যখন_দুজনে_একা ৩৬ পর্ব

0
636

#যখন_দুজনে_একা

৩৬ পর্ব

সকালে ঘুম ভেঙ্গেই দেখে নিঝুম বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি। ছুটির দিনে এরকম বৃষ্টি দেখলে ভালোই লাগে। এসি বন্ধ করে সে মাথার কাছের জানালা টা খোলার চেষ্টা করতেই ওর মুখে বৃষ্টি র ঝাপটা এসে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে ফেলল। পর্দা সরিয়ে শুয়ে শুয়ে বৃষ্টি দেখছে। এরকম বৃষ্টি এখন তার মন খারাপ করে দেয়। আগে এই উথালপাথাল বৃষ্টি হলেই সে মাহির কাছে গিয়ে হাজির হত। ছুটির দিনে এরকম বৃষ্টি থাকলে সে মাহিকে ডেকে ঘুম থেকে তুলে ওর বারান্দায় বা ওদের ছাদের ঘরে বসে চা খেত গল্প করতো।
আর আজ এই ছুটির দিনের সকাল বেলায় আমার তোকে ডাকার অধিকার নেই তোর সঙ্গে চা খাওয়ার উপায় ও নেই।
এখন তুই রুবার সঙ্গে হয়তো ঘুমাচ্ছিস, নয়তো রোমান্টিক এই বৃষ্টির পুরো ফায়দা তুলছিস একজন আরেকজনের মাঝে রহস্য খুঁজে। নিজেই হাসলো নিঝুম! কি ভাবছে সে !
অবশ্য অবাস্তব কিছু তো নয়? অনেক মাস তো হলো ওদের বিয়ের এত দিন পরেও কি মাহি রুবার সামনে সন্ন্যাসী সেজে বসে আছে, অসম্ভব !
মাহি কে দেখলেই বোঝা যায় সে মানসিকভাবে রুবার সঙ্গে কতটা জড়িয়ে গেছে এতটা শান্তি, এতটা সুখী , ভালোবাসার টান কি শুধু সুন্দরী ব‌উ এর চেহারা দেখেই পাচ্ছে , অফকোর্স না ! শরীরের টানকে, কে কবে ফিরাতে পেরেছে তাও যেখানে সকল অধিকার আছে তার ।
রুবাও মাহির নাম শুনেই যেরকম ব্লাস করে কারো বুঝতে আর বাকি থাকে না মন ছাপিয়ে এই ভালোবাসা অনেকদূরে পৌঁছে গেছে।
শুধু আমার বেলায়‌ই ভালোবাসা টা খুব পানসে ছিল! নিজেকে কতবার তোর কাছে নিতে চেয়েছিলাম তুই বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করেছিলি। এত মেজাজ খারাপ হত তখন। ফারিয়া তো সব জানত , ওই তোর নাম দিয়েছিল সন্ন্যাসী! হাসলো নিঝুম।
আজ সন্যাসী রোমান্টিক মুভির নায়ক হয়ে গেছে আর সেখানে নায়িকা রুবা!
এমন আকাশ পাতাল ভাবছে যখন তখন‌ই তার মেসেঞ্জার এ মেসেজের শব্দ, নিয়াজের গুড মর্নিং দেয়া মেসেজ।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, আজকাল নিয়াজ তাকে খুব নক করছে !
ঘটনা কি এই‌ , যেহেতু মাহির সঙ্গে আমার আর কিছু হ‌ওয়ার নেই তাই বলে নিয়াজ সেখানে এন্ট্রি হতে চাইছে !
সিরিয়াসলি !
নিয়াজ খুব ভালো ছেলে, ভালো স্টুডেন্ট ও ছিল এখন পর্যন্ত ওর ক্যারিয়ার ব্রাইট , বাবা মনে হয় রিটায়ার্ড ব্রিগেডিয়ার এরকমই তো শুনেছিলাম, বাসা বাড়িধারা তে । সবচেয়ে বড় কথা খুব শান্ত শিষ্ট একটা ছেলে। কিন্তু আমি তো মাহির মত আগুন কে ভালোবেসেছি নিয়াজ, তুমি সেই আগুনে র সামনে অনেক ফিকে।
ঠিক তখনই রিয়া দরজা খুলে ঘরে ঢুকলো । নিঝুম উঠেছিস বলে ওর বিছানায় শুয়ে পড়লো!
আপু কি ব্যাপার এত সাত সকালে কি হলো আবার?
:শোন না সাজ্জাদ বলছিল একসঙ্গে লাঞ্চ করতে আজকে।
: হু এতে সমস্যা কিসের চলে যা!
: আমার একা যেতে ইচ্ছে করছে না !
: মানে বুঝলাম না ?
: তুই ও চল, সারাজীবন তো ওর সঙ্গে আমিই থাকব আজ আমরা একসাথে লাঞ্চ করি তিনজন, কি বলিস!
: আপু আমি কাবাবে হাড্ডি হয়ে কি করব বলতো তোদের মাঝে ? তোরা যাচ্ছিস যা!
: এখানে কবাবে হাড্ডি হ‌ওয়ার কি হলো?
: প্লিজ আপু মাথা খাস না তো এই সকাল সকালে ! আমার রাতে দাওয়াত আছে দুপুরে ভারী কিছু খাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।
: তোর যাওয়ার দরকার নেই আমি তানহা-মানহা ,আর শ্রুতি মিতি কে বলছি মাহিকে ও ফোন দেই রুবাকে নিয়ে আসে যদি! বলে রিয়া উঠে যাচ্ছে!
: আপু কি বললি রুবা মাহি কে বলবি ?
: তোর জানার দরকার নেই তুই ঘুমা । রিয়া চলে গেল!
নিঝুম বলল, ধুর !
অবশ্য মাহি বললেই যে রুবাকে নিয়ে যাবে তাও না ! দেখা যাক একটু পর আপু আবার আসবে।

