যখন_দুজনে_একা ৪৬ পর্ব

0
658

#যখন_দুজনে_একা

৪৬ পর্ব

রুবা মাহিকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। ওর এত ভালো লাগবে সে নিজেও কখনো ভাবেনি। কিছুক্ষণ আশেপাশে ঘুরে মাহি বাইক থামালো।
: বাসায় যাবে নাকি আরো ঘুরবে?
: খুব ভালো লাগছে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি!
: তাহলে আরও একটু চালাই তুমি ঠিক আছো তো?
: আমি ঠিক আছি!
ওরা বাইক নিয়ে আরো কিছুক্ষণ ঘুরলো। তারপর বাসায় ফিরে এলো।
: হঠাৎ করে বাইক কিনলে কেন ?
: কেন আবার তোমার জন্য ! মনে নেই একদিন বললে না তুমি কখনও বাইকে চড়নি তাই ভাবলাম কিনেই ফেলি কখনো কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হ‌ওয়া যাবে। আর ঐ যে বললাম না, প্রেমিক প্রেমিকা ফিলিংস,ঐ ব্যাপার টা বাইকের সঙ্গে দারুণ যায়।
: রুবা হাসছে ! একটা কথা বলব আমি এই বাইকের প্রাইজ টা দিতে চাই তোমাকে। এটার আমার গিফট তোমার জন্য।
: এটা তো তোমার জন্য কিনেছি রুবা এটার টাকা তো তোমার কাছ থেকে নেয়া যাবে না।
: ওসব কথা বাদ দাও আমি দেই প্লিজ !
: তা হবে না রুবা !
কথা বলতে বলতে দুজন উপরে উঠে এলো ।
: আচ্ছা থাক এসব কথা পরে হবে , তুমি রান্না করেছো ?
: হুঁ , খাবার দিতে বলব?
: তুমি সব রেডি করো আমি জাস্ট ফাইভ মিনিটের ভেতরে আসছি ফ্রেশ হয়ে।
: ঠিক আছে।

খেতে বসে মাহি বলল,
: খুব ভালো হয়েছে রুবা। এখন থেকে তুমি আমার জন্য কিছু না কিছু রান্না করবে । কালকে ই তো বললে কম খাই আমি , দেখা যাক তোমার রান্না দিয়ে বেশি বেশি খাওয়া যায় কিনা!
: ঠিক আছে।
সাফিয়া বেগম ছেলের কাছে এসে দাঁড়ালেন !
: মা তোমরা খেয়েছো?
: হুঁ অনেক আগেই। রান্না ভালো হয়েছে ! আর তোমার বাইক ও দারুন হয়েছে। তোমার বাবা বলেছে এই বাইকের টাকা তোমার বাবার পক্ষ থেকে তোমার আর রুবার জন্য গিফট।
: বুঝলে মা বড়লোক বাবা মা আর ব‌উ থাকলে দারুন মজা । বাবা বলছে বাবা দিবে টাকা , রুবা বলছে রুবা দিবে এ তো মধুর সমস্যা !.
: তাই বুঝি রুবা দিতে চাচ্ছে ! এবার থাক, বাবা যেহেতু বলছে বাবাই দিক ওর ভালো লাগবে ঠিক আছে!
: মা টাকা আমি দিলেও ঘুরে ফিরে সব তো বাবার টাকাই খরচ করি আমার কিসের ইনকাম বলো!
: আমাদের সব তো তোমারই মাহি আর কে আছে বলো খরচ করবে। তুমি আর রুবা, বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন সাফিয়া বেগম।
: মাহি মায়ের হাত স্পর্শ করলো , বাবা কোথায় ?
: বাবা ঠিক আছে ,রুমে আছে। তোমরা খাওয়া শেষ করো। রাতে আবার রিয়ার গায়ে হলুদ এ যেতে হবে ।
: নিঝুম আপু তোমার জন্য পাঞ্জাবি পাঠিয়েছে সবার এক রকম, রুবা বলল!
: ও স্কুল ইউনিফর্ম বলে হাসলো মাহি!

খাওয়ার পর মাহি মায়ের পাশে এসে বসলো।
: তোমার কি কোন কারণে মন খারাপ মা ?
: কেন সেরকম তো কিছু না মাহি ?
: ও আচ্ছা আমার মনে হলো, মাহি মায়ের হাত ধরলো !
: আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না মাহি আমি ঠিক আছি। জানো রুবা সারাদিন ব্যস্ত ছিল তোমার রান্না নিয়ে। হাজার বার এসে প্রশ্ন , মা আপনার ছেলে কি খেতে পছন্দ করে বলেন তো, আমি বুঝেই পাই না কি ওর ভালো লাগে সব একটু একটু খায় ভালো করে খেতেই দেখি না! হাসলেন সাফিয়া বেগম!
: ব্যস্ত হয়ে গেছে তোমাকে নিয়ে !
: ওর এই ব্যস্ততাই টা দরকার মা , তাহলে ও নিজের উপর কন্ট্রোল ফিরে পাবে।
: আমার দেখে খুব ভালো লাগছে ওকে , সারাক্ষণ ছুটে বেড়াচ্ছে।
: হাসছে মাহি !
: এখন যাও একটু রেস্ট নাও আর টাইমলি রেডি হয়ে যাও আজ এক সঙ্গে যাব !
: ঠিক আছে মা ! বলে মাহি উঠে গেল।

