যখন_দুজনে_একা ৪১ পর্ব

0
653

#যখন_দুজনে_একা

৪১ পর্ব

ঘন্টা খানেক দুজনে এলোমেলো ঘুরলো । মাহি ওকে গান গেয়ে শোনালো। রুবার এত ভালো লেগেছে। রুবা জোর করলো বাসায় ফিরে আসার জন্য। আগের রাত ঘুমায়নি মাহি ডিউটি ছিল , অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছিল মাহিকে।
রুবা ফ্রেশ‌আপ হয়ে রুমে ঢুকে দেখে মাহি বেডে শুয়ে ফেসবুকে ছবি আপলোড করছে।
: আজ যখন তুমি ভায়োলিন বাজাচ্ছিলে এত ভালো লাগছিল আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম!
: আর আমার অবস্থা চিন্তা করো আমি গত রাত থেকে এত ব্যস্ত ছিলাম চিন্তা করছিলাম বাসায় গিয়ে একটা হট ওয়াটার শাওয়ার নিয়ে তোমাকে বলব আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও আমি একটা ঘুম দেই ! ওমা বাসায় এসে দেখি এত গেস্ট , ভাবলাম মা এমনি দাওয়াত দিয়েছে । তোমাকে লাল শাড়ি, গয়না ,খোঁপা তে ফুল দেয়া দেখে আমি তো পুরোই ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম কি ব্যাপার এত সাজ কেন! রিয়া আপু যখন বলল, তোমার বার্থডে আমার তো এত মেজাজ খারাপ হল নিজের উপর , কেমন হাজব্যান্ড আমি, তোমার বার্থডে টা জানি না !
: আমার কিন্তু তুমি জানো না, উইস করছো না কেন, তার জন্য মন খারাপ লাগছিল না , আমার খুব অস্থির লাগছিল তোমার সঙ্গে রাতের পর থেকে কথা হচ্ছিল না তাই!
মাহি রুবার হাত ধরলো ,
: সরি রুবা তোমার এই দিনটাতে তোমার পাশে থাকতে পারলাম না। তুমি তোমার বাবা মায়ের কবর জিয়ারত করতে গেলে। সেখানে তোমাকে আমার‌ই নেয়ার কথা ছিল, আমি পারিনি ।
: থাক এই নিয়ে তোমার আর মন খারাপ করতে হবে না আর! এখন আমি তোমার চুল বিলি কেটে দেই তুমি ঘুমাও!
: ডাক্তার দের নিজের জন্মদিনের খবর থাকে না, ব‌উ বাচ্চা র জন্মদিনে থাকা হয় না লাইফ টা এমন ই।
:জানি আমি। ঘুমাও এখন ।
: তোমার সঙ্গে কথা বলতেই ভালো লাগছে বেশি, মাহি বলল।
: তোমার চোখ লাল হয়ে গেছে , ক্লান্তিতে !
: সমস্যা নেই , ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে !
: পাখি গুলো দেখে আমার এত ভালো লেগেছে বলে বোঝাতে পারবো না , থেঙ্কস।
: আমার কষ্ট সার্থক !
এখন এসো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই তুমি ঘুমাও । ঠিক হয়ে শুয়ে পড়ো!
রুবা মাহির মাথায় হাত রাখলো !
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে অপার ইনবক্স করেছে,
” ইউ আর এ পার্ফেক্ট ম্যারিজ মেটেরিয়াল ”
মাহি মোবাইল পাশে রেখে দিয়ে, চোখ বন্ধ করলো !

মাহি একটুক্ষনেই ঘুমিয়ে গেল! রুবা ওর মাথার কাছে বসে আছে! আলো-আধারি তে মাহির মুখটা কত সুন্দর লাগছে! আজ সারাদিন ওর জন্য অস্থির হয়ে ছিল রুবা!
এত সুন্দর গিফট দিয়ে ওকে সারপ্রাইজ করে দিল , পাগল।
মাহির কপালে হাত রাখলো ও ! মাহির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
তুমি কি জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি ? আমার ইচ্ছে করে তোমার দিকে এগিয়ে যাই, তোমার কাছে আমার জীবন টা তুলে দেই! তোমার সুখে হারিয়ে যাই।
কিন্তু ঐ যে সব হারাতে হারাতে এখন আর সাহসে কুলায় না । তাই তো এক পা এগিয়ে গিয়েও দুই পায়ে ফেরত আসি আমি !
মায়ের জন্য খুব ইচ্ছে হয় একটা বেঁচে থাকার আনন্দ দেই ।কিন্তু সেখানেও না জানি কত প্রতিবন্ধকতা । আমি তো ভাগ্যে র কাছে মার খেয়ে যাই বারবার!
তাই এত কাছে এসেও আসতে পারি না তোমার ! ক্ষমা করে দিও মাহি!
রুবা চোখের পানি মুছলো। আজ খুব ইচ্ছে করছে তোমার বুকে লুকিয়ে থাকি , খুব খুব খুব ইচ্ছে করছে মাহি! জন্মদিন টা আসলে এত খালি খালি লাগে ।
রুবা মাহির কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল । তারপর মাহির গা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। ওর খুব কান্না পাচ্ছে ।