রুবা বিছানা থেকে নামতে চাইছে তখন মাহি বলল, পা ফেলতে পারবে তো?
:তুমি উঠে গেছো?
: হু অনেকক্ষণ!
: তোমার পায়ের ব্যথা র কি অবস্থা , তুমি চারটা দিন আমাকে গোপন করলে কিভাবে রুবা ! আমি রাতভর তাই চিন্তা করলাম!
: সরি বলেছি তো, তুমি চিন্তা করবে তাই বলিনি!
: আর নিজে নিজেই পেইন কিলার খেয়ে নিচ্ছিলে?
: এখন সব ঠিক আছে বিলিভ মি!
: কি জানি আবার আমি চিন্তা করব দেখে ব্যথা লুকাচ্ছো কিনা ?
: সত্যি নাই ব্যথা, দৌড় দিয়ে দেখাব?
: না না থাক দৌড় দিতে হবে ! মাথা নষ্ট একটা , দেখি পা ফুলে যায় নি তো ?
: আরে না রে বাবা ! সব ঠিক আছে!
: রুবা বলতে খেয়াল ছিলনা আজ রিয়াদ ভাইয়ের নতুন ফ্ল্যাটে ওঠা উপলক্ষে দাওয়াত আছে যাবে তুমি আমার সঙ্গে?
: তুমি নিয়ে গেলে অবশ্যই যাব!
: ঠিক আছে মা কে আমি বলছি তুমি সন্ধ্যায় রেডি হয়ে যেও।
:এখন খিদে পেয়েছে ব্রেকফাস্ট দিতে বলো রুবা।
আসো তুমি আমি যাচ্ছি বলে রুবা বের হয়ে গেল ঘর থেকে।
মাহি ফ্রেশ‌আপ হয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে তখন রিয়া ফোন দিল,
: কি খবর রিয়া আপু ?
: খবর জানতে একটা ফোন তো দেস না !
: আমি তো আমার খবর নেয়ার‌ই সময় পাই না , মাহি বলল!
: তাই , চাপাবাজ কোথাকার!
: সত্যি আপু বাসা হসপিটাল আবার বাসা এই লাইফ এখন !
: আহারে তোর কষ্ট দেখে চিন্তা হচ্ছে রে রুবার কি হবে , রিয়া হাসছে!
: কি আর হবে কপাল ওর, মজা করে বলল মাহি!
: আজ কে তো তোর ছুটি, চল একসাথে সাজ্জাদ আর আমরা সবাই একসঙ্গে লাঞ্চ করি !
: আপু আজকে রাতে দাওয়াত আছে একটা!
: তো কি হয়েছে , তোকে তো লাঞ্চ এ আসতে বলছি!
: তুমি আর সাজ্জাদ ভাইয়ের মাঝে আমরা কি করব?
: ফালতু কথা বলবি না লাঞ্চ করতে বলছি, সবাই দাম দেখানো শুরু করেছিস তোরা !
: আর কে কি বলল, মাহি বলল?
: নিঝুম ও যেতে চাইছে না , দাম দেখাচ্ছে!
: আচ্ছা ঠিক আছে যাব আমি রুবা কে বলছি !
: তাহলে মাহি তুই তোর গাড়িতে তানহা- মানহা কে তুলে নিস ওরাও যাচ্ছে! আমি আর সাজ্জাদ শ্রুতি মিতি কে নিয়ে নিচ্ছি!
: আপু সিরিয়াসলি নিঝুম যাবে না ?
: না !
: ও আচ্ছা , এই কোথায় আসতে হবে সেটা বলো !
: আমি সাজ্জাদ এর সঙ্গে কথা বলে কর্নফাম করছি, বলে কেটে দিল ফোন রিয়া!
মাহি অবাক হলো নিঝুম যাচ্ছে না শুনে।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে ও মাকে বলল দুটো দাওয়াত এর কথা। সাফিয়া বেগম বললেন,
: যাও সমস্যা কি, রুবা র পায়ের ব্যথা তো ঠিক হয়ে গেছে।
: এই ব্যথা কিন্তু রুবাকে কয়দিন পরপর ভুগাবে মা !
: চিকিৎসা কি মাহি , মা বলল?
: এম‌আর‌আই করে দেখা যাক অবস্থা কি , তারপর অপারেশন ও লাগতে পারে বলে রুবার দিকে তাকালো মাহি!
: রুবা আঁতকে উঠে বলল, অসম্ভব অপারেশন করাব না আমি!
: তোমার কথায় হবে নাকি রুবা ,মাহি বলল? ডাক্তার যা বলবে তাই হবে!
একটু ছুটাছুটি কম করো দেখা যাক কি হয় বলে মাহি উঠে গেল খাওয়া শেষ করে!
: মা আপনি কিন্তু শুনে রাখেন আমি কোন অপারেশনে করব না !
: আচ্ছা আচ্ছা আগেই এত টেনশন করো না দেখা যাক কি হয় , সাফিয়া বেগম বললেন!

