এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ২৩

0
296

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২৩

–রনিত রুগী দেখা শেষ করে বসে আছে তার কেবিনে।নিজেকে যত সম্ভব ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে সে। যাতে তাসুর কথা তার না মনে পড়ে। কিন্তু ভালবাসায় কি ভুলে থাকা এতো সহজ। যতটুক সময় পাই না কেনো সেই ঘুরে ফিরে চলে আসে তাসুর হাসি মাখা মুখখানা। সকল দুস্টুপনা। এউ গুলো ভেবে রনিত মাঝে মাঝেই একা হেসে উঠে। রনিত চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে ভাবছে তাসুর কথা। সে জানে তাসু খুব কষ্ট পাচ্ছে । কিন্তু রনিতের কিছু করার নেই। তার বোনকে সে কম ভালবাসে না। হোক না মামাতো বোন তাও বোন তো। রনিত ভাবতে থাকে তানুকে কি কখনো আর ফিরে পাবে।এতো খোজ করেও তারা তানুর খোজ পাইনি কোথায় আছে মেয়েটা কি করছে৷ যখনই এই সব ভাবে তখনই ওই চৌধুরী বাড়ির উপর রাগ টা বেড়ে যায় তার। আর তখনই তাসুর উপর থেকে তার ভালবাসাটা সরে যায়।।

— অনিক আর নাবু এখনো দু’জন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। তখনই পেছন থেকে অনু আর নুসু বলে আপনাদের প্রেম আলাপ শেষ হলে আমরা বাসায় যেতাম। কখন শেষ হবে একটু বলবেন প্লিজ। ওদের কথা কানে যেতেই নাবু অনিককে ছেড়ে দূরে চলে আসে। খুব লজ্জা লাগছে এখন নাবুর। ছোট বোনের সামনে এমন করে ছিঃ ভাবতেই সে লজ্জাই কুকড়ে উঠছে।

— নাবু বিয়ের কথা শুনা মাত্র খুব চিন্তাই পরে যায়। কি করবে না করবে তার মাথায় কাজ করছিল না। তাই অনিককে ফোন দিয়ে নাবু কান্না শুরু করে দেয়। অনিক তো প্রথমে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিল নাবুর কান্না শুনে। পড়ে যখন কান্নার কারণ জানতে পারে তখন আরো চিন্তা বেড়ে যায় অনিকের। তারপর নাবুকে দেখা করতে বলে অনিক। গ্রামে দেখা করা সম্ভব না মানুষ দেখলে খারাপ বলবে। তাই নাবু অনু নুসু শপিং এর নাম।করে শহরে আসছে অনিকের সাথে দেখা করতে। তারপর তারা একটা পার্কে আসে।

— অনু বলে এই যে না হওয়া দুলাভাই বিয়াই আমার বোন যদি আপনার প্রেমে কষ্ট পাই না তাহলে একদম হাত মুস্টি করে দেখায় অনু। অনিক ভয় পাওয়ার মতো করে বলে আরে আরে না হওয়া শালিকা বিয়ান খেপছে। মাফ করো বইন আমি তোমার আপুরে কোনো কষ্ট পেতেই দেব না ভরসা রাখো। নুসু বলে ভাইয়া কি করবেন এবার৷ বাবা তো কোনো দিন মানবে না এই সম্পর্ক । আপু যদি থাকতো তাহলে এতো সমস্যা হতো না। অনিক বলে৷ জানি না ভাবি কোথায় আছে আর কেমন আছে। সবার একটু মন খারাপের চাপ চলে আসে মুখে। তারপর কথাবার্তা শেষ করে বিদায় নেয় নাবুরা।

