এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ৮

0
306

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_৮

সকালে কারো গরম নিঃস্বাস আমার চোখ মুখে আছড়ে পরাতে ঘুম ভেঙে গেলো। মানুষটা কে বুঝতে আমার বাকি রইলো না।কারণ বেশ কিছু দিন আমি সকালে উঠে নিজেকে কারো বুকে আবদ্ধ পাই সেটা আর কেউ না তনয়ের। জানি না কিভাবে চলে আসি তবে একদিক থেকে বেচে যাই আমি। কারণ তনয়ের আগে আমার ঘুম ভেঙে যাই আর আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আসি। যদি আমার আগে তনয় ঘুম থেকে উঠে পড়তো তাহলে কেমন হতো পরিস্থিতি টা। ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে।এমন একটা অস্বস্তি পরিবেশ হতো না প্রকাশ করার মতো না।আসলে দোষটা আমার। কারণ আমার ঘুমের মধ্যে ছুটে বেড়ানো স্বভাব আছে তাই 😒।

কাল ফুসকা নিয়ে বাড়ি এসে আমি তাসু আপু জাকিয়া সবাই এক সাথে বেশ মজা করে খেয়েছি অনেক আনন্দ করেছি আমরা।অনিক ও ভাগ বসিয়ে ছিল অবশ্য। বেশ আনন্দে চলে গেছে গতকালের দিন টা।প্রথম দিন দেখে তনয় আর পড়াইনি। বলেছে আগামীকাল থেকে শুরু করবে তাই যত আড্ডা দেওয়ার যেনো দিয়ে নি আমরা কাল থেকে আর সুযোগ থাকবে না রাতে আড্ডা দেওয়ার। তাই আমরা সবাই মিলে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে যাই ঘুমাতে।

আমি তনয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কত নিস্পাপ লাগছে দেখতে তাকে।একদম বাচ্চাদের মতো করে আমাকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এই মানুষটা কে কেউ দেখলে বলবে না যে ভালবাসা না পাওয়ার কষ্ট বয়ে বেরাচ্ছে।সকলের সাথে অনেক হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি তো জানি মানুষটা কত কষ্ট পেয়েছে ভালবাসা হারিয়ে। এই সব নানা ভাবনাতে মগ্ন ছিলাম আমি এমন সময় দেখি তনয় চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে। আমার তো হয়ে গেছে। এমন ভাবে ধরা পড়ে যাব বুঝতে পারিনি। নিজেকে নিজে বকা দিচ্ছি মনে মনে। কারণ আমি যদি আগে সরে আসতাম তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না।এখন কি হবে।নিশ্চয় বকা দিবে আমাকে।

আমি তাড়াতাড়ি করে তনয়ের থেকে ছিটকে দূরে আসলাম তারপর মাথা নিচু করে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলাম তখনি তনয় বললেন নামাজের সময় চলে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি অজু করে নামাজ পড়ে নাও আমি মসজিদে যাচ্ছি।তাই বলে সে পাঞ্জাবি পড়ে বের হয়ে গেলো আমি তো হা করে দেখছি সেদিক পাণে।এটা কি হলো আমি তো ভেবেছিলাম অনেক বকা শুনতে হবে আমাকে।আমি আর কিছু না ভেবে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।

আসলে তনয় আজ না বিয়ের পরের রাত থেকে এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।তবে তানু কিছু জানতো না তাই। বিয়ের রাতে তানু খুব সাবধানে থাকলেও পরের রাত থেকে সে ঘুমে বিভোর থাকতো আর ঘুমের মধ্যে যে সে সারা দেশ যুদ্ধ করে বেড়াই সেটা একমাত্র তনয়ে জানে।প্রথম যখন তানু তনয়কে ঘুমের মধ্যে জড়াই ধরে সেদিন তনয় খুব অবাক সাথে বিরক্ত হয়েছিল।বারবার তানুকে সরিয়ে ঠিক ভাবে শুয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তানু তো তানু যত বার তনয় দূরে দিচ্ছে সে ততই এসে জড়িয়ে ধরছে।এক সময় তনয় বুঝে যাই এই ভাবে কাজ হবে না তাই আর বাধা দেয়নি৷ তবে তনয়ের প্রথম বিরক্ত লাগলেও এখন কেনো জানি তার খুব ভালো লাগে। বরং তানু যতখন তাকে জড়িয়ে ধরে না ঘুমাই তার ঘুম আসে না যেনো। কেনো এমন অনুভূতি তার যানা নেই কিন্তু দিন শেষে রাতে তার বুকে তানুকে চাই এটা সে বুঝে গেছে।