নিঝুমের মেজাজ টাই খারাপ হচ্ছে। সবাই যাচ্ছে এখন, সে না গিয়ে বাসায় বসে বৃষ্টি পড়া দেখবে ! অসহ্য লাগছে! আপু একবার ও আর বলছে না ওকে। ও সাজ্জাদ ভাই কে কল দিল,
: হ্যালো সাজ্জাদ ভাই কি খবর আপনার?
: আমার খবর শ্যালিকা তো নেয় না !
: নিব না তো কখনো, এরকম স্বার্থপর টাইপের বোন জামাই এর খোঁজ আমি রাখি না!
: আমি কি করলাম আবার!
: সকালে আপনার ব‌উ বলল লান্চে যাবি আমাদের সঙ্গে, আমি আপনাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বললাম তোরা দুইজন যা আমি তোদের মাঝে গিয়ে কি করব এখন পুরো গুষ্টি শুদ্ধ মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে আমি শুধু বাদ!
: কি সর্বনাশের কথা বার্তা আমি তো জানি ই না , আমাকে বলল সবাই যাচ্ছে। আমি আমার একমাত্র শালী কে রেখে তো যাব‌ই না, সাজ্জাদ বলল!
নিঝুম তুমি চীফ গেস্ট আমার , তুমি রেডি হয়ে নাও রিয়াকে বলার দরকার নাই তুমি ছাড়া আমার গলা দিয়ে খাবার নামবেই না !
: ঠিক আছে আমি রেডি হচ্ছি আপনি বলবেন আপনি আমাকে জোর করেছেন!
সাজ্জাদ হেসে বলল, অবশ্যই আমি বলব !

নিঝুমের মন ভালো হয়ে গেল! সে কি ড্রেস পড়বে তাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো !

রিয়া ফোন দিল মাহিকে,
: মাহি
: আপু বলো, কোথায় যেতে হবে?
: এই শোন পূর্বাচলের পর সাজ্জাদের কাজিনের একটা রিসোর্ট আছে সেখানেই যাব ।
: আপু বেশি দূর ?
: আরে না আজকে ছুটির দিন তে বেশি সময় লাগবে না, গুলশান থেকে হার্ডলী হাফ এন আওয়ার!
: রিসোর্ট এ তোমরা দুজন গিয়ে টাইম স্পেন্ড করলে ভালো হতো না ,‌আমরা তো তোমাদের ডিস্টার্ব করব!
: থাপ্পড় খাবি, তোরা যাচ্ছিস বলেই ওখানে যাব তা না হলে সাজ্জাদ এর সঙ্গে রিসোর্ট এ যাব তোর কি মাথা নষ্ট ?
: মাহি হেসে বলল, আচ্ছা ঠিক আছে আমি কিন্তু আগে আগে চলে আসব রাতে আমার আর রুবার অন্য প্রোগ্রাম আছে!
: ঠিক আছে আসিস।
: ঐ দুটো কে তুলে নিস আর এক ঘন্টা পর আসছি বড় মামার বাসার সামনে।
: তুমি তানহা- মানহা কে রেডি হতে বলো আমি কিন্তু অপেক্ষা করব না , রেডি না পেলে রেখে চলে যাব!
: ঠিক আছে তুই তোর ব‌উ কে রেডি কর আগে!
: আমার ব‌উ রেডি হচ্ছে !
মাহি ফোন রেখে রুবাকে বলল, এই যে ব‌উ তাড়াতাড়ি রেডি হন সময় আধা ঘন্টা আপনার জন্য!

