এক পশলা বৃষ্টি – পর্ব ১০

0
362

#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১০

গ্রাম থেকে আসা ২ দিন হয়ে গেছে আমাদের।আমি এখন ক্লাসরুমে বসে আছি।সজিয়া এখনো আসে নাই।আজ ২দিন লক্ষ্য করছি সে আসতে অনেক দেরি করছে। প্রায় ক্লাস শুরু হওয়ার পর। আবার কিছু জিজ্ঞেস করলেও সে বলে কিছু না।আজ আমি একা একা বোরিং হচ্ছি একটু ও ভালো লাগছে না।খুব রাগ লাগছে সজিয়ার উপর। তাই আমি ঠিক করেছি আস আসলে আমি তার সাথে কোনো কথাই বলব না।

কিছুখন পর সজিয়া এসে আমার পাশে বসে পরলো।আমি দেখেও না দেখার ভান করে থাকলাম। সজিয়া বিষয়টা লক্ষ্য করে আমার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে। কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে যে কারোর অস্বস্থি হয়। আমার ও হচ্ছিল। তাই আমি ওর দিকে ফিরে বললাম এই ভাবে গরুর মতো চোখ করে তাকাই আছিস কেনো।রাগ করেছি আমি তোর উপর কোনো কথা নেই যা। তুই ২ দিন এতো দেরি করছিস আসতে আবার জিজ্ঞেস করলে কিছু বলিস ও না সমস্যা কি তোর? সজিয়া বলল সরি দোস্ত আসলে বাবা ২ দিন ধরে অসুস্থ তাই সকালে তাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া লাগছে।এই জন্য আমার দেরি হচ্ছে।খুব একা লাগছিল তাই না তোর।

আমার আরো রাগ হলো সজিয়ার উপর। তার বাবা অসুস্থ আর আমাকে একবার বলল না।আমি কিছু না বলে ঘুরে বসলাম তখন সজিয়া আমার হাত ধরে বলল সরি দোস্ত রাগ করিস না।আসলে তুই অযথা চিন্তা করতি তাই বলি নাই।আমি বললাম তাহলে এখন বললি কেনো।এখন আমার শুনে খুব আনন্দ লাগছে তাই না। আচ্ছা সরি বললাম তো ভুল হয়ে গেছে সজিয়া বলে উঠলো। তারপর বলল মা তোকে একদিন বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে যাবি? আমি বললাম একদিন না আমি আজই যাব। আংকেল অসুস্থ দেখতে যাব।আমার কথা শুনে সজিয়া খুশি হয়ে বলল সত্যিই তুই আজ যাবি।আমি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললাম।তারপর স্যার চলে আসাই আমরা চুপ করে ক্লাসে মনোযোগী হলাম।
__________________________

আমি আর সজিয়া রিকশা করে যাচ্ছি উদ্দেশ্য সজিয়াদের বাড়ি। আজ তনয় গাড়ি পাঠাবে না বলে দিয়েছি। সকালে আমি একাই এসেছি আজ কোচিং এ।কারন তনয় ২ দিন ধরে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে। নতুন প্রজক্টের জন্য অনেক সময় দিতে হচ্চে তাকে।তাই আজ সে খুব সকাল সকাল বের হয়ে গেছে।যাওয়ার সময় বলে গেছেন আমি যেনো আজ একাই চলে যাই আর সাবধানে বাড়ি আসি গাড়ি দিবে না। প্রথমে অনিক ভাইয়াকে নিয়ে যেতে বলেছিল আমি মানা করি। কারণ আমাকে তো কত কারণে কত জায়গা যাওয়া লাগবে সব সময় কি সবাই কে পাব। তাই একাই চলাফেরা করা শিখতে হবে এই ভেবে।

