হঠাৎ_তুমি_এলে #লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব-১

0
863

#হঠাৎ_তুমি_এলে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১

তুলি গন্তব্যহীনভাবে দৌঁড়াচ্ছে। তার পথযাত্রার গন্তব্য তার জানা নেই। যাত্রাপথের কোথায় থেকে কোথায় যাচ্ছে তার জানার অন্তরায়। সে জানে না এ পথের শেষ কোথায়? মনে একটা ভরসা নিয়েই এগুচ্ছে যে এ যাত্রাপথে নতুন কোনো কাহিনির সন্নিবেশ ঘটবে আর সে কাহিনির সূত্র ধরে রক্তিম সূর্যের আলোয় আবার জীবন নানা রঙে, উপঢৌকন নিয়ে সেজে উঠবে।

বাইরে ধূলিমিশ্রিত বাতাস বয়ে যাচ্ছে। দখিনা হাওয়া ধেয়ে আসছে ব্রিজের কোণে। আকাশে এতক্ষণ মেঘ জমে এখন বেশ পরিষ্কার। চাঁদটাও ফালি দিয়ে উঠেছে। অরন্য ব্রিজের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশপানে তাকিয়ে একা একাই বিড়বিড় করছিল। রাত তখন বারোটা। অরন্যের রোজকার অভ্যাস এ ব্রিজের পাশে এসে ধূলি মিশ্রিত বাতাসে এক ঘন্টা কাটানো। আজকেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। যখন এক ঘন্টা কাটিয়ে বাড়ি যেতে পেছনে ঘুরল ঠিক তখন তুলি ব্রিজের পাশে এসে দাঁড়াল। তার পরনে ছিল লাল বেনারসি শাড়ি আর শরীরে হালকা গহনা। মনে হচ্ছে বিয়ের আসর থেকে এই মাত্র পালিয়ে এসেছে। তাকে দেখে কেন জানিনা তার মতিগতি অরন্যের কাছে ভালো ঠেঁকল না। তাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে তুলির দিকে নজর দিল। সে যখনই ঝাঁপ দিতে যাবে তখনই অরন্য তুলির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল

“বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছেন? যার জন্য পালিয়েছেন উনি আসে নি। তাই ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিতে এসেছেন তাই তো”

তুলি অরন্যের কথা শুনে তার দিকে বড়ো চোখ করে তাকাল। শাড়ির আঁচলের নীচে রাখা ছুরিটা বের করে জোরে জোরে হাঁপাতে লাগল। তার শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ বিকটভাবে যেন প্রতিধ্বনি তুলছিল। প্রচন্ডভাবে হাঁপাতে হাঁপাতে ছুরিটা হাতে নিয়ে অরন্যের দিকে তাক করে বলল

“একদম আমার কাছে আসবেন না। আমার কাছে আসলে খুন করে দেবো।”

অরন্য দুহাত উপরে তুলে ভয় ভয় চোখে উত্তর দিল

“আরে আরে কী করছেন? আমি আপনাকে কিছুই করব না। শুধু শুধু ছুরিটা এভাবে ধরে ভয় দেখাবেন না। বেশ ভয় পাচ্ছি। কলিজাটা কেঁপে যাচ্ছে।”

তুলি ছুরিটা হাতে নিয়েই একটু হাঁপিয়ে দম নিয়ে ছুরিটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলল

“এসব বলে ভুলানোর চেষ্টা করবেন না। কাছে আসলে সত্যি সত্যি আপনাকে মেরে দেবো।”

ভয় ভয় চোখ নিয়ে অরন্য তুলির দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে রহস্যময় ভঙ্গিমায় ভয়ার্ত গলায় বলল

“আসব না তো বললামেই। তা বিয়ে করবেন না বলে পালিয়েছেন ভালো কথা কিন্তু হাতে ছুরি নিয়ে পালিয়েছেন কেন? নাকি স্বামীকে বাসর রাতে মেরে চলে এসেছেন?”

অরন্যের কথা শুনে কর্কশ গলায় তুলি বলল

“একদম আজেবাজে কথা বলবেন না।”

হালকা হাসল অরন্য। বাম হাত দিয়ে মাথাটা চুলকাতে লাগল।

“বুঝেছি যার জন্য পালিয়েছেন উনি লাপাত্তা। লজ্জায় এখন বাসায় গিয়েও মুখ দেখাতে পারছেন না আবার বিয়েটাও করতে পারছেন না। তাই ঝাঁপ দিতে এসেছেন?”

