তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ১৯

0
336

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ১৯

বিছানায় রাখা ফোনটা বারকয়েক বেজে বন্ধ হয়ে গেলো।বন্ধ হতে না হতেই আবারও বেজে উঠলো। তারাহুরো করে ঘরে আসতেই আবারও বন্ধ হয়ে গেলো ফোনটা।হাতে তুলে নিলো ফোনটা।পাঁচবার ফোন দিয়েছে কেউ। নাম্বারটা সেভ নয়।কোন আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। ব্যাক করতে নিলেই আবারও ওই নাম্বার থেকে ফোন এলো।রিসিভ করে কানে ধরলো সফিউল মোর্সেদ।
হ্যালো

হ্যালো সফিউল মোর্সেদ।কেমন আছেন।

ভালো আছি কে বলছেন।

আমি কে সেটা আস্তে আস্তে জানবেন।কিন্তু বেশিক্ষণ ভালো থাকবেন না।আপনার ভালো থাকার দিন শেষ।

কে বলছেন, আর ফালতু কথা বলছেন কেন?

ফালতু নাকি সিরিয়াস, সেটা এখনি বুঝতে পারবেন।আপনার মেয়ে সিমা ভালো আছে তো? খোঁজ নিয়েছিলেন কি?

সিমা কি হয়েছে সিমার।

আরে কিছু হয়নি, হবে। আপনার পাপের শাস্তি। উল্টো গুনতে শুরু করুন সফিউল মোর্সেদ,আপনার দিন শেষ।তারপরই লোকটা ফোন কেটে দিলো।ফোনটা কেটে দিতেই সফিউল ঘামতে রইলো।আসলে সে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু ভয় সে কিসের জন্য পাচ্ছে। নিজের পাপের জন্য নাকি মেয়ের জন্য। এদিকে লোকটা ফোনটা বিছানায় ছুরে দিয়ে বিরক্ত নিয়ে বললো।

আপনি কি করতে চাইছেন বলুন তো ভোর।আমাকে দিয়ে কেন আপনার চাচাকে ফোন করালেন।আর মেয়ে। কার মেয়ে,কিসের মেয়ে।

আফিম ভাইয়ার বোন সিমা।সিমাকে চাচ্চু খুব ভালোবাসে।এমনকি আফিম ভাইয়ার থেকেও বেশি।তাইতো মেয়েকে শত্রুর থেকে বাঁচাতে দেশের বাহিরে পাঠিয়ে লেখাপড়া শিখিয়েছে।সে সব সময় নিজের মেয়েকে নিয়ে সিরিয়াস। এমনকি সম্পত্তির থেকেও তাঁর মেয়েকে সে বেশি ভালোবাসে।এই মেয়ের যদি ক্ষতি হয় তো বুঝতেই পারছেন কি হতে পারে?

আপনি কি করতে চাইছেন।

অপহরণ

কিহহহ

হুম, চলুন।

কোথায়

অপহরণ করতে।

আমাকে পাগল বলতে বলতে আপনি কবে থেকে পাগল হলেন।

আমি পাগল হইনি,প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছি।ওই আগুনে আমি একমাত্র একজনকে জ্বালাব।আর সে হলো সফিউল মোর্সেদ।

ভোর বাচ্চামো করবেন না।

আপনার কি মনে হয় আমি বাচ্চামি করছি।

হ্যা সেটাই মনে হচ্ছে। ভোর পুলিশে দিলেই তো মিটে যায়।

আমার মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি পুলিশ দিতে পারবে না।আর দিবো তো পুলিশের হাতে, কিন্তু নিজের ভেতরের জ্বলা আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আগে করতে হবে।

পাগলামি ছারুন,অন্য প্ল্যান করুন।

আমি একবারও কিন্তু আপনায় বলিনি,আপনি আমার সাথে থাকুন।আপনি জেচে আমার সাথে থাকতে চেয়েছেন।তাই ইচ্ছে হলে থাকুন না হলে জ্ঞান দিতে আসবেন না।

রেগে যাচ্ছেন কেন? যাচ্ছি তো? আমি আপনার রাগ খুব ভয় পাই।প্লিজ রাগ করবেন না।

হুম ঠিক আছে,চলুন।

বলছি কি একটু জড়িয়ে ধরুন না।মানে একটু জোর পেতাম।আমার তো এখনি ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। একটু জড়িয়ে ধরলে যদি ঠিক হয়।

সিরিয়াস সময়ে ভালো মজা করতে পারেন তো আপনি।

মজা না,আমি সত্যি বলছি।

আপনি থাকুন আমি গেলাম।গটগট করে হাঁটা দিলো ভোর।ধূসর তা দেখে কপাল চাপড়ে দৌড়ে ভোরের পিছু নিলো।

এভাবে রাগ করা ঠিক না।মাঝে মাঝে একটু হাসুন।অতিরিক্ত রাগ শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

আমি জন্মের পর থেকে জানতাম। মেয়েরা বাঁচাল হয়।কিন্তু ছেলেরা যে হয় তা জানতাম না।

আমি যবে থেকে আপনার প্রেমে পরেছি,তবে থেকে বাঁচাল হয়েছি।

ভালোবাসার কথা বলতে লজ্জা করে না।

কেন লজ্জা করবে কেন? আমি কি অন্য কাউকে ভালোবাসি।আমি তো আমার বউকে ভালোবাসি।

উপফ চুপ করুন তো?

