যখন_দুজনে_একা ৪৭ পর্ব

0
648

#যখন_দুজনে_একা

৪৭ পর্ব

মাহি অনেক টা ভয়ে ভয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো। ঘর পুরো অন্ধকার শুধু বারান্দায় আলো জ্বলছে । সেই আলো তে ঘরে একটা আলো আধারি ভাব হয়ে আছে। রুবা শুয়ে পড়েছে। মাহি সোফায় গিয়ে বসলো।
একটু অবাক হচ্ছে রুবা এত তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে গেছে , তারচেয়ে ও বড় কথা‌ বিয়ের এত মাসেও এমন কখনো হয়নি রুবা ওকে রেখে এভাবে শুয়ে পড়লো!
তার মনে র ভেতরে একটা আতংক এসে ভর করছে , রুবা কি নিঝুমের ঘরে এসেছিলো ওরা যখন কথা বলছিল?
মাহির দম বন্ধ হবার উপক্রম । যদি তাই হয় কি হবে এখন?
সব চিন্তা করতে করতে মাহি সোফা থেকে উঠলো রুবার মাথার কাছের বেড সাইড ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দিল ।
অবাক হয়ে দেখে রুবা ড্রেস তো চেন্জ করেইনি এমন কি গয়নাও খুলেনি !
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ঘুমায়নি !
মাহি ওর পাশে বসলো ! তাকিয়ে দেখে চোখের পাশে পানির রেখা।
রুবা , কি হয়েছে তোমার ?
রুবা চুপ করে আছে !
মাহি ওর দিকে ঝুঁকে আবার ডাকলো ,
রুবা কথা বলছো না কেন?
মন খারাপ নাকি শরীর? পরিবেশ টা নরমাল করার জন্য বলল,
: আমার কাছে দুটোর সমাধান ই আছে। তুমি কি বলবে তুমি এভাবে চুপচাপ কেন শুয়ে আছো চেন্জ ও করলে না!
খুব বেশি টায়ার্ড লাগছে ?
রুবা আস্তে আস্তে বলল,
: ভালো লাগছে না কিছু!
: কেন হঠাৎ করে শরীর খারাপ ? মাহি ওর গালে হাত রাখলো!
: মন টা খারাপ লাগছে খুব !
: আমাকে বলো কেন, আমার কোন কথায় কষ্ট পেয়েছো ?
: না তোমার কথায় না !
বিছানায় উঠে , বুকের কাছে পা ভাজ করে বসলো
মাহি তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে !
: কোন কারন ছাড়াই মন খারাপ তোমার?
: হুম।
মাহি কনফিউজড হয়ে আছে , ঘটনা কি?
: আচ্ছা ঠিক আছে আমি হেল্প করি তোমাকে এসব গয়না-টয়না খুলতে!
তবে ভালো ই করেছো চেন্জ করোনি ,
মাহি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে বলল, তোমাকে তো ভালো করে দেখতেই পেলাম না আজ ! এখন একটু দেখি !
: রুবা চুপ করে আছে , মাহির হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়েও নিচ্ছে না !
: তখন না বললে আমাকে পর পর লাগছে !
: এত মেকআপ নিয়েছো, তোমাকে তো এভাবে কখনো দেখি না তাই ঐ রকম লাগছিল।
: রুবা কানের দুল খোলার চেষ্টা করতেই মাহি বলল,
: আমি খুলে দিচ্ছি !
: পারবে না তুমি !
খোলাখুলি র বিষয়ে ছেলেদের আন্ডার‌ইস্টিমিট করতে হয় না রুবা, বলে হাসলো মাহি !
মাহি অবাক হয়ে খেয়াল করলো ওর দুষ্টামি করে বলা কথা শুনে ও রুবা কোন রিয়েকশন দিল না!
মাহি ভেতরে ভেতরে ঘামছে , কি হয়েছে?
মাহি ওর কানের দুল জোড়া খুলে দিল ।
: এখন বলো তো মন খারাপ কেন ?
আমার টেনশন হচ্ছে !
রুবা নিজেই মাহির বুকের কাছে মাথাটা রাখলো ,
: আমার খুব আম্মা কে মনে পড়ছিল! সারাজীবন আম্মা আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেছে। একটা সময় অনেক দুঃখে গেছে জীবন আমাদের ,তারপর আব্বার কাছে একটা সিকিউর জীবন পেলাম আমরা।
: হুম শুনেছি রুবা , থাক সেসব কথা !
আম্মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর এত বিয়ে বিয়ে করেছে আমার, কিন্তু আমার বিয়ে দেখে যেতে পারেনি। আজ যখন , খালামনি আর রিয়া আপু কাঁদছিল তখন আম্মা কে মনে পরে গেল। আম্মা তো আমার বিয়েটা দেখেনি বেঁচে থাকলে আম্মা ও এভাবে কখনো আনন্দ নিয়ে কখনো চোখের পানি নিয়ে আমার বিয়েটা দিত।
বারবার আমার সেই কথাটা মনে হচ্ছিল! সব মেয়ের বিয়ে র পর বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি বলে দুটো বাড়ি থাকে, আমার কোন বাপের বাড়ি নেই। কোথাও যাওয়ার উত্তেজনা নেই। আমার নিজের বলে একটা পরিবার নেই ! পৃথিবীতে নিজের কেউ নেই !
মাহি রুবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ,
: তোমার বাপের বাড়ি, শ্বশুড়বাড়ি সব বাড়ি মিলিয়ে এটা তোমার নিজের বাড়ি ঠিক আছে রুবা। এই বাড়িটা কে তোমার আপন মনে হয় না ?
: রুবা মাথা নাড়ল!
: তাহলে ? তুমি কখনো এই কথা আর বলবে না তোমার কেউ নেই! আমার কথা বাদ দাও , মা ।
মা তোমার জন্য কতটা ফীল করে তুমি জানো না রুবা?
: জানি
: তাহলে এই কথা কেন বলছো ?
তুমি কতটা লাকী জানো, তোমার শ্বশুর শাশুড়ি নিজের ছেলে র চেয়েও বেশি তোমাকে ভালোবাসে! হসপিটালে প্রতিদিন কত ব‌উ যে আসে, শ্বশুড়বাড়ির অত্যাচার এ কখনো আধ মরা হয়ে কখনো মরে, ওদের দেখি আর আমার বাড়ি টা দেখি, তোমাকে আর মা কে দেখি , তোমাদের সম্পর্ক টা দেখি কি যে ভালো লাগে রুবা বলে বোঝাতে পারবো না।
: রুবা কাঁদছে !
একটা কথা বলব, আমাদের কখনও বেবি হলে আমি প্রে করব আমাদের যেন মেয়ে না হয় !
: এটা কেমন কথা রুবা ?
: আমার মায়ের ভাগ্য আমার ভাগ্য আমার মনে হয় আমার মেয়ে হলেও ওর ভাগ্যে ও যদি এমন হয় ?
: রুবা ,রুবা এসব কি উল্টোপাল্টা চিন্তা করো তুমি ? তোমাকে আসলে সাইকোলজিস্ট এর কাছে নেয়া উচিত!
: রুবা মাহিকে ধরে কাঁদছে!
: এখন কান্নাকাটি বন্ধ করো রুবা , যাও চেন্জ করে আসো! উঠো। এত মেকআপ এর ভেতরে তোমাকে পাচ্ছি না আমি !
: যাওয়ার শক্তি পাচ্ছি না বুঝলে !
: কোলে তুলে নিয়ে যাব , তুমি বললে আমি খুশি হয়েই নিয়ে যাব । মাহি হেসে বলল!
: না থাক যাচ্ছি , বলে উঠে গেল রুবা !
মাহি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, নিঝুম আর ওর কথা শুনেনি রুবা!
ও তো আতংকে জমে যাচ্ছিল এই ভেবে রুবা রুমে এসেছিল আর ওরা খেয়াল করেনি। নিঝুম যেভাবে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল এটা দেখলে তো না জানি কি হতো আজ!
: দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো মাহি এই আতংক তাকে সারাজীবন কি বয়ে বেড়াতে হবে !
মাহি রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিল !

