তুমি শুধু আমার – পর্ব ২২

0
530

#তুমি শুধু আমার
#লেখিকাঃমোনালিসা
#পর্বঃ২২

সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টি ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসে দেখে দাদি সোফায় বসে তার বাবা মার সাথে কথা বলছে।বৃষ্টি তারাতারি দৌড়ে গিয়ে রায়হান কে জড়িয়ে ধরে।

রায়হান;;কেমন আছিস বৃষ্টি মা??

বৃষ্টি;;ভালো আছি বাবা,,তোমরা কেমন আছো?

কহিনুর;;আমরা ও খুব ভালো আছি।

বৃষ্টি;;কিন্তুু এতো সকাল সকাল এইখানে।কে ফোন করেছে তোমাদের।

এলিনা;;আমি ফোন করেছি।এতো বড় একটা খুশির সংবাদ না দিয়ে কি থাকা যায়।
এলিনা;; বৃষ্টি আমার দাদু ভাই কোথায়?

মেঘ;;এই তো দাদি আমি এইখানে?আর তুমি আমাকে না বলে কেনো চলে এসেছো।তোমাকে কে না বলেছি দৌড়াদৌড়ি করা বারন।তুমি কি আমার কথা শুনবে না বৃষ্টি।

মেঘের এমন বৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা থেকে রায়হান আজ ভিষন খুশি তার মেয়ে জন্য এমন একটা ছেলে চেয়েছিলো যে বৃষ্টি কে তার থেকেও বেশি কেউ আগলে রাখবে।

মেঘ;;কেমন আছেন আব্বু??

রায়হান;;ভালো আছি,,

বৃষ্টি আজকে কি তুমি অফিস যাবে না।না কি অফিস তোমার বাসায় আসবে কোন টা

মেঘ না আমি আজকে অফিস যাবো না।বাসায় থাকবো তোমার খেয়াল রাখার জন্য।
বৃষ্টি,তেমন কিছুই হয়নি আর তুমি এখনি জিদ করছো।

কহিনুর শোন বৃষ্টি মা হওয়া চারটে খানিক কথা নয়।সর্ব প্রথম নিজেকে পরির্বতন করতে হয়।মাথা থেকে শুরু করে পা অব্দি সব কিছুতেই পরির্বতন আসে।নিজের মাঝে আরেক অস্তিত্ব কে নিয়ে বাচঁতে হয়।

এলিনা হেরে বৃষ্টি ঠিক বলছে।মা হওয়া কোন চারটে খানিক কথা না।আপনি একটা কাজ করুন বৃষ্টি সাথে এইখানেই থেকে যান।বৃষ্টির খুব ভালো লাগবে।

মেঘ হুম আম্মু দাদি ঠিক বলেছে আপনি এইখানেই থেকে যান বৃষ্টির ভালো লাগবে।হ্যাঁ মা এখানেই থেকে যাও আমার খুব ভালো লাগবে।

নীলা;;বৃষ্টিইইইইই,,,

বৃষ্টি;;কিরে ভুতনী এইভাবে চিৎকার করার কি আছে?আমি তো কানে শুনতে পারি।

নীলা;;দেখলে তো সবাই বৃষ্টি আমাকে ভুতনী বললো।আর জিজু আপনি শুধু শুনেই গেলেন কিছু বললেন না।

বৃষ্টি;;রাগ না করে বল কি হয়েছে।

নীলা তোর নাস্তা এসেছি চল খেয়ে নিবি।আর হ্যাঁ কোন বাহানা করতে পারবি না।তারাতারি চল।নীলার সাথে সাথে বৃষ্টি চলে যায়।

এলিনা;;দাদু ভাই তুমি বাসায় না থেকে অফিসে চলে যাও আমরা সবাই বৃষ্টি সাথে আছি তোমার চিন্তা করতে হবে না।

