শুভ্রতায় নবনীতা – পর্ব ১৭

0
380

#শুভ্রতায়_নবনীতা
#নবনীতা_নীরু
পর্ব ঃ ১৭

— প্রায় দুবছর হতে চলেছে,আমার মা অসুস্থ ছিল,অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল,কোথাও টাকা পাচ্ছিলো না বাবা,আপনার বাবার থেকে টাকা চাইলে টাকা দেয় কিন্তু শর্ত হচ্ছে আপনার সাথে আমার বিয়ে দিতে হবে।আমার বাবার কোন উপায় ছিল না তাই রাজি হয়ে যায়,আমি এই বিষয়টি তখন জানতাম না।কিছুদিন আগে আমি সেটা জানতে পারি তাই বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আমিও এই বিয়েতে রাজি হয়ে যাই।

— আসলেই!!! আমি এই বিষয়ে একটু আগ পর্যন্ত ও অবগত ছিলাম না,আপনার থেকে শুনছি।বাবা এত নিচু একটা কাজ কিভাবে করতে পারলো?আমি বাবার কাছে এটা কোনভাবেই আশা করি নি।কিন্তু নবনী আরেকটু ভেবে দেখলে হয় না?আমি সত্যি আপনাকে খুব ভালোবাসি।আমি বলছি না আপনাকে না পেলে আমি মারা যাব,বা সারা জীবন দেবদাস থাকব,অন্য কারো প্রেমে পড়ব না এরকম কিছু না।আমি এত আবেগপ্রবণ নই,তবে আমি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসি।

— দেখুন আবির আমার ছোটবোন পাঁচ বছর ধরে আপনাকে ভালোবাসে।একটা মেয়ে যে কখনই চায় না তার প্রিয় মানুষটি অন্য কারও হয়ে যাক।শুধুমাত্র আমি তার বোন জন্য সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে নিচ্ছে।কিন্তু আমি ওর বড় বোন,কিভাবে আপনাকে বিয়ে করতে পারি বলুন?আর তাছাড়া আমি এখনও কম্পলিকেট আছি।আমি একজনকে খুব ভালোবাসি। তার হয়তো আমার প্রতি রাগটা কমে গেলে সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু আমি যদি এখন জিদের বশে আপনাকে বিয়ে করি তাহলে আমাদের চার জনের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।

— আমি সব বুঝতে পারছি নবনীতা। আমি চাই আমার ভালোবাসার মানুষ সবসময় ভালো থাকুক,সেটা অন্য কারো সাথে হলেও।
— ধন্যবাদ আবির।
— এখন আপনি কি চাচ্ছেন বলেন??
— আমি চাই আমার বোন তার ভালোবাসাকে ফিরে পাক।সে আপনাকে খুব ভালোবাসে। তার ভালোবাসা পরিণতি পাবে আশা করি।
— আপনি কি তিশুকে বিয়ে করতে বলছেন?
— যদি বলি হ্যাঁ?
— আপনি কি বুঝতে পারছেন ভালোবাসার মানুষকে না পেলে ভেতরটা কতটা ভেঙে যায়?আমার ভালোবাসার মানুষকে আমি পাব না,আমার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।আমি কিভাবে এখনি তাকে বিয়ে করব?
— তাহলে ভাবুন তিশু যদি আপনাকে না পায় মেয়েটার কি অবস্থা হবে?প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না।
— আমার সময় লাগবে নবনীতা। আমার ভাবতে হবে।
— আর কি ভাববেন আবির?আমার বোন আপনাকে খুব ভালো রাখবে।দেখবেন খুব জলদি আপনি ওকে ভালোবেসে ফেলবেন।
— ভালোবাসা কি আসলেই এত সহজ?
— আপনি শুধু তিশুকে বিয়ে করেই দেখুন আর আমার কথা মিলিয়ে দেখবেন।
— আমি এটা করলে আপনি খুশি হবেন?
— হ্যাঁ অনেক।
— ঠিক আছে আমি বাসায় গিয়ে সবার সাথে কথা বলি।
— তারা যদি না মেনে নেয়?
— আপনি যেহেতু চেয়েছেন বিয়েটা হবে।
— অনেক ধন্যবাদ আবির।
— ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তো?
— হ্যাঁ আবির অনেক ভেবেছি।
— আমিই হয়তো প্রথম ছেলে যার কিনা বিয়ের আগের দিন হবু বউকে নিয়ে বের হয়ে বিয়ে ভাঙতে হচ্ছে।
— স্যরি আবির আসলে এটা করতেই হচ্ছে।
— আচ্ছা চলুন তাহলে উঠি।
— হ্যাঁ চলুন।

আবিরের মলিন মুখটা দেখে আমার আসলেই খারাপ লাগছিল,কিন্তু আমার কিছু করার নেই।হয়তো নিহান স্যারের ওরকম ব্যবহার আমি কখনও ভুলব না,আমি উনাকে ক্ষমাও করব না।তবে আমি চাই এই ভাল মানুষটার সাথে আমার আদরের বোনটা ভাল থাকুক।

দুজন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম।আবির হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল,আমিও পিছনে তাকালাম।
— কি হলো আবির?
— আপনাকে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসি?আজকেই তো আমাদের অন্যরকম সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা শেষ।
— ঠিক আছে চলুন।
— হুম।
— প্লিজ আমার বোনটাকে কষ্ট দিবেন না এটা আমার শেষ রিকুয়েষ্ট।
— ঠিক আছে। আমার ভালোবাসা যেন ভাল থাকে এটাও আমি চাই।
— প্লিজ এভাবে বলবেন না।শুনতে খারাপ লাগে।
— আজকের পর থেকে তো আর শুনতেই পারবেন না।আচ্ছা আপনার প্রিয় মানুষটি কে?
— সময় হলে জানিয়ে দিব।
— আচ্ছা ঠিক আছে।

