গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে – পর্ব ৩০

0
351

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩০

চারিপাশ বিরাজ করছে নিরবতা। লোকজন থাকা সত্ত্বেও সকলে গম্ভীর ভঙ্গিতে বসে রয়েছে সোজা হয়ে। জায়গাটা পুলিশ হেডকোয়ার্টার। নির্জন ওরফে কোহিনূরও সেখানে উপস্থিত। গায়ে জড়ানো বরাবরের ন্যায় কালো ইউনিফর্ম। চুলটা এখনো ভেজা। কপালে নেতিয়ে কপাল নামক অঙ্গটি পুরোটাই ঢেকে দিয়েছে। মাঝে মাঝে নাক ঘষছে। এই ঘষাঘষির ফলে লাল টকটকে হয়েছে নাক। চোখ দুটো আগের থেকেই লাল। বদ্ধ ঘরে এসির ঠান্ডা বাতাস সহ্য হচ্ছে না। শুষ্ক ঠোঁটজোড়া তিরতির করে কাঁপছে। হাত দুটো মুঠো করে কোটের পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছে। বড়সড় এই হলরুমে সকলের মুখে জড়তা। নির্জন খুব একটা এদিকটা আসে না। কিন্তু আজকে গোল টেবিল বৈঠক। সকল বড় বড় পুলিশ অফিসার থেকে শুরু করে সকলকেই ডাকা হয়েছে। নির্জনও তার মাঝে একজন। তার মাঝে নয়। সে-ই তো এখন এখানকার মূল আকর্ষণ। কারণ যে কেস নিয়ে বৈঠক হবে সেটা তো নির্জনের হাতেই রয়েছে। সকলের গাম্ভীর্যের সাথে তাল মিলিয়ে নির্জন নিজেও চুপচাপ থাকার চেষ্টা করলেও তা আর হয়ে উঠল না। সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পরেও উচ্চস্বরে হাঁচি দিয়ে উঠল সে। নাকের ভেতর যেন মনে হচ্ছে কেউ সুড়সুড়ি দিয়ে চলেছে। হাঁচি দিয়েই চোখ মেলতেই নির্জন দেখলো বর্তমানে সকলের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পড়েছে সে। ঘাড় ঘুড়িয়ে সকলের দৃষ্টি নির্জনের দিকে স্থির। ঢক গিলে জোরপূর্বক হাসি দিতেই হলরুমের শেষ প্রান্তের দরজা খুলে প্রবেশ করল কেউ। সকলের দৃষ্টি তখনি সরলো নির্জনের থেকে। নির্জন যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। তবে যে এসেছে তাকে ধন্যবাদ দিলে মন্দ হয় না। এই কড়া কড়া দৃষ্টি থেকে বাঁচার আনন্দে ধন্যবাদ দেওয়াই যায়। সেও এবার সকলের মতো দেখতে দরজার পানে তাকালো কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে দেখতে। দেখেই কপালে পড়ল পরপর তিনটে ভাঁজ। চোখ সরিয়ে হতাশা নিয়ে বিরবির করে বলল,
“তাকে আর ধন্যবাদ? ইম্পসিবল!”

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করতেই এসির ঠান্ডা বাতাসের ঝাপ্টা গায়ে লাগে রায়ানের। তার বাম হাতটা তার শেখর এসিস্ট্যান্ট অফিসার শেখর ধরে রেখেছে। রায়ানের পায়ের ক্ষতটা এখনো অনেকটাই তাজা। হাঁটতে গেলেই যেন একটা করে অভাবনীয় যন্ত্র’ণার শিকার হতে হচ্ছে তাকে। তবুও দরকারি মিটিং! এখানে তাকে আসতেই হবে। এসপি স্যার নিজে কল করেছিলেন। তবে এটাও বলেছিলেন বেশি সমস্যা হলে আসতে হবে না। কিন্তু কেসটার সঙ্গে সে নিজেও জুড়ে আছে। তাই জোর করেই এসেছে একপ্রকার রায়ান। তাকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে রাখা নির্জনের পাশেই খালি চেয়ারে আস্তে করে বসিয়ে দেয় শেখর। ভালোমতো বসে রায়ান শেখরের উদ্দেশ্যে বলে,
“এখন যাও তুমি। আমার কোনো সমস্যা হবে না।”

শেখর সম্মতি জানিয়ে দ্রুত প্রস্থান করে। আস্তে আস্তে করে রায়ানের পাশ ফিরে তাকায় নির্জন। চোখটা বড় করে রায়ানের পা থেকে মাথা পর্যবেক্ষণ করে কিছুটা খোঁচা মে’রে বলে,
“আপনি কাজকে ছাড়লেও কাজটা যেন কিছুতেই আপনাকে ছাড়তে চায় না ইন্সপেক্টর রায়ান।”

