হঠাৎ_তুমি_এলে #লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব-৯

0
333

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৯

শরীরটা বেশ ভারী ভারী লাগছে। নিস্তবতা যেন ঘিরে ধরেছে চারপাশ। কোথাও থেকে সিগারেটের গন্ধ ধেয়ে আসছে। আমার মাথাটা হালকা ব্যাথা করতে লাগল। ব্যাথায় চোখটা মেলতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। তবুও জোর করে চোখ মেলে চারপাশ দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমি একটা নতুন রুমে শুয়ে আছি। আমি সমস্ত শক্তি খাটিয়ে চোখটা তাকিয়ে দেখলাম সেই বাবার বয়সী লোকটা অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় বসে সিগারেট টেনে ধোঁয়া উড়াচ্ছে। আর আমি বউ সাজে শুয়ে আছি। আমাকে বউ সাজানো হলো কখন বুঝতে পারছিলাম না। হয়তো জ্ঞান চলে যাওয়ার পর খবিশ মহিলাটা আমাকে এভাবে সাজিয়ে পাঠিয়েছে। আমি ভয়ে শুয়া থেকে উঠে বসে পড়লাম। লোকটা আমাকে বসতে দেখেই সিগারেটটা নীচে ফেলে আমার কাছে বসে বলল

“তোমার ঘুম ভাঙ্গার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

এই বলে লোকটা আমার দিকে লোভী চোখে তাকাল। লোকটার চাহুনি দেখে ভয় পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দূরে যেতে চাইলাম। কিন্তু লোকটা আমার হাত টা তার বুকে নিয়ে চাপ দিয়ে ধরে বলল

“কোথায় যাচ্ছ? আমাকে ভয় পাচ্ছ কেন? আমি তোমাকে কিছুই করব না শুধু আদর করব। আমাকে খুশি করলে তোমারেই লাভ। যা চাইবে তা পাবে। এত টাকা দিয়ে কী করব আমি। একা জীবন আমার। এ একা জীবনটাকে একটু ভালোবেসে সুন্দর করে দাও।”

লোকটার কথা শুনে ঘৃনায় বুক ভরে গেল। আমার বাবার মুখটা কল্পনায় আসার পর লোকটাকে দেখে ঘিনঘিন করতে লাগল। আমি লোকটার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম

” আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি এসব কাজ করতে পারব না। আমাকে জোর করে আপনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমি আপনার মেয়ের বয়সী। নিজের মেয়ে মনে করে ছেড়ে দিন।”

এ বলে আমি লোকটার থেকে নিজেকে বাঁচাবার জন্য দূরে যেতে নিলাম। কিন্তু লোকটা আমার হাতটা ধরে টানতে টানতে বলল

” আমি তোমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি সেটা কী এমনি এমনি। ওরা পাঁচ লাখ পেয়েছে তুমি আমাকে খুশি করলে তোমাকে এক লাখ দিব। আসো সুন্দরী আমার কাছে আসো।”

এ বলে লোকটা আমাকে এসে ঝাঁপটে ধরে আমার উপর সমস্ত শক্তি খাটাতে লাগল। আমিও আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললাম

“আমার কোনো টাকার দরকার নেই। আপনি আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এসবে জড়াতে চাই না।”

লোকটা একটা বিকট হাসি দিয়ে বলল-

“এর আগে অনেক মেয়েকে কিনেছি সবাই একই কথা বলেছে। কিন্তু জোর করে করার পর সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। একবার আসো, করলেই ঠিক হয়ে যাবে। তুমি এ লাইনে নতুন তাই এমন বলছো। পুরাতন হলে দেখবে এগুলো কিছু না। আমি তোমার সব কষ্ট দূর করে দিব।”

বলেই লোকটা আমার উপর আসতে নিল। আমি আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে পুনরায় উনাকে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দিলাম। উনি তাতে আরও ক্ষেপে গিয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল। নিজেকে বাঁচানোর জন্য বিছানা থেকে নীচে চলে গেলাম। উনি আরও হিংস্র হয়ে আমার কাছে আসতে লাগল। আমি ঘরের দরজা খুলে ডাইনিং রুমে দৌঁড়ে চলে গেলাম।

লোকটাও আমার পেছন পেছন আসতে নিল। আমিও আর নিজেকে রক্ষা করতে পারছিলাম না। মনে হলো এ জীবনে যাওয়ার আগে মরে যাওয়া ভালো। তবে এ পশুর হাত থেকে মরার আগে নিজেকে বাঁচাতে পারব তো সে চিন্তায় করছিলাম। তারপর…

এবার কথাগুলো বলে তুলি জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। অপরদিকে তুলির কাহিনি শুনে অরন্যের চোখে অশ্রুজল চিকচিক করতে লাগল। অরন্য তুলির দিকে তাকিয়ে বলল

“চুপ হয়ে গেলেন কেন?”

