#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃআলো ইসলাম
#পর্ব_১২
আজ মেহুর গায়ে হলুদ। সবাই অনেক সুন্দর করে সেজেছে। আমি একটা কাচা হলুদ শাড়ি পড়েছি।অনেক সুন্দর শাড়ীটা। তনয় নিজে পছন্দ করে নিয়েছে।সেদিন যে ব্যাগ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। বাড়ি এসে দেখি ২ টা শাড়ি তার মধ্যে। একটা আমার পছন্দ করা কালো শাড়ি টা আর একটা হোক হলুদের জন্য। তার সাথে ম্যাচিং করা সকল জিনিসপত্র। খুব ভালো লেগেছিল তখন জিনিস গুলো দেখে।আরো ভালো লেগেছিল আমার পছন্দ অপছন্দ গুলোর প্রতি তার বিশেষ লক্ষ্য দেখে।
জাকিয়া,তাসু আপু,নাবু,নুসু,অনু,সজিয়া,সবাই এক রকম শাড়ি পরেছে আর আমার শাড়িটা তাদের থেকে আলাদা। এই নিয়ে অনেক কথা ও শুনতে হয়েছে আমাকে বিচ্চুগুলোর থেকে 😒।
আমরা বসে আছি মেহুকে নিয়ে হলুদের স্টেজে।জাকিয়া,তাসু আপু,আর সজিয়ার সাথে অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে মেহুর।তাই তারা তাকে অনেক রকম কথা বলে।লজ্জা দিচ্ছে। আর বেচারা মেহু লইজ্জাই লাল হয়ে উঠছে। আমরা অনেক প্লান করেছি মেহুর হলুদে কি কি করব তাই নিয়ে। অবশ্য সব আইডিয়া আমার। আমার মাথায় তো সব সময় দুস্টু বুদ্ধি ঘুরপাক খেতে থাকে 😁।
এর মধ্যে রনিত আর রহিত ভাইয়া এসে হাজির।ভাইয়া এসেই আমাকে বলে কি রে বুড়ি কি অবস্থা। এইতো ভালো ভাইয়া বললাম আমি। তারপর রনিত ভাইয়া তাসু আপুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলেন।আপু তো লজ্জায় একদন লাল নীল বেগুনি হয়ে যাচ্ছেন।সাথে মাথা নিচু করে হেসে দিলেন।তারপর রনিত ভাইয়া ইশারা করে সাইডে যেতে বললেন তাসু আপুকে। তাসু আপু মাথা দুলিয়ে না না করছে ভাইয়া তাও ইশারা করে আসতে বলছে যা আমার চোখ এড়াই নাই। মন টা ভালো হয়ে যাই এই ২ কোপাত-কোপাতির প্রেম দেখলে। এইতো সেদিনের পরিচয় তারপর প্রেম তাও কত ভালবাসা তাদের মধ্যে। সাথে সাথে মন টা খারাপ ও হয়ে গেলো আমার আর তনয়ের কথা ভেবে।আমাদের সম্পর্ক টা যদি স্বাভাবিক হতো।তাহলে আমাদের মধ্যেও এমন ভালবাসা থাকতো।কিন্তু উনি তো আর একজনকে ভালবাসে। তার জন্য মনে সকল জায়গা।ভেবেই চোখ ভরে আসলো।
নাবু আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল আপু কি ভাবছো ডাকছি কখন থেকে তোমায়।হলুদ অনষ্ঠান শুরু হবে একটু পর চলো সব রেডি করি আমরা।আমি ও একটা বাকা হাসি দিয়ে চলে গেলাম। এইদিকে তাসু আপু আর রনিত ভাইয়ার চলছে প্রেম আলাপ।তাসু আপু তখনি উঠে চলে আসে কিন্তু আমি দেখতে পাইনি কারণ আমি তো ছিলাম ভাবনার জগতে।