–আচ্ছা দাদি।মেঘ উপরে নিজের রুমে চলে যায়।মেঘ রেডি হয়ে নিচে এসে নাস্তা করে আকাশ কে নিয়ে বের হয়ে যায়।
বৃষ্টির অন্তঃসও্বার বয়স কেবল দুইমাস।তিন মাসে পরবে।তার মাঝেই যেনো কত শত ভাবনা সবার ছেলে হলে এইটা করবে মেয়ে হলে ওইটা করবে সবার এমন কান্ড দেখে বৃষ্টি ফিক করে হেসে দেয়।
বৃষ্টি সবাই থামো,আরে আমাকে কিছু বলতে দেও।

–নীলা, তুই বল এইবার আমরা শুনি যে তুই কি চাস।
বৃষ্টি আমি চাই আমার কোল ঝুরে একটা ছোট মেঘ আসুন যে দেখতে ঠিক মেঘের মতো হবে।গলুমলু টাইপের।চোখ নাক চুল সব কিছু যেনো মেঘের মতো হয়।সবাই বৃষ্টির কথা শুনে হেসে দেয়।
নীলা একটা জিনিস বাদ পরে গেলো?
-বৃষ্টি কি বাদ পরে গেলো?
নীলা,মেঘ জিজুর মতো জিদ টা বাদ পরে গেলো বলেই নীলা হেসে দেয়।
এইভাবেই যেনো তাদের সময়টা আনন্দে চলতে থাকে।
বাড়ির সবাই যেনো বৃষ্টিকে সিসিক্যামেরার মতো চোখে চোখে রাখছে।বৃষ্টি তেমন একটা পেট বুঝাই যায় না।নরমালি সব কাজ করতে পারে কিন্তুু মেঘের নির্শেদ যে বৃষ্টি কোন কাজ করতে পারবে না।মেঘ যখন বাসায় না থাকে তখন নীলা বৃষ্টির খেয়াল রাখে স্পেশালি কি খাচ্ছে সেই দিকে বেশি নজর দেয়।আর ইদানীং বুষ্টির মাঝে বেশ কিছু পরির্বতন দেখা যায়।বৃষ্টি সোফায় বসে তার মার সাথে কথা বলছে সেই সময় নীলা প্লেটে করে একটু আচার নিয়ে এসে বৃষ্টির সামনে ধরা মাএই বৃষ্টি এক নিমেষেই আচার শেষ করে ফেলে।একটু পর পর এসে নীলা বৃষ্টিকে খাবার দিয়ে যাচ্ছে।বৃষ্টির মা তো অনেকটাই অবাক হয়ে যায় যেই মেয়ের পিছনে খাবার নিয়ে ছুটাছুটি করতে হতো আর সেই মেয়ে না কি যা দিচ্ছে তাই চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছে।

রাতে মেঘ বাসায় এসে সোজা উপরে চলে যায়।রুমে ডুকেই মেঘের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।সারা রুমে শুধু বেবিদের ছবি।মেঘ সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখছে আর ভাবছে এইটা কি সত্যি তার রুম না কি অন্যরুমে চলে এসেছে।মেঘ তাকিয়ে দেখে যে বৃষ্টি একটা টুলের উপর উঠে দেয়ালে ছবি টানাচ্ছে এইটা দেখেই যে মেঘের প্রচুর রাগ উঠে যায়।

মেঘ বৃষ্টি বলে ডাক দেয়াতে যেই না বৃষ্টি ঘুরতে যাবে তখনি বৃষ্টি পায়ের সাথে উড়না বেজে পরে যাওয়ার সাথে সাথেই মেঘ দৌড়ে এসে ধরে ফেলে।বৃষ্টি চোখ মুখ খিচে চিৎকার করে উঠে।যখন দেখলো যে তার কিছুই হয়নি তখন আস্তে আস্তে করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মেঘ তাকে ধরে ফেলেছে।মেঘের দিকে তাকাতেই বৃষ্টির আন্তাটা যেনো কেপেঁ উঠে কারন মেঘের চেহারা অসম্ভ ভাবে লাল বরর্ন ধারন করেছে।বৃষ্টির মনে হচ্ছে এখনি মেঘ যেনো তাকে মেরে ফেলবে।বৃষ্টি কে এমন ভয় পেতে দেখে মেঘ নিজেকে শান্ত রেখে বৃষ্টি কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও বৃষ্টির পাশে বসে।বৃষ্টি কপালে আলতো ভাবে চুমু একে দিয়ে মেঘ বৃষ্টির দুই হাত ধরে বলে,,