সন্ধ্যায় সবাই ওরা রিয়া আর সাজ্জাদ এর গায়ে হলুদ এর প্রোগ্রাম এ গেল।
রুবা অপার কে একটা কর্নারে টেনে নিয়ে এলো কথা আছে বলে। অপার খুব আন‌ইজি ফীল করছে , ও বুঝতে পারছে রুবা কি বলবে !
: ভাবি প্লিজ আমি আর কোন বিষয়ে কথা বলতে চাইছি না !
: কেন অপার ! তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?
রুবা হাত ধরলো অপারের !
: না আমি রাগ করিনি খুব অফেন্ডার ফীল করছি !
: প্লিজ না অপার তুমি কত সুইট একটা মেয়ে এভাবে বলো না । তোমার কোন দোষ নেই , এমন হয় এই বয়সে !
: আমি বুঝতে ই পারিনি ভাবি আমি কিভাবে উনাকে লাইক করে ফেলেছি ! আই কান্ট কন্ট্রোল মাই সেলফ !
: রুবা হেসে বলল , অপার হয় কখনো কখনো এমন তুমি যখন আরো বড় হবে তখন এই ঘটনা টা মনে করবে দেখবে তোমার কত হাসি পাচ্ছে । কারণ এটা কে তুমি যা ভাবছো বিষয়টা কিন্তু তা নয় ইটস জাস্ট এন আফেকশন । লাভ কিন্তু এভাবে হুট করে হয় না !
: আই নো ভাবি , ডোন্ট ওড়ি আই সুড কন্ট্রোল মাই ইমোশান।
: আসো আমার কাছে বলে ,রুবা অপার কে জড়িয়ে ধরলো।
আচ্ছা মাহি ভাইয়া বলেছিল , আপনি উনাকে ডাল ঘুটনি সামথিং লাইক দ্যাট দিয়ে মারতে যান বাট আই থিংক ইউ আর রিয়েলি সুইট। ইউ নো অন্য কোন ওয়াইফ হলে আমার সঙ্গে অনেক বাজে ভাবে ট্রিট করতো।
রুবা হো হো করে হেসে দিল।
: অপার তুমি বুঝতে পারো নি মাহি ভাইয়া এটা ফান করেছিল তোমার সঙ্গে।
: ফান করেছিল ?
: হুম ।
মাহি এসে ওদের পাশে দাড়ালো!
অপার অন্য দিকে তাকালো মাহিকে দেখে ।
রুবা বলল,
: তুমি মাহি ভাইয়ার সঙ্গে কথা বলবে না অপার ?
: উনি অনেক রুডলী কথা বলবেন !
: সরি অপার আই এম রিয়েলি সরি ফর ইয়েস্টার ডে ।
: ইউ সুড !
মাহি হাসলো । এদিকে দেখো অপার, তুমি অনেক প্রিটি একটা মেয়ে তোমার জন্য একটা প্রিন্স ওয়েট করছে কোথাও না কোথাও! আফটার থ্রি অর ফোর ইয়ারস তুমি ঠিকই খুঁজে পাবে তাকে এর আগে যাদের ভালো লাগবে ওরা কিন্তু রিয়েল লাভ হবে না ওরা জাস্ট সো সো টাইপ ! লাইক মী!
: রিয়েলি ?
: শিওর অপার!
: আফটার থ্রি ইয়ারস তুমি আরো সুন্দর আরো বড় হবে আর আমি তখন দুই তিন বাচ্চার বাবা হয়ে যাব পুরোই বুড়ো তখন আমাকে দেখেই তোমার রাগ লাগবে যে কি এক বুড়ো লোক কে ভালো লেগে গিয়েছিল!
রুবা হাসছে , মাহির কথা শুনে !
অপার বলল, থেঙ্কস বোথ অব ইউ !
রুবা বলল, থেঙ্কস বলার দরকার নেই তুমি তোমার মন ভালো করে বিয়ে এনজয় করো আর লাইফ এনজয় করো তাতেই হবে ! রুবা ওকে আদর করে দিল।
: ক্যান আই হাগ ইউ মাহি ভাইয়া জাস্ট ওয়ান্স !
মাহি রুবার দিকে তাকালো
রুবা ইশারা করলো ।
মাহি হেসে অপার কে ধরলো !
অপার হেসে থেঙ্কস বলে দৌড়ে চলে গেল !
মাহি রুবার পাশে এসে ওকে ধরে দাঁড়িয়ে বলল , থেঙ্কস গড রুবা !
: বয়স টাই এমন বুঝলে, রুবা হেসে বলল ! আচ্ছা কি বলছিলে আফটার থ্রি ইয়ারস তিন বাচ্চার বাবা হয়ে যাবে তুমি ?
: হুঁ কোন ডাউট আছে তোমার ,জাস্ট তুমি আমাকে চান্স দিয়ে দেখো আমি রাগবি টীম ও বানিয়ে ফেলতে পারি ইনশাআল্লাহ ! মাহি হাসছে।
: তাহলে তো আরো চান্স দেয়া যাবে না , অসভ্য ছেলে কোথাকার বলে রুবা দৌড় দিল।
মাহি হাসছে পিছনে দাঁড়িয়ে।