রুবা সকালে উঠে মাহিকে ডাকছে,
: ডাক্তার সাহেব , হসপিটাল নেই ? কখন যাবে?
মাহি চোখ খুলে বলল,
: আজ সরকারি ছুটি যেন কিসের, এখন যাব না বিকেলে যাব একবার! এখন আবার ঘুমাব ! তুমি উঠলে কেন রুবা ? আসতো , ঘুমাই আসো !
: তুমি ঘুমাও আমার কাজ আছে!
: কি কাজ আবার তোমার, মাহি চোখ বন্ধ করেই বলল!
: আছে কাজ তোমাকে বলেছিলাম রাতে, ভুলে গেছো? ড্রেসিং রুম থেকে রুবা বলল।
: আজ বিয়ে উপলক্ষে রং খেলা হবে সাজ্জাদ ভাইদের বাসায় ।
: কি ! এসব আবার কেন , মাহি বলল?
: আমি রাতে বলি নাই তোমাকে ?
: খেয়াল নাই রুবা !
: সরি ভুলে গেছি , রুবা বলল! আমি কি যাব ?
: যাবে না কেন , যাবে তো অবশ্যই!
রুবা ড্রেস চেঞ্জ করে এসে মাহির সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,
: তুমি যাবে না ?
: তুমি এটা কি পড়েছো রুবা ? মাহি বিছানায় উঠে বসলো!
: কি পড়েছি, সেলোয়ার কামিজ !
: সেটা আমিও দেখতে পাচ্ছি সেলোয়ার কামিজ! কিন্তু এই সেলোয়ার কামিজ কেন?
: আজ সবাই এরকম সেলোয়ার কামিজ ই পড়বে !
: কে কি পড়লো আমি জানি না তুমি এইটা চেন্জ করো যাও ! মাহি কঠিন গলায় বলল!
রুবা বুঝতে পারছে না হঠাৎ মাহি এই সেলোয়ার কামিজ টা দেখে এভাবে রিয়েক্ট করছে কেন , পিওর শিফনের লাকনৌ স্টিচের সুন্দর সেলোয়ার কামিজ !
: কি বললাম রুবা, গো এন্ড চেন্জ ইট !
: আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু বুঝলাম না তুমি এরকম করছ কেন ?
: মাহি এবার বিছানা থেকে নিজেই উঠে এলো রুবার হাত ধরে টেনে আলমারি র কাছে নিয়ে গেল আলমারি খুলে বলল,
: দেখো এখান থেকে যে কোন একটা পড়ো তাড়াতাড়ি করো !
: কারণ টা বলবে কি , এটা নতুন একটা ড্রেস !
: আমি কিচ্ছু জানি না তুমি চেন্জ করবে কিনা বলো?
: আচ্ছা আচ্ছা করছি তুমি শান্ত হয় , যাচ্ছি ।রুবা একটা কুসুম হলুদ রঙের সেলোয়ার কামিজ নিয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকে গেল !
ড্রেস চেঞ্জ করে এসে দেখে মাহি সোফায় বসে আছে মাথা নিচু করে । রুবা ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ,
: এখন ঠিক আছে ?
মাহি রুবাকে কাছে টেনে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরলো।
: কি হয়েছে তোমার এরকম করছো কেন ?
: সরি রুবা তোমার সঙ্গে রুড হয়ে গেলাম । রুবা ওর মাথায় হাত রেখে বলল,
: এখন বলোতো কি হয়েছে ?
: তোমাকে বলেছিলাম না সাদা সেলোয়ার কামিজ পড়বে না কখনো !
: সাদা সেলোয়ার কামিজ পড়লে কি হয় ? আজ রং লাগাবে দেখে পড়েছিলাম। কারণ টা বলো তো শুনি ।
মাহি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো ,
তারপর ধীরে ধীরে বলল যেদিন এয়ার লাইন্স কম্পানি শিওর করলো ভাইয়ার চলে যাওয়াটা । সেদিন তোমাকে, আমি জানি না কে ,সাদা একটা সেলোয়ার কামিজ পড়িয়ে মায়ের রুম থেকে বের করলো আমি লিভিং রুমে দাঁড়ানো ছিলাম তখন।
হঠাৎ তুমি আমার সামনে ভেজা চুল একবারে সাদা সেলোয়ার কামিজ ফর্সা তোমাকে আরও সাদা লাগছিল । মনে হচ্ছিল তোমার শরীর থেকে সব রক্ত কেউ নিয়ে গেছে । আমি তোমাকে দেখে, সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম রুবা। যে আমি সারাদিন বিভৎস কাটা ছেড়া রোগী নিয়ে কাজ করি সেই আমি তোমাকে দেখে ঠিক থাকতে পারলাম না ! সেই তখন তোমাকে দেখে আমার মনে হলো , ভাইয়া আর নেই ! ভাইয়া চলে গেছে। তোমার জীবন থেকে আমাদের জীবন থেকে সব রং নিয়ে ভাইয়া চলে গেছে।
: রুবা মাহিকে শক্ত করে ধরলো।
মাহি কাঁদছে !
: জানো মা যেদিন বলল, রুবাকে বিয়ে করো মাহি! আমি মা কে বলেছিলাম অসম্ভব মা ! মিথ্যা বলব না তোমাকে, তুমি তো ভাইয়ার রেখে যাওয়া আমানত ছিলে আমি কিভাবে কি! মা বলল, একমাত্র তোমাকেই মাহি বলতে পারি রুবার জীবনে রং ভরে দিতে ! আর কারো কাছে রুবাকে ভালো রাখার গ্যারান্টি পাব না ! সেদিন তোমার সাদা রং হীন ছবিটা আবার আমার সামনে এসে গেল। আমি তখন‌ই ডিসিশন নিয়েছিলাম তোমাকে বিয়ে করব। তোমার জীবন আবারো রং দিয়ে ভরে দিব!
: আমি তো আজ তোমার রঙ্গে রঙ্গিন মাহি ! তাহলে কেন এমন করছো !
: না তারপরও আমি সেদিন টা, তোমার সেই রূপ টা ভাবলে ভয় পাই রুবা । আমার খুব কষ্ট হয় । আমি রাতে অন্ধকারে ঘুমাতে পারি না খেয়াল করেছো। আমি ভয় পাই আমার এই বাসাটা রং হীন ,শব্দ হীন হয়ে যাওয়া সেই সময়টার কথা চিন্তা করলে। একটু শব্দে জেগে উঠি। তুমি ঘুমের ভেতরে এপাশ ওপাশ হলেই আমি উঠে যাই। আমি ভাইয়ার জন্য তোমাদের মত চিৎকার দিয়ে কাঁদতে পারিনি কিন্তু আমার ভেতরটা তে এক তীব্র কষ্ট হঠাৎ হঠাৎ চেপে বসে। আমি অস্থির হয়ে যাই তখন। আমি সেই কষ্ট টা থেকে পালাতে চাই ।
: ঠিক আছে আর কষ্ট পেতে হবে না । আমি সাদা রঙের কিছু ই পড়ব না ! কোন দিন না! রুবা মাহির চোখ মুছিয়ে দিল!
: কখনো পড়বে না তো ?
: কখনো না!
: রুবা মাহির ভেজা চোখে চুমু দিয়ে বলল, এই যে সারাক্ষণ কথায় কথায় আমাকে পাগল বলো, তুমি তো দেখি আমার চেয়ে বড় পাগল!
: তোমার সঙ্গে থেকেই পাগল হয়ে গেছি হয়তো হেসে বলল মাহি ।
: ও এটাও আমার জন্য !
: হুম!
: যাও এখন তুমি রেডি হ‌ও , অনেক বেলা হয়ে গেছে, রুবা তাড়া দিল।
: থাকো না এভাবে আর একটু রুবা , প্লিজ!
: তোমাকে রেডি হতে হবে না , আমাকে ধরে বসে থাকলে চলবে?
: আজ ছুটি বললাম না , আমি বিকেলের পর যাব একবার।
এই রং খেলা মেয়েদের প্রোগ্রাম আমি গিয়ে কি করব ওখানে ?
: না মেয়েদের প্রোগ্রাম না ছেলেরাও থাকছে শুনলাম কালকে!
: কি ছেলেরাও তোমাকে রং লাগাবে রুবা !
: আমাকে কেন লাগাতে যাবে শুধু, সবাই সবাইকে লাগাবে হয়তো। আমার এত রং লাগানো র ইচ্ছে নাই কেমন ভূতের মত লাগবে!
: রুবা বুঝলাম না কিসব প্রোগ্রাম যে এরা তৈরি করে!‌
: আনন্দ করার জন্যই ঠিক আছে!
: আনন্দ না ঢং । রিয়া আপু একটা পাগল আর তার পাগলামী।
: বুঝলাম সবাই পাগল শুধু তুমি সুস্থ এখন যদি যাও তাহলে রেডি হ‌ও।
: আমি তো যাব‌ই এখন , দেখি কোন ফাজিল ছেলে তোমাকে রং দিতে আসে?
: তুমি কি জেলাস , রুবা হেসে বলল!
: জেলাস না তোমার সিকিউরিটি র ব্যাপার টা দেখতে হবে না !
: ও তাই বুঝি!
: জ্বি ! মাহি রেডি হতে ঢুকলো ।

