শুভ্রতায় নবনীতা – পর্ব ১৫

0
270

#শুভ্রতায়_নবনীতা
#নবনীতা_নীরু
#পর্ব ঃ ১৫

আমি তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম।যেখানে আমার সম্মান নেই সেখানে আর এক মুহূর্ত ও না
নীরুর রুম থেকে তুশিকে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে আসব তখন নীরু পিছন থেকে মানি মানি করে ডাকছে আমি কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাই।ধীর পায়ে নীরুর কাছে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরি,।হয়তো এরপর আর কখনো নীরুকে নিজের মেয়ের মত ভাবতে পারব না,আমার তো অন্য সংসার হবে, বাড়ি হবে, বর হবে তারা কেন আমাকে নীরুর সাথে যোগাযোগ রাখতে দিবে!!
— মানি,তুমি কাঁদছো কেন?
— কিছু না মা।তুমি সাবধানে থেকো কেমন?
— আচ্ছা,তুমি আর আসবে না?

নীরুর কথাটির উত্তর দিতে পারছিলাম না,নীরুকে ছাড়তে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো।পাহাড় থেকে মাটি ঢসে পড়ে গেলে যেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে!ঠিক ওরকম লাগছিল।
— একটা আদর দিবে আমায়?
নীরু আমার কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।তুশি দাড়িয়ে আমাদের দেখছিল।

অতঃপর তুশিকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি।তুশি আমার অবস্থা দেখে বারবার বলছে আপা কি হয়েছে তোর?
— কিছু না,ভাবিস এসব নিয়ে।
— বল না?তুই নিহান স্যারকে ভালোবাসিস তাই না?
— এসব ছাড় তুশি,এসব নিয়ে কথা বাড়াস না।
তুশি আমার দুই হাত ধরে ওর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আবার প্রশ্ন করলো।
আমি আর নিজে ঠিক রাখতে না পেরে ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।
— আচ্ছা বাদ দে কিছু বলতে হবে না।চল এখন কান্না থামা আর বাসায় চল।যা হচ্ছে হতে দে,আবির ভাইয়া তো তোকে ভালোবাসে।যার সাথে তোর বিয়ে সে তোকে ভালোবাসে এর চেয়ে আর কি চাওয়ার থাকতে পারে।
রাতে রুমে বসে আছি,কেন যেন খুব কান্না পাচ্ছে,মানুষ চিনতে এতটা ভুল করলাম আমি!
চোখ থেকে কষ্টের পানি বন্ধ হচ্ছে না।এমন সময় তুশির রুমে আসা দেখে চোখ মুছে ফেলি।
— আপা কষ্ট পাস না তো,আবির ভাইয়া তোকে খুব ভাল রাখবে,নিহান ভাইয়াকে আর মনেই পড়বে না।
— উনি এমন কেন করলো তুশি!!
— বাদ দে তো আপা।বিয়েতে মন দে।আর মা তোকে ডাকছে যা শুনে আয়।
আমি উঠে মায়ের রুমে এলাম যদি একটু ভাল লাগে।একা থাকতে আরও একা একা লাগছে।
রুমে গিয়ে দেখি মা বসে আছে।
— মা ডাকছিলে?
— হ্যাঁ, আয় বস এখানে।দুদিন পর চলেই যাবি বাড়ি ছেড়ে।
— এভাবে বলো না তো মা,এমনি খারাপ লাগছে খুব।
— কেন, শরীর খারাপ লাগছে?
— না মন খারাপ লাগছে।
— এখন একটু মন খারাপ লাগা স্বাভাবিক।দেখবি তুই ও বাড়ি যাওয়ার কিছুদিন পর আর এখানেই আসতে মন চাইবে না।ও বাড়িতে কত মানুষ। আচ্ছা নবু একটা কথা বলবি সত্যি করে!
— হ্যাঁ বলো?
— তুই কি সত্যি মন থেকে রাজি এই বিয়েতে?এই বিয়েটাকে বোঝা মনে করে রাজি হচ্ছিস না তো?
কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত আমার তাই মনে হচ্ছিলো কারণ আমার হৃদয়ের অনেকটা জায়গা দখল করে ছিল উনি।কিন্তু আজকে আমার সাথে উনি যা যা করলেন, এরপর উনার প্রতি আমার চড়ম ঘৃণা চলে আসছে।আমি এখন বিয়েতে মন থেকে রাজি।আমার আর কোন অসুবিধা নেই বিয়ে করতে।
— আমার কোন ধরণের অমত নেই মা এই বিয়েতে।
— মন থেকে বলছিস?
— তোমার কেন মনে হচ্ছে যে অমত থাকতে পারে সেটা বলো তো?
— অনেক কারণ আছে বলেই বলছি।
— আমাকে কারণগুলো বলো।
— আমার ধারণা নিহান আর তুই একে অপরকে পছন্দ করিস।
— না মা এরকম কিছুই না,তুমি ভুল ভেবেছো।
— ভুল হলেই ভালো।
— আচ্ছা আমি আমি রুমে যাই একটু ঘুমাবো।
— ঠিক আছে যা।
আমি ঘর থেকে বেরিয়ে আমার ঘরে যাব।দরজার কাছে যেতেই শুনলাম তুশি কারও সাথে কথা বলছে।কেমন যে অস্বাভাবিক লাগছিল কথাগুলো।আমি কান পেতে শুনতে চেষ্টা করি।
— তুই বিয়েতে এসে এসব নিয়ে কোন কথা বলবি না সৃজা।আমি তোকে বারবার নিষেধ করছি।সেদিন হাসপাতালে কি হয়েছে বা আবিরের যে আপার সাথে বিয়ে এসব নিয়ে যদি কোন কথা না বলিস তাহলে আসবি বিয়েতে।
–…………
— হ্যাঁ ভালোবাসতাম কিন্তু সে এখন সম্পর্কে আমার বড় আপার হবু বর।আর তাছাড়া এটা আমার একপাক্ষিক ভালোবাসা।আবির কিছুই জানে না।সে আমার আপাকে খুব ভালোবাসে, পাগলের মত ভালোবাসে।
—……..
–তুই এখন ফোন রাখ আপা যখন তখন চলে আসবে।

