তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ৬

0
357

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ৬

আমাদের দাবী মানতে হবে
মানতে হবে,মানতে হবে।
দেশের বাড়ি যেতে হবে
যেতে হবে, যেতে হবে।
নতুন ভাবি সাথে যাবে
সাথে যাবে,সাথে যাবে।
এই অনশন চলতে থাকবে
চলতে থাকবে,চলতে থাকবে।
আমাদের দাবী মানতে হবে
মানতে হবে,মানতে হবে।

পুরো ড্রইং রুম জুড়ে সবাই বসে অনশন পালন করছে।ভোর,ধূসর তো অবাক।এরা কি পাগল হলো নাকি।ধূসর নিচে নেমে তাঁর মা’কে বললো।

কি হচ্ছে মা এগুলো

দেখছিস না কি হচ্ছে

ওদের তুমি শিখিয়ে দিয়েছো।এটা তোমার বুদ্ধি তা আমি ভালোই বুঝতে পারছি।

যদি শিখিয়ে দিয়ে থাকি বেশ করেছি।

ভালো করেছো নাকি খারাপ তা আব্বু এলেই বুঝবে।

এই ভয় দেখাচ্ছিস

না

আগে আগে দেখো হোতাহে ক্যা

মা

আনতা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রান্না করে চলে গেলো।ধূসর নিজের চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চাইলেই নিজে উঁহু করে উঠলো। কার রাক কার উপর ছাড়ছে।তাই সে সবার সামনে গিয়ে বললো–

কি হচ্ছে

কেন দেখছিস না অনশন হচ্ছে (মেঘ)

কোন অপরাধের অনশন

রাতে ঘুম নষ্ট করার অপরাধে

সেটা তো মা করেছে,আমাকে আর আব্বুকে কেন টানছিস।

কে টানছে। তুই গেলে যাবি না গেলে যাবি না।তোকে আমরা বলেছি একবারও যেতে হবে।

তাহলে নতুন ভাবি নতুন ভাবি করছিস কেন।

ও মা বলে কি।আমরা তো নতুন ভাবির কথা বলেছি তোর কথা বলেছি।

আমার বউ যাবে না

সেটা তুই না ভাবি ঠিক করবে।

ভাবি তুমি যাবে না।

ভোর খুব মনোযোগ সহকারে দুই ভাইয়ের ঝগড়া দেখছিলো।তাই হঠাৎ মেঘের প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো।তাই দেখে বৃষ্টি বসা থেকে উঠে এসে ভোরকে জড়িয়ে ধরে বললো।

আমি জানি, ভাবি আমাদের পক্ষে। ভাবি যাবে। কি তাই না ভাবি।

ভোর কি উত্তর দিবে তা যেন ভেবে পাচ্ছে না।তাই সে কোন রকম মাথা দুলিয়ে বললো হু

তখনই সবাই হুররেএ বলে চিৎকার করে উঠলো।বৃষ্টি এবং রুপা ভোরকে ধরে বললো।

একদম মন খারাপ করে থাকবে না।আমরা সবাই তোমার বোন।তাই মন খারাপের কোন চান্স নেই।

ভোর ওদের কথা শুনে হেঁসে দিলো।তখনই এই বাড়ির ছোট ছেলে ওরফে সফিক ইসলামের ছোট ভাই বললেন।

বউমা আমি তোমার চাচা শ্বশুর। কিন্তু আমায় তুমি বন্ধু ভাবতে পারো।কথাটা বলেই ভোরের কানে কানে বললো।

তোমার শ্বশুরের মতো আমি ওতো রাগী না।আর আমার চুল দাড়িও পাকেনি তাই নো চাচা শ্বশুর। অনলি ওয়ান বন্ধু। আর হ্যা আমি কিন্তু একটুও তোমার চাচিকে ভয় পাই না।তুমি আবার ওদের মতো ভেবো না আমি তোমার চাচিকে ভয় পাই ।আসলে একটু বেশি ভালোবাসি।

ভোর একটু জোরেই হেঁসে দিলো।যা দেখে বাড়ির প্রতিটা সদস্য খুব খুশি হলো।যাক অবশেষে মেঘের ভেলা ঠোঁট থেকে বিদায় নিয়েছে।

শোন মেয়ে আমি তোমার মেজ চাচি শাশুড়ী। সেটা তো কাল রাতে পরিচয় হয়েছে। এই বাড়িতে যদি কোন মেকাআপের প্রয়োজন হয় সেটা আমার থেকে নিবে।আর হ্যা শোন আমি কিন্তু কাউকে আমার মেকআপের ভাগ দেই না।কিন্তু তোমায় দিবো।কারণ তোমায় আমার হেব্বি লেগেছে।

