এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ৭

0
367

#গল্পঃএক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_৭

আমি খুশিতে কোনো কিছু না ভেবে তনয়কে জড়িয়ে ধরি। খুশি ঠেলাই কি করেছি আমার সেদিক কোনো খেয়াল নেই। এতোটাই খু্শি হয়েছি আমি। আমার কাজে তনয় পুরো অবাক হয়ে গেছে। আমি এমন একটা কাজ করবো হয়তো কল্পনায় করে নাই।

তনয় চুপ করে দাড়িয়ে আছে আর আমি তাকে জড়িয়ে ধরে আছি শক্ত করে তারপর তনয়ও আস্তে আস্তে হাত টা তুলে আমার মাথার উপর রাখে।আর মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। কেনো এই হাসি আসলো সে নিজেও জানে না।
আমি যখন বুঝতে পারলাম খুশি হয়ে আমি কি করে ফেলি তাড়াতাড়ি করে তনয় কে ছেড়ে দূরে ছিটকে গেলাম।তারপর লজ্জাতে আর তাকাতে পারছি না।মনে হচ্ছে এখনি মাটির নিচে চলে যাই। আমার জন্য এটাই ভালো হবে এখন।আমি কোনো রকম সরি বলে সেখান থেকে দৌড়াই চলে আসি।আর তনয় আমার কাজে ফিক করে হেসে দেয়।তারপর সেও নেমে আসে।

এইদিকে তাসু আপু আর রনিত ভাইয়া প্রেম তো সেই আকারে চলছে। কেউ দেখলে বলবেই না যে তাদের প্রেমের বয়স মাত্র ১ মাস।আসলে মন থেকে যদি ভালবাসাটা হয় তাহলে সব কিছু খুব তাড়াতাড়ি আপন হয়ে যাই আর মেনে নিতে খুব সহজ হয়।তাদের ক্ষেত্রে ও তাই হয়েছে।আজ ২ দিন রনিত ভাইয়া কাজের চাপে তাসু আপুর সাথে ভালো করে কথা বলতে পারছে না সময় দিতে পারছে না ।অনেক রুগির দেখা লাগছে তাকে। এই দিকে তাসু আপু তো রেগে বোম মেরে আছে।সে পণ করেছে রনিতের সাথে কথা বলবে না আর না দেখা করবে।

আজ রনিত ভাইয়া ঠিক করেছে হসপিটালে যাবে না।আজ সারা দিন তাসু আপুকে নিয়ে ঘুরবে। ২ দিন সময় দিতে পারে নাই আবার অনেক কাজ গেছে তাই একটু রেস্টের দরকার। রনিত ভাইয়া তাসু আপুকে ফোন দেই কিন্তু আপু ফোন তুলে না। বেশ কিছু বার বাজার পর যখন তাসু আপু ফোন তুলে না রনিত খুব চিন্তাই পরে যাই।

আমি রেডি হচ্ছিলাম।কারণ সকালে নাস্তার সময় তনয় সবাইকে বলে সে আমাকে পড়াতে চাই এতে কারো আপত্তি নেই বরং সবাই অনেক খুশি হয়েছে। জাকিয়া তো খেতে খেতে লাফিয়ে উঠেছিল।সবাই ওর কান্ডের হেসে দিয়েছিল।কিন্তু পায়েল চৌধুরী মানে আমার চাচি শাশুড়ী কেন যেনো আমাকে সহ্য করতে পারে না।এর কারণ আমার কাছে অজানা।।সে এই ক,দিনে আমাকে কারণে অকারণে অনেক কথা শুনিয়েছেন। তবে আমার এতো কিছু মনে হয় নি। কারণ ওই একজন বাদে এ বাড়ির সবাই আমাকে খুব ভালবাসে আর খুব আপন করে নিয়েছে।

তখন দেখি রনিত ভাইয়া ফোন দিয়েছে। আসলে কিছু দিন আগে যখন তাসু আপু রনিত ভাইয়ার সাথে ফোনে কথা বলে তখন আমি সব শুনে ফেলেছিলাম।আর তাসু আপুকে চেপে ধরাতে সে সব বলে দেয় আমাকে।বাধ্য হয় বলতে একপ্রকার 😇। তারপর রনিত ভাইয়াকে ধরেছিলাম মুখ চাপা ব্যাচ সেও বেচারা না পেরে আমাকে সব বলে দেই 🙃। আমি খুব খুশি এতে।।ওরা অবশ্য ভয়ে ছিল আমি যদি বলে দি বাড়ির সবাইকে এই নিয়ে।। ফোনের দিকে তাকাই দেখি রনিত ভাইয়ার নাম্বার আমি সালাম দিয়ে হ্যালো বলি ভাইয়া সাথে সাথে বলে তানু একটু তাসুকে বলতো আমার ফোন টা ধরতে কখন থেকে ফোন দিয়ে চলেছি সে ফোন তুলছে না।।আমি আচ্ছা বলে কেটে দিয়ে তাসু আপুর ঘরে গেলাম।