“ঐরকম কিছুই না। আপনি এরকম হাবিজাবি বলা বন্ধ করুন। অসহ্য লাগছে আমার।”

“আচ্ছা, আর হাবিজাবি কিছু বলব না! তবে আপনার বেশভূষা দেখে এর বাইরে অন্য কিছু মনে আসছে না। যাহোক, আমি অরন্য(পুরো নাম তানভীর রহমান অরন্য)। এখান থেকে একটু দূরে আমার বাসা। এই মুহূর্তে যদি কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকে, তাহলে আমার বাসায় যেতে পারেন। কাল সকালে ভেবে সিদ্ধান্ত নেবেন কোথায় যাবেন বা কী করবেন। অবশ্য চাইলে আমার বাসায় কয়েকদিন থাকতেও পারবেন। তবুও আত্নহত্যা করবেন না। কারণ, আত্মহত্যা কোনো সমাধানের পথ নয়।”

অরন্যের এরকম প্রস্তাবে তুলি বুঝতে পারছে না কী করবে? এ মুহুর্তে ব্রিজের পাশে থাকাও তুলির জন্য বিপদজনক। কী করবে বুঝতে না পেরে একদম চুপ হয়ে রইল। তুলির নীরবতা দেখে অরন্য পুনরায় বলল

“আমাকে হয়তো আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু শুধু শুধু জীবনটাকে কেন নষ্ট করবেন? একজনকে ভালোবেসে পাননি তাই বলে কী জীবন নষ্ট করে দেবেন। দেখুন আমি একজন ডাক্তার। একটু দূরে যে হাসপাতালটা আছে আমি ঐ হাসপাতালেই কর্মরত অবস্থায় আছি। আপনি চাইলে নির্ভয়ে আমার সাথে যেতে পারেন।”

তুলি অরন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে কেন জানি না একটা ভরসার আলো খুঁজে পেল। শত অবিশ্বাসের পরও অরন্যকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছিল। তুলির এরকম চাহুনি দেখে অরন্য চমকে গেল। কারণ অরন্যের কাছে এ চাহুনিটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে।

অপরদিকে তুলি চিন্তা করল অরন্যের সাথে যাওয়ায় উত্তম হয়। কোন ঝামেলা হলে সাথে ছুরিতো আছেই। তাই অরন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল

“আপনি বড্ড বেশি বকবক করছেন। আপনার বাসাটা এখান থেকে কত দূরে? কতক্ষণ সময় লাগবে যেতে?”

অরন্য ভরসামাখা মুখে বলল

“খুব বেশি সময় লাগবে না। এখন রাস্তা ফাঁকা এইতো আধা ঘন্টার মতো লাগবে। আমি সাথে গাড়ি নিয়ে এসেছি।”

তুলিকা হালকা দম নিয়ে বলল

“চলুন যাই। একটু তাড়াতাড়ি গেলে ভালো হয়। নাহয় আমাকে যারা খুঁজছে তারা ধরে নিয়ে যাবে।”

অরন্য মুচকি হেসে বলল

” আপনার বাবা বুঝি পেছনে গোন্ডা লাগিয়েছে ? আগে বাংলা সিনেমায় এমন কাহিনি দেখতাম। আজকে সামনাসামনি দেখছি। নিজেকে কেন জানিনা মনের অজান্তেই হিরো মনে হচ্ছে।”

রাগী গলায় তুলি বলল

“আপনি বড্ড বেশি বকবক করেন দেখি, গাড়িতে চলুন।”

অরন্য পুনরায় হেসে তুলিকে নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে পেছনের দরজা খুলে দিল। কিন্তু তুলি গাড়ির পেছনের সিটে না বসে অরন্যকে বলল

“আমি গাড়ির সামনের সিটে বসব। আপনি যদি কোনো উল্টা পাল্টা করতে চান তাহলে পেছনে থেকে টের পাব না। আমাকে সামনে বসতে দিন। আর সাবধান কোনো ঝামেলা করার চেষ্টা করলে কিন্তু খুন করে দেবো।”

অরন্য খেয়াল করল তুলির হাতটা কাঁপছে। অরন্য হাতটা এভাবে কাঁপতে দেখে বলল

“ছুরি ধরেই তো আপনার হাত কাঁপাকাঁপি শুরু করছে। খুন করার সময় কী হয় কে জানে।”

কথাটা বলেই একটা অট্ট হাসি দিল। অরন্যের হাসি দেখে তুলি রাগে হালকা চেঁচিয়ে দাঁত কামড়ি দিয়ে বলল

” কতবার বলতেছি তাড়াতাড়ি করুন। এখানে আমার থাকাটা বিপদজনক।”

