এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ২১

0
400

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২১

কথায় আছে সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সত্যি তাই সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না।তার নিজ কক্ষপথে সব সময় আবর্তন করে সে।কারো জন্য অপেক্ষা করা বা পিছু দেখার সময় তার নেই। বারং মানুষ সর্বদা সময়ের পিছু ছুটে তাকে ধরার জন্য।

দেখতে দেখতে ৪ মাস পার হয়ে গেছে সাথে বদলে গেছে অনেকের জীবন যাত্রা। সুখ দুঃখ নিয়ে বিরাজমান এই সময় অনেকে অনেক কিছু হারিয়েছে।

সেদিন তানু চলে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। তনয় সারা শহর খুজেও তানুকে পাইনি। হতাশ হয়ে ফিরে এসেছে বারবার। কথায় আছে মানুষ অধিক কষ্টে পাথর হয়ে যায়। তনয়ের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।আগের থেকে অনেক গম্ভীর আর বদমেজাজী হয়ে উঠেছে। কারো সাথে ঠিক ভাবে কথা বলে না।অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে।

চৌধুরী বাড়ি যেনো কেমন নিঃস্বতব্ধ হয়ে গেছে।হাসি খুশি মানুষ গুলো হয়ে পড়েছে নিস্বপ্রান। আগের মতো কেউ আর হাসে না। বসে আড্ডা দেয় না।

তাসু আগের থেকে অনেক চুপচাপ হয়ে গেছে। তানু চলে যাওয়ার জন্য রনিত তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। রনিত বলে দিয়েছে যে বাড়িতে তার বোন সম্মান পায়নি সে বাড়িতে সে কোন যোগাযোগ বা কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না।

তাসু সেদিন কোনো জবাব দেয়নি রনিতের কথার৷ শুধু নিরব নয়নে শ্রবণ করেছে। কি বলবে সে। সত্যি কিছু বলার নাই তাই। আজ তার ভাইয়ার জন্য এমন পরিস্থিতি সবার।তাই তাসু সেদিনের পর তনয়ের সাথেও কথা বলে না। সব সময় নিজেকে ঘর বন্দি করে রাখে। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না কারো সাথে।

জাকিয়া সেও খুব ভেঙে পড়েছিল তানুর চলে যাওয়াতে। কিন্তু সে মাঝে চেষ্টা করেছে সবাই ভালো রাখার কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়ে উঠেনি। এখন তার মেহেদীর সাথে রেগুলার যোগাযোগ। তবে মেহেদীর দিকে থেকে শুধু বন্ধু। জাকিয়ার থেকে তানুর ব্যাপার সব শুনে খুব হতাশ হয় মেহেদী। তারপর জাকিয়াকে অনেক ভাবে সাহায্য করে বুঝতে। শান্তনা দিয়ে পাশে থেকেছে।সেই থেকে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাদের।

তানু যাওয়ার পর মিসেস চৌধুরী অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে চিন্তায়।২ দিন সে ঘর থেকে বের হয়নি।তানুর শ্বশুর খুব হতাশ হয়। তানু এমন একটা কাজ করবে কেউ কল্পনা করে নাই কখনো। কিন্তু তানু হঠাৎ এমন কেনো করলো সবার এক প্রশ্ন মনে।

তানুর বাবার বাড়ি সবাই বেশ ক্ষিপ্ত চৌধুরী বাড়ির উপর। তাদের মেয়ে আর যায় হোক বুঝমান একটা মেয়ে। হুটহাট এমন কাজ কেনো করবে কোনো কারণ ছাড়া। তাই নিয়ে তনয়কে অনেক কথা শুনিয়েছে তানুর বাবা।তনয় কোনো প্রতিবাদ বা কোন কথা বলেনি এই ব্যাপারে।কিন্তু মনে মনে জমা হয়েছে তানুর প্রতি এক রাশ অভিমান। যা সহজে দূর হওয়ার নয়।