ওরা সাজ্জাদ দের গুলশানে র বাসায় এসে যখন ঢুকলো গাড়ি থেকে নেমে দেখে নিঝুম আর সাজ্জাদ দাঁড়িয়ে গল্প করছে।
সাজ্জাদ মাহি কে দেখে এগিয়ে এলো,
: কেমন আছো মাহি ?
: ভাই ভালো আছি কিন্তু চিন্তায় আছি রং দিয়ে সবাই না সং বানিয়ে ছাড়ে ।
: রিউমার শুনলাম তোমাকে নিয়ে ওদের প্ল্যান কিন্তু ভয়ঙ্কর।
: কি বলেন , আগে জানলে তো আসতাম না !
মাহি আর সাজ্জাদ হেসে উঠলো!
রুবা নিঝুমের পাশে এসে দাঁড়াল ! নিঝুম বলল,
: তুমি সাদা ড্রেস পড়লে না আমরা সবাই কিন্তু সাদা পড়েছি !
: তোমার ভাই দিল না পড়তে !
: কেন ?
: ওর পছন্দ না সাদা রং !
: তাই বুঝি , জানতাম না তো ! এই ড্রেসে রং লাগলে উঠবে না কিন্তু সাদা তে রং উঠে যেত।
: সেটাই আপু , কি আর করা । রিয়া আপু কোথায় ?
: আছে ঐ দিকে , চলো যাই !
নিঝুম আর রুবা এগিয়ে গেল! মাহি সাজ্জাদ এর সঙ্গে বাসার ভেতরে ঢুকলো।