ভোর চোখ যেন বেড়িয়ে আসতে চাইলো।এই বাড়ির সবাই নির্ঘাত পাগল।এটা বাড়ি নাকি পাগলাগারদ বোঝা মুশকিল।না এটাই বাড়ি।বাড়ির প্রতিটা মানুষ কতটা ভালো।একজনের কষ্টে অন্যজন ব্যথা পায়।জীবনের তেইশ বছর শুধু অশান্তি দেখেছে।কত আফসোস করতো একটা শান্তশিষ্ট বাড়ির।কিন্তু তা ভোরের কপালে ছিলো না।তবে আজ কেন জানি মনে হচ্ছে এমন বাড়ি পাবে বলেই হয়তো নিজ বাড়িটা অশান্তিতে ভরা ছিলো।চোখ দু’টো ছলছল করে উঠলো।কোন রকম চোখটাকে কচলে পানি টুকু আড়াল করলো।এর মাঝে সবাই প্ল্যান করতে শুরু করে দিয়েছে। কে কি করবে।কোথায় কোথায় বেড়াতে যাবে।এসব দেখে ধূসরের খুব রাগ হলো ইসস বিয়ে করলাম একদিনও হয়নি।এখনই বউ ছাড়া থাকা।ইম্পসিবল। তাই সে বললো–

আমার বউ যাবে না

তখন সবাই বললো ভোর যাবে।

সবার সাথে মুখ লাগিয়ে ধূসর একা পারবে না।তাই সে উপরে চলে গেলে তাঁর বাবাকে ডাকতে।তাহলে অন্তত তাঁর দল ভারি হবে।ধূসর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই মেঘ গেয়ে উঠলো।

ভাইয়া তোমার বর আমি যে দেবর।ভাইয়া তোমার বর আমি যে দেবর।
ভেবে দেখো ভাবি কার কত দাবি।

ধূসর চোখ মোটা করে তাকাতেই মেঘ ভোরের পিছনে গিয়ে লুকালো।আর চুপিচুপি বললো।

ভাবি ভাইয়াকে দেশে নিয়ে যাওয়ার সব দায়িত্ব তোমার।

আমার

হ্যা ভাবি একটা সমস্যার জন্য ভাই আর আব্বু এই দুই বছর দেশে যায় না।আমরা চাই সেই ঝামেলাটা মিটে যাক।আর সেটা ওরা দু’জন দেশের বাড়ি না গেলে হবে না।

কিন্তু

প্লিজ ভাবি তোমার একমাত্র দেওয়ের কথাটা রাখো।

আচ্ছা

হুররেএ

তারপর সবাই ঘরে চলে গেলো।ধূসর তাঁর বাবা-র কাছে গিয়েও বেশি সুবিধা করতে পারেনি।কারণ যেহেতু সবাই ভোরকে রাজি করিয়েছে সেখানে এখন তাঁর না করার কোন মানেই হয় না।তাই সেও রাজি হয়ে গেছে। ধূসর মুখ কালো করে বাবা-র ঘরে থেকে বেড়িয়ে এলো।না জানি আরো কত ঝামেলা হয় দেশের বাড়িতে গেলে।আর ভোর। সে যদি ওসব জানে তাহলে তাঁকে ভুল বুঝবে না তো?

ভোর নিজের লাগেজ থেকে মায়ের ছবিটা বের করতে নিলেই তাঁর ফোনটা বেজে উঠলো।লেইম-সিটের পাশে রাখা তাঁর ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো আফিম নামটা জ্বলজ্বল করছে।হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া চোখের জলটা আবারো ভরে উঠলো।চোখের পাতা জুবুথুবু হয়ে ভিজে উঠলো পানিতে।কোন রকম ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো।হ্যালে বলার প্রয়োজন মনে করলো না ভোর।কিন্তু ওপাশ থেকে ভেসে এলো।