মেঘ,আর কতো তুমি আমাকে কষ্ট দিবে বলতে পারো।অফিসে যতোক্ষন থাকি তোমার কথা চিন্তা করি।তুমি কি করছো না করছো ঠিকভাবে খাচ্ছো কি না।কেনো বুঝনা বৃষ্টি তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাচঁবো বলতে পারো।আর এখন যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো আর আমি যদি সময় মতো না আসতাম তাহলে ভাবতে পাচ্ছো কি হতো।বৃষ্টি তুমি মা হতে যাচ্ছো আর এইটা কোন খেলনা জিনিস না যে একটা ভেঙে গেছে আমি আবার আরেক টা এনে দিবো।নিজের প্রতি একটু তো খেয়াল রাখো বলেই বৃষ্টি হাত ছেড়ে মেঘ ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।মেঘ বের হয়ে এসে দেখে বৃষ্টি বিছানায় বসে চুপ করে টিভিতে কার্টুন দেখছে আর তার হাতে অনেক গুলা ড্রাইফুডের বক্স।বৃষ্টি খাচ্ছে আর টিভি দেখছে।
মেঘ সোফার উপর টাওয়াল টা রেখে দুহাত বুকে গুজে দিয়ে শান্ত ভাবে দাড়িয়ে আছে।বৃষ্টি এইভাবে মেঘ কে শান্ত ভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বার বার আড় চোখে তাকাছে। বৃষ্টি কে এইভাবে তাকাতে দেখে।

মেঘ;;এইভাবে চোখ বাকাঁ করে না তাকিয়ে সোজা হয়ে ও তো তাকাতে পারো না কি।

বৃষ্টি;;দেখার কি আছে। আমি তো আর তোমার দিকে তাকাচ্ছি না আমি তো টিভির দিকে তাকিয়ে আছি।

মেঘ;;দেখার যখন কিছুই নেই তাহলে দেখছো কেনো।আমি তো আর টিভি না।

বৃষ্টি;;আচ্ছা এখন কি দেখলেও দোষ।আমি তো আর তোমাকে দেখছি না

মেঘ;;যা বাবা আমি কখন কি বললাম। আমি বললাম যে বাকাঁ চোখে না তাকিয়ে সোজা চোখে তাকাও।

বৃষ্টি;;ও আচ্ছা তাই না কি?

মেঘ আর বৃষ্টির সাথে কথা না বারিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে যে এগারোটা বেজে গেছে।মেঘ বৃষ্টির পাশে বসে সামনে থেকে ড্রাইফুড গুলা বৃষ্টির হাত থেকে নিয়ে টেবিলে রেখে বৃষ্টিকে হালকা করে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।বৃষ্টি তো মেঘের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।মেঘ বৃষ্টির এমন অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দেয়।

বৃষ্টি এইটা তুমি কি করলে আমাকে ড্রাইফুড গুলা খেতে দিলে না।
—-মেঘ;;এইগুলা বেশি খেলে তোমার পেটে সমস্যা হবে।আর তোমার সমস্যা হলে বেবি ও সমস্যা হবে বুঝলে আমার পিচ্চি বউ।আর কোন কথা না এখন ঘুমিয়ে পরো।
মেঘ বৃষ্টির ঠোঁটে চুমু একেঁ দিয়ে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।কিছুক্ষনের মধ্যে দুইজনেই ঘুমিয়ে যায়।মাঝ রাতেই বৃষ্টির হঠ্যাৎ করে ঘুম ভেঙে যায়। বৃষ্টি তাকিয়ে দেখে ঘড়িতে রাত আড়াটা বাজে।বৃষ্টি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সে মেঘের বুকের মাঝে ঘুমিয়ে আছে।বৃষ্টি কিছুটা উচু হয়ে মেঘের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।ঘুমন্ত মেঘ কে কতই না সুন্দর লাগলে।সামনের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।বৃষ্টি তার হাত দিয়ে আলতো ভাবে মেঘের চুল গুলোকে কপাল থেকে সরিয়ে দেয়।বৃষ্টি দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে মেঘের নাকের সাথে নিজের নাক হালকা ঘষা দেয়।বৃষ্টি মুচকি হেসে মেঘের গোলাপি ঠোঁটে নিজের ঠোটঁ ছুয়ে দিতেই মেঘ হালকা নড়েচড়ে উঠে বৃষ্টির কোমড় টা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তা দেখে বৃষ্টির মুখ টা কালো করে ফেলে তার লেগেছে প্রচুর ক্ষিধে। মেঘ কে ডাক দিবে কি দিবেনা তা ভেবে বৃষ্টি যেনো দোটানার মধ্যে পরে যায়।বৃষ্টি হালকা করে তার কোমড় থেকে মেঘের হাত সরাতেই মেঘের আচমকাই ঘুম ভেঙে যায়।

