যখন_দুজনে_একা ৪০ পর্ব

0
665

#যখন_দুজনে_একা

৪০ পর্ব

আজ রুবার জন্মদিন!
বিয়ের আগে তার মা বাবা, রুবার বন্ধুদের নিয়ে সে সেলিব্রেট করতো। বিয়ের পর সে এই দিন সকালে শিহাব এর সঙ্গে বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করতে যেত। তারপর রাতে সাফিয়া বেগম সব আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বাসায় পার্টি দিতেন যেন মেয়েটা এই দিনে নিজের বাবা মায়ের অনুপস্থিতির কষ্ট টা ভুলে থাকে।
কিন্তু এবার মাহির কোন খবর নেই। তিনি ভেবেছিলেন রাতে হয়তো রুবাকে ফোন দিয়ে উইশ করেছে! ওর আর রুবার বিয়ের পর এটাই রুবার প্রথম জন্মদিন । সকালে ওরা নিজেদের মত টাইম ঠিক করে নিয়েছে কখন কবরস্থানে যাবে ? কিন্তু এখন তিনি রুবার সঙ্গে কথা বলে জানলেন , মাহির কোন খবরই নেই !
মাহির মোবাইল এ চার্জ নেই, তাকে যে ফোন করে খবর টা বলবেন সেই উপায় ও নেই।
তিনি একবার নিঝুম কে ফোন দিলেন , নিঝুম ফোন ধরলো না !
এখন রুবাকে কার সঙ্গে কবর জিয়ারত করতে পাঠাবেন সেই চিন্তা করছেন! মেয়ে টা মন খারাপ করবে আজ না যেতে পারলে । বাপ মা মরা মেয়ে আজকের দিনে মনটা খারাপ করে ঘুরবে !
মাহির অপেক্ষা করতে করতে দুপুর হয়ে গেল !
রুবাকে ডেকে বললেন,
: রুবা মা চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি!
: থাক মা আজকে না যাই !
: না না থাকবে কেন , আমি আছি না আমি নিয়ে যাচ্ছি তুমি চলো তো রেডি হয়ে আসো! আমার‌ই ভুল হয়েছে মাহিকে বলা উচিত ছিল ও তো জানে না তুমি কি করো এই দিনে!
: সে জন্যই বলছি মা থাক এবার।
: থাকবে না যাও রেডি হ‌ও!

রুবা তার শ্বাশুড়ি র সঙ্গে বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করে আসলো ! আসার সময় কাঁদছিল, সাফিয়া বেগম ওকে আদর করে জড়িয়ে ধরে রাখলেন!
ওর বারবার মনে হচ্ছিল গত জন্মদিনে শিহাব ওর সঙ্গে গিয়েছিল এবার শিহাব ও সৃত্মি হয়ে গেছে । বাবা মায়ের তো একটা কবর আছে শিহাবের তো তাও নেই। কোন সমুদ্রে প্ল্যান টা হারিয়ে গেছে । ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। তার প্রিয়জন রা তাকে ছেড়ে কেন চলে যায় ?
বাসায় এসে রুবা নিজের ঘরে শুয়ে অনেকক্ষণ কাঁদলো !
তার শ্বাশুড়ি ওকে এসে স্বান্তনা দিয়ে গেল।
সাফিয়া বেগম এর মাহির উপর খুব রাগ লাগছে। নাইট শিফট থাকলে সকালে আসে বাসায় তারপর যায় আবার , কিন্তু আজ তার কোন খবর নেই ! মোবাইল এ চার্জ নেই পাওয়ার ব্যাঙ্ক বাসায় রেখে গেছে এত উদাসীন তো মাহি কখনো হয় না!

তিনি বিকেলের দিকে এক রকম জোর করে রুবাকে তুললেন। বললেন, আত্মীয়-স্বজন আসবে তুমি এভাবে শুয়ে থাকলে হবে , তোমার বিশেষ দিন উপলক্ষেই তো আসছে সবাই তাই না ?সাফিয়া বেগম নিজে হাতে রুবাকে,
একটা লাল জমিনের নীল পাড়ের পিওর সিল্ক শাড়ি পড়ালেন , নিজে হাতে গয়না পড়িয়ে দিলেন ! বুয়াকে দিয়ে বাসার পিছনের কাঠগোলাপ গাছের ফুল এনে মালার মত বানিয়ে খোঁপায় বেঁধে দিলেন!
: বুঝলে রুবা ঐ দিন টিভিতে একটা গানের অনুষ্ঠানে গায়িকা কে দেখলাম এভাবে সেজেছে , তখন‌ই মনে হলো রুবাকে এভাবে সাজলে আরো সুন্দর লাগবে।
: ছোটবেলায় আমাকে আম্মা জন্মদিনে র দিন সাজিয়ে দিত !
: আর বড় বেলায় শ্বাশুড়ি সাজিয়ে দিচ্ছে , বলে হাসলেন সাফিয়া বেগম। আমার জন্মদিনে র দিন আমিও এরকম নতুন শাড়ি পড়ে আমার শ্বাশুড়ি , শ্বশুর বাসার সব মুরুব্বি দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতাম। তোমার শ্বশুরের ফ্যামিলি এত শিক্ষিত হলে কি হবে এসব বিষয়ে খুব কড়া ছিল। বিশেষ, বিশেষ দিনে মুরুব্বি দের সালাম করা দোয়া নিতেই হবে। আমি তো এখনো তোমার শ্বশুর কে ঈদে, জন্মদিনে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি । আজকাল তো এই জিনিস কেউ মেনে চলে না।

: মা আমি কিন্তু করি আপনাকে আর বাবাকে সালাম !