_____________________

নাস্তা করে আমি তনয়ের সাথে বের হয়ে গেলাম কোচিং এর উদ্দেশ্য। আজ থেকে আমার ক্লাস শুরু হবে। খুব এক্সাইটেড সাথে একটু ভয় কাজ করছে। পারবো তো তনয়ের মুখ রাখতে সবার আশা অনুযায়ী ফল দিতে।প্রায় ৩ বছর পড়াশোনা থেকে দূরে আছি তাই একটু ভয় কাজ করছে।তখনি তনয় বললেন এতো চিন্তার কিছু নেই।তুমি পারবে আমার বিশ্বাস। কারণ তুমি অনেক ভালো একজন স্টুডেন্ট। আর আমি তো আছি বুঝাই দিব।সমস্যা নেই।
তনয়ের মুখ থেকে আমি তো আছি এই কথা টা শুনে মনে একটা শিহরণ বয়ে গেলো সাথে একরাশ ভালো লাগা এসে ভর করলো।

তনয় আমাকে কোচিং এ নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেছে আর বলে গেছে দুপুরে গাড়ি পাঠিয়ে দিবে আমি যেনো একা না যাই।
আমি ক্লাসরুমে এসে একটা বেঞ্চে বসলাম।সবাই সবার মতো ব্যস্ত। কেউ পড়াতে ব্যস্ত তো কেউ গল্প আড্ডায়।আমি তো নতুন তাই কাউকে চিনি না।একা একা বসে বোর হচ্ছি এমন সময় একটা মেয়ে এসে আমার পাশে ধপাস করে বসে পড়লো। আমি তো চমকে উঠে বুকে ফু দিতে লাগলাম।তখনি মেয়ে টা বলে উঠলো সরি সরি অনেক জোরেই হয়ে গেছে।ভয় পেয়ে গেছো নিশ্চয়। আমি কিছু না বলে শুধু তাকিয়ে আছি। তখনি আবার মেয়েটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো হাই আমি সজিয়া ইসলাম। ক্লাসে নতুন! তুমি?
আমিও হাল্কা হেসে হাত বাড়িতে দিয়ে বললাম আমি তানজিলা রহমান। আমি ও নতুন।তখন সজিয়া মেয়েটা বলে উঠলো ওয়াও তাহলে তো ভালই হলো আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড। তোমার কোনো সমস্যা নেই তো আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে।আমি মাথা দুলিয়ে না বললাম।তারপর আমরা একে অপরের সাথে কথা বলতে লাগলাম।অনেক ভালো আর মিশুক টাইপের মেয়েটা আমার খুব ভালো লেগেছে কারণ আমিও যে কথা বলতে খুব ভালবাসি।

একদিনে আমাদের বন্ধুত্বটা অনেক গাঢ় হয়ে গেছে।আমরা তুমি না একবারে তুই এ চলে আসছি। তারপর ক্লাস শেষ করে আমরা বাইরে এসে দাড়ালাম। কিছুখন পর গাড়ি চলে আসাতে আমি সজিয়াকে বাই বলে চলে আসলাম আর সজিয়া ও চলে গেলো নিজের গন্তব্যে।

এবার সজিয়ার পরিচয়টা দেওয়া যাক।সজিয়া বাবা মা এর একটা মাত্র মেয়ে আর একটা ভাই ও আছে।তবে তাদের পরিবার মধ্যবিত্ত। কিছু সমস্যার জন্য সে ২ বছর পড়াশোনা বাদ দিয়েছিল।কিন্তু এখন আবার নতুন করে শুরু করতে চাই। তাই আবার তার ভর্তি হওয়া আরকি।তবে সে আমার থেকে ১ বছর জুনিয়র আছে।।কিন্তু এখন তো সেম ক্লাসে হয়ে গেলাম।

বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।এমন সময় তাসু আপু এসে বলে আসবো ভাবি।আমি বললাম কেনো নয় তাই বলে হেসে দিলাম সাথে তাসু আপু ও হেসে দিল।জাকিয়া এই সময় বাড়ি নেই।সামনে তার ইন্টার এক্সাম তাই অনেক ব্যস্ত সে এখন।তাসু আপু এসে বিসানায় বসে পড়লেন।তারপর বললো ভাবি তুমি খুব পঁচা। আমাকে কাল মিথ্যা বললে কেনো যে রনিতকে একটা মেয়ে প্রপোজ করছে।আমার কত কষ্ট হয়েছিল জানো কথাটা শুনে।আমি হেসে বললাম যদি এমনটা না বলতাম তাহলে আজ তোমার মাঝে কি মিল হতো বলো।তুমি তো মিছে মিছে অভিমান করে বসে ছিলে আমার ভাইটার উপর। কত ব্যস্ত থাকে বলো। একজন ডাক্তারের কত দায়িত্ব তোমাকে তো বুঝতে হবে।তার উপর এখন করোনার সময় চলছে আরো বেশি কাজ।
আমার কথা শুনে তাসু আপু বলে উঠলো ঠিকি বলেছো তুমি ভাবি আমার রাগ করাটা ঠিক হয়নি। আসলে কি বলো তো ঠিক ভাবে কথা হচ্ছিল না।তোমার ভাই আমাকে একদম পাত্তাই দিচ্ছিল না।তাই একটু আর কি।

আমি বললাম বাদ দাও।কাল কি হলো তাই বলো। আমার কথা শুনে তাসু আপু হেসে বলে। কাল তো ভাইয়ের তো জান কবজ করে নিতাম।আমি লেডি ডন হু💪।আমি তার কথাই ফিক করে হেসে দিই। তারপর আপু বলতে শুরু করে। কাল আমরা একটা পার্কে গিয়েছিলাম । তারপর তোমার ভাইয়ের ক্লাস শুরু করি আমি। কোনো মেয়ে প্রপোজ করেছে তাই শুনার জন্য।

কাল যখন ক্লাস রনিত আর তাসু দেখা করে তখন প্রথমে তাসু গিয়ে রনিতের কলার চেপে ধরে বলে কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছিস তুই হ্যাঁ। তার জন্য আমাকে সময় দিচ্ছিস না।আবার বলিস সুন্দর দেখতে। তোর সাহস হই কি করে অন্য মেয়েদের দিকে তাকাতে তোর চোখ তো আমি তুলেই নিব আজ। এইদিকে রনিত তো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে তাসুর কথাই। কি বলছে এই সব কোনো মেয়ে। কার কথা বলছে রনিত এতো বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কে বুঝে কার কথা। এক সময় তাসু আপু রনিত ভাইয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে কেদে ওঠে।রনিত তো অবাক হয়ে যাই তাসু যে এমন একটা কাজ করবে সে ভাবতে পারিনি।তারপর তাসু কে সে বুঝানোর চেষ্টা করতে থাকে। তাকে ছাড়া যে অন্য কাউকে ভালবাসে না অনেক কষ্টে বুঝাতে সফল হয়।তারপর যখন জিজ্ঞেস করে কার থেকে শুনেছে তখন তাসু আপু তানুর বলা কথা গুলো বলে সব।রনিত ভাইয়া শুনে সে কি হাসি। তাসু আপু এই টুক কথাতে এমন করবে ও ভাবতে পারছে না।আসলে অনেক ভালবাসে তাসু রনিতকে আর রনিত ও তাই।। তবে রনিত এটা বেশ বুঝে গেছে এই পাগলীকে সামলে রাখতে তাকে বেশ কাঠখড় পোহাতে হবে, 🤦‍♀️

আমি তাসু আপুর কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। তখনি আপু বলে হাসবে না একদম।তোমার জন্য এমন হয়েছে হু 😤। তারপর আমরা কিছুখন গল্প করে তাসু আপু তার রুমে চলে যাই আর আমি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকি দুপুরের….

চলবে…….

রিচেক হয়নি ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here