যখন_দুজনে_একা ৩১ পর্ব

0
681

#যখন_দুজনে_একা

৩১ পর্ব

শাড়ি পরা রুবাকে দেখে মাহি একটু ধাক্কার মত খেলো!
রুবা সামনে এসে দাঁড়ালো ! মাহি ওকে দেখছে! এক পলক তাকিয়ে মাহি ল্যাপটপ টা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল, কোথাও যাচ্ছো রুবা ?
রুবা মাথা নেড়ে না করল!
সোফায় বসে মোজা জোড়া খুলছে আর রুবাকে দেখছে মাহি!
রুবা টাওয়াল বের করে আনতে গেল!
মাহি বলল, মা কোথায় গেছে ?
খালামনির সঙ্গে রিয়া আপু র গয়না র অর্ডার দিতে !
রুবা মাহির হাতে টাওয়াল টা দিয়ে কাছে এসে বসলো !
মাহি আসলে কি কথা বলবে খুঁজে পাচ্ছে না ও রুমে ঢুকে রুবাকে এভাবে দেখবে কখনো ভাবেনি মুগ্ধ হয়ে সে বারবার রুবাকে দেখছে!
রুবা টিভি দেখছে মাহি ওর পাশে কিছুক্ষণ বসে রইল!
তারপর উঠে গিয়ে বিছানায় চোখে র উপর হাত ভাঁজ করে রেখে শুয়ে পড়লো!
তোমার কি মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে? রুবা জানতে চাইল।
না !
তাহলে এভাবে চুপচাপ শুয়ে র‌ইলে যে ? ড্রেস চেঞ্জ করো!
মাহি মনে মনে বলছে , রুবা তুমি এভাবে আমার সামনে এসো না প্লিজ , আমি একটা পুরুষ মানুষ আমার ভেতরের আমিটা ,আমাকে দূর্বল করে দেয় , আমার ইচ্ছা করে তোমার চোখের গভীরে স্থির তাকিয়ে থাকি, তোমার হাত দুটো আমার হাতে ভরে বসে থাকি, তোমার পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি শরীর টাকে আমার পাজরের সঙ্গে বেঁধে রাখি, তোমার গলার কাছে যে তিলটা আছে সেখানে আমার নাক ঘসে দেই তোমার ঠোঁটের গভীরে ডুবে যাই রুবা !
মাহি বিছানা থেকে উঠে রুমের বাহিরে গিয়ে দাঁড়ালো বুক ভরে নিঃশ্বাস নিল ! তারপর সিগারেট জ্বালালো !
রুবা উঠে এসে বলল , তুমি কি কিছু নিয়ে খুব টেনশন করছো ?
না তো, মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে হাসলো!
এই প্রথম আমি একা একা শাড়ি পড়েছি ,রুবা বলল!
হুঁ অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে! সিগারেট ফেলে মাহি রুবার হাত ধরলো !
আমি তো রুমে ঢুকে তাজ্জব, কি রে আমার ঘরে চাঁদ চলে আসলো নাকি !
অনেক কষ্ট করে শাড়ি টা পড়েছি ! বলে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে রুবা , মাহি হাত বাড়িয়ে টেনে নিল থাকো এখানে ।
তোমার ঘরে পড়ার ড্রেস বের করে দেই, চা দিতে বলি ?
এখন লাগবে না থাক।
রুবা চলো বাহির থেকে ঘুরে আসি !
এখন ?
হুঁ । যাও শাড়ি খুলে ফেলো অন্য কিছু পড়ো !
শাড়ি পরে যাব না ?
না, শাড়ি তুমি আমার জন্য পড়েছিলে ?
হুঁ আর কার জন্য পড়ব?
আমি দেখেছি সবাই কে দেখানোর কি দরকার ? মনে মনে মাহি বলছে, যা আমার সবাই কেন দেখবে ?
ঠিক আছে আমি চেন্জ করে আসি , আমার ও মনে হচ্ছে কখন না জানি খুলে যায়!
ও আচ্ছা এখন তো বাহিরে যাওয়া যাবে না খালি বাসা মা বাসায় নেই! বাবা বাসায় একা !
মাহি বলল , ঠিক আছে তাহলে আর কি করা !
এক কাজ করি চলো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর চলো ছাদে গিয়ে বসি !
রুবা বলল, ঠিক আছে !
মাহি ওয়াস রুমে ঢুকে গেল !
রুবা সেই ফাঁকে শাড়ি বদলে থ্রি পিস পড়লো! ফরিদা বুয়াকে ডেকে বলল, আমাদের দুজনের জন্য চা দাও ছাদে নিয়ে এসো!

