#গল্পঃএক_পশলা_বৃষ্টি
লেখিকাঃ আলো ইসলাম
#পর্ব_২
ছোট কাকির সাথে আমার খুব মিল।আমি মন খুলে সব কথা বলতে পারি কাকির সাথে।সে আমাকে অনেক ভালবাসে মেয়ের মতো।আমার ছোট কাকির নাম রুপা।মেজো কাকির নাম রুনা আক্তার আর আমার মা এর নাম আরনিয়া খাতুন।এবার গল্পে আসা যাক,আমি রান্না ঘরে যেতেই ছোট কাকি বললেন কি রে তানু এখানে যে, কিছু লাগবে কি।আমি বললাম না কাকি এমনি আসলাম তোমাদের সাহায্য করতে। তাই শুনে মেজো মা বললেন কিছু করতে হবে না তোকে ঘরে যা।আর নাবু কে বলতো একটু নাহিদ কে পড়াতে বসাতে। দিন দিন যা ফাকিবাজ হচ্ছে সব গুলা। আমি রান্না ঘর থেকে বের হয়ে নাবুর ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।।ওই ঘরে নাবু আর নুসু এক সাথে থাকে দুই বোন। সবার সাথে সবার বন্ধুর মতো মিল।মাঝে মাঝে খুনসুটি ও হয় তবে সেটা ক্ষনিকের।
আমি নাবুর ঘরে গিয়ে দেখি সে কি যেনো একটা দেখছে ফোনে আর মিটিমিটি হাসছে। আমি ভ্র দুটি একটু কুচকে বললাম কি রে এমন পাগলের মতো হাসছিস কেন।🙄 আমাকে দেখে নাবু তাড়াতাড়ি করে ফোন রেখে দিয়ে একটু হেসে বলে তেমন কিছু না আপু।আসো না বসো।আমি গিয়ে কিছুখন তার দিকে তাকাই থেকে বললাম মেজো কাকি নাহিদকে পড়াতে বললো। কোথাই সে ডেকে বসা।
নাবু বলে আমি পারবো না ওকে পড়াতে মাথা শেষ করে দেই। তখন তন্নি এসে বলে আপু তোকে ডাকছে বাবা বসার ঘরে। আমি নাবুর ঘর থেকে বের হয়ে বসার ঘরে গিয়ে দেখি দাদি বাবা আর মেজো চাচু বসে আছে। আমাকে দেখে বাবা বললেন শুনো তারা বড় ঘরের অনেক। আবার বড় মনের মানুষ তাই ওদের সামনে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করবা আমার মান-সম্মানের বিষয় এখানে।আমি মুখে কিছু না বলে শুধু মাথা ঝাকালাম।
সেখানে থেকে এসে আবার আমার প্রাণ প্রিয় ডায়েরি নিয়ে বসলাম মনের কিছু কথা প্রকাশ করার জন্য। নিজেকে কেমন বন্দি আর পরগাছা মনে হয় এই সংসারে। অনেক সখ ছিল পড়াশুনা করে নিজ পায়ে দাড়ানোর কিন্তু সবার চাওয়া তো আর পুরন হয়না তাই আমার টাও হইনাই। ভেতর থেকে কেমন দম বন্ধ অনুভব আসছে।এশার নামাজ শেষ করে আমরা সবাই একসাথে খাওয়ার জন্য উপস্থিত হয়েছি৷ আমাদের বাড়ির নিয়ম রাতের খাবার তারাতাড়ি খাওয়া। ছোট কাকা ও চলে এসেছে দেখলাম।খাওয়া শেষ করে ঘরে এসে দেখি অনু বসে আছে আমার ঘরে আর সায়ন লাফালাফি করছে বিসানা থেকে মেঝে।ওর কাজ এ এমন শুধু লাফালাফি করা৷ পুরো বাড়ি টা সে মাথায় তুলে রাখে। আমার মতো দুস্টু অনেক। আমাকে দেখে সায়ন লাফ দিয়ে উঠে বলে আপু কাল নাকি তোমাকে দেখতে আসবে আমি কিছু না বলে মাথা ঝাকালাম।সাথে সাথে ও নেচে উঠে বলে ইয়াহু বিয়া খাবো কতদিন পরে। আমি তো ওর কাজ দেখে হেসে দিয়েছি। তারপর অনু ওকে বকা দিয়ে বলে ঘর থেকে যেতে ও সেও একটা ভেংছি দিয়ে দৌড় লাগাই।অনু বলে আপু একটা অংক বুঝতে পারছি না করে দে না।আমি স্টুডেন্ট হিসেবে বেশ ভালো আর অংক আমার খুব ভালো (আমার আবার শত্রু অংক🥴) সাইন্স নিয়ে পড়েছি আমি।আমি অনুকে অংক বুঝাই দিয়ার পর সে চলে গেলো আমি ও আর কিছু না ভেবে শুয়ে পড়লাম।।
আজ বুধবার আমাকে দেখতে আসার দিন পাত্র পক্ষ থেকে সকাল থেকে অনেক তোরজোর চলছে বাড়িতে। সবাই অনেক ব্যস্ত আর ছোটরা লাফালাফি করছে আনন্দে। দেখতে দেখতে বিকাল গড়িয়ে এলো আমাকে সাজানো হচ্ছে মেরুন রঙের একটা শাড়ি আর কিছু হাল্কা গহনা দিয়ে। আমি সাজ একদম পছন্দ করিনা আর কোনো গহনা আমার ভালো লাগে না। ছোট কাকি জানে আমার সাজ বিষয়ে তাই সে আমার মনের মতো করেই সাজিয়ে দেওয়া চেষ্টা করছে।