: তুমি তো আমার লক্ষী মেয়ে এখন যাও মেকআপ দাও তোমার মত সাজো! আজ আমার ছেলে আসলে দেখো আমি কি করি ওর!

: মা প্লিজ আপনি ওকে কিছু বলবেন না , নিশ্চয়ই সিরিয়াস কিছু তে আটকে গেছে। ও তো খালি খালি বাসার বাহিরে থাকার মানুষ না!

: আমার মেজাজ খারাপ ওর ফোনে চার্জ নাই কেন এতটা কেয়ারলেস সে কিভাবে হয়?

: হয় মা কখনো কখনো এমন হয়!

: তুমি ওর সঙ্গে কথা বলবে না আসলে, ঠিক আছে রুবা!

: আচ্ছা ঠিক আছে মা কথা বলব না!

: এখন আসো মেহমান রা আসলো বলে, আমি রিয়ার শ্বশুর বাড়ির সবাই কে আসতে বলেছি, ভাবলাম নতুন আত্মীয় বাদ দেয়াটা ঠিক হবে না কি বলো!

: আমার জন্মদিন বলেননি তো আবার সবাই কে , তাহলে লজ্জা লাগবে আমার মা !
: না বলি নাই ! আসলে পরে জানবে ! আমি ওদিকে গেলাম তুমি আসো রুবা ।
মা চলে গেলে রুবা সাজলো কপালে লাল ছোট্ট একটা টিপ দিল! মনে মনে বলল, ডাক্তার সাহেব আপনি এভাবে আমার জন্মদিনে র দিন ব্যস্ত হয়ে গেলেন! আপনাকে এর জন্য জরিমানা করা হবে !

সন্ধ্যা হতে হতে ই গেস্ট রা চলে আসছে সবাই! মাহির কাজিন রা সব আগেই চলে আসছে। বাসা একে বারে লোকজনে ভরা! গল্প , হাসা-হাসিতে বাসা সরগরম।
রুবার অস্থির লাগছে এখন । চব্বিশ ঘন্টা হয়ে গেল মাহি বাসার বাহিরে, এর মাঝে রাতে কথা হয়েছে ঘুমানোর আগে কিন্তু সকালে ওর মোবাইল বন্ধ বলে আর কথা হয়নি । ল্যান্ড ফোনে যখন কল দিসে ওদের কাউকে না চেয়েই বুয়াকে খবর টা দিয়েই রেখে দিসে ফোন, এত ব্যস্ত তিনি। রুবার খুব অভিমান হচ্ছে।
সত্যি সত্যি আজ আসলে কথা বলবে না !

নিঝুম ,রিয়া ওর মা বাবা আসলো কেবল । রিয়া রুবাকে দেখে বলল,
: তুমি তো লাল পরী হয়ে গেছো রুবা! চমৎকার লাগছে।
: নিঝুম বলল তোমার জন্মদিন আর মাহি এখনো আসে নাই ! আমার সঙ্গে দেখা হয়নি আজ! দাঁড়াও দেখি কোথায় আছে!
: আপু ও আসছে হয়তো আমি অস্থির হচ্ছি না , তুমি আসো বসো তো।
একটু পর নিঝুম এসে বলল,
: চিন্তা করো না অন দ্য ওয়েতে মাহি! হসপিটালে ইমার্জেন্সি ছিল তাই দেরি হচ্ছে। রিয়াদ ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে আমার, তিনি ই বললেন!
: রুবা হাসলো ।
সাজ্জাদ এর ফ্যামিলি আসছে। অপার কে দেখে রুবা খুব খুশি হলো।
নিঝুম এর খুব হাসি পাচ্ছে। দেখা যাক আজ এই পাগল মেয়ে কি বলে আর কি করে ?
মাহি তোর জন্য রুবা আর অপার অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি চলে আয়!

গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জ এ একটা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি তে আগুন লেগেছে ঐ রোগীদের নিয়েই রাত থেকে আজ সারাদিন ব্যস্ত ছিল পুরো সার্জারি ওয়ার্ড !
গত এক ঘন্টা ধরে জ্যাম ঠেলে ঠেলে আসছে মাহি। রুবার সঙ্গে কথা হয়নি রাতের পর থেকে, সারাদিন ব্যস্ত ছিল কিন্তু এখন খারাপ লাগছে । ও নিশ্চয়ই অস্থির হচ্ছে ।
রুবা, ডাক্তারের ব‌উ হলে অনেক সহ্য করতে হয় অভ্যাস করো।
মাহি বাসার গেটে ঢুকে এত গাড়ি দেখে অবাক! হঠাৎ আত্মীয়-স্বজন সব বাসায় কেন?
ড্রয়িং রুমে সাজ্জাদ ভাই এর সঙ্গে দেখা ! বাবা সবার সঙ্গে গল্প করছে।
মাহি সাজ্জাদ এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলল,
:ভাই চব্বিশ ঘন্টা পর আসলাম একটু ফ্রেশ হয়ে আসি উপর থেকে ।
: হ্যাঁ শিওর মাহি আমরাও কেবল আসলাম।
মাহি উপরে এসে আরো অবাক সব আত্মীয় স্বজন বাসায় !
মাহিকে দেখে তানহা বলে উঠলো,
: ঐ যে মাহি ভাইয়া চলে আসছে!
সবাই মাহির দিকে তাকালো ।
বড় মামি বলল, আজকে এত দেরী করে আসলে মাহি ?
: মামি ইমার্জেন্সি ছিল!
: তাই বলে আজকের দিনে ক্ষমা পাবে না , তারানা মামি বলল!
মাহি রুবাকে দেখার জন্য লিভিং রুমে ঢুকে দেখে ও খাবার টেবিলে কি যেন রেডি করছে ।
রুবাকে দেখে ও পুরো হতভম্ব হয়ে গেল , লাল শাড়ি গয়না পড়া, খোঁপা য় তার প্রিয় ফুল সব মিলিয়ে রুবাকে দেখে সে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে রইল ! পুরো ঘর আলো করে রুবা দাঁড়িয়ে আছে ।
মাহি সবার সামনে দাঁড়িয়ে শুধু রুবাকে দেখছে। সারাদিন পর এসে রুবাকে দেখলে ওর মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায় কিন্তু এভাবে রুবাকে দেখে সে কথা হারিয়ে ফেলছে!
রিয়া বলে উঠলো, মাহি এভাবে দেখিস না নজর লেগে যাবে ! সবাই হেসে দিল !
মাহি লজ্জা পেয়ে বলল, রিয়া আপু তুমি কি যে বলো এসব!
সাফিয়া বেগম ঘরে ঢুকে ছেলে কে দেখে বললেন মাহি ,
: আমি তোমার উপর খুব রেগে আছি , তোমার ফোন এ চার্জ থাকে না কিভাবে! পাওয়ার ব্যাংক ও বাসায় রেখে যাও!
: মা আমার হুশ ছিল না আজ ! সরি।
: ব‌উ এর জন্মদিনে র দিন হুঁশ না থাকলে চলবে , রিয়া বলল!
মাহি আকাশ থেকে পড়ল ,আজ রুবার জন্মদিন ! মাহি কপালে হাত দিয়ে তাকালো রুবার দিকে। রুবা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।
সরি রুবা আমি তারিখ টা জানতাম না !
এখন কি বলব মা বলো তোমরা ? আমাকে কেউ না বললে কিভাবে জানব ?
: ঠিক আছে এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো , মা বলল!
মাহি রুবার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো , সরি রুবা , প্লিজ সরি!
: ঠিক আছে ইটস ওকে , যাও ফ্রেশ হয়ে এসো!রুবার কানে কানে বলল,
: তুমি একটু রুমে আসো প্লিজ।
: সেটা সম্ভব না একাই রেডি হ‌ও যাও!
: তাহলে কিন্তু হাত ধরে টেনে নিয়ে যাব !
: তুমি এসব কিছুই করবে না ! সারাদিন পর আসছো এখন কোন সীন করবে না !
ঠিক আছে আমি অপেক্ষা করছি রুমে , আসা না আসা তোমার ইচ্ছা রুবা , বলে মাহি রুমের দিকে চলে গেল!

নিঝুম আর অপার গল্প করছিল আর মাহিকে দেখছিল!
: অপার তোমার ক্রাশ তার ওয়াইফের বার্থডে যে আজ, জানতো না ! কেমন কেয়ারলেস দেখলে!
: আপু আমার এই টাইপের এলোমেলো, কেয়ারলেস ছেলে ই বেশি ভালো লাগে , লুতুপুত টাইপ ছেলেদের দেখলে মনে হয় এক্টিং করছে!
: নিঝুম ওর কথা শুনে কি বলবে ভাষা খুঁজে পায় না।
: আপু উনাকে এভাবে টায়ার্ড লুকেও ভালো লাগছে ! চশমা পড়লে উনাকে আরো সুইট লাগে!
: অপার তুমি তো সত্যিই পাগল হয়ে গেছো!
: আমি ঐ দিনের পর থেকে উনাকে এফবি তে সারাক্ষণ ফলো করছি !
: তাই ?
: একদম !
: এসব কথা আর কাউকে বলো না , ও তো ম্যারেড তোমার জন্য ওর ম্যারেড লাইফে ঝামেলা হলে কি হবে বলো?
: তখন যদি উনাকে আমি বিয়ে করি কেমন হবে আপু?
: নিঝুম আবাক হয়ে অপারের দিকে তাকালো তারপর হো হো করে হেসে উঠলো।
: তুমি এত দূর চিন্তা করে ফেলেছো অপার?
: একচুয়েলি না আপু এখনও চিন্তা করিনি , বাট রিয়েলি আই লাভ হিম!
: নিঝুম হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অপারের দিকে।

