হঠাৎ_তুমি_এলে #লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব-৪

0
429

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৪

জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম নতুন একটা রুমে। আমি বেশ অবাক হলাম এটা ভেবে যে একটা নতুন রুমের নতুন বিছানার উপর আমি শুয়ে আছি কীভাবে? চারপাশ তাকিয়ে দেখলাম, আর বুঝতে পারলাম সত্যিই রুমটা নতুন। কিন্তু আমি এ রুমে কীভাবে আসলাম ভেবে পাচ্ছিলাম না।

বিছানা থেকে নামতে নিলাম পেটে বেশ ব্যথা অণুভব করলাম পিঠেও অনেক ব্যাথা পেলাম।পিঠের ফুসকাটা গলে পানি পড়ছে। আর এজন্যই এত জ্বলছে । মাথায়ও অনেক ব্যথা হতে লাগল।

এর মধ্যে পেটের ব্যথাটাও প্রবল হতে লাগল। এ ব্যথা নিয়ে কোনোরকমে উঠলাম।কিন্তু ভেবে পাচ্ছি না এ নতুন বাসায় আমি কি করে আসলাম । আর নিলয়েই বা কোথায় গেল সেটাও মাথায় আসছে না। এদিকে ক্ষুধায় আমার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। পেট ব্যথা নিয়ে পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে রন্না ঘরে গেলাম। কিছু ফল পেলাম। তা নিয়ে খেলাম ক্ষুধা নিবারণের জন্য। কারণ এত ক্ষুধা লেগেছিল কী বলব। তারপর কাঁতরাতে কাঁতরাতে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম।

কয়টা বাজে তাও জানি না। খেয়াল করলাম এ রুমের সাথে বারান্দা আছে। বারান্দা দিয়ে হালকা আলো ঘরে পড়েছে। কোনো রকমে পুনরায় বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গেলাম একটু। আজকে অনেকদিন পর আকাশ দেখছি। আগের বাসায় থাকতে বারান্দায় যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যে রুমের সাথে বারান্দা ছিল সে রুমটা সবসময় নিলয় তালা দিয়ে রাখত। আর আমার রুমের চারপাশে বিশাল বিশাল অট্টালিকা ছিল যার জন্য বাইরের কোনো আলো প্রবেশ করত না। ছয় মাসে আকাশ দেখতে কেমন হয় ভুলে গিয়েছিলাম। আজকে আকাশটা দেখে মনটা বেশ শান্ত লাগছে। কতদিন এ আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ, সূর্য দেখি নি। এ বন্দি জীবন থেকে কবে যে মুক্তি পাব জানি না।
ঠিক সে মুহুর্তে খেয়াল করলাম কিছু পাখি কিচিরমিচি করে উড়ে যাচ্ছে। আহ! কী শান্তিতে স্বাধীন ভাবে উড়ছে। আমি যদি একটু উড়তে পারতাম কত ভালোই না হত। কিন্তু আমার উড়ার ডানা দুটো যে আজকে ভেঙ্গে থুবরে পড়েছে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নামল। বারান্দা থেকে যেতে ইচ্ছা করছে না তবে মাথাটা অনেক ঘুরাচ্ছে। তাই বেশিক্ষণ বারান্দায় থাকার ধৈর্য ছিল না।
যার দরুণ ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম নিলয় এসেছে।

নিলয় ঘরে এসেই আমার পাশে বসে পড়ল। নিলয়কে দেখে তখন খুব ঘৃনা হতে লাগল। কতটা পাশবিক আচরণ আমার সাথে করেছিল ভাবতেই ঘৃনা লাগে।

কিন্তু ঐদিন নিলয়কে একদম অন্য একটা মনুষ হিসেবে আবিষ্কার করলাম। সেদিন নিলয় আমার পাশে বসেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। আমি তার এরকম আচরণে চমকে গেলাম। কারণ এতটা ভালো সে কখনও হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। তার উপর নতুন বাসায় নিয়ে এসেছে। কারণ ছাড়া এরকম করার মানুষ নিলয় ছিল না ব্যাপারটা খুব গোলমেলে মনে হয়েছিল। আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে উঠে বসতে নিয়েও পারছিলাম না শরীরের ব্যথায়। নিলয় আমার হাতটা ধরে বলল

“আরে আরে তোমাকে কষ্ট করে উঠতে হবে না। দেখো তুলি আমি তোমাকে এভাবে আঘাত করে ঠিক করিনি। তোমার দিক টা আমার ভাবা উচিত ছিল। ইশ! দেখি তো তোমার পিঠটা।”

এ বলে নিলয় আমাকে টান দিয়ে তুলে বিছানায় বসিয়ে আমার পিঠটা দেখে নিজের কপালে নিজের হাত দিয়ে চাপরাতে চাপরাতে বলল

” হায়! আল্লাহ্ এ আমি কী করলাম? এতটা কষ্ট তোমাকে কী করে দিলাম? দাঁড়াও আমি মলম নিয়ে আসতেছি।”

নিলয় মলম আনতে গেল। আমি নিলয়ের এমন ব্যবহারে কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম এটা ভেবে যে আবার কী করে বসে কে জানে। কারণ নেশাগ্রস্ত মানুষদের কোনো বিশ্বাস নেই।

“নেশা মানুষের মনকে ব্যধিতে রুপান্তর করে। শরীর নেশাগ্রস্ত থাকলে মানুষ কখন কি করে সেটা তার নিজের আয়ত্ত্বে থাকে না”