তাসু আপু তার ঘরের বারান্দায় দোলনায় বসে কানে হেডফোন গুজে রিলাক্সে গান শুনে চলেছে৷ আর আমার ভাই টা টেনশন করে মরছে অযথা। আমাকে দেখে তাসু আপু কান থেকে হেডফোন নামিয়ে বললেন কিছু বলবে ভাবি। আমি বললাম রনিত ভাইয়া ফোন দিচ্ছে ধরছো না কেনো। তাসু আপু মুখটা ছোট করে বলে তোমার ভাইয়ের সাথে কথা বলতে চাই না আমি।আমি তো অবাক তার কথাই কি হলো এর আবার। আমি বললাম মানে।।আপু বলে সে আমাকে একটু ভালবাসে না।তার কাজ এ তার কাছে সব।আমার সাথে ভালো করে কথাই বলে না জানো তোমার ভাই।থাকুক সে তার কাজ নিয়ে আমি প্রেম করব না হু। আমি তার কথাই ফিক করে হেসে দিলাম।মেয়ের যে অভিমান হয়েছে বেশ বুঝতে পারছি।

তাই আমি আবার বললাম আপু জানো একটা মেয়ে নাকি ভাইকে প্রপোজ করেছে ২ দিন আগে।দেখতে অনেক সুন্দর ভাইয়া এমনটাই বলেছিল আমাকে।।এখন তুমি যদি কথা না বলো। তাহলে ভাইয়া হইত ওই মেয়েকে হ্যাঁ বলে দিতে পারে পুরুষ মানুষের মন বুঝো তো।।তাসু আপু আমার কথা শুনে কাদো কাদো মুখ করে বলে দেখেছো ভাবি আগেই বলেছিলাম তোমার ভাই আমাকে একটু ও ভালবাসে না।করাচ্ছি প্রেম।আমাকে রেখে প্রেম করা এতো সোজা না।আমি ও তাসনিম হু।লেডি ডন 😎
আমারে চিনে না তোমার ভাই তাই বলে রনিতা ভাইয়া কে সে ফোন দিল। আমি আর কি আমার কাজ করে চলে আসলাম এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে। এবার এরা বুঝে নিক এদের টা।

আর একদিকে থাকলো নাবু আর অনিক। অনিক ভাইয়া তো নাবুর প্রেমে সব সময় বিভোর। শুধু প্রকাশ করার অপেক্ষা। তবে অনিক ভাইয়া সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করে আছে।।নাবুর দিকে থেকে যদিও কোনো ফিলিং নেই এখনো।তবে তার ভালো লাগে অনিককে এইটুকু যা ওর তরফ থেকে।আর অনু,নুসু।নাহিদ,তন্নি। এরা আছে পড়াশোনা নিয়ে যে জার মতো ব্যস্ত।এতো দিন ছিল এসাইনমেন্ট এর ঝামেলা আর এখন তো সামনে স্কুল কলেজ খুলে দিবে বলেছে। তাই পরিক্ষার প্যারা। এই নিয়ে আছে ওরা বেশ ব্যস্তময়।

আমি আর তনয় কোচিং সেন্টারে গিয়ে ভর্তি সব কাজ শেষ করে সব স্যার ম্যামদের সাথে পরিচিত হয়ে এখন বাড়ি ফিরছি।কাল থেকে ক্লাস আমার। তাই প্রয়োজনীয় সব জিনিস পত্র তনয় আমাকে নিয়ে দিয়েছে মার্কেট নিয়ে গিয়ে। আর থাকলো টিউশনির ব্যাপার যেহেতু সাইন্স নিয়ে পড়ব তাই টিউশন তো পড়াই লাগবে। প্রথমে তনয় টিউশন মাস্টার রাখতে চেয়েছিল তারপর কি মনে করে সে নিজেই নাকি আমাকে পড়াবে। সে বলে দিয়েছে আমার যা সমস্যা আমি জেনো সেই গুলো মার্ক করে রাখি তিনি রাতে এসে আমাকে বুঝিয়ে দিবেন সাথে পড়াবেন।আমার বেশ ভালো লাগছে তার কাছে পড়ব ভেবে।বাইরে তো আর যেতে হচ্ছে না।

বাড়ি ফেরার পথে রাস্তাই দেখি ফুসকা আলা দাঁড়িয়ে।ফুসকা দেখে আমার তো জিভে জল চলে আসছে 😋। আমার ফুসকা খুব পছন্দের একটা খাবার ( আমার আবার এতোটাও ভালো লাগে না।আমি মিস্টি পাগলী 🥰) আমি একবার ফুসকা আর একবার তনয়ের দিকে তাকাচ্ছি বলব কি বলব না তাই ভেবে চলেছি আর নখ কামড়াইছি।।তখনি তনয় বলে উঠলো এই ভাবে নখ না খেয়ে ফুসকা খাবে বললেই তো হয়।আমি তাড়াতাড়ি করে হাত নামিয়ে ফেলি মুখ থেকে আর ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। তনয় গাড়ি থেকে নেমে ফুসকা আলার কাছে গিয়ে অনেক গুলো ফুসকা নিয়ে আসলো। আমি তো খুব খুশি কত দিন পর খাব ফুসকা।।তনয় হয়তো বুঝতে পেরেছে এই ভাগ আমি কাউকে দিব না।তাই সে আগেই বলে দিল এটা সবার জন্য আই মিন জাকিয়া আর তাসুর জন্য ও। একা এতো খেলে পেট ব্যথা করবে।। খবরদার একা খাবে না বলে দিচ্ছি।আমি আর কি বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালাম………….

চলবে……..

( পর্বটা অনেক ছোট হয়েছে বুঝতে পারছি।তার জন্য সরি।পরবর্তী পর্ব বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here