মাহি ওয়াস রুমে ঢুকে ঝটপট গোসল করে বের হলো ! নিজের উপর রাগ লাগছে , রুবার বার্থডে না জানা টা খুব অপরাধ হয়ে গেল। আগে র বার্থডে গুলো তে রুবাকে গিফট দিসে সে কিন্তু তারিখ খেয়াল রাখতে হয়নি । বাসায় মায়ের তাক ঝাম দেখে, আগের দিন রাতে ভাইয়া কেক কাটতো ওসব দেখেই মনে পড়তো।
খুব আফসোস হচ্ছে ওর। কত কষ্ট পেয়েছে রুবা আল্লাহ জানে!
মাহি কুদরত ভাইকে কল করলো,
: আপনি কোথায়?
: বাসার নিচে ভাইয়া!
: আমার গাড়ি নিয়ে মহাখালী তিতুমীর কলেজের সামনে যাবেন তাড়াতাড়ি , আসরাফ কোথায় ওকে সাথে নেন! একজন একটা জিনিস দিবে তাড়াতাড়ি নিয়ে আসেন বাসায়!
ঐ লোকের নাম্বার টা এস‌এম‌এস করছি, আমার সঙ্গে কথা হয়েছে আপনি গিয়ে ফোন দিলেই আসবে!
আর জিনিস নিয়ে এসে ফোন দিবেন আমাকে, সব নিয়ে উপরে এসে হাজির হবেন না মনে থাকবে তো ?
: জ্বি ভাইয়া মনে থাকবে!
: তাড়াতাড়ি বের হন।
মাহি ড্রেস কি পড়বে চিন্তা করে পাঞ্জাবি বের করলো ! রুবা একদিন বলেছে ও শাড়ি পড়লে তবেই পাঞ্জাবি পড়া যাবে!
তাহলে তো আজকে পড়াই যায়!
দরজায় নক হচ্ছে , আসছে বার্থডে গার্ল !
: আসো ভেতরে !
: ফরিদা বুয়া শরবত নিয়ে ঢুকছে!
: মাহি হাসলো কাকে ভাবলাম কে আসছে?
: বুয়া তোমাকে শরবত দিয়ে কে পাঠিয়েছে ?
: ভাবি !
: আচ্ছা যাও!
: মনে মনে বলল, রুবা তুমি এই ফান টা করলা নিজে না এসে বুয়াকে পাঠালে , আমার সঙ্গে এই ব্যবহার !

মাহি রেডি হয়ে লিভিং রুমে আসলো! রুবা ওকে দেখে ঠোঁট টিপে হাসছে !
মাহি চোখ রাঙানি দিল ।
রুবা তানহা আর রিয়া আপু র সঙ্গে গল্প করছে।
অপার নিঝুম এর কাছে গিয়ে বসলো আবার।
আপু উনি কি সব সময় এমন এলিগ্যান্ট লুকে থাকে?
: কে মাহি ? হুঁ।
: দেখেন শর্ট হোয়াইট পাঞ্জাবি তে কত এলিগ্যান্ট লাগছে। পাঞ্জাবি র হাত ফোল্ড করে রাখলে কাউকে এতটা এট্রাকক্টিভ লাগে আগে দেখিনি।
: ও এমনই খুব ফিটফাট!
: প্রথম যেদিন দেখলাম চশমা ছিল না চোখে সানগ্লাস ছিল আজ চশমা পড়া দেখে আমি আরো ফিদা হয়ে যাচ্ছি। যাই আপু কথা বলে আসি !
: যাও !

অপার মাহির কাছে এসে বসলো!
: কেমন আছেন?
: ও অপার , ভালো আছি তুমি কেমন আছো খেয়াল ই করিনি , মাহি বলল!
: আমি দূর থেকে আপনাকে খেয়াল করছিলাম !
: কখন এসেছো?
: সাজ্জাদ ভাইয়াদের সঙ্গে। আমার পেরেন্টস ও এসেছে।
: তাই আমি দেখা করে আসি দাঁড়াও!
: উনারা সবাই নিচে বসেছে।
: তো তুমি এখন কি নিয়ে পড়াশোনা করবে ডিসিশন নিলে?
: আগে অন্য কিছু ভেবেছিলাম এখন মনে হচ্ছে আপনার মত ডক্টর হলে কেমন হবে?
: দারুন হবে, অনেক পড়াশোনা করতে হবে!
: আচ্ছা ভাইয়া রিয়া ভাবি আর সাজ্জাদ ভাইয়ার গায়ে হলুদ এর প্রোগ্রাম এ আপনার সঙ্গে একটা ডান্স পার্ফম করলে কেমন হবে বলেন তো?
: মাহি বিষম খাওয়ার মত অবস্থা , তারপর হেসে বলল, অপার আমি তো নাচতে পারি না ।
: আমি দেখিয়ে দিব , অপার বলল!
: শোন ঐ যে আমার বউ কে দেখছো না , দেখতে সুইট হলে কি হবে খুব কড়া আমি তোমার সঙ্গে ডান্স করলে আমাকে মেরেই ফেলবে ডাল ঘুটনী দিয়ে পিটিয়ে!
: ডাল ঘুটনী কি ?
: এটা ওর বিরাট বড় ওয়েপন।তুমি সবার সঙ্গে কথা বলো আমি ঐ দিক থেকে আসি !‌ বলে মাহি উঠে গেল।
নিঝুম হাসছে ওর অবস্থা দেখে।