আবিরকে দেখে বুঝতে পারছিলাম উনার মনে এখন কি চলছে।এরকম আমার সাথে হলে বোধ হয় আমি শেষ হয়ে যেতাম।পুরুষ মানুষ বুকে পাথর চাপা দিয়ে আসলেই অনেক কিছু সহ্য করতে পারে।

মনে মনে ভয়ও হচ্ছে,উনি কি আমায় ভুলে তিশুকে ভালোবাসতে পারবেন?আমার বোনটার কষ্ট হবে না!ও বাড়ির সবাই তিশুকে মেনে নিবে?
— কি ভাবছেন?(আবিরের কথায় একটু চমকে গেলাম)
— না কিছু না।
— আমার যদি সত্যিই বিয়ে করতে হয় আপনার বোনকে কষ্টে রাখব না এটুকু ভরসা রাখতে পারেন,হয়তো ভালবাসতে একটু সময় লাগবে।
— প্লিজ একটু দেখবেন।

— আমাকে যে ভালোবাসে তাকে আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ভাল রাখার চেষ্টা করি।
— অনেক ধন্যবাদ।
— এটা আপনার জন্য,প্লিজ এটা রাখবেন আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য প্রথম এবং শেষ উপহার।(পকেট থেকে কিছু একটা বের করে)

আমি আর কিছু না বলে কাগজে মোড়ানো জিনিসটা নিয়ে নেই,কারণ মানুষটাকে আর আঘাত দিতে চাচ্ছি না পরে না হয় তিশুকে দিয়ে দেব।লোকটা আসলেই অনেক ভাল।

–এটাই আমাদের শেষ দেখা,যখন আমি বা আপনি কারোর হই নি তাই না?
— হুম।
— আচ্ছা আপনার বাড়ি পেয়ে গিয়েছি,সন্ধ্যা হয়ে গেছে বাসায় যান।সবাই হয়তো চিন্তা করছে
— আচ্ছা ঠিক আছে ভাল থাকবেন।আর প্লিজ রাতেই আমাদের বাড়িতে জানিয়ে দিতে বলবেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে।

আমি বাড়ির মধ্যে চলে গেলাম।বাহিরে অনেকে কাজে ব্যস্ত।পাশ কাটিয়ে রুমে চলে এলাম।ব্যাগ রেখে বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিলাম একটু তো চিন্তামুক্ত হওয়া গেছে।এমন সময় তিশু ঢুকলো রুমে।মেয়েটা মন ম/রা হয়ে আছে।
— আপা মেহেদি পড়বি না?
— হ্যাঁ পড়ব তো,তুই পড়বি না?
— তুই আগে পড়ে নে,আমি পরে পড়ব।
— কেন?মেহেদি কি একজনই দিবে নাকি?মেহেদি দিয়ে দেওয়ার মানুষ তো আছে।দুজন একসাথে নিতে বসব চল।
— আমি পরে নিব আপা।
— কেন?একসাথেই নিব চল তো।আর কোন কথা হবে না।
— আপা…
— কথা হবে না বলছি না?আমার ওপর ভরসা রাখতে পারিস।আমি তোকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি রে তিশু সোনা।
— আপা আমিও তোকে বিশ্বাস করি,অনেক ভালোবাসি তারপর ও খুব কষ্ট হচ্ছে।
— এ বাবা তোর চোখে পানি কেন?এদিকে আয় তো দেখি।

তিশু এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।আমি কিছুতেই ওর কান্না থামাতে পারছি না।কেঁদেই যাচ্ছে মেয়েটা।

— তিশু কাঁদিস না বোন,কান্না থামা সোনা।দেখ কেউ এসে গেলে কি হবে?প্লিজ কান্না বন্ধ কর।তিশু…..

তিশু কিছুক্ষণ ইচ্ছেমতো কেঁদে নিলো।আমিও ভাবলাম একটু কেঁদে নিক মনটা হালকা হবে।কান্না শেষ করে নিজেই চুপ হয়ে গেল।
— তিশু……
— হুম..
— তোর জন্য একটা উপহার আছে।
— কি?
— এভাবে কথা বললে দিবও না বলব ও না।
— দে আমাকে।আমার গিফট আমাকে দিবি না মানে!
— নে…(তিশুর হাতে পায়েল খানা দিলাম।)
— পায়েল?
— হুম।
— ভারি সুন্দর তো!আমার জন্য এনেছিস?
— হ্যাঁ তবে এটা বিশেষ দিনে পড়বি।
— কোন বিশেষ দিন?
— যেদিন তোর বর তোকে সত্যি ভালোবাসতে পারবে সেদিন।
— আমার বর!!
— হুম আবির।
— তুই স্বপ্ন দেখছিস আপা।
— নবু,নবু,এই নবু…(আমাকে ডাকতে ডাকতে মা ঘরে ঢুকলো)
— কি হয়েছে মা?
— ও বাড়ি থেকে ফোন দিয়েছিল..
— হ্যাঁ তো কি হয়েছে?
— ওরা তো অন্য কথা বলছে।(মা)
— কি বলছে?
— ওরা তোকে না,তিশুকে বউ হিসেবে চাচ্ছে।

তিশু আর মা একে অপরের দিকে চোখ বড়বড় করে দেখে,একসাথে বিস্ময়ের চোখে আমার দিকে নজর দিলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here