রিয়া সাদা চিকেনের সেলোয়ার কামিজ পড়েছে সঙ্গে লাল শিফনের ওড়না। খুব সুন্দর লাগছে ওকে। নিঝুম আর রুবা এসে রিয়ার পাশে বসলো। তানহা বলল,
: বিয়ের সবচেয়ে এমেজিং পার্ট হলো এই রং খেলা!
: সে জন্যই তো সবচেয়ে আগে এই প্রোগ্রাম টা রাখা হয়েছে! কারণ পরে আর কারো সময় থাকে না এনার্জি ও থাকে না , রিয়া বলল!
রুবা বলল,
: তোমাদের ভাই তো প্রথমে আসবে না বলে মেয়েদের প্রোগ্রাম আমি গিয়ে কি করব ? যখন শুনলো সবাই আসবে তখন বলে, না তিনিও আসবে আমার সিকিউরিটি নাকি সে দিবে ! রুবা হাসছে।
অপার এসে রুবাকে দেখে বলল, কখন আসলে আপু , মাহি ভাইয়া এসেছে?
: রিয়া বলল তুমি ওকে আপু ডাকছো কেন ও তো আমাদের ভাইয়ের বউ তুমি ভাবি ডাকবে।
: ওকে দ্যাটস গুড ,ভাবি ডাকব! আপনার পাখি গুলো খুব সুন্দর ভাবি ছবি দেখলাম । আগে জানলে কালকে ই দেখে আসতাম।
কি পাখি রুবা, রিয়া বলল?
: আপু ও কালকে আমাকে দুটো ম্যাকাও পাখি গিফট করেছে। কি যে সুন্দর !
: রিয়েলি কোথায় পেলো মাহি , এগুলো তো খুব রেয়ার এন্ড এক্সপেনসিভ!
: কি জানি বলল, ওর পেসেন্ট খোঁজ দিয়েছে । রাতে আমি তো পুরো সারপ্রাইজ হয়ে গেছি ওর গিফট দেখে।
: বার্থডে গিফট ম্যাকাও পাখি, এমেজিং হি ইজ রিয়েলি এ ইন্টারেস্টিং পার্সন ,‌অপার বলে উঠলো!
নিঝুম তাকালো অপারের দিকে ! তারপর বলল,
: অপার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হলো তুমি ঠিক আছে!
: অপার হাসলো।

মাহি আর সাজ্জাদ বসে আছে লনে।ওদের আরও কিছু গেস্ট অলরেডি চলে এসেছে।
: অপার মাহিকে দেখে খুব খুশি হলো। নিঝুমের কাছে গিয়ে বলল, আপু আমি যদি উনাকে গিয়ে প্রথমেই রং দিয়ে দেই , উনি রাগ করবে না তো?
: অপার তুমি গিয়ে দেখো!
: অপার রং নিয়ে মাহির দিকে এগিয়ে গেল !
মাহি সাজ্জাদের সঙ্গে চেয়ারে বসা ছিল অপার পেছন থেকে মাহির গালে রং মাখিয়ে দিল। মাহি পুরো হতভম্ব হয়ে গেল , কারণ এখনো রং খেলা শুরু ই হয়নি। আর প্রথম এটাক তার উপর।
মাহি তাজ্জব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রং মেখে।
ওকে এই অবস্থায় দেখে রুবা হো হো করে হাসছে!
অপার ও হাসছে।
আজ অপারের এই কান্ড দেখে নিঝুমের খুব মেজাজ খারাপ হলো!
নিজের উপর রাগ লাগছে ! অপার কে প্রথম দিন‌ই ধমক দেয়া দরকার ছিল!
তারপর আবার মনে হলো , আচ্ছা ঠিক ই তো আছে আজ তো রং মাখিয়ে দিবে বলেই এই প্রোগ্রাম টা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাহলে ওর কেন রাগ লাগছে।
ও তো মাহির প্রতি নিজের আবেগ কে নিয়ন্ত্রন করে ফেলেছে। আর ফেলেছে বলেই ,মাহি আজ ওর সঙ্গে সহজ হয়েছে ওর সঙ্গে কত কথা বলছে।
আজ‌ও কি মাহির জন্য ওর বুকের ভেতরটা কাঁপে না , ওকে একটু দেখার জন্য চোখ ব্যাকুল হয় না !
সারাজীবন মাহি ওর কাছে আকাঙ্ক্ষিত থাকবে । ওর জীবনে যত নতুন চর জেগে উঠার মত সম্পর্ক‌ই আসুক। মাহির দেয়া ভালোবাসা সেই কূলে, ঢেউ হয়ে আছড়ে পড়বে মাহির‌ই জন্য ।
নিঝুম দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!