দুজনে ছাদে গিয়ে দাঁড়ালো ! ছাদে মারাত্মক বাতাস !
এত বাতাস কেন , রুবা বলল?
এখন সিজন টাই এমন বাতাস, ঝড় , বৃষ্টি আবার কখনো খুব গরম!
মাহি ছাদের ঘরের সব গ্লাস খুলে দিল । পর্দা বেঁধে ফেলল , ঘরটা গরম হয়ে ছিলো! সব আলো নিভিয়ে দিল।
গ্লাসে র ঘর তাই এত গরম, রুবা বলল!
ফরিদা বুয়া চা নিয়ে আসছে !
চা হাতে নিয়ে মাহি বলল, সরি আজ তোমাকে সারাদিনে কল দিতে পারিনি রুবা। কি করলে তুমি সারাদিন ?
চায়ে চুমুক দিয়ে মাহি বলল, কি জঘন্য চা নিয়ে আসছে বুয়া !
রুবা অস্থির হয়ে বলল, ভালো হয়নি আমি বানিয়ে আনছি!
মাহি রুবার হাত ধরে আটকাল রুবা, রুবা আমার চা খেতে ইচ্ছা করছে না ! তোমাকে যেতে হবে না!
সারাদিনে আজ এমনিতেই অনেক চা খেয়েছি!