রনিত তাসু কে একটা গাছের সাথে দাড় করিয়ে তারপর ২ পাশে হাত দিয়ে তাসুকে আবদ্ধ করে নেই। তাসু আপুর আজ কেনো জানি খুব লজ্জা লাগছে রনিতের সামনে। অন্য দিন হলে বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলে রনিতের কিন্তু আজ চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না লজ্জাতে।রনিত ভাইয়া বলে তাকাও আমার দিকে তাসু আপু মাথা দুলিয়ে না না করে যাচ্ছে।তখনি রনিত ভাইয়া আপুর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে। যানো তাসু সোনা।তোমাকে এই ভাবে না একদম লাল বেদেনার মতো লাগছে। মনে হচ্ছে কপ করে খেয়ে ফেলি। সাথে সাথে তাসু আপু মাথা তুলে তাকাই ভাইয়ার দিকে।তাই দেখে ভাইয়া হো হো করে হেসে উঠে।সাথে তাসু আপু ও।
এইদিকে আর একজনের মনে প্রেমের লাড্ডু ফুটে উঠেছে।রহিত সজিয়াকে দেখেই ক্রাস খাই।খুব ভালো লেগে যায় সজিয়াকে তার প্রেমের ঘন্টা বাজতে শুরু করে মনে। সজিয়া বেচারাও এক অবস্থা। ২ জনের চোখাচোখি হতে চোখ সরিয়ে নেয়।এর মাঝেই আমি এক বালতি রঙের গুলা এনে রহিত ভাইয়ার মাথা ঢেলে দিলাম। ভাইয়া সাথে সাথে চমকে উঠে। কিছুখন চুপ থেকে বুঝার চেষ্টা করছে আসলে কি হলো তার সাথে 🙃। এই দিকে আমি সহ সবাই তার কাজে হেসে দিল।তারপর ভাইয়া ছুটলো আমার পিছে আমি তো ভো দৌড়।
আমি ছুটছি পিছে ভাইয়া এমন সময় কার সাথে আচমকা ধাক্কা খেয়ে গেলাম পড়ে। পড়েছি তবে এক নয় সাথে আর একজন ও পড়েছে।আমি উপরে আর সে ব্যক্তি নিচে পড়ে। আমি পড়ার সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলি।আর মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে থাকি আজ আমার কোমর শেষ এই ভেবে।কিন্তু অনেক্ষন এই ভাবে থাকার পর কোনো ব্যথা অনুভব না পেয়ে সাথে সাথে চোখ খুলে যা দেখি তাতে আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। আমার সামনে না আমার নিচে সয়ং তনয় পড়ে আছে।আমি চোখ বুজে আবার চোখ খুলে বুঝার চেষ্টা করি ভুল না ঠিক।কিন্তু না তনয় আমাএ নিচে আর আমি তার উপরে পড়ে আছি।।তখনি তনয় বলে উঠলো এই ভাবে কি সারা রাত পার করার ইচ্ছে আছে। আমার কোমর টা এমনিতে শেষ করে দিয়েছো তুমি তার উপর এই ভাবে পড়ে আছো।আমি অসহায় একটা ফেস করে তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম।তারপর বলতে লাগলাম।সরি সরি আসলে আমি দেখতে পাইনি সরি।রাগ করবেন না। তনয় বলল যে ভাবে ছুটছিলে দেখতে পাবে কি করে।তা ছুটে যাচ্ছিলে কোথাই শুনি।তখনি আমাক্র মনে পড়ে।যাই রহিত ভাইয়ার কথা।আমি পিছে ঘুরে দেখি সে রঙ নিয়ে এইদিকে আসছে আমি তাড়াতাড়ি করে তনয়ের পিছে গিয়ে লুকাই তারপর যা হওয়ার তাই হয়ে গেলো।সব রঙ তনয়ের গায়ে।😐
তনয় তো পুরোই বোকাবনে গেছে মোটেও সে এই সবের জন্য প্রস্তুত ছিল না।আর আমি কি করব মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি কারণ সব দোষ তো আমার। নিশ্চিত বকা খাব এখন আমি সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি মনে মনে। রহিত ভাইয়া বলল সরি সরি ভাইয়া বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে দিতে চাইনি ওই শাকচুন্নি বউ আপনার আমার দশা করেছে তাই তাকেই আমি পুরো কথা ভাইয়া শেষ করার আগে তনয় তাকে থামিয়ে দেয়। রহিত ভাইয়া ও ভয় অএয়ে যাই এই কাজে তারপর রঙের বালতি টা তনয় চায় তার থেকে আমি তো অবাক হয়ে ভাবছি কি করবে তখনি আমার উপর রঙের বর্ষণ হয়ে যাই আর আমি হা করে দেখছি সব টা।