রায়ান স্মিত হাসে। নির্জনের কোনো কথা আর তেমন গায়ে লাগে না তার। অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। ছেলেটা যেন এমনই। রায়ান হাসিমুখেই উত্তর দেয়,
“কী করবো বলুন? কাজের সাথে আমার গভীর কানেকশন আছে। যেমন আপনার সঙ্গে গভীর রাতের কানেকশন আছে ঠিক সেইরকম।”

টনক নড়ে নির্জনের। ভ্রু কুটি কুঁচকে যায়। বেশ উৎকন্ঠা হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“মানে? হোয়াট ডু ইউ মিন?”

“মানেটা খুব সিম্পল! আপনি কি গভীর রাত ছাড়া অন্যসময় হসপিটালে আমাকে দেখতে আসতে পারেন না? আমি যখন ঘুমে মগ্ন তখন আপনার আবির্ভাব ঘটে। চোরের মতো উঁকি দিয়ে দেখেন আমার কেবিনে। অন্যসময় কি হসপিটাল নামক জিনিসটার সঙ্গে আপনার এলার্জি আছে?”

তব্দা লেগে হা হয়ে যায় নির্জনের মুখ। বাকহারা হয়ে নিষ্পলক চোখে চেয়ে থাকে রায়ানের দিকে। পরক্ষণেই মুখ ঘুরিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলেও বিস্ময় কমে না তার। আশ্চর্য তো! রায়ান কী করে জানলো এইসব কথা? কী করে জানলো সে তাকে রাতে দেখতে যায়? সে যাতে না জানতে পারে সেকারণেই তো এমন চোরের ভঙ্গিমায় রাতে দেখতে যাওয়া। সে-ই কিনা ধরে ফেলল? এটা কি ঠিক হলো? মুখটা কাঁচুমাচু করে নির্জন কিছু না জানার ভঙ্গি ধরে উত্তর করে,
“রিয়েলি! আপনি দিন দিন ইনভেস্টিগেট করতে করতে নিজে গল্পও বানাতে শিখে গিয়েছেন। আই থিংক আপনার রাইটার হওয়ার উচিত ইন্সপেক্টর রায়ান!”

বলেই হু হা করে হাসার চেষ্টা করে সে। রায়ান মাথা ঝাঁকিয়ে নিচু সুরে বলল,
“সেটাই হবে। আমার সঙ্গে ডক্টর নিজেও গল্প বানায় রাইট অফিসার? ডক্টরের কল্পনাতেও আপনি আসেন। এসে তার থেকে আমার এই পায়ের সিচুয়েশনের ডিটেইল নিতে নিতে একেবারে তাকে অসহায় বানিয়ে ফেলেন। নিশ্চয় ডক্টর হ্যালুসিনেট করে এসব আমায় বলেছে।”

কথাটা শোনামাত্রই কিছু একটা বিরবির করে চোখ বুঁজে ফেলে নির্জন। চোখেমুখে দেখা দিল যেন চুরি করার পর ধরা খাওয়ার পরের প্রতিক্রিয়া। মাথা নিচু করে বিরবির করে বলল,
“ইডিয়ট ডক্টর!”

“কিছু বললেন?”

রায়ানের প্রশ্নে চোখ মেলে না চাইতেও একটা হাসি দিয়ে মাথা নাড়ায় নির্জন। ডিআইজি মারুফ হোসেন এবার মুখ খোলেন। বেশ গাম্ভীর্যের সাথেই বলেন,
“তাহলে শুরু করা যাক? যেহেতু যার অপেক্ষা ছিল আই মিন ইন্সপেক্টর রায়ান, সে তো এসেই গেছে। দেরি করে লাভ কী?”

আইজিপি অফিসার নীলয় সম্মতি জানিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, দেরি যত করা হবে ততই ক্ষতি।”

কথাটা শেষ করার মাঝে থামলেন উনি। নির্জনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন এবার এবং বলে উঠলেন,
“অফিসার নির্জন!”

