যখন_দুজনে_একা ৩৭ পর্ব

0
630

#যখন_দুজনে_একা

৩৭ পর্ব

মাহি নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল, রিয়া আপু বলেছিল তুই আসবি না ! তুই তো পুরো সারপ্রাইজ দিয়ে দিলি!
আমি আসব আগে শুনলে কি তুই আসার প্ল্যান ক্যানসেল করতি?
আমি কি সেরকম কিছু বলেছি, মাহি বলল!
ফান করলাম মাহি!

লবীতে ঢুকতেই সাজ্জাদ মাহি কে উদ্দেশ্য করে বলল,
: ভাই মাহি তোমার আর তোমার ওয়াইফ এর জন্য একটা সুন্দর কটেজ রেডি আছে। তোমরা এখানে আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পরো কিংবা হানিমুনে র মজা নিতে পারো!
: মাহি একটু লজ্জাই পেলো সবার সামনে এই কথা শুনে । ভাই সবার সঙ্গে এনজয় করতে আসছি আপনি যে কি বলেন না !
: আচ্ছা তোমাদের সঙ্গে তো পরিচয় করালাম না আমার কাজিন দের , সাজ্জাদ বলল!
এরা আমার চাচাতো বোন সারাহ , সামিহা, অপার !
হাই, বলে হাসলো তিনজন!
বিশ, বাইশ বছরের শ্রুতি , মিতি , মানহা- তানহাদের বয়সী তিনটা মেয়ে !

রিয়া এসে মাহিকে বলল,
: তোদের ব্যাগ কটেজে দিয়ে আসছে , তোরা কি এখন এখানে বসবি নাকি রুমে যাবি?
: রুমে যাব কেন , কি শুরু করলে তোমরা ?
: ফ্রেশ হতে যাবি নাকি তাই জিজ্ঞাসা করলাম, ফাজিল কোথাকার!
: না ঠিক আছি!
: তাহলে চল পুল সাইডে যাই, রিয়া বলল!
: চলো আমি রুবাকে নিয়ে আসছি!

রুবা তানহা দের সঙ্গে বসে গল্প করছে! মাহি ওদের কাছে গিয়ে বলল,
: এখানে বসে কি করবি, চল সবাই সুইমিং পুলের কাছে গেছে।
: ওরা সবাই হৈচৈ করে উঠে গেল!
মাহি রুবার কাছে গিয়ে বলল শোনো?
রুবা মাহির পাশে দাঁড়ালো ,
: বলো।
: তুমি কি সত্যি সত্যি সুইমিং পুলে নামবে?
: তুমি নামতে দিলে নামব!
: তোমার কি ইচ্ছে সেটা বলো?
: তোমার ইচ্ছে ই আমার ইচ্ছে বলে রুবা হেসে চলে গেল ।
: মাহি মনে মনে বলল, ভালো টেকনিক আমার উপর ছেড়ে দেয়া!
সাজ্জাদ ভাই সুইমিং পুলে র পাশে সেডের নিচে বসে সবার সঙ্গে গল্প জমিয়েছে।
মাহি একটু দূরে চেয়ারে বসে সিগারেট জ্বালালো!
সাজ্জাদ ইশারায় কাছে আসতে বলছে। মাহি সিগারেট টা দেখিয়ে বলল, সিগারেট শেষ করে আসছি!

