#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১৭
আমি ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরে আসলাম। বাড়ি আসতেই দেখি ড্রয়িংরুমে রাত আর পায়েল চৌধুরী বসে কথা বলছেন।আমাকে দেখেই চাচি শাশুড়ী বললেন আসলেন মহারাণী রাজ্যের কাজ শেষ করে। আমি সেদিক পাত্তা দিলাম না কারণ এটা রোজকার বিষয় আমার জন্য। আগে খারাপ লাগলেও এখন লাগে না।
তবে এখন বুঝতে পারি কেনো এই মহিলা আমাকে সহ্য করতে পারতেন না। মা এসে বললেন উপরে যা ফ্রেস হয়ে নে।সারাদিন কত ধকল যায় তোর উপর। ফ্রেস হয়ে বিস্রাম কর। আমি মাথা দুলিয়ে চলে আসছিলাম এমন সময় রাত্রি বলে তানু আমার না আজ খুব ভুনা খিচুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।তুমি নাকি খুব ভালো রান্না করো আমাকে খাওয়াবে।
আমি হেসে বললাম কেনো খাওয়াব না অবশ্যই করে খাওয়াবো।তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি। তখন চাচি শাশুড়ী বলে এতো বিনয় করে বলার কি আছে। যা বলবি তাই করতে বাধ্য সে। ভুলে যাচ্ছিস নাকি এই বাড়ির আশ্রিতা এখন মাত্র৷ আর কয়দিন পর তনয় ওকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবে দেখিস।
রাত্রি পায়েল চৌধুরীর কথা শুনে একটা হাসি দেয়।তবে সেটা কাউকে বুঝতে দেয় না।আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। সত্যি আমার আর মাত্র কিছুদিন হয়ত এই বাড়িতে আয়ু আছে তারপর তো চলে যেতে হবে ।
এর মধ্যে তাসু আপু এসে বললেন তোমাকে কে বলেছে ছোটমা তানুর এই বাড়ির আশ্রিতা। এটা তানু ভাবির নিজের বাড়ি।স্বামীর বাড়িতে কেউ কখনো আশ্রিতা হয়না।তাহলে তো তুমি ও এ বাড়ির আশ্রিতা ধরতে গেলে।
তাসু আপুর কথায় পায়েল চৌধুরী রেগে গিয়ে বলে তাসু তুই ওই মেয়ের সাথে আমার তুলনা করছিস। তুই ভুলে যাচ্ছিস তোর ভাইয়া ওকে পছন্দ করে না।আর না ভালবাসে।বিয়ের এক বছর হয়ে গেলো তাও তোর ভাইয়া এখনো ওকে মানতে পারিনি।কারণ তনয় রাত্রিকে ভালবাসে।তাহলে কি করবে ও এখানে থেকে।
এর মধ্যে মা বললেন পায়েল কি বলছিস এই সব। আমরা তানুকে বাড়ির বউ করে নিয়ে আসছি ছেড়ে দেওয়া জন্য না।আর আমার তনয় কখনো অন্যায় করেনি আর এখনো করবে না আমার বিশ্বাস আছে। তাই ওদের টা ওদেরকে ভাবতে দে। তানু তুই উপরে যা
আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। আমি এতক্ষন মাথা নিচু করে সবার কথা শুনছিলাম। আমি দৌড়ে উপরে চলে গেলাম তারপর ফুপিয়ে কেঁদে দিলাম।আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না।
এইদিকে রাত্রি ভাবছে অন্য কথা।তাকে যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। নাহলে হিতে বিপরীত হিয়ে যাবে।সব হাত ছাড়া হয়ে যাবে তার থেকে।
______________________
তাসু আজ ২ দিন ধরে রনিতকে কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রনিত ফোন তুলে না।তাসু বুঝতে পারছে তানুর বিষয়টা জানার পর থেকে এমন করছে রনিত। তাহলে কি রনিত ওদের সম্পর্কটা আর রাখবে না। কি করে থাকবে রনিতকে ছাড়া। এই সব কথা ভাবছিল আর খুব করে কান্না আসছে তাসুর। কেমন পাগল পাগল লাগছে তাসুর নিজেকে। এর মধ্যে তাসুর ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে রনিতের ফোন। তাসু চোখ মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে ফোন তুলে। তারপর রনিতকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাসু বলতে থাকে, তুমি আমার সাথে কথা বলোনি কেনো ২ দিন জানো কত কষ্ট হতেছিল।তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারি না জানো না।তাও কেন এমন করছো আমার সাথে।।তুমি কি আমার সাথে সম্পর্ক আর রাখতে চাওনা রনিত। তাহলে আমি কি নিয়ে বাচব।প্লিজ এমন করো না।ভাইয়ার ভুলের জন্য আমাকে শাস্তি দিও না।আমি তোমাকে খুব ভালবাসি রনিত আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
রনিতের খুব খারাপ লাগে তাসুর কথা শুনে।সত্যি মেয়েটাকে অযথা অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে।তার তো কোনো দোষ নাই তাহলে এমনটা কেমন করে করতে পারলো রনিত এই সব ভেবে রনিতের নিজের উপর খুব রাগ হিচ্ছে তার।এইদিকে তাসু কান্না করে চলেছে।
রনিত তখন বলে তাসু সোনা।চোখ মুছো বলছি।আমি কি তোমাকে ছাড়তে পারি বলো।তুমি তো আমার সব কিছু। আমার জীবন মরণ সব।তোমাকে ছাড়া তো দূর সে কথা আমি কল্পনাও করতে পারি না।সরি তাসু সোনা আমি ২ দিন তোমায় খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না।সত্যি আমি সরি।প্লিজ আর কান্না করো না।আমি ও আমার তাসু সোনাকে ভালবাসি।এই অনেক গুলো ভালবাসি। দেখতে পাচ্ছতো কত গুলো। রনিতের কথা শুনে তাসু ফিক করে হেসে দেয়।রনিত ফোনের ওইপাশ থেকে বুঝতে পারে তাসু হাসছে তাই তার যেনো দেহে প্রাণ ফিরে আসলো।
তাসু বলে তোমার সাথে কোনো কথা নাই খুব খারাপ তুমি। আমাকে শুধু কষ্ট দাও।তুমি পঁচা ডাক্তার।
রনিত বলে কি আর করার বলেন ম্যাডাম।এই পঁচা ডাক্তার দিয়ে আপনার চিকিৎসা করতে হবে কিছু করার নেই 😌।তাসু আর রনিত ২ জনই হেসে দেয় এক সাথে তখন।যাক বাবা এদের অভিমান শেষ হলো।
রাত ৯ টা বাজে আমি বসে পড়ছি।পড়াই মন বসে না তাও জোর করে বই নিয়ে বসে আছি। সামনে পরিক্ষা আমাকে অনেক পড়তে হবে কিন্তু মাথায় যেনো পড়া কিছুতে যাচ্ছে না। এমন সময় দরজা খোলার শব্দ হলো।আমি সামনে তাকিয়ে দেখি তনয় এসেছে চুল গুলো কেমন উষ্কখুষ্ক টাই টা ঢিলে হয়ে আছে।চোখে যেনো রাগ উপচে পড়ছে।
প্রথম তনয় এতো তাড়াতাড়ি আসে না তারপর এমন অবস্থা দেখে আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম কিন্তু কিছু বললাম না।আবার বইয়ের দিকে নজর দিলাম আমি। তানুর এমন গা ছাড়া ভাব দেখে তনয়ের আরো রাগ বেড়ে গেলো।ব্যাগটা জোরের সাথে বিসানায় রেখে তানুর দিকে এগিয়ে গেলো।
ছেলেটা কে ছিল তানু একটু ধমকের সাথে বলল কথাটা তনয়।
আমি বুঝতে পারছি না।তনয় কোন ছেলের কথা বলছে তাই আমি সন্ধিহান দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। আবারও তনয় জোরের সাথে বলে উঠলো কে ছিল ছেলেটা স্পিক আপ কুইকলি ডেমেট।।
আমি এবার কেপে উঠালাম তনয়ের কথায়। তারপর বললাম কোনো ছেলের কথা বলছেন আপনি আমি কিছু বুঝতে পারছি না। তনয়ের রাগ বেড়ে যাওয়ার জন্য এই কথাটা যথেষ্ট ছিল। তানুর হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তারপর। তারপর বলে উঠলো তনয় ওহ এখন বুঝতে পারছো না তাই না।কিন্তু রিক্সা করে ঠিকি ২ জন ঘুরে বেড়াচ্ছিলে।এই জন্য আমার সাথে যেতে চাওনি সকালে তাই না।