তুলি আরও জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। অরন্য তুলির কান্না দেখে হালকা ঝাড়ি দিয়ে বলল

“কান্না করলে বুঝব কীভাবে কী হয়েছে?”

তুলি কাঁদতে কাঁদতে বলল

“তখন আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না।
আশেপাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলাম যাতে করে লোকটাকে আঘাত করে নিজেকে বাঁচাতে পারি। কিন্তু তেমন কিছুই পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ টেবিলের উপর ফল কাটার ছুরি দেখলাম। সেটা নিয়ে উনাকে ভয় দেখিয়ে বললাম

“আমার কাছে আসলে একদম খুন করে দিব।”

লোকটা হেসে হেসে বলল

“তুমি আমাকে খুন করতে পারবে না। অহেতুক ভয় দেখাবে না। কাছে আসো আমার। মামনি ছুরিটা ফেলে দাও।”

পুনরায় লোকটা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে নিল।অপরদিকে লোকটার মুখে মামনি ডাক শুনে আমার শরীরটা আরও জ্বলে গিয়েছিল। মামনি ডেকে একটা মেয়ের সম্মান কেড়ে নিতে চাচ্ছে ছিঃ। ঘৃনায় আমার হিতাহিত বুদ্ধি লোপ পেল। আমি কী করব বুঝতে না পেরে ছুরিটা লোকটার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম। আর লোকটা সাথে সাথে নীচে পড়ে গিয়ে ছটফট করতে লাগল। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম খুব। এভাবে কাউকে খুন করতে হবে কখনও ভাবিনি। তবে লোকটা মারা যাওয়ার সময় ঐ মহিলাকে কল দিয়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এ বাসায় থাকাটা আমার জন্য বিপদজনক হয়ে যাবে। তাই ছুরিটা লোকটার পেট থেকে বের করে শাড়ির নীচে লুকিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। বাসা থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর কিছু লোক আমার পিছু নিল। আমি সাথে সাথে দৌঁড়ে লুকানোর চেষ্টা করলাম। লুকিয়ে লোকগুলোকে ফাঁকি দিয়ে ঐ ব্রিজের কাছে আসলাম। খুন করে এসেছি তাই বাসায় যেতে পারছিলাম না। অপরদিকে পুলিশের কাছেও যেতে পারছিলাম না। কারণ তারা আমাকেই প্রহার করবে এটাই মনে হয়েছিল। কোনো কিছু উপায় না পেয়ে ব্রিজের দিকে তাকিয়ে রইলাম কতক্ষণ। তারপর মনে হলো এ পাপী জীবনে যাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভলো। এজন্য ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে নিলাম।

এর মধ্যেই আপনি আসলেন। আর বাকি কাহিনি তো জানেন। সেদিন এত অবিশ্বাসের ভিড়ে আপনাকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছিল। বেশ দুটানায় পড়ে গিয়েছিলাম আপনার সাথে আসব কি’না এটা ভেবে। পরে চিন্তা করলাম আপনিও যদি এমন কিছু করেন ছুরি তো আছেই আপনাকেও শেষ করে দিব। এ ভেবে আপনার সাথে আপনার বাসায় আসি। আর দুমাস আপনার বাসায় কাটাই।

অরন্য তুলির কথা শুনার পর একটু অশ্রুজল অরন্যের চোখের কোণায় আসলেও মুখের হাসি দিয়ে তা নিবারণ করে বলল

“তার মানে আপনি একটা মার্ডার করেছেন?”

