গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে – পর্ব ২৩

0
352

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৩

সেই কন্ঠস্বর যা রাগিনীর সর্বাঙ্গ অস্থির করে তোলে তা শুনে আর রাগিনীর পক্ষে স্থির থাকা যেন সম্ভব হলো না। নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ল। এই কন্ঠের সুর তো সে ভুল শুনতে পারে না। আর দেরি করল না রাগিনী। রিসেপশন থেকে দ্রুত পায়ে চলে গেল লিফটের দিকে। সে যেতে যেতে লিফটের দরজা বন্ধ হলো। রাগিনীর মাথায় পড়ল হাত। অন্যদিকে রিসেপশনিস্ট বার বার তাকে পিছু ডাকছে ফর্মালিটি পূরণ করতে। কিন্তু রাগিনীর ধ্যান যেন অন্যদিকে। কিছুক্ষণ থম মেরে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে রইল রাগিনী। স্মরণে এলো একজনের নাম। আপনমনে বলল,
“ইন্সপেক্টর রায়ান!”

রাগিনী ছুটে এলো রিসেপশনিস্টের কাছে। রিসেপশনিস্ট তাকে দেখেই বলে উঠল,
“ফর্মালিটি পূরণ না করে কোথায় যাচ্ছেন এভাবে ম্যাম?”

রাগিনীর মনে পড়ে ফর্মালিটির কথা। মূহুর্তের জন্য যেন বুদ্ধি লোপ পেয়েছিল তার। সেই মূহুর্তেই আগমন ঘটে ফাহমিদের। তাকে দেখেই যেন আশার আলো পায় রাগিনী। দ্রুততার সঙ্গে বলে ওঠে,
“ফাহমিদ, র’ক্ত দিয়েছো? এখন কেমন আছে সে? ইমারজেন্সিতে তো ঢোকানো হয়েছিল বাচ্চাটাকে।”

“হ্যাঁ। হি ইজ আউট ওফ ডেঞ্জার। চিন্তা করো না রাগিনী। চোখমুখ শুঁকিয়ে গেছে তোমার।”

“আরেক হেল্প করে দাও প্লিজ! ছেলেটার ফর্মালিটিস্ পূরণ করে দাও। আমার একটা কাজ আছে।”

অনুনয়ের সুরে কথাগুলো শেষ করেই সে রিসেপশনিস্টের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ল।
“ই…ইন্সপেক্টর রায়ান কি এই হসপিটালে ভর্তি আছেন? কত নম্বর রুমে আছেন বলতে পারবেন একটু? আমার খুব দরকার। আর ফর্মালিটিস্ ইনি পূরণ করতে হেল্প করবেন আপনাকে।”

বলেই ফাহমিদকে দেখিয়ে দিল রাগিনী। রিসেপশনিস্ট সময় নিয়ে চেক দিয়ে দেখে বলল,
“রুম নম্বর ৩০৭। থার্ড ফ্লোর। গু’লিতে আহত হওয়া পেশেন্ট।”

রাগিনীকে আর পায় কে? দ্রুত পায়ে সে লিফটের কাছে গিয়ে ঢুকে যায়। পেছন থেকে বোকা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে ফাহমিদ। মেয়েটা কোথায় চলে গেল হঠাৎ? কিছুই বুঝে উঠতে পারল না সে। অতঃপর চশমা ঠিক করে রিসেপশনিস্টকে ফর্ম ফিলআপ করতে সাহায্য করতে লাগল।

থার্ড ফ্লোরে পৌঁছে আশেপাশে পাগলের মতো খোঁজ করল রাগিনী। কোথাও যদি সেই চেহারার দেখা মেলে! আবারও যদি সেই কন্ঠ কানে ভেসে আসে। কিন্তু তা আর হলো না। তবে কি সে ভুল শুনলো? রাগিনী এটা মানে না। সে ভুল শোনে নি এটা সে বিশ্বাস করে। সে স্পষ্ট শুনেছে সেই কন্ঠ। তার নাকে এসেছে সেই ঘ্রাণ। যা কোহিনূরের জামা থেকে আসতো। এটাও কি ভুল?