রুবাও চা খেলো না !
ছাদে পানির ট্যাংক এ উঠার একটা লোহার সিঁড়ি আছে মাহি উঠে বসলো সেই সিঁড়িতে রুবা ও ওর পরের সিঁড়ি টাতে বসলো।
পড়বে কিন্তু রুবা সাবধানে!
না পড়ব না
বললে না সারাদিন কি করলে ?
আমার ফ্রেন্ড শিমু এসেছিল ওর সঙ্গে অনেক গল্প করলাম , হাসাহাসি করলাম ।
তোমার ফ্রেন্ড এসেছিল! গ্রেট তাহলে তো দারুন দিন কেটেছে। কি কি গল্প করলে সেটা বলো শুনি !
অনেক গল্প সব কি বলা যায়?
আমাকে নিয়ে কি বললে সেটা বলো শুনি ?
তোমাকে নিয়ে কি বলব !
আমি যে তোমাকে বকাঝকা করি কখনো কখনো, সেই গসিপ করো নাই ফ্রেন্ড এর সঙ্গে!
না তুমি কোথায় বকাঝকা করো ?
মেয়েরা তো হাজব্যান্ড এর গসিপ করে ফ্রেন্ড দের সঙ্গে , আমার সিনিয়র কয়টা আপু আছে তারা গসিপ করে সময় দেয় না, কথা শুনে না, ঘরের কাজে হেল্প করে না তো তুমি কি বললে বলো?
আমি এসব কিছুই বলি নাই ! তুমি যেমন সেটাই বলছি!
সেটাই তো জানতে চাইছি কি বলছো ?
বলা যাবে না কি বলেছি !
প্লিজ প্লিজ প্লিজ রুবা ।
না না না
আজ আমি শুনবো ই রুবা!
আল্লাহ কি বিপদে পড়লাম , রুবা বলল!
বিরাট বিপদ রুবা!
ঠিক আছে বলছি, বলেছি তুমি খুব ভালো , আমার টেককেয়ার করো, মা বাবার টেককেয়ার করো , অনেক পড়াশোনা করো অনেক ভালো রাখছো আমাকে , তুমি একজন ভালো ছেলে , ভালো ডাক্তার , ভালো মানুষ, ভালো হাজব্যান্ড এই তো !
ভালো মানুষ আর ভালো হাজব্যান্ড তো হতে পারিনি রুবা ।
কে বলল তুমি অনেক ভালো মানুষ অনেক অনেস্ট।
মাহি মনে মনে বলল, আমি ভালো মানুষ ন‌ই রুবা অনেস্টিও তোমার সঙ্গে দেখাতে পারলাম কোথায় !
মাহি রুবার ঘাড়ের কাছে ঝুঁকে বলল, আমি অনেস্ট না রুবা আমি অনেক খারাপ ।
যাহ্ কি বলো না তুমি! আমি তো জানি তোমাকে !
তুমি আমাকে সব টা জানো না রুবা আমি মানুষ কে কষ্ট দেই অনেক কষ্ট । মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।
মাহি রুবাকে পেছন থেকে ধরে বসে রইল চুপচাপ।
রুবা যদি কখনো শুনো আমি খুব খারাপ মানুষ তুমি কি ক্ষমা করতে পারবা ?
তুমি কি সব বলো, তুমি কখনও কাউকে কষ্ট দিতেই পারো না ! আমি আমার ফ্রেন্ড কে বলছি তুমি কতটা বড় মনের মানুষ !
আমি সেরকম কিছু না রুবা, আমি অনেক স্বার্থপর একজন মানুষ !
এই কথা তুমি বললে , অবাক হয়ে রুবা বলল!
আমার জন্য তুমি তোমার জীবনটাই সেক্রিফাইস করে দিলে !
তুমি জানো না কিছু রুবা!
তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো দূরে যাবে না তো রুবা ?
আমার কি যাওয়ার জায়গা আছে ? তোমাকে ছেড়ে, মা কে ছেড়ে আমার তো পৃথিবীতে কেউ নেই কোথায় যাব আমি ? আমি তো পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা একটা মানুষ !
তোমার জন্য আমি আছি রুবা, মাহি মনে মনে বলল !
দুজনে চুপচাপ বসে রইল অনেক্ষণ!

সাফিয়া বেগম তার বোন আর বোনের মেয়েদের নিয়ে বাসায় আসলেন। নিঝুম আজকাল এই বাসায় আসার বাহানা খুঁজে! তাই তার খালা আসার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মা আর বোনকে বলল, কালকে শুক্রবার চলো যাই ।

বাসায় এসে সাফিয়া বেগম ফরিদা কে জিজ্ঞাসা করল রুবা কোথায় ? মাহি আসছে ?
ভাবি আর ভাইজান ছাদে ! ডাকি আম্মা ?
না থাক এখন ডাকার দরকার নেই !
ডিনার রেডি করো ফরিদা!

নিঝুম ভাবছে ছাদে গিয়ে মাহিকে ভড়কে দিলে কেমন হয় ? ওকে দেখলে হাজার ভোল্টের শক খাবে , ভেবেই মনে মনে হাসছে নিঝুম!
নিঝুম উঠে গেল সে সত্যি সত্যি ছাদে যাচ্ছে!