________________________

তানুমা তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তোর তো কোচিং-এ যাওয়া আছে৷ বললেন মিসেস সেহেলা খান।

মনিমা আমি এখন কিছু খাব না প্লিজ জোর করো না।এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। তানু বলে।

মার খাওয়ার সখ জেগেছে।তাড়াতাড়ি বসো টেবিলে।তাছাড়া এই সময়ে অনিয়ম করতে নেই জানো না।এতে বাচ্চার ক্ষতি হয়। বসো খেয়ে তারপর বের হবে।

তানু অন্তঃসত্ত্বা ৩ মাসের। সেদিন তানু বাড়ি থেকে বের হয়ে বুঝতে পারে না কি করবে সে। তারপর সজিয়াকে সে সব খুলে বলে। কারণ একমাত্র সজিয়া ছিল তার ভরসা সেই সময়।

সজিয়াকে বলে এমন জায়গা খুজে দিতে কেউ যেনো তানুর খোজ না পাই।সজিয়া অনেক বুঝিয়েছিল কিন্তু তানু বুঝে নাই উল্টে রাগ দেখিয়ে একায় ব্যবস্থা করে নিবে বলে জেদ করেছিল। তাই সজিয়া তার খালামনির বাসায় তানুকে রেখে আসে।

সজিয়ার খালামনি সেহেলা খান আর খালু আকবর খান।তাদের কোনো সন্তান নেই।উচ্চশালী মানুষ তারা কিন্তু সন্তানের স্বাদ তারা পান নাই। তানুকে পেয়ে তারা অনেক খুশি হয়েছিল আর আনন্দে তাকে গ্রহণ করে নেয়। এমনকি সবাইকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেয় তানুকে তারা।

— তানু এদের কাছে থেকেই ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ করে।কিছু দিন আগে রেজাল্ট বের হয়েছে। আর লেটার মার্ক নিয়ে পাশ করে তানু।সব কিছু অবশ্য তনয়ের অবদান যা কোনো দিন ভুলবে না তানু। এখন ইউনিভার্সিটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সে আর সজিয়া।তার জন্য কোচিং করা আবার।

তানু একমাস আগেই জানতে পারে সে মা হতে চলেছে।সেদিন তানুর ছিল সব থেকে আনন্দের দিন।প্রথম মা হওয়ার অনুভূতি তাকে গ্রাস করে সুখের সন্ধানে নিয়ে যায়। আবার এটা ভেবে হতাশ হয় তার সন্তান কখনো বাবার আদর পাবে না।তার বাবা হয়তো কখনো জানবে না পৃথিবীতে তার একটা সন্তান আছে। এই সকল কথা ভাবলে তানুর চোখ ভিজে উঠে।

তানু অল্প করে খেয়ে চুএ যায় কোচিং-এ। এখন সে বাইরে যাওয়ার সময় বোরকা সাথে মুখ এটে হিজাব করে যায় যেনো কেউ চিনতে না পারে। কিন্তু আপন মানুষ এর থেকে কি নিজেকে লুকানো সম্ভব হয় কখনো। তাই তানু ও পারেনি তনয়ের থেকে নিজেকে আড়াল করতে।

তানুকে যখন খুজে না পাই তখন খুব হতাশ হয়।আর কোথায় যেতে পারে তানু ভাবতে থাকে।তারপর সজিয়ার কাছে যায় তনয় কিন্তু সজিয়া বলে সে কিছু জানে না।তাই আবার হতাশ হয়ে ফিরে আসে তনয়। এবার ২ মাস খুজেও কোনো খোজ পায়না তানুর।কোচিং-এ ও আসতো না তানু। খুব ভেঙে পরে তনয়।।

একদিন সজিয়ার সাথে একটা মেয়েকে দেখে তনয় কোচিং- থেকে বের হতে তবে বোরকা পড়ে সব ঢাকা।এতে তনয়ের সন্দেহ হয়। তারপর থেকে সজিয়াকে ফলো করে তনয় সিয়র হয় সজিয়া সব জানে তানুর ব্যাপারে। তাই সে সজিয়াকে ফোর্স করে বলতে আর সজিয়া ও উপায় না পেয়ে সব বলে দেয়।

