তুমি শুধু আমার – পর্ব ২৫

0
605

#তুমি শুধু আমার
#লেখিকাঃমোনালিসা
#পর্বঃ২৫

যে ভাবেই হক বৃষ্টিকে আমার কাছে আনতেই হবে।তোকে আমি ছেড়ে দেবো না মেঘ।শুধু একটা সুযোগ বলেই শফিক হাসতে থাকে।



গাড়ি থেকে নেমে তারা বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
সবাই হলরুমে বসা ছিলো মেঘকে দেখেই নীলা সামনে এসে দাড়ায়।

নীলা;;ডক্টর কি বলেছে জিজু বৃষ্টি ঠিক আছে তো?

মেঘ;;হ্যাঁ সব কিছুই ঠিক আছে চিন্তা করার কিছুই নেই।

এলিনা;;চিন্তা করতে হয় না দাদু ভাই।চিন্তা এমনিতেই চলে আসে।

মেঘ বৃষ্টিকে ধরে সোফায় বসিয়ে নীলা কে খাবার আনতে বলে।নীলা কিচেনে গিয়ে খাবার এনে মেঘের সামনে রাখে।মেঘ অনেক যন্তসহ কারে বৃষ্টিকে খাবার গুলা খাইয়ে দেয়।বৃষ্টি ও কিছু না বলে চুপচাপ সব খাবার খেয়ে সাভার করে।

—সবার যেনো দিনটা আনন্দে কেটে যায়।

রাতে সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসে কথা বলছে।সেই সময় আকাশ,,মেঘ কাল কিন্তুু তোকে আমার সাথে অফিসে যেতে হবে কিছু কাজ পরে গেছে তুই না গেলে হবে না।

মেঘ;;আচ্ছা ঠিক আছে। সবাই রাতের খাবার খেয়ে যে যার মতো রুমে চলে যায়।

—সকালে ঘুম থেকে উঠে মেঘের প্রথম কাজ হলো বৃষ্টি কে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ করিয়ে নিজের হাতে নাস্তা খাওয়ানো।কারন বৃষ্টির প্রেগ্ন্যাসির এখন সাত মাস চলে।কখন সবাই যেনো বৃষ্টির প্রতি আরও যন্তশীল।বৃষ্টিকে যেনো আরও বেশি করে সবাই চোখে চোখে রাখে।
বৃষ্টি বিছানায় বসে ছিলো। সেই সময় মেঘ ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে নিজে রেডি হয়ে বৃষ্টিকে আয়নার সামনে দাড়িয়ে তার নিজ হাতে রেডি করিয়ে দেয়।কারন বৃষ্টি ইদানীং হাটতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়।পেট টা বেশ বড়। আবার তার মাঝে হালকা হালকা ব্যাথা ও আছে।মাথার চুল থেকে যেনো পা পর্যন্ত পরির্বতন হয়েছে।মেঘ আয়নার মাঝে তাকিয়ে দেখে তার জানপাখি আর আগের মতো নেই বেশ গোলুমোলু দেখা যাচ্ছে।গালের মাংস বেড়ে গেছে।দুধে আলতা গায়ের রং।ঘন চুল গুলো অনেক বড় হয়েছে।কোমড় ছাড়িয়ে যেনো আরও বড় হয়ে গেছে।মেঘ যেনো সব কিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।আজ বৃষ্টি লাল-সবুজ রঙের আর বিষেশ করে গোলাপী রঙের জামা বেশি ভাগ পরিয়ে দেয়।মেঘের কাছে না কি বৃষ্টিকে এইভাবেই দেখতে ভালো লাগে।এক মনে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ।

বৃষ্টি;;এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?আমাকে এর আগে কখনো দেখনি?

মেঘ;;দেখছি তো? তবে এতো টাও গোলুমোলু না।আচ্ছা শোন আমি এখন আকাশ কে নিয়ে একটু অফিসে যাবো তুমি কিন্তুু সময় মতো খাবার গুলা খেয়ে নেবে।যাওয়ার সময় আমি নীলা কে বলে যাবো কেমন।চল এইবার তোমাকে হলরুমে দিয়ে আমি বের হবো।বৃষ্টি কে আস্তে করে ধরে হল রুমে এনে সোফায় বসিয়ে দেয়।বৃষ্টি ও বসতে বেস কষ্ট হয়।

মেঘ;;আজকে তো কাউকে দেখছি না কি ব্যাপার।

নীলা;;জিজু, দাদি আর আন্টি তারা দুইজন মিলে বেবির জন্য সপিং করতে গেছে। চলে আসবে একটু পরেই।

মেঘ;;ওওওও আচ্ছা।

আকাশ;;আচ্ছা নীলা শোন। তোমরা দুইজন সাবধানে থেকো কেমন?