সবাই মাহির এই অবস্থা দেখে হাসছে। মাহি রুবার পাশে গিয়ে বলল,
: খুব হাসি পাচ্ছে রুবা ?
: রুবা বলল তোমাকে ভালোই লাগছে !
: টিস্যু দাও রং মুছবো !
: রুবা মাহিকে টিস্যু দেয়ার জন্য কাছে যেতেই মাহি ওকে ধরে রুবার গালের সঙ্গে গাল ঘষে দিল।
রং খেলা ততক্ষণে সবার মাঝে ছড়িয়ে গেল।
সবচেয়ে বেশি রং মেখে ভূত হয়ে গেল নতুন বর সাজ্জাদ।

মাহি রোদ থেকে বাঁচতে সেডের নিচে এসে বসলো। রুবা, রিয়া আপু , নিঝুম সব কাজিনদের দের সঙ্গে রং খেলছে।
অপার এসে মাহির পাশে বসলো। ওকে দেখে মাহি বলল,
: প্লিজ আর না হ্যাঁ!
: আর লাগাবো না রং আপনাকে। একটা কথা বলব !
: কি কথা ?
: আপনি কি খুব ডিস্টার্ব হচ্ছেন আমার জন্য!
: আমি একটা সত্যি কথা বলি অপার , তুমি খুব সুইট একটা মেয়ে তোমার ফিউচার পুরো টা সামনে তোমার কনসানট্রেশন থাকা উচিত এখন ক্যারিয়ার নিয়ে, তুমি মনে হচ্ছে ভুল ট্রাকে হাটছো।
: বুঝলাম না ভাইয়া ?
: আমার মনে হচ্ছে তুমি বুঝতে পারছো !
: আপনার পার্সোনালিটি আমাকে আপনার প্রতি উইক করে দিচ্ছে।
: তুমি কি বলছো তুমি বুঝতে পারছো অপার ?
: আমি মীন করেই বলছি !
: প্লিজ এভাবে কথা বলো না আমি খুব আন‌ইজি ফীল করছি! এভাবে তুমি যদি কথা বলো তাহলে তোমাকে এভোয়েড করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না আমার।
: আমি আপনার সঙ্গে একটা গুড ফ্রেন্ডশিপ চাই !
: আমার তোমার এইজ গ্যাপ টা জানো , এই গ্যাপে ফ্রেন্ডশিপ হয় না !
: ফ্রেন্ডশিপ এর কোন এইজ নেই !
: প্লিজ অপার আমার ওসব ফ্রেন্ডশিপ নিয়ে ধারণা নেই!
নিঝুম দূর থেকে অপার আর মাহিকে খেয়াল করছিল।
ও এগিয়ে এলো ওদের দিকে !
মাহি নিঝুম কে দেখে চুপ হয়ে গেল ।
: কি ব্যাপার অপার সবাই ওখানে রং মাখামাখি করছে আর তুমি এখানে কেন ?
: যাচ্ছি আপু , মাহি ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলছিলাম ।
: কথা শেষ হলে যাও ।
অপার উঠে যাচ্ছে আর নিঝুমের কানের কাছে এসে বলল, রং মেখেও উনাকে খুব এট্রাক্টিভ লাগছে আপু দেখেন। বলে চলে গেল।
মাহি বলল,
: সত্যি মাথা নষ্ট মেয়ে ! কি যে বলে বিশ্বাস করবি না !
: ও তোর সব কিছু দেখে তোর প্রতি উইক হয়ে গেছে।
: আমার কি দেখলো আবার , মাহি বলল!
: প্রথমে তোর সুন্দর চেহারা দেখে তারপর …
: তারপর ?
: কিছু না বাদ দে , অপার কে নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না ।
: রুবা কোথায় দেখেছি না যে , গেল কোথায় সবাই , মাহি বলল?
: বাসার পেছনে গেছে।
: রুবা বলছিল তুই ওকে সবার মত ড্রেস পড়তে দিলি না ! সাদা রং যে তোর অপছন্দ আজ জানলাম , অবশ্য তোর বিষয়ে অনেক কিছু নতুন নতুন জানছি নিঝুম হেসে বলল!
: না সেরকম কিছু না ! আমি বললাম তুমি হলুদ ড্রেস টা পড়ো ভালো লাগবে এই যা!
: তুই রুবাকে একা ছাড়তে পারিস না তাই না মাহি ?
: মানে বুঝলাম না !
: এই যে আজ এখানে রুবা সবার সঙ্গে রং খেলবে তুই ওকে না করতে পারিসনি বলেই ছুটি নিয়ে সঙ্গে আসলি !
: আজ সরকারি ছুটি পড়েছে নিঝুম ,তুই নিজে বিয়ে উপলক্ষে ছুটিতে আছিস বলেই হয়তো ধারণা নেই!
: ও তাই আমি ভাবলাম তুই ছুটি নিয়েছিস!
: পাগল নাকি, আমাকে দুপুর পরে হসপিটালে যেতে হবে।
: এটা ঠিক রুবাকে এখানে একা পাঠাতে আমার একটু আন‌ইজি লাগতো ! তোরা আছিস ,কিন্তু এখানে আমার , রুবার অপরিচিত মানুষ ও আছে সেই জন্য হয়তো।
একটা কথা বলব মাহি,
: তুই রুবার প্রতি ওর সৌন্দর্য দেখে এট্রাক্টক হয়েছিস নাকি অন্য কিছু আর যদি অন্য কিছু হয় সেটা কি ?
: রুবা তো আমার অপরিচিত কেউ ছিল না নিঝুম , সৌন্দর্য দেখেই যে এট্রাক্টক হব ! আমার চোখের সামনে সে দুটো বছর ছিল।
: তখন তো আর তোর বউ ছিল না !
: এই কথা টাই বলতে চেয়েছিলাম নিঝুম, রুবাকে প্রথমেই আমি আমার বউ হিসেবে ই ধরে নিসি আমাদের বিয়ের পর । আর বিয়ে এমন একটা বন্ধন সত্যি করে বলছি রে , মানুষের ভেতরটা কে পরিবর্তন করে দেয় এই বন্ধন টা । একটা মানুষের সব সময়ের উপস্থিতি , তার নির্ভরশীলতা, তার প্রতি দ্বায়িত্ব একটা সময় মনের উপর প্রভাব ফেলবেই। যদি পজিটিভলি তুই চাস। আমি রুবাকে যেহেতু ভালো রাখব বলেই বিয়ে করেছি তাই আমি আমার সব কিছু দিয়েই ভালো রাখতে চেয়েছি।
প্রথমে যা দ্বায়িত্ব ছিল আজ সেটা আমার …
: কি মাহি ?
: বেঁচে থাকা !
: শুনে ভালো লাগছে ! তোর মধ্যে অভিনয় টা আগেও ছিল না এখনও নেই । এই জিনিস টা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।
: কি অভিনয়?
: তুই এটলিস্ট আমার সামনে মিথ্যা বলতে পারতি কিন্তু তুই সেটা বলিস নাই ।
: আমি মিথ্যা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না ।
: কবে থেকে রুবার প্রতি দূর্বল হয়ে গেলি তুই !
: দূর্বল হ‌ওয়ার কথা জানি না । তবে এক রাতে রুবা মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়ে , পুরো ডিপ্রেশন এ চলে যায় সেই রাতে ওকে কোন ভাবেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছিল না সেদিন ওর অবস্থা দেখে মনে হয়েছিল ওর আমাকে খুব প্রয়োজন ! সেই রাতে ওর অসহায়ত্ব টা আমাকে ওর কাছে নিয়ে যায় ধীরে ধীরে ।
: তুই রুবার সব ছোট থেকে ছোট বিষয় খেয়াল রাখিস । প্রেমিক মাহি আর হাজব্যান্ড মাহি র মাঝে অনেক পার্থক্য পাই !
: তাই বুঝি ? তাহলে বলব, প্রেমিকের অধিকার ফলানোর জায়গায় একটা সীমাবদ্ধতা থাকতে হয়, হাজব্যান্ড এর সেটা নেই বলেই হয়তো আমি কেয়ারিং ! হাজব্যান্ড এর সব ছোটখাটো বিষয়ে খেয়াল রাখতেই হয়! বাবা কে দেখেছি আমি তাই হয়তো আমিও তেমন হ‌ওয়ার চেষ্টা করছি। আর আমার প্রেমিকা তো অধিকার ফলানো পছন্দ করতো না নিঝুম !
: সেটাও ঠিক। তোকে দেখে শিখার আছে অনেক কিছু মাহি !
: মাহি হাসছে কি যে বলিস , নিঝুম!
: সত্যি, মাহি । এই বাচ্চা মেয়ে অপার পর্যন্ত তোর এসব দেখে তোর প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে।
: এই যদি হয় তাহলে তো সর্বনাশ , বলে মাহি হাসছে।
মানহা দৌড়ে আসছে ওদের দিকে ,
: ভাইয়া ভাবির চোখে রং গেছে রিয়া আপু ডাকে তোমাকে!
: আমি জানতাম ও একটা না একটা কান্ড ঘটাবে ! দেখলি তো নিঝুম কেন রুবাকে একা ছাড়তে চাই না ! কোথায় ও?
: বাসার ভেতরে !
মাহি দৌড় দিল বাসার ভেতরে ! গিয়ে দেখে ততক্ষণে রুবার চোখ ধোয়ানো হয়েছে।
রিয়া বলল,
: ওর দোষ নেই অসাবধানতাবশত লেগে গেছে।
: এখন কি অবস্থা ! রুবা তাকাও দেখি!
: আমি ঠিক আছি !
: হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক তো আছোই , আমি চিন্তা করছিলাম অনেকদিন হয় রুবা কোন কান্ড কেন ঘটাচ্ছে না , মাহি বলল!
: দেখলে রিয়া আপু আমি বলেছিলাম না ও আমার দোষ ই দিবে !
: কথা না দেখি চোখ , মাহি ওর চোখ দেখলো !
নিঝুম এসে পাশে দাঁড়ালো ,
: রুবা ঠিক আছো?
: আপু ঠিক আছি !
আমরা এখন আসি রিয়া আপু অনেক হয়েছে রং খেলা , মাহি বলল!
লাঞ্চ করবি না ? এখানে লাঞ্চ রেডি করেছে সাজ্জাদ রা।‌ মন খারাপ করবে প্লিজ মাহি!
: আচ্ছা ঠিক আছে খেয়ে তবে ই যাচ্ছি। রুবা অনেক রং লাগানো হয়েছে এখন চুপচাপ আমার সঙ্গে বসে থাকবে!
: হুঁ
: আসো এদিকে ! সবাই ডাইনিং এর দিকে গেল।