মাহি এই আধ পাগল মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে চায়।
রুবা খুব রেগে আছে হয়তো সারাদিন , একবার ও কাছে আসলো না এখন‌ও ।
মাহি ওকে ঠিক ই মানিয়ে ফেলবে কিন্তু নিজের‌ই খারাপ লাগছে ওর।
সবাই ডিনার করা শুরু করেছে।
রুবা ওর কাছে এসে বলল, খাবে না ?
: না খাব না এখন, তোমার সঙ্গে পরে খাব।
: খেয়ে নিতে পারতে সারাদিন তো খাওনি।
: বললাম না তোমার সঙ্গে খাব।
: ঠিক আছে আমরা পরেই খাব।
: আমি নিচে গেলাম বলে মাহি বাকি গেস্ট দের সঙ্গে দেখা করতে গেলো।

নিচে সবার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করে মাহি উঠে এলো উপরে । পোর্চের ছাদে বসতে গিয়ে কানে এলো নিঝুম ফোনে কথা বলছে কারো সঙ্গে।
সে পিছিয়ে আসতে নিল যেই নিঝুম দেখে ডাক দিল!
: তুই কথা বল আমি রুমে যাচ্ছি !
: কথা বলা শেষ মাহি এখানে ই বসতে পারিস!
: মাহি বসলো ।
: আমরা এখানে কত গল্প করতাম তাই না ?
: হুঁ।
: তুই রুবার জন্মদিন টা জানতি না!
: না তারিখ খেয়াল ছিলনা !
: ও নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে।
: আমি সরি বললেই ঠিক হয়ে যাবে ! মাহি সিগারেট ধরালো !
: খালাম্মা রুবার জন্য সব কিছু করতে পারে !
: মা আর ওর রিলেশন টা অন্যরকম !
: রুবার মধ্যে ভালোবাসা আদায় করে নেয়ার মত একটা ব্যাপার আছে! ও কিভাবে যেন সবার আদর , ভালোবাসা নিজের মধ্যে টেনে নেয়। শুধু সুন্দর বলে কিন্তু না খালাম্মাও তো এত সুন্দর , খালাম্মা কে সবাই কত ভয় পায় কিন্তু রুবার সঙ্গে খালাম্মা কত সাধারণ । এত আদর , প্রশ্রয় তিনি রুবাকে দেন । খুব হিংসে হয় রে মাহি !
: আমার‌ খুব ভালো লাগে ওদের দেখলে।
: তোর ভালোবাসা ও তো কত সহজে পেয়ে গেল ও তাই না মাহি?
মাহি চুপ করে রইলো।

: অপার তোর প্রেমে একেবারে হাবুডুবু খাচ্ছে!
: ওফফ নিঝুম ব্যাপার টা আমার খুব অস্বস্তি দিচ্ছে। কি করি বল তো!‌ রিয়া আপুকে বলা দরকার!
: ও কি করবে বল, আজকালকার মেয়ে কারো কথা শুনে ?
: আমাকে সরাসরি কিছু বললে তখন আমি ওকে বুঝিয়ে বলব , মাহি বলল!
: ও তো তোকে বিয়ের করার প্ল্যান ও করে ফেলছে!
: মাহি হাসছে , আধা পাগল মেয়ে। আমার সঙ্গে ডান্স পার্ফম করতে চাইছে গায়ে হলুদ এ চিন্তা কর !
দুজনেই হেসে উঠলো!

হঠাৎ নিঝুম বলে উঠলো,
: মাহি তোরা যে বেবি নেয়ার প্ল্যান করছিস রুবার আগের প্রেগন্যান্সি র সময় যে কমপ্লিকেসি টা হয়েছিল, রুবার একটা ভালো ট্রিটমেন্ট করানো দরকার না , এবার যেন সব ঠিক থাকে ?
: মাহি একটু থমকে গেল নিঝুমের কথা শুনে ! সিগারেট ফেলে দিয়ে বলল, সিঙ্গাপুর যাচ্চি রুবার ও চেক‌আপ করাব ! তারপর দেখা যাক কি হয়?
: রুবা দেখলাম খুব চাইছে একটা বেবি , নিঝুম বলল!
: ও বললেই তো হবে না , আমার কাছে ওর ফিটনেস টা আগে। বাচ্চা নেয়ার জন্য সারাজীবন পরে আছে।
: তোদের যখন বেবি হবে আমি ওটিতে থাকব এবং প্রথমেই আমি কোলে নিব বুঝলি !
: আচ্ছা ঠিক আছে থাকিস ওটিতে ! মাহি হাসলো।

: নিয়াজের সঙ্গে কথা হয় তোর , নিঝুম বলল?
: না তো কেন?
: না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম, আমার সঙ্গে ওর খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে । খুব ভালো ছেলে! আড় চোখে নিঝুম মাহিকে দেখলো কথাটা বলে!
: ও খুব ভালো সেটা আমি জানি ! তোকে পছন্দ করতো!
: হয়তো এখনো করে , নিঝুম বলল।
: তুই কি পছন্দ করিস নিঝুম ?
: নাহ্ সেরকম কিছু না !
: সেরকম কিছু হলে আমাকে জানাবি না?
: নিঝুম হেসে বলল, ঠিক আছে তোকে জানাব!
মাহির ফোনে ফোন এলো ,
: বল কুদরত ভাই।
: ঠিক আছে নিচে রাখেন , আমি ডাকব পরে!
নিঝুম তুই তো ডিনার করিস নাই ! খেয়ে নে !
তুই খেয়েছিস মাহি?
: আমি আর রুবা পরে খাব !
: ও আচ্ছা আমি তাহলে ওদিকে যাই , নিঝুম উঠে গেল!
: আচ্ছা !
মাহি বসে রইল পোর্চের উপর!