নীলা;;আচ্ছা ঠিক আছে?

মেঘ বৃষ্টির কপালে চুমু দিয়ে আকাশ কে নিয়ে বের হওয়ার আগের গার্ডদের কড়া ভাবে পাহারা দিতে বলে গাড়িতে বসে চলে যায়।

—বৃষ্টির যেনো সারাদিন নীলা সাথে বেবি কে নিয়ে কথা বলে সময় টা পার করে দেয়।নীলা ও সময় মতো খাবার এনে বৃষ্টিকে নিজ হাতে খাইতে দেয় আর মেঘ একটু একটু নীলা কে ফোন করে বৃষ্টির ব্যাপারে খবর নেয়।

—আর ওইদিকে যেনো শফিক কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।সে মেঘের কাছে কিছুতেই হেরে যেতে পারে না।শফিক বাকাঁ হেসে মেঘ কে কল করে।

মেঘ তার কেবিনে বসে কিছু ফাইল চেক করছে আর তার সাথে আকাশও কিছু ফাইল চেক করছে।সেই সময় মেঘের ফোনে কল আছে।মেঘ নাম টা না দেখে ফোন টা রিসিভ করাতে ওপাশ থেকে শফিকের কন্ঠ শুনে রেগে যায়।

শফিক;;কিরে মেঘ আমাকে চিনতে পেরেছিস?

মেঘ;;কেনো কল করেিস। কি চাই তোর??

শফিক;;বৃষ্টিকে চাই।জানিতো মেঘ যখন তোর বউ কে দেখলাম আমি তো প্রথম দেখাতে প্রেমে পরে গেছি।কিন্তুু এখন আর কি করার তুই তো সেই সুন্দর পরী টা কে জোর করে বিয়ে করে নিলি।

মেঘ;;যেনো সব কিছু শুনছে আর রাগে ফুসছে।চেহারার মধ্যে যেনো হিংস্রতা ফুটে উঠেছে, কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে।

শফিক;;আমি জানি তুই এখন আমার কথা শুনে প্রচুর রাগ হচ্ছে।আমাকে সামনে পেলে তুই মেরে ফেলবি।কিন্তুু আমি তোর হাতে না তুই আমার হাতে মরবি।শোন মেঘ তুই কি মনে করেছি তোর বউয়ের উপর আমি নজর রাখি না তুই যদি এইটা ভেবে থাকিস তাহলে ভুল, আমি তোর বউয়ের উপর সব সময় নজর রাখি আর আমি এইটাও জানি যে বাসায় এখন বৃষ্টি আর নীলা কেউ নেই বলেই শফিক কল কেটে দেয়।

—-মেঘ আর একমূহত দেরি না করে অফিস থেকে বের হয়ে দ্রুত গাড়িতে গিয়ে বসে।



বৃষ্টি সোফায় বসা ছিলো।তার আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না।নীলা শুন আমাকে একটু বাহিরে নিয়ে যাবি।আমার ভিষন খারাপ লাগছে।

নীলা,আচ্ছা ঠিক আছে।ধর দেখি আমার হাত টা।বৃষ্টি নীলার হাত ধরে আরেক হাত নিজের পেটে রেখে আস্তে করে উঠে দাড়ায়।নীলা বৃষ্টি কে খুব সাবধানে বাগানে নিয়ে এসে দোলনায় টায় বসিয়ে দেয়।
তুই এইখানে চুপচাপ বসে থাক আমি এখনি আসছি।

বৃষ্টি;;কৈই যাস তুই??

