#শুভ্রতায়_নবনীতা
#নবনীতা_নীরু
#পর্ব ঃ ৭
— স্যার আমাকে এখানেই নামিয়ে দেন গোলির মধ্যে আর যেতে হবে না।
— শিওর?
— জ্বী স্যার।আর অনেক ধন্যবাদ আজকের জন্য।
— অফিসে আসছেন কবে থেকে?
— কালকে থেকেই আসব স্যার।
— ঠিক আছে।
গাড়ি থেকে নেমে নীরুকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে বাড়ির দিকে হাটা শুরু করলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি পৌছে গেলাম।গেট দিয়ে বাড়িতে ঢুকব ঠিক তখনি দেখি আজমল চাচা বের হচ্ছেন।
— কি রে মা ভাল আছিস?
— জ্বী চাচা আলহামদুলিল্লাহ। আপনার শরীর কেমন?
— বয়স হয়ে যাচ্ছে রে মা।কেমন আর থাকব।তুই যে কবে আমার মেয়ে হয়ে তোর নিজের বাড়িতে যাবি,তখন একটু ভালো থাকতে পারব।তা কোথায় গিয়েছিলে মা?
— চাচা আমার পরিক্ষা ছিল।
— আচ্ছা আচ্ছা ভেতরে যাও।বিশ্রাম নাও।
— জ্বী চাচা,আসসালামু আলাইকুম।
— ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
রুমে ঢুকবো তখনি মা ডাকলেন।গিয়ে দেখি বাবাও বসে।
— আজকে এত দেরি হলো কেন আসতে?(মা)
— পরিক্ষা আজকে শেষ তাই সবাই মিলে একটু বের হয়েছিলাম।
— তোর আজমল চাচা এসেছিল।
— হ্যাঁ দেখা হয়েছিল বাড়িতে ঢুকতেই।
— কিছু বলেছে?
— না,তেমন কিছু বলে নি তো! কেন কিছু হয়েছে?
— তোকে কিছু জামাকাপড় আর একটা মোবাইল ফোন দিয়ে গেল।
— কেন?আমি কি নিজের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে পারছি না নাকি যে এখন উনার এসব দিতে হবে?
— থাক,দিয়েছে যখন রেখে দে।(বাবা)
— না বাবা রেখে দেব কেন?আর তাছাড়া অফিসে মাস পার হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি তখন অফিস থেকেই আমি একটা নিউ ফোন পাব।আমি কেন এখন চাচার থেকে ফোন,ড্রেস এটা ওটা নিব?
— থাক মা এটা নিয়ে আর ঝামেলা করিস না।আমরাও না করেছিলাম কিন্তু উনি কিছুতেই কোন কথা শুনলেন না।বললেন,উনার হবু বৌমাকে কিছু দিতে তো ইচ্ছে করেই।তাই সামান্য কিছু উনার তরফ থেকে।(বাবা)
— বাবা আমি এখন হবু বৌমা আছি,বৌমা কিন্তু হয়ে যাই নি। তাই বলছি তুমি এসব ফেরত দিয়ে আসবে।
— নবু তো ঠিকই বলেছে,ফাঁদে ফেলে বিয়ে ঠিক করে নিছে এখন আবার লোকজনকে দেখিয়ে এটা ওটা দেওয়া শুরু করেছে।ভাগ্যে যদি ওখানে বিয়েটাই লেখা না থাকে, তাহলে পরে কত কথা হবে দেখেছো??(মা)
— কি বলছো নবুর মা?বিয়ে কেন হবে না?(বাবা)
— ভবিষ্যতের কথা তো বলা যায় না।(মা)
— মা আমি কিন্তু এগুলো কিচ্ছু নেব না বলে দিলাম।
— তুই এক কাজ কর আজকেই তুই আর তুশি ঘুরে আয় ওই বাড়ি থেকে দেখা করে আয় সবার সাথে আর এগুলো ফেরত দিয়ে আয়।(মা)
— আমি?
— হ্যাঁ, তুই গেলে কিছু বলতে পারবে না।(মা)
— তুমি কিন্তু ভুল করছো নবুর মা,এই নিয়ে আবার ঝামেলায় না পড়তে হয় আমাদের।(বাবা)
— তুমি এসব নিয়ে কিছু ভেবো না,আমাদের নবু সব সামলে নিবে।ওর ওপর আমার পুরো ভরসা আছে।(মা)
— আমি এখন রুমে যাই মা।ফ্রেশ হয়ে বিকেলেই যাই,কি বলো?
— হ্যা যা।
আমি রুম থেকে বের হয়ে চলে এলাম।ফ্রেশ হয়ে একটু বারান্দায় বসে আছি এমন সময় তুশি এলো।
— কি রে তুই নাকি আজমল চাচাদের বাড়ি যাবি?মা তোর সাথে আমাকেও যেতে বলল।আবির ভাইয়া এসেছে নাকি?
— একটু বেশিই কথা বলছিস আজকাল।
— আমি আবার কি বেশি বললাম?
— রেডি হ, বের হবো।
— কেন যাবি বললি না?
আমি তুশিকে তখনকার ঘটনা সব বললাম।
— মানে এসব দিয়ে কি অপমান করতে এসেছিল নাকি?
