এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ১১

0
350

#গল্পঃএক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১১

আমি শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না।তনয় বুঝতে পারে তানু ঘুমাইনি তাই সে এমন ছটফট করছে। তাই সে উঠে তানুর মাথায় হাত রাখে। কারো হাতের স্পর্শ মাথায় পেয়ে আমি ঝপাৎ করে চোখ খুলে ফেলি আর যা দেখি আমি অবাকের শেষ চুড়ায় পৌছাই। তনয় আমার মাথায় হাত দিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমাকে ওই ভাবে তাকাতে দেখে বলে ওমন বড় বড় চোখ করে কি দেখছো। চোখ বন্ধ করো তাড়াতাড়ি। কাল অনেক সকালে উঠতে হবে সেই খেয়াল আছে। কাল না তোমার এক্সাম আছে।আজ তো।পড়াইতে পারলাম না।খুব ভোরে উঠে পড়তে হবে ঘুমাও। আমি ও বাধ্য মেয়ের মতো চোখ বন্ধ করলাম।নিজেকে খুব সুখি একটা মানুষ মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে। সকল ভালো লাগা এসে ভর করেছে আমার মাঝে। আমি এখন তনয়ের প্রতিটা কেয়ারে কেমন ভালবাসা পাই খুজে পাই। তার মানে তনয় কি আমাকে ভালবাসতে শুরু করেছে। এই সকল হাজার চিন্তা ভাবনার মাঝে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।

তনয় বুঝতে পারলো তানু এখন ঘুমের অতলে হারিয়ে গেছে।তাই সে তানু কে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। তানুকে বুকে না নিয়ে যে ঘুম আসে না তার। কেনো এমন অনুভূতি কেনো এই ভাললাগা সেটা তার জানা নেই। হয়ত এটাই পবিত্র সম্পর্কের ভালবাসার সূচনার প্রকাশ।

_______________________

সকালে তাসু রেডি হচ্ছে উদ্দেশ্য রনিতের হসপিটাল । কাল তানুর কথা মতো সে ভেবে নিয়েছি আজ রনিতের কাছে গিয়ে সব ঠিক করে নেবে। তাই সকাল সকাল বের হচ্ছে সে যেনো রনিত রুগী দেখা শুরু করার আগেই কথা বলতে পারে তাই।

বসে বসে পড়ছি আর ঢুলছি আমি৷ একে তো কাল অনেক রাতে ঘুমিয়েছি তার উপর আজ অনেক ভোরে তুলে দিয়েছে তনয়৷ মাথাটা কেমন ভার হয়ে আছে।তখনি তনয় এক কাপ কফি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। আমার দিকে কাপ এগিয়ে দিয়ে বলল খাও ভালো লাগবে বসে বসে ঘুমানো লাগবে না।

তাসু এসেই রনিতের কেবিনে চলে যাই। রনিত সবে এসে বসেছে এর মধ্যে তাসু প্রবেশ করে কেবিনে। রনিত তাসু কে একবার দেখে আবার নিজের কাযে মনোযোগ দেয়। তাসুর খুব ভয় করছে না জানি কেমন রিয়াক্ট করে রনিতে। কিছুখন নিরব থাকার পর একটা ঢোক গিলে তাসু বলে উঠলো রনিত সরি।আমি আর কখনো তোমার কথার অবাধ্য হব না প্লিজ রাগ করে থেকো না আর।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার সাথে কথা না বলে। রনিত কিছু না বলে উঠে দাড়াই ভীষণ রেগে আছে সে৷ চোখ মুখ একদম লাল আগুনের ফুলকি ফুটে পড়ছে যেনো।তাসু দেখেই মাথা নিচু করে ফেলল। রনিত উঠে এসে তাসুকে দেয়াল এর সাথে চেপে ধরে তাসু অনেক ভয় পেয়ে যাই। তারপর রনিত উড়না টা সরিয়ে তাসুর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দেয়। তাসু অবাক সাথে অনেক ভয় পেয়ে যায়।। তাসুর শরীর কাপছে। ২ হাত দিয়ে ২ পাশের জামা খামছে ধরেছে তার।