না চাইতেও উঠে দাঁড়াল নির্জন। বৃষ্টির মধ্যে কাঁদায় পড়ে নাকানিচুবানি খেয়ে সেই বেশরমের মতো হাসার ফলাফল পাচ্ছে বর্তমানে। হাঁটতে গেলে পায়ে লাগছে কিছুটা। তবুও স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গিয়ে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে একটা বড় দম নিয়ে বলল,
“আই এম অফিসার নির্জন। দ্যা হেড ওফ সিক্রেট টিম। যার দায়িত্বে বর্তমানের সবথেকে বড় আ’তঙ্কজনিত কেস রয়েছে। একটা টেরো’রিস্ট টিম যেটা কিনা চট্টগ্রাম নামক বড় শহরে আ’তঙ্ক ছড়িয়ে সবাইকে সংকেত দিয়ে এসেছে এবার তারা ঢাকায় আসছে। এসেছেও পড়েছে তারা। একের পর এক ধ্বং’সলীলা শুরু করে দিয়েছে। যার প্রথম টার্গেট ছিল এডিশনাল এসপি স্যার। তারা সক্ষম হয়েছে। তাদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির উপর দিয়ে আমরা যেতে পারিনি।”

অনর্গল কথা বলে এবার থেমে বড় শ্বাস নিলো নির্জন। টেবিলে পড়ে থাকা প্রজেক্টরের রিমোট হাতে নিয়ে পাওয়ার অন করতেই দেখা গেল একটা সিসিটিভি ফুটেজের ক্লিপ। সকলে দেখলো কিছুটা অস্পষ্ট দৃশ্য। এডিশনাল এসপি সাহেবের বাড়িতে একটা টুপি পড়া লোক ঢুকছে। গায়ে ডেলিভারি ম্যানের পোশাক। নির্জন সেটা দেখিয়ে বলা শুরু করে,
“আমরা যতদূর জানতাম খু’নিরা খুব কৌশলে বাড়ির সব অংশ শেষ করে দেওয়ায় কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে পাশের বিল্ডিং থেকে এই ফুটেজ পাওয়া গেলেও এই ছেলেটা কে তা জানা যায়নি।”

মারুফ হোসেন কিছুটা চিন্তিত মুখ দিয়ে হতাশার সাথে বললেন,
“যা জানা গিয়েছে সেটাই বলো। যেটা জানা যায়নি সেটা বলে লাভ নেই। তুমি জানো না আমরা একেবারে বাঘের মুখে পড়েছি। মিডিয়া প্রশ্ন তুলছে! তার উপর অভিরূপ চৌধুরীর অসময়ে আগমন। সব ঘেঁটে দিল একেবারে।”

উনি থামতেই এসপি সাহেব বলে উঠলেন,
“আমি শুনেছিলাম একটা মেয়ে নাকি এমন কান্ড ঘটাচ্ছে? নাম কী যেন! রাগিনী তাজরীন। কথাটুকুর কতটা সত্যতা বের করতে পেরেছো?”

“স্যার, আই উইকনেসের স্কেচ অনুযায়ী আর বাকি যেদিন এসব ঘটনা ঘটেছিল সেসব দেখে মনে হয়েছিল হ্যাঁ সত্যিই সেই মেয়েটার যোগসূত্র থাকতে পারে। ফোনের লোকেশনটা সবসময় নজরে রাখা হচ্ছিল। কিন্তু দিন যায় ধারণা পাল্টায়।”

নির্জনের কথায় ভ্রু কুঁচকে আসে রায়ানের। সে নিজেও রাগিনীর মতোই হুবহু কাউকে দেখেছে। তাই সন্দেহ সেও উড়িয়ে দিতে পারছে না। সে কৌতূহল নিয়ে বলল,
“ধারণা পাল্টানোর কারণ?”

নির্জন বাঁকা হাসে। বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
“রাগিনী তাজরীনের হেমোফোবিয়া আছে। যার মানে র’ক্তে ফোবিয়া। সেই সঙ্গে অ্যাকোস্টিকোফোবিয়াও রয়েছে। এরমানে অতিরিক্ত শব্দে ফোবিয়া। তাহলে এটা তো ধরে নেওয়ায় যায় যেই মেয়ে এতোটা ভীতু সে কী করে পরপর এতো কান্ড ঘটাবে?”

নির্জন থামে এবার। হাঁচি আসছে আবার। নিজেকে সংযত করে আবারও বলে,
“ইন্সপেক্টর রায়ানকে যেদিন টার্গেট করা হয় সেদিন ছিল অভিরূপ চৌধুরী আসার ঠিক আগের দিন। হয়ত টেরো’রিস্ট টিম কোনো না কোনোভাবে জেনেছিল যে ইন্সপেক্টর রায়ান অভিরূপ চৌধুরীর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু তারা সফল হয়নি। ইন্সপেক্টর রায়ানের ভাষ্যমতে সেদিন উনি নিজের গাড়ির কাছে একটা মেয়েকে দেখেছিলেন। যে মাস্ক পরিহিত থাকলেও তার অনেকাংশ রাগিনী তাজরীনের সাথে মিলে যায়। কিন্তু ওইদিনই ওই সময় রাগিনীর লোকেশন ছিলোই না সেই এরিয়ায়। আর রাগিনীর সঙ্গে সেই মেয়েটির পোশাকের ধরনে ছিল আকাশ-পাতাল তফাৎ।”

সকলের মুখে ছেয়ে যায় কৌতূহলে। কানাকানি চলতে থাকে। ফিসফিস কথা শুরু হয়। আইজিপি সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠেন,
“তাহলে রাগিনীর মতো আরো কেউ আছে বলতে চাইছো?”