একটু পর নিঝুম এসে ওর পাশে বসলো,
: কি রে তুই দূরে বসে আছিস কেন সবার থেকে?
: যাচ্ছি সিগারেট শেষ করে!
: বিয়ের পর‌ও ছাড়তে পারলি না এটা, রুবা কিছু বলে না?
: ও কোন শর্ত দেয় নি বিয়ের পর সিগারেট ছাড়তেই হবে !
: ওর কি আর শর্ত দেয়ার সিচুয়েশন ছিল , নিঝুম বলল!
: শর্ত দিয়ে কি মাহির আজগর কে বেঁধে রাখা যায় নিঝুম?
: মাহির আজগর কে কি দিয়ে বাঁধা যায় রে ?
: মাহি হাসলো শুধু!
একটা কথা সত্যি করে বলবি মাহি?
: আমি সব সময় সত্য কথা ই বলি !
: আজ আমি এখানে আসাতে তুই বিরক্ত হয়েছিস ?
: আমাকে দেখে তোর কি তাই মনে হচ্ছে, নিঝুম?
: এটা আমার প্রশ্নের উত্তর হলো না!
: না বিরক্ত হ‌ইনি ! আমি অবাক হয়েছি কারণ শুরুতে শুনেছি তুই আসবি না !
: একদিন মনে মনে কত ভেবেছি তুই আর আমি এরকম একটা রিসোর্ট এ আসব শুধু নিজদের নিয়ে ব্যস্ত থাকব, আর আজ দেখ কি থেকে কি হয়ে গেল!
: সেটাই নিঝুম অনেক কিছুই হতে পারতো আর হয়েছে আরেক রকম! বাস্তবতা মেনে নিয়েছি আমরা।
: সেটাই মেনে নিচ্ছি , তুই চিন্তা করিস না আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি!
: আমার ও তোর উপর বিশ্বাস আছে তুই পারবি!
নিঝুম হাসলো!
মাহি রুবার দিকে তাকিয়ে আছে , রুবা সবার সঙ্গে হেসে হাত নেড়ে নেড়ে কি যেন বলছে!
একটা কথা বলবো মাহি?
: বল শুনছি ।
: তুই বিয়ের পর আরো সুন্দর হয়েছিস রে , যত দেখছি আর অবাক হচ্ছি । মনে হচ্ছে রুবার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছিস!
: মাহি নিঝুমের দিকে তাকালো , তার পর হেসে দিল ! কি বলিস এসব !
: বিশ্বাস কর ঐদিন ওটিতে ফারিয়াও বলছিল এই কথা , তারপর তানহা- মানহা , ছোট মামি ও বলল! সবাই নিশ্চয়ই ভুল বলছে না!
: নিঝুম আমার কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না !
: কিছু বলার দরকার নেই শুধু শুনে যা !
: মাহি হেসে বলল, পুরুষ মানুষ হয়ে নিজের রূপের প্রশংসা শুনে যাব!
: পুরুষদের রূপের প্রশংসা শুনতে নেই বুঝি?
: সত্যি আমার অভিজ্ঞতা নেই , মাহি হেসে বলল!
মাহি রুবাকে ইনবক্স করলো, ” এত হাসি কি নিয়ে”
রুবা রিপ্লাই দিল, ” বলা যাবে না ”
নিঝুম বলল, কেন ছোটবেলা থেকেই তো শুনছিস তোরা দুই ভাই রূপের প্রশংসা !
: আমি শুনি নাই !
তোর এখানে বসে গল্প জুড়েছি বলে বিরক্ত হচ্ছিস না তো?
: নিঝুম আমাদের মাঝে আত্মীয়তার সম্পর্কের পর একটা সম্পর্ক হয়েছিল , সেই সম্পর্ক টা কোন পরিনতি পাই নি বলে আমাদের মুখ দর্শন বন্ধ করে দিতে হবে , কথা বলা বন্ধ করে দিতে হবে এমন তো কোন মানে নেই ! তাহলে কেন বারবার বলছিস আমি বিরক্ত হচ্ছি কিনা ?
: তুই তোর বিয়ের পর এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতি আমাকে তাই বললাম!
: তখন তোর নিজের উপর কন্ট্রোল ছিল না । পরিস্থিতি সামলাতে আমাকে তোকে এড়িয়ে যেতে হয়েছে!
রুবা আবার ইনবক্স করেছে,
” দূর থেকে কি দেখো , কাছে আসো তোমরা ”
মাহি রিপ্লাই দিল,
” চুপি চুপি দেয়াল জুড়ে, আঁকছি কতো
মন কেমনের খাতা
চুপি চুপি জানতে গেলাম নিরুদ্দেশের
মায়ার চাদর পাতা…..”
রুবা লিখলো, “তুমি কি নিরুদ্দেশ হবে ? ”
মাহি লিখলো, ” তুমি কাছে না আসলে হব “!
নিঝুম বলল,
:আমি তখন বোকামি করেছি হয়তো, কিন্তু অনেক অসহায় ছিলাম নিজের মনের কাছে !
: আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে নিঝুম!
: কি জানি , তবে তোরা ছেলেরা মন থেকে যত সহজে কাউকে মুছে ফেলতে পারিস আমরা মেয়ে রা পারি না !
রুবা কি পেরেছে ? সত্যি করে বলতো মাহি? তুই তো ওর সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছিস ! সেই বাসা, সেই বারান্দা , সেই সংসার শুধু মানুষ টা বদলে গেছে, ঘর টা বদলে গেছে! রুবা কি এত সহজে মনটা বদলাতে পারছে ? তোর বুকে শুয়ে কি শিহাব ভাইয়ের কথা মনে পড়ে না ওর ?
: নিঝুম রুবার কথা যখন আনলি তাহলে বলি , ওর কথাটা চিন্তা কর ওর মন , শরীর পুরো অস্তিত্ব জুড়ে একটা মানুষ ছিল সেই মানুষটা কে সরিয়ে আরেক টা মানুষ কে মেনে নিতে কতটা যুদ্ধ তাকে করতে হয়েছে! সেই জন্য ওকে আমার কতটা সাহস, ভরসা আর ভালোবাসা দিতে হচ্ছে ! আর আমার বুকে শুয়ে ভাইয়ার জন্য কষ্ট পেলেও আমার কি স্বামী হিসেবে কষ্ট পাওয়া উচিত ?
কিন্তু আমি ওর কষ্ট দেখেই কষ্ট পাই রে , নিজের কষ্টের কথা মনে হয়নি কখনো।
ছেলেদের মন কি সেটা বাদ থাক , নিঝুম!
: তবে তোকে বলব একজন ভালোবাসার, কেয়ার করার মানুষ সবার লাগে ! আমি তোর প্রতি আমার দ্বায়িত্ব টুকু পালন করতে পারিনি সেই জন্য ক্ষমা চাইছি আবারো ! কিন্তু তুই একটা জায়গায় আটকে থাকিস না প্লিজ।
: রুবা যদি ভাইয়াকে ভুলার চেষ্টা করতে পারে , আমার আর তোর রিলেশন টা তো রুবা আর ভাইয়ার মত ছিল না তাহলে কেন তুই পারবি না , আমি পারব না ? মানুষ সব পারে। আর মেয়ে রা তো আরো সব পারে। মেয়ে রা সব কষ্ট সহ্য করে হাসি মুখে ঘুরে দাঁড়াতে পারে , মাহি বলল!
: নিঝুম দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!
রুবা উঠে আসছে ওদের দিকে !