রাগিনী হেঁটে এগোতে থাকে ৩০৭ নম্বর কেবিনের দিকে। মাথায় ঘুরছে অসংখ্য প্রশ্ন। যার উত্তর তার কাছে নেই। সবথেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে কোহিনূর কি তবে সুস্থ? সুস্থ হলে তার সঙ্গে এমন করছে কেন আর হসপিটালেই বা পড়ে আছে কেন? মাথা বিগড়ে যাচ্ছে রাগিনীর। আগপাছ আর না ভেবে সে এসে থামলো নির্ধারিত কেবিনের সামনে। কেবিনের দরজাটা একটু ভিড়িয়ে দেওয়া। রাগিনী হাতটা বাড়িয়ে দরজায় একটু ধাক্কা দিতে চায়। কিন্তু অস্থিরতা বোধ হচ্ছে ভেতর থেকে। ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপছে। শুঁকিয়ে শুষ্ক হয়ে গেছে তার ঠোঁট। একটা দম নিয়ে আস্তে করে ধাক্কা দিল দরজায়। ধীর পায়ে প্রবেশ করল কেবিনে। দুই ধাপ হাঁটতেই থামলো সে। পা আর চলতে চাইল না। বেডে অজ্ঞানরত অবস্থায় শুয়ে আছে একটা লোক। রাগিনী তাকে চেনে না। তবে লোকটার বয়স বেশি না। হবে কোহিনূরের বয়সী। চোখেমুখে তার বিশাল ক্লান্তি! বাম হাতে স্যালাইনের সুঁচ ফুটানো। হঠাৎ করেই অচেনা পুরুষালি কন্ঠে পিলে চমকে উঠল রাগিনীর। হুড়মুড়িয়ে তাকালো কেবিনে থাকা একটা সিঙ্গেল সোফার দিকে। এই পুরুষটিকে রাগিনী না চিনলেও তার চেনা চেনা লাগছে এবার। মাথায় ঝাঁকড়া চুলের বাহার, স্টাইল করে কাটা খোঁচা দাড়ি। শার্টের ভাঁজে রেখে দেওয়া তার দামি সানগ্লাস আর হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। লোকটির চাহনিও উদ্ভট। তার চাহনি দেখে রাগিনী ভড়কালো। কিছু বলতে উদ্যত হলো। তবে পারল না। তার আগেই সেই সুদর্শন পুরুষ কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল,
“আ…আরে আপনি এখানে! এখানে কী করে?”

বলেই দাঁড়িয়ে গেল অভিরূপ। রাগিনী এবারও কিছু বলতে চাইলো। তবে মুখ থেকে শব্দ বের হতে সময় লাগছে। অভিরূপ নিজ থেকে বলে উঠল,
“আপনিই তো ওই বাচ্চাটাকে বাঁচিয়েছিলেন। রাইট?”

অভিরূপ বেশ আগ্রহী। তার পুরো শরীরে কাঁপুনি ধরেছে। কী বলবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। আবারও এই সাহসী নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে যাবে সেটা তার কল্পনাতীত ছিল। অভিরূপ ভেবেছিল সেই সাহসী দৃষ্টি সে সেই ঝামেলার সাথেই হারিয়ে ফেলবে। মনের মধ্যে এক টান টান উত্তেজনার উদ্ভব হয়েছে যা দমাতে চেষ্টা করছে অভিরূপ। অপরদিকে রাগিনী চিন্তায় মগ্ন। লোকটা কীসের কথা বলছে? সে কি ওই বাচ্চা ছেলেটার কথা বলছে যাকে রাগিনী রেসকিউ করে হসপিটালে নিয়ে এসেছে? তাই হবে হয়ত। এটা ভেবেই সে ঝটপট করে উত্তর দেয়,
“হ্যাঁ কিন্তু আপনি কী করে জানলেন?”

“আমি তো সেখানেই ছিলাম। সামনের গাড়িতে ছিলাম আমি।”

রাগিনী প্রতিত্তোরে কী বলবে যা ভেবে পায় না। শুধু বোঝার চেষ্টা করে এই লোকটা আসলে কে। মনে আসতেই সে হতভম্ব হয়ে বলে,
“আ…আপনি অভিরূপ চৌধুরী না?”

অভিরূপ হালকা হেঁসে উত্তর দেয়,
“ইয়েস। ইউ আর রাইট। আপনি কী ইন্সপেক্টর রায়ানের পরিচিত কেউ হন?”

রাগিনী থতমত খেয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“না, না। আমি রাগিনী তাজরীন। ভুল করে এই কেবিনে ঢুকে পড়েছি। আই এম সরি। এক্সকিউজ মি!”