নীলা;;তুই চুপ করে বসে থাক আমি আসছি বলেই নীলা এক দৌড়ে কিচেনে চলে যায়।কিচেন থেকে বৃষ্টির জন্য গরম গরম ধোয়া উঠা একবাটি খিচুড়ি নিয়ে এসে বৃষ্টি পাশে বসে।

বৃষ্টি;;এই তুই কি রে একটু আগেই তো এতো গুলা খাবার খেলাম আর এখন আবার খিচুড়ি খেতে হবে।আমি এখন পারবো না।

-নীলা,একদম না করতে পারবি না,তা না হলে আমি কিন্তুু জিজু কে বলে দিবো।
-কথায় কথায় তুই মেঘের ভয় কেনো দেখাস বলেই বৃষ্টি খিচুড়ি খেতে থাকে।বৃষ্টি খিচুড়ি খেতে খেতে বলে।আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস দেখা যখন তোর আর ভাইয়ার বিয়ে হবে আর যখন তুই মা হবি তখন আমি এইভাবে ভাইয়ার ভয় দেখিয়ে তোকে খাওয়াবো।
-আচ্ছা ঠিক আছে ভয় দেখাইস বলেই দুইজনে হেসে দেয়।

আর এই দিকে মেঘ হাওয়ার গতিতে গাড়ি চালিয়ে বাড়ির সামনে এসে পরে।সব গার্ড টা মেঘ কে দেখে মাথা নিচু করে ফেলে।আর দেরি না করে মেঘ দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পরে।হলরুমে গিয়ে দেখে কেউ নেই।মেঘের যেনো এখন ভিষন ভয় করতে লাগলো নিজের রুমে গিয়ে দেখে সেই নীলা বৃষ্টি দুইজনের একজন ও নেয়।
মেঘ বৃষ্টি বলে চিৎকার করে উঠে।দৌড়ে মেঘ তার দাদির রুমে গিয়ে দেখে যে দাদির রুম ফাকাঁ।যেই না মেঘ তার দাদির রুম থেকে বের হবে তখন মেঘের চোখ পরে বাগানের দিকে।দেখে যে নীলা আর বৃষ্টি বাগানের দোলনায় বসে বসে কথা বলছে।মেঘ এইটা দেখে যেনো সে সস্তির একটা নিশ্বাস ছাড়ে।এক মিনিটও দেরি না করে দাদির রুম থেকে দৌড়ে মেঘ বাগানের দিকে চলে যায়।বৃষ্টি দিকে দৌড়ে গিয়ে মেঘ তার জানপাখি কে জড়িয়ে ধরে।
অচমকা এমন হওয়াতে নীলা আর বৃষ্টি দুইজনেই যেনো অনেক টাই অবাক হয়ে যায়।

বৃষ্টি;;কি হয়েছে মেঘ।তুমি এমন করছো কোনো??

মেঘ;;বৃষ্টিকে ছেরে তার কপালে, চোখে, মুখে, ঠোটে পাগলের মতো চুমু দিতে থাকে।তুমি জানো আমি কতো টা ভয় পেয়ে গেছি তোমাকে বাসায় না দেখে।

নীলা;;না মানে,, আসলে জিজু বৃষ্টির হলরুমে ভালো লাগছিনা তাই বৃষ্টিকে আমি বাগানে নিয়ে এসে দোলনা টায় বসিয়ে দেই।।কিন্তুু হঠ্যাৎ কি হলো জিজু আপনার যে এইভাবে আপনি অফিস থেকে চলে এলেন।

মেঘ;;তেমন কিছু না। ভালো লাগছিলো না তাই চলে এসেছি।আর যখন বাসায় আসলাম তখন তোমাদের না দেখে ভিষন ভয় পেয়ে গেছি। কথার মাঝেই আবার মেঘ ফোনে কল আসে।

মেঘ একটু দূরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।

শফিক;;কিরে ভয় পেয়ে গেলি। তুই কি ভেবে ছিলি তোকে বলেই আমি তোর বৃষ্টি কে তুলে নিয়ে যাবো। এইটা তো শুধু মাএ ট্রেইলার ছিলো তোকে ভয় দেখানোর।আমি যানি তোর প্রান ভোমড়ার দিকে হাত বারালে তোর তো একটু হলেই আঘাত লাগবে।

মেঘ;;তোমার মরার পাখনা গজিয়েছে তাই না।মানুষের মৃত্যু কখন আসে জানিস।যখন সে মনে করে তার নিজের হাতে মুঠোই সব পেয়ে গেছে।আমার বৃষ্টির যদি কোন ক্ষতি হয় বা তুই ক্ষতি করার চেষ্টা করিস তাহলে তোকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