রুবা এসে মাহির চেয়ারের পিছনে দাঁড়ালো !
নিঝুম বলল,
: তুমি এখানে এসে বসো রুবা, বলে নিঝুম উঠতে নিলো !
:আমি বসব না আপু তুমি বসো তো ! আর এই যে দেখো তোমার দেয়া কানের দুল পড়েছি আজকে!
: খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে, নিঝুম বলল!
: রিসোর্ট ঘুরে দেখেছো রুবা , মাহি বলল?
: না , সবাই গল্প করাতেই ব্যস্ত !
: চল নিঝুম সবাই ওদিকে আছে আমরাও যাই !
:তোরা যা আমি আসছি , নিঝুম বলল!

মাহি আর রুবা উঠে রিয়া আর সাজ্জাদ সহ বাকিদের সঙ্গে গিয়ে বসলো!
একটু পর মেয়েরা সবাই ড্রেস চেঞ্জ করে আসতে গেল , সুইমিং পুলে নামবে বলে ।
রুবা গেল ওদের সঙ্গে ঠিকই কিন্তু সে আগের ড্রেসেই ফেরত আসলো । মাহির পাশে এসে বসলো!
নিঝুম বাদে সবাই নামলো পুলে , সাজ্জাদ এর কাজিন রা ড্রেস চেঞ্জ করে বসে আছে কিন্তু নামেনি গল্প করছে নিজেদের মধ্যে।
কি ব্যাপার তুমি কি এভাবেই নামবে পুলে , মাহি রুবাকে বলল!
: আমি নামব না !
: কেন , মাহি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল !
: ডুবে যাই যদি , তুমি তো তোলার জন্য নামবে না !
: মাহি হেসে দিল , কেন তোমাকে পাগল বলি জানো ? এই জন্য !
: ইচ্ছা করছে না , নামতে ! তুমি তো নামবে না !
: অন্য সবাই তো নেমেছে তুমি যাও রুবা ! ভয় পেয়ো না কিছু হলে আমি তো আছি । তুমি কিভাবে ভাবছো তুমি ডুবে যেতে থাকলে আমি তোমাকে তুলব না ?
: সত্যি এমনি বলেছি ! ইচ্ছা করছে না বিশ্বাস কর।
: তাহলে আমার পাশে বসে থাকো । মাহি রুবার হাতটা ধরলো ।
তানহা- মানহা ডাকছে রুবা কে ।
রুবা শুধু হাত নাড়লো।
মাহি বলল, আবার ঝড় আসবে কিংবা খুব বৃষ্টি হবে আকাশ খুব অন্ধকার করেছে দেখেছো ! আবারও বলছি তোমার ইচ্ছে হলে নেমে যাও বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে !
রুবা মাথা নেড়ে না করলো।
: ঠিক আছে তুমি বসো এখানে আমি একটু ওদিকে যাচ্ছি, বলে মাহি উঠে গেল।

