#এক_পশলা_বৃষ্টি
লেখনী ঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_১৫
তনয় সামনে থাকা মেয়েটাকে দেখে অবাক সাথে অনেকটা শকট।সে কখনো কল্পনা করেনি তার ভালবাসার মানুষটা আবার এই ভাবে ফিরে আসবে। তারপরও তনয় খুশি হয়ে হতে পারছে না। চাপা একটা অভিমান সাথে একটা কষ্ট কাজ করছে।সেটা কি এই মেয়েটার জন্য নাকি অন্য কেউ।
পায়েল চৌধুরী মেয়েটাকে দেখেই খুশিতে বলে উঠলো রাত্রি তুই। আমি তো ভাবতে পারছি না আমার কিউট সুইটি বাচাটা এসেছে। কত সুন্দর হয়ে গেছিস তুই আগের থেকে ☺️।
তখনই তনয়ের হুস আসে আর তানুর কথা মনে পড়ে। সাথে সাথে রাত্রিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।রাত্রি ধাক্কা সামলাতে না পেরে একটু পিছিয়ে যায়।
তনয় তাকিয়ে দেখে তানু চোখে টলটলে পানি নিয়ে ঠাই দাড়িয়ে আছে যেনো একটা মুর্তি দাঁড়িয়ে।
জাকিয়া তানুর পাশে গিয়ে বলে উঠলো চলে আসছে সাকচুন্নি ড্রামাবাজ৷ আমার একদম সহ্য হয়না এই মেয়েটা কে। গায়ে পড়া একটা মেয়ে।আর প্রচন্ড লোভী।সম্পর্কে আমার খালাতো বোন হলেও আমার পছন্দ না এমন বেয়াদব মেয়েকে।
জানো ভাইয়াকে ফেলে চলে গিয়েছিল নিজের স্বার্থে। ভাইয়া কত কষ্ট পেয়েছিল আমরা দেখেছি। আবার আসছে ঢং করতে। তুমি তোমার স্থান থেকে এক চুল পরিমাণ সরবে না বলে দিচ্ছি।
তাসু আপু এসে হাত ধরে বলে উঠলো হ্যাঁ ভাবি জাকিয়া ঠিক বলছে। তুমি তোমার অধিকার ছাড়বা না।আমরা জানি ভাইয়ার সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন।
এতোখন ওদের কোনো কথা কানে না গেলেও এবার আমি ওদের দিকে তাকাইলাম। বিস্ময় দৃষ্টি নিয়ে। তনয়ের সাথে আমার কেমন সম্পর্ক ওরা কি ভাবে জানে?
আবার বলে উঠলো তাসু আপু৷ আমরা জানি ভাবি ভাইয়া তোমাকে শুধু দায়িত্ব মনে করে। তোমাদের মাঝে স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক নেই। আমরা অনেক আগে থেকে জানতাম কিন্তু বুঝতে দেইনি তোমায়। কারণ ভাইয়া যে রাত্রি আপুকে অনেক ভালবাসে। তাকে ভুলা এতো সহজ না আমরা জানি।
ভাইয়া অনেক ভেঙে পড়েছিল জানো ওই ডায়নি ভাইয়াকে ছেড়ে যাওয়ার পর।ভাইয়া তো নিজেকে ঘর বন্দি করে নিয়েছিল। তারপর বাবা মা ভাইয়া কে বুঝায় অনেক রকম ভাবে ইমোশনাল আট্যাক করে বিয়েতে রাজি করাই।
আমি আর এই সব শুনতে পারছিলাম না।আমার চোখ বেয়ে নেমে পড়ছে অঝোরে অশ্রুপাত।
রাত্রি আবার দৌড়ে গিয়ে তনয়কে জড়িয়ে ধরে বলে আমাকে ক্ষমা করে দাও তনয়৷ আমি ভুল করেছি তোমাকে ছেড়ে গিয়ে।আমি আমার কেরিয়ার দিক ভেবেছিলাম শুধু তাই তোমাকে রেখে বিদেশ চলে যায়।আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ।আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি তনয়।আই রেলি লাভ ইউ।
আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না ওইখানে৷ প্রতিটা কথা যেনো কানে ধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে রাত্রির। বুকের ভেতর প্রচন্ড রকম রক্তক্ষরণ হচ্ছে যেনো।দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি মনে হয় শ্বাস নিতে ভুলে গেছি।
আমি আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে ছুটে চলে আসলাম রুমে।এসেই ওয়াসরুমে ভেতর চলে গেলাম। খুব করে কান্না করছি আমি চিৎকার করে কান্না করছি। কিন্তু আমার কান্নার প্রতিধ্বনি এই ওয়াসরুমের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।
একদিন এমন তো হওয়ার কথা ছিল।তাহলে কেনো আমার এতো কষ্ট হচ্ছে। কেনো মানতে পারছি না আমি তনয়ের পাশে অন্য মেয়েকে। সেতো অন্য কাউকে ভালবাসে বলেছিল তো আমাকে। তাহলে কেনো মানতে পারছি না।এই সব ভাবছি আর চিৎকার করে কান্না করছি আমি।