হলুদের প্রোগ্রাম এর এক ফাঁকে নিঝুম এসে মাহির পাশে দাঁড়ালো!
: মাহি অপারের সঙ্গে কথা বলেছিস ?
: হ্যাঁ আমি আর রুবা দুজনেই কথা বলেছি নাউ সী ইজ ওকে !
: রুবাকে বলে দিয়েছিস সব ?
: হ্যাঁ কাল রাতেই বলে দিয়েছি আর ও খুব সুন্দর ভাবে হ্যান্ডেল করেছে ব্যাপার টা । অপারের সঙ্গে ওই কথা বলল, তারপর আমি কথা বললাম এখন অপার তার ভুল বুঝতে পেরেছে আশাকরি।
: বাহ্ ভালোই তো রুবাকে ভেবেছিলাম তোর বিষয়ে খুব পজেসিভ হবে , এখন তো মনে হচ্ছে ও অনেক রেশন্যাল !
: হুম ও অনেক বুঝে যতটা ছেলেমানুষী তে ভরা অন্য দিকে আবার সে ততটাই বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন ।
: তাহলে আমার আর তোর ব্যাপারে জানলেও সে অতটা রিয়েক্ট করবে না ?
: অসম্ভব এই বিষয়টা কখনো, কোন দিন জানানো যাবে না নিঝুম। ও তোকে খুব পছন্দ করে ওর জন্য তুই কষ্ট পেয়েছিস, ও তোর ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে জানলে ও দুঃখে মরে যাবে । এই বিষয়ে কালকে কথা বলেছি। মাহি নিঝুম কে রুবার সব কথা বলল!
শুনে নিঝুম বলল,
: এখন তাহলে সারাজীবন খুব কেয়ারফুল থাকতে হবে তোকে।
: খুব নিঝুম! ওর মানসিক অবস্থার কোন তাল ই খুঁজে পাচ্ছি না আমি। আমি ওর অসহায় অবস্থা টা নিতে পারছি না ।কত ভাবে ওকে ম্যানেজ করছি তোকে বোঝানো যাবে না ।
: ঠিক আছে খেয়াল রাখ, তুই তো সব পারিস তুই ঠিকই পারবি মাহি।
শুনলাম খালাম্মা বলল, তুই আজ রুবার জন্য বাইক কিনে এনেছিস! গুড তোর এই ছোট ছোট ভালোবাসা ই রুবাকে শক্তি দিবে দেখিস।
নিঝুম উঠে গেল স্টেজের দিকে।

মাহি রুবার দিকে এগিয়ে গেল । রুবার ছবি তুলে দিচ্ছে ও। রুবার আনন্দ দেখে ভালোই লাগছে ওর।
বিয়ের এই কয়েক টা দিন খুব আনন্দে যাচ্ছে ‌যদিও মাহি রুবার ব্যাপারে খুব কেয়ারিং কখন আবার মুড সুইং হয়।

