তুই আমার অঙ্গারাম্লজান – পর্ব ৮

0
181

#তুই_আমার_অঙ্গারাম্লজান
পর্ব_৮
লেখনী: মাহরুশ মুতাদায়্যিনাত মুক্তা

৯.
“কি করো ফাবলীহা?”
“কি খাবে ফাবলীহা?”
“ফাবলীহা? ওও ফাবলীহা।”
রাস্তায় মাঝেমধ্যে দেখা যায় রিকশা করে যেতে যেতে মাইকে বিজ্ঞাপন দেয়, “তেইল্লাচোড়া মরবে, টিকটিকি মরবে। লাফাইয়া লাফাইয়া মরবি। চিত হইয়া মরবে, চ্যাপ্টা হইয়া ডিগবাজী খাইতে খাইতে মরবে। ইদুরের বংশ, গর্বিত বংশ। মাথার উপরে উঠে নাচে।”

ফাহাদের ফাবলীহা ফাবলীহা সারাদিন আমার তেমনই লাগে। ফাহাদও যেনো আমার মাথায় উঠে নাচছে। গর্ভবতী পেট চিপা ইঁদুর একটা। অথচ সে নিজেকে কোক স্টুডিও বিডির গায়ক মনে করছে। তার সাহস দেখে আমি অবাক। আমার সঙ্গে শুধু কথা বলছে না, রীতিমতো আমার কোলে এসে বসে জায়গা নিতে চাইছে। আর তার মা-বাপ সহ আমার মা-বাপ তা দেখে মুচকি মুচকি হাসে। এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দামড়া যে কবে যাবে আল্লাহ জানে।

“ফাবলীহা, আমি বাইরে যাচ্ছি। তোমার কিছু লাগবে?”
আমি ভ্রুজোড়ায় কাঠিন্য এনে চুপচাপ বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। আর একবার জিগ্যেস করলে, প্রমিস! আমি এই ছেলের ইজ্জতে হাত দেব। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম ট্রাউজারের গিঁট ঝুলছে। টান মারলে কি অভিকর্ষ বল কাজে লাগিয়ে ট্রাউজার মেঝের সংস্পর্শে আসবে?
হাত থেকে কলমটা রেখে হাতটা খানিক উপরে তুললাম।
“ওর জন্য আইসক্রিম নিয়ে এসো। চকলেট আইসক্রিম। ফাবলীহার চকলেট আইসক্রিম অনেক পছন্দ।”
ফাহাদ, আমি দুজনেই আব্বুর দিকে তাকালাম। আব্বু দরজার কাছে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথাটি বললো। আবার মুচকি হেসে চলে গেলো।
ফাহাদ আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
“আরও কিছু প্রয়োজন হলে কল করে জানিও।”
বলেই সে আমার রুম থেকে প্রস্থান নিলো। আমি হাফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নিলাম।
কিন্তু পরিস্থিতি তো হাতের বাহিরে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই যন্ত্রণা থেকে সাময়িক মুক্তি দিয়ে আমার হবে না। কি করা যায়, কি করা যায়?
তুশিরার সঙ্গে কথা বলতে হবে। চাঁদনী ভালো বুদ্ধি দিতে পারতো কিন্তু সে এখন ফাহাদের একনিষ্ঠ শালিকা ও ভদ্র রাইস কুকার। তাই তার সঙ্গে আমার সাময়িক ব্রেক-আপ চলছে। ঘর থেকেও টোকা মেরে বের করে দিয়েছি (যদিও সে নিজেই গেছে, হোস্টেলে ওর বোন এসেছে)। পরে ভেবেচিন্তে গ্রহণ করা যায় কি-না দেখবো।
আমি তুশিরাকে হোয়াটসঅ্যাপে নক দিলাম।
কান্নাভেজা ইমোজি দিয়ে তার ইনবক্স আকাশে বাতাসে ধোঁয়াশা করে দিলাম।
“দোস্ত।”
“বল।”
“কি করিস?”
“পড়ি।”
“এমন রোবটের মতো কথা বলছিস কেন? ডাকাত আঙ্গুল কেটে নিয়ে গেছে?”
“ঘুম থেকে মাত্র উঠেছি দোস্ত। আম্মু পানি ঢেলে তুলেছে। তুলেই বক-ঝকা করে পড়ার টেবিলে বসিয়ে গেছে। এখন আমি চোখের সামনে তারা বাতি দেখি। মাথা ঘুরায়। প্রেশার ফল করেছে বোধহয়।”
“প্রেশার বাড়া দোস্ত, প্রেশার বাড়া। দরকার হলে হাঁসের ডিম খা। কাজ না হলে নাহিয়ানকে বাসার নিচে ডেকে আন।”
“ওকে ডাকবো কেন? তার সঙ্গে প্রেশারের সম্পর্ক কি?”
“সে আসলে তার থেকে পাপ্পি ধার নিবি। ফিল্মে দেখিস না, দুই ফুট দূর থেকে উমম করে চুমু দিলেই হার্টের রোগীর মতো হার্টবিট বেড়ে যায়? তেমন যদি তোর প্রশার বাড়ে অযথা টাকা খরচ করে হাঁস-মুরগির আন্ডা খাওয়ার প্রয়োজন কি।”
“চুপ কর, ছিঃ! প্রেশারের জন্য আমি এখন ওকে ডেকে এনে তার চুমু খাবো? বেয়াদব!”
“হোয়াট ছি? জামাই নিয়ে তুমি বিভীষিকাময় স্বপ্নদোষে আক্রান্ত হতে পারো আর আমি বললেই দোষ।”
“আমার চুমু খেয়ে প্রেশার হাই করার কোনো শখ নেই। তোমার দরকার হলে তুমি তোমার বাপের ঠিক করা ঝুনঝুনিওয়ালার কাছে গিয়ে খাও।”
আমি ওয়াক করার ইমোজি দিয়ে অফলাইনে চলে এলাম। এর মাঝে কলিংবেলের আওয়াজ হলো। নিশ্চয়ই ওই ফাহাদ এসেছে।
অনুমান ঠিক হলো, ‘ফাবলীহা ফাবলীহা, আইসক্রিম খাবা’ গান শুরু হয়ে গেছে। এই বেটা ছাগল কবে যাবে?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here