আচ্ছা। তারপর ওরা দুজন একটি সিএনজিতে উঠলো।সিএনজি ওয়ালাকে ভোর ঠিকানা বলে দিলো।প্রায় আধা ঘণ্টা পর তাঁরা তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে গেলো।ভোর সামনে ধূসর পিছনে। আসলে ভোর কি করতে চাইছে তা ধূসর বুঝতে পারছে না।ভোর একটি সুন্দর বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়িটা একটু ভেতরে অর্থাত মানুষজনের থেকে দূরে।দু’জনে ক্ষানিকটা হাঁটতেই দু’জন মানুষের সাথে দেখা।এই দু’জনকে দেখে ধূসর অনেক অবাক হলো।কারণ এখানে এদের একটুও আশা করেনি ধূসর। তারপর ভোর কিছু ইশারা করলো ওদের। ওরাও ভোরকে কিছু একটা ইশারা করলো।তারপর ওরা তিনজন বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।বেচারা ধূসর তো কিছুই বলতে পারছে না।ওরা সবাই ভেতরে যেতেই দেখতে পেলো।একটা মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে রাখা।কিন্তু হাত পা এবং চোখ বেঁধে রাখা।হুট করেই ধূসরের বুকটা ভারি হয়ে এলো।কি করতে চাইছে ভোর?

——————-

তরতর করে ঘামছেন সফিউল। কারণ এই মাত্র তাঁর মেয়ের বন্ধুরা জানালো,তাঁর মেয়ে আরো দু-দিন আগে দেশে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছে। অথচ এখনো সে বাড়িতে ফেরেনি।আর তখন ওই ফোনের বলা কথা গুলো।এসব ভাবতেই তাঁর ঘাম ছুটে যাচ্ছে।তাহলে যাঁর ভয় সে পাচ্ছে সেটাই হলো।তাঁর মেয়েকে কেউ অপহরণ করেছে।হায় আল্লাহ এবার।কিন্তু এতো বড় কাজটা কে করলো।এমন শত্রু কে আমার? ভোর,কিন্তু তাঁর পক্ষে এতো বড় কাজ করা সম্ভব নয়। ভোর কথায় ফটোরফটোর হলেও এসব কাজে পারদর্শী না।তাহলে কে? সফিউল তাঁর মেয়েকে খুব ভালোবাসে। তাই তো তাঁর মেয়েকে নিজের শত্রুর থেকে দূরে রাখতে দেশের বাহির রেখেছে এতো বছর।কিন্তু সেই শত্রুর চোখ পড়লোই তাঁর মেয়ের উপর। এখন উপায়, পুলিশকে খবর দিবে।না না পুলিশকে খবর দিলে উল্টো নিজেই ফেঁসে যেতে পারে।কারণ লোকটা বলেছে,তাঁর পাপের শাস্তির হিসেব এখন থেকে শুরু। কিন্তু কে?

—————-

বাজার থেকে ফেরার পথে কেউ সামিউলকে অপহরণ করেছে। তখন থেকে এখনো তাঁর চোখ বাঁধা। তাঁর হাত এবং চোখ বেঁধে রাখা।সে হয়তো একটি ঘরে আছে,কারণ তাঁকে বিছানা কিনবা কোন চেয়ারে বসানো হয়নি।তাঁকে খুব সুন্দর করেই ধরে আনা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে কেন অপহরণ করা হয়েছে।সে কি করেছে,আর কারাই বা তাঁকে ধরে নিয়ে এসেছে। তাঁকে এমন ভাবে ধরে আনা হয়েছে যেন খুব সম্মানিত ব্যক্তি তিনি।যাকে কিনা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ধরে আনা হয়েছে। কিন্তু কথা হলো ধরে আনলো কে? তখনই কেউ দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।কানটা খাঁরা করে সেই মানুষটার উপস্থিত বোঝার চেষ্টা করছে সামিউল। লোকটা ধীরে ধীরে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে।হঠাৎ তাঁকে ধরতেই সামিউল ভয় পেলো।তখন লোকটা বললো।

ভয় পাবেন না।আমরা আপনার কোন ক্ষতি করবো না।কিন্তু যেটা করবো সেটা আপনি ভাবতেও পারছেন না।

লোকটার কন্ঠটা সামিউলের কাছে তেমন চেনা লাগলো না।অচেনা কেউই হবে।কারণ তাঁর চেনা মানুষের কন্ঠ এমন নয়।আবার হতেও পারে।কারণ চোখ বন্ধ থাকলে যদি দিনকে রাত ভাবা যায়।তাহলে চেনা মানুষের মুখ না দেখা অবধি অনেকটা অচেনাই লাগে।তখন আবার ওই লোকটার কন্ঠ শোনা গেলো।

