গোধূলি বেলায় তুমি এসেছিলে – পর্ব ২৯

0
348

#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৯

“আমি তো আপনাকে আগ বাড়িয়ে চা খেতে বলিনি। আপনি স্বেচ্ছায় আমার মুখে দেওয়া এঁটো চায়ের ভাঁড়ে মুখ দিলেন।”

কোনমতে রাগটা দমিয়ে গমগমে সুরে বলে উঠলো রাগিনী। তার কথার ধরন বেশ ঝাঁঝালো বুঝে কোহিনূর মুচকি হাসলো। এত রাগ কেন করছে মেয়েটা? নাকি এটা অভিমানের প্রতিচ্ছবি? যদি তাই হয় মেয়েটিকে তো আরো বেশি করে অভিমানিনী করতে হবে। তারপরে ঝট করে ভেঙে দেবে সেই অভিমান। হুট করে বরফের ন্যায় গলে যাবে সেই পাহাড় সমান অভিমান। বিষন্ন মুখশ্রীতে যখন ফুটে উঠবে আকাশ সমান বিস্ময়। কোহিনূরের কাছে অসামান্য এবং অষ্টম আশ্চর্যের মতো লাগবে দৃশ্যটি। বিমোহিত হয়ে চেয়ে থাকবে সেই মুখের দিকে। বৃষ্টির ঝাপটা আবারও ছুঁয়ে গেল রাগিনীকে। সামান্যতম হেলদোল হলো না তার। কোহিনূর ঠেস মেরে বলল,
“এত সুন্দর চায়ের লোভ সামলাতে পারিনি। কে জানতো তুমি আমাকে ডায়াবেটিস ধরানোর প্ল্যানিং করে রেখেছো!”

“আজেবাজে বকবেন না। আপনাকে এখানে আসতে কে বলেছে?”

“কেউ আসতে না বললে বুঝি আসতে পারব না?”

রাগিনীর গা জ্বালিয়ে দিচ্ছে এবার কোহিনূরের প্রতিটা কথা। কাঁটার মতো এসে খোঁচাচ্ছে কথাগুলো। তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ায় সে। চাপা রাগি সুরে বলে ওঠে,
“কেন পারবেন না? তবে আমার পাশ ঘেঁষে বসবেন না খবরদার। থাকুন আপনি। এখানেই বসে থাকুন। আমার পিছু পিছু আসবেন না বলে দিচ্ছি।”

কথাটুকু বলে আর দেরি করলো না রাগিনী। হনহনিয়ে এই ঝুম বৃষ্টির মাঝেই অগ্রসর হলো সে। কোহিনূর কোনোরূপ অস্থিরতা না দেখিয়ে বড্ড শান্ত গলায় বলে উঠলো,
“চা কি আমার জন্য দিয়ে গেলে? নো প্রবলেম, এই মিষ্টিটা আমার পছন্দ হয়েছে।”

ঘাড় ঘুরিয়ে ঝাঁঝালো দৃষ্টিতে তাকালো রাগিনী। তখনই পিছে ফিরে এসে কোহিনূরের হাত থেকে চায়ের ভাঁড় একপ্রকার ছিনিয়ে নিয়ে বলল,
“লজ্জা করে না অন্য মেয়ের এঁটো জিনিস খেতে?”

“ওমা লজ্জা করবে কেন? এমনিতে ছেলেদের লজ্জা একটু কমই হয়। উপরন্ত কোহিনূর সাহেবের লজ্জা আরো কম।”

“আসলেই আপনি একটা লজ্জাহীন মানুষ। তার সাথে ঠকবাজও। একে তো এখানে আমার চায়ের এঁটো খাচ্ছেন তার উপর আপনার প্রেমিকাকে প্রেমপত্র লিখছেন‌।”

কোহিনূর কোনোমতে নিজের হাসি চেপে রাখলো। ঠোঁট টিপে বাধ্য ছেলের মত কথাগুলো শুনলো। রাগিনী আবারো কড়া কন্ঠে ঝেড়ে উঠলো,
“আপনি অন্য মেয়ের পাশ ঘেঁষে বসছেন। তার মুখ লাগানো খাবার খাচ্ছেন এটা জানলে আপনার প্রেমিকার খারাপ লাগবে না?”