মেঘ;;কি হয়েছে জান,তোমার কি খারাপ লাগছে।

বৃষ্টি;;না মানে আসলে আমার না প্রচুর ক্ষিধে পেয়েছে।

মেঘ;;ও আচ্ছা তুমি বসো আমি খাবার আনছি বলেই মেঘ নিচে চলে যায়।কিচেনে গিয়ে দেখে নীলা খাবার গরম করছে।মেঘ কে দেখেই।

নীলা;;আরে জিজু আপনি এইখানে কিছু কি লাগবে?

মেঘ;;হুমম লাগবে।কিন্তুু তুমি এইখানে কি করছো?

নীলা;;আকাশের জন্য খাবার গরম করছি তাই ভাবলাম বৃষ্টির জন্য করে দেয়।জিজু আপনি কি বৃষ্টির জন্য খাবার নিতে এসেছেন।

মেঘ;;হুমম,এতো দেরি কেনো আকাশের আর আমাকেও তো ডাকে নি।

নীলা;;বললো যে অফিসের কিছু কাজ করতে করতে দেরি হয়ে গেছে।

মেঘ;;ও আচ্ছা।খাবার গুলো দেও আমি নিয়ে যাচ্ছি।নীলার কাছ থেকে মেঘ খাবার নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।মেঘের হাতে তিন ধরনের প্লেট একটাতে ভাত শবজি আরেক টাতে খিচুড়ি আরেক টাতে বিভিন্ন রকমের ফল আর জুস।বৃষ্টির সামনে এসে এই নেও এইবার খেয়ে নেও।
বৃষ্টি তুমি কেনো কষ্ট করে নিয়ে এলে কাউকে তো বললেই হতো।
মেঘ আমি কিছুই করিনি নীলা কিচেনে ছিলো আকাশের জন্য খাবার রেডি করছে তাই আমি তোমার কথা বলাতে খাবার টা দিয়ে দিলো।এখন এতো বকবক না করে খাবারটা খেয়ে নেও।বৃষ্টি এক এক করে খাবার খেতে শুরু করে আর মেঘ সোফায় গিয়ে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসে ।বৃষ্টি তো চোখের পলকেই খাবার সব খেয়ে সাবার করেছে।মেঘ ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে দেখে যে বৃষ্টির সব প্লেট খালি।

মেঘ;;জানপাখি!

বৃষ্টি;;হুম বলো!

মেঘ;;পেট কি ভরেছে না কি আরও খাবার এনে দিবো।

বৃষ্টি;;আরে না আমার পেট ভরে গেছে।আর খেতে হবে না।
মেঘ উঠে এসে প্লেট গুলো নিয়ে কিচেনে রেখে আছে।চল এইবার ঘুমাই আমরা?
—বৃষ্টি এতো তারাতারি ঘুমাবো মানে?

মেঘ কি বললে তুমি এতো তারাতারি মানে কয়টা বাজে সেই খেয়াল আছে জিদ না করে ঘুমিয়ে পরো বলেই বৃষ্টিকে নিজের কাছে টেনে এনে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।বৃষ্টি মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে কখন যে বৃষ্টি ঘুমিয়ে গেলে সেই খেয়াল নেই।
মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জরিয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।

#চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here