এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ২২

0
283

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২২

— সজিয়া আর তানু ক্লাস শেষ করে হসপিটাল যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। তানুর চেকাপ করার আছে। প্রতি মাসে একবার করে চেকাপ করে আসতে বলেছে ডাক্তার তানুকে৷ তানু কোনো রিস্ক নিতে চায়না তার বাচ্চাকে নিতে। তাই সেও খুব সাবধানে চলাচল করে। একমাত্র বেচে থাকার সম্বল এখন ওই বেবিটাই তানুর।

–তানু আর সজিয়া হসপিটালের এসে নেমে রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে আসে। ২ জন গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় সামনে তাকিয়ে দেখে অন্তর খুব ব্যস্ত হয়ে কোথাও যাচ্ছে। তানু একটু ভ্রু কুচকে বুঝার চেষ্টা করল অন্তর এখানে কি করছে। কোনো ভাবে মেহুর কিছু হয় নাই তো৷ কপালে তার চিন্তার ভাজ পরল। অন্তর সামনে এগোতেই সামনে সজিয়া আর একটা বোরকা পড়া মেয়ে দেখে। মুখ আটকানো কিন্তু অন্তরের তানুকে চিনতে একটু ও সমস্যা হয়নি। কারন সে এই ভাবে তানুকে অনেক আগে থেকে দেখেই আসছে। তনয় তানুর খোজ পাওয়ার পর অন্তর কে সব খুলে বলে।

–তারপর থেকে অন্তর আর তনয় দুজন মিলে অনেক সময় তানুকে ফলো করত। আবার রাতে অনেক সময় তানুর বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে বসে থাকত। তানু জানালার ধারে বসে এক মনে পড়াশোনা করত আর এইদিকে যে চাতকের ন্যায় একজন বসে তাকে দর্শন করে যায় সেদিক তানুর কোনো খোজ নেই। তবে তনয়ের কাছে বিষয়টা খুব ভালো লাগতো। নতুন প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার জন্য প্রহর গুনে অপেক্ষার। তনয়ের কাছেও ব্যাপারটা এমন মনে হতো।

— অন্তর তানুকে দেখে এমন একটা ভাব করে যেনো আজ প্রথম দেখছে তানুকে। তাই মুখটাকে অবাক ভঙ্গিকারে রেখে বলে আরে তানু না। তানু অন্তর এর কথায় চমকে উঠে। তারপর আমতাআমতা করে বলে ভাইয়া ভালো আছেন। মেহুর কি খবর? অন্তর বলে তুমি এতো দিন কোথায় ছিলে তানু। তোমাকে নিয়ে কত চিন্তাই আছে সবাই জানো। তুমি একবার তনয়ের কথাটা ভাবলে না তানু। জানো তুমি চলে আসার পর কত কিছু হয়ে গেছে। তনয় আর আগের মতো হাসে না। কারো সাথে কথা বলে না। তুমি হঠাৎ এমন কেনো করলে তানু। তানু অন্তরের কথা শুনে বেশ অবাক হলো। তনয় তো চেয়েছিল যেন, ও চলে আসে তাহলে তনয় কেনো কষ্ট পাবে। তানু যেনো কিছু বুঝতে পারছে না।পরোক্ষনে ভাবলো হয়ত সবার সামনে তনয় নাটক করেছে তাকে কেউ যেন দোষ না দেয় সেই জন্য।

— ভাইয়া থাকনা এই সব কথা। আপনি এখন এখানে কেনো মেহু ঠিক আছে তো। ওর কোনো সমস্যা হয়নি তাও চাইয়া। এক নিশ্বাসে বলে তানু কথাটা৷ অন্তর বলে মেহু এবং বাচ্চা দুজনেই ভালো আছে৷ আর গতকাল রাতে আমার ছেলে সন্তান হয়েছে৷ তোমার জন্য কত মন খারাপ করত মেহু জানো। যাও দেখা করে এসো। এখন অন্তত বন্ধুর পাশে থাকো। তানু একটু লজ্জা পেলো অন্তরের কথায় । সত্যি এতো দিনে মেহুর অন্তত একটা খোজ নেওয়া উচিত ছিল এই অবস্থায়।