সজিয়ার বাড়িতে এসে আমরা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সজিয়া কলিং বেল চাপ দেওয়া কিছুখন পর দরজা খুলে দিল একজন মধ্য বয়সী নারী। হয়ত এনি সজিয়ার মা।আমাকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললেন তুমি তানজিলা ঠিক বললাম তো।আমি ও হাল্কা হেসে হ্যাঁ জানালাম।তারপর আন্টি বললেন তোমার কথা অনেক শুনেছি সজিয়ার থেকে। সত্যি তুমি খুব মিষ্টি দেখতে। আমি আন্টির কথায় লজ্জা পেয়ে নিচে তাকালাম। তারপর আমাদের ভেতরে আসতে বললেন আন্টি। আমি ভেতরে গিয়ে একটা সোফায় বসে সব কিছু দেখতে লাগলাম। বাড়িটা ছোট হলেও অনেক সুন্দর আর সব জিনিস বেশ গোছানো সাজানো। আন্টি খুব সৌখিন মানুষ এটাও বুঝতে পারলাম।ঘরের প্রায় জিনিস হাতের তৈরি আর খুব সুন্দর করে করা।দেখেই চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।এর মাঝেই আন্টি নাস্তা নিয়ে আসলেন আর দুপুরে আমরা আসছি যেহেতু তাই দুপুরের খাবার খেয়ে তবেই যেতে হবে এটা আন্টির আবদার। আমিও আর কিছু বললাম না। সজিয়ার একটা ভাই আছে নাম সাগর।সেও বেশ মিষ্টি দেখতে সজিয়ার মতো। আর খুব হাসি খুশি একটা বাচ্চা বলতে গেলে। মাত্র ৫ম শ্রেণীতে পড়ে। আমার সাথে তো খুব সহজেই বন্ধুতে হয়ে গেছে তার। তারপর আমি সবার সাথে গল্প আড্ডা দিয়ে আংকেলের সাথে দেখা করে বিকালে বাড়ি ফিরে আসলাম।

আমাকে দেখে মা বললেন তানু কোথায় ছিলিসআ তুই আজ এতো দেরি হলো যে,তোর ফোন টাও বন্ধ আছে।আমি বললাম মা আসলে ফোনে চার্য শেষ হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি সরি।তারপর সজিয়ার বাড়ি যাওয়া কথা খুলে বললাম। তখনি পাশে থেকে চাচি শাশুড়ী বলে উঠলো হ্যাঁ হ্যাঁ আরো মাথায় তুলো বাড়ির বউ ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেরাচ্ছে কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করে না।এখনি এমন করছে আর তো দিন পরে থাকলো। তুমি ভালো মানুষ তাই বুঝতে পারছো না আপুই (আমার শাশুড়ীমা কে বললেন) এই সব মেয়ে খুবই পাজি হয় গ্রামের মেয়ে কিনা। তখন মা বললেন পায়েল চুপ কর।আর আমাকে উপরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বললেন।পায়েল চৌধুরীর কথা শুনে আজ আমার খুব খাবাপ লেগেছে।তিনি আমাকে দেখতে পারে না কেনো এটা আমার বুঝে আসে না।আমি গরিব ঘরের মেয়ে বলে নাকি অন্য কিছু।
________________________
সন্ধ্যার নামাজ শেষ করে বসে আছি এমন সময় তাসু আপু আর জাকিয়া আসলো ঘরে হাতে করে মুড়ি মাখানো। উদ্দেশ্য এখন আড্ডা দেওয়া। আমরা অনেক গল্প করছি মজা করছি কিন্তু তাসু আপু দেখছি তেমন কিছু বলছে না।শুধু হু হা ধরে বসে থাকছে। আপুর যে মন খারাপ বেশ বুঝতে পারলাম।আমি জাকিয়াকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম সেও জানে না কি হয়েছে।তারপর আমি বললাম কি হয়েছে আপু তোমার মন খারাপ নাকি। তাসু আপু একটা ফোস করে নিশ্বাস ফেলে বললেন তোমার ভাই আমার উপর রাগ করেছে। কথা বলছে না ফোন ও তুলছে না 😒।

আমি বললাম কেনো? ভাইয়া হঠাৎ রাগ করতে গেলো কেনো।তখন আপু বলল আসলে হয়েছে কি ভাবি। নতুন একটা মুভি আসছে।তো ফ্রেন্ডরা সবাই মিলে ঠিক করেছিল যাবে। তারা তো আমাকে রেখে যাবে না তাই তোমার ভাইকে বলেছিলাম।এখন তোমার ভাই পারলে মিনিটে মিনিটে ফোন করে সেদিন রাগ করার পর থেকে 🙆‍♀️। তাই ভাবলাম বলে যাই। বললাম রনিতকে কিন্তু সে বলা এখন হলে অনেক ভীড় আর অনেক বাজে ছেলে থাকে।তাই আমি যেনো একা নাই যাই সময় পেলে তোমার ভাই এ নিয়ে যাবে। কিন্তু ফ্রেন্ডরা ছারছিল না।তাই গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার ভাই কিভাবে জানি জেনে গেছে।