নিঝুম রুবার পাশে এসে বসলো ,
: কি ব্যাপার তুমি নামলে না রুবা?
: না ইচ্ছে করছে না !
: মাহি কোথায় ?
: উঠে গেল ঐ দিকে ! তুমি নামবে না নিঝুম আপু?
: না পানিতে যা ক্লোরিন আমার গা কুটকুট করে !

হঠাৎ মাহি ড্রেস চেঞ্জ করে সুইমিং পুলে নামলো রুবা খেয়াল ই করেনি ! রুবাকে যখন ডাক দিল রুবা তো পুরোই অবাক !
: রুবা এখন নামবে না ?
: রুবা ছুটে গেল পুলের কাছে ।
: আসো রুবা!
: রুবা মাহির হাত ধরে পানিতে নামলো! ওর ড্রেস চেঞ্জ করতেও খেয়াল র‌ইলো না ।
: তুমি তো সুইমিং জানো না শুধু দাঁড়িয়ে থাকো মনে রেখো পায়ের লিগামেন্ট এর ব্যথাটার কথা!
: ঠিক আছে, তুমি আমার পাশে থেকো, রুবা বলল ।
: আমি আছি এখানে!
নিঝুম বসে ওদের দেখছে । ওর চোখ ভিজে যাচ্ছে যতটা না কষ্টে তারচেয়ে ও বেশি একাকীত্বে।
অপার নামের সাজ্জাদ এর কাজিন টা নিঝুমের পাশে এসে বসলো,
: নিঝুম আপু ঐ ভাইয়া টা আপনাদের কি হয় জানি ?
: আমার খালাতো ভাই!
: কি করে ?
: ডাক্তার ! কেন ?
: হি ইজ ভেরি হ্যান্ডসাম এন্ড গুড লুকিং।
নিঝুম বড় বড় চোখ করে তাকালো ,
: তাই বুঝি?
: হুঁ উনি যখন পুলে নামলো মনে হচ্ছিল
: কি মনে হচ্ছিল অপার?
: পুরো পুলটা আলোতে ভরে গেল!
: নিঝুম হেসে দিল, তুমি তো অনেক সুন্দর করে কথা বলো!
: বিলিভ মি আপু । আমি তো উনার উপর ক্রাশ খেয়ে গেলাম! অনেক টা লাভ এট ফাস্ট সাইট টাইপের!
: নিঝুম মুখ টিপে হাসছে । তাই ?
: হু আপু!
: তুমি কিসে পড়ো যেন অপার ?
: এবার এ লেভেল কমপ্লিট করলাম!
: তাই বলো , নিঝুম হাসছে আর মনে মনে বলছে বেচারা অপার, বয়সের কাছে ধরা খেয়ে গেল । তোমার এই বয়সেই আমি ঠিক এই মানুষ টার উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম। আর আজ‌ও খেয়ে আছি । কি লাভ হলো? ও এখন তার ব‌উ নিয়ে সুইমিং পুলে আমার সামনেই আনন্দ করছে! আর আমি তোমার মত সাইড লাইনে বসে আছি !
নিঝুমের কষ্ট হঠাৎ করে কমে গেল । মনে মনে বলল, থেঙ্কস অপার তুমি অজান্তেই আমার সব দুঃখ ভুলিয়ে দিলে।
: আপু উনি কি আমার থেকে অনেক বড়?
: খুব বেশি হবে না জাস্ট টুয়েলভ ইয়ার্স ! এইজ ডাজেন্ট ম্যাটার ইউ নো!
: রাইট আপু!
: ভালোবাসার ব্যাপারে কোন কিছুই খুব ম্যাটার করে না বুঝলে !
: ইটস জাস্ট এন ইনটেন্স ফিলিংস অব এফেকশন , তাই না আপু?
: হুঁ
: তুমি শুধু খেয়াল রেখো ঐ গ্রীন ড্রেস পড়া মেয়ে টা কে, রুবাকে দেখিয়ে নিঝুম বলল!
: হু ইজ দিস প্রিটি গার্ল ?
: দিস প্রিটি গার্ল ইজ হিজ ওয়াইফ!
: রিয়েলি?
: নিঝুম বলল, ইয়েস সুইটহার্ট ।
: হু কেয়ারস‌?
: লাভলী, নিঝুম বলে উঠলো। অপার তুমি পুলে নামছো না কেন ? তোমার ক্রাশ এর কাছাকাছি যাওয়ার দারুন একটা সুযোগ। তুমি ডুবে যেতে নিলেই দেখবে ও তোমাকে হেল্প করতে ছুটে আসবে।
: আমি তো সুইমিং জানি আপু আমি কিভাবে ডুববো?
: তুমি সুইমিং জানো এটা তুমি জানো কিন্তু এটা তো তোমার ক্রাশ জানে না ! আমি কি বোঝাতে পেরেছি তোমাকে?
: ও ইয়েস । থেঙ্কস আপু।
অপার উঠে দাঁড়ালো !
নিঝুম বলল, বেস্ট অব লাক অপার!
নিঝুম হাসি মুখে দারুন একটা মুভি দেখার অপেক্ষা করছে!
অপার সত্যি সত্যি পানিতে নেমে কিছুক্ষণ পর ডুবে যাওয়ার দারুন এক্টিং করলো । কিন্তু বেচারার কপাল এত খারাপ মাহি ওর ব‌উ কে নিয়ে এত ব্যস্ত ও অপার কে খেয়াল ই করলো না ! অপার কে রিয়া টেনে তুলল!
নিঝুম হাসি লুকানোর জন্য দৌড়ে দূরে সরে গেল। এই সিচুয়েশনে সবার সামনে হাসা যায় না !