বিয়ের দিন মাহির সকাল থেকে হসপিটালে ডিউটি ছিল । রুবা তার শ্বশুর শাশুড়ি র সঙ্গে যাবে , মাহি কখন আসবে ঠিক নেই।
সাফিয়া বেগম রুবাকে বললেন,
: তুমি কি নিজে সাজবে নাকি নিঝুম আর তার দলবলের মত পার্লারে যাবে?
: না মা পার্লারে যাব না ঘরেই সাজব !
: তুমি কিন্তু যেতে পারো ইচ্ছা করলে!
: না মা আপনার ছেলে রাগ করবে বলি নাই ওকে !
: আমি বলছি তুমি যাও , নিঝুম রা যেখানে যাচ্ছে সেখানে ই যাও। ঠিকানা জেনে গাড়ি নিয়ে চলে যাও। সাফিয়া বেগম জোর করলেন রুবাকে।
রুবা শ্বাশুড়ি র জোরে ই একরকম নিঝুম আর রিয়া যে পার্লারে গেছে সেখানে গিয়ে হাজির হলো। নিঝুম ই বিউটিশিয়ান কে বলে দিল রুবাকে কিভাবে সাজাতে হবে।
রুবা ভেতরে ভেতরে এক্সাইটেড ফীল করছে মাহি ওকে দেখে কি বলবে চিন্তা করে।।
শ্বাশুড়িই তাকে সিলেক্ট করে দিল একটা কপার গোল্ড কালারের কারচুপি র ডিজাইনার শাড়ি মেরুন ভেলভেটের ব্লাউজ । শাড়িটা তিনি ই রুবাকে কিনে দিয়েছেন।
সঙ্গে এন্টিকস এর হালকা গয়না। রুবা ভারি গয়না পড়তে চায় না কখনো।
সাজ শেষে নিঝুম বলল, খুব সুন্দর লাগছে রুবা !
তুমি কি আগেই চলে যাবে?
: আমি যাই আপু মা অপেক্ষা করছে!
: মাহি কখন আসবে ?
: আসতে দেরি হবে বলেছে !
: ঠিক আছে যাও রুবা
রুবা বাসায় ফিরে এলো । মাহি তখন‌ও আসেনি । শ্বাশুড়ি ওকে দেখে বলল,
: খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে রুবা !
: সত্যি মা, থেঙ্কস । কখন যাব আমরা ?
: মাহির আসতে দেরি হবে আমরা চলে যাব ও বাসায় এসে রেডি হয়ে নিজেই চলে যাবে।
রুবার একটু মন খারাপ হলো। মাহির সঙ্গে যেতে ইচ্ছে করছিল ওর।

রুবা রা যখন কনভেনশন হলে গিয়ে পৌছাল রিয়ার আর নিঝুম ও একি সঙ্গে এসে নামলো।
রিয়াকে লাল বেনারসী আর গয়নায় অপূর্ব লাগছে । রুবা তার শ্বাশুড়ি কে বলল,
: মা দেখেন রিয়া আপুকে কি অপূর্ব লাগছে !
: হুঁ খুব সুন্দর লাগছে ! নিঝুম কেও।
: হুঁ।
রুবা মাহিকে ফোন দিল‌ তার খুব অস্থির লাগছে ,
: হ্যালো কোথায় তুমি?
: বাসার পথে ?
: কতক্ষণ লাগবে এখানে আসতে ?
: খুব মিস করছো আমাকে রুবা ?
: ফান করো না তাড়াতাড়ি এসো।
: আসছি !

মাহি নিজের ঘরে ঢুকে দেখে রুবা বেডে উপর তার জন্য ড্রেস রেডি করে রেখে গেছে।
ওর দেখে ভালই লাগছে । মাহি ওর পছন্দের সেলোয়ার আর পাঞ্জাবি ই পড়লো।
বিয়ের জন্য পার্ফেক্ট ।
রুবা ওর জন্য ব্যস্ত হচ্ছে ভালোই লাগছে দেখে।
মাহি দশ মিনিট সময় নিলো রেডি হতে। তারপর বেড়িয়ে গেল।
মাহি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বর এসে গেল। মাহি ভীড়ে র ভেতরে রুবাকে খুঁজছে । কিন্তু পাচ্ছে না । সে ও ব্যস্ত হয়ে গেল গেস্ট দের নিয়ে।
একবার মা কে দেখে এগিয়ে গেল ,
: রুবা কোথায় মা ?
: এখানেই ছিল দেখো স্টেজে নিঝুম দের সঙ্গে নাকি?
: মাহি রুবা কে কল করলো কিন্তু ফোন রিসিভ করলো না এত হৈচৈ এ শুনতে পাচ্ছে না হয়তো ।
কিছুক্ষণ পর মাহি তাকিয়ে দেখে রুবা স্টেজের এক কর্নারে দাঁড়িয়ে আছে, মানহা তার ছবি তুলছে।
: কি অপূর্ব লাগছে রুবাকে যেন দেবী মূর্তি । সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল দূর থেকে।
মাহি ওর কাছে এগিয়ে গেল, আস্তে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো ।
হঠাৎ মাহিকে দেখে রুবা খুশি হয়ে গেল !
: কখন এলে তুমি ?
: যখন তুমি একা একা ছবি তুলছিলে ! এখন আসো আমার সঙ্গে ছবি তুলো !
: মানহা ওদের ছবি তুলে দিল।
: রুবা এসব কি সেজে এসেছো ?
: কেন কি হয়েছে , রুবা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো আমাকে ভালো লাগছে না ?
: তোমাকে কেমন মুর্তি মুর্তি লাগছে !
: মানে বুঝিয়ে বলো , ভালো লাগছে না তাই তো ?
: না ভালো লাগছে তবে কেমন পর পর লাগছে , আপন লাগছে না দূরের কেউ লাগছে!
: রুবার চোখে পানি চলে এসেছে মাহির কথা শুনে! ওর কথার মানে বুঝতে পারছে না ও ।
: মাহি রুবার চোখের পানি দেখে হেসে দিল কি এই সামান্য কথায় চোখে পানি !
: পর পর বলছো যে !
: বললেই কি আর পর হয়ে যাবে তুমি রুবা, তুমি তো আমার ” আপনার চেয়ে আপন যে জন “!
: বুঝেছি এখন এসো এদিকে দেখে যাও!
: কি ?
: এসো ,ঐ যে দেখো নিঝুম আপুকে কি সুন্দর লাগছে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।
: মাহি তাকিয়ে দেখে দূরে নিঝুম কার সঙ্গে কথা বলছে হালকা গোলাপি রঙের একটা কাতান শাড়ি পড়েছে, কার্ল করা চুল , গোল্ডের গয়না পড়ে খুব সুন্দর লাগছে নিঝুম কে !
: মাহি চোখ নামিয়ে নিল !
: খুব সুন্দর লাগছে নিঝুম আপুকে ?
: হুম , রুবা আমি একটু গেস্ট দের এটেনডেন্ট করি খালামনির তো ছেলে নেই যত‌ই সব লোকজন করুক আমি কাছে থাকলে ভালো লাগবে খালামনির।
: ঠিক বলেছো যাও আমি মায়ের সঙ্গে আছি!
মাহি চলে গেল । দূর থেকে কয়েক বার নিঝুমের দিকে চোখ পড়লো মনে মনে ভাবছে, একটা সময় তোকে এমন সাজে কল্পনা করতাম নিঝুম। কিন্তু আজ আমাদের পথ বদলে গেছে এখন তোর এই সাজ এর দিকে তাকালে আমার অপরাধবোধ আরো বেড়ে যাচ্ছে।
তুই সব সময় রঙ্গিন থাক এমন হাসিখুশি থাক।
আমার ভাগ্যের খুশি টুকু ও যেন আল্লাহ তোকে দিয়ে দেয় আমি সেই দোয়া করি।