— তনয় মেহুকে বলে আমি আর তানুকে দূরে থাকতে দেব না। এই সময় আমাকে তানুর পাশে থাকতে হবে। আমি প্রথম বাবা হওয়ার অনুভূতিটা তানুর থেকে পায় নাই কিন্তু আমার সন্তান যেনো আমার সামনে জন্ম নেয়। একটু একটু করে বেড়ে উঠা আমি দেখতে চাই। তাই আমি সব ঠিক করে নেব এবার৷ অন্তর বলে হ্যাঁ রে অনেক হয়েছে৷। তুই এবার তানুর সাথে দেখা কর আর সব ঠিক করে নে। তানু হঠাৎ কেনো এমন করলো সব এবার জানতে হবে আমাদের। তনয় মুখে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে এবার সব জেনে যাব আর সব ঠিক করে আমি আমার ২ কলিজাকে আমার কাছে নিয়ে আসব।

— মেহু একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অবশেষে সব ঠিক হতে যাচ্ছে। কিন্তু আদো সব ঠিকঠাক হবে তো৷ এই ভেবে একটু হতাশ হয় মেহু৷ এর মধ্যে মেহুর ছেলে কান্না করে উঠে৷ সবাই তার দিকে নজর দেয়। তারপর তনয় অন্তর কে বলে বের হয়ে আসে৷

–জাকিয়া আর মেহেদী একটা কফিশপে বসে আছে। জাকিয়া ঠিক করেছে সে আজ মেহেদীকে মনের কথা বলে দেবে। তাই আজ মেহেদীকে বলে দেখা করার জন্য । কিন্তু এসে পর্যন্ত জাকিয়া কেমন ছটফট করছে। ভীষণ রকম অস্বস্তি সাথে ভয় করছে তার৷ না জানি কেমন ভাবে নেবে মেহেদী বিষয়টা। এই ভেবে সে ঘেমে নেয়ে এক হয়ে যাচ্ছে। মেহেদী শুধু জাকিয়াকে দেখছে বসে বসে৷ সে বুঝতে পারছে না জাকিয়া কেনো এমন করছে। তারপর মেহেদী বলে তুমি ঠিক আছো তো জাকিয়া৷ শরীর খারাপ লাগছে নাকি। এসির মাঝেও এতো ঘামছো কেনো। কি হয়েছে বলো।

— জাকিয়া এবার একটু হাসার চেষ্টা করে বলে ক ক কই কিছু না তো তুতলিয়ে বলে কথা টা। মেহেদী এবার ভ্রু কুচকে তাকায় জাকিয়ার দিকে। জাকিয়া এবার বড় একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বুজে বলে আমি আপনাকে ভালবাসি মেহেদী । সেই প্রথম দেখা থেকে আমি আপনার প্রেমে পড়েছি। আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না সত্যি অনেক ভালবাসি আপনাকে এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে জাকিয়া চোখ বন্ধ করেই থাকে। চোখ খোলার সাহস হচ্ছে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষন মেহেদীর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে ঝট করে চোখ খুলে ফেলে আর দেখে মেহেদী তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। জাকিয়া করুণ নয়নে কিছুক্ষন মেহেদীর দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে ফেলে লজ্জা সাথে ভয় নিয়ে।

— মাথা নিচু করেই বলে জাকিয়া কিছু বলুন দয়া করে চুপ থাকবেন না। মেহেদী কোনো কথা না বলে দাড়িয়ে পরে তারপর সোজা বের হয়ে যায় কফিশপ থেকে৷ জাকিয়া ছলছল চোখে মেহেদীর চলে যাওয়া দেখে। জাকিয়া আগেই যানতো এখন কিছু একটা হবে। তাও সে মনের কথা আর চেপে রাখতে পারছিল না তাই আজ মেহেদীকে স৷ বলবে বলে ঠিক করেছিল।

— পরের দিন তানু আর সজিয়া কোচিং-এ আসে৷ ক্লাসে ঢুকতেই দেখে রিক আজ আগে থেকে এসে হাজির। তারা ক্লাসে যেতেই বলে উঠলো এতো দেরি কেনো তোমাদের আজ৷ তানু মাথা নিচু করে বলে আসলে স্যার রাস্তায় বাকিটা আর বলতে না দিয়ে রিক বল্ব ঠিক আছে বসো। সজিয়া তো সেদিনের পর থেকে রিকের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায়না। যেটা রিক দেখে বেশ মজা পায়। তানু গিয়ে বসে কিন্তু সজিয়া সেই দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে৷ তখন রিক বলে এই যে মিস সজনে পাতা আপনাকে নি ইনভাইট দিয়ে বসানো লাগবে। সজিয়া মাথা উঁচু করে দেখে তানু বস্ব পড়েছে। সজিয়া বোকার মতো তানু আর রিকের দিকে তাকিয়ে ছুটে গিয়ে বসে পড়ে তানুর পাশে। রিক মনে মনে হাসি দেয় একটা।