মাহি রুবাকে বলল, উঠে যাও রুবা অনেক হয়েছে !
: আর পাঁচ মিনিট প্লিজ!
: নো !
: দুই মিনিট!
: ঠিক আছে!
রুবা দুই মিনিট পর উঠে গেল!
মাহি বলল, তুমি রুমে যাও শাওয়ার নাও আমি পাঁচ মিনিট পর আসছি ! খুব সাবধানে যাবে ভেজা পায়ে পিছলে পড়ে কি হয়েছিল মনে আছে তো ?
: হ্যাঁ মনে আছে ! রুবা কটেজের দিকে চলে গেল। বাকিরা সবাই ও উঠে যাচ্ছে এক এক করে!
মাহি একবার সুইমিং পুলের এই সাইড থেকে অপর সাইডে সুইমিং করে উঠে গেল । খুব ঝড়ো বাতাস শুরু হয়েছে!
পুল সাইডের চেঞ্জিং রুম থেকে মাহি টাওয়েল কোমড়ে এবং গায়ে জড়িয়ে যখন বের হলো , সঙ্গে সঙ্গে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।
ও দাঁড়ালো বারান্দায় ! হঠাৎ ওর খেয়াল হলো রুবা তো একা কটেজে, থান্ডারিং হচ্ছে ও খুব ভয় পায়!
রিয়াকে দেখে মাহি বলল, রুবার সঙ্গে কেউ কি আছে কটেজে আপু ?
: না মনে হচ্ছে , আমরা তো সবাই এখানে , কেন?
: ও ঝড় খুব ভয় পায়!
: নিঝুম কি ওর সঙ্গে ?
: দাঁড়া দেখছি ! বলে রিয়া নিঝুম বলে ডাক দিলো ! নিঝুম অপারের সঙ্গে কথা বলছিল !
কাছে এসে বলল,
: কি আপু ডাকছিস কেন?
: নিঝুম ও তো এখানে , তার মানে ও একাই কটেজে মাহি ! রিয়া বলল!
: কে রুবা ? নিঝুম বলল!
: হুঁ !
: রিয়া আপু আমি যাচ্ছি ওর কাছে বলে মাহি পা বাড়ালো !
: এই দাঁড়া ছাতা আছে কিনা এখানে দেখি আর খুব ঝড়ের মধ্যে কিভাবে যাবি বেশ খানিকটা দূর কিন্তু!
: আপু রুবা খুব ভয় পাচ্ছে বলে মাহি দৌড় দিল কটেজের দিকে!
রিয়া আর নিঝুম দাঁড়িয়ে দেখলো মাহি দৌড়ে কটেজের দিকে চলে যাচ্ছে!
অপার নিঝুম এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে আপু?
তোমার প্রিন্স চার্মিং তার প্রিন্সেস এর কাছে ছুটে গেছে , নিঝুম বলল!
চলো অপার আমরা ঐ দিকে গিয়ে গল্প করি , বলে নিঝুম আর অপার ভেতরে ঢুকে গেল।