নিয়াজ মাহিকে দেখে এগিয়ে এলো সঙ্গে রিয়াদ ভাই এবং ভাবি!
: মাহি খুব ব্যস্ত ?
: একটু বোনের বিয়ে বলে কথা , মাহি হেসে বলল!
রিয়াদ ওর কাছে এগিয়ে বলল, রুবা ভালো আছে মাহি?
: ঐ যে ওদিকে ই আছে!
: দেখেছি একবার!
নিঝুম ওদের দিকে এগিয়ে এলো ! বিয়ে বাড়ির ব্যস্ততার ভেতরেও নিঝুম কয়েক বার দূর থেকে মাহি কে খেয়াল করেছে।
সব গেস্ট দের খাওয়ার জন্য বলতে এলো নিঝুম। মাহি আর ও সবাইকে নিয়ে এগিয়ে গেল।
নিয়াজ একটু পিছিয়ে পড়লো খেয়াল করেই নিঝুম ওর দিকে ফিরে এলো।
: কি হলো এসো নিয়াজ ?
: নিঝুম তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি !
: কি কথা ?
: তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে , আমার সঙ্গে একটা ছবি তুলবে ?
: নিঝুম হেসে দিল , তুমি এত কাব্যিক ভঙ্গি তে কথা বলো নিয়াজ ! এসো ছবি তুলি বের করো ক্যামেরা !
ওরা সেলফি তুলছে!
একটু দূর থেকে সাফিয়া বেগম খেয়াল করলো দুজন কে ? তিনি পাশে বসা ছোট ভাইয়ের ব‌উ কে জিজ্ঞাসা করলেন এটা কি নিঝুমের ফ্রেন্ড?
: হ্যাঁ বড়পা !
: ডাক্তার ?
: হুম মাহির ও ফ্রেন্ড!
: ও আচ্ছা !

রিয়ার বিদায়ের সময় বিরাট কান্নাকাটি শুরু করলো রিয়া আর ওর মা ! ওদের দুজনের কান্নাকাটি দেখে আশেপাশে র সব মেয়েদের চোখে পানি চলে এসেছে। নিঝুম এর চোখে পানি ।
রুবাও কাঁদছে।
মাহি এগিয়ে গিয়ে বলল,
: তুমি কাঁদছো কেন রুবা?
: তুমি তো ছেলে মানুষ তুমি কখনও ব্যাপার টা বুঝবে না ! বিয়ে বাড়ির সাজ সজ্জা, পরিবেশ, ব‌উ, জামাইয়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থার যত পার্থক্য থাকুক না কেন এই একটা জায়গায় সব মেয়ের কষ্ট, সব বাবা মায়ের কষ্ট এক রকম। নিজের সবচেয়ে আদরের একটা জিনিস কে অন্যের হাতে তুলে দিতে কেমন লাগে ,এটা একজন মেয়ের বাবা মা ছাড়া আর কেউ জানে না । একটা মেয়ের মনের অবস্থা কি হয় জানো , নাড়ীর বন্ধন যাদের সঙ্গে জীবনের মাঝ পথে এসে তাদের অধিকার ছেড়ে দিয়ে কখনো অপরিচিত, কখনো অর্ধ পরিচিত লোকজন দের সঙ্গে চলে আসতে হয়! ছোটবেলার সেই ঘর, সেই বাড়ি, সেই মানুষদের কাছে যেতেও তখন অন্যের অনুমতি লাগে তাদের মন বুঝে থাকতে হয়।
সবাই তো আমার মত ভাগ্যবান হয় না, শ্বশুড়বাড়ি তে নিজের জায়গা তৈরি করতে করতে এক জীবন পার হয়ে যায় কারো কারো।
তোমার তো নিজের কোন বোন নেই থাকলে বুঝতে, নিঝুম আপুর কত কষ্ট হচ্ছে আজ।
মাহি রুবার মাথায় হাত রাখলো!
: সরি রুবা আমি পুরুষ মানুষ বলেই হয়তো তোমাদের মেয়েদের এই কষ্ট বুঝতে পারছি না কিন্তু দেখো মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে মানসিক ভাবে আদতে স্ট্রং দেখেই হয়তো আল্লাহ এই নিয়ম করে দিয়েছেন! তুমি চোখের পানি মুছো, সবাই কাঁদলে হয়। আমি রিয়া আপু র কাছে যাচ্ছি তুমি নরমাল হ‌ও।