সাফিয়া বেগম হঠাৎ মাহিকে অবাক করে দিয়ে ওর কাছে এসে হাজির হলেন। মাহি,
: মা তুমি এখানে !
: তোমার সঙ্গে কথা ছিল আমার!
: বলো মা কি বলবে !
: তুমি সত্যিই আজ খুব খারাপ কাজ করেছো, ঠিক আছে তুমি রুবার বার্থডে জানতে না কিন্তু সারাদিনে একটা ফোন করবে না বাসায় ! আমার বা রুবার সঙ্গে কথা বলবে না ?
: মা কি যে ব্যস্ততায় ছিলাম তোমাকে বোঝাতে পারবো না!
: থাক আমাকে বোঝানোর দরকার নেই , রুবা তার জন্মদিনে বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করতে যায়, যত দিন শিহাব ছিল ও নিয়ে গেছে আজ তোমার খবর নেই কি মন খারাপ মেয়ে টার সে তো যাবেই না। অগত্যা আমি জোর করে নিয়ে গেলাম। আসার সময় কান্নাকাটি করেছে। আমার মনে হলো শুধু কি বাবা মায়ের জন্য শিহাবের জন্যে ও খারাপ লাগছিল ওর।
: সরি মা আমি জানতাম যদি তাহলে এই কাজ কখনো করতাম না ।
: আর এখন কি করছো, ওর পাশে না থেকে এখানে বসে আছো !
: যাচ্ছি মা !
: ও খুব ম্যানেজেবল বলেই ওকে সব সময় তুমি তোমার কনফিডেন্ট এর মধ্যে নিয়ে নিবে এটা যেন না হয় ।
: সেরকম কিছু না!
: এখন যাও ওকে নিয়ে কেক কাটো !
: তুমি যাও আমি আসছি।
মা চলে যাওয়ার পর মাহির সত্যি সত্যি খুব মন খারাপ হলো। রুবাকে এতটা কষ্ট দেয়া ঠিক হয়নি ওর!

লিভিং রুমে এসে দেখে মা কেক রেডি করে রেখেছে । মাহি কেক এর পাশে মোমবাতি গুলো জ্বালালো। রুবাকে হাতে ধরে কেক কাটলো । কেক খাইয়ে দিল । রুবার কানে কানে বলল, হ্যাপি বার্থডে ! তোমাকে একটা লাল গোলাপের মত লাগছে।
রুবা হেসে থেঙ্কস বলল !
সাফিয়া বেগম মাহি দিকে একটা ছোট্ট জুয়েলারি বক্স এগিয়ে দিয়ে বললেন ,
: তোমার তো বার্থডেই খেয়াল নেই গিফট ও না এটা পড়িয়ে দাও ওকে!
: তুমি দাও মা, আমার গিফট আমি দিব !
: সেটা যখন দেয়ার তখন দিও এখন যা বলছি শোন !
: মাহি রুবাকে মায়ের দেয়া লকেট সহ চেইন পড়িয়ে দিল।
রুবা তার শ্বাশুড়ি সহ সব মুরুব্বি দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো ।
রিয়া আজকেও সেদিনের মত মাহি কে সালাম করতে হবে বলে রুবাকে ক্ষ্যাপানো শুরু করলো।
: সাফিয়া বেগম বললেন, সমস্যা কি সালাম করলে ,আমি তো মাহির বাবাকে আজ‌ও ঈদে, জন্মদিনে সালাম করি তোরা সব বিষয়কে হাসি তামাশা র জিনিস বানিয়ে ফেলিস! রুবা যাও মাহিকে সালাম করো !
: রুবা সবার সামনেই মাহিকে সালাম করলো ওর খুব লজ্জা লাগছিল তবুও করলো।
: আজ মাহি পালাতে পারেনি মায়ের ভয়েই, রুবা সামনে বসে যখন সালাম করলো ওকে শুধু রুবার গালে হাত ছুঁয়ে দিল সে।

অপার এই দৃশ্য দেখে নিঝুম কে বলল,
: আপু কি সুইট রিচুয়েল তাই না ?
: তুমি কাউকে কখনো এভাবে সালাম করো অপার ?
: ঈদের দিন মাম্মি কে আর পাপাকে তাও সালামির জন্য আর কাউকে না !
: কিন্তু এই বাসায় এরকম অনেক কিছুই কোন কিছু পাওয়ার আশা ছাড়াই হয় ।
: আই লাইক ইট আপু।

তারানা মামি মাহি কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
: মাহি আজ তোমার ভায়োলিন এর একটা সুর শুনিয়ে দাও সবাই কে সেলিব্রেশন টা পার্ফেক্ট হয় তাহলে।
মামি কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে কাজিন গুলো সব হৈচৈ করে উঠলো শোনাতেই হবে ।
রিয়া বলল,
: আমি সাজ্জাদ কে তোর ভায়োলিন বাজানোর কথা বলেছি তুই কত সুন্দর বাজাতে পারিস। আজ শুনিয়ে দে ,প্লিজ!
মাহি মনে মনে বলল, কিছু একটা থাক আমি শুধু রুবাকে শুধুই রুবাকে শোনাব !
মা বলল,
: মাহি সবাই যখন বলছে আজ শোনাও তোমার ভায়োলিন রুবার ও খুব ভালো লাগবে ! অনেক দিন তোমার ভায়োলিন শুনিনি।
অগত্যা মাহিকে ভায়োলিন আনতে যেতেই হলো!