নিরব রইলো কোহিনূর। বৃষ্টির ঝাপ্টা ছুঁয়ে গেল দুজনকেই। কোহিনূর নিজের হাত দুটো আড়ষ্ট করে বলল,
“অবশ্যই খারাপ লাগবে। কিন্তু যেই নারীর চায়ের চুমুকে আমি চুমুক দিয়েছি সে-ই নারীই যদি কাঙ্ক্ষিত প্রেমিকা হয় তবে আমার মনে হয় তার থেকে দ্বিগুন ভালো লাগবে।”

রাগিনী সরু চোখে তাকালো। কথাটা যেন মাথায় উপর দিয়ে গেল। প্রথমেই বোধগম্য হলো না। কিছুটা সময় নিয়ে ভাবতেই যেন রাগিনীর মাথা থেকে পা অবধি এক অসামান্য তরঙ্গ বয়ে গেল। তার কান কি ভুল শুনেছে? নাকি সে আবারও হ্যালুসিনেট করছে? তার চোখের একদম কাছে হাতের চুটকি বাজতেই হকচকিয়ে উঠলো রাগিনী। কোহিনূর ইতিমধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার থরথর করে কেঁপে ওঠে রাগিনী। মানুষটির চোখের দিকে তাকানো মুশকিল হয়ে যায়। সামান্য কিছু কথা! সামান্য কয়েকটা শব্দ তার মনের সব রাগ-ক্ষোভ, অভিমানের পাহাড় মূহুর্তেই লজ্জার এক পুরো শহরে রূপান্তরিত করে ফেলেছে। তবে কি এই মানুষটাও তাকে নিয়ে ভাবে? মানুষটার মনের মধ্যে বিচরণ করতে সক্ষম হয়েছে? তবে তার রূপ নিয়ে যে সন্দেহ? সেটার কী হবে? সন্দেহ করা কি বৃথা? সে কি ভয়ানক ভুল করছে? হতে কি পারে না সামান্য ট্রিটমেন্ট আর মেডিটেশনে ইমপ্রুভ? উহ্, না। রাগিনী যে ফাইলে পড়েছিল এমন পেশেন্টদের সুস্থতা অনেকটা পরের কথা!
“ওহ হ্যালো ম্যাডাম! এতোক্ষণ রেগেমেগে মুখে যা আসছিল তাই তো বলে যাচ্ছিলেন। এখন একদম সাইলেন্ট মুডে চলে গেলেন? আর শুধু শুধু বেচারা চায়ের ভাঁড়টা হাতে ধরে রেখেছেন। খাবেন না তো আমার হাত থেকে নেওয়ার কী দরকার ছিল? দেখিই আমি খেয়ে উদ্ধার করে ফেলি!”

বলেই চায়ের ভাঁড় আবারও ছোঁ মে’রে নিয়ে নিলো কোহিনূর নিজের কবলে। এতটুকু সময়ের এই ঠান্ডা মরশুমের দৌলতে চা প্রায় ঠান্ডা। মুখে দিয়ে এক ঢকে চা শেষ করল কোহিনূর। রাগিনী তখনও নিরব। সামান্য কিছু কথা যে একটা অগ্নিকান্ডকে এভাবে বরফের ন্যায় শীতল করে তুলবে সেটা ভাবনায় আসেনি কোহিনূরের। হঠাৎই নিরবতা ভেঙে তাকে চমকে দিয়ে রাগিনী বলল,
“একটু আগে যা যা বলেছিলেন সেটা কি আপনি ভুল বলেছেন? নাকি আমি ভুল শুনেছি?”

নিজের ছোট দাড়িভর্তি গালে হাত রেখে রাগিনীর সমান হতে একটু নিচু হয়ে বলল,
“আপনি তো ঠিক কথা বলেছি। তুমি কানে ভুল শুনেছো কিনা সেটা তো আমি জানি না।”

“আপনি মানুষটা বড্ড হেয়ালি করেন? এতো হেয়ালি কীসের?”

“তোমার কি মনে হয়? আমার মতো এতো জটিল, কঠিন, অসহ্য লোক যে অন্যকে জ্বালাতে এক ইঞ্চিও ছাড় দেয় না তাকেও কেউ ভালোবাসতে পারে? তারও কোনো প্রেমিকা থাকতে পারে?”

“সে যদি চায় তাহলে থাকতেই পারে। কোনো উদ্ভট মেয়ে তার প্রতি মুগ্ধ হতেই পারে। হতেও তো পারে এই জ্বালিয়ে রাখা আচরণটাই সেই মেয়েটির বড্ড প্রিয়!”

কোহিনূর সোজা হয়ে দাঁড়াল। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ল। নিচু সুরে জবাব দিল,
“কেন? এটাও বুঝি কারোর পছন্দ হতে পারে? তোমার বিরক্ত লাগে না? অসহ্য লাগে না আমায়? কখনো মনে হয় না? যে তোমার মতো হুবহু দেখতে কেউ থাকলে তাকে তোমার জায়গায় আমায় সামলাতে পাঠিয়ে দিতে?”