— অন্তর আর কথা না বাড়িয়ে তানু আর সজিয়াকে মেহুর কেবিন দেখিয়ে দিয়ে চলে যায় ওষুধ নিয়ে আসার জন্য। তানুরা ওই দিকে চলে যায়। কেবিনে যেতেই দেখে একটা মিস্টি ফুটফুটে কিউট বাবু খেলা করছে দোলনার মাঝে। কত সুন্দর আর মিস্টি হয়েছে দেখতে। মেহু চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। তানুর কন্ঠ স্বর পেয়ে তারাতাড়ি করে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে তানুকে। মেহুর চোখ ভরে উঠে সাথে সাথে। তারপর সে উঠার চেষ্টা করে। কিন্তু তানু গিয়ে থামিয়ে দেয় ওকে। মেহু তানুর হাত ধরে বলে এতোদিন কোথায় ছিলিস তুই। একবারও আমাদের কথা মনে পড়েনি। এতো স্বার্থপর কবে থেকে হয়েছিস তুই। তানু জানে মেহুর রাগ করাটা স্বাভাবিক তাই সে শুধু চুপ মেরে শুনছে মেহুর কথা। মেহুর আবারও বলে। এখন কেনো এসেছিস৷ যদি মরে যেতাম তখন একবারে পুরো কথা শেষ করতে পারল না মেহু তার আগে তানু মুখ চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলে এই সব কি কথা মেহু। বাজে কেনো বকছিস। এখন তো চলে আসছি প্লিজ এই সব বলিস না আমার খুব খারাপ লাগে।

— দুই বন্ধুর মান অভিমানের পালা শেষ হতেই সজিয়া বলে এখন আমি পর তাই না মেহু। আমাকে তো কারো মনেই নেই। সজিয়ার কথা শুনে তানু মেহু হেসে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় তারপর ৩ বন্ধু এক সাথে জড়িয়ে ধরে ৩ জনকে। ছেড়ে দিয়ে আবার বাবুকে কোলে নিয়ে খেলা শুরু করে তানু সাথে সজিয়াও বাবি হাত ধরে আছে।। অনেক কিউট হয়েছে বেবিটা। এইদিকে মেহু তানুকে পর্যালোচনা করছে৷ তানুকে কেমন গুলুমুলু লাগছে আর পেট টা একটু উচা। মেহু কোতুহল থেকে বলে উঠলো তানু তুই কি প্রেগন্যান্ট। তানু মিস্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে হ্যাঁ বলে মাথা ঝাকায়।

— মেহু এবার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। মানে কিভাবে কি৷ আর কত মাস যাচ্ছে তোর৷ তানু বলে ৩ মাস৷ আজ চেকাপের জন্য এসেছিলাম। এসেই ভাইয়ার সাথে দেখা। তাই তো তোর সাথে আজ দেখা করতে পারলাম । তারপর তানু সব খুলে বলে মেহুকে। মেহু বলে তুই সিয়র ভাইয়া তোকে চলে যাওয়ার জন্য বলেছে৷ তুই রাত্রির কথা বিশ্বাস করে বাড়ি থেকে চলে আসলি আর বাকিদের কথা ভাবলি না একবারও। জানিস তনয় ভাইয়া কত কষ্ট পেয়েছে৷ পেয়েছি কি এখনো পাচ্ছে আর তোকে পাগলের মতো খুজে বেরাচ্ছে সারা শহর। তানু এবার বেশ অবাক হয়৷ অন্তর ভাইয়া ও সেম কথা বলল । তনয়কি সত্যি কষ্ট পেয়েছে নাকি সব লোক দেখানো৷ তানু আর কিছু ভাবতে পারল না। তাই সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলে বাবুর নাম রেখেছিস। মেহু না বলে৷ তারপর তানুকে বলে একটা নাম রাখতে।