এভাবে তুই পর হবি যদি জানতাম।কখনোই তোকে ভালোবাসতাম না।আমাকে না ঠকালেও পারতি ভোর।আমিও তো তোকে ভালোবেসেছিলাম।এমন বেঈমানী কীভাবে করলি। আমি না-হয় পরিস্থিতির জন্য ইলমাকে বিয়ে করেছি।তুই কেন ধূসরকে বিয়ে করলি।নাকি ধূসর আমার থেকেও ভালো দেখতে।নাকি অন্য কোন কারণে।কারণটা বল আমায়।আমার কাছে লজ্জা কিসের? সে কি আমার থেকেও তোকে বিছানায় সুখ বেশি দিতে পারবে এই জন্য তাঁকে বিয়ে করেছিস।আচ্ছা আমার সাথে তো কখনোই তুই বিছানায় ঘুমাসনি তাহলে বুঝলি কি করে ও আমার থেকে তোকে বেশি সুখ দেবে।নাকি ধূসরের সাথে ঘুমিয়ে ছিলি।কোনটা বল।আরে বলিস না কেন?আমি পরুষ হয়েও এখন পর্যন্ত ইলমাকে ছুঁয়ে দেখেনি শুধুমাত্র তোকে ভালোবাসি বলে আর তুই কিনা এক পলকেই বিয়ে করে নিলি।তা বাসর হয়েছে তো তোদের।চাচা তো বললো।কবুল বলে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করিসনি। লাগেজ নিয়ে সোজা শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল। অথচ সেদিন কি নাটকটাই না করলি।আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবি না।আমি যেন তোকে দাসী করে রাখি।আর আজ সব বদলে গেলো।চাচা ঠিকি বলে তোর মায়ের বংশে ছেলেদের ফাঁসানো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।তা তুই কার থেকে পেলি তোর মায়ের থেকে।বেচারি তো মরে গেছে কিন্তু নিজের পাপ তোকেও শিখিয়ে গেছে। কতবার ভেবেছি ইলমাকে ডির্ভোস দিয়ে তোকে বিয়ে করবো আর তুই কিনা।ছি্

আর কিছু বলবে।

কেন তুই কিছু বলবি

হ্যা বলবো।কিন্তু তোমার বলা শেষে

বল

বিছানার সুখ তো কলবয়ও দিতে পারে, কিন্তু মনের সুখ সেটা কখনো কখনো স্বামীও দিতে পারে না। যেমনটা আমার বাবা কখনোই আমার মাকে দিতে পারেনি।তুমি কখনোই আমাকে মনের সুখ দিতে পারতে না।কারণ তুমিও যে আমার বাবা-র বংশধর। ওই যে আমার মায়ের বংশে যেমন ছেলেদের ফাঁসানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।তেমন তোমাদের বংশে দেওয়া হয় কি করে স্ত্রীকে অবহেলা করবে।

তাহলে তোর কি মনে হয় ধূসর তোকে মনের সুখ দিবে।

উঁহু আমার কথা শেষ হয়নি।আমি যেমন তোমার কথার মাঝে একটা কথাও বলিনি তুমিও বলবে না।কি বললে তুমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলে তাই-না। তাহলে তোমাকে যখন মা বলেছিল।আফিম তুমি কি সত্যি ভোরকে ভালোবাসো। তুমি সরাসরি বলে দিলে না।আর তুমি কেন তাহলে সেদিন রাতের আঁধারে মা’কে মিথ্যা বলেছিলি।মা তোমায় তো বলেছিলো তুমি চাইলেই সে তোমার সাথে আমায় বিয়ে দিতে পারে।তাতে বাড়ির কেউ কিছু বলতে পারবে না তোমাকে।কিন্তু তুমি রাজি কিনা বলো।সব শুনে তুমি বলেছিলে ভোর ছোট কাকিমা। দু’টো ভালো করে কথা বলেছি মনে করেছে আমি ওকে ভালোবাসি।কিন্তু এমন কিছুই আমাদের মাঝে নেই।আর আজ এসে আমায় বলছো তুমি পরিস্থিতির স্বীকার। আচ্ছা মেনে নিলাম তুমি পরিস্থিতির স্বীকার ছিলে।তাহলে এটা কেন বললে তুমি আমাকে বিয়ে করবে বলে এখনো ইলমা আপুকে ছুঁয়ে দেখোনি।আচ্ছা তাহলে সে গর্ভবতী কি করে হলো হাওয়ায়।যখন মা মা-রা গিয়েছিলো।চারদিন যে আমি দরজা বন্ধ করে ছিলাম।কই তখন তো আমায় কেমন আছি জিঙ্গেস করতে আসোনি।আর আজ কিনা বলছো আমি পর হলাম কিভাবে। আরে পর তো তুই আমায় করেছিলি।আমার অনুভূতি নিয়ে তো তুই খেলেছিস।আর আজ আমি বেঈমান হয়ে গেলাম। কেন রে তুই অন্যায় করলে সেটা মাফ।আর আমি করলে পাপ।কোন ইতিহাসে পেয়েছিস।আর তুই অভিনয়টা খুব ভালো জানলেও।আমি এখন সেই অভিনয়ের ডিরেক্টর হয়ে গেছি।তাই আমাকে কিছু শেখাতে বা বলতে আসবি না।আর দ্বিতীয় বার যদি ফোন করিস না।আমি ভুলে যাবো কোন একদিন তোকে আমি ভালোবেসেছিলাম।

চলবে,,,

গল্পের রেসপন্স অনেক কমে গেছে। গল্পটা কি আর ভালো লাগছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here