#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২৪
–তানু জ্ঞ্যান ফিরে নিজেকে একটা ঘরে পাই। চোখ খুলে সারা ঘর বিচরণ করে বোঝার চেষ্টা করে কোথায় আছে সে। তারপর যখন তনয়ের কথা মনে পড়ে তখন চারিদিকে তাকিয়ে তনয়কে খুজতে থাকে। তখনই তনয় ওয়াসরুমের দরজা খুলে বের হয় মাথা মুছতে মুছতে উন্মুক্ত শরীর। তানু তনয়ের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়। তারপর মনে মনে বলতে থাকে এই লোকটা কি লাজ সরমের মাথা একবারে খেয়ে ফেলেছে নাকি। এমন নগ্ন শরীরে সামনে এসেছে। তানুর ভাবনার মাঝেই তনয় বলে তুমি উঠে পড়েছো৷ বেশ ঘুম কাতরে তুমি তানু পাখি। এতো ঘুমায় কেউ। আমি তো তোমাকে হাল্কা ডোজের ওষুধ দিয়েছিলাম কিছক্ষনের জন্য অজ্ঞান রাখতে আর তুমি সারাদিন পার করে দিলে।
–তনয়ের কথাতে তানুর বেশ রাগ লাগে তাই সে চোখ তুলে তনয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু বলতে পারে না। চোখ নামিয়ে বলে আপনি শার্ট পড়ে আসুন প্লিজ। তনয় বুঝতে পেরে আরো একটু মজা নেওয়ার জন্য তানুর কাছে এগিয়ে যায়। তানু সে যেন জমে গেছে তনয়ের এগোনো দেখে৷ বিসানার চাদর খামছে ধরে দুইপাশের। তনয় তানুর কাছে ঝুকে বলে সমস্যা কি এইভাবে থাকলে। আমার তো আর তেমন বিশেষ কিছু দেখা যাচ্ছে।তল তাহলে এভাবে সমস্যা কি তানু পাখি। তাছাড়া আমি তো তোমার বর আমাকে এইভাবে দেখবে না তে পাশের বাসার মজনুকে দেখবে নাকি। তনয়ের এমন লাগাম ছাড়া কথা শুনে তানু লজ্জায় কুকড়ে উঠে আরো। তনয় বুঝতে পারে এভাবে থাকলে তানু আজ আর চোখ উপরে তুলে তাকাবে না তাই সে সোজা হয়ে একটা শার্ট নিয়ে পড়ে নেয়৷ তানু এবার একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
— আমরা কোথায় আছি তানু জিজ্ঞেস করে। আমাদের বাংলোতে আছি। তোমাকে নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পরিস্থিতি নেই আগে কথা বলব তারপর বাড়ি যাব আমরা। এবার বলো কেনো না বলে চলে এসেছিলে বাড়ি থেকে। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানে কি বলো তানু রেগে বলে এক প্রকার কথা গুলো তনয়।
— কেনো চলে আসছি জানেন না৷ এখন অভিনয় করছেন আমার সাথে। আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন আমি চলে আসি আপনার আর রাত্রির মাঝ থেকে তাই আমি চলে আসছি। এতে তো আপনার খুশি হওয়ার কথা ইনফেক্ট আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া দরকার। নিজের স্থান ত্যাগ করে আপনার ভালবাসার মানুষকে দিয়ে আসছি তাই। তানুর কথায় তনয় বেশ অবাক হয়ে বলে আমি চাই মানে। আমি কি তোমাকে বলেছি বাড়ি থেকে চলে আসতে৷ আমি কি তোমাকে বলেছিলাম আমার জীবনে তুমি ছাড়া অন্য কাউকে লাগবে৷
–তানু এবার তাছ্যিলের একটা হাসি দিয়ে বলে আপনি সরাসরি বলেন নাই ঠিকই কিন্তু রাত্রি আপুকে দিয়ে বলিয়েছেন। কষ্ট বেশি তখনই হয়েছিল যে নিজের স্বামী আমাকে চায় না সেটা নিজ মুখে না বলে তার প্রেমিকাকে পাঠিয়েছে। আমার সামনে এসে কথাগুলো বলার সৎ সাহসটাও আমার স্বামীর নাই। তবে আপনি নিজে এসে যদি কথাগুলো আমাকে বলতেন তাহলে হয়ত এতো কষ্ট হতো না আমার। তনয় এবার অবাকের পর অবাক হচ্ছে৷ কোন কথার কথা বলতে তানু তনয় কিছুই বুঝতে পারছে না। তাই অবাক হয়েই বলল কোন কথার কথা বলছো তুমি। আমি কি বলিয়েছি তোমাকে যে নিজে বলতে পারি নাই। খুলে বলো তানু আমি আর নিতে পারছি না। এমনিতে তুমি আমার থেকে এতো দিন দূরে থেকেছো তার উপর আমি যে বাবা হবো তার প্রথম আনন্দ সুখ থেকে আমি এতোদিন বঞ্চিত হয়েছি। এর সব দাম তোমাকে দিতে হবে তানু।
