তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ৫

0
355

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ৫

চারিদিকে আনন্দ ঘিরে আছে।আকাশটা একটু মেঘলা।ক্ষণেক্ষণে হিমশীতল বাতাস বইছে।ঘরের কোণে রাখা শালিকের খাঁচা থেকে মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসছে কথা।বেলকনিতে বেড়ে ওঠা ঝাউগাছটা বাতাসে দুলছে।নাম না জানা কিছু অচেনা ফুল গাছে ফুটেছে হরেকরকম ফুল।অগোছালো চুল গুলো কানে গুঁজে এক মনে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো ভোর। তাঁর নষ্ট মস্তিষ্ক দিশেহারা হয়ে আছে। কোন কারণ ছাড়াই চোখ বেয়ে ঝড়ছে জল।তাঁর হঠাৎ কান্না পাচ্ছে কেন? এটারি কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না ভোর।এই বাড়িতে এসেও যদি কারো মন খারাপ থাকতে পারে।তাহলে তাঁর নিশ্চয়ই মনের রোগ আছে।ভোর, তাঁর কি তাহলে মনের রোগ আছে।হুম আছে তো খুব কঠিন মনের রোগ।যে রোগ হয়তো কখনো সারবে না।

কি দেখছেন।

হঠাৎ ধূসরের কন্ঠে ভোর নিজের চোখের জল আড়াল করে নিলো।তারপর বললো।

আপনার বেলকনি

আচ্ছা,ঘুম থেকে কখন উঠলেন।

আমি ঘুমাইনি

কিহহ

হুম, আপনার মা দাদি চলে যাওয়ার পরে ফ্রেশ হয়ে আমি এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।

এই তিন ঘন্টা আপনি এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

হুম

কি ভাবছিলেন দাঁড়িয়ে

জীবনের হিসেবের খাতাটা মেলাচ্ছিলাম।

তা কি পেলেন

শূন্য

একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধূসর বললো– আচ্ছা। আমি আলমারিতে জায়গা করে দিচ্ছি আপনি আপনার সব কিছু গুছিয়ে রাখুন।

দরকার পরবে না।

কেন?

বললাম তো দরকার পরবে না ।যতদিন থাকবো তাতে আলাদা জায়গার প্রয়োজন পরবে না। আমার সব কিছু আমার লাগেজে থাকবে।

বুঝলাম না

না বুঝলে কি করার।

সে যাইহোক একটা কথা বলি।

বলুন

আফিম কে?

আমার বড় চাচার ছেলে।

আচ্ছা

জানতে চাইবেন না তাঁর বিষয়ে

কি

এটাই, যে তাঁর নাম আমার মুখে কেন এলো। যখন আমি পুরোপুরি হুঁশে ছিলাম না।

না দরকার নেই

পড়ে আফসোস হবে না তো?

আমি আপনার অতীত নিয়ে কখনো ঘাটাঘাটি করবো না।এই বিশ্বাস টুকু করতে পারেন।

হা বিশ্বাস। এই বিশ্বাস নামের শব্দটা আমার সামনে কখনো উচ্চারণ করবেন না।আমার জীবনের সব থেকে বড় ঘৃণার শব্দ হচ্ছে বিশ্বাস।

সবাই যে এক এমনটা কিন্তু না।

ঠিক বলেছেন সবাই এক না।কিন্তু সব থেকে আশ্চর্য কি জানেন।যাঁরা বলে না আমি তাঁদের মতো না।আসলে তাঁরা তাঁদের থেকেও নিকৃষ্ট। তাই এই শব্দ গুলো আমার ভালোলাগে না।বিশ্বাস, ভরসা,ভালোবাসা সব হচ্ছে মিথ্যা।যা মানুষের চোখে একটা কালো চশমার মতো লেপ্টে থাকে।সময় শেষে সেই চশমা ভেঙে গুঁড়িয়ে মাটিতে হামাগুড়ি খায়।

আজ এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।আর এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর কখনোই আমি আপনাকে দিবো না।একদিন আসবে যেদিন সব প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজেই পাবেন।

সময়ের অজুহাত দেখাচ্ছেন।

না

তাহলে?