তানুকে ওই ভাবে দৌড়ে আসতে দেখে সবাই অবাক হয়। সবাই বুঝতে পারে তানু অনেক কষ্ট পেয়েছে। রহিত আর রনিতের খুব রাগ হচ্ছে রাত্রির উপর। আজ তার জন্য তাদের বোন কষ্ট পাচ্ছে। নাবু,নুসু,অনু তন্নি সজিয়া তারা এখনো যেনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।তনয় কাউকে ভালবাসত এইটা তারা জানত না।তাহলে কি তাদের বোন ভালো নেই।অনেক রকম কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের৷
সজিয়া এতো দিন তানুর সাথে থেকে একটু ও বুঝতে পারেনি তানুর কষ্ট। তনয়ের কেয়ার ভালবাসা দেখে মনে হতো তারা সুখি দম্পতি। কিন্তু এটা ছিল শুধু দায়িত্ব। সব কেমন জানি নিস্তব্ধত হয়ে গেছে।
মেহু আগেই জানতেন তনয়ের রিলেশনের কথা। অন্তর এর থেকে শুনেছে। তবে এমন একটা পরিস্থিতি হবে সেটা কল্পনা করেনি।
তানুকে দৌড়ে চলে যেতে দেখে তনয়ও ছুটে যায় পিছু পিছু৷ তানুর সাথে তার কথা আছে অনেক কিছু বলার আছে তার।
____________________________
তনয় রুমে এসে দেখে তানু ওয়াসরুমে থেকে বের হচ্ছে। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয় তানু নিজেকে সামলে নিয়েছে ।
আমি তনয়কে দেখে মুখে একটু হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে বলি। আপনি এখানে, সবাই ওইখানে আছে আপনি এখানে কি করছেন।আমার একটু খারাপ লাগছিল মাথাটা কেমন জানি ঘুরছিল তাই একটু শাওয়ার নিলাম। আপনি যান আমি আসছি।
তনয় তানুর দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে। তানুর নাক লাল টকটকে হয়ে গেছে হয়ত কান্নার ফলে।চোখ দু’টি ফুলে গেছে। তনয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বললাম,
আপনি এবার খুশিতো রাত্রি আপু ফিরে আসছে।আপনাদের ভালবাসা এবার পূর্নতা পাবে দেখেন।।আপনার ভালবাসা খাটি ছিল তাই তো আবার রাত্রি আপু ফিরে আসছে।কথাগুলো বলতে আমার গলা ধরে আসছিল।তাও অনেক কষ্টে বললাম কথা গুলো আমি।
আমি আবার ও বললাম আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না।আমি চলে যাব একটু সময় দিবেন আমাকে দয়া করে ।আর আমার বাড়ির মানুষদের এখন কিছু বলবেন না প্লিজ। আমি সবাইকে বুঝিয়ে বলব সময় হলে।আর হ্যাঁ এই বাড়িতেও আমি সবাইকে বুঝাবো মা বাবা আপনাদের এক হতে কেউ বাধা দিবে না আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে।
তনয়ের এখন রাগ হচ্ছে প্রচন্ড রকম ভাবে রাগ হচ্ছে তানুর উপর। এই মেয়ে কে এতো কে বুঝতে বলছে৷ কথা শুনার প্রয়োজন বোধ করছে না। নিজের মতো সব বুঝে যাচ্ছে।
তনয় রাগ কোন্ট্রল করতে না পেরে তানুর দুই বাহু দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।তানু যেনো একজন নির্জীব প্রানী হয়ে গেছে। ব্যথা পাচ্ছে তাও যেনো এই ব্যথা কোনো ব্যথায় মনে হচ্ছে না তার৷। বেশি ব্যথা কষ্ট লাগছে রাত্রিকে তনয়ের বুকে দেখার দৃশ্য মনে আসলে।
তনয় বলে এতো বেশি বুঝো কেনো তুমি। বলেছি আমি তোমার দয়া লাগবে আমার। আমার কথাটা একবার শুনবে আগে৷ নিজের মতো করে বলে যাচ্ছো।
আমি বললাম আমার লাগছে তনয় ছাড়ুন।আর নিচে সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। সবাই কত আনন্দ করছিল বলুন তো। সবাই কেমন নিরব হয়ে গেছে রাত্রি আপুকে দেখে।চলুন তো পরে দেখা যাবে সব৷ তাই বলে আমি চলে আসছিলাম রুম থেকে তারপর একটু থেমে পেছন ঘুরে বললাম আমি আর কারো দায়িত্ব হয়ে থাকতে চায় না তনয়। কথাটা বলে আমি আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে ছুটে চলে আসলাম। আর কিছুখন থাকলে আমি নিজেকে সামলাতে পারতাম না তনয়ের সামনে।
তানু চলে যাওয়ার পর তনয় রাগে একটা পাঞ্চ মারে দেয়ালের সাথে।সব যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। এমনটা সে তো চায়নি তাহলে কেনো হলো এমন। কি করবে তনয় এখন কি করা উচিত কিছু বুঝতে পারছে না।
তবে এটা খুব ভালো করে বুঝে গেছে তানুকে ছাড়া তনয় থাকতে পারবে না।তানুকে তার চায়। কিন্তু রাত্রি তার কি হবে। আর কিছু ভাবতে পারছে না তনয় মাথা চেপে ধরে বসে পড়ল সে।