— তানু বলে ওহ তার মানে সব জেনেই গেছেন। এই জন্য বুঝি তানুর খোজ হয়েছে আপনার। বাচ্চার জন্য এত কিছু করা৷ তাই তো ভাবি হঠাৎ আমাকে নিয়ে এতো চিন্তার কারণ। কিন্তু শুনে রাখুন মিস্টার তনয় চৌধুরী এই সন্তান আমার শুধুই আমার। আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আমার সন্তান। তাই আমার সন্তানের ভাগ আমি কাউকে নিতে দেব না। আপনি রাত্রি আপুকে নিয়ে ভালো থাকুন আপনাদের মাঝে আমি কখনো আসবো না তাই আমার চলে আসা তাও কেনো আসছেন আপনি আমার আর আমার সন্তানের মাঝে। তনয় এবার বেশ রেগে যায় তাই চিৎকার করে বলে কি রাত্রি রাত্রি করছো। আমি কি একবারও বলেছি আমার রাত্রিকে চায় আমি বলেছি তোমাকে ছেড়ে রাত্রিকে বিয়ে করতে চায় বলো তানু।
— হ্যাঁ আপনি বলেছেন আপনি রাত্রি আপুকে বিয়ে করতে চান। আপনি রাত্রি আপুকে ভালবাসেন তাই আমাকে মেনে নেওয়া আপনার সম্ভব না। তাই আমি যেনো আপনাদের জীবনে থেকে চলে যায় বলেননি আপনি এই গুলো রাত্রি আপুকে দিয়ে রেকর্ড করে পাঠিয়ে। তনয় তো এবার অবাকের শেষ পর্যায় চলে আসে। কি বলছে তানু সে কিছুই বুঝতে পারছে না। তাই নরম কন্ঠে বলে তানু আমাকে দয়া করে পুরো ডিটেইলস খুলে বলবে। কেনো তুমি এভাবে চলে আসলে বাড়ি ছেড়ে কারো কথা না ভেবে কেনো আসতে হলো তোমায় বলো প্লিজ আমাকে।
— তানু তনয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর সব বলতে শুরু করে সেদিন রাতের কথা। তনয় সব শুনে নিজের হাত মুস্টিবদ্ধ করে ফেলে। তার এতো রাগ হচ্ছে যদি রাত্রিকে এখন সামনে পায় তাহলে তাকে মেরেই ফেলবে। তনয়ের আগেই সন্দেহ হয়েছিল রাত্রি কিছু একটা করেছিল। তাই রাত্রি সাথে তনয় কথাও বলেছিল কিন্তু রাত্রি ততবারই তানুর নামে উল্টো পালটা বুঝিয়ে গেছে তনয়কে। সাথে পায়েল চৌধুরী ও তাই তনয় আর বেশি মাথা ঘামাই নিয়ে তাদের নিয়ে৷ তনয় আর কিছু না বলে তানুর হাত ধরে সোজা বের হয়ে আসে বাংলো থেকে তানু তনয়ের এমন কাজে চমকে উঠে তারপর জিজ্ঞেস করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে কিন্তু তনয় কোনো প্রশ্নের জবাব দেয় না।
— তানুকে গাড়িতে বসিয়ে তনয়ও বসে পড়ে তার জায়গায়। তার গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে তখন তানু তনয়ের হাত চেপে ধরে বলে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় বলুন। কিন্তু তনয়ের সারা শরীর যেনো কাপতে ছিল চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। তনয় কিছু না বলে তানুর দিকে তাকায় তানু তনয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় তাই তনয়ের থেকে হাত সরিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে থাকে নিজের জায়গায়। তনয় গাড়ি স্টার্ট দেয় এবার৷
___________________________________
তনয়ের গাড়ি এসে থামে তাদের বাড়ির সামনে। তারপর তানুর হাত ধরে ভেতরে চলে যায়। তানু ভেতরে এসে অবাক হয়ে যায় কারণ চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িংরুম জুড়ে তানুর পরিবারের সবাই সাথে তনয়ের বাড়ির সবাই। রনিত রহিত তারাও আছে। আর তাসু একপাশে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে। তানুকে দেখে সবাই ভুত দেখা মতো চমকে উঠে। সবার চোখ ভরে উঠে আনন্দে তানুকে দেখে। তানুর মা আর শাশুড়ীমা দুইজনই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে একসাথে। তারা এমন করছে যেনো খুব দামি হারানো কিছু তারা ফিরে পেয়েছে। সবার মুখে আছে হাসি। তানুর মা বলে কোথায় ছিলিস মা তুই।আমাদের কথা একবারও মনে পড়েনি তোর। আমাদের কথা একবারের জন্য ভাবলি না। তুই আমাদের কাছে না গিয়ে কোথায় গিয়েছিলি বল। তানুর শাশুড়ী বলে তুই কেনো এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলি মা। আমরা কোনো দোষ করেছিলাম যার জন্য এতো বড় শাস্তি আমাদের দিলি তুই বল মা কি দোষ করেছিলাম তোর কাছে।