অরন্য গাড়ির সামনের দরজাটা খুলে বলল-

” যান গিয়ে বসুন। বিয়ে করবেন না ভালো কথা, বিয়ের আগেই বাবাকে বুঝাতে পারতেন। বিয়ের সময় কেন এমন করলেন। বেচারা যে বিয়ে করতে এসেছে তার কপালটা পুড়ল।”

এ বলে অরন্য হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠে গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে বলল

“সিট বেল্টটা একটু লাগান তো।”

তুলি ছুরিটা হাতে নিয়ে সিট বেল্টটা লাগাতে গিয়ে বেশ মুশকিলে পড়ে গেল। না পারছিল সিট বেল্ট লাগাতে না পারছিল ছুরিটা রাখতে। বলা যায় উভয় সংকটে পড়ে গেছে।

অরন্য তুলির বেহাল দশা দেখে একটু মুচকি হেসে সিট বেল্ট লাগানোর জন্য হাতটা বাড়াতেই তুলি ছুরিটা অরন্যের দিকে ধরে বলে উঠল

“একদম কিছু করতে আসবেন না খুন করে ফেলব।”

বিরক্ত গলায় অরন্য বলল-

” আরে বাবা! এভাবে ছুরি হুটহাট সামনে আনলে তো আমি ভয়েই মরে যাব। আমি সিট বেল্ট লাগানোর জন্য হাতটা বাড়িয়েছি আপনাকে কিছু করার জন্য না। কী যে ভাবছেন নিজেকে কে জানে?”

অরন্যের কথা শুনে তুলি একদম চুপ হয়ে গেল।অন্যদিকে অরন্য তুলির সিট বেল্টটা লাগানোর পর গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়িটা আপন গতিতে চলছে। গাড়ির জানালা দিয়ে আকাশটার দিকে তাকাল তুলি। খেয়াল করল গাড়ির গতির সাথে চাঁদটাও বেশ গতিশীল হয়ে গাড়ির সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে সমবেগে চলছে।তারা গুলো চাঁদের আশেপাশে জোনাকি পোকার মত জ্বলছে আর নিভছে । বাইরে একটা ধূলি মিশ্রিত বাতাস শরীরটাই লাগছে আর শরীরটাও বেশ নেতিয়ে পড়ছে। এই বুঝি চোখটা বুজে এলো। তবুও নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করতে লাগল। কারণ এখন ঘুমালে চলবে না। কোন উদ্দেশ্যে কোন গন্তব্যে যাচ্ছে তার কাছে সবকিছুই অজানা। কখন কী হয় বলা যায় না। তাই ঘুমের সাথে লড়াই করতে লাগল। চোখ গুলো বারবার বুজে গেলেও টেনে টেনে তাকাবার চেষ্টা করছিল। ঘুম ঘুম ভাবটা যেন চোখ থেকে কোনোভাবেই কাটছে না। এর মধ্যেই সে লক্ষ্য করল গাড়িটা থেমে গেছে। অরন্য গাড়ি থেকে নেমে তুলিকে বলল-

“বাসায় চলে এসেছি, এবার নামুন।”

তুলি গাড়ি থেকে নেমে দেখল একটা ছয়তলাবিশিষ্ট বাড়ির সামনে গাড়িটা থেমে আছে। তুলি বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলল-

“কয়তলায় থাকেন আপনি?”

শান্ত গলায় অরন্য বলল-

“পাঁচ আর ছয় তলা মিলিয়ে থাকি। আপনার ভয় নেই আপনি আলাদা রূমে থাকতে পারবেন। ভাববেন না আমি একটা রূমে থাকি আর আপনাকে সে রূমে থাকতে হবে। বাংলা নাটকে এমন হয় বাস্তবে না।”

তুলি অরন্যের দিকে যতবারই তাকাচ্ছিল ততবারই একটা আশার সুক্ষ্ম আভাস পাচ্ছিল। তাই তেমন কোনো কথা না বলেই অরন্যের পেছন পেছন যেতে লাগল। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে বেশ কষ্ট হচ্ছে । কারণ শরীরে একদম শক্তি নেই। মনের জোরটা বাড়িয়ে অনেক কষ্টে পাঁচতলায় উঠল। পাঁচ তলায় উঠার পর অরন্য দরজার লকটা খুলে বলল

“এ হলো আমার বাসা। আশাকরি আপনার এখানে থাকতে মোটেও সমস্যা হবে না।”

তুলি ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরের ভেতরে তাকিয়ে দেখল অনেক পরিপাটি করে সাজানো। বাসাটায় তিনটে বেড রুম। একটা ড্রইং রুম একটা ডাইনিং রুম। তুলি ঘুমে ভরা চোখ নিয়ে আবারও চারপাশ তাকাল। সে মুহুর্তে অরন্য তুলিকে একটা রুম দেখিয়ে বলল