তিশুর কথা শুনে আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল।আমি এসব কি শুনছি,সত্যিই কি যা শুনলাম তা সত্যি?এজন্যই সেদিন হাসপাতালে আবিরকে দেখে তেমন খুশি ছিল না?সেরকম কথা না বলে বাড়ি চলে এসেছিল?
যদি তাই হবে তাহলে ও আমাকে আবিরকে বিয়ে করতে এত করে বলছে কেন?ও কি আমাকে এত স্বার্থপর ভাবে নাকি যে বোনের ভালবাসার মানুষকে আমি বিয়ে করব!!সব বিষয়ে এত লুকোচুরি খেলতে ইচ্ছে করছে না।আমি চাই না যে আমার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছি বলে আমার বোন ও তার ভালোবাসার মানুষকে হারায়।আমি আমার পরিবারকে খুব ভালোবাসি। আমার তিশুর সাথে কথা বলা প্রয়োজন।কারণ দুদিন পর বিয়ে মানে শুধু কালকের দিন মাঝখানে।আমি ভেতরে যেতেই তিশু হকচকিয়ে উঠলো।
— আ আপা তুইইই!!
— হ্যাঁ, কেন?আমার আসা যাবে না?
— না তা না।আসলে….
— ফোনে কথা বলছিলি কারও সাথে?
— ও ওই যে সৃজা ফোন দিয়েছিল,ওকে দাওয়াত দিয়ে দিলাম তোর বিয়ের।
— ওহ আচ্ছা বলে দিয়েছিস তো এখানে এসে যেন চুপচাপ থাকে?
— মা মানে? কি বলছিস তুই আপা?
— বলে দিয়েছিস তো যে আমার বিয়ের দিন সে যেন এসে কোনভাবেই মুখ দিয়ে বের না করে যে তুই আবিরকে পছন্দ করিস,, না না পছন্দ করিস বললে তো ভুল হবে,ভালোবাসিস?ভালো করে বলে দিয়েছিস তো নাকি?
— কি বলছিস আপা এগুলো?
— কেন ভুল কিছু বললাম?
–………..
— কি ভাবিস তুই আমাকে?নিজের কথা না ভেবে বাবার জন্য এই বিয়েতে আমি রাজি হয়েছি,আমার পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দেই নি।সবসময় তোর,মায়ের,আর বাবার জন্য সবসময় নিজের ইচ্ছে,শখকে ত্যাগ করেছি।নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসি তোদের।এই বিয়েটাও ঠিক এরকম,বাবার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আমার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে আজমল চাচা।তুই কিভাবে ভাবলি যে আমার ছোটবোনের ভালোবাসার মানুষকে আমি কেড়ে নিব?যেখানে আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস চাইলেও আমি তোকে দিয়ে দিতে পারি।তুই আমাকে এত নিচু ভাবিস?
–………..
তিশু কেঁদেই চলেছে,সে হয়তো ভেবেছিল আমি কিছু জানতে পারব না কোনভাবে।এর মাঝে সে বড় ত্যাগ টা করেই দিবে।কিন্তু আমি বড় বোন হয়ে ওর ভালোবাসার মানুষটিকে কিভাবে বিয়ে করতে পারি?
তুই এরকম কেন করছিলি তিশু?আমি পছন্দ করে বিয়ে করছি না সেটা তুই ভালোভাবেই জানিস তিশু।
— আপা আবির তোকে ভীষণ ভালোবাসে,আমাকে না।
— আমি কি বাসি?
–………
— তাহলে তুই ও কেন অন্যদের মত অন্যের পছন্দ আমার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছিস জোর করছিস?
— আমি কি করব আপা?
— তোর কিছু করতে হবে না।যা করার আমি করছি।
— আপা তোর কি হবে?
— আমার কথা তোর ভাবতে হবে না।চল কিছু খাস নি তো রাতে,খেয়ে আয়।আমি বিছানা ঠিক করি। আর শোন আমি আছি তো,চিন্তা করিস না।