– তানু বলে ছি ছি মা কি বলছো এই সব। তোমরা দোষ করবে কেনো। তুমি তো আমার মা আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভালবাসা দিয়ে গিয়েছো সে মাকে কি করে মিথ্যা দোষ দিই বলো। তাহলে কেনো চলে গেলি আমাদের ছেড়ে বল তখনই তনয় বলে এর উত্তর রাত্রি দিবে। তখনই রাত্রি চমকে উঠে তনয়ের কথায়। তানুকে দেখে এমনি তার হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছিল। পায়েল চৌধুরী প্রথম থেকেই ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। এখন তো আরো খারাপ অবস্থা তাদের। তনয় বলে রাত্রি বলো সবাইকে তানু কেনো বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
— রাত্রি এবার তুতলিয়ে বলে আমি কি করে বলব তানু কেনো চলে গিয়েছে বাড়ি ছেড়ে। সেটা তানু ভালো জানে তাকে বলো। ভয় নিয়ে বলল কথা গুলো রাত্রি। তখনই বলে তানু সত্যি তুমি জানো না আপু আমি কেনো বাড়ি থেকে চলে গিয়েছি। তুমি আর তনয় সেটাই তো চেয়েছিলে আর সেই রেকর্ড এ আমাকে শুনিয়েছিলে তুমি তাহলে এখন কেনো অস্বিকার করছো। তানুর কথায় সবাই চমকে উঠে বলে রেকর্ড মানে। কিসের রেকর্ড কি ছিল তাতে।
— তানু এবার সবাইকে সব খুলে বলে আর সবাই বেশ অবাক হয়। রাত্রি এই ভয়টাই পেতে ছিল এতোখন এবার কি হবে তার। রাত্রি তরতর করে ঘেমেই চলেছে। তনয় এবার রাত্রির কাছে এসে বলে। আমি তোমাকে কোনো রেকর্ড করে পাঠিয়েছি তানুর কাছে বলো। তাহলে তুমি সেই রেকর্ড পেলে কি ভাবে। আমি তো তোমাকে বলেছিলাম সেদিন অফিসে আমি তানুকে ভালবেসে ফেলেছি। আমি তানুর সাথে থাকতে চায়। তুমি নিজের মতো গুছিয়ে নাও। বলো বলি নাই এই গুলো তোমাকে। তাহলে রেকর্ড ছবি কোথায় থেকে আসলো চিৎকার করে বলে কথা গুলো তনয়। রাত্রি এবার বেশ ভয় পেয়ে যায় তাই কেঁদে উঠে বলে আমাকে মাফ করে দাও তনয় আমি মিথ্যা বলেছিলাম তানুকে।
— আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি তানুকে ভালবেসে ফেলেছো। তাই আমি সেদিন তোমায় অফিসে যায় আর তোমার সাথে ওই কথা গুলো বলি আর রেকর্ড করি তোমার সব কথা। তারপর কান্নার অভিনয় করে তোমাকে জড়িয়ে ধরি তখনই আমার ঠিক করে রাখা লোক আড়াল থেকে তোমার আর আমার জড়িয়ে থাকা ছবি তুলে নেয়। আমি সেই ছবি আর তোমার কথা কেটে জোড়া লাগিয়ে একটা রেকর্ড তৈরি করে সেটা তানুকে শুনায়। যেখানে তুমি বলেছো তানুকে আমাদের জীবন থেকে চলে যেতে। এতে আমাকে খালামনি অনেক সাহায্য করেছে। এবার পায়েল চৌধুরী চমকে উঠে রাত্রির কথায় শেষে এসে তাকেও ফাসিয়ে দিল এই মেয়ে। এমনি পায়েল চৌধুরী প্রথম থেকে ভয়ে শেষ এবার তো আরো অবস্থা খারাপ তার। অনিক আর জাকিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। তার মা সহ এই কাজ করেছে তারা ভাবতে পারছে না। খুন রাগ লাগছে তাদের মায়ের উপর সাথে ঘৃণাও আসছে। অনিক বলে মা শেষ পর্যন্ত তুমি ছিঃ তুমি এমন করবে কখনো ভাবিনি।। আর এই মেয়ে আমার সম্পর্কে খালাতো বোন হলে হবে কি কোনদিন আমার পছন্দ ছিল না এই মেয়ে। লোভী বাজে মেয়ে একটা। অনিকের খুব রাগ হচ্ছে তাদের উপর। আজ ওরে জন্য সবাই কষ্ট পেয়েছে। দুজন মানুষ এতো দিন আলাদা থেকে সারাক্ষণ পুড়ে গেছে মনে মনে। নাবু আর তার সম্পর্ক আজ স্বাভাবিক হতো কিন্তু ওদের জন্য আজ এমন পরিস্থিতি সবার।
————————–
তাসু সেই প্রথম থেকে মাথা নিচু করে আছে। তার কিছু বলার নেই এই ব্যাপারে। রনিত প্রথম থেকে তাসুকে লক্ষ্য করছে। তাসু যে অনেক কষ্ট পেয়েছে জানে সে। তার ভুলের জন্য আজ এমন পরিস্থিতি তাসুর। রনিতের খুব খারাপ লাগছে এখন তার কাজের জন্য……..
চলবে…
ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।