চলো রুবা উঠি !
ঠিক আছে চলো!
দুজনে সিঁড়ি থেকে নিচে নেমে এলো!
ছাদের ঘরে এসে মাহি বলল , আজ রাতে আমরা এখানে থাকব রুবা ! তোমার কোন সমস্যা নেই তো ?
আমার কেন সমস্যা হবে , তুমি তো সঙ্গে আছো !
আজ সারারাত আমরা গল্প করব !
রুবা হেসে বললে ঠিক আছে ।
যদি বৃষ্টি হয় দেখবে কি দারুন লাগে এই ঘরে ! চমৎকার একটা রোমান্টিক ব্যাপার লাগে তখন , মাহি বলল!
আমি এখন নিচে যাই , মা হয়তো চলে আসছে ডিনার দিতে বলি ! তুমি আসবে এখন নাকি পরে আসবে ?
আমি থাকি কিছুক্ষণ ছাদে, তুমি ডিনার রেডি হলে ডেকো !
রুবা যাওয়ার জন্য পা বাড়াল, মাহি পেছন থেকে হাত ধরে বলল, তুমিও থাকো বুয়াকে বলো ডিনার রেডি করতে!
ওমা মা আসছে কিনা দেখতে হবে না ! আর বাবাকে ও ডাকতে হবে !
বুঝলাম কিন্তু আমি ইদানিং এত ব্যস্ত থাকি বাসায় যতক্ষণ থাকি তুমি থাকো আমার পাশে পাশে ! বলে ই মাহি তাকিয়ে দেখে নিঝুম দরজায় দাঁড়িয়ে আছে !
ও খুব ই অবাক হলো , নিঝুম কে দেখে !
নিঝুম তুই এখানে ?
আমি ও তোদের দেখে অবাক হলাম , তোরা যে এখানে আমি জানতাম ই না ! খালাম্মা নিয়ে এলো এসে ভাবলাম একটু ছাদে যাই । এখানে এসে দেখি তোরা ছাদে র ঘরে !
আসো ভেতরে নিঝুম আপু!
রুবা সরি ভাই তোমার বর তোমার সঙ্গে রোমান্স করছিল আমি কাবাবে হাড্ডি হয়ে গেলাম! আমি নিচে যাই !
নিঝুম আপু সেরকম কিছু না , বলে রুবা লজ্জা পেলো!
তোমরা ছাদে গল্প করো আমি এমনিতেই নিচে যাচ্ছিলাম , মা আসছে সবার ডিনার দেই!
মাহি নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল, রুবা আমিও নিচে আসছি!
ওমা তুমি না আরো কিছুক্ষণ থাকবে বললে ?
মোবাইল এ চার্জ শেষ চার্জারে লাগাতে হবে , বলেই মাহি নিচে র‌ওনা হলো !
নিঝুম আপু তুমি একা থাকবে ছাদে ? আমি নিচে যাব!
তুমি যাও রুবা আমি আসছি !

সাফিয়া বেগম রুবাকে দেখে কাছে ডাকলেন ! মাহি তুমিও এদিকে আসো !
রুবা মাহি এগিয়ে গেল মায়ের দিকে!
সাফিয়া বেগম একটা গয়নার বক্স বের করে বলল রুবা এটা তোমার জন্য দেখো !
রুবা বক্স খুলে দেখে দারুণ একটা ভারী গলা এবং কানের সেট , সঙ্গে মোটা মোটা দুটো পাথর বসানো বালা!
মা এগুলো কেন ! আমার তো অনেক গোল্ড আছে এবং আপনার দেয়া !
রুবা এগুলো মাহির দাদী আমাকে দিয়েছিল আমি ওদের দুই ভাইয়ের জন্য রেখেছি তোমাকে আগে এক সেট দিয়েছি দাদীর গয়না, এখন এটা ও তো তোমার !
মা আমি গয়না কোথায় পরি ?
পরার দরকার নেই যা তোমার তা তোমার‌ই ! আর মাহির ও তো ইচ্ছে হতে পারে ব‌উকে গয়না পড়া দেখতে তাই না ?
মাহি বলল , নিয়ে নাও রুবা তুমি ছাড়া কে আছে মায়ের গয়না পরার!
সেটাই রুবা তুমি দারুন শ্বাশুড়ি পেয়েছো গয়না দিয়ে যে মুড়িয়ে দিচ্ছে তোমাকে , আর দেখো আমার শ্বাশুড়ি কি দিবে এখনো বলছে না কিছু , রিয়া বলল!
রুবা তার শ্বাশুড়ি কে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো , সাফিয়া বেগম ওর কপালে আদর করে দিল। নাহার খালামনিকে ও রুবা সালাম করলো !
রিয়া বলল, আমাকে করতে আসবে না কিন্তু রুবা !
মাহি বলল, তুমিও কিন্তু সম্পর্কে রুবার মুরুব্বি, আপু তোমাকে সালাম করা উচিত বলে হাসছে মাহি !
রিয়া বলল, আরে না মাহি! ফাজিল কোথাকার ! আচ্ছা রুবার তো তোকেও সালাম করা উচিত আফটার অল তুই হাজব্যান্ড, বড় মুরুব্বি !
আরে না , তুমি সাজ্জাদ ভাই কে করো যাও !
না না আজ রুবাকে দিয়ে তোকে সালাম করিয়ে ছাড়ব মাহি দাঁড়া! এই রুবা তুমি ওকে সালাম করো তো যাও।
মাহি বলল, রুবা প্লিজ সাবধান ! মাহি একরকম দৌড়ে পালাল নিজের রুমের দিকে!
সবাই হাসছে !