— ক্লাস শেষে তানু আর সজিয়া বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ায় এসে। সজিয়া এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেনো একটা খুজছে যা তানুর চোখ এড়ায় না। কনুই দিয়ে একটা গুতা দিয়ে বলে কি রে এমন করে কি দেখছিস। কাউকে খুজছিস মনে হয়। সজিয়া চমকে উঠে আমতাআমতা করে বলে কই কিছু না তো৷ আমি আবার কাকে খুজব। কি যে বলিস তকনই একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে ব্রেক করে। তানুর চিনতে বাকি রইলো না এটা কার গাড়ি হতে পারে। কিন্তু তানু বেশ অবাক হয় তাতে৷ তনয়কে সে মোটেও এই ভাবে আশা করেনি। তানু বেশ ঘাবড়ে যায় ঘামতে শুরু করে। দীর্ঘ ৪ মাস পর আবার তনয়কে দেখবে সে। বেশ রকম অস্বস্তি শুরু হয়ে যায় তানুর৷ সে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করতে থাকে। তখনই তনয় গাড়ি থেকে নেমে আসে।

— তনয় এসে তানুকে দুচোখ ভরে দেখতে থাকে কতদিন পর এই মুখটা খুব কাছে থেকে দেখছে সে। তানুও তনয়ের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ তার ছলছল৷ সজিয়া একটা মুচকি হাসি দেয়। কারণ সজিয়া এতোখন তনয়ের অপেক্ষা করছিল। তনয় তার বেবির কথা জানার পর সজিয়াকে ফোন দেয় তারপর সজিয়াকে বেশ ধমকাধমকি শুরু করে৷ তাকে আগে কেনো বলেনি সজিয়া যে তানু প্রেগন্যান্ট। তারপর সে সজিয়াকে তনয় বলে তানুকে সে নিয়ে যেতে চায়। তাই ক্লাস শেষে যেনো তারা রাস্তার সামনে দাঁড়ায়। সজিয়া তনয়ের ধমক খেয়ে আর কিছু বলার সাহস করেনি তনয় যা বলেছে চুপচাপ মেনে নিয়েছে।

— তনয় এবার বলে উঠে তানু পাখি কেমন আছো। এই একটা বাক্য যেনো তানুর কানে ধাক্কা খতে থাকে। আবেশে গড়িয়ে পড়ে চোখ বেয়ে পানি। মিনে একটা শিতল হাওয়া বয়ে যায়। কিন্তু তানুর নরম হলে চলবে না তাই নিজেকে শক্ত করে বলে। জ্বি অনেক ভাল আছি। তাই বলে তানু সজিয়ার হাত ধরে চলে যেতে নেয় তখনই তনয় তানুর আরেক হাত ধরে বলে আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। তুমি আমার সাথে যাবে এখন চলো। তানু বলে আমি কোথাও যাব না। আমার হাত ছাড়ুন আমার রাস্তার মাঝে সিনক্রিয়েট করবেন না। নাহলে কিন্তু আমি মানুষ জরো করব।

— তনয় একটা হাসি দিয়ে বলে ও রিয়েলি। তা করো মানুষ জরো দেখি কেমন করতে পারো। তানু এবার মাথা নিচু করে ফেলে যতই হোক সে তনয়কে ভালবাসে এমনটা করতে পারবে না। তনয় বুঝতে পেরে বলে কি হলো ডাকো। আবার তানুর হাত ধরে তনয় কিন্তু তানু সে নারাজ যেতে তাই তনয় বাধ্য হয়ে একটা রুমাল বের করে তানুর মুখ চেপে ধরে আর তানু সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়……..

চলবে…

( ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here