মাহি পুরো ভিজে কটেজের দরজায় এসে দাঁড়ালো! কয়েক বার বেল বাজানোর পর রুবা এসে দরজা খুলে দিল !
তুমি এভাবে ভিজে আসলে কেন ?
: মাহি মনে মনে বলল, থেঙ্কস গড রুবা ভয়‌ পায় নি!
: আমি ভাবলাম তুমি ঝড়ে ভয় পাচ্ছ !
: শাওয়ার নিচ্ছিলাম তাই এতটা শোনা যাচ্ছিল না পানির শব্দে! তারপরও একটু একটু ভয় পাচ্ছিলাম ।
রুবা মাহিকে শুকনো টাওয়েল এগিয়ে দিল । মাহি ওয়াস রুমে ঢুকলো।
চেন্জ করে রুমে আসার পর রুবা বলল,
: আমার মন বলছিল তুমি ঠিকই ছুটে আসবে!
: তাই তোমার মন বলছিল, রুবা ? কিভাবে বুঝলে?
: যেভাবে তুমি আমার জন্য সুইমিং পুলে নামলে !
: তোমার জন্য!
: ‌হ্যা তুমি বুঝতে পেরেছিলে আমার ইচ্ছা করছিল তোমার সঙ্গে নামতে তাই তুমি নেমেছো , ঠিক বললাম কিনা ?
: হুঁ মাহি বিছানায় শুয়ে পড়লো, ওর গা ছেড়ে দিসে অনেক দিন পর সুইমিং করাতে । আমার মোবাইল টা দাও তো ভিজে গেছে হয়তো!
মোবাইল হাতে নিয়ে মাহি বলল,
: রুবা এদিকে এসো একটা সেলফি তুলি !
রবা ওর কাছে এসে দাঁড়ালো!
দাঁড়াতে পারব না তুমি আমার কাছে এসে বসো!
রুবা মাহির পিছনে বসলো , মাহি সেলফি তুলল!
তারপর রিয়াকে কল দিল ,
: হ্যালো কি অবস্থা রুবার ?
: ঠিক আছে , ছাতা পাঠাও কাউকে দিয়ে !
: আচ্ছা পাঠাচ্ছি!
ফোন রেখে মাহি রুবাকে বলল,
: কেমন লাগলো সুইমিং ?
: খুব ভালো !
: আমার এখন গা ম্যাজ ম্যাজ করছে রুবা।
: আমি ও টায়ার্ড হয়ে গেছি , ঘুম পাচ্ছে! রুবা হাসলো।

নিঝুম আর অপার খুব মজা করে গল্প করছে। ওদের দারুন ভাব হয়ে গেছে!
তোমার ক্রাশ তো তোমাকে বাঁচাতে এলো না বেড লাক!
: হি ওয়াজ বিজি উইথ হিজ ওয়াইফ !
: হুঁ, ব্যাপার না !
: আপু দেখো আমি উনার ছবি তুলেছি , বলে অপার তার মোবাইল কাছে নিয়ে এলো নিঝুমের।
: মাহি সুইমিং করছে, পুল থেকে উঠে দাঁড়ানো, এমনকি টাওয়েল পড়া ছবি ও আছে! সুইমিং এর ভিডিও ও আছে দেখো!
কখন করলে এই কাজ তুমি, নিঝুম বলল!
রিয়া ভাবি আমাকে যখন পানি থেকে তুলল, এরপর আমি ইচ্ছে করে আর নামিনি তখন তুলেছি !
: নিঝুম মনে মনে বলল, পাগল মেয়ে!
অপার এখন কি করবে ?
কি করা যায় বলো তো আপু?
তুমি ছবি গুলো ওকে মেসেঞ্জার এ পাঠিয়ে দাও! আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাও।
: ইয়েস গ্রেট আইডিয়া । থেঙ্কস আপু বলে অপার নিঝুম কে জড়িয়ে ধরলো।
নিঝুম হাসছে!
চলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখি !
: চলো!
ওরা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো!
কিছুক্ষণ পর মাহি আর রুবাকে দেখা যাচ্ছে একটা ছাতা নিয়ে দুজন একেঅপর কে ধরে এগিয়ে আসছে!
নিঝুম অপার কে বলল,
: ঐ যে দেখো কে আসছে!
: দেখছি আপু!
: ওর ওয়াইফ টি কিন্তু খুব ভালো একটা মেয়ে , আপার।
: অনেক বেশি সুন্দর দেখতে আপু।
: হু
: আচ্ছা অনেকে যে বলে সুন্দর ছেলেরা সুন্দরী ব‌উ পায় না বাট হি ইজ লাকী !
: লাকী বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল নিঝুম!