কিছু না। চলুন নিচে সবাই আপনার অপেক্ষায় আছে।

আমি এখন নিচে যাবো না।আপনি যান।আমি আরো কিছু সময় একা থাকতে চাই।

হুম।

ধূসর চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ভোর বললো।

কখনো কাউকে ভালোবেসেছেন ধূসর?

ধূসর থমকে দাঁড়ালো। পিছন ফিরে তাকিয়ে রইলো ভোর এরপর কি বলে তা শোনার জন্য।

আমি বেসেছি।আফিম ভাইয়াকে।খুব ভালোবেসেছিলাম।সে-ও বেসেছিলো।কিন্তু আমার মতো করে না।কারণ যদি সে আমার মতো করে ভালোবাসত তাহলে সেদিন সে বিয়ে করতে পারতো না ইলমা আপুকে।আমি ছোট থেকেই আমার পরিবার থেকে দূরে ছিলাম।কখনো সবার সাথে খাবার খাওয়া, খেলা কিনবা স্কুলে যাওয়া কোন কিছুই হয়নি।আমি সব সময় আলাদা মানুষ হয়েছি আমার পরিবার থেকে। একমাত্র আমার মা ছাড়া কেউ আমার সাথে কথা বলতো না।আমার মা ছিলো আমার বাবা-মা।মায়ের কাছে হাজারবার জানতে চেয়েছি।আমি কেন আমার পরিবারের থেকে দূরে থাকি।কেন আফিম ভাইয়া, সাবু ভাইয়া,ময়না, রিনার মতো সবার থেকে ভালোবাসা পাই না।কিন্তু উত্তরে মা সব সময় চুপই থাকতো।আস্তে আস্তে বড় হলাম এবং বুঝলাম।আমি আর আমার মা এই পরিবারারে একটা উটকো ঝামেলা।কেন এই ঝামেলা হলাম তা মা কখনোই বলেনি।সকাল থেকে দাদির, বড় চাচির, ফুপিদের অত্যাচার শুরু হতো রাতে শেষ।আমার মা’কে কখনো দেখেনি উচ্চস্বরে কথা বলতে।আমার মায়ের সয্য সিমা এতো বড়ছিলো যে তা অতিক্রম করে কখনোই আমার মা কথা বলেনি।আর আমি যখন একটু প্রতিবাদ করতে চাইতাম।মা প্রতিবার আমায় আঁটকে দিত।মা খুব ভয় পেত।এমন কিছু নিয়ে সে ভয় পেত যা সে চাইতো না আমি জানি।আমি বহুবার জানতে চেয়েছি কেন সে সব অত্যাচার মেনে নিয়ে এই বাড়িতে আছে কিন্তু মা সব সময়ের মতো তখনো চুপ থাকতো।ইন্টার পরীক্ষা। যাতায়াতের জন্য টাকা প্রয়োজন। বাবা-র কাছে চাইলেই বাবা না করে দিলো।উপায় না পেয়ে মা আফিম ভাইয়াকে বললো সে যেন তাঁর বাইকে করে আমায় পৌঁছে দেয়।সে কিছু ভেবে পরে রাজি হয়ে যায়।পাড়ার মোড় থেকে প্রতিদিন আমায় নিয়ে যেত। আবার ওই মোড়েই আমায় নামিয়ে দিত।তখন থেকে আফিম ভাইয়ার সাথে আমি স্বাভাবিক হতে রইলাম।আস্তে আস্তে আমার কিশোরী মন তাঁকে ভালোবাসতে রইলো।শুধু আমার মন নয় ততোদিনে আফিম ভাইয়ের চোখেও আমি তাঁর প্রেমিকা হয়ে উঠলাম।গভীর হতে রইলো আমাদের ভালোবাসা। মাস শেষে বছরও শেষ হলো আমাদের ভালোবাসার।তাই আমাদের প্রেমের কথাও জানাজানি হয়ে গেলো বাড়িতে।সেদিন বড় মা আমায় অনেক মেরেছিলো।এতো মেরেছিলো যে আমি এক সপ্তাহ বিছানা থেকে উঠতে পারিনি।মা সেদিন বাড়িতে ছিলো না।তাঁরা সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এমনটা করলো।মা ফিরে যখন আমার এমন অবস্থা দেখে।সেদিন মা পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে।সেদিন প্রথম আমি আমার মা’কে প্রতিবাদ করতে দেখেছি।দেখেছিলাম মায়ের রক্তের মতো লাল হওয়া চোখ।মায়ের সেই কঠিন কঠিন কথা শুনে পুরো বাড়ি থমথমে পরিবেশে পরিনত হলো। সেদিনই জানলাম এই বাড়ির অর্ধেক সম্পদের মালিক আমি।আর সবাই যে বাড়িতে থাকে।সেটা আমার নামে রেজিস্ট্রার করা।কেউ যদি আমার দিকে চোখ তুলে তাকায় তাঁর চোখ মা তুলে দিবে।পুরো বাড়ি থরথর করে কেঁপেছিলো মায়ের গর্জন শুনে।এমন কি আমার দাদিও কেঁপেছিলি ভয়ে।সেদিন খুব হাল্কা লেগেছিলো। যাক অবশেষে আমার মা প্রতিবাদ করতে পেরেছে। কিন্তু সেই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।সেদিন রাতেই বড় মা তাঁর ভাইয়ের মেয়ের সাথে আফিম ভাইয়ের বিয়ে করিয়ে দেয়।কথাটা শুনামাত্র মনে হয়েছিলো আমার কণ্ঠনালী বুঝি নষ্ট হয়ে গেছে। কষ্ট গুলো বুঝি দলা পাকিয়ে আমার কণ্ঠনালীতে জমা হয়েছে তাই আমার কথা আঁটকে গেছে। চিৎকার করে সেদিন আফিম ভাইয়াকে বলেছিলাম।কোথায় তোমার ভালোবাসা। কি হলো তোমার দেওয়া কথা।তুমি তো বলেছিলো তুমি সবার মতো হবে না।তুমি কখনো ছেড়ে যাবে না।বলেছিলে বিশ্বাস করতে পারিস আমায়।বলেছিলে ছোট্ট একটা কুঁড়েঘর বাঁধবে তুমি আমায় নিয়ে। উত্তরে তিনি বললেন।চাইলেও সব আশা পূর্ণ হয় না।ইসস তাইতো সব চাওয়া চাইলেও পূর্ণ হয় না।তবুও আমি তাঁর পা জড়িয়ে ধরে বললাম।দয়া করো আমায়।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না বিশ্বাস করো এক সেকেন্ডও না।আমাকে তোমার দাসী করে রেখো কিন্তু ছেড়ে যেও না।কিন্তু সেদিন সে আমায় তাঁর পা দিয়ে লাথি মেরে বলেছিলো।সবই অভিনয়।আর আমি এখনো বেঁচে আছি খুব ভালোভাবে বেঁচে আছি।আসলে আমাদের মুখের জবান সত্যি না।তাই তো আল্লাহ আমাদের এতো পরীক্ষা নেয়।আল্লাহ বলেছেন আমার থেকে তুমি যাকেই বেশি ভাকোবাসবে আমি তাঁকে তোমার থেকে কেঁড়ে নিবো।তাই তো মা আফিম ভাইয়া সবাই আমাকে ছেড়ে গেছে।