মাহি রিয়ার পাশে গিয়ে দাড়াতেই রিয়া ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
মাহির সত্যি সত্যি খুব কষ্ট লাগা শুরু হলো! এভাবে কখনো চিন্তা করেনি সে একটা মেয়ের জীবনে র এই মুহূর্ত টা। রিয়া আপু তাকে ছোটবেলা থেকেই খুব আদর করতো। ওদের নিজের ভাই নেই।‌ কত আদর করেছে । একটু ছেলেমানুষী সব সময় রিয়া আপু করে কিন্তু মন টা একেবারে বাচ্চাদের মত সহজ সরল।
মাহি রিয়া কে ধরে ধরে নিয়ে গাড়িতে তুলে দিলো! নিঝুম ও খুব কাঁদছে । মাহি খেয়াল করলো নিয়াজ নিঝুমের ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাই ও আর নিঝুমের কাছে গেল না।
রিয়া সাজ্জাদ এর গাড়ি টা চলে যাওয়ার পর একে একে অন্য গেস্ট রাও বিদায় নিচ্ছে।
মাহি মায়ের কাছে গেল ।
সাফিয়া বেগম বললেন,
: মাহি আমি তোমার খালামনির সঙ্গে ওর বাসায় যাব ও খুব ভেঙে পড়েছে তুমি আসবে নাকি রুবাকে নিয়ে না বাসায় চলে যাবে?
: আসব মা !

মাহি আর রুবা নিঝুম দের বাসার দিকে যাচ্ছে। রুবা খুব চুপচাপ বসে আছে কোন কথা বলছে না । মাহি ই কথা বলছে শুধু!
তোমার কি বেশি খারাপ লাগলে রুবা ?
: হুম !
: নিজের বিয়ের সময় টার কথা মনে পড়ে গেল ? বলেই মাহির খেয়াল হলো , কি বলে ফেলল এখান কি হয় কে জানে ?
: না আমার তো কোন বাপের বাড়ি ই নেই আমার কার জন্য খারাপ লাগবে বলো!
: এভাবে বলো না রুবা, তোমার সব এখন আমি আর মা ঠিক আছে!
: সেটাই !
: মাহি ওর মাথায় হাত রাখলো !
: ওর চোখে পানি দেখে বুঝলো আজ ম্যাডাম এর মন খুব খারাপ থাকবে !
নিঝুম দের বাসার নিচে এসে মাহি গাড়ি থেকে নেমেই রুবার চোখের পানি মুছিয়ে দিল আগে ।
: রুবা খালামনি খুব কাঁদছে এখন তুমি ও এমন কান্না কান্না মুখে থাকলে খুব কষ্ট পাবে খালামনি আরো। প্লিজ কন্ট্রোল করো নিজেকে।
: রুবা নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।

মাহির খালা কেঁদে একেবারে শরীর খারাপ করে ফেলেছে! সাফিয়া বেগম উনাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন।
মাহিকে দেখে ওর খালামনি বলল,
: বড় আপা তুমিই ভালো ছেলের মা তোমার ঘর আলো করে ব‌উ এসেছে আমার তো পুরোই খালি হয়ে যাবে ঘর!
: সাফিয়া বেগম বোন কে আদর করলেন।
মাহি পরিবেশ হালকা করার জন্য বলল,
: খালামনি নিঝুমের জন্য একটা ঘর জামাই নিয়ে আসব কি বলো‌ !
: অন্য রা হাসলো!
: খুঁজে দেখ মাহি , বলল ওর খালামনি!
রুবা খালামনির মাথার কাছে বসে আছে , মাহির দুই মামি ও এসেছে । সবাই রুমে এসে বসলো।