জীবনে প্রথম কোনো পুরুষ এতো কাছে এসেছে তার। রনিত তাসুর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে উঠলো খুব ভালো লাগে না পরপুরুষের ছোয়া পেতে৷ তাই বারবার বারন করার পরো গিয়েছো। তাহলে তো এখন আমার ছোয়াও তোমার ভালো লাগছে তাসু সোনা। কি ভালো লাগছে না? তখনি তাসু ফুফিয়ে কেদে উঠে রনিতের এতখনে হুস ফিরে সে রাগের বসে কি করে ফেলেছে।তাই সে সঙ্গে সঙ্গে দূরে সরে যায়।তাসু ওই ভাবে থেকেই কেদে চলেছে। রনিত কিছুখন নিজের হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে রাখে । তার খুব খারাপ লাগছে তাসুর সাথে এমন ব্যবহার করাই।

রনিত আবার তাসুর কাছে যায় উড়নাটা ঠিক করে দিয়ে ২ গালে হাত রাখে তাসুর।তারপর বলে আমি তোমার ভালোর জন্য বলেছিলাম তাসু সোনা। কেউ তোমার দিকে চোখ তুলে তাকালে আমার সহ্য হয়না সেখানে তোমার শরীর এর সাথে অন্য পুরুষের শরীরের ছোয়া লাগবে কেমনে সহ্য করি তাই অনেক রাগ হয়েছিল সরি আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ কেদো না। তখনি তাসু রনিতকে জড়িয়ে ধরে ২ হাত দিয়ে তারপর জোরে কেদে দেয়।

রনিতের বুকে মাথা রেখেই বলে উঠে আমি আর কখনো তোমার কথার অবাধ্য হব না । প্লিজ আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করো না। আমার খুব কষ্ট হয় তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে। আমি সব শুনব তোমার যা বলবে।রনিতের মুখে হাসি ফুটে উঠে তখন।তারপর সেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাসুকে।এখানেই শেষ হয় মান-অভিমানের পালা।

আমি কোচিং ক্লাসে বসে আছি আজ সজিয়া ঠিক সময়ে আসছে ২ জন বসে গল্প করছি। মেহুকে আমি সজিয়ার কথা জানাই।তাই মেহু বলেছে আমি যেনো ওকে ও সাথে করে নিয়ে যাই। তাই সজিয়া কে বলি আমাদের সাথে আমাদের গ্রামে যাওয়ার জন্য সজিয়াও এককথায় রাজি হয়ে যায়।কারন সে এর আগে কখনো গ্রামে যাই নাই তাই সে গ্রাম দেখবে।আমার খুব ভালো লাগছে অনেক খুশি খুশি ও লাগছে। সবাই এক সাথে মজা করতে পারব ভেবে।

________________________

আমি রেডি হচ্ছি সাথে জাকিয়া,তাসু আপু অনিক ভাইয়া ও।আমরা সবাই শপিংয়ে যাচ্ছি। আমরা অবশ্য একবারে তৈরি হয়ে যাচ্ছি কারণ ওইদিক থেকে মেহু, নাবু,নুসু,অনু আসছে বিয়ের শপিং করতে। সবাই এক সাথে শপিং করবে তাই অন্তর ভাইয়া সবাইকে এক সাথে যেতে বলেছে আমরা শপিং করে ওই দিক দিয়ে একবারে গ্রামে চলে যাব। আমার সাথে তাসু আপু, জাকিয়া,আর সজিয়া ও যাবে। অনিক ভাইয়া ও যেতে চেয়েছিল কারন টা কি আপনারা তো জানেন এ 😁।
কিন্তু বেচারার যাওয়া হলো না অন্তর ভাইয়া সোজা বলে দিয়েছে তুই বর পক্ষ কনে পক্ষ না যে নাচতে নাচতে বিয়ে খেতে যাবি তখন বেচারার মুখটা দেখার মতো ছিল। তখনি তনয় বলল হলো তোমার। ওরা প্রায় চলে আসছে আমাদের যেতে হবে তাড়াতাড়ি। আমি বললাম এইতো হয়ে গেছে চলুন।

আমি বের হবো রুম থেকে তখনি তনয় আমার হাত টেনে ধরে। আমি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে থাকি।তনয় আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে।না গেলে হয়না।আমরা না হয় বিয়ের দিন যাব। অন্তর তো তোমার দেবর প্লাস ভাই ও হয়৷ তার বিয়েতে না থেকে তুমি বন্ধুর বিয়ে এটেন করতে যাচ্ছ।।আসলে তনয় এখন তানু কে ছাড়া থাকতে পারে না।এটাই মোট কথা কিন্তু সেটা মুখে প্রকাশ করতে পারছে না আর অনুভূতির নাম কি তাও সে সঠিক জানে না।শুধু এটা জানে তানুকে এক পলক না দেখলে এখন তার কেমন পাগল পাগল লাগে রাতে বুকে না নিয়ে ঘুমালে বুকটা শুন্য শুন্য লাগে তার।