— সেটা উনিই ভাল জানেন।চল রেডি হ তো তাড়াতাড়ি ।
— আচ্ছা আপা।
ওরে কোথায় রে তোরা,তাড়াতাড়ি এদিকে আয় দেখ কে এসেছে বাড়িতে?কোথায় রে তোরা,আয় আয় তাড়াতাড়ি আয়।
আমাদের দেখেই এক মধ্যবয়স্ক মহিলা এরকম চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিল।আমি আর তুশি একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি বারবার।
তিনি আমাকে পরম যত্নে বাড়ি অন্দরমহলে নিয়ে গেলেন।ভেতরে না বলে অন্দরমহল কেন বললাম?কারণ বাড়িটার সাথে অন্দরমহল শব্দটাই বেশি মিলে।দোতলা পুরাতন একটা বড় বাড়ি।নিচতলায় চারপাশে একটা করে রুম আর পুরোটা ফাঁকা। নিচতলায় মনে হলে বাড়ির কেউ থাকে না সবাই উপর তলাতেই থাকে।
আমাদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে একটা রুমে বসতে দিলেন।সাথে সাথে রুমে অনেকে চলে এলো,দেখে মনে হচ্ছে ছোট এই রুমটায় আর তিলমাত্র জায়গা নেই।
— এটা কে গো?
— আরে এটা যে আমাদের আবিরের বউ গো।
— আপা তোর বিয়ের আগেই তো আবিরের বউ বানিয়ে দিল রে,ওগুলো দেওয়া এখন আর আমি দোষের কিছু দেখছি না।দেখ সবাই তোকে কিভাবে দেখছে।(আমার কানে কানে এই কথাগুলো বলল তুশি)
— চুপ করবি তুই!
— কেমন আছো বৌমা?তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে?
— জ্বী আলহামদুলিল্লাহ।
— এই যা তো নাস্তা নিয়ে আয়।আবিরের বৌ আজকে প্রথম এ বাড়িতে এসেছে।ছোটবেলায় দেখেছিলাম ওকে।(কাউকে উদ্দেশ্য করে)
— না না আমরা কিছু খাব না।এসেছিলাম একটা দরকারে।
— কি দরকার গো?
— আসলে চাচা গিয়েছিলেন আমাদের বাসায়।কিছু জিনিস দিয়ে এসেছেন,আসলে এখন থেকে এসব দেওয়া শুরু করলে মানুষ কি বলবে বলেন?আর আমি একটা ভাল জব করছি মাসে ভাল টাকা আসবে,এসবের কোন দরকার নেই।বিয়ের পর আমাকে জামাকাপড়, সোনাদানাতে ডুবিয়ে রাখলেও কেউ কিছু বলতে আসবে না।কিন্তু এখন যদি এ বাড়ি থেকে আমার বাড়িতে কিছু যায় তাহলে লোকজন অন্য নজরে দেখবে।তাই জিনিসগুলো নিয়ে এসেছিলাম।আমার জন্যই রেখে দিবেন,আমি যখন একেবারে এ বাড়িতে আসব তখন ব্যবহার করব।
— এটা তুমি কি বলছো নবনীতা?জামাগুলো তোমার শ্বশুড় পছন্দ করে কিনে এনেছে,আর মোবাইলটা আবির বিদেশ থেকে পাঠিয়েছে।তুমি নিবে না এগুলো?
— নেব না কেন, অবশ্যই নেব কিন্তু সঠিক সময়টা তো আসতে হবে তাই না।আমি এখন এগুলো নিতে পারব না দুঃখিত।
— ও যখন এগুলো এখন নিতে চাচ্ছে না,তাহলে ওকে আর নিতে জোর করিস না।আসলেই তো লোকজন কি বলবে?(পিছন থেকে লাঠি ভর দিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে এলো)
সবাই দুপাশে সরে গিয়ে রাস্তা বানিয়ে দিলো আমাদের দিকে আসার জন্য।দেখে যতটুকু বুঝলাম ইনিই বাড়ির সবচেয়ে বেশি বয়স্ক।
— বাহ মাশাল্লাহ।আমার দাদুভাইয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে।কি মায়াবী দেখতে আমার নাতবউ।
— ইনি তোমার দাদিশাশুড়ি,আবিরের দাদি হয়।আমাদের বাড়ির কর্তী।
— আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন দাদি।
— এইতো দাদুন, তোকে দেখে আরও বেশি ভাল লাগছে।তুই তো চাইলেই মাঝেমাঝে আসতে পারিস এ বাড়িতে।
— আচ্ছা ঠিক আছে আসব।
অনেকক্ষণ কথা হলো সবার সাথে।
একজন পিছন থেকে সামনে এসে বলল
— অনেক কথা হয়েছে তোমাদের এখন সবাই যার যার কাজে যাও তো।আমি আমার বউমণিকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাই।আর আম্মা আবির ভাইয়ার ঘরের চাবিখানা দাও তো!
সবাই একেএকে ঘর থেকে চলে গেল।মেয়েটা আমাকে আর তুশিকে বলল তোমরা একটু বসো আমি আম্মার কাছে থেকে চাবি নিয়ে আসি।বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।আমি আর তুশি বসে আছি।
— আপা বাড়ির মানুষ তো দেখি তোকে কিছু একবার দেখেই চিনে ফেললো। আর কত মানুষ এ বাড়িতে!! তোকে খুব ভালোবাসে সবাই,নিজের নিজের ব্যবহারে বুঝিয়ে দিলো।
— আমি ও তো তাই দেখি অবাক হচ্ছি।কিন্তু একটা কথা খেয়াল করে দেখেছিস?
— কে যেন বলল আমাদের আবিরের পছন্দ আছে।তার মানে কি উনি আমায় আগে থেকে দেখেছেন?
— আমারও তো তাই মনে হচ্ছে রে আপা।আবির ভাই হয়তো তোকে আগের থেকে পছন্দ করে।
— কিন্তু তার বাবা যে একটা বিশ্রি ব্যাপারকে কেন্দ্র করে বিয়ে ঠিক করেছে এটাও কি উনি জানেন?
— সেটা আন্দাজ করতে পারছি না।জানতেও পারে আবার নাও জানতে পারে।
চলবে……