খাচ্ছে যখন সবাই নিঝুম রুবার পাশে এসে বলল,
: চোখে সমস্যা হচ্ছে না তো রুবা ?
: আরে না আপু , রিয়া আপু নার্ভাস হয়ে ওকে ডাকতে পাঠিয়েছিল। আমি ঠিক ছিলাম।
: মাহি তোমার অনেক কেয়ার করে তাই রিয়েক্ট করে বেশি।
: ও একটু বেশি বেশি !
: তোমাকে অনেক ভালোবাসে ও , তাই না রুবা ?
: জানি না আপু , রুবা নিঝুমের কথায় লজ্জা পেল!
: আর তুমি ?
: আমি অনেক ভয় পাই আপু , রুবা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল!
: মাহি কে ভয় পাও?
: ভালোবাসতে ভয় পাই !
: কেন,আবাক হয়ে গেল নিঝুম!
: আমার ভাগ্যটা দেখো না আপু , ভালো যাকেই বাসি সেই তো ছেড়ে চলে যায়! রুবার চোখে পানি এসে গেল!
: নিঝুম রুবার হাত ধরলো , এভাবে ভাবছো কেন তুমি ? সব মানুষ তার হায়াত নিয়ে দুনিয়াতে আসে এখানে তোমার কি করার আছে ?
: কিন্তু কষ্ট টা তো আমিই পাচ্ছি ! আমি আর কষ্ট পেতে চাই না কাউকে হারাতেও চাই না !
ওরা খাওয়া শেষ করে বারান্দায় এসে বসলো।
:রুবা সত্যি করে বলো তো, তুমি মাহি কে ভালোবাসো না ?
রুবা চুপ করে আছে !
: কথা বলছো না যে রুবা , নিঝুম বলল?
: অনেক ভালোবাসি তাই তো ওকে বলতে , ওকে বোঝাতে ভয় পাই আপু!
: এখানে ভয়ের কি আছে ?
: আপু আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না আমার যে কি ভয় হয় , আমার শুধু প্রিয় মানুষ দের হারিয়ে ফেলার ভয় এখন। কালকে ও দেরি করে আসছে বাসায়, আমি অস্থির হয়ে ছিলাম ।
মা যদি বাসার বাহিরে থাকে বাসায় না আসা পর্যন্ত আমি অস্থির হয়ে যাই ! আমি একা থাকতেও ইদানিং ভয় পাই। আল্লাহ র কাছে সারাক্ষণ বলি আল্লাহ এবার তুমি আমাকে নিয়ে যাও তাও আমার প্রিয় মানুষ দের কিছু ক্ষতি করো না । রুবা কাঁদছে।
নিঝুম এসে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলো !
: এভাবে কাঁদে না রুবা ! তুমি অনেক ভালো একটা মেয়ে দেখবে তুমি আর কষ্ট পাবে না । তোমার কোন প্রিয়জন তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না ! আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।