মাহি আর রুবা বারান্দায় এসে উঠলো ! নিঝুম রুবাকে দেখে বলল, তুমি খুব ভয় পাচ্ছিলে !
: না আপু আজকে তেমন ভয় পাইনি!
: মাহি অনেক টেনশন করছিল!
আচ্ছা মাহি ওর সঙ্গে পরিচয় করাই ও হচ্ছে অপার ! সাজ্জাদ ভাইয়ের চাচাত বোন!
হ্যাঁ তখন পরিচয় হলো তো !
খুব সুইট একটা মেয়ে , খুব চমৎকার কথা বলে !
: তাই , কিসে পড়ো তুমি ?
: এবার এ লেভেল কমপ্লিট করেছি !
: গুড ।
অপার তুমি ওদিকে যাও সবাই ওদিকে আছে !
অপার মাহির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, নাইস টু মিট ইউ। বাই
মাহি অবাক হয়ে হাত ধরলো অপারের !
নিঝুম মুখ টিপে হাসছে। রুবা তুমি ও যাও সবাই ডাইনিং এ আছে।
মাহি এদিকে শোন ?
: কিছু বলবি?
: হু বলেই নিঝুম হেসে দিল।
: কি ব্যাপার?
: এই অপার তোর প্রেমে পড়েছে , বলেই নিঝুম হেসে দিল!
সিরিয়াসলি , মাহি বিশ্বাস কর!
একদম লাভ এট ফাস্ট সাইট !
: কি বলছিস পাগলের মত ?
: হ্যাঁ রে এই টিন‌এজার তোর জন্য পাগল হয়ে গেছে! আমি রুবাকে দেখিয়ে বললাম , তোর ওয়াইফ !
বলর, হু কেয়ারস! হা হা!
মাহি আমিও এই বয়সেই তোর প্রেমে পড়েছিলাম । আজ অপার কে দেখে আমার নিজের কথাই মনে পড়ে গেল! তোর মাঝে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে রে!
নিঝুম কি হচ্ছে কি ?
দেখ এই মেয়ে কি করে , তোর জন্য!
রুবা শুনলে কি হবে আমি চিন্তা করছি মাহি ? হাসছে নিঝুম।
অপারের সব কথা বলল মাহি কে নিঝুম!
এখন মাহি হেসে গড়িয়ে পড়ছে!
নিঝুম প্লিজ তুই মেয়ে কে আটকা , বয়স টা কিন্তু ডেঞ্জারাস !
অপেক্ষা কর দেখ না কি হয় , নিঝুম বলল!
একদম না তুই বুঝিয়ে বল ওকে !

