। এদিকে খেয়াল নেই তার। লোকটা কি আদৌ যাবে? নিশ্চিত হতে পারছেনা মুশরাফা। তাও হেসে বলল,
‘আচ্ছা বাবা, আমি তৈরি হয়ে থাকব।’

মুশরাফা জাওয়াদের সাথে কথা বলার অপেক্ষায় রইল। নাস্তা আর টিফিন তৈরির তাড়া থাকায় রান্নাঘরে ছুটতে হলো ওকে। রান্নার কাজে রুমে যাওয়ার ফুরসত মিলল না। সবার নাস্তার পর টিফিন রেডি করে গেল রুমে। জাওয়াদ তখন তৈরি হচ্ছে। মুশরাফা টিফিন ব্যাগে রাখতে রাখতে বলল,
‘ আপনি সত্যিই আমার সাথে নাইওর করবেন!’

জাওয়াদ ঘড়ি পরছিল। মুশরাফার কথা শুনে বলল,
‘ওসব নাইওর টাইওর করতে পারব না। আজ যাব শুধু। কাল সকালে ফিরে আসব। বাবার আদেশে যেতে হচ্ছে। নয়তো…’

মুশরাফা এমন কিছু ধারণা করেছিল। সত্যতা পেয়ে চাপা শ্বাস ফেলল। বলল,
‘আমি চলে গেলে, আর যাই করেন দয়া করে নামাজটা ঠিকমতো পড়বেন। রাতে ফোন সাইলেন্ট করে ঘুমাবেন না, আমি ফজরের সময় কল দিব। ‘

‘দেখা যাবে।’ দায়সারা জবাব দিল জাওয়াদ।

‘এবার অন্তত নিজের জন্য নামাজটা পড়ুন!’ অনুরোধ করল মুশরাফা।

জাওয়াদ ভ্রু বাঁকাল,
‘ আমার কবরে আমি যাব, তোমার কবরে তুমি যাবে। এমন না যে, এক কবরে যাব দুজন। আমার জন্য তুমি ও শাস্তি পাবে। আমার জন্য তোমাকে ধরবে না। তাই আমাকে নিজেরটা নিজেকে বুঝতে দাও।’

মুশরাফা টিফিন ব্যাগে রেখে ড্রেসিংটেবিলের দিকে এগুলো। জাওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে আলতো গলায় বলল,
‘ কবর আলাদা হলেও আমি আপনার সাথে একই জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। আমি মোনাজাত হাত তুলে আল্লাহর কাছে আপনাকে জীবনসঙ্গীর পর আমার জান্নাতসঙ্গী হিসেবে ও চাই।
আমার স্বপ্নপথে যাওয়ার স্বপ্নটা আপনি ও দেখুন না দয়া করে! নামাজ পড়ুন, আল্লাহর বিধান মানার চেষ্টা করুন। বিশ্বাস করুন, বিনিময়ে আপনি জান্নাতে দুনিয়া থেকে কোটি গুন বেশি পাবেন। ‘

মুশরাফার কথাতেই আটকাল জাওয়াদ। মুগ্ধতা না কি স্তব্ধতা কে জানে, ওকে বাকরুদ্ধ করে দিল। প্রতিত্তোর করতে পারল না। ‘আমি আপনাকে আমার জান্নাতসঙ্গী হিসেবে চাই’ কথাটা চমৎকার লাগল জাওয়াদের কাছে। কী সুন্দর কথা! জাওয়াদ ওর জান্নাতসঙ্গী হওয়া মানে জাওয়াদ ও জান্নাতি হওয়া। ঘুরিয়ে মেয়েটা ওর জান্নাত কামনা করছে। মর্মার্থটাও কী হৃদয়গ্রাহী!
কেউ যে ওকে এভাবে ও চাইতে পারে ইতঃপূর্বে জানতো না জাওয়াদ। ও এক পলক চাইল মুশরাফার দিকে। ওর দৃষ্টিতে কোমলতা ছিল আজ। দৃষ্টি ফেরাল। একবারে শান্ত স্বরে বলল,
‘ ইন শা আল্লাহ।’

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here