আমি বললাম দেখেন তনয় মেহু আমার বন্ধু সাথে আমার প্রতিবেশি (পাশাপাশি বাড়ি)। আর আমার সব থেকে ভালো বন্ধু সে যদি তাত বিয়েতে আমি না যাই তাহলে কেমন দেখায় বলুন।তনয় বুঝতে পারে আসলেই ঠিক বলেছে তানু কি আর করার এই ক’দিন তাকে ছাড়াই থাকা লাগবে।। তাই সে আর কোনো কথা বাড়াই না সবাইকে নিয়ে বের হয়ে যাই।

শপিংমলে এসে দেখি অন্তর ভাইয়ারা আগেই এসে পড়েছে। সাথে নাবু,নুসু,অনু,মেহু দাঁড়িয়ে আছে আমাকে দেখে ওরা খুব খুশি হয়ে গেলো। তারপর সবাই মিলে গেলাম শপিংমলের ভেতরে। মেহুর জন্য বিয়ের শাড়ি দেখছি আমি মেহু অন্তর ভাইয়া আর তনয়।বাকি রা তাদের মতো কেনাকাটা করতে ব্যস্ত। একটু পরে সজিয়া এসেও জয়েন হলো আমাদের সাথে। অনেক শাড়ী দেখে ফেলেছি আমরা কিন্তু এক্টাও পছন্দ হচ্ছে না ঠিক ভাবে। মেহুর হচ্ছে তো অন্তর ভাইয়ার হচ্ছে না। অন্তর ভাইয়া করছে তো আমাদের চয়েস হচ্ছে না। তারপর আমার চোখ যাই একটা কালো শাড়ীর দিকে অনেক সুন্দর শাড়ীটা। সুতির তবে নিখুঁত ভাবে করা কারুকাজ।।অনেক সুন্দর লাগছে। তখনি তনয় তানুর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে দেখে তানু একটা শাড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে।বুঝে ফেলে শাড়ীটা তার পছন্দ হয়েছে। তনয়ের ও ভাল লাগে শাড়ীটা। তনয় সেখান থেকে উঠে সেই শাড়ির কাছে যাই৷ আর তানু আবার বিয়্র শাড়ি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তারপর একটা শাড়ি পছন্দ হয়ে যাই সবারি।অনেক সুন্দর সেই শাড়িটাও। শাড়ি কেনাকাটা শেষ করে আমরা চলে আসলাম জুয়েলারির কাছে। আসার সময় আমি আরো একবার সেই কালো শাড়ীর দিকে নজর দিই কিন্তু আজব শাড়িটি আর নেই দেখানে।কেউ নিয়েছে হয়ত আমি ফোস করে একটা নিঃস্বাস ছাড়লাম।

কেনাকাটা শেষ করে আমরা এখন এসে দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার পাশে। অন্তর ভাইয়া মেহুর সাথে কথা বলছে।দূর থেকে আমি দাঁড়িয়ে দেখছি। মেহু লজ্জা পাচ্ছে তাই ও মাথা নিচু করে সব কথা বলছে।এইদিকে তাসু,জাকিয়া,নাবু,নুসু,অনু তারা গল্প করতে ব্যস্ত।কে কি করবে এই নিয়ে এখানেই আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। তখন তনয় এসে আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল।আমি তার দিকে বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি।সে বলল গিয়ে দেখে নিও কি আছে।আমি ও মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললাম।তারপর আমরা বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।আর তনয় দাঁড়িয়ে তানুদের চলে যাওয়া দেখছে খুব ফাকা ফাকা লাগছে যেনো তার। তখনি অন্তর ভাইয়া বলে কি ভাইয়া খুব মিস করছ বুঝি বউ কে।। সবে তো কয় মিনিট হলো এর মধ্যে এতো উদাস।।তখন তনয় বলে শালা বিয়ে কর তারপর বুঝবি।বউয়ের কাছে যেতেই দিব না। তারপর ওরা ২ জন হেসে উঠলো তারপর চলে গেলো…..

চলবে…….
( । ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here