তাই মনে মনে অনেক ভয় পাচ্ছিলাম। তখন ভয়ে ভিতরটা বারবার কম্পন দিতে লাগল। ভয়টা বেশি লাগত শারীরিক নির্যাতনের জন্য। কারণ আমার শরীরটা কোনো আঘাত সহ্য করার অবস্থায় ছিল না ।খানিকক্ষণ পর খেয়াল করলাম নিলয় এসেছে হাতে মলম নিয়ে। এসেই আমার পাশে বসে আমার পিঠটা বের করে মলম লাগাতে লাগাতে বলল

“এভাবে আঘাত করা সত্যিই ঠিক হয় নি।”

আগেই বলেছিলাম মেয়েরা আবেগের মোম একটু সহানুভূতি পেলে গলে যায়। আমিও নিলয়ের এমন ব্যবহারে গলে গেলাম। তবুও নিলয়কে ব্যপারটা বুঝতে দিলাম না। চুপ করে বসে রইলাম। নিলয় মলম লাগিয়ে শেষ করে আবার রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিলয় রুম থেকে বের হওয়ার পর আরও বেশি ভয় লাগতে শুরু করল। মনে হতে লাগল এখন না কিছু করে বসে। ভয়ে ভয়ে বিছানার এক কোণে বসে রইলাম। পিঠে মলমটা লাগানোর পর বেশ আরাম পাচ্ছিলাম।

খানিকক্ষণ পর খেয়াল করলাম নিলয় আমার রুমে আবার প্রবেশ করেছে আর হাতে ভাতের প্লেট নিয়ে।প্লেট টা হাতে নিয়ে আমার পাশে বসল। আমার পাশে বসে ভাত মাখাতে লাগল আর বলতে লাগল

” সারাদিন হয়তো কিছু খাও নি। আর নতুন বসায় হয়তো কোথায় কি আছে সেটাও জানো না।”

এবার বাসার কথা জিজ্ঞেস করার মুখ্য সময় পেলাম। আমি দেড়ি না করেই নিলয়কে জিজ্ঞেস করলাম

” আমি এ নতুন বাসায় কী করে আসলাম? আর আগের বাসাটা কী হয়েছে?”

প্রশ্নটা করার পর নিলয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ নিলয়ের চোখগুলো লাল হয়ে গেল। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এখন মাইর দিলে সহ্য করতে পারব তো? ভয়ে ভয়ে আবারও নিলয়ের দিকে তাকালাম। এবার তাকিয়ে আরও বেশি অবাক হলাম। কারণ নিলয় তার রাগটা দমিয়ে নিয়ে একটা হাসি দিল। নিলয়ের হাসিটা দেখে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করার সাহস পেলাম। তাই পুনরায় নিলয়কে জিজ্ঞেস করলাম

“বললে না তো এ নতুন বাসায় কী করে আসলাম।”

নিলয় ভাতের দলা মাখিয়ে মুখের কাছে ধরে বলল-

“আগে খেয়ে নাও তারপর সবটা বলতেছি। না খেতে খেতে শরীরের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছ। এখন খেয়ে নাও তো।”

আমিও এর বেশি জোরাজোরি করার সাহস পেলাম না। ভাতের লোকমাটা মুখে নিয়ে চিবাতে লাগলাম। একের পর এক ভাতের লোকমা দিতে লাগল আর আমি খেতে লাগলাম। অনেকদিন পর মনে হলো এক প্লেট ভাত খেলাম। নিলয় হাসতে হাসতে বলল

“একটু নিজের যত্ন তো নিতে পার। আর পানিটা দিয়ে এ ঔষধটা খেয়ে শুয়ে পড়ো। এ ঔষধটা খেলে ব্যথা কমে যাবে।”

আমি নিলয়ের কথা মতো ঔষধ টা খেয়ে শুয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ পর নিলয় আমার মাথার কাছে বসে বলল

“তুমি না জানতে চেয়েছিলে ঐ বসাটা কেন ছেড়েছি।”

“হ্যাঁ বলো। এ নতুন বাসায় আমি কখন আসলাম।”

নিলয় তখন আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল

“এটা আমার আরেকটা বাসা। এ বাসায় খালা থাকে। এতদিন তো খালা বিয়ের কথা জানত না। তাই খালাকে জানিয়েছি। জানানোর পর খালা বলল তোমাকে নিয়ে চলে আসতে। তুমি আমার ফোন দিয়ে তোমার মাকে কল করেছ কিনা সেটাও তো আমি জানি না। কারণ ফোনটা ভেঙ্গে গুড়া করে দিয়েছ। আমার কাছে মনে হল তুমি তোমার মাকে হয়ত বলেছ আমার কথা আর তোমার মা হয়তো তোমাকে নিতে চলে আসবে । তাই সকালে তোমার জ্ঞান চলে যাওয়ার পরেই এ বাসায় নিয়ে এসেছি। কারণ তোমাকে আমি হারাতে পারব না।

আর ওয়াদা করছি তোমার সাথে আমি উল্টা পাল্টা ব্যবহার করব না। শুধু একটায় অনুগ্রহ যে, তুমি তোমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করো না। কারণ এতে আমি তোমাকে হারানোর অনিশ্চয়তায় ভুগি।”

নিলয়ের এরকম কথায় আমি আবারও নরম হয়ে গেলাম,আবেগী হয়ে গেলাম। নিলয়ের হাতটা বুকের কাছে এনে বললাম

“আমি শুধু চাই তুমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসো।”

নিলয় ভরসা দিয়ে বলল-

“একদম সব ঠিক করে নিব। চিন্তা করো না। আর কালকে খালা আসবে। খালা অনেক ভালো মানুষ তোমার অনেক যত্ন নিবে। তোমার আর একা লাগবে না। আর কোনো মেয়ের সাথে ও কথা বলব না কথা দিচ্ছি।”

নিলয়ের এ কথাগুলো শুনে একটা ভরসা পেেয়ছিলাম সেদিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here