নিঝুম ছাদ থেকে এসে দেখে সবাই হাসছে খুব ! কি ব্যাপার এত হাসাহাসি কিসের?
শোন রুবাকে দিয়ে মাহির পায়ে হাত দিয়ে সালাম করাচ্ছিলাম , মাহি ভয়ে পালিয়েছে বলে রিয়া হাসছে!
দেখেছিস খালাম্মা রুবাকে কত ভারী একটা গয়না দিল !
ও আচ্ছা এটা রুবার জন্য আমি দোকানে দেখে ভাবছি খালাম্মা আপনার !
আমি এত ভারী সেট পড়ব পাগল! এটা মাহির দাদীর গয়না পলিস করিয়ে আনলাম !
আপনার যা কিছু সব তো রুবা ই , রিয়া বলল!
হ্যাঁ, তিনি রুবার হাত ধরে বললেন মেয়ে তো একটাই আমার তাই না !
রুবা হাসলো !
মাহির খালা বলল, ছোটবেলায় মাহি যখন‌ই কোন নতুন ব‌উ দেখতো বড়পা কে বলতো মা আমার বউ কোথায় , আমার বউ কবে এভাবে সাজবে বলে তিনি হাসছেন !
সাফিয়া বেগম ও হাসছে !
ও যা দুষ্টো ছিল ওফফ, সাফিয়া বেগম বলল!

মাহি রুমের সামনে বারান্দায় বসে সিগারেট খাচ্ছে !
নিঝুম তুই মিথ্যে কথা বললি ,ভাবলি কিভাবে যে আমি বুঝব না ! তুই জানতি না আমরা ওখানে !
মা ঘরে ঢুকে ই রুবার খোঁজ করছে তো অবশ্যই, আর বুয়া বলছে আমরা ছাদে আর তুই ইচ্ছা করে জেনেশুনে গিয়ে হাজির হলি ছাদে ।
আর কতো ছেলেমানুষি করবি রে ! আমি তো আর পারছি না !
আমার সত্যি সত্যি কি করা উচিত এখন ভেবেই কূল পাই না ! আল্লাহ প্লিজ তুমি সাহায্য করো , দয়া করো!
মাহি এসব কথা ভাবছে আর রাগে ফুঁসছে!

কিছুক্ষণ পর রুবা রুমের দিকে এসে দেখে মাহি বারান্দায় !
তুমি এখানে, খেতে আসো !
হু যাও আসছি !