তাসু যখন সিনেমা হলে যাই তখন রনিতের একটা বন্ধুও গিয়েছিল তার গার্লফ্রেন্ড সাথে নিয়ে। তারপর গিয়ে দেখে তাসু সেখানে।আর তখনি রনিতকে ফোন করে জানাই। রনিতের সব বন্ধু প্রায় তাসুকে চিনে কারণ রনিত নিজে একদিন পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সবার সাথে।
তারপর রনিত তাসুকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে কোথায় আছে বেচারা তাসু সে বলে কলেজে আছে ব্যাচ এতেই হয়ে গেছে রনিতের রাগ। একে তো বারন করার পরও কথা শুনেনি তার উপর আবার মিথ্যা বলাতে রনিত খুব রেগে যাই।সাথে সাথে ফোন কেটে একটা মেসেজ করে তাসুকে। সিনেমা শেষ দেখা শেষ হলে বাসায় ফিরে যেও সাবধানে। তাসু তো মেসেজ দেখে চোখ চড়কগাছ।

আমি তাসু আপুর কথা শুনে বললাম এটা ঠিক করো না।ভাইয়া রাগলে সহজে সে রাগ মানানো যাই না।তুমি তো গেছো তাসু আপু। তার উপর আবার মিথ্যা ও বলেছো যেটা ভাইয়া একদম পছন্দ করে না। তাসু আপু কাদো কাদো মুখ করে বললেন এখন কি করব ভাবি।সেতো আমার সাথে কথাই বলছে। না ফোন তুলছে না কিছু বলার সুযোগ দিচ্ছে। আমি আপুকে বললাম তুমি একটা কাজ করো কাল ভাইয়ার চেম্বারে চলে যাও।তারপর কথা বলে সব ঠিকঠাক করে নাও।আমার কথায় আপু খুশি হলো আর ধন্যবাদ দিল।এমন সময় আমার ফোন বেজে উঠল তাকিয়ে দেখি মেহু ফোন করেছে।তাসু আর জাকিয়া ফোন এর দিকে তাকিয়ে বলল ভাবি তুমি কথা বলো আমরা যাই এখন পড়তে হবে।

ওরা চলে যাওয়ার পর আমি মেহুর সাথে কথা বলতে লাগলাম।আমি যেনো তার বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই যাই সেটা আমাকে বারবার বলছে।কারণ তার বিয়ের সকল কেনাকাটা আমাকে সাথে নিয়ে করবে তাই। আমি মেহুর সাথে কিছুখন কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম।

পড়ার টেবিলে বসে ঝিমুচ্ছি৷ আজ তনয়ের আসতে অনেক রাত হবে সে আগেই বলে গেছে।এখন বাজে রাত ১১ টা এখনো তনয় আসেনি।আকি টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ি। ১২ টার কাছাকাছি সময়ে তনয় বাড়ি ফিরে আসে। ঘরে ঢুকতেই চোখ যাই পড়ার টেবিলে। সেখানে তানু বাচ্চাদের মতো করে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।কতটা নিঃস্বপাপ লাগছে দেখতে তানুকে।আজকাল তনয় তানুর থেকে চোখ সরাতে পারে না যেনো।অনেক মায়া আছে তানুর চেহারায় যা যেকোনো মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে।তনয় তানুর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ব্যাগ রেখে ওয়াসরুমে চলে গেলেন ফ্রেস হতে।। কিছুখন পর তনয় ফ্রেস হয়ে এসে দেখে তানু একই ভাবে ঘুমিয়ে আছে। তনয় আসতে আসতে তানুর দিকে এগিয়ে গেলো। তারপর ভাবতে লাগলো তানুকে ডাকবে কি ডাকবে না।