শেষ কথাগুলো অদ্ভুত লাগলো রাগিনীর কাছে। বৃষ্টির থামাথামি নেই। ইতিমধ্যে সে কাকভেজা। নিজের ক্রোধে নিজেই ডুবে বৃষ্টিতে ভিজেছে। কোহিনূর চেয়ে রয়েছে তার উত্তর পেতে চাতক পাখির মতো। সে যে কৌশলে রাগিনীর জমজ কোনো বোনের কথা জানতে চাইছে সেটা রাগিনী বুঝেছে কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছে। রাগিনীর অদ্ভুত লাগলেও খুব একটা বেশি গভীরে নিয়ে গেল না ব্যাপারটাকে। কারণ মানুষটার অদ্ভুত সব প্রশ্নের সম্মুখীন তো প্রথমবার হয়নি। নিজেকে ধাতস্থ করে কিছুটা শক্ত গলায় বলল,
“আপনি রাগিনী তাজরীনকে আপনার সামনে দেখতে চান? নাকি রাগিনী তাজরীনের মতো যে কাউকে?”

রাগিনীর কাছে পাল্টা প্রশ্ন শুনে হতাশা নিয়ে তাকিয়ে রইল কোহিনূর স্থিরভাবে। মেয়েটার মুখে যেন সোজা কোনো কথা আসেই না। তবে উত্তর দিতে দেরি করল না কোহিনূর। অনর্গলভাবে বলে ওঠে,
“রাগিনী তাজরীন তো আর পৃথিবীতে দুটো নেই। সে একজনই। তার এই কোমল চোখের দেখা অন্য কোনো নারীর চোখে মিলবে না। তার অন্তরে থাকা সেই নম্র মন আমার কাছে এতোটাই মূল্যবান যে তার কাছে সব ফিকে পড়ে যায়। তার সেই ফিক করে হাসিটাও যেন সমস্ত অপরূপ গোলাপের মাঝে থাকা এক অপরূপা গোলাপ। যেটা মেলে ফুটলে নেত্রপল্লব সেখানেই স্থির হয়ে যায়।”

বলে কথার মাঝে থামে কোহিনূর। একটা বড় শ্বাস নিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। এতোক্ষণ বিমোহিত হয়ে কথাগুলো শুনলেও কোহিনূরের এমন দুষ্টু মাখা হাসিতে চোখ ছোট করে তাকায় রাগিনী। কোহিনূর আবারও বলে ওঠে,
“সবথেকে বড় ব্যাপার যেটা রাগিনী তাজরীন ছাড়া অন্য কারোর মধ্যে থাকতেই পারে না। সেটা হচ্ছে, কাউকে সুনিপুণ এবং যত্নসহকারে খাইয়ে মা’রার পরিকল্পনা। যেটা রাগিনী তাজরীনের মাথা ছাড়া অন্য কারোর মাথায় এই জটিল বুদ্ধি আসতেই পারে না।”

তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো রাগিনী। আর কত খোঁটা দেবে এই পাঁজি লোক? ভয়ানক এক চোখ রাঙানি দিয়ে খানিকটা তেড়েফুঁড়ে যেতেই কোহিনূর আর কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ঝুম বৃষ্টির মাঝেই ছুট লাগালো মাঝ রাস্তায়। রাগিনীও কম যায় কীসে? সে চিল্লিয়ে বলে উঠল,
“দাঁড়ান বলছি! ওখানেই দাঁড়ান! ভালো হবে না কিন্তু।”