রুবা ড্রেস চেঞ্জ করে, মেকআপ ধুয়ে রুমে ঢুকলো! শাড়ি ভাঁজ করতে করতে বলল,
: তুমি এখন বসে আছো কেন ,যাও চেন্জ করো?
: হুঁ যাচ্ছি, রুবা লাস্ট তিন মাসের ভেতরে তোলা ছবি আছে তোমার, ভিসার জন্য লাগবে!
: না নেই ,তুলতে হবে তাহলে !
মাহি কথা বলতে বলতে ই ওর পাঞ্জাবি খুলে খালি গা হতেই রুবা ওর দিকে তাকিয়ে বলল ,
: তোমার গলার কাছে কি হয়েছে ? কাটলো কিভাবে !
: মাহি আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাজ্জব হয়ে গেল ওর কলার বোনের উপর প্রায় এক ইন্চির বেশি আঁচড়ে র দগদগে ক্ষত! সঙ্গে সঙ্গে ই মনে পড়লো নিঝুম এর নখে লেগে এমন হয়েছে। ব্যথা ফীল করেছিল তখন তাই বলে এতটা! ও হাত দিল আঁচড়ের উপর! চিন্তা করছে ,কি বলবে রুবাকে ?
রুবা শাড়ি রেখে ওর কাছে এসে দাঁড়ালো , দেখি কাটলো কিভাবে বললে না‌ তো ? রুবা হাত রাখলো কাটা জায়গাটা তে!
: বুঝতে পারছি না রুবা ?
: এত টা কাটলো টের পেলে না , আশ্চর্য ! দাঁড়াও এন্টিসেপ্টিক লাগাতে হবে !
রুবা মেডিসিন বক্স টা বের করতে গেল !
মাহি মনে মনে খুব বিরক্ত হলো , ধুত কি বাজে একটা ব্যাপার হলো ! রুবাকে কি উত্তর দিবে সে ?
মেয়েদের এই বড় নখ দেখলেই তার বিরক্ত লাগে । অসহ্য।
মাহি ওয়াস রুমে ঢুকে গেল!
আয়নায় নিজেকে দেখে নিজের ই বিরক্ত লাগছে। রুবা প্রশ্ন করছে ?
কি উত্তর দিব , যে নিঝুমের নখ লেগেছে! দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে এটা আঁচড়ে র দাগ ! মাহি চোখে মুখে পানি দিল!
শাওয়ারের নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর মনটা কষ্টে ভরে গেল, আমি তো নিঝুম তোর মন টাই ছিঁড়ে ফেলেছি, তার কাছে এই অসাবধানতাবশত লেগে যাওয়া আঁচড় তো কিছুই না । তোর কষ্ট টা আমি বুঝি কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। বিয়ের পর পর তোর সঙ্গে সহজ ব্যবহার করলে তুই আজ‌ও আমার প্রতি দুর্বল হয়েই থাকতি। আজ এক সেকেন্ড যেই গেলাম তোর রুমে তুই নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললি ,আর যদি আমি রুবাকে বিয়ের পর তোকে এড়িয়ে না চলতাম কি ভয়ংকর কান্ড হতে পারতো ! যে ব্যাপারটা আগে কেউ জানে নি সেই ব্যাপার টা তখন সবাই জেনে যেত!