–তানু কিছুক্ষন ভেবে বলে অন্তর আর মেহুর ছেলে অমিত । ভালো না নাম টা 🥰🥰।

— কিছুক্ষন থেকে সজিয়া আর তানু চলে যায়। মেহুর আজ অনেক ভালো লাগছে এতোদিন তানুর খোজ পেয়ে৷ কিন্তু তনয় ভাইয়াকে জানাতে হলো সে বাবা হতে যাচ্ছে এই ভেবে মেহু আরো খুশি হয়ে যায় ।

–হাত ধরে বসে আছে অনিক আর নাবু৷ দুজনের মুখে কোনো কথা নেই৷ আছে শুধু এক রাশ গভীর চিন্তা । চিন্তার কারণ হলো৷ নাবুর বিয়ে ঠিক করেছে তার বাবা৷ নাবুর বাবা যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সেখানে ভালো ছেলে আছে তার চেনা জানা তাই নাবুর বিয়ে সেখানে দিতে চাই । এই কথা শুনার পর থেকে নাবুর চিন্তার শেষ নাই সাথে অনিককে হারানোর ভয়। কারণ তানু যাওয়ার পর চৌধুরী বাড়ির সাথে তাদের সম্পর্ক বেশ খারাপ। কেউ মেনে নেবে না এদের সম্পর্ক। অনিক চিন্তিত মুখ নিয়ে বলল এবার কি করব নাবু আমরা৷ আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না৷ না তোমাকে অন্য কারো হতে দেখতে । নাবু এবার অনিককে জড়িয়ে ধরে বলে আমি ও পারব না অন্য কাউকে বিয়ে করতে কিছু একটা করো প্লিজ। অনিক নাবুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরো আর ভাবতে থাকে কি করবে সে কি করা যায় ।

–পায়েল চৌধুরী আর রাত্রি একসাথে বসে আছে৷ মুখে তাদের গভীর চিন্তার ভাজ। তানু যাওয়ার পর অনেক চেষ্টা করেছে রাত্রি তনয়কে বুঝাতে বিয়ে করার জন্য বলে কিন্তু কোনো কাজে লাগে নি তাদের কোন প্লান৷ তাই তারা বেশ হতাশ হয় এতে৷ রাত্রি বলে খালামনি এই ভাবে আর কতদিন। ৪ মাস হয়ে গেলো তনয়কে কিছুতে রাজি করাতে পারলাম না। হদি কখনো তানু চলে আসে হঠাৎ করে তখন তো সব ধরা পড়ে যাবে আমাদের কি করব কিছু বুঝতে পারছি না আমি বলেই মাথা চেপে ধরে রাত্রি। পায়েল চৌধুরী বলে তানুকে আমি যতদূর জেনেছি৷ সে ফিরে আসার মেয়ে নয়৷ কিন্তু তনয় যে ভাবে খুজে চলেছে যদি পেয়ে যায় তাহলে সত্যি সর্বনাশ হয়ে যাবে৷ রাত্রি ভয়টা আরো বেড়ে যায় পায়েল চৌধুরীর কথাতে।

— তাসু নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে তার ঘরে আর রনিতের সাথে কাটানোর সকল মুহূর্ত মনে মনে ভেবে চলেছে। মাঝে মাঝে আনমনে হেসে উঠছে সে৷ এখন তাসুর একমাত্র সাথী রনিতের সাথে কাটানো স্মৃতি। এর মাঝে ফুপিয়ে কেদে উঠে তাসু৷ এটা নতুন কিছু না তানু যাওয়ার পর রনিতের সাথে ব্রেকাপ হয়ে পর্যন্ত এমন করে তাসু৷ তাসু ভাবতে থাকে সত্যি আর কখনো পাবে না রনিতকে৷ রনিত এতো সহজে ভুলে যেতে পারে তাসুকে৷ একবার কি মনে পড়ে না তার কথা। এই সকল কথা ভাবছে আর কান্না করছে তাসু। আড়াল থেকে জাকিয়া দেখে সেও কেদে দেয়৷ তাসু কারো সাথে কথা বলে না আবার ঘরে কাউকে আসতে দেয় না এখন তাই কেউ আর এখন তার ঘরে আসার সাহস পায়না। জাকিয়া এসে আড়াল থেকে দেখে চলে যায়।