এর মধ্যে সায়ন দৌড়াই এসে বললো যে তারা নাকি এসে গেছে।আমার তো কথা টা শুনে বুকের ভেতর কেমন একটা ভয় সাথে অনেক অসস্থি কাজ করা শুরু করেছে।না জানি ছেলে কেমন দেখতে হবে আর কেমন হবে তারা। জীবনে প্রথম পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে দাড়াবো তাই অনেক নার্ভাস লাগছে।কাকি আমার ব্যাপার টা বুঝতে পেরে হাত চেপে ধরলেন আর আমাকে আসস্ত করলেন ইশারা করে তারপর সে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। নাবু,নুসু।অনু নাহিদ আমাকে দেখে বললো আপু তোকে কিন্ত সেই লাগছে। আমাদের দুলাভাই চোখ সরাতেই পারবে না দেখিস।আমি ওদের কথা শুনে লজ্জাই নুয়ে গেলাম আমার দুই গালে লাল আভা ফুটে উঠলো।
বসার ঘর থেকে ডাক আসলো আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার তখন থেকে বুকে ধুকপুকুনি টা আরো বেড়ে গেলো। এই বুঝি প্রানপাখি ছুটে পালাবে। আমি তাদের সামনে গিয়ে দাড়াতেই একজন মেয়ে বলে উঠলো ওয়াও কি সুন্দর আমাদের ভাবি তাই না আপু। আমি একবার শুধু চোখ তুলে দেখলাম তাদের দিকে আবার চোখ নামাই নিলাম।একটা মেয়ে এসে বললো আমি তোমার এক না দুই মাত্র ননদী জাকিয়া চৌধুরী আর এই যে দেখছো এটা তোমার আসল ননদী তাসনিয়া চৌধুরী।।আমি মুখে একটা সৌজন্যের হাসি দিয়ে তাদের সালাম দিলাম।তখনি একজন ভদ্রালোক বললেন আহ কি শুরু করেছিস তোরা। জাকিয়া মেয়েটা কে বসতে দে পরে অনেক সময় পাবি কথা বলার।আমি সবাইকে সালাম দিয়ে একটা সোফায় বসলাম আমার সাথে ছোট কাকি ও বসে পরলেন অনেক নার্ভাস লাগছে তাই আমি ছোট কাকি হাত চেপে ধরে আছি। তারপর ভদ্রলোক বললেন আমি তোমার শ্বশুর মশাই আরমান চৌধুরী আর এটা আমার ভাই আব্রাম চৌধুরী। আমি তাদের দিকে একবার তাকাই চোখ নামাই নিলাম বেশ সুদর্শন দেখতে তারা।আমি এখনো ছেলের দিকে তাকাইনি কিন্তু বুঝতে পারছি এক জোড়া চোখ আমার দিকে অনেকখন থেকে তাকাই আছে।
তারপর আবার বললেন এটা আমার একমাত্র মেয়ে তাসনিম আর এটা আমার একমাত্র ছেলে তনয় চৌধুরী। যার জন্য তোমাকে আমাদের দেখতে আসা।এবার আমি চোখ দুটো তুলে তার দিকে তাকাইলাম আমার যেনা চোখ সেখানেই আবন্ধ হয়ে গেলো।এতো সুন্দর হতে পারে একটা মানুষ না দেখলে বুঝতাম এ না।অনেক সুদর্শন একটা পুরুষ আমার সামনে বসে আছে। আমি লজ্জা পেয়ে চোখ নামাই নিলাম। ছোট কাকি আমার কানে কানে বলে উঠলেন অনেক সুন্দর তো তোর জামাই তানু৷ বেশ মানাবে দু’জন কে।আমি আরো লজ্জা পেয়ে নুয়ে গেলাম।
সবাই কথা বার্তা শেষ করে খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ করে বিদায় এর পালা।তখনি ছোট চাচু বাবাকে বললেন ভাইয়া ওদের দু’জনকে একটু আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত আমাদের। এটা শুনে আমার বাবা মুখটা কিছু সময় থমথমে করে রেখে বললেন আবার কথার কি দরকার আমরা তো বলছি নাকি।আমার বাবা আবার এই সব পছন্দ করে না।কিন্তু ছোট কাকু আধুনিক এর সাথে বেশ পরিচিত তাই সে বুঝতে পেরেছে যে আমাদের আলাদা কথা বলা উচিত একটু। তখন ছেলের বাবা মানে আরমান চৌধুরী বললেন অবশ্যই বলবে কথা৷ তারা একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ক্কথা বলে নেওয়া অবশ্যই উচিত। আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন তিনি মা তোমরা যাও কথা বলে এসো আমরা ততখনে বিয়ের আলাপ টা সেরে ফেলি কি বলিস শরিফুল ( আমার বাবার নাম) বাবা আর কিছু বলতে পারলেন না আমাকে ইশারা করে যেতে বললেন।কাকি আমাকে সাথে করে নিয়ে আসলেন এবং তনয়কে ও সাথে আসতে বললেন……..
চলবে.