শুভ্রতায় নবনীতা – পর্ব ১৬

0
271

#শুভ্রতায়_নবনীতা
#নবনীতা_নীরু
পর্ব ঃ১৬

তিশু খাওয়া দাওয়া করে রুমে এলে দুই বোন লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ি।অন্যদিন কত কথা আমাদের মাঝে অথচ আজকে নীরবতা ভাঙছেই না।আমার নীরবতা ভেঙে সব কিছু জেনে বুঝে নেওয়া উচিৎ।।

— তুই কতদিন ধরে আবিরকে পছন্দ করিস?
— আপা বিয়ে ভাঙার দরকার নেই,দেখ বাবার মান সম্মান নষ্ট হবে।আর আবির তো তোকে ভালোবাসে। তুই বরং বিয়েটা করে নে আপা।
— আমি একটা প্রশ্ন করেছি তিশু।
— ক্লাস ৯ম থেকে।।
— মানে চার বছর!!
— হুম
— আর উনার চিরকুটের সময় অনুযায়ী দেড় বছর ধরে আমাকে পছন্দ করেন,ধরতে গেলে বাহিরে যাওয়ার আগেই।ও তো দেড় বছরের কোন কোর্স কমপ্লিট করতে গিয়েছিল।
— হুম।
— তুই আমাকে আগে বলিস নি কেন?
— আপা কি দরকার বল তো এসব নিয়ে জলঘোলা করার।এটা তেমন কোন ব্যাপার না।তুই একটু বেশি ভাবছিস।
— ছোটবোনের ভালোবাসার মানুষটিকে বড়বোন বিয়ে করবে এটা তোর কাছে ছোট ব্যাপার?
— বাদ দে না আপা।
— তুই কালকে আমার সাথে বের হবি।
— কোথায়?
— আবির ফোন দিয়েছিল,কালকে বের হব বলেছি,উনাকে সব জানাবো, দেখি উনি কি করে।তোকে নিয়ে না ভাবলেও আমি এখন আর এই বিয়েতে বসব না।
— আপা এখন একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।
— সেটা আমি দেখে নেব,তুই এখন ঘুমা।
— হ্যাঁ
তুই ও এসব ভাবা বন্ধ কর।

কথাটি বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল থেকে বাড়িতে মেহমান আসা শুরু করলো।
ও বাড়িতেও নিশ্চয়ই ধুমধাম আয়োজন শুরু হয়ে গেছে।আমাদের বাড়ির কয়েকগুণ হবে ও বাড়িতে। ওতো বড় বাড়ি,কত মানুষ আর টাকা পয়সা!!! সেটা তো বলার বাহিরে, একমাত্র ছেলে তাদের।আমাদের তুশি খুব ভালো থাকবে।
বারান্দায় বসে আছি এমন সময় পাশের বাসা থেকে চাচাতো বোন নুজাইফা এসে সামনে দাড়ালো।
— আপা মেহেদি নিবা কখন?কাকি বলল তোমারে মেহেদি দিয়ে দিতে বলল।

— মেহেদি তো রাতে,এখন কেন?
— কাকি বলল তাই আসলাম।
— রাতে দিয়ে দিস।
— আচ্ছা তাহলে পরে আসব।
— দেখ তো তিশু কোথায়?
— আচ্ছা আপা।

নুজাইফা চলে যাওয়ার সাথে সাথে রুমে চলে গেলাম।বাড়িতে সবাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত।আমার শুধু গতকালের কথা মনে পড়ছে।উনি আমার সাথে ওরকম ব্যবহার করলেন কিভাবে?এক্সিডেন্টে যখন আমি মৃতপ্রায় অবস্থা তখন নাকি উনি আমার জন্য কান্না করেছিলেন!শুধুমাত্র উনার অফিসে কাজ করি,উনার স্ত্রীর মত দেখতে এটাই কারণ ছিল!উনি কি সত্যিই আমার ওপর একটু দূর্বল হন নি?শুধু আমিই উনার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছিলাম!!!