এই যে তুমি কাঁদছো মাহি যদি দেখে কি যে অস্থির হবে দেখবে!
: ও সব সময় এমন করে আমাকে বকবে আবার সারাক্ষণ রুবা , রুবা করবে।
: ওর ভালোবাসা টা যে এমন‌ই। অনেক অধিকার নিয়ে ভালোবাসে , অনেক দ্বায়িত্ব নিয়ে ভালোবাসে ! সবাই সব সময় এই ভালোবাসার মূল্য বোঝে না । কখনও কখনও ভাবে ডোমেইন করছে কিন্তু সেই ভালোবাসা হারিয়ে গেলে বুঝে ! নিঝুমের চোখ ছলছল করছে !
: তুমি তো ওর অনেক ভালো বন্ধু তুমি তো আমার চেয়ে বেশি জানো আপু!
: না রুবা আমি তোমার চেয়ে বেশি জানলাম কোথায় , এই মাহি আমার কাছে নতুন । ও যে এতটা ভালো হাজব্যান্ড হবে আমার জানা ছিল না !
রুবা বলল,
:সবচেয়ে বড় কথা ও অনেক ভালো মানুষ। এটা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না কেউ না ।
: সেটাই । তুমি ওকে অনেক ভালো রেখো ! রাখবে তো ?
: আমার তো ও ছাড়া আর কেউ নেই । ওকে ছাড়া আমার পৃথিবীটা আমি ভাবতেই পারি না এখন।
: এখন চোখ মুছো , তোমার বর যদি এসে চোখে পানি দেখে তাহলে এবার আমাকে বকবে! কি বললাম তার ব‌উ কে !
রুবা চোখের পানি মুছলো ! আসো আমরা যাই ওদিকে । আর বাসায় যাওয়ার সময় ও হয়ে গেছে আমাদের । কত কাজ বাকি জানো । তুমি তো একবার ও আসো না আমাদের বাসায়, বিয়ে বাড়ির আসল মজা হলো ব‌উ যেখানে থাকে সেখানে। এক কাজ করো আজ রাতে সবাই আমাদের বাসায় থাকবে তুমি চলে আসো খুব মজা করব রাতে ! অবশ্য মাহি দেয় কিনা দেখো , ও তোমাকে নিয়ে যে পরিমাণ পজেসিভ । নিঝুম হাসছে সঙ্গে রুবা ও।
: এক কাজ করো রুবা তুমি খালাম্মা র কাছে অনুমতি নাও , খালাম্মা র উপর কথা বলার সাহস কারো নেই। আর খালাম্মা তো তোমার একটু ইচ্ছা তে সব করতে পারে, দেখবে মাহির কলিজা ফেটে যাবে তাও সে তোমাকে আটকাতে পারবে না।
: রুবা বলল, দারুন আইডিয়া আমি বাসায় গিয়ে মা কেই আগে বলছি।
: তোমার সব ভাগ্য একদিকে আর শ্বাশুড়ি ভাগ্য অন্য দিকে । এমন শ্বাশুড়ি লাখে একটা পাওয়া যায় হয়তো।
: এটা আপু ঠিক বলছো। মা আমার সব কিছু । মা আছে বলেই আজ আমি বেঁচে আছি হয়তো। তুমি জানো না, ও যেদিন রাতে বাসায় ‌থাকে না মা আর আমি মায়ের ঘরে থাকি! মা প্রতি ওয়াক্তে নামাজ পড়ে এসে মাহি কে না আমাকে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে যাবে। আমার জন্য মা শিহাবের সব ছবি বাসা থেকে সরিয়ে ফেলেছে , যেন আমি কষ্ট না পাই! একবার ও শিহাবের প্রসঙ্গ তুলে না। আমার সামনে চোখের পানি ফেলে না। আমি কি খাব , আমার কি লাগবে সব মা খেয়াল রাখবে।
: মাহি বলে তুমি আর খালাম্মা একেবারে মা আর মেয়ে যেমন সেরকম । আমরা খালাম্মা কে খুব ভয় পাই । মামা রা , মামি রা সবাই ভয় পায় !
: হু জানি তো । আরে বাবা পর্যন্ত মা কে ভয় পায়।
: নিঝুম হাসছে ! রুবা তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বলো !
: তাই !
: হু । মাহি সত্যি খুব ভাগ্যবান তোমার মত সুন্দরমনের , ভালো এবং অবশ্যই সুন্দরী একটা বউ পেয়েছে।
: ভাগ্য আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু কিন্তু আবার ওকে দিয়ে আমাকে আরো বেশি করে ভরেও দিয়েছে । আমি ওর জীবনে না আসলেও ওর জীবনে যে আসতো সে নিশ্চয়ই আরো ভালো কেউ হত তাই না আপু ?
: না নিঝুম তোমার মত ভালো হত না । তুমি মাহিকে যতটা প্রাধান্য দাও ততটা নাও দিত , তুমি মাহির কথা যেভাবে মেনে চলো সে না ও মানতে পারতো। তুমি মাহির ভালোবাসার মূল্য যেভাবে দাও সেভাবে নাও দিতে পারতো।
: আমার তা মনে হয় না । ওকে যে ভালোবাসবে সেই মানুষটা ওর মনের মত হয়ে উঠতো ই । ওকে কষ্ট দিতেই পারতো না।
নিঝুম রুবাকে জড়িয়ে ধরলো রুবা তুমি অনেক ভালো অনেক । সব সময় এমন ভালো থাকো।