শফিক;;রিলেক্স মেঘ এই সময় এতো টাও হাইপার হওয়ার দরকার নেই।তোর মনে ভয় ঢুকানোর জন্য আমি এইকাজ টা করেছি।আমি সত্যি আজ তো কান্ড দেখে অবাক হচ্ছি।যে মেঘ আহমেদ চৌধুরী কাউকে মারতে এবারের জায়গায় দুইবার ভাবে না আর আজ সেই মেঘ আহমেদ চৌধুরী সামান্য একটা ফোন কলে এমন কথন শুনে সব কিছু ছেড়ে চলে এলি।

মেঘ;;বাকাঁ হেসে।মানুষ মারতে কখনই এই মেঘ ভয় পায়না।যদি হয় তোর মতো জানোয়ার।তোর মতো জানোয়ার কে মারতেও আমার এক মিনিট ও লাগবে না।তোর শূক্রু তা আমার সাথে আমার পরিবারের সাথে না। তাই বলছি আমার পরিবার থেকে দূরে থাকবি বলেই মেঘ কল টা কেটে দেয়।

—আমি দেখে নিবো মেঘ, তোকে আমি দেখে নিবো বলেই শফিক কিছু গার্ডদের রেডি রাখতে বলে।কাল তোর জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ থাকবে।



মেঘ ফোন টা রেখে বৃষ্টির সামনে গিয়ে দাড়ায়।জানপাখি পাখি চলো এইবার বাসার ভিতরে যাওয়া যাক।
—বৃষ্টি,হ্যাঁ চলো।বাসায় ভিতরে ঢুকেই দেখে হলরুমে দাদি আর কহিনুর দুইজন সোফায় বসে আছে।

কহিনুর;;কিরে কই ছিলা তোরা বাসায় এসে দেখি কেউ নেই।

মেঘ;;না আম্মু তেমন কিছু না বৃষ্টি বাগানে হাটতেছিলো

কহিনুর;;তুমি কখন এলে?

মেঘ;;এইতো আম্মু কিছুক্ষন আগে।

এলিনা;;আয় বৃষ্টি এইখানে এসে দেখ আমরা দুইজন কি কি এনেছি বেবির জন্য।

মেঘ বৃষ্টি সোফায় বসিয়ে দেয়।সেই সময় আকাশ আর রনি আসে।রনি হাতে অনেক গুলা চকলেটের বক্স।মেঘ তো রনি হাতে এইসব দেখে বৃষ্টির দিকে মেঘ তাকিয়ে আছে।

রনি গিয়ে বৃষ্টির হাতে চকলেটের বক্স টা ধরিয়ে দেয়।

আকাশ;;বউমনি এইবার তুমি খুশি তো।তুমি যা বলেছো তাই এনেছি।

–মেঘ,তাইতো বলি এতো চকলেট কোথা থেকে আসে।আচ্ছা তোদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।তোমরা এইখানে বসে কথা বলো আমি আসছি।মেঘ, আকাশ,রনি তিনজনেই ছাদে চলে যায়।
মেঘ তখন এক এক করে সব বলতে থাকে।দুইজনেই সব কথা শুনে অনেকটাই রেগে যায়।

আকাশ;;এই শফিক কে আর ছাড়া যাবে না।আমাদের আরও সাবধানে থাকতে হবে।
—মেঘ,আচ্ছা শোন আমি এখন থেকে আর অফিসে যাবো না।তোরা দুইজন সব সামলে নিস কেমন।
রনি,কিন্তুু কাল তো কিছু কাইন্ট আসবে আপনি না থাকলে তো ডিলটা সাইন করা হবে না।পেপারে আপনার সাইন লাগবে।
মেঘ রনির কথা শুনে দুটানায় পরে যায়।
আকাশ মেঘের কাদে হাত রেখে বলে,তুই শুধু অফিসে গিয়ে পেপার গুলো সাইন করে দিয়ে চলে আসবি বাকি না আমি দেখে নিবো।চিন্তা করিস না কিছু হবে না।আর কিছুক্ষন কথা বলে নিচে চলে যায়।

#চলবে,,,,,

(আজকে পর্ব কি লিখেছি জানি না।কাল কি হবে তাও জানি না।সবার মতামত জানতে চাই।সবাই কমেন্টে জানাবের আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here