#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ৪
সিরাজুল ইসলাম বদলে দিয়ে।সফিক ইসলাম দেওয়া হলো।এক আপুর অনুরোধে।
আজানের ধ্বনিতে মুখরিত চারিপাশ। মুয়াজ্জিন যখন বললো ঘুমের থেকে নামাজ উত্তম।তখন বাড়ির গেটের কাছে গাড়িটি এসে থামলো। একে একে গাড়ি থেকে নেমে এলো সবাই। ধূসর, সফিক ইসলাম, ভোর।গাড়ি থেকে নেমেই সফিক ইসলাম ভোরের হাতটা খুব শক্ত করে ধরে বললো– অপূর্ন বাড়িটা আজ পূর্ণ হবে।অন্ধকারে ছেয়ে থাকা বাড়িটা আজ আলোকিত হবে।আমার বাড়িতে তোমায় স্বাগতম। ভোর যেন কয়েক দফা অবাক হলো।এতো ভালো মানুষ আছে বুঝি।নিজের অবাকের সিমানা আরো বড় হলো যখন দেখলো।ড্রইং রুমে সবাই বসে আছে।কেউ সোফায় কেউ বা চেয়ারে।কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ ঘুমে বিভোর ।বিষয়টা ভোরের কাছে একটু আশ্চর্য লাগলো।তাঁরা যখন সদর দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো তখন কোথা থেকেই একজন বৃদ্ধ মহিলা এসে বললেন।
এই এই কি করছিস সফিক। এভাবে নতুন বউকে ঘরে আনে কেউ।তোরা আয়। ও ওখানে থাকুক।
বৃদ্ধ মহিলার কথা শুনে সফিক ইসলাম বললেন–মা তোমাদের যা ইচ্ছে তাই করো আমি এখন ঘরে যাচ্ছি।সফিক ইসলাম ঘরের দিকে চলে যেতেই সেই বৃদ্ধ মহিলা এগিয়ে এসে ভোরকে দেখলেন।পা থেকে মাথা অবধি পরক করলেন।তারপর সে তাঁর ঠোঁটের একটি অমায়িক হাসি দিলেন।কি সুন্দর সেই হাসি। বয়সের জন্য মুখের চামড়া গুলো কুঁচকে গেছে।অনেক গুলো দাঁত নেই।তবুও তাঁর সেই হাসি কি সুন্দর। সব থেকে সুন্দর তাঁর গালের টোল।বয়স কালে হয়তো তাঁর দুই গালে টোল পড়তো।যাঁর একটু চিহ্ন এখনো মুখে পড়ে।ইসস বয়স কালে না জানি তাঁকে হাসলে কতটা সুন্দর লাগত।মানুষটা তাঁকে কিভাবে দেখছে।মনে হয় যেন সে খুব চমৎকার একটা জিনিস। যা হঠাৎ করে দেখলেই মানুষ হা করে থাকে ।
ভাইজান তোমার বউ সুন্দর হলে কি হবে আমার মতো কিন্তু গালে টোল পড়ে না।আর আমার মতো হাসতেও পারে না।এবার কি বলবে।বিয়ে তো হয়েই গেছে,নতুন করে তো আর বিয়ে করতে পারবে না।আমাকে তো বলতে।বুড়ি দেখো তোমার থেকেও সুন্দরী রমনীকে বিয়ে করবো।তাঁর কী হলো?
বুড়ি তোমার থেকে কম কিসে?