খাওয়ার টেবিলে গিয়ে দেখে খালামনি , রিয়া আপু নিঝুম নেই! মাহি আবাক হলো , সবাই চলে গেছে ?
হু ,তোমার খালুর শরীর খারাপ লাগছে প্রেসার বাড়ছে শুনেই ওরা চলে গেল !
মাহি মনে মনে বলল, যা হয় ভালোর জন্যই হয় !

ছাদের ঘরে এসে রুবা বলল, আচ্ছা আজ বৃষ্টি হবে তো !
মাহি বলল, বৃষ্টি দিয়ে তুমি কি করবে ? সাবধান ভেজার নাম নিও না রুবা সেদিন কি হলো !
না ভেজার জন্য না তুমি বললে না রাতে বৃষ্টি হলে এখান থেকে দেখতে খুব ভালো লাগে!
ও আচ্ছা , হুঁ ! অনেক বাতাস তো হচ্ছে, যে কোন সময় বৃষ্টি নেমে যেতে পারে !

মাহি বলল, তোমার কাছে কোন বাম বা মেন্থল তেল আছে ?
কেন , মাথা ব্যথা করছে তোমার?
ব্যথা না এত ভার লাগছে আমার পরীক্ষা র সময় এমন লাগলে মা লাগিয়ে দিত ! আজ দুপুরের পর একটা সেমিনার ছিল প্রফেসর দের ভারী ভারী কথা শুনে মাথা ধরে গেছিল ।
এখন আবার হঠাৎ মাথা ভার লাগছে ! চোখে ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার, ইদানিং পড়ার সময় ছোট অক্ষর দেখি না, মাহি বলল !
তাহলে যাচ্ছো না কেন ?
সময় পাচ্ছি না ! আই ওয়ার্ডে যে যাব হসপিটালে ঢুকলে আর মনে থাকে না !
কালকে ছুটির দিন যাও , রুবা বলল!
ঠিক আছে , এখন যাও তেল বা বাম থাকলে নিয়ে আসো!
রুবা নিচের দিকে দৌড় দিল !
রুবা সাবধানে হেঁটে যাও, উড়ে যেতে হবে না , প্লিজ।
মাহি মনে মনে বলল, পাগল একটা । তোমার এই পাগলামী টা এত ভালো লাগে রুবা ! তুমি এরকম ই থেকো! মা ঠিক ই বলছিল তুমি সত্যিই আমার মনের মত । কিভাবে হলে তুমি এরকম? আমি তো কোন দিন কাউকে ই বলিনি আমি এরকম একটা প্রজাপতি র মত উড়ে বেড়ানো মেয়ে পছন্দ করি !
তুমি এভাবেই উড়তে থাকো আমার চারপাশ টাতে আমি তোমাকে দেখেই বাঁচব রুবা ! তোমাকে নিয়ে মায়ের আদর ভালোবাসা দেখে বাঁচব ।
কি আশ্চর্য না, বিয়ে ব্যাপার টা কোথা থেকে অধিকার বোধ নিয়ে আসে একটা মানুষের প্রতি আরেকটা মানুষের জন্য !
কোন দিন কি ভেবেছিলাম তোমার আমার সম্পর্ক এই রূপ নিবে!
তুমি আমার বউ হবে ! নিঝুম কে নিয়ে ভেবেছিলাম তবে ও যতটা ভবিষ্যৎ নিয়ে কল্পনা করতো মেয়ে হিসেবে ,আমার হয়তো করা হয়নি এতটা !
আজ তোমার আমার একটা সম্পর্কে র ট্রান্সফরমেশন এর জন্যেই পরিস্থিতি, তোমার মনে কি আছে, আমি কি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি কিনা অনেক কিছু চিন্তা করতে হয় তোমার কাছে আসার আগে। তোমার ইচ্ছা র বিরুদ্ধে আমি এক ইঞ্চিও তোমাকে ,আমার করতে চাই না রুবা !