তুলি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল-

“হ্যাঁ। তবে সেটা আমি পরিস্থিতির শিকার হয়ে করেছি।নিজের সম্মানটাকে বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে করতে হয়েছে।”

অরন্য দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল

“আচ্ছা মার্ডার করার পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিল জানতে পারি কি? জীবনে এ প্রথম কোন মার্ডার করা আসামির সামনে বসে আছি। আমার খুব শখ ছিল একজন মার্ডার করা আসামিকে সামনাসামনি দেখব। বন্ধুত্ব করব। আজকে সে ইচ্ছাটা পূরণ হয়েছে। আমার তো বেশ ভালোই লাগছে। ”

তুলি ভালোই বুঝতে পেরেছিল অরন্য তার সাথে এ বিষয়টা নিয়েও মজা করছে। এ দুমাসে অরন্যকে একটু হলেও চিনেছে সে। বড্ড খামখেয়ালে ছেলে অরন্য। তাই তুলি ছুরিটা বের করে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল

“দেখুন আমি এখনও মানুষ চিনতে ভুল করতে পারি।মানুষের বাইরে আপনি যে কোনো অমানুষ না তার তো প্রমাণ নেই।”

অরন্য ছুরিটা লক্ষ্য করে বলল

“ঐরকম কিছু হলে হাতে তো ছুরি আছেই আমাকে মার্ডার করে দিয়েন। একটা করতে পারছেন আরেকটা করলে সমস্যা হবে না। আসার পর থেকেই ঐটা নিয়েই ঘুরছেন। এ ছুরিটা দেখে কেন জানি একটা ভাব আসছে শরীরটায়। কি পাওয়ার এ ছুরির, একটা মানুষ মেরে ফেলল। দোষটা তো আপনার না। দোষটা ছুরির। কারণ মেরেছে তো ছুরি। আপনি শুধু ছুরিটা ধরেছিলেন এই যাহ…..

অরন্যের এরকম খামখেয়ালে কথা শুনে তুলি রেগে গিয়ে বলল

“থামবেন আপনি?”

“আচ্ছা থামলাম।তবে আপনি কি কফি বানাতে পারেন?”

কর্কশ গলার তুলি বলল

“না, আমি কোন রান্না পারি না।”

অরন্য হাসতে হাসতে বলল-

“আমি রেসিপিটা শিখিয়ে দিচ্ছি। সমপরিমাণ পানি,কফি আর চিনি নিয়ে কাটা চামচ দিয়ে নাড়তে নাড়তে ফোম বানিয়ে নিবেন। তারপর দুধের উপর ঢেলে গুলিয়ে খেয়ে ফেলবেন।”

তুলি রাগী চোখে অরন্যের দিকে তাকাল। অরন্য তুলির রাগী চোখ দেখে দুহাত তুলে বলল

“আরে রেসিপিটা বলেছি তার মানে এই না যে আপনাকে এখনেই বানিয়ে খাওয়াতে হবে। আপনি পরের বার বানাবেন।আজকে আমিই বানাব।”

এ বলে অরন্য টেবিল থেকে একটা ডায়রি তুলির দিকে এগিয়ে বলল

“এই ডায়রিটা পড়ুন।”

তুলি কৌতুহল চোখে অরন্যকে বলল

“এটা কার ডায়রি?”

“ডায়রির উপরে নাম লিখা আছে দেখুন।”

তুলি ডায়রির উপরে খেয়াল করে দেখল – সাবিহা জন্নাত নিরা লিখা। তুলি ডায়রিটার উপরের নামটা পড়ে বলল

” এটা তো কোনো মেয়ের ডায়রি?”

“হ্যাঁ। তাইতো পড়তে দিয়েছি।”

“ঐ মেয়ের অনুমতি ছাড়া আমি কেন ঐ মেয়ের ডায়রি পড়ব।”

“ঐ মেয়ের অনুমতি নেওয়া আছে।”

” এটা কি আপনার বউ এর ডায়রি।”

“নাহ। আমার বউ এর নাম তো রূপা ছিল। আর এ মেয়ের নাম নিরা।”

তুলি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল

” তাহলে কি এটা আপনার কোনো প্রেমিকার ডায়রি?”

“আপনি পারেনও কথা প্যাঁচাতে। আপনি ডায়রিটা পড়ুন আগে। আমি এর মধ্যে কফিটা বানিয়ে নিয়ে আসছি।”

অরন্য এ বলে রুম থকে প্রস্থান নিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here