কে শোনো কার কথা। বৃষ্টিতে দুজনেই ছুটছে। কোহিনূর আগে নিজেকে চোখ রাঙানি থেকে বাঁচতে ছুটছে আর রাগিনী রেগেমেগে তার পেছন পেছন। এদিকে কংক্রিটের বানানো রাস্তা নেই। রাস্তা হয়েছে কাঁদায় পরিপূর্ণ। বেশি জোরে ছুটতে গিয়ে একসময় ধপাস করেই আলুথালু হয়ে পড়ল কোহিনূর। কাদায় মাখামাখি হলো তার শরীর। এখনি পড়তে হলো তাকে? একরাশ বিরক্তি নিয়ে যখন উঠতে যাবে তখন তার কর্ণকুহরে ভেসে এলো যেন মোহনীয় হাসির সুর। মাথা উঁচু করতেই নেত্রপল্লবের মণি নামক অংশে যেন আঁটকে গেল সেই হাসির সুর সৃষ্টি করা মানবী। খিলখিল করে হাসছে রাগিনী। তার কাছে মনে হচ্ছে যেন কোনো আট-দশ বছরের বাচ্চা খেলতে গিয়ে লাফিয়ে কাঁদায় পড়েছে। কোহিনূরের মুখে না চাইতেও হাসি চলে আসে। জোর করে ঠোঁট যেন আপনমনে প্রসারিত হয়। বৃষ্টিতে ছিপছিপে গড়নের মেয়েটির গায়ে জামা লেগে গেলেও নিজেকে বেশ সামলে রেখেছে সে। ওড়না দিয়ে নিজেকে বেশ পেঁচিয়ে রেখেছে। লম্বা চুলগুলো চারিপাশে এলোমেলো হয়ে টপটপ করে পড়ছে চুলের আগা দিয়ে পানি। চিকন ঠোঁটে টপটপ করে পানি পড়তেই যেমন মনে হচ্ছে গোলাপি রঙের পদ্মফুলে পানির ছিটা এসে পড়ছে। এ যে কোহিনূরের কাছে নেশার চেয়েও ভয়ঙ্কর। এ নেশা কাটার নয়। এই নেশা দিন যাবে আরো আঁকড়ে ধরবে কোহিনূরকে। তিলে তিলে প্রগাঢ় হয়ে উঠবে।

“তাহলে? আমার বাড়িতে তোমরা দুজন যাচ্ছো ইটস ফাইনাল!”

চকিতে একে অপরের দিকে তাকায় নোমান এবং অভিরূপ। ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি। মুখচোখ ফুলে আছে নিশ্চিত। দুজনেই চোখ ঢলতে থাকল। অভিরূপ জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল,
“এতো কষ্টের কী দরকার বলুন তো আঙ্কেল। আমরা আছি এখানে ভালোই। দরকার হলে প্রতিদিন আপনার সঙ্গে একবার করে দেখা করে আসবো। কিন্তু আপনাকে এতো কষ্টে ফেলতে চাই না।”

রাশেদ সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুচকি হাসেন। উনি বেশ বুঝতে পারছেন অভিরূপ যেতে চাইছে না। তার মূল কারণ হতে পারে ঘোরাফেরা! অভিরূপ ছেলেটা নিজের মতো চলছে স্বাচ্ছন্দ্যবোদ করে সেটা উনি তার বন্ধু নাদিমের থেকে শুনেছে। অভিরূপ হয়ত ভাবছে রাশেদ সাহেবের বাড়িতে গেলে ইচ্ছেমতো যখন তখন বের হতে পারবে না। রাশেদ সাহেব শান্ত গলায় বললেন,
“আমার কষ্ট আর কীসে? আমি ব্যস্ত মানুষ। তোমাদের সঙ্গে সময় কাটানো হবেই মাত্র রাতের সময় আর সকালটা।”

“তাহলে আমরা দুজন গিয়ে একা একা আপনার বাড়িতে আঙ্কেল সারাদিন? তাছাড়া আপনি একা একটা মানুষ। আমরা গেলে আপনার প্রেশার পড়ে যাবে। তাই না?”

রাশেদ সাহেব থেমে থেমে বললেন,
“আমি একা আর কোথায়? তোমাদের সঙ্গী দেওয়ার জন্য আমার মেয়ে রাগিনীও আছে। ও থাকলে আমার কষ্ট কীসে?”

থমকে গেল অভিরূপ। কপাল কুঁচকে গেল। বোঝার চেষ্টা করলো সে সঠিক শুনলো নাকি ভুল? ‘রাগিনী’ নামটি বুঝি তার মনেই গেঁথে গিয়েছে? যে এখন রাশেদ সাহেবের মুখ থেকেও রাগিনী নামটি শুনতে পাচ্ছে? সে নিশ্চিত হবার জন্য আরো উৎসুক হয়ে বলল,
“আপনার মেয়ে রাগিনী?”