–মেহুর বেবি হয়েছে শুনে তনয় দেখা করতে যায় মেহুর সাথে৷ অন্তরের উপর রেগে আছে তনয়৷ কারণ রাতে যখন মেহুর পেইন হয় তখন তাকে যানাই নাই তাই৷ একা সব দেখেছে অন্তর। যদি কোনো সমস্যা হতো তাহলে কি হতো এই সব ভেবে তনয় অন্তরের উপর রেগে আছে৷ তনয় মেহুর কেবিনের সামনে আসতেই গলা খেকাড়ি দেয়৷ তখন অন্তর আর মেহু পিছে ঘুরে তাকাই। তনয় কেবিনে ঢুকেই বাবুকে আদর করতে থাকে৷ অন্তর এর সাথে কোনো কথা বলে বা। অন্তর বুঝতে পারে তনয় কেনো এমন করছে তাই সে কান ধরে বাচ্চাদের মতো ফেস করে বল সরি ইয়ার৷ আসলে আমি তোকে টেনশন দিতে চায়নি তাই তোকে রাতে কিছু বলি নাই৷ তনয় তাও কথা বলে না অন্তরের সাথে৷ এবার অন্তর উঠে গিয়ে তনয়কে জড়িয়ে ধরে বলে প্লিজ রাগ করে থাকিস না৷ এবার তনয় আর সত্যি রাগ করে থাকতে পারলো না। সেও জড়িয়ে ধরল অন্তরকে। মেহু শুধু দুই বন্ধুর কান্ড দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে৷ এবার মেহুকে বলে কেমন আছো মেহু৷ মেহু হাসি মুখ বলে আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া৷।।

–তোমার ছেলে কিন্তু একদন হিরোদের মতো এখনই। অনেক সুন্দর হয়েছে৷ নাম কি রেখেছো শুনি৷ তখন মেহু বলে তানু রেখে গেছে অমিত৷ তনয় এবার চমকে উঠে মেহুর কথায় তারপর অবাক হয়ে বলে তানু মানে। মেহু মুখে হাসি নিয়ে বল্ব হ্যাঁ তানু এসেছিল আমার ছেলে দেখে গেছে। জানেন ভাইয়া আপনি বাবা হতে চলেছেন। তানু প্রেগন্যান্ট 🙂

— তানু প্রেগন্যান্ট এই কথাটা যেনো তনয়ের কানে বারবার বাজতে থাকে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না তাদের সন্তান ও খুব অল্প সময়ে আসতে চলেছে। ছোট ছোট হাত ধরে সে খেলা করবে তার সন্তান নিয়ে। তাকেও কেউ বাবা বলে ডাকবে। তনয় যেনো অনুভূতি শুন্য হয়ে পড়েছে কিছু সময়ের জন্য। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরল এক ফোটা আনন্দঅশ্রু। তখনই অন্তর বলে কি ভায়া খুব খুশি লাগছে বুঝি বাবা হওয়ার অনুভূতি কেমন হুম। আমার ও এমন আনন্দ হয়েছিল। যেনো সব সুখের অধিকারী আমি। তনয় আবার অন্তরকে জড়িয়ে ধরে বলে আমি আজ খুব খুশি রে ভাই খুব খু্শি। আমি বাবা হবো। কি যে আনন্দ লাগছে আমার তোকে বুঝাতে পারব না আমি।।আজ আজ সবাইকে বলব শুনো সবাই আমি বাবা হব জোরে বলে উঠে তনয়৷ তনয়ের কাজে মেহু আর অন্তর এক সাথে হেসে উঠে । কতদিন পর তনয়কে এত আনন্দ আর হাসি মুখে দেখলো তারা…………….

চলবে..

( ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here