আমি চাই তুমি আমার দিকে এগিয়ে আসো! আমি একবার নিজের হাতে ভালোবাসার মৃত্যু লিখেছি আর শক্তি নেই তোমার কাছ থেকে বর্থ্য হয়ে ফেরত আসার !
এবার গল্প অন্য রকম হোক!
মাহি এত শত যখন ভাবছে তখন তার মোবাইল এ দুটো মেসেজ এলো !
একটা দিয়েছে নিঝুম !
আরেক টা ওর ফ্রেন্ড নিয়াজ!
আগে নিয়াজের মেসেজ টা পড়লো, ওয়ান্ট টু মীট ইউ ডিয়ার !
তারপর নিঝুমের মেসেজ টা পড়লো , এত রোমান্স মাহি !
মাহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মেসেজ ডিলিট করলো!
নিয়াজ হঠাৎ দেখা করতে চাইছে ! ও আচ্ছা চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া সে জন্যই বোধহয় !
রুবা ছুটতে ছুটতে আসছে !
এত সময় লাগলো যে ?
বাসায় তেল ছিল না , কুদরত ভাই কে দিয়ে আনালাম দোকান থেকে !
এত রাতে দোকানে পাঠানোর কি দরকার ছিল বোকা মেয়ে!
বা রে ,তোমার খারাপ লাগছে তাই তো আনালাম!
পাগল একটা মেয়ে তুমি রুবা !
এখন আসো আমি দিয়ে দেই তোমার মাথায় তেল!
তুমি দিয়ে দিবে ? মাহি ফ্লোরে বসল !
হ্যাঁ আর কে দিবে , মেসেজ ও করে দিব দেখবা ঘুম চলে আসবে !
মাথা উপর দিকে তুলে মাহি বলল, আমি তো ঘুমাতে চাইছি না রুবা ! তোমাকেও ঘুমাতে দিব না, বলে হাসলো মাহি!
ঠিক আছে আগে তেল দেই তখন দেখা যাবে !
রুবা তেল লাগিয়ে দিচ্ছে!
এত বেশি না কিন্তু!
হু বেশি দিব না চিন্তা করো না!
আচ্ছা আজ খালামনি একটা কথা বলল তোমাকে নিয়ে , রুবা বলল!
কি কথা ?
তুমি নাকি ছোটবেলায় নতুন ব‌উ দেখলেই বলতা তোমার ব‌উ কোথায় ? তোমার ব‌উ কবে এভাবে শাড়ি , গয়না পড়ে সাজবে ? রুবা হাসছে !
হু বলতাম তো ব‌উ দেখতে খুব ভালো লাগতো হা হা করে হাসছে মাহি!
খুব দুষ্ট ছিলে!
হু বেশি ব‌উ ব‌উ করতাম বলেই দেখো আমার জন্য কেউ ব‌উ সাজেনি !
রুবা মুখ কালো করে ফেলল!
মাহি কথা টা বলেই খেয়াল করলো এভাবে কথা টা রুবাকে বলা ঠিক হয়নি!
মাহি ঘুরে বসলো রুবার দিকে , সরি রুবা সরি আমি কথাটা জাস্ট বলে ফেলছি প্লিজ তুমি মন খারাপ করো না!
প্লিজ !
রুবার চোখে পানি চলে আসছে!
মাহি রুবার গাল দুটো দুই হাতে ধরে বলল, সরি রুবা প্লিজ!
হু ঠিক আছে , রুবা বলল!
মাহি ফিসফিস করে রুবাকে বলল, সরি হাসো একটু!
রুবা হাসলো!
তারপর খুব আস্তে রুবাকে বলল,
তুমি আমার জন্য একদিন ব‌উ সাজবে রুবা ! ব‌উদের মত ভারী শাড়ি , অনেক গয়না, মাথায় ঘোমটা দিয়ে। শুধুই আমার জন্য রুবা!
রুবা চোখ বন্ধ করে শুধু মাথা ঝাকালো!

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here