কমই তো
কোথায় কম
ওই যে টোল
মেশিন দিয়ে বানিয়ে নিবো
ও বাবা গো কি বলে।ওরে আনু শুনছিস তোর ছেলের কথা।
শুনলাম তো আম্মা।এই কথা বলেই আনতা বরন ডালা নিয়ে তাঁর শাশুড়ী সাফিয়া বেগমের হাতে দিলেন।নিন মা ধরুন। এবার বরন করুন।অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছে ওরা।বরন করে ওদের ঘরে পাঠাতে হবে।
বুঝলে আনু ভোর রাতে ভোরকে বরন করছি।বাহিরের পৃথিবীও দেখ তোমার পুত্রবধূকে বরন করছে।কেমন অন্ধকার কাটিয়ে ভোরের আলোয় আলোকিত করছে।বুঝলে আনু এবার আমার তোমার দিন শেষ।ধূসর সাহেব আর ভোর বেগমের দিন শুরু।
কি যে বলেন আম্মা বেচারারা তো লজ্জা পাবে।
ওরা লজ্জা পাবে নাকি তুমি। তিন ছেলে মেয়ের মা হলে এখনো তো সেই বিয়ের প্রথম দিনের মতো লজ্জা পা-ও।
আম্মা কি হচ্ছে।
কি আর হবে।এটাই হবে যেটা আমি ভাবি।
আপনি আবার কি ভাবেন।
এই যে বিয়ের এতো বছরেও আমার ছেলে তোমার লজ্জা ভাঙতে পারেনি।
আম্মা থামুন।ছেলে মেয়ের সামনে কি বলছেন এসব।মুরুব্বি হচ্ছেন আর দিনকে দিন ছোট্ট বাচ্চাদের মতো করছেন।
এদের বউ শাশুড়ীর ঝগড়ার খুনসুটি দেখে হৃদয় ছুঁয়ে গেলো ভোরের।ছোট্ট বেলা থেকে তাঁর দাদি এবং মায়ের নিমপাতার মতো সম্পর্ক দেখেছে।ভোর বোঝার বয়স থেকে এই পর্যন্ত জানতো বউ শাশুড়ীর সম্পর্ক বুঝি দা-কুড়ালের মতো।কিন্তু তাঁর এই ভাবনাকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিলো সাফিয়া বেগম আর আনতা।তাঁদের এই খুনসুটি দেখলে কে বলবে তাঁরা শাশুড়ী বউমা।মনে হবে দুই মা মেয়ে।না চাইতেও ঠোঁট জোড়া হেঁসে উঠলো।
তোমাদের নতুন বউ এসেছে। চোখ ডলতে ডলতে কথাটা বলে উঠলো মেঘ।যে কিনা ধূসরের ছোট ভাই। তোমাদের এই নতুন বউয়ের চক্করে আমার আজ রাতের শান্তির ঘুমটা হারাম হলো।বলি ভাই বিয়ে তো তুই করেছিস।বাসর করবি তুই।রাত জাগবি তুই ঘুম নষ্ট হবে তোর।সেখানে আমার কেন এমন হলো।তোর জন্য মা আমাকে ঘরেই যেতে দেয়নি।আমি কাল সকালে অনশন করবো।ঘুম নষ্ট করার অনশন।এই অনশনে আমার সাথে থাকবে ছোট চাচি,বৃষ্টি,মেজ চাচ্চু,রুপা আর দাদি।কি সবাই রাজি তো।কথাটা শেষ করতেই সবাই হুরমুর করে বলে উঠলো।
হ্যা হ্যা আমরা সবাই রাজি।
ভোর চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো সবার দিকে।একটু আগেনা দেখলো সবাই ঘুম ছিলো।এরিমধ্যে সবাই জেগে উঠলো।আল্লাহ এরা কি সবাই পাগল ।নাকি অন্য কিছু।ততোক্ষণে ভোরকে বরন করে নিয়েছে সাফিয়া বেগম।আনতা ভোরের হাত ধরে ঘরের ভেতরে নিয়ে এলেন।সোফায় বসিয়ে দিতেই কোথা থেকে একজন একটি ভরা গ্লাস সামনে ধরে বললো–
নিন ভাবি এই শরবতটা খেয়ে আমাকে রক্ষা করুন।না হলে বড় চাচি আমায় ঘুমাতে দেবে না।বিশ্বাস করুন ভাবি।জীবনে শুধু এই শরবত টুকু বানাতে শিখেছিলাম আর এটাই বানাতে পারি।কিন্তু কে জানতো এটাই আমার জীবনের কাল হবে।সবেমাত্র একটু চোখের পাতাটা লেগেছিলো।তখনই হুরমুর করে ঘরে ঢুকে আপনার শাশুড়ী মানে আমার বড় চাচি। বললেন–