তুই তোর বান্ধবী রা আমাকে নিয়ে কত ধারণা করেছিস আমি জানি। সুন্দরী ভাইয়ের বউ দেখেই আমি সহজে ভুলে গেছি তোকে।
আমার কি করা উচিত ছিল রে, তোকে আশাদিয়ে আটকে রাখা।
তোদের মেয়েদের ভালোবাসা মন থেকে হয় আর আমি পুরুষ মানুষ তাই আমার ভালোবাসা শরীর থেকে এই ধারণা ই তোদের!
আমি আর রুবা জানি এই বন্ধ দরজার আড়ালে কত চোখের পানি ঝড়ছে।

রুবাকে না হয় একটা কিছু দিয়ে বুঝ দিয়ে দিলাম ।ও এত ঘাঁটাঘাঁটি করবে না জানি!
হঠাৎ মাহির খেয়াল হলো, পাঞ্জাবির মধ্যে আবার লিপস্টিক এর দাগ লাগে নাই তো ? ওর পিঠে মুখ ঘষে কাঁদছিল নিঝুম?
ওহ গড!
একবার রুবার নখের আঁচড় দেখে নিঝুম যা ইচ্ছা বলে গেছে এখন নিঝুম এর নখের আঁচড় দেখে রুবা কিছু ভাববে ? শালা জীবনটাই ফানাফানা হয়ে যাচ্ছে।
ওফফ কি এক যন্ত্রণা , নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে।