তনয়ের কথা শুনে আমার খুব খারাপ লাগলো সাথে ঘৃণা ও আসছে। আমাকে নিয়ে সন্দেহ করছে তনয় আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলছে তানু যেনো মানতে পারছে না। তাও তানু কিছু না বলে চুপ করে আছে। এবার তনয় আরো রেগে যায় তারপর তানুর উড়না টা ফেলে দেয় শরীর থেকে নিচে। তানু এবার ভয় পেয়ে যায় সাথে অনেক অবাক হয় তনয়ের কাজে।
তনয় তানুর গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় সাথে সাথে তানুর শরীর কেপে উঠে।আলাদা এক শিহরণ বয়ে যায় তার মধ্যে। তানু ২ হাত চেপে ধরে জামার ২ পাশের অংশ। তনয় তানুর গলায় মুখ ডুবিয়ে জোরে কামড় বসিয়ে দেয় একটা তানুর ঘাড়ে। তানু ব্যথা সহ্য করতে না পেরে চোখে খিচে ঠোট চেপে সহ্য করার চেষ্টা করতে থাকে।চোখ দিয়ে পড়ছে অশ্রুপাত।
তনয় তানুর গলার মুখ রেখেই বলে উঠে আমাকে ছাড়া অন্য ছেলের পাশে বসার সাহস হয় কি করে তোমার। অন্য ছেলের দিকে নজর দেওয়ার সাহস হয় কি করে তোমার। আমি তনয়ের প্রতিটা কথায় কেপে কেপে উঠি। তারপর তনয় মুখ তুলে এক হাত দিয়ে আমার ২ গাল চেপে ধরে বলে বলো কে ছিল ছেলেটা। আমি কিছু বলতে পারছিলাম না শুধু কান্না করে যাচ্ছি৷ তনয় সেটা দেখে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে দাড়াই আমি ওইখানে দাঁড়িয়ে কান্না করে চলেছি।
তারপর আবার বলে তনয় কে ছিল ছেলেটা তানু প্লিজ বলো। আমি এবার কান্না কমানোর চেষ্টা করতে থাকি আমার ও খুব রাগ হচ্ছে এখন তনয়ের উপর। আমাকে নিয়ে এমন সন্দেহ ছি। আমি চোখ মুছে শক্ত হয়ে বললাম চিনি না আমি তাকে।। বিপদে পরেছিল সাহায্য করেছি শুধু। তারপর সব কথা খুলে বলে তানু তনয়কে।সব শুনের পর তনয়ের এখন খুব খারাপ লাগছে। অযথাই সে তানুর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে এটা ভেব।তারপর তনয় বলে সরি আমি আসলে নিজেকে সামলাতে পারিনি তোমাকে সেই ছেলের সাথে দেখে তাই এমন করে করেছি প্লিজ মাফ করে দাও।
আমি রেগে বলে উঠলাম।আমি যার সাথে যাই করি না কেনো আপনার কি তাতে। অন্য ছেলের সাথে দেখলে আপনার বা কেনো রাগ হবে। কে হই আমি আপনার।। আপনার ভালবাসার মানুষ চলে আসছে তো এখন আর আমাকে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আচ্ছা দায়িত্ব আমি আপনার তাই এতো চিন্তা বুঝি। আমি আপনাকে মুক্তি দিচ্ছি দায়িত্ব থেকে। আমার কোনো দায়িত্ব আর আপনাকে নিতে হবে না। আমি খুব তাড়াতাড়ি চলে যাব আপনাদের জীবন থেকে।।
চলে যাব কথাটা শুনে তনয়ের যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছিল।বুকের মধ্যে তার তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তানু সত্যি চলে যাবে তাকে ছেড়ে। না এমন টা হতে পারে না।তনয়ের তানুকে চাই । চাই মানে চাই। তনয় আর কিছু না বলে বের হয়ে চলে যায়।আর তানু ওইখানে বসে পড়ে কান্না করতে করতে। কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে সব। ২ জনের মাঝে চলছে কালবৈশাখী ঝড় কিন্তু কেউ প্রকাশ করতে পারছে না কিছু। এদের ভালবাসা কি সফল হবে নাকি এখানেই ইতি নেবে…………..
চলবে………
( যারা আমার গল্পের রিভিউ গ্রুপে অ্যাড নাই তারা নিচের লিংকে জয়েন হয়ে নিতে পারেন।
রিচেক হয়নি। ভুকক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন)
https://www.facebook.com/groups/2059310927549364/?ref=share