রুপা ধূসর বিয়ে করে বউ নিয়ে আসছে।মেয়েটা এতো দূর থেকে আসবে অনেক ক্লান্ত থাকবে। তুই তোর হাতের সেই মাজদা’র শরবতটা বানিয়ে মেয়েটাকে খাওয়াবি।ইসস কতটা কষ্ট হবে মেয়েটার এতটা জার্নি করে আসতে।ব্যস আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছে। কত বার বললাম।ওরা এলে আমায় ডেকে দিও।কিন্তু না আমাকে জেগে থাকতেই হবে।আপনারা কখন এসে পরবেন যদি ঝামেলার জন্য আমায় ডাকতে না পারে।বুঝতে পারছেন কতটা কষ্টে আছি।প্লিজ এই অসহায় ননদীর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন।বেশি খেয়াল রাখতে হবে না।ওই মাঝে মাঝে ভাইয়ের থেকে কিছু শপিং করার জন্য টাকা দিলেই হবে।
ভোর রুপার হাত থেকে শরবত নিয়ে ভাবলো।এই শীতে কেউ শরবত খায়।কিন্তু কি করার এতো কষ্ট করে বানিয়ে এনেছে একটু তো খেতেই হবে।তাই গ্লাসটা নিয়ে মুখে ধরতেই।এই বাড়ির ছোট বউ মানে সুইটি বলে উঠলো।
ভাগ্যিস ধূসরের বউ ভোররাতে এসেছে। নাহলে ভাবি ঠিক আমার মেকআপ দিয়ে বউকে সুন্দর করে সাজাতে বলতো।আমি তো সাজানো ছাড়া আর কিছুই পারিনা।আর এগুলোর ভাগ আমি কাউকে দিবো না।
কথাটা শুনে ভোর যে টুকু শরবত মুখে নিয়েছিলো তা বিষম খেয়ে বেরিয়ে এলো।তখনই আনতা ভোরের পিঠ থাপড়াতে থাপড়াতে বললো–
এই তোরা থামবি এসব কেমন কথা হচ্ছে। মেঘ ঘরে যা।সুইটি আর রুপা তোরাও যা।এরা এই মেয়েকে কয়েক মুহূর্তেই পাগল করে দিয়েছে।
ও এখন আমাদের দোষ হয়ে গেলো আর তুমি যে আমাদের তোমার ছেলের বউয়ের জন্য মাথা নষ্ট করে দিচ্ছিলে তার বেলায়।
মেঘ
গাইস আমি ঘরে যাচ্ছি।সাথে তোমরাও চলো।নাহলে কিন্তু আজ সকালের ব্রেকফাস্ট বন্ধ হয়ে যাবে।আর হ্যা অনশন হবে এটা কিন্তু পাক্কা।
তুই গেলি।
যাচ্ছি তো বকছো কেন।তারপর সবাই যে যাঁর রুমে চলে গেলো।রইলো বলতে।ধূসর, ভোর,আনতা,আর সাফিয়া বেগম।তাঁরাও বেশিক্ষণ থাকলো না একে একে সবাই সবার রুমে চলে গেলো।ভোরকে সাথে করে সাফিয়া বেগম তাঁর ঘরে গেলেন।ধূসর নিজের ঘরে।আর আনতাও শাশুড়ীর সাথে তাঁর রুমে গেলেন।
চলবে,,
গল্পের শুরুতে যদি সব প্রকাশ করি তাহলে কীভাবে হবে বলুন।আর সবাই তাঁর কর্মের শাস্তি পাবে।ধোঁয়াশা যখন আছে সবটা পরিষ্কারও করবো।কাল একজন বললো মেয়ের নামে বাড়ি।কেন ভাই থাকে না।হয়তো আপনি যানেন না।সে যাইহোক ঘটনা মূলক কমেন্ট করুন। লেখার আগ্রহ্য বাড়িয়ে দিন।অনেক অনেক ধন্যবাদ গল্পটাকে এতো ভালোবাসার জন্য। অনেকেই বলছেন পর্ব বড় করে দিতে।বিশ্বাস করুন আমি চাই। কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে উঠে না।আমি সাংসারিক মেয়ে।চারবছরের একটা ছেলে।আটজন ছাত্রছাত্রী।তাঁদের দুই বেলা পড়ানো,সংসার বাকিটা না-হয় নাই বললাম বুঝে নিন।