তারপর তনয় সজিয়াকে বারন করে তানুকে এই বিষয় জানাতে যে তনয় তাত খোজ পেয়ে গেছে সঠিক সময় হলে সে নিজে গিয়ে তার সামনে দাড়াবে তাই। আর সব কাজের জবাব তাকে দিতে হবে কেনো এমন করেছে সে।। তারপর থেকে তনয় তানুর খোজ রাখত আড়াল থেকে। যা তানুর অজানা থেকে যায়।

তানু কোচিং-এ এসে দেখে সজিয়া বসে আছে। তারপর সেও বসে গল্প শুরু করে৷ এর মধ্যে একটা ছেলে এসে বলে হাই আমি রিক আপনার নাম জানতে পারি মিস….

সজিয়া একটা ভেংচি দেয়।তানু হেসে বলে আমি তানজিলা রহমান। আর এ সজিয়া।

রিক বলে নাইচ নেম। এন্ড কিউট লেডি । তানুর এই কথাটা ভালো লাগে না তাই ভ্রু কুচকে তাকাই রিকের দিকে। রিক বুঝতে পেরে বলে সরি সরি আমি আসলে মজা করছিলাম। প্লিজ রাগ করবেন না।রাগ করলে আপনাকে আগ্নেয়গিরির লাভা মনে হয়।বরিকের কথা শুনে এবার তানু হেসে দেয়।

রিক আবার বলে আপনি কি বোবা মিস সজনে পাতা।সজিয়া আরো রেগে যায় আর বলে দেখুন বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু। আমি বোবা হিয় বা বাচাল তাতে আপনার কি হু, 😏।

রিক বুঝতে পারে এই মেয়ের সাথে সে পারবে না তাই তানুকে বলে। আমি এখানকার স্যার আপনাদের ইংরেজি ক্লাস নেব। তবে প্রথম আজ আমার। আজই জয়েন করি আর আপনাদের সাথে আলাপ করতে আসা কিছু মনে করবেন না।স্যার শুনে সজিয়া চমকে উঠে আর মনে মনে ভাবে হাই হাই এতোখন সে না জেনেই এমন ব্যবহার করেছে। এবার কি হবে তার। সজিয়া আর কিছু না বলে চুপ মেরে যায়। রিক বুঝতে পেরে মুচকি হাসি দেয়। তারপর চলে যায় ক্লাসে দেখা হচ্ছে বলে।

রিক চলে যেতেই তানুর হাত ধরে বলে।সজিয়া এবার কি হবে আমার। নিশ্চয় ব্যাটা আমাকে ফাসাবে ক্লাসে দেখিস। তানু বলে আর একটু বাড়াবাড়ি কর বেশ হয়েছে।তারপর তানু বলে রহিত ভাইয়ার কি খবর রে।

সে আছে ভালোই তবে তোর জন্য মন খারাপ কেউ ভালো নেই। শুনেছি রহিত ভাইয়া নাকি তাসু আপুর সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে তোর জন্য। তানুর খুব খারাপ লাগে এটা শুনে কারণ তানু জানে তাসু আর রনিত কতটা ভালবাসে দুজন দুজনকে। তার জন্য কিনা এমন হলো ওদের সাথে। ভেবেই চোখে পানি চলে আসে।

সজিয়া বলে তোর মা অসুস্থ তানু। শুধু তোর কথা বলে। আমি বলিকি এবার বলে দিই সবাইকে তোর কথা। আমি রহিতকে আর মিথ্যা বলতে পারছি না। তানু বলে না এখনো সময় আসেনি। সময় হলে আমি বলব চিন্তা করিস না।কষ্ট যখন পেয়েছে আর একটু পাক না হয়৷ কিছু করার নেই এখন আপাতত। সজিয়া একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ে।……………

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here