হঠাৎ উনার ডায়েরির কথা মাথায় এলো,ব্যাগ থেকে ডায়েরিটা বের করলাম।

–** নীরুকে গাড়িতে তুলছিলাম,ডেকে বললাম বাবা দেখো আমার ম্যাম,আমি নাম দিয়েছি মানি।একদম আমার মাম এর মত দেখতে।
সেদিন থেকে তোমাকে দেখার খুব সাধ জেগেছে।**

— ** বাবা যখন বাসায় এসে আমার কাছে বাচ্চা ছেলের মত বলছিল আমি আমার আরেক মেয়েকে পেয়ে গেছি,তুই ওকে দেখলে একদম চমকে যাবি,সকালেই অফিসে আসবে।
আমি সেদিন মনে মনে বলেছিলাম আমার যে আর আপনাকে দেখার অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না।**

— ** এখন রাত দুইটা অথচ আপনাকে দেখার উত্তেজনায় আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারছি না।আমার কি সারাটা রাত নির্ঘুম কাটবে!!**

–** ভোর ৬টা, আর কত অপেক্ষা করতে হবে আপনার জন্য!!**

— ** আচ্ছা আপনি শুধু মাত্র রনিতার মত দেখতে তার জন্যই কি আমার এত আগ্রহ?কিন্তু আপনার প্রতি আমার অন্যরকম অনুভব হচ্ছে কেন?**

— ** আপনাকে দেখে আমি আপনার উপর থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না।কি আছে আপনার মাঝে!!**

— ** নাহ,আপনাকে দেখার পর আমার অস্থিরতা আর কমছে না। কয়েকটা দিন যেতেই আবিষ্কার করি,আপনার প্রতি আমার বেশ অন্যরকম একটা অধিকার জন্মে যাচ্ছে দিন দিন।**

— ** আপনাকে অন্য কারও সাথে দেখলে খুব হিংসে হয় ইদানীং **

— ** আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে আমার খুব কষ্ট হয় কিন্তু আমি যে আপনার প্রতি খুব দূর্বল হয়ে পড়ছি,যা খুবই পীড়াদায়ক **

— ** একটা মেয়ে এতটা ফুসকা পাগল হতে পারে তোমাকে না দেখলে জানতামই না,কি তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছিলে তুমি!!দেখার সমাপ্তি হোক এটা আমি চাচ্ছিলাম না**

— ** প্রজেক্ট পেয়েছি শুনে তোমার আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিলো আমার সাধ্য থাকলে সময় থামিয়ে দিতাম।**

— ** আজকাল খুব বলতে ইচ্ছে হয়, ভালোবাসি নবনী।
কিন্তু ভয় হয় যদি বলে বসো তুমি রনিতার মতো দেখতে জন্য মোহে আছি!!! তাই নিজেকে তোমার থেকে সামলে রেখেছি।**

— ** তোমাকে লুকিয়ে দেখতে আজকাল ভীষণ ভালো লাগছে।**

— ** আজ পাঁচ দিন হয়ে গেল তোমার জ্ঞান ফিরছে না,আমার খাওয়া ও বন্ধ হয়ে গেছে।দ্বিতীয় বারের মত আমার ভালোবাসা হারাবো না তো!!**

— ** আপনি ঠিক হয়ে গেলেই আমি আপনাকে সব বলে দিব নবনীতা ,আমি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি,অনেক ভালোবাসি।**

— ** আপনার এত অসুস্থতা আমাকে দিন দিন দূর্বল করে দিচ্ছে।**

— ** আজকাল নীরু খুব বায়না করছে তার মানিকে বাসায় একেবারে নিয়ে আসতে,তার মানি কি রাজি হবে আসতে!!**

— ** হাসপাতালে তোমাকে আর একটুও ভাল লাগছে না দেখতে,কবে আমার কাছে নিয়ে আসব!!**

— ** তোমাকে আমার মনের কথাগুলো না বলে আর থাকতে পারছি না আজকেই আমি তোমায় বলে দিব নবনীতা **