“আপনি এ রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিন। দেখি আপনার জন্য কোন কিছু রান্না করতে পারি কিনা। ব্যাচেলর মানুষ তাই খাওয়া দাওয়ার কোনো নিয়ম মাফিক নেই।”

তুলি রুমে প্রবেশ করে চমকে গেল। কারণ রুমটা দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো মেয়ের রুম। ভাবতে লাগল লোকটা একটু আগে বলল ব্যাচেলর তাহলে এতগুলো মেয়েলি জিনিসপত্র দিয়ে কী করে? তাহলে কি লোকটা ভালো না? এসব ভাবতেই তার মনটা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠল। তাই সে মনে মনে ভাবছে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয় তাহলে একদম খুন করে দেবে তবুও নিজের ইজ্জত কারও কাছে তুলে দেবে না। এসব ভাবতে ভাবতেই অরন্য এসে তুলিকে জিজ্ঞেস করল

“আপনি এখনো ফ্রেশ হন নি?”

তুলি অরন্যের হঠাৎ এমন ডাকে চমকে উঠে বলল

“হ্যাঁ হচ্ছি। আচ্ছা আপনি তো বলেছেন আপনি ব্যাচেলর তাহলে এ রুমে এত মেয়েলি জিনিসপত্র কেন? এ রুম দেখেই মনে হচ্ছে এটা কোনো মেয়ের রুম।”

অরন্য হেসে বলল-

” এটা আমার স্ত্রী রুপার রুম।”

অরন্যের এরকম জবাবে তুলির বিস্ময়ের পরিমাণটা বেড়ে গেল। বিস্মিত হয়ে অরন্যকে বলল-

” আপনার স্ত্রীর রুম হলে আপনি নিজেকে কেন ব্যাচেলর দাবি করছেন?”

একটু রহস্যময় হেসে অরন্য বলল

“আমাকে আপনি বলতে পারেন বিবাহিত ব্যাচেলর।”

তুলি অরন্যের দিকে তাকিয়ে উৎসুক চোখে বলল

” আমি ঠিক বুঝতে পারছি না বিবাহিত আবার ব্যচেলর কীভাবে সম্ভব?”

অরন্য পুনরায় রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বলল-

” সময় হলে ঠিকেই বুঝবেন। এখন এত কিছু বুঝতে হবে না। আপনি ফ্রেশ হয়ে কী পরবেন? বিয়ের শাড়ি পরেতো ঘুমাতে পারবেন না। বাসা থেকে পালানোর সময় মনে হয় কাপড় চোপড় নেওয়ার সুযোগ পান নি তাই না?

কর্কশ গলায় তুলি বলল

“আপনি বড্ড বেশিই বকবক করেন। আমি এভাবেই থাকব।”

” এত ভারী শাড়ি পড়ে ঘুমাতে পারবেন?”

“হ্যাঁ পারব।”

অরন্য একটু হেসে রূমে প্রবেশ করতেই তুলি ছুরিটা ধরে পিছিয়ে গিয়ে বলল-

” একদম এগুবেন না। কিছু করার চেষ্টা করলে খুন করে দেবো।”

অরন্য তুলির দিকে না গিয়ে আলমিরা বরাবর এগিয়ে আলমিরা থেকে কাপড় বের করতে করতে তুলিকে বলল-

“আমি আপনার জন্য কাপড় বের করতে রুমে ঢুকেছিলাম। এতটাও খারাপ না যে আপনাকে একা পেয়ে কিছু করে বসব। বারবার এ ছুরির ভয় দেখাবেন না তো। এমনেই দুর্বল চিত্তের মানুষ তার উপর ছুরির এমন ভয় দেখালে এমনেই মরে যাব। মরে গেলে কি দায়ভার আপনি নিবেন?”