মাহি ,রুবাকে নিয়ে তার বড় মামার বাসার নিচে অপেক্ষা করছে তানহা- মানহা দুই বোনের জন্য।
রিয়ারা ও চলে আসছে কাছাকাছি।
তানহা- মানহা ছুটতে ছুটতে এসে উঠলো গাড়িতে।
মাহি বলল,
: তোদের এত সময় লাগে?
: কোথায় এত সময় লাগলো , ভাইয়া! জাস্ট আধা ঘন্টায় রেডি হয়েছি!
: ভাবি তোমাকে কি সুন্দর লাগছে , মানহা বলল!
: রুবা হাসলো
: আমার তো দারুন এক্সাইটেড লাগছে ভাবি , এক্সট্রা ড্রেস নিয়েছো !
: রুবা বলল হুঁ যদি বৃষ্টি তে ভিজি ! রিয়া আপু বলল নিয়ে নিতে‌ !
: কেউ বৃষ্টি তে ভিজবে না , সাবধান মাহি বলল!
: ভাবি ওখানে সুইমিং পুল আছে আমরা নামব!
: রুবা তুমি সুইমিং জানো , মাহি বলল ?
: রুবা বলল না জানলেই কি সুইমিং পুলে কেউ ডুবে না !
: তোমাকে বলেছে , মাহি বলল? ঐ তোদের সব সময় কুবুদ্ধি না দিলেই হয় না ?
: কি কুবুদ্ধি দিলাম ভাইয়া , যাচ্ছি মজা করতে মজা করব না!
: আচ্ছা করিস মজা। আমি কিন্তু সুইমিং পুলে নামব না আগেই বলে দিচ্ছি কেউ ডুবে গেলে উঠাতে পারব না!
: উঠাতে হবে না , না হয় মরেই গেলাম কি আর হবে, বলে রুবা আর মানহা- তানহা হাসছে।
সাজ্জাদের গাড়ি চলে এসেছে । মাহি ঐ গাড়ি কে ফলো করে স্টার্ট করলো!

ওরা প্রায় পৌনে একঘন্টা পর সেই রিসোর্ট এ এসে পৌছাল। বাই দিস টাইম বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে আকাশ অনেক পরিস্কার!
ওদের পিছনে আরো একটা গাড়ি এসে থামলো । সেখান থেকে নিঝুম আর সাজ্জাদের তিন জন কাজিন নামলো !
নিঝুম কে দেখে তানহা-মানহা , শ্রুতি- মিতি চিৎকার দিয়ে উঠলো , রুবাও খুব খুশি হলো। রিয়া অনেক সারপ্রাইজ হয়ে গেল। মাহি ও মনে মনে অবাক হলো এভাবে নিঝুম হঠাৎ আসাতে।
সাজ্জাদ বলল,
: আমার চীফ গেস্ট চলে এসেছে। রিয়া তুমি নিঝুম কে রেখে কিভাবে ভাবলে আমি আসব ! আমার একটা মাত্র শালী !
: ওকে আমি বলেছি তখন দাম দেখাচ্ছিল খুব!
: সবাই মিলে হৈচৈ করে ভেতরে ঢুকছে !
নিঝুম মাহির দিকে তাকিয়ে হাসলো শুধু। মনে মনে ভাবছে , একদিন তোর সঙ্গে এরকম কোথাও আসার ইচ্ছা ছিল আজ তুই রুবাকে নিয়ে আমার সামনে ঘুরে বেড়াবি । ঠিক আছে দেখি কেমন লাগে !
মাহি আমার এখন আর কষ্ট লাগে না রে ! আজ চেয়ে থেকে দেখব তোদের তাই তো আসলাম!

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here