মাহি ওয়াস রুম থেকে বের হলো ! রুবা হেক্সিসল আর তূলা নিয়ে কাছে এলো ,
: দেখি লাগিয়ে দেই !
: হুম !
: অনেকটা কেটেছে , আমার কি মনে হয় রিয়া আপুর হাতে কি সব হাবিজাবি ঝুলছিল না ওসব লেগে কেটেছে তুমি টের পাওনি হুলুস্থুল এর ভেতর!
তোমাকে ধরে অনেক কাঁদছিল আপু !
: হুম হতে পারে ! রুবা তুমি কি আমার জন্য একটু কফি বানিয়ে আনতে পারবে ?
: রুবা হেসে বলল পারব আনছি , আগে নিওবেক্রীন লাগিয়ে দেই !
: আমি লাগিয়ে নিচ্ছি তুমি কফি নিয়ে আসো!
রুবা কফি আনতে বের হচ্ছে, মাহি পিছনে ডাকলো,
রুবা!
: হুঁ
: মা কে এই কেটে গেছে ব্যাপার টা বলার দরকার নেই কেমন ?
: হুম ঠিক আছে !
হাসলো মাহি !
রুবা বের হয়ে যাওয়ার পর মাহি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অয়েন্টমেন্ট লাগাচ্ছে আর চিন্তা করছে কি করছে সে ?
রুবাকে নিঝুমের ব্যাপার টা বলে ফেলা বরং সহজ এই প্রতিদিনের আতংকের চেয়ে ! যা হবার হবে ! ইদানিং তার জীবনে তো শুধু মানসিক যন্ত্রণা আর যন্ত্রণা আর কত ! রুবা কষ্ট পাবে , কাঁদবে, মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়বে সে সামলে নিবেই নিবে ।
রুবা প্লীজ তুমি আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো তখন!

এই নখের আঁচড় টা বুঝিয়ে দিল কোন কিছুই চেপে রাখা সহজ না ! সত্যি টা প্রথমে বলা কঠিন কিন্তু একবার সত্য দিয়ে শুরু করলে সব সহজ হয়ে যায় আর অন্য দিকে মিথ্যে টা প্রথমে বলা খুব সহজ কিন্তু এর পর কঠিন থেকে কঠিনতর করে তুলে পরিস্থিতি !
যেমন ওর পরিস্থিতি। মাহি তাড়াতাড়ি খুলে রাখা পাঞ্জাবি টা দেখলো , নাহ কোন দাগ নেই !
বিছানায় শুয়ে চিন্তা করছে রুবাকে কিভাবে বলবে সে ! কবে বলবে ? এখন তো অবশ্যই না !
সিঙ্গাপুর থেকে আসি ওর মানসিক অবস্থা টা একটু ভালো হোক , সে বলবেই নিঝুম এর কথা !
রুবা তুমি প্লিজ আমাকে সেদিন বুঝার চেষ্টা করো !
আমি নিঝুম কে ভালোবাসতাম, কিন্তু আজ আমার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সব তুমি এবং তুমি! আমাদের বিয়ের পরিস্থিতি টা তে কারো হাত ছিল না পুরো টাই আমার তোমার ভাগ্য রুবা!
তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে রুবা !

রুবা কফি নিয়ে রুমে ঢুকলো !
: তোমার কফি !
: তুমি খাবে না , একা খাব? কফির মগ হাতে নিতে নিতে বলল মাহি!
মাহি কফিতে চুমুক দিল। তারপর রুবার দিকে মগ এগিয়ে দিয়ে বলল, খাও !
: রুবা হেসে বলল এই জন্যই আমার জন্য আনি নাই তোমার কাছ থেকে খাব বলেই !
: মাহি হাসলো !