মাহি ওদের দিকে এগিয়ে আসছে ।
: কোথায় তুমি রুবা , আমাকে হসপিটালে যেতে হবে বলেছিলাম না।
: তুই চলে যা মাহি ওকে আমি নামিয়ে দিয়ে যাব !
: হলো তো অনেক এখন বাসায় যাই , মা অস্থির হবে!
:রুবা বলল, আসি আপু আমার ও ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে আবীরে গা মাখামাখি ।‌
: ঠিক আছে যাও , নিঝুম বলল!
: আসি নিঝুম দেখা হবে , বলে এগিয়ে গেল মাহি।

নিঝুম দাঁড়িয়ে ওদের যাওয়াটা দেখছে‌ আর ভাবছে, রুবা আমি তোমার মত ভালো ছিলাম না ,আমি মাহি কে অনেক ভুল বুঝতাম, ওকে কষ্ট ও দিতাম। ও চাইতো আমি পড়াশোনা ঠিক মত করি আমি করতাম না । বরং ওর পড়াশোনায় ডিস্টার্ব করতাম। ওর বারণ শর্তেও চলে যেতাম অন্য বন্ধুদের সঙ্গে যেখানে খুশি সেখানে। ও যদি শাড়ি পড়তে বলতো আমি পড়তাম জিনস , আর ও জিনস পড়তে বললে আমি সেলোয়ার কামিজ। এটা কে আমি ভাবতাম আমার স্বাধীনতা । একটা সময় মাহি চুপ করে যেত আমি ভেবেছিলাম ও আমার পছন্দ কে পছন্দ বানিয়েছে আসলে ওটা ছিল ওর নির্লিপ্ততা। আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি রুবা অনেক । ও আমার সাথে যত দিন সম্পর্ক রেখেছে সততা, রেসপনসিবিলিটি সব ফুলফিল করেছে একটা সময় শুধু ভাগ্যের দোষে আমাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে । আজ যদি ঐ ঘটনা না ঘটতো, আমি কি আমাকে বদলাতাম? হয়তো না । মাহি আমাকে সেভাবেই গ্রহণ করতো। তুমি ই মাহির জন্য বেস্ট আজ তোমার সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম। ভালো থেকো আর ভালো রেখো আমার মাহি কে ।

নিঝুম চোখ মুছলো । ভালো থাকিস মাহি আমিও ভালো থাকার চেষ্টা করি এখন ।
নিঝুমের ফোনে রিং হচ্ছে , নিয়াজ কল করেছে !
মনে মনে নিঝুম বলল, প্লিজ নিয়াজ এখন না একটু সময় দাও । আমি আগে আমাকে সামলাই।

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here