“প্রশ্নটা আমারও সেখানে। আমার সন্দেহ আরো তীব্র হয় এয়ারপোর্টে সেই হা’মলার সময়। তবে ভাগ্যটা ভালো ছিল। ইন্সপেক্টর রায়ানের বুদ্ধিমত্তায় অভিরূপ চৌধুরীর কোনো ক্ষতি হয়নি। উনি কৌশলে গাড়ির নম্বর চেঞ্জ করে দেন। ফলে বিভ্রান্ত হয় আত’ঙ্কবাদী। নিঃসন্দেহে ইন্সপেক্টর রায়ান ভালো কাজ করেছেন।”

এবার সকলের দৃষ্টি গেলো রায়ানের উপর। উসখুস করে নির্জনের দিকে তাকালো রায়ান। সে ভালোমতো বুঝেছে নির্জন ইচ্ছে করে এমন বলছে। নির্জন এবার রিমোটের অন্যজায়গায় চাপতেই সিন পাল্টে যায়। দৃশ্যমান হয় এয়ারপোর্টের বাহিরে অভিরূপের গাড়ির সামনে থাকা সেই মেয়েটির মুখশ্রী। অস্পষ্ট হলেও সকলে বোঝার চেষ্টা করছে মেয়েটিকে। পাশাপাশি দৃশ্যমান হয় রাগিনী তাজরীনের স্পষ্ট ছবিও। নির্জন দুটো ছবিই দেখিয়ে বলে,
“ছবিটা মিলিয়ে দেখুন কাইন্ডলি।”

“আরে এরা তো একই দেখতে।”

ডিআইজি সাহেব তড়িঘড়ি করে নিজেকে সামলাতে না পেরে বললেন। নির্জন সম্মতি জানিয়ে বললেন,
“একই দেখতে তবে দুটোই আলাদা দেহ। এয়ারপোর্টের যেই রাগিনী তাজরীনকে দেখছেন সে এইসময় এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকলেও একই সময়ে অন্য রাগিনী তাজরীন সিটি হসপিটালে উপস্থিত ছিল। একটা বাচ্চা ছেলেকে রেসকিউ করে তার সেফটি দিয়ে ব্যস্ত ছিল।”

বলেই আবারও রিমোট দিয়ে সিন পাল্টালো নির্জন। দেখা গেল হসপিটালের সিন। সেখানেও রাগিনীকেই দেখা যাচ্ছে। তার চিন্তায় ভরা মুখটা স্পষ্ট। নির্জন শক্ত গলায় বলে,
“এটা ঠিক ওইসময়েরই ফুটেজ যখন এয়ারপোর্টে এই রাগিনী তাজরীনকে দেখা গিয়েছিল।”

সকলে এবার স্তব্ধ। মাথাটা যেন ভনভন করে ঘুরছে সকলেরই। এসপি সাহেব হাফ ছেড়ে বললেন,
“তাহলে রাগিনী তাজরীনের মতো আরেকজনও এক্সিস্ট করে? তাহলে তার পরিচয় কী? সে কি রাগিনীর জমজ?”

“রাশেদ সাহেবের ডিটেইলস ঘেঁটে দেখা হয়েছে। উনার স্ত্রীর প্রেগ্ন্যাসির সময়কার ডিটেইলসও যোগাড় করা হচ্ছে। তবে জমজ বলতে এখনো কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি।”

সকলে পড়েছে এবার গোলকধাঁধায়। কোনটার সঙ্গে কোনটা জুড়ে আছে সেটা কারোরই মাথায় আসছে না। সবাই চোখাচোখি করছে। উত্তর খোঁজার চেষ্টায় মগ্ন। কবে পাবে সেসব উত্তর?