“হ্যাঁ। তুমি হয়ত ভুলেই গেছো। এমনিতেও আমাদের খোঁজখবর রাখো না। আমার মেয়ে তো আছেই। যদিও আর কয়েকদিনের জন্য। পরিক্ষার পর ছুটি পেয়ে বাবার কাছে চলে এসেছে। এখন তো বাড়িতেই আছে রাগিনী।”

মাথা টলমল করে ঘুরে উঠল অভিরূপের। মনে বাগড়া দিল টান টান উত্তেজনা। তৎক্ষনাৎ নোমানের দিকে হেলে পড়লো সে। ফিসফিস করে বলল,
“এই আমাকে একটু ভালোবেসে চিমটি কাট তো।”

নোমান আঁড়চোখে তাকায়। মাঝে মাঝে ছেলেটার ভাবভঙ্গি বোধগম্য হয় না। অভিরূপের হাত বাড়ানো দেখে সেও সুযোগ বুঝে জোরে দিয়ে ওঠে এক চিমটি। চোখমুখ জড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে হাত টেনে কাঁদো কাঁদো ভঙ্গিতে অভিরূপ বলে,
“তোর ভালোবাসা এতো কঠিন কেন ভাই? মেয়ে জুটবে না তোর কপালে। মিলিয়ে নিস।”

“তখন তোর বউকে নিজের বউ বানিয়ে নেবো। নো প্রবলেম।”

সহজভাবে উত্তর দিয়ে সোজা হয়ে বসে নোমান। বিস্ফোরিত নয়নে অভিরূপ তাকাতেই রাশেদ সাহেবের কথায় তড়িঘড়ি করে নিজেকে সামলে সামনে তাকায় সে।
“তোমরা আমার বাড়িতে না গেলে আমার কাছে বিষয়টা অনেক দুঃখজনক হয়ে দাঁড়াবে। অনেক আশা নিয়ে এসেছি আজ।”

নোমান বাঁকা চোখে অভিরূপের দিকে তাকালো। সে তো প্রথম থেকেই যাবে না যাবে না করছে। নিশ্চয় ছেলেটা যাবেই না। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো রাশেদ সাহেবকে ভালো করে বোঝাবে। তাই নিজের ভাবনা মতো কিছু বলতে উদ্যত হতেই অভিরূপ তড়িঘড়ি করে একপ্রকার উল্লাস নিয়ে বলে ওঠে,
“আপনি আমার বাবার মতো হন। আপনাকে আশাহত কিছুতেই করতে পারি না আঙ্কেল। তাই আমরা অবশ্যই যাব। আপনার কথা ফেলতেই পারি না।”

নোমান হতবিহ্বল। মুখে কোনো ভাষা নেই। এই অভি কতবার নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাবে? অভিরূপ আবারও বলল,
“তবে হ্যাঁ। আমরা রাতে যাব। একটু ঘোরাফেরা মানে বুঝছেন তো আঙ্কেল…”

বলেই ঠোঁট প্রসারিত করে হেঁসে বলল অভিরূপ। রাশেদ সাহেব মাথা নাড়িয়ে বলল,
“সবই বুঝলাম। বাট সাবধানে বাহিরে ঘোরাফেরা করো। এমনিতেই যা গেল তোমাদের উপর দিয়ে। আমি আসি। অলরেডি আই এম লেট। আপনাকে চেম্বারে যেতে হবে।”

কোনোরকমে নিজের উল্লাসটা চেপে রেখে রাশেদ সাহেবকে বিদায় জানালো অভিরূপ। দরজাটা লাগাতেই দৌড়ে এলো সে নোমানের দিকে। ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকাতেই নোমানের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো অভিরূপ। নোমানের গালটা ধরে একটা চুমু খেয়ে লাফিয়ে বলে উঠল,
“সুইটহার্ট, প্রে ফর মি! যেন সে-ই মেয়েটাই হয়।”

নোমান চোখমুখ জড়িয়ে তাকালো। হাতের কনুই দিয়ে অভিরূপকে গুঁতো মে’রে সরিয়ে নিজের গালটা সযত্নে দুহাতে মুছে বলল,
“অসভ্য! একে তো ব্রাশ করিস নি সেই মুখ আমার গালে লাগাস। ছি! কী গন্ধ! আমার বউ এসব শুনলে জীবনেও আর চুমু খাবে?”

নিজের আনন্দ চেপে রাখতে না পেরে নোমানকে আবারও ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে মা’রল অভিরূপ। আর আনন্দিত হয়ে বলল,
“ওটা ভালোবাসার গন্ধ মনে করে নে।”

নোমান ফুঁসে উঠে জিজ্ঞেস করল,
“আর কোন মেয়ের কথা শুনে মনে গিটার বাজছে তোর? মানুষ থেকে বাঁদরও হয়ে গেছিস একেবারে।”

অভিরূপ বেশ ভাবুক সুরে উত্তর দিল,
“সেই মেয়ে! সেই চমৎকার সাহসী চাহনির মালকিন!”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। দুঃখিত এতো দেরিতে গল্প দেওয়ার জন্য। শব্দ আসছিল না টাইপিং করতে গেলে। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here