আমি বাইরে এসে দেখি সবাই কেমন নিস্বঃচুপ হয়ে আছে।আমি হাসি মুখে বললাম তোমরা সবাই এমন করে আছো কেনো।চলো সবাই খেলা শুরু করি। তারপর না খাওয়া দাওয়া করতে হবে অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে তো।
বাবা মা এর কাছে গিয়ে বললাম তাদের ঘরে যাওয়ার জন্য অনেক রাত হয়েছে তাদের খাবার ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছি খেয়ে যেনো ঘুমিয়ে যায়।তখনই মা আমার গালে হাত রেখে বললেন তুই ঠিক আছিস তো মা।আমি হেসে বললাম আমার আবার কি হবে। কি ভাবছ বলোতো তোমরা। আমার কিছু হয়নি একদম চিনির মতো ঠিক আছি মিষ্টি তাই বলে হেসে দিলাম।কিন্তু মা বাবা হাসলেন না।হয়ত তারা কিছু উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন।
রাত্রি বলে উঠলো তখন এই মেয়েটা কে আগে তো দেখিনি এখানে।তখনই জাকিয়া বলে আমাদের ভাবি তনয় ভাইয়ার বউ।
তনয়ের বউ কথাটা শুনে রাত্রির যেনো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।তাহলে তনয় বিয়ে করেছে । তাকে রেখে তনয় কিভাবে বিয়ে করতে পারে।
আমি রাত্রি কাছে এগিয়ে গিয়ে রাত্রির হাত ধরে বললাম। চিন্তা করো না।তোমার জায়গা তোমারই আছে।সে এখনো তোমাকে ভালবাসে। অভিমান করো না তার উপর। তনয় বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছে আমাকে।কিন্তু ভালবাসে তোমাকে আমাকে বলেছে সে অনেক আগে। তাই তুমি ভেবো না আমি চলে যাব তোমাদের মাঝ থেকে একটু সময় দাও আমাকে।
তানুর কথা রাত্রি একটা ডেভিল হাসি দেয় এটা ভেবে যে তাকে আর কিছু করা লাগবে না কাটা নিজে থেকে সরে যাবে তাই।
আমি সবাইকে বললাম খেতে বসার জন্য কিন্তু রনিত আর রহিত ভাইয়া আর থাকলেন না সেখানে৷। ভালো থাকিস বলে চলে গেলেন তারা।হয়ত এই সব কিছু মানতে পারেনি তাই তারা চলে গেলো। তারা যে আমাকে নিজের বোনের মতো ভালবাসে কি করে মেনে নিবে তাদের বোনের স্বামীর সাথে অন্যজনকে।
আমি সজিয়া আর মেহুর কাছে যেতেই তারা বলল তুই আগে বলিস নি তো আমাদের তোর মধ্যে এতো কষ্ট চেপে রেখেছিস।ভাইয়া তোকে না অন্য কাউকে ভালবাসে।আমাদের তুই আপন মনে করিস না তাই না।তাই সব নিজের মধ্যে রেখে দিয়েছিলিস।
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।কেদে বলে উঠলাম।কি বলব তোদের যে আমার স্বামী আমাকে ভালবাসে না সে অন্য একটা মেয়েকে ভালবাসে। এটা বলব যে আমি তার কাছে শুধু একটা দায়িত্ব তাছাড়া কিছু না।কোন মুখে বলতাম এই কথা গুলো যে আমি আমার স্বামীর ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য না বলেই আমি সজিয়া আর মেহুকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলাম জোরে।। খুব কষ্ট হচ্ছে আজ আমার সহ্য করতে পারছি না আমি আর।
________________________
সব কিছু শেষ করে এসে যে যার মানে ঘরে চলে যায়।নাবুরা কাল চলে যাবে গ্রামে মেহুরা কোনো রকম একটু খেয়ে চলে গেছে।সবার মনে কালো ছায়া নেমে আসছে। তনয় তারপর আর নিচে যায়নি।
আমি রুমে এসে ফ্রেস হয়ে সোফাতে শুয়ে পড়লাম আজ। তনয় শুধু দেখছে কিন্তু কিছু বলছে না । আমি চায়না আর কোনো মায়া বাড়াতে চলে যেতে হবেই যখন কি লাভ মায়া বাড়িয়ে। আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না।প্রচন্ড রকম মাথা ব্যথা করছিল তাই ঘুমানোর চেষ্টা করি আর কিছুখনের মধ্যে ঘুমিয়ে যাই
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি আবার নিজেকে কারো বুকে আবদ্ধ পেলাম…………
চলবে……
এখন থেকে গল্প আমার নিচের দেওয়া আইডিতে পাবেন সবাই৷ যারা গল্প পড়তে চান আমার নতুন আইডিতে জয়েন হয়ে নিন
( ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।)
https://www.facebook.com/profile.php?id=100072792082943