ভোর সব সকালের সূচনা অন্ধকার দিয়ে নয়।কিছু সকাল আলো দিয়েও সূচনা হয়।সব সকালে ঝড়,বৃষ্টি বজ্রপাত দিয়ে শুরু হয় না।কিছু সকাল সূর্যের মায়াবী আলো দিয়েও হয়।যা গেছে তা চলে গেছে। যা আসবে তা যে খারাপই আসবে এটা কি করে বুঝলেন।একবারও বলিনি আমি ভালো।আমি কেমন সেটার গ্যারান্টি একদিন আপনি দিয়েন নাহয়।এখন চলুন।

ভোর এবার একটু বেশিই অবাক হলো।মানুষটা এতো কথা শুনে তাঁকে কি বললো।

কি হলো চলুন

ভোর আর কিছু বললো না।তাই সে ধূসরের সাথে বেলকনি থেকে বেড়িয়ে ঘরের বাহিরে চলে এলো।কিন্তু যখন ওরা সিঁড়ির কাছে এলো দুজনেই খুব অবাক হলো।এমনটা হয়তো ভোর কিনবা ধূসর কেউ ভাবেনি।

চলবে,,

ঘটনা মূলক কমেন্ট করুন। লেখার আগ্রহ্য যেন বেড়ে যায়।প্লিজ প্লিজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here