আর এক মূহুর্ত সেখানে দাঁড়াল না রাগিনী। পেছন ঘুরে দরজা দিয়ে সেকেন্ডেই হাওয়া হয়ে গেল। অভিরূপ তাকে আরো কিছু বলতে গিয়েও পারল না। হতাশ হয়ে বলল,
“আশ্চর্য! মেয়েটা এমন অদ্ভুত কেন? নাকি নারীজাতিই অদ্ভুত? এতো এতো আ’তঙ্কবাদীর সামনে সুপারওম্যান হয়ে বাচ্চাটাকে বাঁচালো অথচ আমার সামনে এক মূহুর্তও টিকতে পারল না? দ্যাটস্ নট ফেয়ার।”

অভিরূপ ফিরে এসে বসল সোফায়। রায়ানের আ’হত হবার খবর শুনে অভিরূপ জেদ ধরেই হসপিটালে এসেছে। তার মতে, যে তার এতো খেয়াল রাখলো তার পাশে না থাকা এক ধরণের স্বার্থপরতা। আর অভিরূপ চৌধুরী এতো স্বার্থপর নয়! নিজের গালে হাত রাখল অভিরূপ। মেয়েটির দৃষ্টির ধরণ আলাদা আলাদা। সেটাই মনে পড়ছে অভিরূপের। আনমনে সে আওড়ালো,
“বাট দ্যাট গার্ল! যখন প্রথম দেখেছিলাম মনে হয়েছিল তার দৃষ্টি থেকে অগ্নি ঝরছে। আর একটু আগে মনে হয়েছিল তার ভয়ার্ত দৃষ্টি দ্বারা কাউকে খু’ন করছে। কী যেন নাম তার। রাগিনী তাজরীন! তার সঙ্গে নামটা আসলেই স্যুট করে। গান গাইতে ইচ্ছে করছে খুব। মিস. রাগিনীকে ডেডিকেট করে!”

বলে কিছু একটা ভেবে নিজের কপালে হালকা করে চাপড় মা’রে সে। আর নিজে নিজেকে বলে,
“অভি! ইউ আর গোয়িং ক্রেজি। তোর সামনে একজন পেশেন্ট ঘুমিয়ে আছে আর তুই সেই সাহসী নারীকে ডেডিকেট করে গান গাওয়ার চেষ্টা করছিস! তুই সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছিস এবার।”

বাচ্চা ছেলেটির কাছে নির্বিঘ্নে বসে ছিল ফাহমিদ। কারোর পায়ের শব্দে পিছু ফিরে তাকায় সে। রাগিনী অন্যমনস্ক হয়ে কেবিনে ঢুকছে। তাকে দেখেই ফাহমিদ প্রশ্ন করে উঠল,
“কোথায় গিয়েছিলে? ছেলেটা তোমায় খুঁজছিল।”

রাগিনী চকিতে তাকায়। আমতা আমতা করতে থাকে। ছোট ছেলেটার মায়াবী মুখশ্রীর পানে চায়। শ্যামলা চেহারা হলে কী হবে? সারা মুখে যেন নূর ছড়িয়ে আছে। মাথায় সাদা রঙের ব্যান্ডেজ। হাতে প্লাস্টার করে দিয়েছে। রাগিনী প্রসঙ্গে কাটিয়ে বলে,
“সে ঘুমিয়ে পড়েছে?”

“হ্যাঁ, তোমার কথা ওকে বলেছিলাম। তারপর থেকে তোমার খোঁজ করছিল। করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। অনেক ক্লান্ত মনে হয়।”

“হওয়ারই তো কথা। এতটুকু বয়সে ইন’কাম করতে নেমেছে রাস্তায়। অথচ এদের প্রতিই জনগনের কোনো দায়িত্ব নেই।”

ফাহমিদ শান্ত গলায় বলে,
“সবাই তো রাগিনী তাজরীন হতে পারে না!”

রাগিনী চোখ গোল গোল করে তাকায়। একটু ভেবে বলে,
“সবাই ফাহমিদও হতে পারে না। থ্যাংক ইউ ফাহমিদ। শুরু থেকে তুমি আমাকে এতোটাই হেল্প করে এসেছো যে তোমায় যতবারই থ্যাংক ইউ বলি লজ্জা নিজেরই লাগে।”