ঘুমাতে এসে মাহি হঠাৎ প্রশ্ন করলো ,
: রুবা তুমি জীবন টা কে কিভাবে দেখো বলো তো ?
: আমি নিজের চোখ দিয়ে জীবন টা কে আর দেখলাম কোথায় ?
: মানে ?
: একটা সময় আম্মা দেখিয়েছে, আব্বা দেখিয়েছে, তারপর তোমার ভাইয়া আর মা এখন …
: এখন ?
: এখন তোমার চোখে জীবন দেখি !
: সত্যি ই রুবা তুমি আমার চোখে জীবন দেখবে তো ?
: দেখছি !
: আমি যা বলব তাতেই বিশ্বাস রাখতে পারবে ?
: আমি মানুষ কে বিশ্বাস করতে পছন্দ করি ।

জানো রুবা আমি সারাজীবন একটা নিশ্চিন্ত জীবন পার করেছি । ব্যারিস্টার বাবা বংশানুক্রমিক ভাবেই অঢেল সম্পদ নিজে পেয়েছে ,তাই চাইবার আগেই সব পেয়েছি আমরাও। না পাওয়ার কষ্ট কখনও আমাদের দুই ভাই কে স্পর্শ করেনি। ভাইয়া যখন চলে গেল বিশ্বাস করবে না হঠাৎ মনে হলো কোন সম্পদ ই মানুষের ভেতরের কষ্ট কে দূর করতে পারে না। সব প্রাপ্তি কে অর্থহীন মনে হলো।
আমি তখন রাতের পর রাত জেগে চিন্তা করতাম কি হবে এই বাড়িটার , কি হবে মা আর বাবার ?
একটা সময় তোমার আমার বিয়ে হলো , এর পর ধীরে ধীরে এই বাড়িটা আবার আগের মত হয়ে উঠতে নিলো।
তুমি তো দেখেছো আমি একটা মেজাজী মানুষ ছিলাম , আমি তো ও রকম ই ছিলাম নিজের টা আদায় করে নেয়া টাইপের, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা।
ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আমি কিভাবে যেন ওর মত হয়ে উঠতে থাকলাম। ওর মত ধীর স্থির ওর মত সবার টা আগে চিন্তা করা এই টাইপের।
: তুমি খুব তাড়াতাড়ি নিজের প্রভাব ফেলে দিতে পারো, তোমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলতে পারো !
আমার উপরেও শুরু থেকে করেছো!
: তাই রুবা ?
: হুম । এবং সত্যিই করেই বলছি এই কারণেই হয়তো আমি তাড়াতাড়ি জীবনের এই অংশ টা শুরু করতে পেরেছি।
রুবা তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ তুমি কখনও আমাদের বিয়েটা নিয়ে নিজেকে দোষী ভাববে না
এটা তোমার আমার ভাগ্যে ছিল রুবা।
: ভাগ্যের কথা বলছো? আমার চেয়ে বেশি ভাগ্য কাকে নিয়ে আর খেলেছে বলো ?
: এভাবে বলো না প্লিজ !
: না বললেই কি সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে !
মাহি চুপ করে গেল কোন জায়গার কথা কোন জায়গায় চলে যাবে কে জানে ! আবার কষ্ট আবার কান্নাকাটি শুরু হবে। এমনিতেই আজ বাবা মায়ের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছে রুবা !
একটা কথা চরম সত্য একটা মেয়ের বাবা মায়ের জায়গা কেউ নিতে পারে না !
যত আদর যত্ন পাক রুবা মায়ের কাছ থেকে কিন্তু নিজের মায়ের অভাব সে সারাজীবন ফীল করবেই।