— ** ভাবতেই ভালো লাগে নবনীতা নাম একদিন শুধু আমার মানুষটার হবে**

— ** অতঃপর তোমার আর আমার গল্পের সমাপ্তি এরকমই ছিল,তুমি অন্য কারো হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছো!!**

— ** আমার কাছে ফেরার পথ কখনো আর খোলার রাখব না কারো জন্য না।**

ডায়েরির লেখাগুলো পড়ে খুব কান্না পাচ্ছিলো।কেন এত ভালোবাসা আমার জন্য সীমিত সময়ের ছিল?কেন এত ভালোবাসার কথা আমাকে নিজে থেকে জানান নি?কেন একটাবারের জন্য বলেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন!!!আপনি ভালোবাসার পরিসীমা বাড়িয়ে দিলে আমার জীবনটা আজ অন্যরকম হতে পারতো।

বিকেলে বাড়িতে বলে বের হলাম আবিরের সাথে।বাড়িতে আর কেউ আপত্তি করল না।আমি রেডি হয়ে বের হলাম।

বাড়ির সামনের গোলিতে আবির দাঁড়িয়েছিল।আমি যাওয়ার পর একটা গাড়ি নিয়ে আমরা একটা রেস্টুরেন্টে যাব বলে ঠিক করলাম।রাস্তায় উনি বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন কি হয়েছে, হয়তো অনেক চিন্তা করেছেন।
— বলুন না কি হয়েছে?
— আমি গাড়িতেই যদি বলে দিব তাহলে রেস্টুরেন্টে কেন যাচ্ছি?
— আচ্ছা ঠিক আছে।
অতঃপর আমরা একসময় রেস্টুরেন্টে পৌছে গেলাম।
বসে আছি কিছুক্ষণ, ভাবছি কিভাবে কি শুরু করব,উনি কি আমার কথা মেনে নিবেন?যদি মেনে না নেন,আমি বাড়ি থেকে পালোবো এই সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম।

— কি ভাবছেন?
— না,কিছু না।
— কি নেব অর্ডার দেন।
— আপনার যেটা ইচ্ছে আপনি সেটাই দেন।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি কিভাবে কথা বলা শুরু করব, আমার খুব ভয় লাগছে।জানি না বলবই বা কিভাবে আর বলার পর কি যে হবে,ঘটনা বিগড়ে যায় যদি!তবুও সাহস নিয়ে বলা শুরু করলাম।
— আপনি আমাকে পছন্দ করেন কত দিন?
— এটা কেমন প্রশ্ন?
— জানতে চাইলাম, বলবেন না?
— অনেক দিন।
— অনেক দিন, কত দিন?
— দুবছর তো হয়েই যাবে।
— আমার বোন আপনাকে পাঁচ বছর ধরে ভালোবাসে।
— মানে?
— আপনি যা শুনেছেন তাই সঠিক।
— কি বলছেন এগুলো?
— সত্যিই বলছি।আমার বোন আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।আমি সেটা কালকে জানতে পেরেছি।ও তার বান্ধবীকে বলছিল সে(সৃজা) যেন বিয়ে বাড়িতে এসে কোন ঝামেলা না করে,মানে কোনভাবেই যেন মুখ থেকে বের না করে যে সে আপনাকে পছন্দ করে।.
— আমি কিছুই বুঝতে পারছি না নবনীতা!
— যেই আমি কি না সারাজীবন আমার পরিবারের জন্য নিকের শখ আহ্লাদ জলাঞ্জলি দিয়েছি,সেখানে আমার বোন চাইছে আমি যেন আপনার সাথে ভালো থাকি।কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।সে যখন জানতে পেরেছে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি তখনি সবটা বলেছে আমাকে।
— আমাকে এতদিন জানান নি কেন নবনীতা এসব?
— সুযোগ পাই নি তো।আর আপনার বাবা বিয়ে ঠিক করার কথা আপনাকে কি বলেছে?এটা নিয়েও আপনার বাবা আমাদের সাথে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।
— কি? কেমন সদ্ব্যবহার করেছে আমার বাবা?আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না নবনীতা।একটু বুঝিয়ে বললে ভাল হয় আমার জন্য।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here