প্রতিত্তোরে কিছু বলতে চায় ফাহমিদ। তার বিপরীতে রাগিনী আবারও বলে ওঠে,
“আমার জীবনে সবথেকে বড় উপকার তুমি করেছো। যদি তুমি সেই রাতে না থাকতে তাহলে ওই নোংরা ছেলেগুলোর বাজে স্পর্শ হয়ত আমাকে অসম্মানিত করে ফেলতো। আমার সম্মান মাটিতে মিশে যেতো। এখনো মনে আছে আমার! ওইদিন কোহিনূরের সঙ্গে দেখা করে ফিরতে দেরি হয়েছিল। ড্রাইভার চাচা গাড়িতে ছিলেন না। আমি উনাকে খুঁজতে এক ওফসাইডে গিয়েছিলাম। ওটাই আমার কাল হলো। অসভ্য আর মাতাল ছেলেগুলো আমাকে ধাওয়া করল। আমি পড়ে গেলাম দৌড়াতে গিয়ে মাঝ রাস্তায়। কাঁচ পড়ে থাকায় হাতে ফুটে গেল। হাত থেকে র’ক্ত ঝরছিল। পায়ে এতোটা আ’ঘাত পেয়েছিলাম যে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি অবধি পাচ্ছিলাম না। সঠিক সময় তুমি এসেছিলে ভাগ্যিস। আর আজকে একটা বাচ্চা ছেলেকে র’ক্ত দিয়ে তার প্রাণ বাঁচালে। ভাগ্যিস তোমার সাথে তার র’ক্তের গ্রুপ ম্যাচ করেছিল। তুমি মানুষটা অনেক ভালো। কখনো তোমার কোনো উপকারে আসতে পারলে অবশ্যই আমাকে মনে করবে।”

ফাহমিদ তার এতো এতো প্রশংসা শুনে কেমন যেন লাজুক হাসি দিল। মাথা চুলকে চমশা ঠিক করল। তা দেখে মুখ টিপে হাসলো রাগিনী। এই ফাহমিদ ছেলেটার সঙ্গে সে আগে কলেজে পড়তো। ক্লাসমেট ছিল তারা। তবে আগে ফাহমিদ রাগিনীকে পছন্দ করতো। কিন্তু আগে তার এমন বোকাসোকা ভাব ছিল না। তবে মিশুক ছিল মানুষদের সঙ্গে। রাগিনীকে প্রেম নামক প্রস্তাব দেওয়ায় রাগিনী তা নাকচ করেছিল। তার কয়েকদিন পর উধাও হয় ফাহমিদ। অনেকদিন পর সেদিন রাতে তাদের দেখা। রাগিনী শুনেছে ফাহমিদদের পারিবারিক সমস্যার কারণে মাঝখানে পড়াশোনা বাদ দিতে হয়েছিল। তবে ছেলেটা বেশ সরল। কোহিনূরের মতো সরল বুঝি? তৎক্ষনাৎ মাথায় নাড়ায় রাগিনী। একদমই না। কোহিনূর নামক ব্যক্তিটির সঙ্গে অন্য কোনো মানবের তুলনা চলে না। মানুষটি অনন্য। ফাহমিদ বলে উঠল,
“তুমি কি কম সাহায্য করেছো? তোমার সঙ্গে এতোদিন পর যেদিন দেখা হলো অনেক রাত ছিল। আমার বাইক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এতো রাত হওয়া সত্ত্বেও তুমি আমাকে এড়িয়ে না গিয়ে সাহায্য করলে। আঙ্কেল বকেছিল না সেদিন?”

রাগিনী মাথা নাড়ায়। মিস্টি হেঁসে বলে,
“আমার বাবা তেমন মানুষ নয়। আমার সঙ্গে উচ্চস্বরে কখনো কথা বলেনি। কোনো ভুল হলে আমাকে আদর করে বুঝিয়ে দেয়। আমার বাবা পৃথিবীর সব বাবার থেকে আলাদা। হয়ত সব সন্তানের কাছেই তার বাবা-মা সবচেয়ে আলাদা!”

ফাহমিদ এবার নিরব রইল। চোখমুখের রঙ হঠাৎ করেই পাল্টে গেল তার। মুখে দেখা গেল লাল রঙের আভা। মুখটা ভার হলো। হাত মুঠো করে উঠে দাঁড়িয়ে জোরপূর্বক হেঁসে বলল,
“আমার তৃষ্ণা পেয়েছে। আমি একটু পর আসছি।”

ফাহমিদ বেরিয়ে যায়। রাগিনী সেদিকে আর পাত্তা না দিয়ে টুল নিয়ে এসে এগিয়ে ছেলেটির পাশে বসে। কী মায়াবী মুখখানা। রাগিনী আলতো করে ছেলেটির গালে হাত রাখে। নিচু সুরে বলে,
“চিন্তা করো না। তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে।”

কথাগুলো বলতে বলতে রাগিনী খেয়াল করল জানালার থাইয়ের কাঁচের দিকে। দরজার পাশে কারো অবয়ব দেখা যাচ্ছে। সম্ভবত কোনো পুরুষের। তার হাতের ঘড়ি চকচক করছে। তড়িঘড়ি করে পেছন ঘুরল সে। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“কে? কে ওখানে?”