অরন্যকে যতই দেখছে তুলি ততই ভিন্ন মাত্রার একটা রহস্য খুঁজে পাচ্ছে। অরন্য কেন এতকিছু করছে সেটাও তার বুঝার অন্তরায়। তাই ছুরিটা নীচে নামিয়ে নীচু গলায় অরন্যকে বলল-

” আমি কোন মানুষকে বিশ্বাস করি না। মানুষ অনেক রকমের মুখোশ পড়ে থাকে যা সহজে উন্মোচন করা যায় না।”

অরন্য আলমিরাটা খুলতে খুলতে বলল-

“বিশ্বাস করাটা বোকামি তবে আস্থা রাখাটা বোকামি না। আমাকে বিশ্বাস করার দরকার নেই তবে কিঞ্চিৎ আস্থা রাখুন।”

এ বলে অরন্য তুলির জন্য কাপড় বের করে দিয়ে বলল-

” এগুলো রূপার কাপড়। আপনি দরজা লাগিয়ে কাপড় পাল্টে নিন, আমি আপনার খাবার গুলো এখানে নিয়ে আসছি।”

অরন্য রুম থেকে হনহনিয়ে বের হলো। এদিকে তুলির মাথাটা বেশ ঝিমঝিম করছে। দরজা লাগিয়ে কাপড়টা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল লোকটার বউ কোথায় তাহলে? আরও অনেক ভাবনায় মাথায় আসছে , তবে কোনো উত্তরেই পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর শাড়িটা খুলে পাল্টে নিল। এখন বেশ ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে তার। জামাটাও একদম গায়ে সুন্দর করে লেগেছে। সে বুঝতেই পারছিল অরন্যের স্ত্রী ও তার গড়নের। কিছুক্ষণ পর অরন্য আসলো খাবার নিয়ে।

খাবারগুলো সামনে পেয়ে ক্ষুধার তাড়নায় হাতটা না ধুয়েই খেতে লাগল। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এক প্লেট ভাত খেয়ে ঢেকুর তুলল । তুলির খাওয়ার শেষে অরন্য বলে উঠল

“সারাদিন মনে হয় কিছু খেতে পারেননি। বিয়ে বাড়িতে তো অনেক রান্না হয়, কিছু লুকিয়ে নিয়ে আসতেন। আমি হলে তো খাবার লুকিয়ে নিয়ে আসতাম। কত মজাদার করে রান্না হয় বিয়ে বাড়িতে। মনে হয়ে এখনেই জিভে জল চলে আসছে।”

অরন্যের এরকম গা ছাড়া কথা শুনে তুলির মাথায় রাগ চড়ে গেল। অরন্যের দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাতেই অরন্য এঁটো প্লেটগুলো নিয়ে চলে গেল। আর তুলি দরজা লাগিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্ধ ব্যতিরেকে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে অরন্যের ডাকে তুলির ঘুম ভাঙ্গল। দরজা খুলতেই অরন্য তাকে আলমিরা থেকে আরও কাপড় বের করে দিল, সবসময় পরার জন্য। বাসায় কোথায় কী আছে সব বুঝিয়ে দিল।

নিত্য সময়ের ছন্দময় স্রোতে বয়ে যাওয়া প্রহরের সাথে তাল মিলিয়ে অরন্যের বাসায় থাকতে লাগল তুলি। সে খেয়াল করল অরন্য সারাদিন হাসপাতালে ডিউটি করে আর রাতে বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে আবার রাত এগারোটায় কোথায় যেন চলে যায়। তুলি বুঝতে পেরেছিল অরন্য খুব খামখেয়ালে স্বভাবের। তবুও কেন জানি না অরন্যের সাথে কথা বলতে বেশ ভালো লাগত তা। অরন্যের চোখে ভালোবাসার ছন্দ খুঁজে পেত। তবুও নিজেকে সামলে নিত কারণ অরন্য বিবাহিত। আশ্চর্যের বিষয় হলো দেখতে দেখতে এ বাসায় দুমাস পার করে ফেলল তুলি। কিন্তু অরন্যের কোনো পরিবর্তন হলো না এবং তার স্ত্রীর ও দেখা পেল না। সবকিছুর বিস্তৃর্ণ সমাবেশে অরন্যের প্রতি একটা ক্ষীণ বিশ্বাস জাগল।

অপরদিকে অরন্যের ও মনে হলো তুলির বিষয়ে জানা এবার উচিত। এতদিন হয়ে গেল সে এ বাসায়। কোথায় থেকে এসেছে কী হয়েছে তার জীবনে কিছুই সে জানে না। এসব চিন্তা মাথায় রেখেই অরন্য, তুলির কাছে আসলো। সবসময় খামখেয়ালে হয়ে কথা বললেও সেদিন অরন্য তুলির পাশে বসে সিরিয়াস হয়ে বলল

“আমার বাসায় তো দুমাস যাবৎ আছেন। আশাকরি আমি কেমন বুঝতে পেরেছেন। এখন পর্যন্ত আপনার নামটা বলেন নি। আমি কী জানতে পারি আপনি কে? আর কেন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন যদি ভরসা করতে পারেন তাহলে বলুন।”

তুলি অরন্যের কথা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারও মনে হচ্ছে এবার সবটা বলা দরকার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here