তনয় হুট করে তানুকে কোলে তুলে নিয়ে বিসানার দিকে পা বাড়াই তখনি আমার মনে হয় আমি শুন্যে ভেসে বেরাচ্ছি।আমি তাড়াতাড়ি চোখ খুলে দেখি সামনে তনয় মানে তনয় আমাকে কোলে করে নিয়ে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে তনয় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। সে ভাবতে পারেনি আমি জেগে যাব।তারপর আমাকে নামিয়ে দিয়ে বলল ঘরে কি ঘুমানোর জায়গার অভাব পরেছে যে তুমি টেবিলে ঘুমাচ্ছ।আমি ছোট করে বললাম পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি বুঝতে পারিনি। তাই বলে ঘর থেকে বের হতে যাচ্ছিল তখন তনয় বলল কোথায় যাচ্ছ।আমি বললাম।খাবার নিয়ে আসতে। তনয় বলল সে নাকি খেয়ে এসেছে।মিটিং ছিল সেখানে খাবারের ব্যবস্থা ছিল। তুমি খেয়েছো? আমি হ্যাঁ বলে আবার এসে শুয়ে পড়লাম। সাথে খুদা ও লাগছে।কারণ আমি তনয়কে ছাড়া খাইনা কখনো তাই উনার জন্য বসে ছিলাম।খেয়ে আসছে যখন আজ আর আমার খাওয়া হবে না।

বেশ কিছুখন তনয়ের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে উঠে বলসাম তারপর দেখি খাবার হাতে নিয়ে ঘরে আসছে তনয়।আমি বললাম আপনি না খেয়ে আসছেন আবার খাবার কি করবেন।তখন তনয় বলে আমি তো রাক্ষস হয়ে গেছি তাই আবার খাব তোমার কোনো সমস্যা। আমি মাথা দুলিয়ে না বলে আবার শুয়ে পড়লাম। মনে মনে বলতে লাগলাম আমার খিদিতে পেট জ্বলছে আর উনি খেয়ে এসে আবার খাবেন সসত্যিই রাক্ষস হয়ে গেছেন।তখনি আমার হাতে টান পড়ে আমি উঠে বসি।। তারপর তনয় একটু ধমকের স্বরে বলে ফিনিস ইট এন্ড ফাস্ট। এবার বুঝলাম খাবারটা আসলে আমার জন্য নিয়ে আসা।😇আমি বললাম খেয়ে বললাম তো একবার। তখন তনয় বলে মিথ্যাটাও ভালো করে বলতে শিখলে না তানু তুমি। আমি বুঝে গেছি উনি ধরে ফেলেছেন আমার মিথ্যা। এই মানুষটা কি করে তাকে বুঝে যাই তানু জানে না। হয়ত দায়িত্ব থেকে বুঝে তাছাড়া আর কি হবে মনে মনে ভাবতে থাকি তখন তনয় আবার বলে কি হলো খাও। আমি বললাম একা খেতে ভালো লাগে না আমার৷। তনয় বলে তাহলে আমাদের এলাকার সবাইকে ডেকে নিয়ে আসি তোমার সাথে খাওয়ার জন্য। উনার কথা শুনে আমার তো চোখ বেরিয়ে আসা উপক্রম । কি বললাম আর উনি ক জবাব দিলেন।এই লোকটা কোনো কথার সোজা জবাব দিতেই জানেন না।তারপর তনয় ভাত মাখিয়ে আমার সামনে ধরলেন। আমি তো আরো অবাক। তনয় আমাকে খাইয়ে দিবে আমি ভাবতে পারছি না। আজ আমার খুব ভালো লাগছে অনেক আনন্দ লাগছে। প্রিয় মানুষের হাতের খাবার কার না ভালো লাগে তার উপর সে আমার স্বামী। স্বামীর হাতে খাওয়া কতটা সুখের সেটা শুধু বাঙ্গালী নারীরাই জানে।

আমার খুশিতে সাথে আবেগে বারবার চোখে পানি চলে আসছিল। খাওয়া শেষ করে তনয় আমাকে ঘুমাতে বললেন।আমিও বাধ্য মেয়ের মতো শুয়ে পড়লাম।আমার পাশে তনয় ও শুয়ে পড়লেন। কিছুখন নিরব থাকার পর আমি তনয়কে বললাম মেহুর কথাটা৷। তারপর তনয় বলল আমাকে আগেই রেখে আসবে কাজের চাপ টা কম হলে আমি তো আরো খুশি হয়ে গেলাম।তারপর আমাকে ঘুমাতে বললেন কিন্তু আমার ঘুম বাবাজি সে আর আসার নাম নিচ্ছে না। আমার এই একটা অভ্যাস একবার ঘুম ছুটে গেলে আর ঘুম সহজে আসতে চাই না…………

চলবে……

( একবার লেখার পর ডিলিট হয়ে যাই ভুলবসত অনেক বড় করে লিখেছিলাম পর্বটা 😒। আবার পুনোরায় লেখা লাগল। রিচেক হয়নি। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here