নিঝুম তার ঘরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় গিয়ে এলিয়ে পড়লো। আপুর চলে যাওয়াতে খুব খারাপ লাগছে কিন্তু ওর কষ্ট লাগছে আজ এই বিয়ের পর জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো যদি মাহির বিয়েটা রুবার সঙ্গে না হতো।
এক ঝটকায় ওর কষ্টটা আবার ফিরে এলো। কত চেষ্টা সে করে যাচ্ছে আজকাল । মাহির প্রতি দূরত্ব তৈরি করতে করতে এখন অনেকটাই সে মন কে বেঁধে ফেলেছে।
কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও মাহির প্রতি ওর আকর্ষণ টা কমাতে পারে না কখনো কখনো। এই যে আজ ও গোলাপী কাতান পড়েছে এটাও মাহির পছন্দের একটা রং। যখন সে সেজেছে মাহি দেখবে ভেবেই শিহরিত হয়েছে।
দূর থেকে বারবার মাহিকে দেখেছে। হাজার লোকের ভীড়ে ওর চোখ তো মাহি কেই খোঁজে।
সে খেয়াল করেছে মাহি কয়েক বার দূর থেকে ওকে দেখেছে। কি যে এক ভালো লাগা তখন ওকে ঘিরে রেখেছিল ও নিজেও জানে না।
নিজেকে শাসন করতে চায় সে কিন্তু মন তার খুব বেয়ারা হয়ে উঠে।
নিঝুম রুমের সব আলো নিভিয়ে বেড সাইড ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে শুয়ে কাঁদছে সে। অন্ধকার টা বড় প্রয়োজন আজ।

দরজায় নক করার শব্দ পেয়ে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে যাকে এই মুহূর্তে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছিল সেই মাহি দাঁড়িয়ে আছে ।
মাহি ঘরে ঢুকে দরজা টা চাপিয়ে দিল !
নিঝুমের বেডে গিয়ে বসলো ও। বহুদিন পর সে নিঝুমের ঘরে এসে ঢুকেছে আজ !
: কি ব্যাপার নিঝুম তুই ও দেখি এখানে কান্নাকাটি করছিস তাহলে খালামনি আর খালুকে, কে সামলাবে ?
নিঝুম চুপ করে আছে কথা বলছে না !
: ওঠ নিঝুম । আর প্রেসার মাপার মেশিন টা দে খালুর প্রেসার টা মাপতে হবে মনে হয় বেড়েছে।
নিঝুম তবুও চুপ করে আছে!
: কথা বলছিস না কেন , মেশিন কি এই ড্রয়ারে বলে মাহি ড্রয়ার খুলতে নিলো যেই ,নিঝুম উঠে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ওকে।
আজ মাহি আর ওকে সরিয়ে দিতে পারলো না কেন জানি!
নিঝুম পিছন থেকে ওর পিঠ জড়িয়ে কাঁদছে! দুজনেই চুপ করে আছে।
মাহি আজ আপুর বিয়ে টা হয়েই গেল রে কিন্তু দেখ সেই তোর আর আমার অপেক্ষা টা যে বিয়েকে ঘিরে ছিল এখন আর তার কোন মানেই র‌ইলো না।
মাহি চুপ করে আছে!
নিঝুম ওকে খামচে ধরে আছে পেছন থেকে, নিঝুমের নখ ওর গলার কাছে ফুটে যাচ্ছে কিন্তু ও কিছুই বলতে পারছে না।
: মাহি আমার জন্য কি একটু খানি ভালোবাসা ও অবশিষ্ট নেই তোর বুকে ?
গলা নামিয়ে মাহি বলল, নিঝুম দরজা খোলা বাসা ভর্তি লোকজন প্লিজ ছাড়‌ আমাকে , প্লিজ।
নিঝুম মাহিকে ছেড়ে দিলো।
মাহি নিঝুমের হাতটা ধরলো,
: নিঝুম বুকের ভেতর তোকে কষ্ট দেয়ার আপরাধবোধ টা নিয়ে সারাক্ষণ থাকি রে । কষ্ট আমার হয় তোকে কষ্ট দেয়ার কষ্ট। স্বার্থপর এর মত নিজের ফ্যামিলি কে রক্ষা করতে গিয়ে তোকে কষ্ট দিয়েছি সেই কষ্ট বুকে । তোর কাছে যে ক্ষমা চাইব সেই মুখ ও কি আমার আছে নিঝুম ?
আমি মা কে, রুবা কে কষ্ট দিতে চাইনি তোকে কষ্ট দেয়াটাই আমার জন্য সবচেয়ে বেশি সহজ মনে হয়েছিল কারণ আমি খুব অসহায় হয়ে গিয়েছিলাম রে ওদের দেখে।
প্লিজ নিঝুম বের হয়ে আয়, আমাকে দেখেও যেমন কয়জন মানুষ বাঁচে ঠিক সেরকম কয়জন মানুষ শুধু তোর জন্যেও বাঁচে , দেখ গিয়ে।
নিঝুম মাহির হাত টা শক্ত করে ধরে কাঁদছে।
মাহি ওর মাথায় হাত রাখলো!
তারপর টেনে তুলে দাঁড় করালো নিঝুম কে বিছানা থেকে । চোখের পানি মুছিয়ে দিল । নিঝুম মাহিকে আবার জড়িয়ে ধরলো ,
: আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি মাহি অনেক আগেই। তুই আজ দুইটা মিনিট আমাকে তোকে ধরে রাখতে দে প্লিজ। আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে !
মাহি নিঝুম কে নিজের বুকের কাছ থেকে সরিয়ে বিছানায় বসালো !
তারপর নিঝুমের পাশে বসল,
: নিঝুম তোর জীবনটা যতক্ষণ না পর্যন্ত এগিয়ে না যাচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত তুই বললেও আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা !
আমি রুবাকে নিয়ে সুখী হলেও তোর জন্য অপরাধবোধে ভুগি । আমি স্বার্থপর তাও কষ্ট পাই তোর জন্য। তাই আমাকে ক্ষমা এভাবে করে কি লাভ , যদি নিজেকেই কষ্ট দিয়ে রাখিস ?
: আমি চেষ্টা করছি মাহি, চেষ্টা করছি ! তুই দেখ খুব বেশি সময় লাগবে না আমার আমিও তোর আর রুবার মত সুখী হব দেখিস।
: মাহি নিঝুমের হাত ধরে বলল , তুই আমাদের চেয়েও বেশি সুখী হবি নিঝুম।
: নিঝুম হাসলো, তোদের চেয়েও বেশি ?
: হুম আমাদের চেয়েও বেশি , বলে হাসলো মাহি ও ।
: তো সুখী টা কাকে নিয়ে হব বলতো মাহি?
: যে তোকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসা দিবে আমার চেয়েও বেশি প্রায়োরিটি দিবে আমার মত স্বার্থপর হবে না তোর জন্য সব ছেড়ে দিতে পারবে ।
: ঠিক আছে এমন কাউকে খুঁজতে থাকি কি বল ?
: হুম , এখন প্রেসারে র মেশিন টা খুজে দে।
হাসলো দুজন! মাহি নিঝুমের গালে হাত দিয়ে বলল, প্লিজ নিঝুম মন টা ভালো কর আর নিজেকে কষ্ট দিস না ।
: মাহি তুই আমার মন ভালো করে দিয়েছিস রে যা এখন আমি ঠিক আছি। চিন্তা করিস না !