অপার খুব এক্সাইটেড হয়ে নিঝুম কে বলল,
: আপু সিরিয়াসলি উনি ভায়োলিন ও বাজাতে পারেন ?
: অনেক সুন্দর গান‌ও গাইতে পারে অপার!
: ও মাই গড, হি ইজ রিয়েলি এ জিনিয়াস । আই লাভ ভায়োলিন আপু।
: নিঝুম মনে মনে বলল, তুমি এখন মাহি পাতা দিয়ে বাঁশি বাজালে সেটাও লাভ করা শুরু করবে মেয়ে। নিঝুম উঠে গেল অপারের পাশ থেকে।

মাহি ভায়োলিন নিয়ে এসে রেডি করলো! তার খুব ইচ্ছে ছিল রাতে রুবাকে ভায়োলিন শোনাবে কিন্তু সব প্ল্যান জলে গেল । এখন সবার সামনে বসে বাজাতে হবে।
মাহি চোখ বন্ধ করে বাজাতে শুরু করলো, নজরুলের খুব সুন্দর একটি রোমান্টিক গান,
“আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন
খুঁজি তারে আমি আপনায়
আমি শুনি যেন তার চরণের ধ্বনি
আমার‌ই পিয়াসী বাসনায়………

এটা তার মায়ের খুব প্রিয় গান । মনে মনে মা কে থেঙ্কস দিল তোমার জন্য মা শুধু তোমার জন্যই আজ রুবা আমার জীবনে!
মাহি গানের শেষ অংশটুকু গেয়ে শোনালো। ওর ভরাট গলায় গান শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল ।
রুবার চোখে পানি চলে আসছে ! মাহির গান ওর চোখ ভিজিয়ে দেয় কেন জানি ।
রুবা মাহির পাশে গিয়ে বসলো । ঘর ভর্তি সবার হৈচৈ এর ভেতরে গলা নামিয়ে বলল, তোমার উপর মন খারাপ করে ছিলাম গান শুনিয়ে সত্যি মনটা ভালো করে দিলে । থেঙ্কস ফর দিস বার্থডে গিফট।
মাহি রুবার হাত ধরে বলল, সরি রুবা !
তোমার বার্থডে গিফট আরো স্প্যাশল ,একটু অপেক্ষা করো!

সবাই যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । মাহি , রুবার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, চলো একটা ছবি তুলি !
: এখন ,রুবা প্রশ্ন করলো?
: হু আসো আমার সঙ্গে।
মাহি রুবার সঙ্গে সেলফি তুলছে।
অপার রুবার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
: আপু আপনার সঙ্গে একটা সেলফি তুলতে চাইছিলাম!
: তোমরা দাড়াও আমি ছবি তুলে দিচ্ছি বলে মাহি ওর কাছ থেকে মোবাইল টা নিল।
: ভাইয়া আপনাদের দুজনের সঙ্গে তুলব একটা সেলফি!
: রুবা বলল, শিওর!
মাহি আর রুবার সঙ্গে সেলফি তুলল অপার।
ভাইয়া আপনি অসাম একজন সিঙ্গার , বিলিভ মি !
: থেঙ্কস অপার।
মাহি সেলফি তোলার সঙ্গে সঙ্গে ,
: আমি নিচে যাচ্ছি রুবা বলে মাহি কেটে পড়লো ওখান থেকে , অপারের কোন ভরসা নেই শুধু মাহির সঙ্গে সেলফি তোলার ইচ্ছা প্রকাশ ও করে ফেলতে পারে ! রুবা বলবে তখন, হ্যাঁ হ্যাঁ তোলো। বোকা একটা মেয়ে ।

সব গেস্ট চলে গেছে ! নিচে সবাই কে বিদায় দিয়ে বাবা মা সহ রুবা আর মাহি উপরে দোতলায় উঠে এলো! রুবা তার শ্বশুর কে সালাম করলো ,
: সব সময় ভালো থাকো রুবা ! তিনি রুবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
রুবা তাঁর শ্বাশুড়ি কে জড়িয়ে ধরে বলল,
: মা আপনার জন্য আজকের দিন টা এত সুন্দর ছিল !
: সাফিয়া বেগম রুবাকে বললেন , তোমাকে আনন্দ পেতে দেখলে আমাদের ও ভালো লাগে রুবা। আর তোমাদের বার্থডে সেলিব্রেট করতে আমার আনন্দ লাগে ।
এখন যাও তুমি আর মাহি ডিনার করে নাও।
সাফিয়া বেগম উঠে যাওয়ার সময় বললেন,
: আমার কথাটা মনে আছে তো , মাহির সঙ্গে কথা বলবে না ঠিক আছে!
: রুবা হেসে বলল, জ্বি মা বলব না !
: মা আমি সরি বলছি তো বারবার, মাহি বলল!
: বলাই উচিত মাহি , বলে সাফিয়া বেগম আর আজগর সাহেব তাদের রুমের দিকে রওনা হলেন।
রুবা হাসছে মাহির দিকে তাকিয়ে !