তিশু খেতে চলে গেল।আমি ফোন ঘাটাঘাটি করছিলাম এমন সময় আবিরের ফোন।আবিরকে কি এখনি কিছু বলা উচিৎ হবে?না এখন থাক,উনাকে কাল দেখা করতে বলি।ফোনটা রিসিভ করলাম।
— আসসালামু আলাইকুম। (আবির)
— ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
— কি করছিলেন?
— কিছু না এমনি ফোন ঘাটাঘাটি করছিলাম।আপনি?
— আমিও। ভাবলাম একটু আপনার খবর নেই।
— হুম ভালো করছেন।আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে।
— হ্যাঁ বলেন।
— এখন না।কালকে দেখা করুন কিছু জানানোর আছে।
— ইম্পর্ট্যান্ট কিছু?
— বলতে পারেন তাই।কালকে দেখা করুন সব বলব।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
— কোথায় আসতে হবে কালকে জানিয়ে দিব।
— ঠিক আছে।
আবিরকে সব জানাতে হবে,এটাই ভাল হলো। সব জানালে উনি নিশ্চয়ই বুঝবেন।উনি অনেক শিক্ষিত, ভাল মানুষ। কালকে উনার সাথে দেখা করে সব বলব।আমি আমার বোনের চোখের পানির কারণ হতে চাই না।যাদের মুখে হাসি ফুটাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি,এই একটা কারণে আমি আমার বোনকে কাঁদাতে পারব না।

চলবে………
আজকের পর্ব সম্পর্কে বলে যাবেন😊
সবার জন্য ভালোবাসা❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here