মাহি নিঝুমের ঘর থেকে বের হয়ে এলো। তার খালামনি এখন নরমাল হয়েছেন। খালুর প্রেসার মেপে দেখলো একটু বেশি ,ওষুধ খাইয়ে দিল সে ।
সাফিয়া বেগম বললেন,
: আমরা এখন বের হ‌ই মাহি চলো ।আচ্ছা রুবার কি হয়েছে খুব চুপচাপ বসে আছে ?
: এখনো মন খারাপ ওর! রিয়া আপু যাওয়ার সময় রুবাও কাঁদছিল তারপর থেকে মন খারাপ।
: ও বুঝতে পেরেছি।
: চিন্তা করো না মা বাসায় যাই ঠিক হয়ে যাবে !

বাসায় আসার সময় রুবা চুপ করেই ছিল গাড়িতে।
বাসায় ঢুকে ই ,
সাফিয়া বেগম বললেন, রুবা যাও ফ্রেশ হয়ে নাও তোমাকে দেখেই টায়ার্ড লাগছে !
: যাই মা ?
: যাও !
সাফিয়া বেগম মাহিকে ডাকলেন ,
: মাহি একটু এদিকে এসো!
মাহি মায়ের সঙ্গে ডাইনিং টেবিলে র কাছে গিয়ে দাঁড়ালো!
: রুবার কি হয়েছে?
: ওর বাবা মায়ের জন্য খারাপ লাগছে মনে হয় ! আমি একটা বোকামি করে ফেলেছি মা !
: কি মাহি?
: ও যখন মন খারাপ করে ছিল , আমি বলে ফেলেছি তোমার কি নিজের বিয়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে এটা শুনেও মন খারাপ হতে পারে মা !
: তোমার এটা বলা ঠিক হয়নি মাহি , যাও এখন সামলাও।
মাহির আফসোস হচ্ছে, রুবাকে তখন কথাটা বলা উচিত হয়নি। ওর সবচেয়ে নাজুক একটা জায়গা হলো ওর জীবনের বিয়ে । মাহি এত সতর্ক থেকেও ভুল টা করে ফেলেছে।
নিজের উপর যদিও ওর বিশ্বাস আছে ও রুবাকে ঠিকই সামলে নিবে কিন্তু কষ্ট তো রুবাকে সে দিয়েছে । মনটা ওর খুব খারাপ হয়ে গেল।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here