ডিনার করে মাহি রুবাকে বলল, আমি জাস্ট পাঁচ মিনিটের ভেতরে আসছি তুমি এখানেই থাকো প্লিজ।
: কোথায় যাচ্ছো ?
: পাঁচ মিনিট এখানে থেকো। বলে মাহি নিচে নেমে গেল।
পাঁচ মিনিট পর মাহি নিচ থেকে রুবাকে চিৎকার করে ডেকে উঠলো !
: রুবা নিচে আসো!
রুবা উপরের করিডোর থেকে তাকিয়ে দেখে মাহির হাতে দুটো ম্যাকাও পাখি !
রুবা এত অবাক হলো জোরে চিৎকার দিয়ে , সে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে !
মাহি বলল আস্তে আস্তে রুবা পড়বে !
রুবা বাচ্চাদের মত এক্সাইটেড হয়ে গেল । সে কল্পনাও করিনি মাহি তার জন্য এত বড় সারপ্রাইজ নিয়ে আসবে! অন্য একটা খাঁচায় চারটা টিয়া পাখি !

রুবার চিৎকার শুনে সাফিয়া বেগম ঘর থেকে বের হয়ে এলেন, দোতলা থেকে তিনি দেখলেন , নিচে
রুবা মাহি কে জড়িয়ে ধরে লাফাচ্ছে মাহির দুই হাতে দুটো ম্যাকাও পাখি নিয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে । ওদের দেখে উনার চোখে আনন্দে পানি এসে গেল ! চোখ মুছতে মুছতে তিনি নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।

মাহি রুবাকে বলল, পাখি গুলো নাও হাতে !
: কামড়ে দিবে না তো ?
: না কামড়ে দিবে না !
: রুবা পাখি দুটো হাতে নিল ! মাহি মোবাইল বের করে ছবি তুলছে।
: গিফট পছন্দ হয়েছে রুবা?
: খুব খুব খুব ! তুমি না জানতে না আমার বার্থডে, তাহলে এখন এগুলো কিভাবে আসলো?
: মাহি খাঁচার ভেতর পাখি গুলো কে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল ইচ্ছা থাকলে সব হয় সুইটহার্ট।
: না বলো না এগুলো কোথায় পেলে। আর তুমি জানলে কিভাবে আমার খুব পছন্দ এই পাখি ?
: মাহি বলল তোমার মনে র ভেতরে ঢুকে দেখে আসছি রুবা, হাসছে মাহি !
: শুধু হেঁয়ালি!
: মাহি রুবার হাত ধরে বলল, তুমি ই একদিন বলেছিলে তোমার খুব পছন্দ এই পাখি । তখন ই ঠিক করে রেখেছিলাম তোমাকে এনে দিব! আমার এক পেসেন্ট খোঁজ দিল কোথায় পাব । আজ যখন বাসায় এসে দেখি তোমার বার্থডে তখন মনে হলো আজকেই হাই টাইম এই গিফট দেয়ার। কুদরত ভাই কে পাঠালাম আনার জন্য ।
: থেঙ্কস, আমার বেস্ট বার্থডে গিফট এইটা !
: তুমি হ্যাপি তো , রাগ কমেছে এখন?
মাহি ওর কপালে চুমু দিল !
এখন এগুলো থাকবে কোথায় , রুবা বলল?
আপাতত কুদরত ভাই রাখুক কোথাও তারপর আমাদের রুমের সামনে করিডোরে বড় খাঁচা করে দিলাম , কি বলো?
: ঠিক আছে !

কুদরত ভাই কে ডেকে মাহি খাঁচা গুলো নিয়ে যেতে বলল !কুদরত ভাই রুবা কে বলে উঠলো,
: ভাবি এত সুন্দর এতটুকু পাখি দুইটার দাম ও নিসে এক লাখ বিশ !
: কুদরত ভাই তোমাকে এত কথা বলতে কে বলছে , মাহি বলল!
কুদরত খাঁচা গুলো নিয়ে দৌড় দিল!
দুজন হেঁটে বাসার সামনে র লনে এসে দাঁড়ালো!
: এত দাম এই পাখির কি দরকার ছিল , রুবা বলল ?
: রুবা তোমার আনন্দ টার দাম এর চেয়ে বেশি আমার কাছে ! এটা ফাস্ট ইনস্টলমেন্ট তোমার বার্থডে গিফট এর বাকি আরো আসবে ‌! অপেক্ষা করো!
: আর লাগবে না , রুবা বলল!
মাহি মনে মনে বলল , তুমি আমার জন্য যা প্ল্যান করছো তার কাছে এগুলো কিছু ই না রুবা !

রুবা চলো বাহির থেকে ঘুরে আসি !
:এখন এত রাতে !
: কিছু হবে না চলো , এখন রাস্তা ফাঁকা দুজন একটু এলোমেলো ঘুরি !
: মা কে বলে আসি তুমি গাড়ি বের করো , রুবা বলল!
: মা কে বলতে হবে কেন , আমার সঙ্গে ই তো যাচ্ছো ?
: তারপরও , মা রুমে খুঁজতে আসে যদি !
: এত রাতে মা তোমার আমার রুমে আসে কখনও! আসো তো।

দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল …..

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here