আমাকে দেখে তনয় সহ বাকি সবাই হেসে দেয় আর আমি গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে সবার কান্ড দেখছি।তারপর আমিও হেসে দিই।এরপর শুরু হয় আবার রং খেলা সাথে হলুদ অনুষ্ঠান। ওই বাড়ি থেকে তনয়, অনিক ভাইয়া আর ২ জন মহিলা এসেছে অন্তর ভাইয়ার আত্বিয় হবে হয়ত।
এইদিকে অনিক এসেই নাবুকে জ্বালানো শুরু করে দিয়েছে। নাবু তো পড়েছে মহাঝামেলায়।কিছু বলতে পারছেও না মানুষের মাঝে। তখনি নুসুকে ইশারা করে হলুদ দিয়ে মিশানো রঙের বালতি নিয়ে আসতে বলে। আর বেচারা অনিক সেতো নাবুকে দেখেই চলেছে তার চোখ যেনো সরছে না আসলে অনেক সুন্দর লাগছে নাবুকে আজ হলুদ শাড়িতে।তখনি অনু আর নুসু মিলে অনিক ভাইয়াকে রঙ দিয়ে গোসল করিয়ে দেই।তারপর হো হো করে হেসে উঠে তারা।নাবু তো হাসতে হাসতে শেষ। তখন অনিক বলে সব ক’টা কে দেখে নিব আর নাবুকে ইশারা করে বলে।এই যে ম্যাডাম আপনাকে তো স্পেশাল পানিসমেন্ট দেব আমি দেখেন।নাবু ও একটা ভেংচি কেটে চলে যায়।
সবাই প্রায় রঙ দিয়ে ভুত সেজে কিন্তু আমার চোখ খুজে চলেছে সেই ২ কইতরকে।সেই যে গেছে কোনো খোজ নেই।আমি একটা বালতি নিয়ে তাদের খোজার জন্য এগিয়ে গেলাম।বেশ কিছুখন খোজার পর তাদের একটা গাছের গোড়ায় দেখা মিলল।আমি ও পেছন থেকে গিয়ে দিলাম।পুরো বালতি রঙ ঢেলে তাদের গায়ে তারপর এক দৌড় সেখান থেকে।রনিত আর তাসু আপু ২ জনই অবাক।তারা মোটেও এমন টা আশা করেছিল না।তারপর রনিত ভাইয়া পিছে ঘুরে দেখে আমি দৌড়াই চলে যাচ্ছি তাদের বুঝতে আর বাকি রইলো না কাজ টা কার।
খুব মজা করে আমরা হলুদ অনুষ্ঠান শেষ করলাম তনয়রা এখানেই ফ্রেস হয়ে গেছেন। তনয় আমার সাথে ম্যাচিং করে একটা পাঞ্জাবি পড়েছিলেন।কিন্তু বেচারা বেশিখন সেটা রাখতে পারল না।
আমরা সবাই ফ্রেস হয়ে মেহুর বাড়ি শুয়ে পড়লাম কারণ মেহু আমাদের বাড়ি যেতে দিবে না আগেই বলে দিয়েছে। সবাই যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো কিন্তু ঘুম নেই ২ মানব মানবির চোখে।এখানে এসে পর্যন্ত তানু ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারে না কারণ এখানে তো তনয়ের বুক নেই যে মাথা রেখে ঘুমাবে।তানু প্রতিদিনই বুঝতে পারতো সে তনয়ের বুকের মাঝে ঘুমাচ্ছে।কিন্তু তনয়কে বুঝতে দিত না সে।
আর একদিকে তনয় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে তবে তার ও চোখে ঘুম নেই।তানু যাওয়ার পর থেকে তার ঠিক ভাবে ঘুম হয়না।তনয় মনে মনে বলতে থাকে কেনো এমন হয় তার। তাহলে কি সে তানুকে ভালবেসে ফেলেছে। তারপর আবার নিজে নিজে বলে উঠে না না এমন হতে পারে না। আমি একজন ছাড়া কাউকে ভালবাসিনা।কিন্তু তার কেনো তানুকে ছাড়া ভালো লাগে না।সব কিছু যেনো জট পাকিয়ে যাচ্ছে তনয়ের……………………..
চলবে…
( রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)