কারোর আওয়াজ না পেয়ে রাগিনী দ্রুত পায়ে হেঁটে গেল দরজার কাছে। পর্দা সরিয়ে কারোর অস্তিত্ব পেল না রাগিনী। দরজা দিয়ে বাহিরে এসে সবদিকে ঘুরেফিরে তাকালো। কাঙ্ক্ষিত সেই ব্যক্তিকে না পেয়ে হতাশ হলো সে। সে কি ভুল দেখলো? কীসব হচ্ছে তার সাথে? সে কি হ্যালুসিনেট করছে?

তড়িঘড়ি করে হাঁটতে গিয়ে কারোর সঙ্গে ধাক্কা খেল নির্জন। ঠোঁট চেপে চাপা গলায় বিপরীত মানুষটিকে বলে উঠল,
“সরি। দেখতে…”

পুরো কথা শেষ না করেই থামলো সে। বিপরীতে মেহরাজকে দেখে চোখ সরু হয়ে এলো তার। এবার কন্ঠে কাঠিন্য ভাব এনে বলল,
“ওহ, তুমি! চোখ কি মাথায় উপরে লাগিয়ে ঘুরে বেড়াও নাকি? দেখতে পাও না?”

মেহরাজ ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে বিরবির করে বলে উঠল,
“স্যার, মানুষটা আমি জন্যই এভাবে ধমকাচ্ছেন। অথচ ধাক্কাটা আপনি মেরেছিলেন। যে বলেছিলো ঠিকই বলেছিলো, ‘নরমের উপর মানুষ গরম ঝাড়ে।'”

কথাটা নির্জনের কানে আসতেই চোখ গরম করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই মাথা নিচু করল মেহরাজ। দৃষ্টি নিচু হতেই তার নজরে এলো নির্জনের র’ক্তাক্ত হাত। র’ক্ত শুকিয়ে গেছে প্রায়। ফট করে মেহরাজ তার হাত ধরে ফেলে। আর উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,
“স্যার, আপনার হাতের অবস্থাও খারাপ। একটু ড্রেসিং করিয়ে নিতে হবে তো। সবার খেয়াল আপনি রাখেন। কিন্তু আপনার খেয়ালও তো রাখতে হবে। আসুন তো আমার সাথে।”

নির্জন ধীর গলায় উত্তরে বলে,
“আমার খেয়াল রাখতে তোমার মতো একটা মাথামোটা থাকলেই চলবে।”

বলেই ঠোঁট চেপে হেঁসে ওঠে নির্জন। মেহরাজ তার হাত ছেড়ে অসহায় ভঙ্গিতে তাকায়। ভাবতে থাকে, মানুষটা তাকে ইনসাল্ট করল নাকি সুনাম করল?

সেদিন ব্যস্ত দিন কাটলো রাগিনীর। ছেলেটার দেখভাল থেকে শুরু করে ছেলেটির মাকে খবর দেওয়া থেকে শুরু করে উর্মিলা থেকে কিছু ফাইলস্ কালেক্ট করা অবধি করে আর কোহিনূরের কাছে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তার। বাবা পৌঁছার আগে যে করে হক বাড়ি ফিরতে হবে। তাই সেদিন বাড়ি ফিরেছিল সে দ্রুতই। সবমিলিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে পড়েছিল না খেয়েই। তবুও বাবার যত্ন থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হয়নি তার। ঘুম থেকে তুলে খাইয়ে তবেই ছেড়েছিলেন রাশেদ সাহেব। এভাবেই চলে গেল রাত। কেটে গেল প্রতিদিনের সাক্ষাৎ ছাড়া একদিন।

চলবে…

[বি.দ্র. যারা কোহিনূরকে মিস করছেন তারা কাল অবধি একটু ধৈর্য ধরুন। সে কালকের পর্বে থাকবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। আর হ্যাঁ আজকের পর্বে সবারই কিছু বিষয় ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার কথা। শুধু তাই না প্রতি পর্বেই আমি কিছু না কিছু ক্লু দিয়েই থাকি। অনেকেই তা ধরে ফেলে আবার অনেকে ধরতে পারে না। তবে আশা করছি রাগিনীকে নিয়ে কিছু বিষয় সিউর হতে পারবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here