মাহি একটা কথা বলব, আজ তোকে আর রুবাকে দেখে , রুবার জন্য তোর কেয়ারিং ফিলিংস দেখে আমার কি মনে হলো জানিস, আসলেই একজন মানুষ সবার লাগে , একজন ভালোবাসা র মানুষ যত টা না লাগে, আমাকে কেয়ার করে এমন কাউকে সত্যি খুব লাগে!
আমার ও ইচ্ছে হচ্ছে , কেউ আমার জন্য ঝড় মাথায় নিয়ে দৌড়ে আমার কাছে আসুক , বিষয়টা নিয়ে সুখে ভাসতে!
রুবা তোর জন্য পুলে নামেনি কারণ তুই বারন করেছিস , সে তোর সঙ্গে তর্কে যায় নি কিংবা তোকে ইগনোর করে নেমে যায় নি ! তোর ইচ্ছে টাকে সন্মান করেছে ! এরকম মেয়ে কে ই তো ভালোবাসা যায় কোন শর্ত ছাড়া!
আমি তো সব সময় আমার ইচ্ছে টা কে তোর উপর চাপিয়ে দিতাম নয়তো তর্ক করতাম !
মনে আছে তুই এক বার্থডে তে আড়ং থেকে একটা নোজপিন দিয়েছিলি ,আমার নোজপিন পছন্দ না তাই আজ‌ও এই নোজপিন টা ফেলে রাখছি , নাক ফোঁড়ানো র কথা চিন্তাও করিনি ! কিন্তু দেখ রুবা তোর জন্য কি করলো , সব ই শুনেছি ছোট মামির কাছ থেকে ।
তোর অনুমতি না নিয়ে সে বাসা থেকে পিঙ্ক সিটি পর্যন্ত আসে না আর আমি তোর বারন শর্তেও বান্ধবী দের সঙ্গে কখনো কক্সবাজার , কখনো থাইল্যান্ড চলে গেছি । তোর অনুভূতি র কথা চিন্তা ও করিনি!
তুই ওকে ভালো না বেসে কিভাবে থাকবি বল ?
এভাবে বলিস না নিঝুম তুই ও খুব ভালো মেয়ে। যার সঙ্গে জীবন বাঁধবি ও খুব সুখী হবে ।
হাসলো নিঝুম!‌ আজ আমি ও চাই কারো সঙ্গে জীবন টা এগিয়ে নিতে রে ! তোদের মত আপুর মত সুখী হতে !
আমার বিশ্বাস তুই খুব তাড়াতাড়ি কাউকে পাবি যে তোর জন্য সব করতে পারে !
তাই বলছিস ?
হুঁ দেখে নিস !
তুই রুবার জন্য সব করতে পারিস মাহি ?
মাহি হেসে মাথা নেড়ে বলল, পারি ! তোকে মিথ্যে বলব না, সত্যি রে সব করতে পারি !
আমি ছাড়া ওর আর কে আছে বল ? ও ভাইয়ার জন্য যখন কাঁদে, এই আমার বুকেই কাঁদে ! ও পাগলামী করে কত ছেলে মানুষী করে আমি বকছি আবার আমিই ওকে প্রশ্রয় দিচ্ছি ! পৃথিবীতে একা থাকার চেয়ে কষ্টের কিছু নেই , রুবা তো আদতে একা আমি ওর একাকীত্ব টা কে দূর করে দিচ্ছি! তা ই দেখিস না আমি কাজ ছাড়া একটা সেকেন্ড ও বাহিরে থাকি না ! যেখানে থাকি আমার আশেপাশে রাখি!
খুব ভালোবাসিস ওকে ?
ভালোবাসা পেতে হলে তো ভালোবাসতেই হবে নিঝুম।
আমি এখন ওর ভালোবাসা টা চাই পুরোপুরি চাই !
ঠিক বলেছিস ভালোবাসা , কেয়ারিং দিলেই ফেরত পাওয়া যায়!
আমি ও এখন এভাবেই নিজেকে গুছিয়ে নিব রে মাহি !
আমি মন থেকে ই চাই তুই খুব ভালো থাক নিঝুম।
এখন থেকে থাকব !

চল যাই লাঞ্চ রেডি , নিঝুম বলল!
: চল।
: মাহি ঐ যে তোর অপার তোকে দেখছে!
: প্লিজ নিঝুম মেয়ে টাকে বুঝিয়ে শান্ত কর !
: এত সহজে নিভে যাওয়ার আগুন না এই মেয়ে বলে নিঝুম হাসছে।
মাহি রুবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ! ওর খুব ইচ্ছে করছে রুবাকে একটু জড়িয়ে ধরতে কোন কারণ ছাড়াই!

নিঝুম ডিএস‌এল‌আর নিয়ে এসে বলল, রুবা মাহি তোরা দাঁড়া তোদের একটা ছবি তুলে দেই !
মাহি বলল আসো রুবা !
রুবা দাঁড়ালো পাশে !
মাহি তুই ওকে ধর একটু আরে ভাই তোর বিয়ে করা ব‌উ ধরলে কেউ মাইন্ড করবে না ! বলেই নিঝুম সহ সবাই হেসে উঠল!

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here