আচ্ছা কখনো যদি জানতে পারেন।আপনি এতোদিন ভুলের সাগরে ভেসে ছিলেন তখন কি করবেন।বা কখনো যদি জানেন, কাউকে ভুল বুঝে তাঁকে সারাজীবন কষ্ট দিয়ে গেছেন।তখন আপনার রিয়াকশন কেমন হবে।আর যদি এটাও জানতে পারেন,যাকে আপনি মেয়ে বলে মানাতেন না,বা মানেন না, সে আসলে আপনারি মেয়ে।তখন কি করবেন।

আচ্ছা এবার বুঝতে পেরেছি,তোমাদের কে ঠিক করেছে।

বাহ,আপনার মস্তিষ্ক তো ভারি প্রখর।এক পলকেই বুঝতে পারলেন আমাদের কে ঠিক করেছে।

হ্যা বুঝতে পেরেছি।কারণ ওই একজনই শত্রু আছে আমার।

আর আমি যদি বলি, ওই একজনই আছে যে আপনার আপন।

কখনোই না।ওই মেয়ে আমার কোন দিনও আপন হতে পারে না।যাঁর মা আমার মানসম্মান নষ্ট করে,আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসাতে পারে।তাঁর মেয়ে কোন দিনও আমার আপন হতে পারে না।

হুম তা-ও ঠিক।কিন্তু ভেবে দেখুন তো,তাঁদের সাথে তো আপনি কোনোদিনও ভালো ব্যবহার তো দূরে থাক ভালো করে কথাও বলেননি। তাহলে সে কেন আপনাকে এতো সম্মান দিয়ে এখানে আঁটকে রেখেছে। সে চাইলেই তো আপনাকে এখন শেষ করে দিতে পারে।এমন তো নয়, আপনাকে সে সম্পত্তির জন্য আঁটকে রেখেছে। তাহলে সে তাঁর মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তিসরূপ আপনায় এখন খুনও তো করতে পারে।

করবে না যে তাঁর গ্যারান্টি কি? না হলে কি সে আমায় অপহরণ করতে পারতো।

সে তো আপনায় অপহরণ করেছে শুধুমাত্র সত্যের মুখোমুখি করতে।

কি সত্যি

মনে করুন, আপনার জীবনের চরম সত্যি।

মানে?

মানে রাতে জানতে পারবেন।কারণ এখনো অনেকের উপস্থিতি বাকি আছে।

আর কাকে তোমরা অপহরণ করবে।

সেটা না-হয় পরেই জানলেন।আচ্ছা থাকেন,পরে কথা হবে।

—————

খুব তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ভোর।কিছু কাজে তাঁকে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে। এখন তাঁকে আবার যেতে হবে।কিন্তু হঠাৎই তাঁর সামনে উপস্থিত হলো আনতা বেগম।

কোথায় যাচ্ছো এতো তারাহুরো করে।আর ধূসর, মেঘ ওরা কোথায়।

আন্টি একটা কাজ আছে।আর ওরা আছে।আমরা সবাই একসাথেই থাকবো।

কিন্তু যাচ্ছো কোথায়।

যুদ্ধে

আনতা বেগম ভয় পেলেন ভোরের কথা শুনে।কি বলছো ভোর।

হ্যা আন্টি সত্য মিথ্যার যুদ্ধ। আজ হয় মিথ্যা জিতবে না হয় সত্যি। কিন্তু আজ সত্যিকেই জিততে হবে।

ভোর তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

আন্টি আপনায় সব পড়ে বোঝাব।এখন আসি।

কিন্তু ভোর

আন্টি প্লিজ একটু সময় দিন।কথাটা বলে ভোর এক মিনিটও দাঁড়াল না।বেরিয়ে গেলো।

————
বাড়ি থেকে একে একে সবাই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।পুরো একদিন হয়েছে আফিম বাড়িতে ফেরে না।তারপর মেয়ে দেশে আসার কথা সে-ও আসেনি।সমিউল এবং শাশুড়ী তাঁরাও উধাও। এখন তাঁর স্বামীও দ্রুত কোথাও বেরিয়ে গেলেন।কি হচ্ছে এই বাড়িতে তা বুঝতে পারছেন না আফিয়া বেগম।কিন্তু ভালো কিছু হচ্ছে না তা সে ভালোই বুঝতে পারলেন।তাই তিনি তাঁর স্বামীর পিছু নিতে নিলেই সামনে দাঁড়াল ইলমা।

কোথায় যাচ্ছো ফুপি।

কোথাও না,সামনে থেকে সর।

আগে বলো কোথায় যাচ্ছো।

তুই সর আগে সামনে থেকে।

আগে তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে তারপর যাবে।

কি প্রশ্ন

তোমরা জেনেশুনে আমার জীবনটা কেন নষ্ট করলে?

মানে,কি বলতে চাইছিস? তোর কথার মানে আমি বুঝতে পারছি না।

তোমার ছেলের এতো বড় রোগ, তোমরা আমায় আগে বলোনি কেন?

রোগ,কিসের রোগ।কোন রোগের কথা বলছিস তুই।

চলবে,,

খুব দ্রুত সব পরিষ্কার হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here