রাত প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। ফাঁকা রাস্তা। ঢাকা শহরের রাস্তা যতই রাত হক ফাঁকা হতে চায় না। তবে এটা ওফসাইডের রাস্তা। চারিপাশে কিছুটা জঙ্গলের উপস্থিতিও রয়েছে। আবার মনে হচ্ছে কোথাও পরিত্যক্ত কবরস্থান! মাঝ দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে দুটো গাড়ি চলছে। একটার রঙ সাদা আরেকটা গাড়ির রঙ কালো। একটা গাড়ি আরেকটা গাড়িকে টক্কর দিচ্ছে বলা চলে। দুটোই চলছে হাই স্পিডে। কালো গাড়ি ড্রাইভ করছে স্বয়ং অভিরূপ। আর সাদা গাড়ির মধ্যে নোমান। অভিরূপের শখ হয়েছে এদেশে একটু রেসিং করার। নোমানকে জোরজবরদস্তি করেই নিজের সাথে এই রেসে নামিয়েছে সে। অভিরূপের কানে ব্লুটুথ। সে নোমানের ব্লুটুথে কানেক্ট করে বলল,
“গেট রেডি মাই ডিয়ার। তুই হারবি।”

“রিয়েলি? লেটস সি!”

বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে উঠল নোমান। অভিরূপ তার এতো আত্মবিশ্বাসের কারণ খুঁজে পেলো না। কারণ তার গাড়িটাই আগে চলছে। তাই সে ব্যঙ্গ করে প্রতিত্তোর করল,
“ফাঁকা কলসি বাজে বেশি। নোমানও বাজছে ঠকঠক!”

নোমান উচ্চস্বরে হেঁসে উঠতেই অভিরূপ নিজের গাড়িতে একটা অদ্ভুত সমস্যা লক্ষ্য করল। গাড়িটার স্পিড কমাতেই নোমানের গাড়ি তার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। গাড়িটা আস্তে করে ব্রেক কষলো অভিরূপ। গাড়ি থামলো। জানালা খুলে একটু উঁচু হয়ে মাথা বের করে গাড়ির নিচে উঁকি দিতেই দেখলো গাড়ির টায়ারে হাওয়া নেই। এবার বুঝতে বাকি রইলো না তার। দাঁত চেপে চিল্লিয়ে নোমানের উদ্দেশ্যে বলল,
“চিটিংবাজ!”

নোমান জোরে হেঁসে বলল,
“বাই বাই! তুই পরে আয়। আমি রাস্তা ঘুরে তোকে পিকআপ করব। ওকে মাই ডিয়ার?”

বলেই কল কাটলো নোমান। যেচে রেসিং করতে গিয়ে হেরে যাবার রাগটা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। মুখটা বেলুনের ন্যায় ফুলিয়ে চাবি ঘুরিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করল অভিরূপ। গাড়ির এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দিয়ে বেশ আয়েশে বসে সামনে তাকাতেই একটা অবয়বকে গাড়ির কিছুটা সামনে দিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যেতে দেখলো। চোখ কচলে ভালো করে সোজা হয়ে বসলো তৎক্ষনাৎ অভিরূপ। সে কি ভুল দেখলো? যখন আরো একদল ছেলেকে ছুটে জঙ্গলের ভেতরেই ঢুকতে দেখলো তখন অভিরূপের মনে হলো এটা ভুল নয়। মেয়েটির বিপদের আশঙ্কা!

চলবে…

[বি.দ্র. গল্পটা খারাপ লাগলে খারাপ লাগার কারণ সমেত জানাবেন। নয়ত আমি নিজের ভুল ধরবো কীভাবে? আর গল্পের কিছু অতিরিক্ত লাগলেও কোন বিষয় অতিরিক্ত লাগছে সেটাও জানাবেন। আমি রিপ্লাই না করলেও সবার কমেন্ট মনোযোগ দিয়েই পড়ি। গল্পটার ক্যাটাগরি রোমান্টিক। তার মাঝে কিছুটা থ্রিল দেওয়া। তাই রোমান্টিক সিনও থাকবে সাথে থ্রিলও থাকবে। যারা শুধু থ্রিলার ভালোবাসেন তাদের জন্য গল্প নয়। আবার যারা শুধু রোমান্টিক পছন্দ করেন তাদের জন্যও গল্প নয়। শুরু যখন রহস্য দিয়ে করেছি রহস্যভেদও আমিই করব এবং অনেকটাই করেছি। যারা এখনো বোঝেন নি তারা ২৭ এবং ২৮ নম্বর পর্ব আবার পড়ুন। আজকে অনেক কিছুই ক্লিয়ার হতো তবে পর্ব বড় হবে বলে করতে পারিনি। গল্পের বেশির ভাগ চরিত্রের বেসিসে একটা করে গল্প রয়েছে। তাই প্রতিটা চরিত্রের কাহিনী ফুটিয়ে তুলতে হবে আমায় যাতে রহস্য ভেদ করতে পারি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here