রিয়ার বিয়ের পর সাফিয়া বেগম আজগর সাহেব কে নিয়ে চেক আপ করানো র জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার ব্যাপারে তোড়জোড় শুরু করলেন। চিন্তা করছেন, সেই কবে ভালো করে ডাক্তার দেখানো হয়েছে এর পর আর ডাক্তারের নাম ই শুনতে পারে না মাহির বাবা।
এক পর্যায়ে তো সাফিয়া বেগম বুঝেই গিয়েছিলেন বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছাই আর রাখেন না তিনি।‌
সেই অবস্থা থেকে কত চেষ্টা র পর বের হয়েছেন ।
এবার রাজি হয়েছে সিঙ্গাপুর যাবেন ।
এখন শুধু ভিসা আসলেই পুরো পরিবার নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়।
এসব ভাবতে ভাবতেই আলমারি গোছাচ্ছিলেন হঠাৎ শিহাবের একটা ছবিতে চোখ পড়লো।
তিনি শিহাবের সব ছবি সরিয়ে রেখেছেন।
তিনি ইচ্ছে করেই শিহাব এর সব কিছু তুলে রেখেছেন। শিহাব শুধু এখন তার একার সম্পত্তি । শিহাব কে নিয়ে তিনি কাউকে কষ্ট পেতে দিতে চাননা।
দরজায় নক করার শব্দ পেয়ে তিনি ছবি ঢুকিয়ে রাখলেন!
: কে, দরজা খোলা এসো !
ছোট ভাইয়ের ব‌উ তারানা এসে ঢুকলো।
: কি খবর তারানা , রিয়ার বিয়ের পর তো তোমাদের কারো খবর নেই এদিকে আসোই না!
: আপা বুয়া ছুটি গেছে বাড়িতে বের হতে পারছিলাম না ! আজ মেয়েদের বললাম তোমরা নিজেদের টা সামলাও আমি আজ বড়পার বাসায় যাচ্ছি! ছোট আপাও আসছে ।
: তাই নাহার তো মেয়ে একটা বিয়ে দিয়েই ব্যস্ত হয়ে গেছে।
: শুধু দাওয়াতের উপর আছে ছোট আপা !
: হুম।

উনাদের কথার মাঝখানে ই নিঝুমের মা এসে হাজির হলেন।
: কি দাওয়াত পর্ব শেষ তোমার নাহার , সাফিয়া বেগম বললেন!
: শেষ আপা !
: রুবা কোথায় আপা দেখছি না যে ?
: রুবা এখন খুব ব্যস্ত !
: কি নিয়ে ?
: মাহি কে নিয়ে ব্যস্ত , বলে সাফিয়া বেগম হাসলেন!
মাহি ওকে বিভিন্ন কাজ দিয়ে বিজি করে রাখছে । মাহিকে কখনো দেখছো , খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ফরমাইস দিতে ? এখন মাহি প্রতিদিন রুবাকে এটা, ওটা খাওয়ার ডিমান্ড দেয়। রুবা সকাল থেকে সেসব বানাতে ব্যস্ত থাকে ।
ঐ দিন পাটিসাপটা পিঠার ডিমান্ড দিয়েছে বুঝলে , রুবা বানাতে গেছে পিঠা ইউটিউব দেখে । তারপর পিঠা যখন মনের মত হয় না সে কি মন খারাপ , কান্নাকাটি অবস্থা ! পিঠা কি আর একদিনে হয়!
হাসলেন সাফিয়া বেগম।
নাহার বেগম বললেন, আপা রুবা মাহিকে মন থেকে মেনে নিয়েছে তো ?
: এই কথা কেন বললে নাহার ? সাফিয়া বেগম চিন্তিত চোখে তাকালেন বোনের দিকে।
: রুবা তো বড়পা অনেক চুপচাপ টাইপের মেয়ে অনেক সময় চুপচাপ টাইপের মেয়ে রা নিজের সঙ্গে আপোস করে ফেলে কাউকে বুঝতে দেয় না !
: রুবা কে আমার চেয়ে ভালো কেউ চিনে না , আমি দেখেছি রুবা মাহির সঙ্গে কতটা হ্যাপি ।
: তারপরও বড়পা মাহির জন্য আমার মন টা কেমন করে । ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই বিয়ে বাড়ি, ব‌উ এসব নিয়ে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতো । মনে আছে বলতো, তার বিয়ে হলে বাসা লাইটিং হবে , তার ব‌উ তোমার সব গয়না দিয়ে সাজবে। শিহাবের ব‌উ কে কিছু ই দিবে না সে। আর দেখো ছেলেটার ভাগ্য তার বিয়ে হলো , কোন আয়োজন নেই না বাড়ি সাজলো না ব‌উ !

সাফিয়া বেগম নিজের বোনের কথা শুনে ধাক্কা র মত খেলেন।

( চলবে )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here